দৃষ্টির অগোচরে,২৩ তম_পর্ব,২৪ তম পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
২৩ তম_পর্ব
রাজীবুল ইসলামের নিউজের পর নতুন নিউজ নিয়ে মিডিয়ে মেতেছে,
“ইন্সপেক্টর ইশান তালুকদারের খুন”
“ইন্সপেক্টর ইশান তাকুলদারের সাত মাস পুরোনো লাশ সেক্টর ১৪ এর “….” বিল্ডিং এর ট্যাংকি থেকে উদ্ধার”
খবরের পাতার দ্বিতীয় পেজে এমন সংবাদ পেয়ে বেশ চমকে উঠে নুশরাত। বিশেষ করে বিল্ডিং এর জায়গাটা দেখে। আরোও বেশি অবাক হয়েছে যখন দেখেছে লাশটি সাত মাস পুরোনো। কারণ মাহিরের মৃত্যুর ও সাত মাস ই হয়েছে। ইশানকে ঠিক একই ভাবে খুন করা হয়েছে যেভাবে মাহিরকে খুন করা হয়েছে। ব্যাপারটা কি কেবলই কাকতালীয় নাকি কোনো জটিল মস্তিষ্কের ভয়ংকর কোনো কর্মকান্ড। উষ্ণ গরম চায়ের কাপটা কপালে ঠেকিয়ে চোখ বুজে রেখেছে নুশরাত। তার মস্তিষ্কে কিছু প্রশ্নেরা ঘুরপাক খাচ্ছে। যার উত্তর খোঁজাটা হয়তো বোকামি হবে। কিন্তু সে উত্তরগুলো খুঁজতে চায়।
– চা টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। খেয়ে তারপর চিন্তা করো৷ দেখবে মাথা খুলে যাবে।
পারভীন বেগমের কন্ঠ কানে আসতেই চোখ খুলে তাকায় নুশরাত। অবাক দৃষ্টিতে মার দিকে তাকায় নুশরাত। হয়তো মায়েদের মাঝে আল্লাহ তাআলা এক অন্যরকম ব্লুথুথ কানেকশন অ্যাড করে দিয়েছেন, তাইতো তাদের সাথে আমাদের আত্মার একটি কানেক্টিভিটিটা এতোটা জোড়ালো। মায়েদের কিছু বলা লাগে না, তারা চেহারা পড়তে পারে নিজের সন্তানের। পারভীন বেগম ও ভিন্ন নন, তাইতো নুশরাতের না বলা কথাগুলোও তিনি বুঝে যান। নুশরাত পারভীন বেগমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি হাসে। সেই হাসির উত্তরে পারভীন বেগমের ঠোঁটের কোনায় ও মিষ্টি হাসির আবির্ভাব হয়। মা মেয়ের সকালটা এভাবেই শুরু হয়ে শেষের দিকে ঘনিয়ে যায়_______
শামীমের সামনে বসে রয়েছে তৌহিদ। জেলারের সাথে কথা বলে আলাদা কথাবলার অনুমতি নিয়েছে সে। তৌহিদের তীক্ষ্ণ সূচালো দৃষ্টি এবং গম্ভীর কন্ঠ শামীমের বুকে ত্রাশ তৈরি করতে যথেষ্ট। শামীমের সামনে তিনটি ছবি রাখা। ছবিগুলো মাহির, রাজীব এবং ইশানের। তৌহিদ বরফ শীতল কন্ঠে বললো,
– শামীম সাহেব লাস্ট বারের মতো জিজ্ঞেস করছি, ইনাদের সাথে আপনার সম্পর্কটা কেমন ছিলো?
– ন…না স্যার। আমি ইনাদের চিনি না।
– একই ভার্সিটি, একই ডিপার্টমেন্টে পড়েও আপনি বলছেন এদের কাউকে আপনি চিনেন না? ইশান তালুকদার এবং রাজীবুল ইসলাম তো আপনার ক্লাসমেট, তবুও বলবেন আপনি তাকে চিনেন না?
