মাতাল হাওয়া,৯ম_পর্ব,১০ম_পর্ব

মাতাল হাওয়া,৯ম_পর্ব,১০ম_পর্ব
তাসনিম জারিন
৯ম_পর্ব

পরেরদিন সকালে নিরব তুলির রুমে গেলো তুলির সাথে কথা বলতে। কালকে রাতে একবার এর জন্যও দরজা খুলেনি তুলি। নিরব হাজার বার কথা বলতে গিয়েছিল কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। তাই ভেবেছে সকালে ঠান্ডা মাথায় কথা বলবে। কিন্তু রুমে গিয়ে তুলিকে পেলোনা। ভাবলো কলেজে গিয়েছে। কিন্তু পরক্ষনেই একটা চিঠি চোখে পরলো তুলির টেবিলে। নিরব চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখলো তুলির চিঠি। তাতে লিখা ছিল————-
—-প্রিয় নিরব ভাই,
“ভাই বললাম তাই রাগ করো না প্লিজ। ভাই ছাড়া তোমাকে অন্য কিছু ডাকার সাহস আর আমার নেই।আর প্রিয় বললাম কারণ তুমি সত্যিই আমার অনেক প্রিয় একজন। আমি এইবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমাকে খোজ করার চেষ্টা করোনা প্লিজ। জানি চাইলেই তুমি আমাকে খুঁজে বের করে ফেলতে পারবে। কিন্তু আমি চাইনা তোমরা কেউ আমাকে খুঁজো। নিরব ভাই আমি কখনো চাবো না যে তুমি আর খালু আমার জন্য কথা কাটাকাটি করো। তোমাদের মাঝে কোনো দেয়াল সৃষ্টি হোক তাও আমার জন্য তা আমি কখনো চাবো না। আমি কালকে সব কথাই শুনেছি। খালুর কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। উনি যা বলেছে সব বাস্তব কথা বলেছে সত্যি বলেছে। আমার মতো অনাথ মেয়ে তোমাদের বাড়ির বৌ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা। তুমি প্লিজ আমাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করো। আমিও চেষ্টা করবো। আর হ্যা নিজের খেয়াল রাখবে সবসময় হাসিখুশী থাকবে তোমার ওই সুন্দর হাসিতে ফাটল ধরুক আমি সেটা কখনো চাইবো না।
ইতি তোমার তুলি।”

নিরব চিঠিটা পরে দাঁড়ানো থেকে বসে পরলো। বুকে মনে হচ্ছে কেউ ভোতা ছুড়ি দিয়ে অনবরত আঘাত করছে। এত অসহ্য ব্যাথা অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে যা নিরব সহ্য করতে পারছেনা।প্রচুর পরিমাণে রাগ হচ্ছে নিরবের। তুলিকে সামনে পেলে ঠাটিয়ে দুইটা চড় দিতো। কতো বড় সাহস ওর এতবড় একটা ডিসিশন নেওয়ার আগে নিরবকে একবার জানানো প্রয়োজন মনে করলোনা। সাহস কি করে হয় ওর আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে। বাবাকে আজ না হয় কাল আমি মেনেজ করে নিতাম। আমাকে এই অসহ্য কষ্ট দেওয়ার শাস্তি ওকে পেতে হবে যাতে কোনোদিন আর আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনায়ও না আনে। যদি ওকে ঠিক না করেছি তো আমার নামও নিরব না।

তুলি সুমির বাসায় গিয়ে সব খুলে বললো। সুমি সব শুনে বললো,
—-“তুলি তুই কাজটা ঠিক করলি কিনা ভুল আমি বুঝতে পারছিনা। তবে তোর নিরব ভাইকে জানানো উচিৎ ছিল। তোর কথা শুনে যতটুকু বুঝলাম উনি তোকে অনেক ভালবাসে। উনাকে এইভাবে কষ্ট দেওয়াটা তোর উচিৎ হয়নি রে!!”

