ভালোবেসে ভুল করিনি (পর্ব ০১)
Tanjina Islam
কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ মাঝ পথে বৃষ্টি শুরু হলো।
বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য দৌড় দিলাম। সামনে থেকে যে একটা গাড়ি আসছে বৃষ্টির জন্য দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি টা যখন অনেক কাছে চলে এসেছে ঠিক তখন কে যেন আমাকে টেনে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। আমি বুঝতে পারলাম এটা কোন পুরুষ। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগল। ছেলে টা অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। আমি ছোটার জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু তার শক্তির সাথে পেরে উঠলাম না। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে আমাকে ছেড়ে দিল। ছাড়া পেয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।কারন ছেলেটা আর কেউ না আমার ফুফাতো ভাই সামির। আমার থেকে ছয় বছরের বড়। আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার মতো ছেলে তো ভাইয়া না।কারন সবসময় ভাইয়া আমার সাথে রাগিভ্ ভাব নিয়ে থাকে আর কারনে অকারণে বকাবকি করে।
–
ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম কারণ তার চোখ লাল হয়ে গেছে। ভাইয়া যখন অনেক রেগে যায় তখন এমন লাল হয়।
হঠাৎ ঠাশ করে আমার গালে একটা চড় দিলো ভাইয়া। আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।এখন কিছু বললে আরো থাপ্পড় খেতে হবে।
ভাইয়া রাগী লুক নিয়ে বলল,
মামার কি এতোই টাকার অভাব পড়ছে যে তোর বৃষ্টি যে ভিজে হেটে হেটে বাড়ী ফিরতে হবে?
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলাম,
ভাভাভাইয়া আমার হেহেটে আসতে ভালো লাগে।
ভাইয়া বললো,
এখন যদি কোন দুর্ঘটনা হতো তাহলে কি হতো?আর বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ছাড়া এসেছিস কেন? নাকি ছেলেদের তোর এই ভেজা শরীর দেখানোর জন্য ইচ্ছে করেই ছাতা আনিসনি?
কথাটা শুনে আমার রাগে মাথা গরম হয়ে গেল। সকালে তো অনেক রোদ ছিল, আমি জানতাম কি হঠাৎ করে বৃষ্টি নামবে। কিন্তু মুখে কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ভাইয়া বললো,
এখন ও এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছিস, তারাতাড়ি আমার গাড়িতে গিয়ে বস। আমি দুমিনিট এর মধ্যেই আসছি।
ভাইয়ার কথা শুনে সামনে তাকিয়ে ভাইয়ার গাড়ি দেখতে পেলাম। তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। ভিজে যাওয়ার কারণে একটু শীত করতে লাগলো। গাড়ির কাচ দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম ভাইয়া ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। বৃষ্টিতে ভেজার কারনে ভাইয়াকে অনেক সুন্দর লাগছে।এমনেতেই অনেক হ্যান্ডসাম ছেলে ভাইয়া। আমার বান্ধবীরা তো সামির ভাইয়া বলতেই পাগল। আমি আবার অত মহামারী সুন্দর না।সবসময় সাধারণ ভাবেই থাকি। অবশ্য ভাইয়ার জন্য বাধ্য হয়েই সাধারণ ভাবে থাকতে হয় কারণ একটু সেজেগুজে কোথাও গেলে কোথা থেকে জেনো ভাইয়া আমার সামনে হাজির হয়ে বলে ,
এমনেতেই দেখতে ভালো লাগে না তোকে আর সাজলে তো একদম জোকারের মতো লাগে তোকে।এসব কথা শুনে অনেক আগেই সাজা বাদ দিয়ে দিছি।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর ভাইয়া একটা শপিং এর প্যাকেট দিয়ে বললো,
মিশ্মি পোশাক গুলো পাল্টে নি তানাহলে ঠান্ডা লাগবে তোর। আমি ধুয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।
এই বলে ভাইয়া চলে গেল। প্যাকেট টা খুলে দেখলাম অনেক সুন্দর রঙ্গ ফ্রক। গাড়িতেই পোশাক গুলো পাল্টে ভাইয়া কে ডাকদিলাম। ভাইয়া এসে কোনো কথা না বলে ড্রাইভিং করা শুরু করলো। পনেরো মিনিট এর মধেই বাসায় পৌছে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে যেয়ে আবার ফিরে এসে ভাইয়া কে বললাম,
হঠাৎ তুমি ওদিকে কেনো গিয়েছিলে ভাইয়া!
ভাইয়া বললো,
সেটা তোর না জানলেও চলবে।
এই বলে চলে গেল। আমি বাসায় ঢুকে সুজা নিজের রুমে চলে গেলাম।
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিহাকে কল দিলাম কিন্তু ফোন টা ওয়টিংয়ে পেলাম। নিশ্চয়ই ওর বয়ফ্রেন্ড আবিরের সাথে কথা বলছে। আমার সব ফ্রেন্ড এর বয়ফ্রেন্ড আছে শুধু আমারই নেই।কেউ আমাকে প্রপোজ করেই নি।যাও একজন করেছিল কিন্তু পরের দিন তাকে আর দেখতে পাইনি। আমি ওতোটাও অসুন্দর না।
মার ডাক শুনে খাবার খেয়ে এসে একটা লম্বা ঘুম দিলাম। বিকেলে সামির ভাইয়া পড়াতে আসলো।সেই ক্লাস এইট থেকে ভাইয়া আমায় পড়ায়।অন্য কোনো সারের কাছে প্রাইভেট পড়তে দেখিনা। নিজের এতো বড় অফিসের কাজ ফেলে কেনো যে আমাকে পড়াতে আসে সেটাই বুঝতে পারিনা।
হঠাৎ মনে হল কাল ভাইয়ার দেওয়া ম্যাথ টা করিনি।এর শাস্তি যে অনেক ভয়াবহ সেটা আমি জানি।
.
.
চলবে..