– আমি বলছি তো আমি তাকে চিনি না!
শামীম এবার বেশ উত্তেজিত হয়ে কথাটা বলে। তার দৃষ্টি তৌহিদের দৃষ্টিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। তার কন্ঠ কাঁপছে, কপালে ঘাম জমছে। তৌহিদ এবার ইন্টারোগেশনের ধরণ বদলানো। সে ধীর কন্ঠে বললো,
– বেশ, আপনি বলতে না চাইলে আমি জোর করবো না। তবে যে খুনি এদেরকে এতোটা সহজে মারতে পারে সে কিন্তু আপনাকেও মারতে পারে। আমি কিন্তু জানি আলতাফকে আপনি মারেন নি। কিন্তু কে মেরেছে সেটা আপনি বাদে কেউ ই জানে না। তাই আপনি যদি মুখ খুলেন তবে আপনার শাস্তি কমানোর ব্যাবস্থা আমি করতে পারবো। শুধু তাই নয়, সেই খুনিকে শাস্তি দিতে পারলে হয়তো মৃত্যু ভয় থেকে আপনি মুক্তি পেতেন।
শামীম এখনো চুপ করে আছে। সে কিছু একটা ভাবছে, তার চোখজোড়া চিন্তিত। তারমানে তৌহিদের টোপটা সে গিলেছে৷ তৌহিদ আজ আন্দাজে ডিল মেরেছে, লাগলে ভালো না লাগলে কিছুই করার নেই। কিন্তু তার ঢিলটা লেগে গেছে। শামীম সাহেব সেই চাবি যাকে এতোদিন তৌহিদ খুঁজছিলো। এই একটা সপ্তাহ পাগলের মতো এই চারটা খুনের যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টায় লেগে ছিলো তৌহিদ। “আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয়ের” ০৬,০৭, এবং ০৮ ব্যাচ আলতাফ, মাহির, রাজীব, ইশান এবং শামীম। আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয়ের ০৬-০৮ ব্যাচের অনেকের সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করেছে তৌহিদ। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই পুলিশের পরিচয় পেতেই মুখে তালা দিয়ে ফেলে। খুব কষ্টে দুজনের মুখ খোলাতে পেরেছে। তাদের কাছ থেকেই এই গ্রুপের হদিস পেয়েছে তৌহিদ।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই শামীম, ইশান রাজীবের সাথে মাহির, আলতাফ, সমীর, দিহান, অনিক, নাহিদ নামক ছেলেদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। এদের অনেক বড় একটা গ্রুপ ছিলো। মোট দশজনের একটি গ্রুপ। দিহান, অনিক, নাহিদ এবং মাহির ছিলো ০৬ ব্যাচ। আলতাফ এবং সমীর ছিলো ০৭ ব্যাচ। হোস্টেলেও এদের একই দিকে রুম ছিলো। পলিটিক্যাল বেশ প্রভাব ছিলো তাদের ভার্সিটিতে। একই সাথে চায়ের টঙ এ আড্ডা থেকে শুরু করে শেষ রাতের সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে সুর তোলা পর্যন্ত একই সাথে থাকতো তারা। ভার্সিটিতে র্যাগ থেকে শুরু করে আন্দোলন সব কিছুই এই দশজনের দলটি করতো। সবাই বেশ ভয় ও পেতো এই দলটিকে। ধীরে ধীরে তাদের অনার্স শেষ হয়, মাস্টার্স শুরু হয় কিন্তু তাদের হুকুমাত তখন ও অটল ছিলো ভার্সিটিতে। প্রতি রাতে কোনো না কোনো নতুন বর্ষের ছাত্রকে মাহিরের রুমে ডাকা হতো। রাত ২-৩ টা পর্যন্ত র্যাগ দেওয়া হতো। নিজেদের মনোপূর্তি অবধি জুনিয়রদের উপর র্যাগের নামে অত্যাচার করতো তারা। এমন ও কাহিনী রয়েছে কয়েকটা প্রথম বর্ষের ছাত্র তাদের ভয়ে ভার্সিটিও ছেড়ে দিয়েছিলো। তাদের ভার্সিটির অথোরিটি কিছু বলতে পারতো না কারণ এদের অনেকেই অর্থশালী পরিবারের সন্তান ছিলো। মাহিরদের মাস্টার্স এর শেষ বছর তাদের গ্রুপে ফাটল ধরে। এর পর থেকে এদের কাউকেই একসাথে দেখা যায় না। কি হয়েছিলো এটা কেউ ই জানে না।