——“আমার এইটা ছাড়া কোনো অপশন ছিলনা রে!! আমার জন্য আগেও উনাদের বাবা ছেলের মাঝে অনেক ঝামেলা হয়েছে। আর এইবার যদি আমি এই ডিসিশন না নিতাম তাহলে অনেক বড় বিবাদ সৃষ্টি হয়ে যেত রে বাবা ছেলের মাঝে!! যা আমি কখনো চাইবোনা। খালা খালুর টা খেয়ে পড়ে মানুষ হয়েছি। উনাদের থেকে উনাদের ছেলে কিভাবে আলাদা করতাম বল!!!! আমি জানি খালুও যেমন এককথার মানুষ তেমনি নিরব ভাইও একরোখা। আমি জানি নিরব ভাই কোনো না কোনো ভাবে আমাকে নিজের করে নিতো যেটা খালু কখনও মানতো না। এমনকি আমাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতেও দুবার ভাবতো না নিরব ভাই। আচ্ছা বাদ দে এইসব কথা আমার একটা থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে পারবি??? অনেক উপকার হবে রে!!!”

——“হ্যা!! তুই চাইলে আমার সাথেই থাকতে পারিস। আমরা ৪ জন মেয়ে একসাথে থাকি ওরাও অনেক ভালো। তোকেও দেখবি আপন করে নিবে অনেক তারাতাড়ি।”

—–“বাচালি রে আমায়!! আমি একটা জব মেনেজ করে নিব রে তারাতাড়ি। অইটুকু পর্যন্ত একটু টাইম দিস প্লিজ। আমার হাতে এখন বেশি টাকা নেই রে!!”

—–“কি যে বলিস না!! বিপদে বন্ধু বন্ধুর পাশে না থাকলে কে থাকবে শুনি। তুই কোনো চিন্তা করিসনা। তোর যতদিন খুশি আরামে থাকতে থাক। আর আমিতো আছিই তোর পাশে।”

সুমির কথা শুনে শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো তুলি। আপাতত একটা থাকার জায়গা হয়েছে এটাই অনেক। এখন একটা পার্টটাইম জব খুঁজে নিলেই নিশ্চিন্ত। না জানি খালামনি কি হালে আছে যতকিছুই হোক আমাকে তো মেয়ের মতো কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। নিজের অনিচ্ছায় খালামনিকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। কান্না করে চোখ ফুলাচ্ছে নিচ্শিত। আর নিরব ভাই উনি খুব রেগে আছে আমার উপর জানি হয়তো সামনে থাকলে ঠাটিয়ে দুইটা চড় মারতো। এইসব ভেবে ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে তুলি।

কেটে গেল ৩ মাস। তুলি একটা পার্টটাইম জব নিয়ে নিয়েছে। কলেজ চাকরি সবমিলিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটে তুলির। কিন্তু একাকী গভীর রাতে নিরবের কথা মনে করে চোখের জল ফেলে। বিষাদে ভরে যায় মনটা। বাসা থেকে চলে আসার পরে একটাবার ও খোজ নেয়নি ওর নিরব। তাহলে কি ভুলে গেছে তুলিকে ওর নিরব???? কিছুদিনের মোহ ছিল সব??? খালামনি অনেকবার তুলির খোঁজ নিয়েছে। তুলিকে প্রতিবার খরচাপাতি ও দিয়ে গেছে। তুলি নিতে না চাইলে ও জোর করে দিয়ে গেছে। অনেকবার এসে তুলিকে অনুরোধ করেছে যাতে উনার সাথে ফিরে যায় কিন্তু তুলি ওর কথায় অনড়। তাহলে কি খালামনির কাছ থেকে জেনে নেয় নিরব ভাই আমার কথা কিন্তু খালামনি একবারও নিরব ভাইয়ের বেপারে কিছু বলে নাই তার মানে উনি আমার কথা খালামনিকে কিছুই জিজ্ঞেস করে না। মিছিমিছিই আমি ভাবছি এসব!! নিরব ভাই ভুলে গেছে আমাকে পুরোপুরি। এইসব ভেবে চাপা অভিমানে কান্নায় ভেংগে পরলো তুলি।

নিরব আর আগের মতো নেই অনেক পাল্টে গেছে। চোখের নিচে কালি পরেছে, উস্কো খুস্কো চুল, মুখটা মলিন হয়ে গেছে, দাড়ি গুলো বড় হয়ে আছে। নিরবের চেহারা বাসায় সারাদিনও দেখা যায়না। সকালে অফিসে চলে যায় আবার একদম রাতে আসে। সালেহা বেগম খুব চিন্তিত নিরবকে নিয়ে। ছেলেটা তার যে অনেক কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে মা হয়ে তা সহ্য করতে পারছেনা আর না পারছে কিছু করতে।একদিকে উনার স্বামী অন্যদিকে উনার ছেলে। উনি বারবার চাইছিল তুলির সাথে কথা বলবে কিন্তু নিরব রাজি হয়নি। তুলিকে কোনোভাবে বাসায় আনতে পারলে কিছু একটা ব্যাবস্থা করা যেত কিন্তু ছেলেটা তো যেদ ধরে আছে। কি যে করবে উনি বুঝে পান না।আর এইদিকে নিরব খাবার দাবার ঠিক মতো করেনা, সারারাত ঘুমাতে পারেনা ঠিকমতো, ছোটফোট করতে করতে নির্ঘুম রাত কাটায়। তুলিকে ছাড়া বাচা যে ওর অসম্ভব বেপার এইটা দিন দিন তিলে তিলে ও টের পাচ্ছে। তুলি যে ওর অস্তিত্বের একটা অংশ, ওর ভালোবাসা, ওর বেচে থাকার প্রেরণা। তুলিকে ছাড়া একবিন্দু নিঃশ্বাস নিতেও ওর কষ্ট হচ্ছে!!! ওকে ছাড়া যে ও অসম্পূর্ণ, নিঃস্ব। কিন্তু তারপরও নিরব তুলির কাছে ওকে ফিরিয়া আনতে যায়নি। একটা চাপা অভিমানে ভরে আছে মন। কিন্তু আর পারছেনা তুলিকে ছাড়া থাকতে। তুলিকে কষ্ট দেওয়ার প্লেন করে নিজে আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছে। মার কাছে তুলির সব খবর নিতো সবসময় নিরব। তুলি কোথায় আছে, কার সাথে আছে, কিভাবে কি মেনেজ করে সবই জানে নিরব।সুমির কাছে টাকা পাঠায় নিরব সালেহা বেগমের নাম করে। সুমিকে বারণ করেছে যাতে তুলিকে কিছু না বলে।কিন্তু তুলির সামনে যাওয়ার সঠিক সময় হলে যাবে নিরব। তার আগে না। কিন্তু মনে হচ্ছে তুলির সামনে যাওয়ার সময় হয়েছে এখন ওকে যে তিলতিল করে আগুনে পুরিয়েছে এখন ও তুলিকে ছারখার করে দিবে। শাস্তি তো পেতেই হবে তুলিকে ওর ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মজা ওকে বুঝাবে নিরব। মুখে বাকা হাসি দিয়ে বললো,

—–“সুইটহার্ট!!!! আসছি আমি তোমার কাছে। তোমার কি হাল করি আমি!!! জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ!!!!”

চলবে…………..

মাতাল হাওয়া
১০ম_পর্ব
তাসনিম জারিন

নিরব তুলির কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে তুলির সাথে দেখা করবে। এর আগেও যে আসেনি তা না। এই ৩ মাসে অসংখ্যবার এসেছে তুলিকে একনজর দেখার জন্য কিন্তু তুলির অজান্তে। প্রতিদিন কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে তুলিকে দূর থেকে একনজর দেখে চলে যায়। মেয়েটা যে ওকে ছাড়া ভালো নেই তা ওর চোখ মুখ দেখলেই বুঝা যায়। অনেক টা শুখিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালি পড়েছে কিন্তু তারপরও নিরবের কাছে তুলিকে ভয়ংকর রকমের সুন্দর লাগে। তুলিকে দেখলেই অজানা এক শান্তিতে মন ভরে যায়। তুলি কলেজ থেকে সেতুর সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিলো। সামনে তাকিয়ে নিরবকে দেখে চমকে তাকালো। এই ৩ মাসের মধ্যে আজ প্রথম দর্শন পেলো নিরবের। অভিমানে কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে তুলির। এতদিন না কোনো খোজ খবর নিয়েছে না দেখা করেছে না ফোন দিয়েছে তাহলে আজ কেনো আসছে উনি। বলবোনা কথা আমি!!! চোখ থেকে দুফোঁটা জল গরিয়ে পরল তুলির। নিরবকে সামনে আসতে দেখে বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে তুলির। নিরব সামনে এসে দারালো চোখ নামিয়ে নিল তুলি।

—–“কেমন আছিস তুলি????”

——“ভা—-লো।” তুমি???”

