I live in your hope,part_04,05

I live in your hope,part_04,05
Adnan Mahmud
part_04

-চাঁদের এক ফালি আলো এসে পড়ছে তাসনিমের মুখে।রিয়াদ আর সহ্য করতে না পেরে উঠে জানালার কাছে চলে এলো।পর্দা পুরোপুরি ফাঁক করে দিলো।এবার সম্পূর্ণরূপে তাসনিমকে দেখা যাচ্ছে। রিয়াদ খাটে গিয়ে বসে তাসনিমকে দেখছে।

-কি মায়বী লাগছে চেহারাটা।ঘুমোলে কি সুন্দর লাগে মেয়েটাকে তা আজকেই জানলাম।মনে মনে বিড় বিড় করছে রিয়াদ।
মাথা থেকে দেখা শুরু করল রিয়াদ।এলোমেলো চুলগুলোর কিছুটা মুখের উপর চলে এসেছে।রিয়াদ তার হাত এগিয়ে নিলো সরানোর জন্য।আর তখনি দুপুরের কেলেঙ্কারির কথা মনে পড়ে গেলো।সাথে সাথে হাত পিছিয়ে নিল রিয়াদ।

-তারপরেও কি যেন মনে করে কনিষ্ঠ আঙুলের সাহায্যে খুবই সতর্কতার সাথে চুলোগুলো সরিয়ে দিল।
এবার পুরো মুখের যেটুকু বাকি ছিল দেখার সেটা দেখে নিল।

–দেখতে দেখতে বুকে এসে নজর আটকে গেলো।নিশ্বাস নেওয়ার কারণে বুক উঠানামা করছে।এরকম আগে কখনো দেখেনি রিয়াদ।খুবই চমৎকার লাগছে।আবছা আলো আর চাঁদের আলোতে আরো সুন্দর লাগছে।

-পেটের কাছে তাকাতেই আবারো দেখল কাপড় ঠিক জায়গায় নেই। আসলে শাড়ি পরার অভ্যাস না থাকায় সামলাতে পারে না বোধহয়। পেটের কিছু অংশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

-পেটের কাছের তিলটা আগেরবার দেখনি রিয়াদ।খুবই সুন্দর লাগছে তিলটার জন্য। রিয়াদ আগের বারের মতে ভুল করার আগেই শুধরে নিলো।এবার শাড়িতে হাত না দিয়ে একটা খাতা দিয়ে দিলো তাসনিমের শরীরে।

-খাতা দিয়ে তাসনিমের মুখের দিকে তাকাতেই রিয়াদ চারহাজার ভোল্টের একটা শকট খেলো।
বড়বড় চোখ করে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে তাসনিম।

-আমি কিছু করিনি,আমি কিছু করিনি।হাত উচু করে তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

তাসনিম কিছু না বলে তাকিয়ে আছে রিয়াদের মুখের দিকে।

-বাঁচাও বাঁচাও কে কোথায়,আছো।জোরে চিৎকার করে উঠলো তাসনিম।
তাসনিমকে চিৎকার করতে দেখে রিয়াদ তাসনিমের মুখ চেপে ধরলো।

-আরে আমি রিয়াদ।মুখ চেপে ধরে বলল রিয়াদ।
তাসনিমের ওই চিৎকারই যথেষ্ট ছিলো সারা বাড়িকে জাগানোর জন্য। পুরো বাড়ির লাইট অন হয়ে গেলো একেক করে।

-রিয়াদ দরজা খোল।বউমায়ের হলো কি?বাইরে থেকে মায়ের কন্ঠ শুনে হাত সরিয়ে নিলো তাসনিমের মুখ থেকে রিয়াদ।

-দরজার দিকে এগিয়ে গেলো রিয়াদ দরজা খোলার জন্য। তাসনিম উঠে নিজের কাপড় ঠিক আছে কি না দেখে নিলো।মনে মনে হাসছে তাসনিম। ইচ্ছে করেই করা এসব।রিয়াদকে আরেকটু ভড়কে দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা এসব।

-কি হয়েছে,কি হয়েছে বউ মা?
রিয়াদকে ঠেলে একসাথে তিনজন ভিতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল রাহি বেগম।তাসনিম সবার দৃষ্টি এড়িয়ে রিয়াদের মুখের দিকে এক পলক দৃষ্টি ফেলে নিলো।বাঁদরের মতো মুখ করে আছে রিয়াদ।এটা দেখে আরো হাসি পাচ্ছে তাসনিমের।

-দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকাচ্ছে তাসনিম।

-আরে মা তেমন কিচ্ছুই হয়নি।খারাপ স্বপ্ন দেখেছে হয়তো।দরজা থেকে খাটের দিকে এগোতে এগোতে বলল রিয়াদ।

–হ্যাঁ মা,এটাই হবে হয়তো।কোনভাবে হাসি আটকিয়ে বলল তাসনিম।কথা শেষ করে আবারো ঠোঁট কামড়ে রাখলো তাসনিম।

-এরকম চিৎকার না দিলেও পারতিস।চিৎকার দিলি কেনো?সবাই চলে যাওয়ার পর দরজা লাগিয় এসে বলল রিয়াদ।

তাসনিম ভ্রু কুচকে একবার রিয়াদের দিকে তাকিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমের সব ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে জোরে হাসতে লাগলো তাসনিম।

-আরেকটু হলেই বড়সড়ো একটা কেলো হয়ে যেতো।খুব বাঁচা বেঁচে গেছি।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো তাসনিম।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল তিনটা বেজে দশ মিনিট। মনে মনে খুব লজ্জিত হলো এই ভেবে যে,তার একটু দুষ্টমির জন্য এমন সময় সবাইকে ঘুম থেকে জাগানো ঠিক হয়নি।

-ওই বল, চিৎকার দিলি কেনো?,তাসনিমকে দেখে খাট থেকে উঠে তাসনিমের দিকে এগোতে এগোতে জিজ্ঞেস করল।
তাসনিম আস্তে আস্তে পিছাতে লাগলো রিয়াদকে এগোতে দেখে পিছাতে পিছাতে তাসনিমের পিঠ ঠেকে গেলো দেওয়ালে। রিয়াদ গিয়ে দু’হাত দেওয়ালে লাগিয়ে তাসনিমের বরাবর দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল কেন চিৎকার করলো।

-উফ্,সহ্য হয়না সরে যান সামনে থেকে।কি গন্ধ সিগারেটের। রিয়াদের বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে বলল।

-বল আগে কেনো চিৎকার করলি?? রিয়াদ তাসনিমের মুখের কাছে মুখ নিয়ে গেলো।একপর্যায়ে তাসনিমের নাকের সাথে রিয়াদের নাক লেগে গেলো।হাত সরিয়ে নিল রিয়াদ দেওয়াল থেকে।

-তাসনিম বেরিয়ে গেলো গেলো রিয়াদের হাতের ফাঁদ থেকে।সোজা গিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।
রিয়াদ খানিকটা সময় ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় চলে এলো।এসে সোজা শুয়ে পড়লো। তাসনিমও লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।

-বউ মা,দুদিনের বেশি থাকতে পারবা না বাবার বাড়ি।তুমি যখন না ছিলে তখন এক ভাব ছিলো।বাট তুমি এসেছো আর এখন আমার বাড়ি পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।এখন তুমি না থাকলে আবার খালি লাগবে বাড়িটা।ছেলে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল রাহি বেগম।

-রিয়াদ গিয়ে গাড়িতে বসে আছে।শশুর বাড়ি যাবে প্রথমবারের মতো।তাই অনেক বাজার করে রেখেছে।সব এনে গাড়ির ডিকি টে ভরে রেখেছে।তাসনিম এসে পাশের সিটে বসলো।রিয়াও যাবে বলে জিদ ধরেছিলো।আর রিয়াকেই তাসনিম নিতেই চাচ্ছিলো।তাই রিয়াও এসে বসেছে পিছনের সিটে।

-একটু গাড়ি থামিয়ে এক বোতল পানি কিনে আনুন।পানি আনতে ভুলে গেছি।রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল তাসনিম।

পানি কিনে দিয়ে পুনরায় গাড়িতে উঠল রিয়াদ।আরো প্রায় মিনিট ত্রিশেক সময় লাগবে এখনো।রিয়াদের দিকে মাঝেমধ্যে তাকিয়ে দেখছে তাসনিম।কিন্তু রিয়াদের কোন খবরই নেই। সেতো আছে অন্য মুডে।