গল্পটা শোনার অর থেকেই তৌহিদের মনে সন্দেহের রেশ জন্মায়। প্রথম সন্দেহ এই গ্রুপের দশ তম সদস্য টা কে? এবং কি এমন ঘটেছিলো যে এতো সুন্দর বন্ধুত্ব নিমিষেই নষ্ট হয়ে গেলো। আলতাফ এবং শামীম ব্যাতীত কেউ ই একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখে নি। কি এমন ঘটেছিলো তাদের ভেতর? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা খুব দরকার।
বিল্ডিং এর বিল্ডারকে ইন্টারোগেশনের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে ওসি শেখর। বিল্ডারটি আধা ঘন্টা যাবৎ তার সামনে বসা। সমানে একের পর এক পান চাবিয়ে যাচ্ছে সে। তার মুখ দেখে মনেই হচ্ছে না তার মনে ভয়ের ছিটাফুটাও আছে। খুন হয়েছে তো কি! ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক। দু একটা লাশ ট্যাংকি থেকে পাওয়া যেতেই পারে। শেখর বিরক্তির স্বরে বললো,
– আপনি হয়তো ঘটনার গাম্ভীর্য বুঝতে পারছেন না। আপনার বিল্ডিং থেকে লাশ পাওয়া গেছে
বিল্ডার নির্বিকার গা এলিয়ে বসে রয়েছে। পান চাবাতে চানাতে বললো,
– তো? আমি ফ্লাট সব হ্যান্ড ওভার করে দিয়েছি। আমি কিছুই জানি না৷
– লাশটা একটা পুলিশ অফিসারের৷ আপনার কাছে কি কোনো গুরুত্ব নেই ব্যাপারটার? লাশ সাত মাস আগের। তখন তো কাউকে ফ্লাট ট্রান্সফার করেন নি আপনি। আপনার কন্সট্রাকশনের ভেতর কেউ লাশ লুকিয়ে গেলো আর আপনি জানেন না আপনি মশকরা করেন আমার সাথে?
টেবিলে সজোরে আঘাত করে কথাটা বলে শেখর। বিল্ডারের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ হয় না। সে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
– দেখেন স্যার, আমাদের কাজ সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যায়। তখন সব শ্রমিক বাসায় চলে যায়। শুধু দারোয়ান পাহারা দেয়। এখন তখন যদি কেউ এসে লাশ লুকায়ে যায় তাতে আমার কি করার?
বিল্ডারের এমন উত্তর শুনে শেখরের বিরক্তি যেনো আরোও বেড়ে যায়। সে ফুসতে ফুসতে রুম থেকে বেরয়ে যায়। সিগারেটে আগুন ধরিয়ে তৌহিদের নম্বরে একটা ফোন লাগায়। মিডিয়া পাগল করে দিচ্ছে তাদের। প্রথমে একজন যুবনেতা তারপর একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যু। ব্যাপারগুলো যেনো জ্বলন্ত আগুনে ঘি এর মতো কাজ করছে। তৌহিদ ফোন ধরতেই ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠে,
– শুয়োরের বাচ্চাটা মুখ খুলছে না, তুমি কোনো ক্লু পেয়েছো?
