দৃষ্টির অগোচরে,২১তম_পর্ব,২২তম_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
২১তম_পর্ব
বিশ মিনিট পর একটা কাগজ আস্তে করে নুশরাতের হাতে গুজে দিলো। নুশরাত কাগজটি খুলতেই দেখলো কাগজে তিনজন নাম এবং তাদের ঠিকানা রয়েছে। নামগুলোর মাঝে একটি দেখে নুশরাতের চোখ জোড়া সরু এবং ভ্রু যুগল কুঞ্চিত হয়ে আসলো। সে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো,
– আপনি শিওর এনারাই এই কালেকশনটা ওর্ডার করে?
– হ্যা ম্যাম, ইনারাই বোথ মেইল এন্ড ফিমেল কালেকশন ওর্ডার করে।
নুশরাত কিছু বললো না। কাগজটা ভাজ করে স্বযত্নে ব্যাগে রেখে দিলো সে। দোকান থেকে বের হতেই কারোর সাথে ধাক্কা লাগলো তার। মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো সামনের ব্যাক্তিটি আর কেউ নয় বরং রবিন। ঘড়ির কাঁটাটা দুপুর বারোটার ঘড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই সময় রবিনকে এই এলাকায় দেখতে পারবে বলে আশা করে নি নুশরাত। রবিন তাকে দেখতেই অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
– তুই এখানে? কেনাকাটা করতে এসেছিস?
– হু, একটা পারফিউম কিনতে এসেছিলাম।
– তুই আবার পাগলামী শুরু করেছিস? কি দরকার এসবের? তোর উপর একবার হামলা হয়েছে। আমি চাই না দ্বিতীয়বার তোর সাথে খারাপ কিছু হোক!
রবিনের সাথে নুশরাতের বন্ধুত্বটা আজকের নয়। তারা একই সাথে ওকালতি করছে বহুদিন, বহু বছর। তাই নুশরাতের প্রতি তার চিন্তার কারণটা আঁচ করাটা অনেক কঠিন কিছু না। নুশরাত মুচকি হেসে বললো,
– টেনশন করিস না, ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না। কিন্তু তুই এখানে কেনো?
– আর বলিস না, একটা ক্লাইন্টের সাথে মিট করতে এসেছিলাম। সামনের মাসে সামিয়ার জন্মদিন, ভাবলাম ওকে একটা পারফিউম গিফট করলে মন্দ হয় না।
– সামিয়া এখনো রাজশাহীতে আছে?
– হ্যা রে, বোনটা আমার বড় হয়ে গেছে। একটা বাসা ভাড়া করেছে। ওখানেই থাকছে।
– ঢাকায় এসে পড়লেই তো পারে। ওর পড়াশোনা শেষ। আমাদের সাথেই প্রাকটিস করবে।
– ও চাচ্ছে না। ওখানে বেশ ভালো একজন উকিল শাহাদাত আহমেদের আন্ডারে কাজ শিখছে। ও খুশি থাকলেই আমি খুশি।
– চল, দুপুরের লান্সটা সেরে নেই? বড্ড ক্ষুধা লেগেছে রে।
রবিন মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলো। একটা ছোট দোকানে খেতে বসলো তারা। দোকানটি রাস্তার ধারেই অবস্থিত। একজন বৃদ্ধা মহিলা দোকানটি চালায়। দাম কম থাকায় মানুষের ভিড় অনেক। নুশরাত ভাত, মুরগী মাংস আর ডাল ওর্ডার করলো। দোকানের ছোট ছেলেটা টেবিলটা মুছে দিলো। নুশরাতের চোখ তখন দোকানের উপরের ছোট টিভির উপর গেলো। টিভিতে তৌহিদকে দেখা যাচ্ছে। সে সাংবাদিকদের নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে নাজেহাল। নুশরাত চোখ নামিয়ে ব্রেকিং নিউজের দিকে চোখ রাখলো। সেখানে দেখা যাচ্ছে,
” যুবনেতা রাজীবুল ইসলামের লাশ আজ সকাল ৯টায় মতিজিলের এশিয়া হোটেল এবং রিসোর্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটা কি খুন নাকি নিছক আত্মহত্যা পুলিশ এখনো বলতে পারছে না।”
নুশরাত নিউজটা পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। খাবার চলে এসেছে। রবিন তার প্লেটটা কাছে টেনে বলে,
– কিরে মুখের বারোটা বাজলো যে হঠাৎ! কি ভাবছিস?