-এরকম পাশাপাশি গাড়িতে অনেকবার বসেছি তাসনিয়ার সাথে।তবে ড্রাইভিং সিটে নয়।পিছনের সিটে।মনে মনে ভাবছে আর আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে রিয়াদ।

-হঠাৎ করে সিট বেল্টটা শক্ত করে ধরল তাসনিম।গতকালের ওই হার্ড ব্রেকের কথা মনে হলো তাসনিমের।
শক্ত করে ধরে বসে থাকলো বাড়ি অবদি আসা পর্যন্ত।

-গাড়ির হর্ণ বাজাতে বাজাতে বাড়ির সামনে এনে গাড়ি দাড় করালো।বাসার সামনে অনেক মানুষের ভিড় জমে আছে।

-আসো বাবা আসো।কষ্ট হয়নি তো আসতে কোনো?গাড়ির গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রিয়াদ নামলে জিজ্ঞেস করল মাজেদ সাহেব।

-এরপর শুরু হলো হাউ ডু ইউ ডু।আশেপাশের মানুষজন শশুর বাড়িতে এতো কেনাকাটা করে আনতে দেখে অবাক হয়ে গেলো।

-কি ব্যাপার তুমি তো কোনো কথা বলছো না।রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল তাসনিয়ার মা রোকেয়া বেগম।

-আসলে মা রিয়া একটু লাজুক টাইপের তো তাই।মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল তাসনিম।

-আচ্ছা বাবা তুমি হাত মুখ ধুয়ে নাও।তাসনিম জামাই বাবাকে আর রিয়াকে নিয়ে ডায়নিং টেবিলে এসে পড়ো।ড্রয়িং রুম থেকে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলল রোকেয়া বেগম।

-দুপুরের খাবার একটু কম করে খেলে হয়না রিয়াদের।কিন্তু রিয়াদ এতোগুলো মানুষের সামনে খাবে কি করে তাই নিয়ে বেটা পড়েছে মহা টেনশনে।

-হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে গিয়ে বসল রিয়াদ।সবাই বসে রয়েছে সেখানে। শুধু তাসনিম বাদে।তাসনিম রিয়াদের সাথে রয়েছে।
দুজনের জন্য পাশাপাশি দুটো চেয়ার খালি রাখা হয়েছে।

রিয়াদ গিয়ে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লো।রিয়াদের একপাশে বসেছে তাসনিম আর অন্য পাশে বসেছে রিয়া।তাসনিমের পাশে বসেছে তাসনিমের ছোট বোন তামান্না। আর রিয়াদের সামনে বসেছে শশুর মাজেদ সাহেব আর শাশুড়ী রোকেয়া বেগম।

-মা তামিম কোথায়? ওকে তো দেখছি না।মাকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।তামিম তাসনিমের ছোট ভাই।

–কোথায় বের হয়েছে সকালে আর খবর নেই। আসেনি আর।তাসনিমকে বলল রোকেয়া বেগম।

-রিয়াদের অবস্থা খারাপ সে কিছুই নিজে উঠিয়ে নিচ্ছে না লজ্জায়।মনে মনে ভাবছে তাসনিম যদি এখন কিছু খাবার উঠিয়ে দিতো।

-হঠাৎ রিয়াদের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো তাসনিম।খাওয়া বাদ দিয়ে তামান্নার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে রিয়াদ।যেন পলকই পড়ছে না।
তামান্না দুলাভাইকে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে খুবই লজ্জা পেলো আর বড় বোনকে পা দিয়ে গুঁতা দিয়ে ইশারায় বলতে লাগলো।

-রিয়াদ কেন এভাবে তাকিয়ে থাকে?নজর টা এতো কুৎসিত কেনো?কি মতলবে তাকিয়ে আছে?,,

চলবে…

I live in your hope
Adnan Mahmud
Part_05
.
রিয়াদ কি মতলবে তাকিয়ে আছে এমন করে?কোন খারাপ মতলব নিয়ে কি তাকিয়ে আছে তামান্নার দিকে?
তাসনিম গলা দিয়ে একটু আওয়াজ করল।তাসনিমের আওয়াজ শুনেই রিয়াদ তাসনিমের দিকে তাকিয়ে নাক ডলা দিয়ে নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে খেতে শুরু করল।