– দাদা, একটা চাবি পেয়েছি৷ কোনো খেচর থাকলে সেন্ট্রাল জেলে একটু নজর রাখতে বলিয়েন। আজ রাতে কিছু একটা হবে।
বলেই ফোন কেটে দিলো তৌহিদ। শেখর পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ ই পেলো না। মেজাজ গরম করে সিগারেটটা ছুড়ে মারলো সে।
সন্ধ্যা ৭টা,
শামীম নিজের সেন্ট্রিতে পায়চারী করছে। একে একে চারজন শেষ এবার বাকিদের পালা। স্নিগ্ধ একটা বিষধর সাপ, তার উপর বিশ্বাস রাখাটা বোকামী ছাড়া আর কিছুই না। শামীম কোনো সুযোগ নিতে চায় না। স্নিগ্ধ এখনো তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই অনেক। তবুও কেনো ওসির প্রলোভনটা তাকে বেশ ভাবাচ্ছে। একটা ওয়ান শট গেম খেললে কি খুব মন্দ হবে? বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর শামীম একজন হাবিলদারকে ইশারা করে। হাবিলদারটি কাছে এলে ধীর কন্ঠে বলে,
– একটা ফোন করবো?
– পাঁচ মিনিট বেশী না কিন্তু
– হয়ে যাবে
বলেই হাত এগিয়ে ফোনটা নিলো শামীম। প্যান্টের পকেট থেকে কাগজ বের করে একটা নাম্বারে ফোন লাগালো সে। পাঁচ মিনিট পর ফোনটা ফেরত দিয়ে দিলো শামীম। হাবিলদার চলে গেলে গা এলিয়ে দেয় মাটিতে। দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো তার বুক চিরে।
তৌহিদের সামনে বসে রয়েছে নুশরাত। কাগজটা এগিয়ে দিলো সে। কাগজে নামগুলোর উপর এক নজর বুলালো তৌহিদ। তারপর অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– তো?
– আপনি বুঝতে পারছেন না?
– না!
– এই নামটা।
বলেই একটা নামের দিকে ইশারা করলো নুশরাত। তৌহিদ হতভম্ব চোখে নুশরাতের দিকে তাকালো। কারণ নামটি ছিলো…………….
চলবে
দৃষ্টির অগোচরে
২৪ তম পর্ব
তৌহিদের সামনে বসে রয়েছে নুশরাত। কাগজটা এগিয়ে দিলো সে। কাগজে নামগুলোর উপর এক নজর বুলালো তৌহিদ। তারপর অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– তো?
– আপনি বুঝতে পারছেন না?
– না!
– এই নামটা।
বলেই একটা নামের দিকে ইশারা করলো নুশরাত। তৌহিদ হতভম্ব চোখে নুশরাতের দিকে তাকালো। কারণ নামটি ছিলো স্নেহা হোসেনের। নুশরাত তৌহিদের হতভম্ব চোখের ভাষা বুঝতে পেরে বললো,
– জ্বী হ্যা, স্নেহা এখন জেলে। অথচ ওর নামের লাস্ট ওর্ডার গত বুধবার হয়েছিলো।
– তুমি কিভাবে জানলে?
– সেলসগার্লকে তো শুধু শুধু ২০০০ টাকা দেই নি। কথা সেটা না, কথা হচ্ছে আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো এই স্নেহা হোসেন অন্য কেউ। কিন্তু আমি যখন তা পুরো প্রোফাইল এবং বিলিং টা চেক করলাম তখন দেখলাম প্রতিটা বিল স্নেহার ক্রেডিট কার্ড থেকেই পে করা হয়েছে। মজার ব্যাপার স্নেহা এখন জেলে অথচ গত বুধবারের পেমেন্টটাও স্নেহার কার্ড থেকেই হয়েছে। তাহলে কে স্নেহার কার্ড প্রতিনিয়ত ইউজ করে যাচ্ছে?
– তুমি শিউর কিভাবে তোমাকে যে ভয় দেখিয়েছে সে এই দোকান থেকেই পারফিউম গুলো কিনেছিলো?
