গল্পঃ ডেভিল বার্ড,পর্বঃ_১
লেখাঃ IH Abid
ডক্টর এন্ড্রু রোজান্ট। একজন সাবেক প্রানি বিজ্ঞানি। প্রানির উপর নানাবিধ গবেষনা চালিয়েছেন দীর্ঘদিন । এ গবেষনার ভিত্তি ছিলো কিভাবে প্রানীদের ব্যবহার করে নতুন নতুন ভ্যাক্সিন আবিস্কার করা যায়। এই ভ্যাক্সিন আবিস্কার করতে তার বলি দিতে হয়েছে অনেক প্রানীকে। এ পর্যন্ত প্রায় মিলিয়ন প্রানীতে হত্যা করেছে । কিন্তু আজ তার বয়স ৭০ বছর । হাটার শক্তি নেই। হুইল চেয়ারে বসা। কানে মেশিন লাগিয়েছেন, মেশিন ছাড়া কিছু শুনেনা। চোখে কালো চশমা। চোখের ছানি অপারেশন করাবেন সামনে।
.
এন্ড্রু সাহেব বসে আছেন তার হল রুমে। তার সামনে আরেকজন হৃষ্টপুষ্ট পালোয়ান টাইপের একজন লোক। তার নাম হগ ট্রেইলটর। একজন আন্ডারওয়ার্ল্ড কিলার। যাকে পুলিশ যতবার ধরতে গেছে লাশ হয়ে ফিরেছে। তার অপরাধ লিস্ট বেশ ভারী। এপর্যন্ত ৫৬৮ টা খুন করেছে সে। সবকটা খুনই ছিলো বড় পলিটিশিয়ান না হয় কোন বড় বিজনেসম্যান। সবগুলো ব্যাক্তিছিলো হাই সেকুরেটেড, কিন্তু তারা কেউই বাচাতে পারেনি হগ থেকে। সে তার পিস্তলের ডগায় যাকে টার্গেট করবে। ধরে নিতেই হবে সে দুনিয়া হতে বিদায় নিবে। সব কিছু মিস হবে কিন্তু মিস্টার হগের গুলির নিশানা মিস হবেনা। আর নিশানাটাও একেবারে জায়গা সই। হয় ভিক্টিমের কপালের মাঝে না হয় বুকের বাম পাশে। এপর্যন্ত যতগুলো খুন করেছে সেগুলোতে একটার বেশি গুলি খরচ হয় নাই।
.
এন্ড্রু ও হগের মাঝে কথাপোকথন
.
— তো মিস্টার হগ ট্রেইলটর। আপনি একজন দাগী আসামী। একজন মাস্টারমাইন্ড কিলার।
— কোন সন্দেহ আছে আপনার ।
— সন্দেহ নেই বলেই তো আপনাকে ডেকেছি।
এন্ড্রু সাহেব কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বলল।
— কফি খাচ্ছেন না কেন?
— আমি ডিলারের বাসায় কিছু খাইনা। আমার সাথে কারো কোন প্রকার সখ্যতার সম্পর্ক নেই । আমি কথা কম কাজে বেশি। এবার বলুন আমাকে কি জন্য ডেকেছেন। কাকে পরপারে পৌছাতে হবে। আর আমার কিন্তু এডভান্স পেমেন্ট।
— ২ লাখ ডলার দিব।
— এবার বলুন কাকে হত্যা করতে হবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কাজ শেষ করে দিব।
.