-ওদের আসলে কোন কমনসেন্স নাই।নতুন বউ হয়তো মা-বাবাকে কাছে গিয়ে ভুলে গেছে।তাই বলে তোমার গুণধর ছেলে মেয়েও ভুলে গেছে?এতবার করে বললাম যে,পৌঁছে একটা ফোন দিতে। তার কোন খবরই নেই।
স্ত্রী রাহি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল রেহান সাহেব।

-আরে নতুন শশুর বাড়ি গিয়ে ও হয়তো একটু নড়ভড়ে হয়ে গেছে।কেনো তুমি যখন নতুন নতুন আমার বাবার বাড়ি গিয়েছিলে তখন তো সব কথা থুতলাতে থুতলাতে বলেছিলে।কতটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলে।সেই তোমারই তো ছেলে তাই এই অবস্থা। স্বামীর দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল রাহি বেগম।

-আরে এসব বাদ দেও।ফোনটা দেও আমি ফোন করে জেনে নিচ্ছি।স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে ফোন চাইলো রেহান সাহেব।

-হ,এখন গায়ে লেগেছে।এই নাও ধরো।
ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল রাহি বেগম।

-হ্যালো কে, বাবা?হুম আমরা পৌঁছে গেছি।এখন খাবার খাচ্ছি। আচ্ছা ঠিক আছে খেয়ে ফোন দিচ্ছি।
ফোন রেখে দিলো তাসনিম।

-কি বলল,গেছে চলে?
স্বামীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,রাহি বেগম।

-হুম চলে গেছে এখন খেতে বসেছে।খেয়ে ফোন দিবে।
রাহি বেগমকে বললেন রেহান সাহেব।

-কে ফোন করেছিল মা?
তাসনিমকে জিজ্ঞেস করলেন মাজেদ সাহেব।

-শশুর মশাই ফোন করেছিল।বাবাকে বলল তাসনিম।

-খাওয়া শেষ করে শশুরকে ফোন দিলো তাসনিম।কথা বলা শেষ হলে মাজেদ সাহেব আর রোকেয়া বেগমের সাথেও কথা বললেন তাসনিমের শশুর শাশুড়ী।

-দুলাভাই কেমন আছেন?বুবু কেমন আছিস?কখন এসেছিস?
বোন আর দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করল তামিম।

-আমরা ভালো আছি। আসছি সেই সকালেই। তুই কেমন আছিস?
ভাইকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

-ভাবী ভাবী আপনাদের এখানে পাশেই নাকি একটা সুন্দর পার্ক আছে?
দৌড়ে এসে তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল রিয়া।

-রিয়াদ কোন কাথা বার্তা না বলে ফোনের মধ্যে ডুবে আছে।কি যে এতো করে সারাদিন বুঝে না তাসনিম।

-হুম,আছে সুন্দর একটা পার্ক আছে এখানে।রিয়াদের দিকে একবার তাকিয়ে বলল তাসনিম।

-ভাবী চলনা আজকে যায় আমরা সবাই।তাসনিমকে বলল রিয়া।

তোমার ভাইয়াকে বলো আমাকে না।
রিয়াকে বলল তাসনিম।

-ভাইয়ের কথা শুনতেই একটা মুখ ভেংচি দিলো রিয়া।
লোক আর পেলাম না।একটু জোরেই বলল রিয়া।

-ভাইয়া আজকে একজায়গায় ঘুরতে যাবো।চলনা।
রিয়াদকে বলল রিয়া।রুমের বাইরে দাড়িয়ে সব দেখছে তামান্না। রিয়া বলেও রুমের ভিতর আনতে পারেনি।সে সময় ওই ভাবে তাকিয়ে থাকায় লজ্জা পেয়েছে সে।

-কি একজায়গায় এসে আবার ঘুরাঘুরি অন্য জায়গায়?কোন ঘুরাঘুরি হবে না।নিরিবিলি ওদের সাথে বসে গল্প কর।বিরক্তিকর কন্ঠে বলল রিয়াদ।

-কি ব্যাপার এখানে দাড়িয়ে কি করছিস তোরা?গেটের বাইরে তামান্না আর তামিমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল রোকেয়া বেগম।