– ক্রিমিনাল শার্প হলেও একটা না একটা ভুল করবেই। এই ক্রিমিনাল ও সেই একই কাজ করেছে। একটা পারফিউমের ট্যাগটা ভালো করে তোলা হয় নি তার। সেখান থেকেই আমি দোকানের নাম পেয়েছি। দোকানটার একটাই শো রুম। ওখানে যেয়েই এই তিনজনের খঁজ পেয়েছি আমি। প্রথম যখন আমি নামগুলো পেয়েছিলাম তখন খুব কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ তিনজন ই মেয়ে। স্নেহা হোসেন নামটা যদিও মনে খটকা লেগেছিল, কারণ স্নেহা এই পারফিউম ইউজ করে না। ইভেন শামীম সাহেব ও করেন না। তাই ও এই পারফিউম কিনবে ব্যাপারটা আমাকে খুব অবাক করেছিলো। সন্দেহের বীজ বড় হলো যখন দেখলাম, যেদিন আমাকে ভয় দেখানো হয়েছিলো তার ঠিক সাতদিন আগেই স্নেহা ৭টা পারফিউম করেছিলো। কারণ আমাকে যে পার্সেলটা পাঠানো হয় তাতে ৬ টা পারফিউম ছিলো। আমার সন্দেহের বীজ পরিণত হলো যখন জানতে পারলাম গত বুধবার আবারো পারফিউমটি ওর্ডার করা হয়েছে। স্নেহার নামে যে পারফিউম ওর্ডার করে সে খুব অদ্ভুত অদ্ভুত সময়ে পারফিউমটা ওর্ডার করে৷ মাহিরের খুন হয়েছিলো নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখ এবং স্নেহা পারফিউম ওর্ডার করেছিলো নভেম্বর ১৮ তারিখ। আমাকে ভয় দেখানো হয়েছিলো মে মাসের ৭ তারিখ আর স্নেহা ওর্ডার করেছিলো মে এর এক তারিখ। আলতাফ খুন হয় মে এর ১৭ তারিখ আর ওর্ডার হয় মে এর দশ তারিখ। এখন গত বুধবার ওর্ডার হয়েছে তারমানে
– পরশুদিন কিছু একটা হবে
নুশরাত কথা শেষ করার আগেই তৌহিদ কথাটা বলে উঠে। তৌহিদের কপালে ভাঁজ পড়ে। সে গভীর চিন্তায় পড়ে যায়। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে তৌহিদ বলে,
– তুমি আমাকে কতোটা সাহায্য করেছো তুমি নিজেও জানো না। চলো একটা জায়গায় যাবো।
বলেই উঠে দাঁড়ালো তৌহিদ। নুশরাতের প্রশ্নের অপেক্ষা সে করলো হনহন করে বেরিয়ে গেলো। নুশরাত কিছুক্ষণ বেকুবের মতো বসেছিলো। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে তৌহিদের পিছু নিলো সে। তৌহিদ বাইকে স্টার্ট দিয়ে নুশরাতের চোখে চোখ রেখে বললো,
– আজ চোর পুলিশ খেলার শেষ দিন। উঠে পড়ো।
বৃষ্টির দাপটে ঢাকা শহর অর্ধনিমজ্জিত। সর্বকালের সেরা বর্ষণ এই বছর ই হচ্ছে। ভাঙ্গা জানালা থেকে বাহিরে তাকিয়ে রয়েছে স্নিগ্ধ। অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। শীতল বাতাসের উম্মাদনা শরীরের লোমকূপ কাঁপিয়ে তুলছে। এই সময়টা খুব ভালো লাগে তার। এই বৃষ্টিতে ভেজা কাঁদামাটিতে কত না ফুটবল খেলেছে সে। বৃষ্টির দুপুরে গরম ধোঁয়া তোলা খিঁচুরি আর ডিম ভাজা আহা অমৃত! মোটা মামার দোকানে এই খাবারটা ছিলো বৃষ্টির জাতীয় খাবার। অথচ সেই সোনালী সময়গুলো কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। আচ্ছা, আজ দুপুরে খিঁচুরি হলে খুব একটা খারাপ হয় না। রুম থেকে বেরিয়ে সে ম্যানেজার আকরামের রুমে চলে যায় স্নিগ্ধ। ম্যানেজার আকরাম তখন চেয়ারে পা তুলে আরামে ভাতের লোকমা মুখে তুলছে। স্নিগ্ধকে দেখে মুখের ভাত দ্রুত চাবিয়ে পানি দিয়ে গিলে নিলো সে। তারপর দাঁত কেলিয়ে বললো,
– কিছু বলবা?
