গল্পঃ_ডেভিল_বার্ড,পর্বঃ_২
লেখাঃ_IH_Abid
— বন্ধু জন৷ আমার সাহায্য কর৷ আসলে আমি সারাজীবন তোর এই সব কাজ পাগলামি ভাবতাম৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন দাড়াইছে যে আমি তোকে ছাড়া আর কারো উপর কোন ভরসা পাচ্ছিনা৷ আমার ওই ভ্যাক্সিন তৈরি করতে হবে৷ কিন্তু কিছুতেই সেই ম্যটারিয়াল পাচ্ছিনা৷ তুই তোর যাদুবিদ্যা দিয়ে কিছু করে দে,,,
— হা হা,, তোর বিজ্ঞান যেখানে শেষ সেখানে আমার মন্ত্রের জ্ঞান শুরু৷ আমি জানি তোর সমস্যা কি? তোর সমস্যা আমি সমধান করতে পারবো৷
জন তার সামনে আগুনের সামনে বসে মন্ত্র জপ করতে লাগলো৷ আমি তার সামনেই চুপ করে বসা । এসময় দেখলাম আগুন থেকে একটা কালো অবয়ব বের হচ্ছে৷
কালো অবয়বটি চিকন ধোয়া হয়ে জনের নাক মুখ কান দিয়ে ঢুকে গেলো। এভাবে জন বসে আছে ঝিম ধরে৷ হুট করে জন চোখ খুলল। তার চোখ হলুদ হয়ে আছে৷ আমাকে বলা শুরু করলো
— এখান থেকে উত্তর দিকে ৬০০ কদম হাটা শুরু করবি৷। সেখানে একটা পুরান কবর পাবি৷ তারপর আকাশের দিকে তাকাবি । দেখবি চাদের আলোয় কোন একটা কবরের ক্রুশ ভাংগা। সেখান থেকে আলো জ্বলছে। তারপর মাটি খুড়ে সেই কফিন বের করবি। কিন্তু সাবধান। ভুলেও কফিন বের করার পর ওইটা হাতছাড়া করবি না। ওই কফিন ধইরাই রাখবি৷ যদি হাত ছাড়া করছ তাহলে ক্ষতি হইবো৷ কবর থেকে তোর বাড়ি পর্যন্ত পুরা রাস্তা ওটা হাত দিয়ে ধরে রাখবি৷ আর চোখের সামনে খারাপ অনেক কিছু দেখবি কফিন বের করারা পর৷ কফিন যতক্ষন হাত দিয়ে ধরে রাখবি ততক্ষন তুই নিরাপদ । আর যা দেখবি তা আর পিছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে যাবিনা৷ তাহলে বিপদ৷ ওই কফিনের ভেতরের পচাগলা লাশই তোর ওষুধ বানাতে কাজে লাগবো। তাহলে যা৷ এখনি মোক্ষম সময়৷
জনের কথা শুনে আমি একটা কোদাল আর কফিন আনার জন্য একটা ঠেলা গাড়ি নিয়ে নিলাম৷ এরপর আমি উত্তর দিক সোজা হাটতে থাকি৷ এভাবে হাটতে হাটতে আমি পেয়ে যাই সেই কবরস্থান৷ কবরস্থানটা অনেক পুরাতন ছিলো৷ পরিত্যাক্ত বলা যায়৷ তো আমি কবরস্থানটাতে ঢুকলাম চারদিক থেকে ঠান্ডা বাতাস গায়ে চেপে ধরছে৷ আমি কবরগুলোর মাঝখানে রাস্তা দিয়ে হাটা শুরু করলাম। যতই হাটছি ঠান্ডা তত বাড়ছে৷ আমি আকাশের দিকে তাকালাম। দেখলাম মেঘ সরে যাচ্ছে৷ চাদটা স্পস্ট হয়ে উঠছে। আমি তৎক্ষনাৎ এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। দেখতে লাগলাম কোন কবরের ক্রুশ ভাংগা। এভাবে সময় গড়াতে থাকে আমি পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। হঠাত লক্ষ করলাম। কবরের শেষ মাথায় একটা ক্ষীন আলো জ্বলছে৷ আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে ওটাই সেই কবর যার কথা জন বলেছে৷ আমি তাড়াতাড়ি সেই কবরের দিকে দৌড়ে আছি । কিন্তু আমি যেন দৌড়াতে পারছি না। আমার পা কে যেন আটকে ধরে রাখছে। আমি নিচে তাকিয়ে দেখি কবর থেকে কয়েকটা লাশ জ্যান্ত বের হয়ে আমার পা ধরে রাখছে৷ লাশগুলা পচা গলা ছিলো৷ মাংস গলে গলে পড়ছিলো। আমি কোদাল দিয়ে আঘাত করতেই তারা ছেড়ে দিলো। আমাকে জন বলছিলো যে আমি কবরস্থানের ভেতর বিপদে পরবো। আমি গেলাম কবরের