এক দেখায়,প্রথম পর্ব
Writer_Sumaiya karim Nasrin
-মিস হিমি বিয়ের আগে এক রাত আপনাকে আমার সাথে কাটাতে হবে পারবেন?
হিমি এই কথা টা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। এমন সুন্দর ভদ্র চেহারা আবরণের নিচে যে এতো কুৎসিত একটা মানুষ লুকিয়ে আছে হিমি ভাবতে পারেনি। মুখোশধারী মানুষ বলা চলে। হিমি রেগে যায়।
-ফাজলামি পেয়েছেন? দেখতে তো বেশ ভদ্রই মনে হয়েছে তা এই ভদ্রের নিচে এতো বাজে কেন? এতোই যখন মেয়ে দরকার পতিতালয়ে গেলেই তো পারেন মিস্টার সাদমান। আর কজন কে গিয়ে এই প্রস্তাব দিয়েছেন এক্ষুনি বেরিয়ে যান এই বাড়ি থেকে নয়তো ভালো মতো ধুয়ে পরিষ্কার করে দিবো ফ্রিতে!
হিমির চোখে মুখে আগুনের ফুলকি ঝরছে যেনো। সাদমান বাঁকা হাসে। হিমি আরো রেগে যায়।
-আশ্চর্য! আপনি যাচ্ছেন না কেন?
-জ্বি যাচ্ছি!
সাদমান চলে যায়। নিচে গিয়ে বললো
-বাবা মা তোমরা চলো!
হিমির মা বললো
-কিছু বললেন না তো আপনারা!
-বিয়ে টা হচ্ছে না।
সাদমান তার সাজানো ছদ্মবেশী বাবা মা কে নিয়ে বাড়ি থেকে সোজা বেরিয়ে চলে যায়। হিমির মা হিমির কাছে এসে বলল
-হিমি কি হলো বলতো?
হিমি ভাবছে তার মা কে কথা টা বলা ঠিক হবে কিনা। অনেক ভাবার পর বলল
-না মা তেমন কিছু না। আমার উনাকে পছন্দ হয় নি।
-কি বলিস মা। ছেলের তো মাশাআল্লাহ দেখতে শুনতে ভালো স্ট্যাটাস ও ভালো তাহলে তোর পছন্দ হলো না কেন?
হিমি দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বললো দেখতে ভালো কিন্তু মন টা কুৎসিত। নোংরা একটা মানুষ।
-না আমার বিয়ে হওয়া টা কি খুব জরুরী?
-তোর বাবা নেই। তোকে নিয়ে আমার কতো চিন্তা হয় তা তুই বুঝিস না?
-সেটা তো আমি ও জানি মা। তাই বলে আমার অপছন্দে বিয়ে দিয়ে দিবে বলো এটা চাও তুমি?
-না তা চাইনা। কারণ বিয়ে টা তো তোর। তুই ই সংসার করবি তাই আমি আর কিছু বলবো না। যা হয় ভালোর জন্যই হয়।
-তুমি আমাকে নিয়ে অতো চিন্তা করো না তো মা!
-তা কার জন্য চিন্তা করবো শুনি? আমার কি আরো ছেলে মেয়ে আছে? একটাই তো! আর সন্তানের জন্য বাবা মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না। এখন বুঝবি না যখন একদিন নিজে মা হবি তখন ঠিক ই বুঝবি!
-উফ মা কি যে বলো। আসো তো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
-আমার কোলে মাথা রাখ।
-হু।
হিমির মায়ের কোলে মাথা রাখে। হিমির মা পরম যত্নে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
হিমির বাবা মারা গেছেন বছর খানেক আগে। হিমির মা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। তিনি চাইলেই করতে পারতেন কিন্তু এটা তার একটা বড় ত্যাগ। হিমি অনার্স শেষ করেছে। এখন একটা জবের ব্যাবস্থা হয়ে গেলেই হলো। অসংখ্য বার বিয়ের জন্য অনেকে ধরেছিলো হিমির মাকে কিন্তু উনার পছন্দ না হওয়ায় তিনি ডিরেক্টলি না করে দেন।
সাদমান কে উনার বেশ মনে ধরেছিলো তাই দেখতে আসার কথা জানায়। দেখতেও এসেছে কিন্তু হিমির পছন্দ হলো না। যাই হোক যে সারাজীবন একটা মানুষের সাথে কাটাবে তার পছন্দ অপছন্দ কিনা জানা অত্যাবশ্যক। নাহলে পরে কষ্টের আর সীমা থাকবে না। হিমি এক কাপ চা নিয়ে বেলকনিতে বসে ছিলো হঠাৎ করে তার ফোন টা বেজে উঠে। লিমা ফোন দিয়েছে। লিমা হচ্ছে হিমির সেই ছোট বেলা কার ফ্রেন্ড। একসাথে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব শেষ করে একসাথেই বেড়ে উঠা। হিমি ফোন টা রিসিভ করে কানে লাগিয়ে বললো
-হ্যাঁ লিমা বল!
লিমা বেশ উৎফুল্ল হয়ে আছে হিমি কে কথাটা জানানোর জন্য।
-হিমি তুই না জব খুঁজছিলি?
-হুম! কোনো ব্যবস্থা হলো কি?
-আরে হ্যাঁ রে। আমি যে কোম্পানি তে জব করি সেখানে বসের একজন পারসোবাল এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দিবে। তুই আজ ইন্টারভিউ দিতে চলে যায়। স্যালারি ভালো।
লিমার মামা তাকে জবে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো অনেক আগে। লিমার ও বাবা মা নেই। মামার কাছে বড় হওয়া। তবে লিমার মামি লিমা কে তেমন ভালো চোখে দেখতো না। লিমার জন্য তার মামি মামার সাথে প্রতিদিন ঢুনকো বিষয় নিয়ে ঝগড়া ঝাঠি শুরু করতো এটা লিমা বুঝার পর জবে ঢুকে নিজেই একটা ভাড়া বাড়িতে থাকে। মামার সাথে কথা হয় মাঝেমাঝে।
হিমির আনন্দিত মুখ টা হঠাৎ শুকিয়ে যায়। ঠৌঁটের হাসি বীলিন হয়ে যায়।
-হিমি কি হলো কিছু বলছিস না কেন?
হিমি হতাশার একটা নিশ্বাস ফেলে বললো
-এবার ও হবে না মনে হচ্ছে!
-আরে ধুর আজেবাজে কথা বলবি না তো। আগে দিয়েই দেখ না আমার মন বলছে এবার হয়ে যাবে। তুই কাল ই ইন্টারভিউ দিতে আসছিস ওকে?
-কাল ই!
-হ্যাঁ রে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-আর শোন অফিসে নতুন বস জয়েন করেছে। দেখতে হেব্বি জোস তুই ও তো পুরা ক্রাশ খেয়েছে যাবি।
মুড টা একেবারে বিগড়ে গেলো লিমার কথা শুনে। হিমি বলে দিলো
-থাক আমার আর এই জবের কোনো দরকার নেই।
-সে কি রে কি বলিস। কেন?
—এমনি!
—এমনি মানে কি হয়েছে খুলে বল তো!
হিমি সব খুলে বললো। লিমা ও রেগে যায়।
-শালা স্টুপিড একটা। মেয়ে দেখতে এসে এতো নোংরা প্রস্তাব দেওয়া বলি তুই ওকে যেতে দিলি কেন? আমি হলে তো ব্যাটা কে ফ্যানের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে উরাধুরা কেলিয়ে একদম ওর বিয়ের শখ গুছিয়ে দিতাম। আমাকে ফোন দিতে পারলি না!
লিমার কথা শুনে হিমির হাসি পেলো। নিজে কিনা একটা শুটকি মাছ হয়ে হাতির মতো একটা লোক কে ফ্যানের সাথে উল্টো ঝুলাবে? হাহাহা! হাস্যকর ব্যাপার। হিমি বলল
-থাম থাম!
-থামবো মানে কি? তুই বুঝতে পারছিস ওই ছেলে কতো বড় হারামি? আচ্ছা তুই ওই ছেলের বাড়ির ঠিকানা জানিস?
-বাড়ির ঠিকানা দিয়ে কি করবি?(অবাক হয়ে)
-আমার হাত পা গুলা আকুপাকু করছে জানিস। ওই ছেলের বাড়ি গিয়ে নাক বরাবর ঠুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দিতে পারলে শান্তি হতো।
-থাক যা হয়েছে তো হয়েছে। এখন সেসব কথা বাদ দে। শুধু শুধু আরো মেজাজ টা খারাপ হবে এ ছাড়া কিছু না।
-ঠিক বলেছিস! তুই কিন্তু সকালে রেডি হয়ে থাকিস আমি আসবো নাকি?