– ভাই, আজকে কি খিঁচুরি পাওয়া যাবে?
– রান্না হয়ে গেছে। এখন তো খিঁচুরি পাবা না
– জানি। কিন্ত আসলে কি বলেন তো আমার খিঁচুরি খেঁতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। বেশি না এক মুঠ ডাল, এক কাপ চাল আর কিছু মশলা। ব্যাস
– তুমি রান্না করতে পারো?
– হ্যা, এখানে থাকার আগে যেখানে থাকতাম সেখানে একাই রান্না করতাম। আপনি কি আমাকে দিতে পারবেন? আমি মাসের ভাড়ার সাথে এডজাস্ট করে দিবো।
– আরে কি যে বলো। আমি খেয়েই দিচ্ছি তোমাকে।
– আচ্ছা
আকরাম সাহেব খাচ্ছেন আর তার সামনে বসে রয়েছে স্নিগ্ধ। তার মুখে সুবিশাল হাসি। হাসির কারণটা আকরাম সাহেব বুঝার ক্ষমতার বাহিরে।
একদিন পর,
রাত ৯টা,
অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় লোকজন নেই বললে মন্দ হবে না। খুব কম গাড়ি চলছে। রিক্সাগুলোও রাস্তার ধহারে ঢাকা দিয়ে দাঁড়ানো। বৃষ্টির বেগে এক মিটার সামনে কি কাছে দেখা যাচ্ছে না। কালো রেইনকোট পড়ে মাথায় ক্যাপ টেনে নিলো স্নিগ্ধ। যে বৃষ্টিতে হাটু অবধি পানি জমে গেছে সেই বৃষ্টিতে বেরিয়ে পড়েছে সে। আজকে একটা শিকার যে করতেই হবে। মিরপুর ২ এর একটা দারুণ ফ্লাট বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে সে। শিকার এখন হয়তো মদের নেশায় চুর হয়ে আছে। এখন ই সঠিক সময় হামলা বলার। প্লান অনুযায়ী বাসার ভেতরে ও কোনো বাধা ব্যাতীত ঢুকে পড়েছে স্নিগ্ধ। শিকার তার সামনে, ব্যাবসায়ী সমীর চৌধুরী। বেশ বড় মৎস ব্যাবসায়ী সে। সাতক্ষীরায় ঘেরের পর ঘের তার নামে। আপাতত তিনদিনের জন্য ঢাকায় এসেছে সে। মিরপুরের এই ফ্লাটটা তার নামে। সপ্তাহের তিনদিন ঢাকা এবং চারদিন সাতক্ষীরায় ফার্ম হাউজে থাকে সে। রাত নয়টার পর মদের বোতল খোলাই তার চিরাচরিত স্বভাব। স্নিগ্ধ ও সেই সুযোগ ই নিবে। স্নিগ্ধ যখন ই ছুরিটা নিয়ে সমীরের উপর হামলা করবে তখনই তৌহিদ পিস্টলটা তার মাথার পেছনে ঠেকিয়ে বলে,
– ইউ আর আন্ডার এরেস্ট স্নিগ্ধ। তোমার গেম শেষ।
অবাককর ব্যাপার স্নিগ্ধের ভাবের কোনো পরিবর্তন হলো না। সে উলটো বিকৃত হাসি দিয়ে বললো,
– ফোনটা রিসিভ করুন অফিসার।
তখন ই ফোনটা বেজে উঠে তৌহিদের। ফোনটা রিসিভ করতেই শুনতে পেলো,
– স্যার মতিজিল ১ এ একটা খুন হয়েছে……
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি