এক দেখায়,তৃতীয় পর্ব,চতুর্থ পর্ব

এক দেখায়,তৃতীয় পর্ব,চতুর্থ পর্ব
Writer_Sumaiya karim Nasrin

সবাই শেফার কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। যাই হোক সবাই সময় হয়ে এসেছে তাই সবার ছাঁদে যেতে হবে। হিমি শাড়ি সামলাতে পারে না এটাই সব চেয়ে বড় সমস্যা। কোনো মতে ছাঁদে উঠে সে। একে একে হলুদের সব অনুষ্ঠান শেষ হয় মেহেদির পালা আসতেই হিমির অবস্থা একে বারে হালুয়া। কমপক্ষে দশ বারো জন কে দিয়ে দেওয়ার পর হাত আর চলে না। তাই হিমি অসহায় ভাবে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে

-ভাইয়া প্লিজ আমি আর পারবো হাত প্রচুর ব্যথা করছে।

-আচ্ছা ঠিক আছে আর লাগবে না। এত্তো গুলা থ্যাঙ্কস আমার বনু টা।

অনুষ্ঠান প্রায় ই শেষ। সবাই ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে আছে। একে একে সবাই ঘুমুতে চলে যায়। হিমি শাড়ি চেঞ্জ করে নেয় নেহাত আজ ভাগ্য ভালো তাই বলে সে এতোক্ষণ শাড়ি পড়ে ছিলো। খারাপ কিছু হলে কি হাল হতো কে জানে! পুরো বাসায় মানুষ গিজগিজ করছে। স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলার ও উপায় নেই। তাই হিমি রুম থেকে বের হয়। দেখে শিশির ও বের হয়েছে। পড়নে টিশার্ট। হিমি শিশির কে দেখে বললো,

-ভাইয়া কোথাও যাচ্ছো?

-হ্যাঁ মানে না….

-কি মানে মানে করছো বলো তো হুম?

শিশির মাথা চুলকিয়ে বললো,

-আসলে একটু মৌ কে দেখতে ইচ্ছে করছে তাই

-ওমা এই ব্যাপার।এত্তি ভালোবাসাআআআ

হিমি কোমড়ে হাত দিয়ে দুষ্টুমির ছলে কথাটা বললো। শিশির লজ্জা পায়। আর বললো,

-তুই আমার সাথে যাবি?

-কি বলো এই রাতের বেলায় কিভাবে?

-আরে সমস্যা নেই আমার ঘোড়া টা আছে না!

-ভাইয়া তুমি ঘোড়া কবে কিনেছো আমাকে আগে বলো নি কেন?

শিশির বলছিলো বাইকের কথা আর হিমি মনে করেছে সত্যি ই ঘোড়া। শিশির বাইকের সামনে হিমু কে নিয়ে গিয়ে বললো,

-এই দেখ আমার ঘোড়া।

-এই যাহ আমি তো ভেবেছিলাম সত্যি ই ঘোড়া।

-হুম ঘোড়া ই তো। বেশি কথা না বলে এখন চল।

-বাইকে আমার ভয় করে ভাইয়া!

-আরে কিসের ভয় চল তো।

শিশিরের সাথে হিমি ভাইকে করে মৌয়ের বাসায় আসে। বিশাল বাড়ি। কতো সুন্দর করে সাজানো। হিমি হা করে তাকিয়ে আছে। বাড়ির গেটের ভেতর ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে শিশুর আর হিমি। হিমি বললো,

-ভাইয়া ভেতরে যাবা না?

-কি বলিস যাওয়া কি ঠিক হবে!

-ঠিক বেঠিক কি বলছো। পরে কেউ দেখলে চোর ভেবে উদুম কেলানি দিবে চলো তাড়াতাড়ি ভেতরে যাই।

-আচ্ছা দাঁড়া তাহলে মৌ কে বলে দেই।

-হুম।

শিশির মৌ কে কল দিয়ে জানায় সে ভেতরে আসবে। মৌ আসতে বললো। শিশির আর হিমি দুজন ই ভেতরে যায়। দুজন কেই আপ্যায়ন করা হলো। হিমি বুঝতে পারে শিশির আর মৌ এর একটু প্রাইভেসি দরকার। তাই শিশির কে একটা চিমটি কাটে সে। শিশির হিমির দিকে তাকায়।

-ভাইয়া তাড়াতাড়ি কথা বলা শেষ করো ওদিকে কাউকে বলে ও আসো নি। সো দ্রুত যেতে হবে!