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এন্ড্রু সাহেব বলল।
— আমার পাশে যে আছে তাকে।
হগ তৎক্ষনাৎ রিভলবার বের করে তাক করল। কিন্তু হতভম্ব হয়ে গেলো। এন্ড্রু সাহেবের পাশে তো কেউ নেই একটা টিয়া পাখি ছাড়া। রাগে ক্ষভে খানিকটা চিৎকার করে উঠল।
— মিস্টার এন্ড্রু আপনি কি আমার সাথে রসিকতা করছেন। আপনার পাশে তো কেউ নেই। রসিকতার একটা লিমিট থাকে। আর আপনি জানেন না যে আপনি কার সাথে এখানে রসিকতা করছেন।
— থামুন থামুন,,, আমি রসিকতা করছিনা। হ্যা আমার পাশের এই টিয়া পাখিকেই খুন করতে হবে।
এ কথা শুনে হগের হাসতে ইচ্ছা করছে, প্রচন্ড হাসতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু সে রাগে গজরাতে গজরাতে বলল
— হোয়াট দ্যা হেল ইউ আর টকিং। আমার মত একজন আন্ডারওয়ার্ল্ড কিলারকে এই টিয়া পাখি মারার জন্য হায়ার করা হয়েছে।
হগ তাকিয়ে আছে টিয়া পাখিটির দিকে। এন্ড্রুর পাশে একটা বড় লোহার শিকের উপর বসে আছে পাখিটি।
এন্ড্রু বলা শুরু করলো।
— আমি মোটেও রসিকতার মধ্য দিয়ে নাই। আমি পুরা সজ্ঞানে কথাটা বলছি৷ আমি চাই আপনি এই পাখিটিকে হত্যা করুন। যত টাকা লাগুক। আমার টাকার অভাব নাই। আর এই শেষ বয়সে আমার টাকার কোন দরকার নাই৷ আমি প্রায় মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে। যেকোন সময় মারা যাব। তবে মারা যাওয়ার আগে আমি এই পাখিটার মৃত্যু চাই।
হগ সাহেবের মাথা আবার গরম হয়ে গেলো। বলছে কি এই বুড়াটা। এই পাখি মারার জন্য তার মত একজন কিলার ভাড়া করলো। আবার ২ লাখ ডলারও দিবে। ব্যাপারটা ভালো ঠেকছে না। যাক সমস্যা কি টাকা তো পাবে। এই বলে হগ তার পিস্তল বের করে পাখিটার দিকে তাক করলো। পরক্ষোনই তার মনে হল এ সে কি করছে? একটা সামান্য পাখি মারার জন্য তার পিস্তলের মুল্যবান গুলি নস্ট করবে কেন। এই পাখিটাকে তো এমনেই হাত দিয়ে চিপে ধরলেই শেষ। এ সময় হগের খেয়াল হলো এন্ড্রু সাহেব এই পাখিটাকে কেন মারতে চাইছে। আবার মারার জন্য এত টাকাও দিতে চাচ্ছে। বিষয়টা ভালো ঠেকছে না। হগ তার কোন ক্লায়েন্টের সাথেই বেশি কথা বলে না। কিন্তু আজ কেন জানি তার খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে এন্ড্রু সাহেবের সাথে। আসলে ঘটনা কি? কেনই মারতে চাইছে এই পাখিকে? এতুটুক পাখি তার কিই বা ক্ষতি করছে। এসব কিছু এখন তার জন্য জানা আবশ্যক হয়ে গেছে যদিও আজ অব্দি কোন ক্লায়েন্টের কাছে কোন কিছুই জানতে চায়নি। শুধু জানতে চেয়েছে কাকে মারতে হবে আর পেমেন্ট। এর বাইরে আর কিছু জানতে চায়নি৷
হগ সাহেব রিভলবার তার কোটের ভেতর রেখে নিলো। এন্ড্রু সাহেব বলল
— অস্ত্র রেখে দিলেন যে।
— মানে এই সামান্য পাখিটাকে মারতে অনর্থক আমার রিভলবারের একটা গুলি নস্ট করবো কেন। এটা তো আমার আংগুলের ডগায় চাপ দিয়েই মেরে ফেলতে পারবো।
— সহজ নয়, এত সহজ নয়।
— কফিটা খেতে পারি।
— হ্যা হ্যা। কফিতো আপনার জন্যই রাখছি। আপনিই বললেন যে আপনি ক্লায়েন্টের সাথে সখ্যতা করেনটা তাই কফি খাবেন না।
— হ্যা আমি সখ্যতা করিনা। তবে আপনার বিষয়টা আমার খুব ব্যাতিক্রম লাগলো। তাই আরকি এই প্রথম আমি আমার ক্লায়েন্টের সাথে বিস্তারিত কথা বলতে চাই। আপনি আমার প্রথম ক্লায়েন্ট যার সাথে এই প্রথম কিছু সখ্যতা করতে যাচ্ছি।
হগ কফির মগ হাতে নিয়ে আগ্রহের দৃস্টিতে বসে আছে । এন্ড্রু সাহেব বলল
— তো কি জানতে চান?