কাছে। দেহের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কবর কুপাতে লাগলাম৷ কুপাতে কুপাতে যখন ঠন ঠন শব্দ পেলাম তখন বুঝলাম যে এবার কফিন নাগালে এসেছে। আমি অবশিষ্ট মাটি উঠিয়ে। কফিনটা বের করলাম। কফিনটা বেশ ভার। কফিনটা আমার ঠেলা গাড়িতে রাখলাম। গাড়ির শিকল টানতে টানতে আমি কফিন নিয়ে হাটা দিলাম৷ কবর থেকে বের হওয়ার পথে আমি। এসময় প্রবল ভুমিকম্প হলো। এরপর একসাথে সব কবরগুলো ফেটে গেলো। সেখানকার ভেতরের লাশ গুলো সব জ্যান্ত হয়ে দাড়িয়ে গেলো৷ লাশগুলো সব কদাকার চেহারা। গায়ের মাংস পচে গলে বিশ্রি অবস্থা। জঘন্য পচা মাংসের দুর্গন্ধে চারপাশ ভরে গেলো৷ আমি কিছুতেই কফিন হাতছাড়া করলাম না। কারন জন বলছিলো যাই হোক কফিন হাতছাড়া না করতে। তো আমি কফিন ধরেই রাখছি৷ সেই লাশগুলোর মাঝখান দিয়েই যাচ্ছি। লাশগুলো ক্রুর চোখে তাকিয়ে আছে৷ আমি সেদিকে তাকাচ্ছি না। সোজা কফিন টেনে কবরস্থান থেকে বাহিরে বের হচ্ছি৷ এসময় একেবারে কবরস্থানের গেটের বাহিরে দেখলাম দুজন দাড়িয়ে আছে৷ দানবাকার দেহ। চোখদুটা লাগ৷ মাথার চুল জটলাগানো লালচে। বুক থেকে পেট পর্যন্ত কাটা৷ বুকের পাজড়ার হাড় ও পেটের নাড়িভুড়ি দেখা যাচ্ছে। সারা গায়ে দগদগে ঘা, সেই ঘা থেকে পুজ গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে। দাত গুলো বিশাল লম্বা আর সুচালো। তারা আমার দিকে ইংগিত করে বলল
: আমাদের কিং কে নিয়ে যাচ্ছিস। তোর ভাল হবে না। তোর ধ্বংস হবেই হবে৷ কফিনটা ধরে আছিস বলে বেচে গেলি৷
আমি কোন ভাবেই কফিন ছাড়লাম না শক্ত করে শিকল ধরে রইলাম। আমি হেটে যেতে লাগলাম। আশেপাশের সব লাশ আমাকে কুর্নিশ করলো। সাথে গেটে দাড়ানো দুইটা দানবও মাথা নিচু করে গেট থেকে সরে গেলো। আমি শিকল দিয়ে কফিন টানতে টানতে কবর থেকে বের হচ্ছি৷ আমি আর পিছন ফিরে তাকালাম না৷ জন বলেছিলো যাই হোক কবর থেকে বের হয়ে যেনো আমি কিছুতেই পিছন না তাকাই। আমি আর তাকালাম না৷ সোজা কফিন দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে নিজের রিসার্চ ল্যাবে আসলাম। এসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম। অনেক ক্লান্ত অনুভব করছি। আমি ঘুমিয়ে গেলাম। স্বপ্ন দেখলাম আমার পরিবারের সবার লাশ। একেকটা লাশ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অবস্থা৷ আমার ঘুম ভেংগে যায়। আমি ঘামতে থাকি। এরপর কফিনটা খোলার দিকে মনোযোগ দেই। আমি উঠে গেলাম। কফিনটা ভালো করে দেখলাম। পুরাটা পিতলের তৈরি । আমি অনেক্ষন পর্যবেক্ষণ করলাম। নাহ, খোলার কোন পথ নাই। পুরাটা একেবারে ঝালাই করে লাগানো৷ এরপর আমি ইলেক্ট্রিক করাত দিয়ে কাটার চেস্টা করি। নাহ, কিছুই হলো না, উল্টা করাতের ব্লেডের ধার নস্ট হয়ে যাচ্ছে৷ এমনকি কিছু জায়গায় ভাংগা শুরু করেছে। এখন কি করবো? ভাবছি আমার কস্ট গুলা কি বৃথা গেলো সব। আমি কফিনটা হাতরাতে থাকি। হঠাত কফিনের পিছনে একটা কিছু অনুভব করলাম। আমি তাকিয়ে দেখলাম দুটা স্ক্রুর মত। আমি ঘোরানোর চেস্টা করলাম৷ স্ক্রু দুপাশ থেকে ঘুরাতেই একটার সাথে আরেকটা লেগে গেলো৷ আমি একটা প্রচন্ড