– তৌহিদ ভাইয়ের কথা ভাবছি। বেঁচারার উপর এখন অনেক চাপ বেড়ে গেছে। নেতার কেস বলে কথা
নুশরাতের কথা শুনে তার দিকে সরু দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো রবিন। এর পর নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলো,
– তোর একটু বেশি দরদ জন্মাচ্ছে না তার প্রতি?
– ব্যাপারটা দরদের নয়। আসলে তার সাথে আমার সম্পর্কটা পাঁচটা সম্পর্কের মতো সাধারণ নয়। আমি বললেও তুই বুঝবি না।
বেশ রোশের সাথেই কথাটা বলে নুশরাত। রবিন তখন বিদ্রুপের স্বরে বলে,
– জেনে আমার কাজ ও নেই। শুধু তুই নিজেকে বিপদে ফেলিস না তাহলেই হবে। ব্যাটার ঝামেলা ব্যাটাই মিটাবে৷
– তোর কি তাকে কোনো কারণে অপছন্দ?
– অপছন্দ ও না, পছন্দ ও না। আমি তো আর তার মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবো না। তাই এতো পছন্দ করার ও কিছু নেই৷ এসব পুলিশদের থেকে দূরে থাকাই কল্যান। সব ক্ষমতার কাছে পুতুলমাত্র
– উকিল হয়ে পুলিশকে এড়াচ্ছিস?
– খা, ঠান্ডা হয়ে যাবে খাবার
নুশরাত হাসতে হাসতে খাওয়া শুরু করলো। অনেকদিন পর রবিনের সাথে এভাবে তার বসা হচ্ছে। তারা দুজন ই দুজনের কাজে ব্যাস্ত থাকে। স্নিগ্ধের কেসের জন্য নুশরাতের প্রচুর দৌড়াদৌড়ি ও করতে হয়েছে। সেকারণে আরো ও বেশি রবিনের সাথে দেখা হয় নি। আজকে বেশ ভালো লাগছে। কারণ মানুষটা তার পাশে তখন ছিলো যখন কেউ তার পাশে ছিলো না। নুশরাত বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাবারটা খাচ্ছে। খাবারটা সত্যি দামের তুলনায় অতুলনীয়_____________
শহীদুল সাহেবের সামনে বসে রয়েছে তৌহিদ। শহীদুল সাহেব চোখের চশমাটা টেবিলের উপর রেখে, হাতজোড়া একত্রিত করে থুতনিতে ঠেকালেন। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
– আত্মহত্যা এবং খুন দুটোর মাঝের তফাত টা এতোটাই সরু যে সহজে বোঝা যায় না। আমি নিজেও হতভম্ব। তোমাকে কি বলবো?
– স্যার এটা আত্মহত্যা না, কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার। রাজীবুল ইসলামের মতো মানুষ আর যাই হোক আত্মহত্যা করবেন না। আমি তার সাথে অনেকবার ই পার্সোনালি মিট করেছি। হি ইজ এরোগেন্ট, সেলফিশ এন্ড ড্রামাটিক পারসন। তার মতো একটা জানোয়ার আত্মহত্যা করবে না।
– কিন্তু কোনো প্রুভ নেই। বডিতে হাই ডোজের ড্রাগস পাওয়া গেছে, স্লিপিং পিলস তো আছেই। ব্লেডে কেবল তার ফিংগার প্রিন্ট। তার রুমে কেউ আসে নি, তার রুম থেকে কেউ বের হয় নি। সিসিটিভি পুরো ক্লিন চিট৷ খুনিকে কিভাবে ট্রেস করবে? আর কাকেই বা ট্রেস করবে?