— আপনি এই পাখি মারার জন্য এত টাকা দিয়ে আমাকে হায়ার কেন করলেন?.তাই আমি ঘটনা জানতে চাইছি?
— শুনবেন ঘটনা?
— জ্বি অবশ্যই।
এন্ড্রু সাহেব একটা ভয়ার্ত দৃস্টিতে একটু টিয়াপাখিটার দিকে তাকালো। টিয়াপাখিটা ঘুম। এরপর বলা শুরু করলো।
— এটা কোন সাধারণ পাখিনা৷ এটা একটা শয়তান। একটা পিচাশ। একটা দানব ৷ আমাদের পুরা পরিবার ধ্বংস করে দিছে এটা৷ আমার হাসিখুশি পরিবার সব বিকৃত বিচ্ছিন্নভাবে হত্যা করছে এটা৷
হগ সাহেব কিছুটা থতমত খেয়ে বললেন
— কি বলছেন এগুলা? এই পাখি আপনার পুরা পরিবার হত্যা করেছে?
— হ্যা।
— কিন্তু কিভাবে?
— সেটা জানতে হলে আমার জীবনের পুরা ঘটনা শুনতে হবে৷ শুনতে রাজি আছেন? ।
হগ কিছু অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এন্ড্রু সাহেব বলা শুরু করলো।
— ”
আজ থেকে ৩০ বছর আগের ঘটনা। তখন শহরে একটা প্রচন্ডরকম মহামরি ছড়িয়ে পরে। সেই মহামারীতে মানুষ পাখির মত মরছিলো৷ কোন ভ্যাক্সিন কাজ হয়না মানুষের উপর৷ আমি আমার রিসার্চের জন্য সারাজীবন অনেক প্রানী হত্যা করেছি৷ মানে প্রয়োজনে করতে হইছে৷ আমি অনেক রিসার্চ করি কিন্তু কোন সমাধান পাইনা। যদিও ইতিপূর্বে অনেক মহামারীর ওষুধ আমার হাতেই তৈরি৷ কিন্তু আমি সেই নতুন মহামারীর ওষুধ কোনভাবেই বানাতে পারছিলাম না৷ তো পড়লাম মহা চিন্তায়৷ আমি লাগাতার চেস্টা করি। টানা ৪০ ঘন্টা কাজ করি। কোন ফল পাই না৷ আমার এক বন্ধু ছিলো৷ নাম জন ট্রেড। সে ছিলো একজন সাধক৷ আমি বিজ্ঞানী মানুষ ছিলাম তাই তার তন্ত্রমন্ত্র নিতান্তই আমার নিকট হাস্যকর লাগতো।
কিন্তু একদিন আমি তার কাছে যাই৷ আমার মনে হতে লাগতো যে সেই আমার সাহায্য করতে পারবে৷ তো আমি একদিন তার সাথে সাক্ষাত করার চিন্তা করি। সেই মোতাবেক আমি তার সাথে একরাতে দেখা করি৷ সে তার বাড়ির নিচে একটা গোপন রুম করে। সে রুমেই চলে তার যাদু বিদ্যা। আমি তার রুমে গেলাম। পুরা রুমে অজানা ভাষায় অনেক কিছু লিখা৷ একটা বিশাল মুর্তি৷ নানান জায়গায় কংকালের খুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখছে৷ তো আমি তার কাছে সব খুলে বলা শুরু করলাম৷
.
.
(চলবে)