——“এইতো ভালো আছি।”

নিরবের ভালো আছি কথাটা যেন তুলির কষ্ট হাজারগুণে বারিয়ে দিল। নিরব ওকে ছাড়া সত্যিই ভালো আছে???? কিন্তু নিরবের চোখ মুখ দেখে তো তা মনে হচ্ছেনা। শুখিয়ে গেছে আগের থেকে অনেক, চোখে হাল্কা কালি পড়েছে, মুখে খোচা খোচা দাড়ি তারপরও নিরবকে মারাত্মক রকমের সুন্দর লাগছে তুলির কাছে। এই ছেলেটাকে মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় শার্টের কলার টান দিয়ে বলি “এই ছেলে এতো জালান কেন আমাকে??? এত পুরান কেন আমাকে??? আমি যে আপনাকে ছাড়া থাকতে পারিনা বুঝেননা আপনি?? আপনাকে দেখলে কতগুলো হার্টবিট মিস করে আমার বুঝেন আপনি??? আপনাকে দেখলে যে আমার ভয়ংকর কিছু করে ফেলতে ইচ্ছা হয় সে কথা কি জানা আছে আপনার!!!”

—–“কিছু কথা ছিল তোর সাথে। ফ্রী আছিস??”

নিরবের কথায় ধ্যান ভাংগে তুলির। সামনে তাকিয়ে কিচ্ছুক্ষণ ভেবে আমতা আমতা করে বলে তুলি,

—–“হ্যা ফ্রী আছি। বলো কি বলবে।”

—–“এইখানে না চল কোন কফিসপে গিয়ে বসি যদি তোর কোনো সমস্যা না থাকে তো।”

——“আচ্ছা চল। সেতু তুই বাসায় চলে যা। আমি চলে আসব।” সেতু মাথা নারিয়ে চলে গেল।

নিরব তুলিকে নিয়ে একটা কফিসপে বসলো। তুলির খুব অস্বস্তি হচ্ছে। এতদিন পরে দেখা কিভাবে কি রিয়েক্ট করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। আর নিরব একধ্যানে তুলিকে দেখে নিজের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। নিরব হুট করে বলল,

—–“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তুলি। সামনে মাসেই ডেট পরেছে। তুই আসার সময় চিঠিতে লিখে আসছিস যাতে আমি মুভঅন করি আর তুইও চেষ্টা করবি। তাই ভাবলাম তুই যদি নিজের জীবনে সামনে এগিয়ে যাস তো আমি কেন নয়??? আর মাও খুব জোরাজোরি করছিল বিয়ের জন্য তাই ভাবলাম করেই নেই বিয়েটা এখন বয়সও হয়ে যাচ্ছে।”

নিরবের কথা শুনে তুলি যেন আকাশ থেকে পরলো। নিরব বিয়ে করছে তাও ৩ মাস না যেতেই এইটা কিভাবে সম্ভব!! তাহলে সবকিছু মিথ্যা ছিল। ওদের প্রেম, খুনসুটি, একসাথে এতটা সময় কাটানো সবকিছু মাত্র দুচারদিনের প্রেম ছিল। তুলির কষ্টে অভিমানে চোখে অশ্রুরা এসে ভর করেছে। মনে হচ্ছে বুকে কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গরিয়ে পরল তুলির। নিরব আড়চোখে সব খেয়াল করল কিন্তু কিছু বললো না। ওর কষ্টের কাছে এইটুকু কষ্ট কিছুই না। যে মানুষটা ওর হাত ধরতে চেয়েছিল আজীবনের জন্য, যাকে আগলে রাখতে চেয়েছিল বুকের মাঝে তার উপর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করলোনা তুলি। তুলি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বললো,

——“এতো অনেক ভালো কথা নিরব ভাই। শেষমেষ বিয়েটা করছো তুমি। খালামনিরও চিন্তা শেষ হবে।তো তোমার হবু বৌয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে না???”

——“অবশ্যই!!! তোকে পরিচয় করিয়ে দিবার জন্যই তো এইখানে নিয়ে এলাম। ও এসে পরবে এখনি। দেখ বলতে বলতে চলে আসছে।”

তুলি নিরবের কথা শুনে সামনে তাকালো দেখলো অসম্ভব সুন্দরী একজন রমনী ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। মেয়েটা দেখতে সুন্দরী বলা চলে!! না শুধু সুন্দরী না অসম্ভব রূপবতী ও বলা চলে!!! মেয়েটা নিরবের পাশে যেয়ে বসলো। নিরব মেয়েটার কোমর জরিয়ে ধরে বসলো। তুলির এই দৃশ্য দেখে বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো। এইজায়গায় আজকে ওর থাকার কথা ছিল, ওর কোমর জরিয়ে ধরার কথা ছিল কিন্তু আজ অন্য কারো জায়গা হয়ে গেছে। মেয়েটা নিরবের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

