এক দেখায়,দ্বিতীয় পর্ব
Writer_Sumaiya karim Nasrin
সাদমান বাসায় পৌঁছে দেখে হিমির বাসায় তালা ঝুলানো। পুরো বাড়ি টা পাঁচ তলা বিল্ডিং বিশিষ্ট। হিমিরা ৩ তলায় থাকে। আর বাদ বাকি বাসা ভাড়া দেওয়া। সাদমান উপরে গিয়ে যে কারো কাছে জিঙ্গেস করবে তার ও উপায় নেই। তাই সাদমান এক প্রকার বাধ্য হয়ে বাসার দারোয়ানের কাছে যায়।
-আংকেল হিমি আর উনার মা কোথায় গেছেন বলতে পারবেন?
দুর্ভাগ্য বশত দারোয়ান সকালে তার ছেলে কে পাঠিয়েছিলো তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে। ১১ টার সময় তিনি এসেছে তাই বলতে পারলেন না হিমি রা কোথায় গিয়েছেন শুধু জানেন কোথাও একটা গিয়েছেন দু-তিন দিন থাকবেন। দারোয়ান সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখছেন সাদমান কে তাই তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল তার দিকে
-কিন্তু আপনি কে বলুন তো!
-আমি সাদমান। পুরো নাম সাদমান খান। আপাতত এই টুকুই জানুন। আচ্ছা আমি আসছি।
সাদমান তার ড্রাইভার রাজু কে বলেছিলো গাড়ি নিয়ে আসতে। রাজু গাড়ি নিয়ে আসলো হিমিদের বাসার সামনে। সাদমান হিমির সামনে সাধারণ বেশ ভুশায় গিয়েছিলো কারণ সাদমান চায় কেউ একজন তার এই সাধারণত্ব দেখেই প্রেমে পড়ুক ভালোবাসুক। সাদমানের ড্রাইভার গাড়ি টা ব্যাক করে হিমিদের বাসা থেকে একটু দূরে নিয়ে যায় সাদমান হাতের ইশারায় এটা করতে বলেছে। কারণ দারোয়ান দেখতে পেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। সাদমান বাড়ি থেকে বের হয়ে অনেকটা পথ চলে আসে। সে ভেবেছে এখন আর দারোয়ান টা নেই কিন্তু তার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল। দারোয়ানের সন্দেহ থাকায় সে সাদমানের অগোচরেই পিছু নেয় তার আর সাদমান কে দামী একটা গাড়িতে উঠে চলে যেতে দেখে হা হয়ে সেদিকে তাকিয়েই থাকল।
টানা ৩ ঘন্টা পর হিমি তার খালার বাসায় পৌঁছায়। শিশিরের বোন শেফা খুশিতে আত্মহারা। চিল্লিয়ে সবাই কে ডাকলো,
-আম্মু ভাইয়া কোথায় তোমরা দেখো দেখো হিমি আপু আর খালামনি আসছে।
হিমি খালা মনি তাকে জড়িয়ে ধরে হিমি ও।
-কেমন আছিস মা?
-এইতো ঠিকঠাক তোমরা কেমন আছো বলো!
-আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো।
-হিমি আপু তুমি চলো আমার সাথে।
শেফা হিমি কে নিয়ে যায়। দু বোন মিলে ভালো মন্দ কথা বলতে ব্যস্ত। শিশির হিমি কে দেখে খুশি হয়। এই মেয়ে না আসলে এই বিয়ের মজা ই থাকতো না। শিশির অভিমানী সুরে বললো
-দুদিন আগে আসতে বলেছি আর তুই এখন আসলি? তার চেয়ে ভালো না আসলেই তো পারতি!
-তাহলে ভাইয়া তুমি কি বলো চলে যেতে?(ভ্রুঁ কুঁচকে)
-আমি কেন বলবো!
-আচ্ছা তুমি যখন থাকতে ও বলবে না চলে যাচ্ছি হু😪
-এক টা থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো ফাজিল মেয়ে! সাহস থাকলে যা তো!
-এ্যাঁহ আমি বিড়াল হয়ে তোমার মতো একটা ইঁদুর কে সাহস দেখাতে আমার বয়েই গেছে।
-তবে রে সয়তান্নি!
শিশির হিমির কান টেনে ধরল।
-আহ ভাইয়া লাগছে তো!
-লাগুক আগে আসলি না কেন তুই?
-আমি কি করবো তোমার মায়ের বোনের দোষ সব!
-বলিস কি রে খালামনি কি করলো এখানে?
-উনি তোমার বিয়ের কথা আমাকে বলতেই ভুলে গেছিলেন! কাল ই বললো!
-কি আর করবে খালামনির বয়স হচ্ছে তো তাই ভুলে যায়। আমার উচিত ছিলো তোকে ফোন দেওয়া মিসটেক হয়ে গেছে। আচ্ছা আর কথা না শোন তোর কিন্তু অনেক কাজ আজকে। এখন যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। স্ট্রেজ কিন্তু তোর পছন্দ মতো সাজার জন্য নির্দেশনা দিবি মেহেদি ও তুই লাগিয়ে দিবি সবাইকে!
হিমির চোখ কপালে।
-কি বলো আমি সবাইকে মেহেদি কিভাবে?
-যেভাবে পারিস। সবাই জানে বেস্ট মেহেদি ডিজাইনার তুই তাই তোকেই দিয়ে দিতে হবে।
-আহা ভাইয়া কি শুরু করলি আপু মাত্রই আসলো আর এখনি কাজ ধরিয়ে দিচ্ছিস?