তৌহিদ চুপ করে থাকে। সত্যি এটা প্রমাণ করা অসম্ভব। একটা সিঙ্গেল ক্লু রাখে নি খুনি। ঠান্ডা মাথায় ছক কেটে খুনটা করছে সে। তৌহিদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কেসের রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। উপর মহলের চাপ ও কম নয়। সব কিছুকে সামাল দেওয়াটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
এক সপ্তাহ পর,
আবছা আলোতে একটা সাদা বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। বোর্ডে ৭টি ছবি পিন দিয়ে লাগানো। তার মাঝে চারটি ছবিতে লাল মার্কারের ক্রস চিহ্ন। তিনটি ছবির একটিতে কালো মার্কার দিয়ে জিজ্ঞাসা বোধক চিহ্ন দেওয়া। স্নিগ্ধের তীর্যক দৃষ্টি একটি ছবির উপর। সে লাল মার্কারটি দিয়ে ছবিটির উপর ক্রস একে দিলো। তার আগামী শিকার ছবির ব্যাক্তিটি।
বৃষ্টি পড়ছে অঝর ধারায়। থানায় বসে রয়েছে তৌহিদ। এই একটা সপ্তাহ ধরে কম ঝামেলা যাচ্ছে না তার উপর। উপর মহল, মিডিয়া এখনো রাজীবুল ইসলামের খুনের রহস্য উদঘাটনে ব্যাস্ত। তৌহিদের হাতে স্বল্প কিছু ক্লু এসেছে। কিন্তু ব্যাপারগুলোকে ক্লু বললে মানুষ পাগল বলবে। তাই সে কাউকে প্রকাশ করে নি,তার মাথায় কি চলছে। প্রোফাইল ঘাটতে ঘাটতে একটা জিনিস তার চোখে পড়েছে। ব্যাপারটা কাকতালীয় ও হতে পারে। মাহির, আলতাফ,শামীম, রাজিব একই ভার্সিটিতে পড়তো, শুধু তাই নয় তারা একই ডিপার্টমেন্টে পড়তো। ব্যাপারটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু তবুও তার মনে খটখট করছে ব্যাপারটা। মাহির এবং আলতাফের মৃত্যুর রহস্যের সমাধান দুনিয়ার সামনে হলেও তার মনে জিজ্ঞাসা রেখে গেছে। যদি ব্যাপারগুলোকে একই সারিতে সাজানো হয় তবে কেসগুলোকে অন্যাভাবেও চিন্তা করা যায়। রাজীবের মৃত্যুর দশদিন পূর্বে তার শুধু একটা নাম্বারের সাথেই কথা হয়েছে সেটা হলো শামীম। এর পর থেকে তার ফোন সুইচড অফ ছিলো। শুধু মৃত্যুর আধা ঘন্টা আগে সে ফোনটি অন করে তার বাবা এবং ছোট ভাইকে ফোন করে। রাজীবের বাবা কামাল ইসলামের ভাষ্য, তার ছেলে তাকে ফোন করে অনেক ক্ষণ কথা বলেছিলেন। শুধু তাই নয়, সে এও বলেছিলো,
“বাবা আমি কনফারেন্সের কাজ শেষে বাসায় আসবো, অনেকদিন বাসায় আসা হয় না। বাবা আমার জন্য দোয়া করো। আমি তোমার ভালো ছেলে হতে চাই”
কল রেকর্ডিং ও তোলা হয়েছিলো। এবং এই কথাগুলোই রাজীব বলেছিলো। কথা বলার সময় তার কন্ঠ কাঁপছিলো। রাজীবের বাড়ির লোক, এসিস্ট্যান্ট, পার্টির লোকদের ভাষ্য অনুযায়ী রাজীবের সাথে কারোর শত্রুতা রয়েছে। তাই তাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এই খুনের তদন্ত করেও কোনো সুরাহা করতে পারছে না। তৌহিদ এজন্যই কেসটা অন্যভাবে ভাবতে চাচ্ছে। তখন ই ফোনটা বেজে উঠে তৌহিদের টেবিলের। ফোনটা রিসিভ করতেই তৌহিদের মুখের রঙ পালটে যায়। এক মূহুর্ত দেরি না করে গাড়ি বের করতে বলে সে আলিফকে। গন্তব্য উত্তরা সেক্টর ১৪………
চলবে
দৃষ্টির অগোচরে
২২তম_পর্ব
তখন ই ফোনটা বেজে উঠে তৌহিদের টেবিলের। ফোনটা রিসিভ করতেই তৌহিদের মুখের রঙ পালটে যায়। এক মূহুর্ত দেরি না করে গাড়ি বের করতে বলে সে আলিফকে। গন্তব্য উত্তরা সেক্টর ১৪, কিছুক্ষণ পূর্বে ইন্সপেক্টর হাবীবের ফোন এসেছিলো তৌহিদের ফোনে। সাব-ইন্সপেক্টর হাবীব এখন ইন্সপেক্টর পদে উত্তীর্ণ হয়েছে। এতোদিনের প্রমোশনটা তৌহিদের ট্রান্সফারের পর অবশেষে নসীবে জুটেছে তার। হাবীবের ফোন পেয়ে প্রথমে বেশ অবাক হয় তৌহিদ। তৌহিদের সাথে এতোদিন পর সে আজ যোগাযোগ করেছে সে। তৌহিদ ভেবেছিলো অহেতুক কারণে নিজের কতৃত্বের বড়াই করতে ফোন করেছে সে। কিন্তু তার চিন্তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে হাবীব। ফোন রিসিভ করতেই সে বলে,