শিশুর সম্মতি জানালো।

-আচ্ছা আমি ছাঁদে আছি।

হিমি বাড়ির এদিক ওদিক হাটাহাটি করে ছাঁদে যায়। ছাঁদ টা বেশ বড়সড় আর খুব সুন্দর। ফুরফুরে মেজাজে বাতাস খেতে খেতে পরিবেশ টা উপভোগ করতে ব্যস্ত হিমি। শান্ত ও নিরিবিলি থাকায় খুব ভালো লাগছে তার।

সাদমান সম্পর্কে মৌয়ের ভার্সিটি ফ্রেন্ড। সেই সুবাদে মৌয়ের বিয়েতে সে আসে। হঠাৎ করেই তার মনে হলো এখানে হিমি কে কোথাও দেখেছে। সাদমান মনের ভুল ভেবে নিলো কারণ সারাদিন হিমির কথা মাথায় ঘুরতে থাকায় হয়তো ভুল দেখেছে এমন কিছুই ভেবে নিলো সাদমান। হিমির কথা মনে পড়ায় কাজে আর মন বসছে না। তাই সাদমান ফোন হাতে নিয়ে ছাঁদে চলে যায়। ছাঁদে গিয়ে সাদমান পুরাই থ। হিমি ও বড় বড় চোখ করে সাদমানের দিকে তাকায়। দুজন মুখোমুখি দাঁড়ানো। হিমি প্রচুর রেগে যায়।

-আপনি এখানে? ও আমাকে ফলো করতে করতে এসেছেন তাই না। স্টুপিড সয়তান একটা বাসায় কি মা বোন নেই। ছিঃ!

-দেখুন আপনি কিন্তু আমায় ভুল ভাবছেন…

-এ্যাঁহ আসছে ভুল ভাবতে। খাটাশ আর অসভ্য মানুষ একটা।

-আমার কথা শুনুন….

হিমি চলে যেতে নেয় সাদমান আটকানোর চেষ্টা করে। হঠাৎ করে যেনো সাদমান আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো। যাকে নিয়ে এতো জলপনা কল্পনা সে যদি হাতের কাছে থাকে তাহলে তো হলোই।

হিমি চোখ গরম করে তাকায়।

-আমার হাত ছাড়ুন!

-হিমি আপনার সাথে আমার কথা আছে। আপনাকে আমি আপনার বাসায় পর্যন্ত গিয়ে খুঁজেছি কিন্তু পাই নি!

-ও আচ্ছা অভদ্র বলায় আমাকে মারবেন তাই না। আরে আমি কি এতো পঁচে গেছি নাকি। এতো দুর্বল আমি নই। খারাপ কে খারাপ বলার সাহস।

হিমি প্রচন্ড রেগে একের পর এক সাদমান কে উল্টা পাল্টা বলতে থাকে। যা একে বারেই ঠিক নয়। সাদমান বহু চেষ্টা করে ও হিমি কে চুপ করাতে পারছিলো না। হিমি সাদমান হাত ছিটিয়ে চলে যেতে নিবে সাদমান দেওয়ালের সাথে তাকে জাপটে ধরে। সাদমানের বাহুডোরে আবদ্ধ হিমি। সাদমানের শক্তির কাছে পেরে উঠছে না সে!

-আপনি তো দেখছি খারাপের থেকে ও খারাপ…

হুট করে সাদমান হিমির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। হিমির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। শক্ড হয়ে গেছে। মিনিট কয়েক পর সাদমান হিমির কে ছাঁড়লো। হিমি হাঁপাতে শুরু করে আর একটু হলেই তো জানটা বেরিয়ে যেতো। সাদমান ডেভিল স্মাইল দিয়ে ঠোঁট মুছে যায়। রাগে দুঃখে হিমি কি করবে ভেবে না পেয়ে কান্না করে দেয়। সাদমান হিমির কান্না দেখে থ বনে যায়। হিমি নিজের কাছে নিয়ে আসে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। হিমির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

-আমি আসলেই খারাপ। আর হ্যাঁ বাসায় মা বোন কেউ নেই! আমি একা। জানো হিমি আমি তোমাকে এক দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি। সারারাত ঘুমোতে পারিনি। সকালে পাগলের মতো ছুটে গিয়ে যখন তোমাকে পাই নি ভেবেছি তোমাকে হারিয়েই ফেললাম। না হারাই নি। দেখো তোমাকে ঠিক পেয়ে গেছি। তোমাকে আমি হারাতে দিবো না। তুমি আমার #এক_দেখায় ভালোবাসা। লাভ ইউ সো মাচ্ হিমি।