-ঘরে ঢুকে রোকেয়া বেগম দেখল,রিয়া ঘুরতে যাওয়ার বায়না করছে।

হুম,বাবা নিয়ে যাও ওদেরকে।সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসো।খুবই সুন্দর জায়গা। ভালো লাগবে তোমাদের।রিয়াদকে বলল রোকেয়া বেগম।

-ধুরু এখন আর না গেলে হবে না।নিজের অনিচ্ছাসত্তেও যেতে হবে এখন।
মনে মনে রিয়াদ বিড়বিড় করছে।

কি বাবা,কিছু বললে নাকি?মেয়ে জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলল রোকেয়া বেগম।

-না না,কিছু না।আচ্ছা এখনি বের হবো তাহলে। তিনটা তো বেজে গেলো।যাও যাও সবাই গুছিয়ে নাও।রোকেয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

-তাসনিম রিয়াদের মুখের অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।রিয়াদ মুখের অবস্থা পেচার মতো করে রেখেছে।

-বিশ মিনিট বাদে সকলে বের হয়ে গেলো।রিয়াদের গাড়িতে চেপে বসল সবাই। গাড়িতে যেতে মাত্র বিশ মিনিটের পথ।ড্রাইভিং সিটে রিয়াদ।পাশে তাসনিম।আর পিছনে রিয়া,তামান্না আর তামিম।

-ওয়াও,জায়গাটাতো আসলেই অনেক সুন্দর। মনে মনে বিড়বিড় করল রিয়াদ।
সকলে আড্ডা দিচ্ছে। ওদের মতো আরো বহু লোকের সমাগম।

-ভাবী ভাবী আমরা ফুচকা খাবো।ভাইয়াকে বলো না প্লিজ।
তাসনিমের কাছে এসে রিয়া বলতে লাগলো।

-ওই শোনেন,রিয়া বলতেছে ফুচকা খাবে।রিয়াদের দিকে না তাকিয়েই বলল তাসনিম।

রিয়াদের কোনো জবাবা না পেয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আবারো অবাক হয়ে গেলো তাসনিম।

একটু পাশেই বসা একটা মেয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিয়াদ।

-এটা দেখে তাসনিমের মেজাজ খুবই খারাপ হয়ে গেলো।যাকে দেখবে তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে।কি দেখে যে বাবা-মা আমাকে বিয়ে দিছে।

–এই মেয়েটার কমরের দিকটা তাসনিয়ার মতন।তাসনিয়ার মতো এই মেয়েটার কোমরও সরু।মনে মনে ভাবছে রিয়াদ।

-রাগে একটু চিৎকার দিয়েই কথাটা পুনরায় বলল তাসনিম।
এবার রিয়াদ তাকালো তাসনিমের দিকে।সবাইকে নিয়ে ফুচকা খাওয়ানোর জন্য উঠে গেলো। যাওয়ার সময় বারবার পিছনে ওই মেয়েটার দিকে তাকাতে লাগলো।

-এটা দেখে তাসনিমের মেজাজ পুরোপুরি বিগড়ে গেলো।
-রিয়া,তামান্না, তামিম চলো সবাই বাসায় চলো। ফুচকা টুচকা খেতে হবে না।রাগে ফোশ ফোশ করে বলল তাসনিম।

আগে নতুন নতুন কিছুই মনে করতো না।বাট এই দুইদিনে অনেকটা ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে রিয়াদের উপর।

সবাই বসো, যার যা ইচ্ছে খেয়ে নাও।তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

আল্লাহ, যেন রিয়াদ এখন সিগারেট না খায়।যদি তামিম, তামান্না দেখে ফেলে তাহলে বাবা-মাকে বলে দিবে আর ওরা কষ্ট পাবে।মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো তাসনিম।

-বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হবে সবাই। মাগরিবের আযান পড়ে গেছে কিছুক্ষণ হলো।তাছাড়া বাসা থেকেও মাজেদ সাহেব ফোন করেছিলো।বাসার জন্য কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে সবাই টপাটপ গাড়িতে চেপে বসল।বাসার দিকে ছুটতে শুরু করল গাড়ি।