-দিবোই তো।
দুই ভাই বোনের ঝগড়া লেগে যায়। হিমি আর না পেরে বললো,
-ঝগড়া ডিসমিশ শেফা তুমি আমার সাথে চলো।
শিশিরের ফোন টা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রীনে ভেসে উঠা নাম টা দেখে ঠোঁটে ফুটে উঠলো রাজ্যজয়ের হাসি। সঙ্গে মুখ টাও বেশ কোমল আর প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো। মৌ কল দিয়েছে। শিশিরের হবু বউ।
ছাঁদের উপর স্ট্রেজ সাজানো হয়েছে।পেছনের দিক টায় লাল নীল সবুজ হলুদ রঙ্গা কাপড়। বড় ছোট মিলিয়ে ৩ টা বেশ সুন্দর আয়না। আর তার চারপাশে গোলাপ রজনী গন্ধা আরো বিভিন্ন রকমের ফুল। পরিবেশ টা ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা। এতো কিছু করতে করতে রাত আটটা বেজে যায়। মেহেদি লাগানোর কাজ টা কম খাটুনির কাজ নয় তাই শিশির হিমির কে তেমন কাজ করতে দিলো সব তুলে রাখলো মেহেদি আর বাদ বাকি কাজের জন্য। এর আগে হিমি একবার শিশিরের বউ মৌয়ের সাথে কথা বলে নিলো। মৌ কে হলুদ শাড়ি ম্যাচিং লাল ব্লাউজ আর হলুদের জুয়েলারি পড়ানো হয়েছে। যা লাগছে না চোখের জুতি কেড়ে নেওয়ার মতো। শিশির তো এক দেখায় শেষ। এই মেয়ে কে মতো সুন্দর কেন লাগতে হবে শিশির ভেবে পায় না।
হিমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে আছে তার কথা সে শাড়ি পড়বে না। তার একমাত্র কারণ সে শাড়ি সামলাতে পারে না। সবার সামনে ঠাস করে পড়ে গিয়ে মান সম্মান কেরোসিন করার থেকে না পড়াই বেস্ট। এদিকে শেফা ও কম যায় না। সে কিছুতেই হাল ছাড়ছে না। সবাই শাড়ি পড়বে ঠিক করেছে সেখানে হিমি যদি না পরে কেমন দেখায়?
-আপু প্লিজ দরজা খোলো। তোমাকে বেশি কষ্ট করতে হবে না। জাস্ট পড়বে তুমি সামলাতে না পারলে আমি আছি তো নাকি!
-শেফা জোড় করো না আমি তো বলেছি আমি শাড়ি পরে হাটতে পারি না।
-আহা তোমাকে অতো হাটতে হবে না তো। আমি কথা দিচ্ছি তোমার সাথেই থাকবো তোমার কিচ্ছু হবে না। এবার লক্ষী মেয়ের মতো দরজা টা খোল তো!
হিমি মুখের মানচিত্র বাংলা পাঁচের মতো করে দরজা খুলে দিলো। কারণ শেফা বড্ড জেদি তার জেদের কাছে হার মানতেই হতো। নাহলে পরে দেখা যাবে সে ও দরজা বন্ধ করে বসে আছে। আর শিশিরের গায়ে হলুদ একেবারে তছনছ। হিমি কে দেখা মাত্রই শেফা চিৎকার দিয়ে উঠলো,
-এ কিইইইই আপু…..
শেফার চিৎকার শুনে হিমির ভয়ে লাফিয়ে উঠলো
-ক্ ক্ কি হয়েছে শেফা?
শেফা অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বলল
-তুমি এখনো ফ্রেশ হও নি?
-না আসলে মানে….
-এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে যাও আমি আসছি!
-আচ্ছা বাবা যাচ্ছি তাই বলে এভাবে চিৎকার দিতে হয়?
-হ্যাঁ হয় কয়টা বাজে দেখেছো। এক্ষুনি আম্মু এসে বকা শুরু করবে দেখে নিও!
-আরে রাগ করো না আমি ৫ মিনিটের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-তাড়াতাড়ি করো।
সবাই শাড়ি পড়ে রেডি শুধু হিমির টাই হচ্ছে না। শেষে না পারতে শেফা তার মা কে ডেকে নিয়ে আসে। তিনি হিমি কে খুব সুন্দর একটা হলুদের সাথে ম্যাচিং হলুদ শাড়ি পড়িয়ে দেন। হিমির চুল গুলো ক্লিপ দিয়ে ফুলিয়ে বেঁধে পিঠের উপর ছেড়ে দেওয়া। হিমি কে যা লাগছে না! যে কেউ ক্রাশ খেয়ে যাবে।
-মাশাআল্লাহ আমার মেয়ে টা কে তো দারুন মানিয়েছে।
হিমি লজ্জা পায়। শেফার মা চোখের নিচ থেকে কাজল নিয়ে এসে হিমির কানের পেছনে গুঁজে দেয় আর বলেন,
-কারো নজর না লাগুক!
-বললেই হলো নাকি দেখো আজকে কতো ছেলে ক্রাশ খেয়ে বেঁহুশ হয়ে যায়।
শেফার কথায় সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। হিমি বললো,
-ক্রাশ খেয়ে কেউ বেহুঁশ হয়ে যায় কখনো শুনেছো?
-হ্যাঁ শুনেছি! ওই তো ফেব্রুয়ারি মাসের ৩১ তারিখে এক সংবাদপত্রে লিখা ছিলো ‘এক সুন্দরী তরুণীর উপর এক দল যুবক ক্রাশ খেয়ে বেহুঁশ আহত হয়েছে শতাধিক!’
শেফার কথা শুনে সবার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। হিমি ব্যতিত সবাই একে অন্যের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে বলল
-ফেব্রুয়ারি ৩০ নাকি ৩১?
চলবে?