– আসসালামু আলাইকুম, স্যার। আপনি কি ফ্রি আছেন? একটু উত্তরা চৌদ্দ নম্বর সেক্টরে আসতে হবে। আমরা একটি লাশ পেয়েছি বিল্ডিং এর ছাদের ট্যাংকিতে। আপনি যদি আসতেন ভালো হতো।
যদিও কেসটা উত্তরা থানার আন্ডারে এবং তৌহিদ মতিজিল থানার ওসি; তবুও হাবীব তাকে সেখানে ডেকেছে। হাবীবের মতো লোক অহেতুক কোনো কারণে তাকে সেখানে ডাকবে না। তাই দেরি না করে তৌহিদ ছুটলো উত্তরার দিকে।
তৌহিদ যখন বিল্ডিং এর এড্রেস এ পৌছালো তখন রাত নয়টা বাজে। বৃষ্টির বেগ আরো বেড়েছে। রেইনকোটের হুডিটা দিয়ে গাড়ি থেকে নামলো তৌহিদ। অবাককর ব্যাপার হলো বিল্ডিংটার অবস্থান। বিল্ডিং টা ঠিক সেই বিল্ডিং এর পাশে যেই বিল্ডিং এ মাহিরের খুন হয়েছিলো। হয়তো এটাই কারণ হাবীবের তাকে এখানে ডাকার। তৌহিদ বিল্ডিং এর ভেতরে প্রবেশ করলো। এই বিল্ডিং টা নতুন, ছয়মাস আগে এটার কন্সট্রাকশন চলছিলো। তৌহিদ ছাদে পৌছালো, উত্তরা থানার নতুন ওসি শেখর দত্ত সেখানে উপস্থিত। তৌহিদ নাকে রুমাল বেধে এগিয়ে গেলো শেখরের কাছে। লাশের গন্ধে পেট উগড়ে বমি হবার যোগাড়। না দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছে লাশের বয়স তিন থেকে চার মাস তো হবেই। হয়তো পঁচে গিয়েছে। শেখর তৌহিদকে দেখে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো। তৌহিদ তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– কতো পুরানো লাশ?
– ছয় থেকে সাত মাস তো হবেই।
– শেখরদা আমাকে এখানে ডাকার কারণ?
– কারণ তো আসেই। লাশের সাথে কিছু জিনিস পেয়েছি। লাশের অবস্থা তো দেখেছেন ই। চেনা সম্ভব ই না। কিন্তু সৌভাগ্যবশত লাশের পকেটে তার এনআইডি কার্ড ছিলো। সেখান থেকেই জানতে পারি লাশের পরিচয়। লাশটি উত্তরা থানার ইন্সপেক্টর ইশান তাকুলদারের। হাবীবের কাছে যতটুকু শুনেছি ও তোমার খুব ক্লোজ কলিগ। তাই তোমাকে এখানে ডাকা
তৌহিদ কিছুক্ষণ থম মেরে ছিলো। ইন্সপেক্টর ইশান তাকুলদার কলিগ কম বন্ধু বেশি ছিলো তৌহিদের। কত কেস একসাথে সলভ করেছে তার ঠিক নেই। ছেলেটার ট্রান্সফার হয়েছিলো আটমাস আগে। রাজশাহীতে পোস্টিং পড়েছিলো। তারপর কিছুদিন যোগাযোগ করার পর হুট করেই ছেলেটা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তৌহিদ ও নানা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার জন্য আর নিজ থেকে যেচে যোগাযোগ করা হয় নি ইশানের সাথে। আজ আট মাস পর ছেলেটাকে এভাবে লাশ রুপে পাবে কল্পনাও করে নি সে৷ ছেলেটার বাবা-মা রাজশাহীতেই থাকেন। বিয়ে এখনো করে নি ইশান। বয়স বত্রিশ হবে। অজান্তেই তৌহিদের চোখের কোনা ভিজে আসছে। খুনিকে পেলে হয়তো মাটিতে পুতে ফেলতো সে। লাশের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তৌহিদ। লাশটা পুরো পানির ট্যাংকিতে থাকতে থাকতে ফুলে উঠেছে। পঁচে গলে একাকার অবস্থা। মুখটা চেনার উপায় নাই। তৌহিদ এক দৃষ্টিতে লাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। লাশটাকে প্লাস্টিকে মোড়া হচ্ছে। এখনই ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হবে। তৌহিদের দৃষ্টি স্থির। মাথায় হাজারো প্রশ্ন! কে এই খুনি!