সাদমান সেদিন এর খারাপ প্রস্তাব টার কথা ও হিমি কে খুলে বলে। হিমি ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সব কথা শেষে সাদমান আলতো করে হিমির চোখের পানি মুছে দেয়।

-বৈধ সম্পর্কে জড়ানোর আগেই আমি তোমাকে স্পর্শ করেছি। এই স্পর্শ কে অপবিত্র ভেবো না আমি তোমাকে বিয়ে করে পবিত্র স্পর্শে রূপান্তর করবো আর আমাদের সম্পর্কের বৈধতা দিবো প্রমিস। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি আমার ভালোবাসা কে গ্রহণ করো।

শিড়ি দিয়ে কারো আসার শব্দ হলে হিমি নিজেকে সাদমানের থেকে ছিটকে দূরে সরিয়ে নেয়। সাদমান ও বাঁধা দিলো না। এভাবে নির্জন ছাঁদে তাদের দুজন কে দেখলে যে কারো মনে খারাপ ধারণা আসবেই এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সাদমান ছাঁদের এক পাশে নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ায়।

শিশির এ এসেছিলো হিমি কে ডাকতে। হিকি নিজেকে শক্ত করে শিশিরের সামনে যায়।

-এসেছিস আমি আরো তোকে ডাকতেই আসছিলাম। চল এখন বাড়ি যেতে হবে।

-হুম চলো।

হিমির ভেতর টা ফেটে কান্না আসছিলো।

-আর শোন..

-হ্.হ্যাঁ ভাইয়া..

-তোর কি কিছু হয়েছে? এতো আপসেট দেখাচ্ছে কেন?

-ক্ ক্ কই নাতো।

-ঠিক তো?

-হ্যাঁ একদম।

-তাহলে শোন আম্মু ফোন দিয়েছিলো আমরা যে এখানে তা বলে দিয়েছি।

-বেশ ত..

-বোন তোকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না আর কি লাগবে বল…

-আরে কি যে বলো না।

-আরে বল বল..

-আপাতত এখন ঘুমানো লাগবে সো তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।

-হাহাহা চল চল..

মৌ ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। মুখে হাসি আর চোখে ঘুম। ক্লান্তির ফলে রাজ্যের সকল ঘুম জাপটে বসেছে।

-ভাবী আমরা যাচ্ছি..

-সাবধানে যেও।

-হ্যাঁ যাবো আর তোমাকে ও কাল ই নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো। একদম চিন্তা করো না।

মৌ লজ্জা পেয়ে যায়। শিশির ও হিমি হাসে। হিমি যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে বেরোতে পারে ততোই মঙ্গল। মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে সাদমান এখানে এলো কি করে? আর ওর বাবা মা কেউ নেই মানে? সব কিছুর ভিড়ে সাদমানের এমন ব্যবহারে হিমি কষ্ট পেয়েছে। সাদমান সব কথা শুনলো আর বুঝলো মৌয়ের বর শিশিরের বোন হিমি। হিমি শিশিরের বিয়েতেই এসেছে বলেই বাসায় তালা দেওয়া। শেষে তাদের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকলো সাদমান। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে নিলো। মন টা প্রশান্তিতে ভরে গেছে।

এতো কিছু পেয়ে যাবে সাদমান ভাবে নি। ভালোবাসার মানুষ টির ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ একেঁ দিয়েছে ভাবতেই কেমন অদ্ভুত একটা ফিলিংস হচ্ছে। সাদমান নিজের অজান্তেই চোখ বন্ধ করে বুকের বা পাশে হাত দেয়।

শিশির আর হিমি বাসায় পৌঁছেই ঘুম দিলো। রাত তো আর কম হয় নি।

হিমির ঘুম আসছিলো না। সাদমানের ব্যাপার টা তালগোল পাকাচ্ছে। জীবনের প্রথম কোনো ছেলের স্পর্শ তাও এভাবে পাবে কখনো ভাবে নি। সাদমান কে কি মেনে নিবে! সাদমান সত্যি ই তাকে ভালোবাসে? একদিনে এক দেখায় কখনো ভালোবাসা সম্ভব? সবকিছু কেমন ধোঁয়াশা লাগছে। কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছে সব স্বপ্ন। পর মুহুর্তেই মনে পড়ে নাহ এটা স্বপ্ন নয় বাস্তব,,,,,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here