ভালোবেসে ভুল করিনি (সমাপ্তি পর্ব ০৭)

ভালোবেসে ভুল করিনি (সমাপ্তি পর্ব ০৭)
Tanjina Islam

কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে। আমি বার বার ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি। কিন্তু ভাইয়া চুপ চাপ রোদ ভাইয়া পাশে বসে আছে।
কাজী যখন আমাকে কবুল বলতে বললো আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার দিকে উদাসীন ভাবে তাকিয়ে আছে। আমি এমন ভাব করলাম যেন আমি এখনি কবুল বলে দিবো। কিন্তু তাও ভাইয়ার কোনো রিয়াকশন দেখলাম না।
ভেবেছিলাম আমি যখন কবুল বলতে যাবো তখন ভাইয়া সিনেমার হিরোর মতো এসে আমাকে কবুল বলতে নিষেধ করে সবাইকে বলবে যে ভাইয়া আমাকে ভালো বাসে।তা আর ভাইয়া করবে না এতো ক্ষণে বুজে গেছি। ভাইয়ার উপর অনেক রাগ হলো। একবার ভাবছি কবুল বলে ফেলবো কি?
এদিকে সবাই তাড়া দিচ্ছে।
হুট করে আমি দাঁড়িয়ে বললাম,
আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
বাবা বললো,
এসব কি বলছিস মা?
আমি বললাম,
বাবা আমি যা বলছি ঠিক বলছি।
ভাইয়া কে আমি ভালো বাসি। ভাইয়ার সাথে আমার ১বছরের রিলেশন।
আমার কথা শুনে ভাইয়া চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো।
আমি বলা শুরু করলাম,
একবছর আগে ভাইয়া আমাকে প্রপোজ করে আর আমি ও ভাইয়ার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি। তার পর ভাইয়া কে ভালোবেসে ফেলি।
কিন্তু যখন তোমরা বিয়ে ঠিক করো তখন ভাইয়া আমার সাথে ব্রেকআপ করে ফেলে। আমি অনেক বুঝিয়েছি ভাইয়াকে কিন্তু ভাইয়া তখন বলেছিলো ভাইয়া নাকি আমার সাথে জাস্ট টাইম পাস করেছে।
ভাইয়া আমার আমার প্রবিত্র ভালো বাসা নিয়ে খেলা করেছে। এই বলে আমি নেকা কান্না শুরু করলাম।
আমার কথা শুনে ফুপা ভাইয়াকে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বললো,
তোকে আমার ছেলে ভাবতেই ঘৃনা লাগছে। তুই এতো টা খারাপ আমি জানতাম না।
ভাইয়া চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালো।
রোদ ভাইয়া গিয়ে ভাইয়া কে বললো,
তোকে আমি অনেক বরশা করতাম। তুই যে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবি আমি ভাবতেই পারছি না। আমি না হয় তোর আপন কেউ না কিন্তু মিশ্মি তো তোর আপন ফুফাতো বোন ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলি কেমন করে?
ভাইয়া কিছু বলতে যাবে তখন আমি ভাইয়ার কানের কাছে আস্তে আস্তে বললাম,
ভাইয়া তুমি কোন বন্ধুর জন্য নিজের ভালোবাসা সেক্রিফাইস করতে যাচ্ছিলে যে বন্ধু কিনা অন্যের কথা শুনে তোমাকে ভুল বুঝে। এটা সত্যি কিনা একবার তোমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন ও মনে করলো না।
আমি স্পষ্ট ভাইয়ার চোখে জল দেখতে পাচ্ছিলাম।
সবাই ভাইয়া কে অনেক কথা শুনালো। আমার খারাপ লাগলেও কিছু করার ছিলো না কারণ সত্যি বললে ভাইয়া কোনো না কোনো ভাবে রোদ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে ছাড়তো।
আর সবাইকে বুজাতো যে ভাইয়া আমাকে ভালো বাসে না।
আমি কান্না করে বিয়েটা ভাঙ্গতে পারলেও ভাইয়া কে বিয়ে করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এখন সবাই ভাইয়া কে চাপ দিচ্ছে আমাকে বিয়ে করার জন্য।
একপ্রকার চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করতে হলো ভাইয়ার।


৫ বছর পর’

মিশ্মি মিষ্টি কে তাড়াতাড়ি রেডি করে নিজে রেডি হয়ে নিচে আসো।

আমি শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বললাম,
আমি পারবো না,
তোমার মেয়ে কে তুমিই রেডি করে দাও। আমি রেডি করালে তোমার মেয়ের তো আবার পছন্দ হয়না।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।
আমি চোখ গরম করে বললাম,
ও রকম বান্দরের মতো করে হাসছো কেনো?
ভাইয়া বললো,
তুই শাড়ি পড়তে গেলি কোন দুঃখে? যেটা পড়তে পারিসনা সেটা পড়তে মাস কেন?
এই বলে ভাইয়া আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে লাগলো।
আমি এখনো ভালো ভাবে শাড়ি পড়তে পারিনা বলে ভাইয়া আমাকে কথা শুনায়।
তবে এখন আমাদের মাঝে ভালো বাসা অনেক বেড়ে গেছে।
বিয়ের পর একমাস ভাইয়া আমার সাথে কথা বলেনি আমি অবশ্য বিয়ের পরের দিন সবাইকে সব সত্যি বলে দিয়েছিলাম।
সব জানার পর রোদ ভাইয়া ভাইয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে ছিল।আর এখন তাদের বন্ধুত্ব অনেক ভালো হয়ে গেছে।
আজ রিয়ার সাথে রোদ ভাইয়ার বিয়ে।
বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হচ্ছে।
আমাদের ৪ বছরের একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা একদম বাবার মতো হয়েছে আজ পর্যন্ত আমার কোনো কাজের প্রশংসা করেনি। সবসময়ই ভুল ধরে।
শাড়ি পড়ানো হয়ে গেলে আমি ভাইয়াকে সবে বলতে যাবো,
ভাইয়
তার আগেই মিষ্টি চলে আসলো দেখে
বললাম,
ধন্যবাদ।
মিষ্টির সামনে আমি কখনো ভাইয়া কে ভাইয়া বলছিনা কারণ ভাইয়া বললেই মিস্টি আমাকে ফুপি ডাকা শুরু করে।কারন জিজ্ঞেস করাতে বলে,
তুমি পাপাকে ভাইয়া বললো কেনো?পাপা কে যারা ভাইয়া বলে তাড়া তো পাপার বোন।আর পাপার বোন তো আমার ফুপিই‍্ লাগে।
আমি জানি এটা ভাইয়ায় শিখিয়েছে মিশ্টিকে । নিজের মেয়ের মোখে ফুপি শুনতে ভালো লাগে না দেখে ওর সামনে কখনো ভাইয়া বলিনা।
মিষ্টিকে ভাইয়া রেডি করে দিতে লাগলো।আর খাটে বসে বাবা মেয়ের কান্ড দেখতে লাগলাম।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here