-কিছুদূর যেতেই গাড়ির ফুয়েল মিটারে চোখ পড়ল রিয়াদের।একেবারেই শেষ হয়ে গেছে।মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই টাংকি খালি হয়ে যাবে।

-আশেপাশের কোথাও কি সি এন জি স্টেশন আছে?গাড়ি চালাতে চালাতে তাসনিম কে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।
তাসনিমের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তাকাল রিয়াদ তাসনিমের দিকে।
ঘুমের তন্দ্রায় ঢুলছে তাসনিম।

-আরে ওই,আশেপাশের কোন জায়গায় ফুয়েল স্টেশন আছে?তাসনিমের বাহু বরাবর ধরে হালকা ঝাকি দিয়ে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।

-হাতের স্পর্শে সজাগ হয়ে গেলো তাসনিম।
কথাটা আবার বলল রিয়াদ।

-হ্যাঁ, এইতো একটু সামনেই একটা আছে।গাড়ির জানালা দিয়ে একটুখানি এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল তাসনিম।

তাসনিমের খুবই ভালো লাগছে।এই প্রথমবার তাকে নিজের ইচ্ছায় টাচ করেছে রিয়াদ।যদিও নিজের একটা প্রয়োজনবশত।সে যাই হোক টাচ করেছে তো।এটাই অনেক।মনে মনে খুশি বিরাজ করছে তাসনিমের কোমল হৃদয়ে।

-ফিলিং স্টেশনে গাড়ি ঢুকাল রিয়াদ।

মামা,সি এন জি নাকি পেট্রোল?
স্টেশনের একজন লোক এসে জিজ্ঞেস করল রিয়াদকে।

–সি এন জি লাগবে।
রিয়াদ গাড়ি থেকে নেমে বলল।

লোকটি জিজ্ঞেস করল কতটুকু লাগবে।রিয়াদ টাংকি ফুল করে দিতে বলেছে।তাসনিম পিছনে ঘুরে ভাই-বোনদের অবস্থা দেখে নিলো।সবাই বেজায় আনন্দে উল্লাসে মেতে আছে।তাসনিমের ও খুব খুশি লাগছে।

-কিন্তু তাসনিমের খুশিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।খানিক বাদেই খুশি হারিয়ে গেলো হৃদয় থেকে।পার্কে রিয়াদ যে মেয়েটার দিকে হা করে দেখছিল সেই মেয়েটা এখানে একটা ছেলের সাথে বাইকে এসেছে।বোধহয় তেল নিতেই এসেছে।রিয়াদ ডেঁপ ডেঁপ করে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।

-সমস্ত খুশি বরবাদ হয়ে গেলো।গ্যাস দেওয়া হয়ে গেছে তবুও রিয়াদের এদিকে কোন খবর নেই।গ্যাস দেওয়া লোকটি রিয়াদের কাছে গিয়ে বিল চাইলো।পরে বিল পরিশোধ করে গাড়িতে এসে বসল রিয়াদ।ওই মেয়েটা আর ছেলেটাও চলে গেছে।

-আপনাকে একটা কথা বলব।রুমে গিয়ে রিয়াদকে বলল তাসনিম।বাসায় এসেছে প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে।
আমার অধিকার আছে তাই জিজ্ঞেস করছি।কারণ আমি আপনার বিবাহিতা স্ত্রী।

-কি বলবি বলে ফেলা।ফোন ঘাটতে ঘাটতে বলল রিয়াদ।
আপনি যে কোন মেয়ে দেখলেই তার দিকে ওরকম কু দৃষ্টি দিয়ে কি দেখেন?কি মতলব আপনার?আপনার মতলব এতটা খারাপ?আপনার এই খারাপ স্বভাবটা কেনো?আমি সহ্য করবো না যে,আমার স্বামী অন্য মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে।নিজের চোখ টা ভালো করেন।
রাগে ফোশ ফোশ করতে করতে বলল,তাসনিম।

তাসনিমের কথা শুনে রিয়াদের মেজাজ পুরোপুরি চাঙ্গে উঠে গেলো।খাটে ফোন ফেলে রেখে এক লাফে খাট থেকে নেমে তাসনিমের কাছে গিয়ে তাসনিমের চুলের মুঠি শক্ত করে ধরল।
চুলের মুঠি ধরাই তাসনিম ব্যাথায় ককিয়ে উঠল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here