-হুম আসতে পারিস। দুজন একসাথে গেলে মন্দ হবে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন টা রেখে দেয় হিমি।
এদিকে সাদমান ছাঁদের রেলিং ধরে মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাবছে। কপি টা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে। এই ভাবার জন্য কপি আর খাওয়া হলো না।
সাদমান জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ে কে নিয়ে ভাবছে। ভাইয়ের বউ কে নিয়ে বাজে অভিজ্ঞতার জন্য সব মেয়ে কেই সাদমানের এক মনে হতো। খারাপ মেয়ে। কিন্তু আজ সাদমান যাকে নিয়ে ভাবছে সেটা হিমি। হিমির চেহারায় সেই মায়া, রাগী লুক ভারী অমায়িক লেগেছে সাদমানের কাছে। না চাইতেও সেসব তাকে ভাবাচ্ছে ভীষণ। হয়তো সাদমানের হিমি কে ভালো লেগে গেছে।
সাদমান এখন অনুশোচনা হচ্ছে কেন সে হিমি কে এই প্রস্তাব টা দিলো! অবশ্য এতে তার দোষ ধরা যায় না। আট দশটা বাজে মেয়ের মতো সাদমান ভুল করে হিমি কে ও তাই ভেবে ফেলেছিলো এটাই তার বড় ভুল হয়ে গেছে। এর আগে সাদমান যত মেয়ে কে দেখতে গিয়েছিলো এই প্রস্তাবে অনেক মেয়ে লোভের বসে রাজি হয়ে গিয়েছিলো। সাদমান সবাইকে রিজেক্ট করে দেয়। তবে আজ একদম কাজ টা ঠিক হয় নি! হিমির কথা শুনে মনে হয় না। দ্বিতীয় বার আর সাদমানের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হবে।
সকালে আবার জবের ইন্টারভিউ আছে তাই অতশত আর না ভেবে সাদমান নিজের কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে তবে। ধ্যান মন সব এক জায়গায় এসে আটকে গেছে যেনো।
সাদমান তাই ম্যানেজার কে ফোন দিয়ে বলে দেয় যে কাল ইন্টারভিউ টা আর হবে না। ম্যানেজার এটা সবাই কে জানিয়ে দেয় যাদের আসার কথা ছিলো। লিমা হিমি কে ফোন দিয়ে জানায় যে আনফরচুনেটলি ইন্টারভিউ টা কাল হচ্ছে না। দুদিন পর হবে। হিমি নিরাশ হয়।তার আর বুঝতে বাকি নেই যে ওই জব ও তার কপালে নেই। এই জন্যই বলে অভাগী যেদিকে যায় সেদিকেই সাগর ফুরায়।
রাতে হিমি ডিনার শেষ করে নেয়। তার মা তাকে ডাকে।
-আম্মু কি কথা বলো!
-তোকে তো বলেছিলাম শিশিরেরর বিয়ের জন্য পাত্রী দেখছে!
-হুম বলেছিলে!
-পাত্রী পছন্দ হয়েছে। শিশিরের বিয়ে ও ঠিক করা ও হয়েছে। কাল গায়ে হলুদ! তোকে আমি কথা টা বলতেই ভুলে গেছিলাম।
-ওমা কি বলো।
-হ্যাঁ রে। তোর খালামনি ও জোড় দিয়েছে কাল যেতেই হবে সকাল সকাল।
-কাল কেই কেন বিয়ের দিন গেলে হতো না?
-হতো না। শিশির তোকে যেতে বলেছে। তুই না গেলে নাকি এর গায়ে হলুদ ভালো ভাবে হবে না।
-হাহাহা ভাইয়া ও না!
-শোন মা তাহলে আমরা কালকে সকালে যাচ্ছি!
-আচ্ছা আম্মু।
হিমি জবের ব্যাপার টা তার মা কে জানালো না। ভাবলো যখন ইন্টারভিউ দিতে যাবে তখন জানালেই হবে নাহলে পরে শুধু শুধু টেনশন করবে। সাদমান ভাবছে সকাল হতেই একবার হিমির সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে বা দেখা করবে। চেষ্টা করেও আর হিমির নাম্বার জোগাড় করা যায় নি। তাই সাদমান সরাসরি হিমিদের বাসায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরের দিন সাদমান বাসায় পৌঁছে দেখে…..
চলবে?
গল্পের শুরু টা দেখে কেউ সবটা বিবেচনা করবেন না।ধন্যবাদ!