ধাক্কায় ছিটকে পড়লাম। কফিনটা তীব্রভাবে কাপতে লাগলো। এরপর খট করে ঢাকনাটা খুলে গেলো৷ । আমি উঠে গিয়ে ঢাকনা সরালাম। দেখতে পেলাম ভেতরে লাশ পুরা পচে আছে৷ কিছু জায়গায় হাড়গোড় অবশিষ্ট আছে। কিন্তু আমি সবচেয়ে তাজ্জব হই যখন দেখি ভেতরে একটা টিয়া পাখি পড়ে আছে। তার দেহ জীর্ন শীর্ন কিন্তু অক্ষত৷ আমি পাখিটাকে ধরে অবাক হলাম। পাখিটা একেবারে আস্ত এমনকি শরীরও গরম। তারমানে পাখিটা জিবীত। কিন্তু এই কফিনের ভেতর কিভাবে এলো৷ আমি গ্লাভস পরে পাখিটাকে নিয়ে আমার টেবিলে রাখলাম। তারপর আমার কি একটা কাজ যেন মনে পড়লো৷ আমি আমার ল্যাব থেকে বাইরে গেলাম৷ প্রায় আধা ঘন্টা পর আসলাম। আমি এসে দেখি পাখিটা নাই৷ আমি পাখিটাকে খুজতে লাগলাম। হঠাত দেখি বেড়াল দৌড় দিল। বেড়ালের মুখে ওই পাখিটা। আমি গিয়ে বেড়ালকে তাড়া করতে নিলাম। বেড়াল পাখি মুখে নিয়েই জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। আমি আর সেদিকে নজর দিলাম না। আমি আমার ওষুধ বানানোর রিসার্চ শুরু করি৷ ১ মাসের মধ্যেই আমি কার্যকরী ভ্যাক্সিন বানিয়ে ফেলি৷ সেই ভ্যাস্কিন বাজারজাত করা হয়৷ ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে মহামারী হ্রাস পেতে থাকে৷ মুমুর্ষ রোগীগুলো সুস্থ হতে থাকে৷ আর আমারও অর্থের পাহাড় তৈরি হতে থাকে। প্রচুর আয় করি সেই ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে৷ এভাবে ৪/৫ মাস আমার ভালোই চলছিলো। ”
এ পর্যন্ত বলে এন্ড্রু সাহেব থামলেন৷ একটু জিরিয়ে নিলেন। হগও নিজের কফি শেষ করে ফেলেছে৷ এখন খালি মগ নিয়ে বসে আছে৷ হগ সাহেব বললেন
— খুব ইনটেরিস্টিং। তারপর ৷ আপনি বিরাট এমাউন্ট
আয় করলেন। আপনার তো দিনকাল ভালই যাওয়ার কথা।
— দিনকাল সব ভালো চলছিলো,, কিন্তু একদিন সব বিগড়ে যায়৷ যেদিন….. ( টিয়া পাখিটার দিকে তাকালো)
— যেদিন কি এন্ড্রু সাহেব?
— যেদিন এই শয়তান অভিশাপটা আমার ঘরে আসে ( পাখির দিকে তাকিয়ে)
এন্ড্রু সাহেব বলা শুরু করলো
–” একদিন অন্যান্য দিনের মতই মর্নিং ওয়াক করে বাসায় আসছি৷ এসে ঘরে ঢুকেই দেখি আমার ৮ বছরের ছেলের হাতে একটা টিয়া পাখি৷ অনেক সুন্দর ৷ একেবারে সবুজ রংএর। সুন্দর লাল ঠোট৷ আমি দেখে মুগ্ধ হয়ে জিজ্ঞাস করি যে এটা কোথায় পেয়েছে। সে বলে এটা নাকি কোথা থেকে উড়ে এসেছে। সে এটা পালতে চায় । ছেলের আবতার আমি আর না করিনাই৷ বললাম ঠিক আছে পালো। তো সেদিন বিকালে আমি বাসার বাইরে বাগানে বেড়ালের লাশ দেখতে পাই৷ এইটা সেই বেড়াল যেটা আমার ল্যাব থেকে পাখি নিয়ে চলে গেছিলো৷ আমি হঠাত লাশ দেখে খটকা লাগলো। তারপর আবার ভাবি ওই পাখিটা একেবারে জীর্ন শীর্ন ছিলো৷ পালক ছেড়াফারা ছিল। আর আমাদের বাসার পাখিটা কত্ত সুন্দর। আমার বাসায় মোট সদস্য ছিলো মোট ৮ জন৷ আমি, আমার স্ত্রী, আমার ছেলে, আমার বড় ভাই, তার স্ত্রী , তার দুই ছেলে, আর আমাদের মা৷ ”
হগ সাহেব বললেন
— আচ্ছা এন্ড্রু সাহেব একটু মুলঘটনাটা জলদি বলবেন৷ অনেক সময় হয়ে যাচ্ছে৷ আমি আমার ক্লায়েন্টদের বাসায় আসলে এতক্ষন থাকিনা। আপনার কেসটা ব্যাতিক্রম লাগলো তাই শুনতে ইচ্ছা হইছে। আপনি একটু সংক্ষেপে ঘটনাটা শেষ করলে উপকৃত হব৷ আমার যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে।
.
.
( চলবে)