ছাঁদ থেকে আশে পাশে তাকালো তৌহিদ। বিল্ডিং এর একজন কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান,
– স্যার বিল্ডিং এ এসেছি বেশিদিন হয় নি। বিগত দুই সপ্তাহ আগেই সবাইকে ফ্লাটের চাবি দেওয়া হয়েছিলো। পানিতে খুব অদ্ভুত গন্ধ পেতাম, বমি চলে আসতো গন্ধে। ভেবেছিলাম এটা হয়তো ওয়াশার পানির সমস্যা। আমরা কমপ্লেইন ও দেই। কতৃপক্ষ জানায় ওয়াশার পানি ঠিক আছে। তাই আমরা ঠিক করে আজ বিকালে ট্যাংকি পরিস্কার করবো। ট্যাংকি পরিস্কার করতে যেয়ে আমরা পলিথিলে প্যাঁচানো লাশটা পাই। প্রথমে বেশ ভয় পেয়ে যাই সবাই। পুলিশ কে ফোন করে ব্যাপারটা জানাই। পুলিশ সন্ধ্যায় এখানে আসে। তারপর তো আপনারা জানেন ই।
বিল্ডিং এর লোকটার বক্তব্য শুনে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয় এই বিল্ডিং এর বিল্ডার এর সাথে যোগাযোগ করবে। তখন তৌহিদ শেখরকে বলে,
– শেখরদা, আমি যদি এই কেসে সাহায্য করি তাহলে কি তোমার আপত্তি আছে?
– একেবারেই না। আমি বুঝতে পারছি, তুমি কেনো এতোটা ডেস্পারেট হয়ে আছো। এককাজ করো এখন বাসায় যাও। ফরেন্সিক রিপোর্ট আসলে আমি তোমাকে ফোন করবো।
তৌহিদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারপর বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে যায়। তার মনে একটা খটকা কাঁটার মতো বিধছে। যদি সেও খটকাটা ঠিক হয় তবে কেসের কিছু সে সঠিক দিকেই আগাচ্ছে। এখন শুধু রিপোর্ট আসার অপেক্ষা।
রাজীবুল ইসলামের নিউজের পর নতুন নিউজ নিয়ে মিডিয়ে মেতেছে,
“ইন্সপেক্টর ইশান তালুকদারের খুন”
“ইন্সপেক্টর ইশান তাকুলদারের সাত মাস পুরোনো লাশ সেক্টর ১৪ এর “….” বিল্ডিং এর ট্যাংকি থেকে উদ্ধার”
খবরের পাতার দ্বিতীয় পেজে এমন সংবাদ পেয়ে বেশ চমকে উঠে নুশরাত। বিশেষ করে বিল্ডিং এর জায়গাটা দেখে। আরোও বেশি অবাক হয়েছে যখন দেখেছে লাশটি সাত মাস পুরোনো। কারণ মাহিরের মৃত্যুর ও সাত মাস ই হয়েছে। ইশানকে ঠিক একই ভাবে খুন করা হয়েছে যেভাবে মাহিরকে খুন করা হয়েছে। ব্যাপারটা কি কেবলই কাকতালীয় নাকি……….
মুশফিকা রহমান মৈথি