——“সরি!!! তোমাদের বেশিক্ষন বসিয়ে রাখলাম না তো??? আসলে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল।”

—–“না নিলীমা ঠিক সময়ই এসেছো। মিট মাই কাজিন তুলি এন্ড তুলি মিট মাই উড বি ওয়াইফ নিলীমা।”

তুলি হাল্কা হেসে বললো,

—–“বাহ!!! আপু দেখতে খুবি মিষ্টি। তোমাদের দুজনকে খুব মানিয়েছে। আচ্ছা তোমরা তাহলে থাকো আমি আসছি।”

—–“তুমিও খুব মিষ্টি মেয়ে তুলি। আর একটু বসোনা। কিছুক্ষণ থেকে আমরাও বের হয়ে যাব।”

—–“হ্যা তুলি বস আর ৫ মিনিট। আমি তোকে নামিয়ে দিব।”

—–“না নিরব ভাই আমি একা চলে যেতে পারবো। অভ্যাস হয়ে গেছে আমার।”

——“একদম চুপ তুলি। তোকে আমি নামিয়ে দিব ব্যস আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।”

নিরবের জোরাজুরিতে আর না করতে পারলো না তুলি। কিন্তু ও এইখান থেকে বাচার জন্যই যেতে চাচ্ছিল। নিরব থামিয়ে দিল। মন চাচ্ছে নিরবের মাথা ফাটিয়ে দিতে। আমার যে কত কষ্ট হচ্ছে তা কি বুঝেনা উনি। পৃথিবীর সব সহ্য করতে পারবে কিন্তু ওর নিরবের সাথে কাউকে সহ্য করতে পারবে না। রাগে দুঃখে চোখে পানি চিকচিক করছে তুলির কিন্তু না ও কান্না করবে না। উনাদের নিজের চোখের পানি দেখাবে না। কান্না দেখলে নিরব ভাই বুঝে যাবে যে তুলি এখনো উনাকেই ভালোবাসে একফোঁটা ও সামনে এগোতে পারে নাই এখনও উনাতেই আটকে আছে।

নিরব তুলিকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিল। তুলি কিছু না বলেই একদৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো। পিছন ফিরে তাকানোর সাহস আর ওর হলোনা। ফিরলে হয়তো দেখত কেউ একজন মুচকি হাসছে।

——“নিরব মেয়েটা কি মিষ্টি রে!! দেখলেই মনে হয় গালটা টেনে দেই। প্রথমে ঢুকে যখন দেখলাম মনে হচ্ছিলো কোনো বাচ্চা মেয়ে আমার সামনে বসে আছে।”

নিরব মুচকি হাসলো। তা দেখে নিলীমা আবার বললো,

—–“মেয়েটা বাচ্চা নিরব ওকে কি এতটা কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে??? মেয়েটা তোকে অনেক ভালবাসে রে!! আমার সাথে যখন পরিচয় করিয়ে দিলি ওর মুখটা দেখার মতো ছিল। চোখে পানি চিকচিক করছিল। মনে হচ্ছিল এখনই কেদে দিবে। মানলাম তোকেও খুব কষ্ট দিয়েছে কিন্তু ওর বয়সই বা কতটুকু আর বুঝেই বা কতটুকু।”

—–“তুই চিন্তা করিস না নিলী আমি ওকে সামলে নিব।তোকে অনেক ধন্যবাদ রে আমাকে এতবড় হেল্প করার জন্য।”

—–“পাগল নাকি তুই!!!! ফ্রেন্ড হয়ে ফ্রেন্ড এর হেল্প করবোনা তো কার করব?? যাই হোক ঝামেলা মিটিয়ে তুলিকে খুব তারাতাড়ি কাছে টেনে নেয়। আর যখনই কোনো হেল্প লাগবে জাস্ট একটা ফোন দিবি। আচ্ছা এখন আমি আসি রে। আল্লাহ হাফেজ!!!”

—–“আল্লাহ হাফেজ নিলী।”

নিরব ড্রাইভিং সিটে মাথা হেলিয়ে বসে তুলির কথা ভাবলো। মেয়েটা যে এখন কেদে কেটে বুক ভাসাবে তা ওর অজানা নয়। কিন্তু এতটুকু কষ্ট তো ওর অনুধাবন করা দরকার ছিল। না হলে বুঝতো কিভাবে যে নিরবকে ও কি পরিমাণ ভালোবাসে।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here