মাতাল হাওয়া,২য়_পর্ব
তাসনিম জারিন
পরদিন সকাল এ নিরব এর কাজিনরা এলো নিরব এর কোনো ছোটো বোন নেই ও একাই তাই ও ওর কাজিনদের কে অনেক ভালবাসে আর তুলির সাথে ও অনেক ভাব ওদের। নিপা, সুমি, রায়না এই ৩ জন পুরো ঘর মাতিয়ে ফেললো মুহূর্তের মদ্ধেই এসে। তুলি ঘুম থেকে উঠে দেখে ওরা ওর বেড এর কাছে বসে আছে তুলি খুশিতে লাফ দিয়ে যেয়ে ওদের জরিয়ে ধরলো তারপর বললো “তোরা এসেছিস আমি এত্তগুলা মিস করসি রে তোদের” মুখ উল্টো বললো তুলি। “হইছে আর নাটক করতে হবেনা তোর, কতদিন ধরে আমাদের বাসায় বেরাতে যাস না, না কোনো খোজ খবর নিস আমাদের এখন বলতে আসছে মিস করেছে” মুখ ভেঙিয়ে বললো নিপা। সাথে সুমি আর রায়না ও তাল মিলালো। কি করব বল তোদের খাটাস ভাইটাই তো যেতে দিতে চায় না কোথাও সারাক্ষণ শুধু বকে, মুখ কালো করে বললো তুলি। এই মেয়ে তোর তো সাহস কম না তুই আমাদের এত সুদর্শন আর নায়ক এর মতো ভাইটাকে খাটাস বলছিস, সুমি বললো। এহ আসছে নায়ক এর মতো ভাই চেহারা দেখলে মনে হয় জীবন এ হাসি কি জিনিস বুঝেই না, ভেংচি কেটে বললো তুলি।”আমি খাটাস না কি আমার টা আমিই বুঝব তোকে বুঝতে হবেনা, আর আমি হাসতে জানি না কি জানি না ওইটাও আমিই বুঝব তোকে টেনসন করতে হবেনা” চোখ পাকিয়ে নিরব কথাটা বললো। নিরব তুলির ঘর এর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন তুলির কথা সুনতে পায়। তুলির তো নিরব কে দেখে জান যায় অবস্থা, তার উপর আবার ওর সব কথা সুনে ফেলছে এইটা ভেবে ও পারেনা ফিট হয়ে যায়। ডোক গিলে বললো ‘না মা_নে আ_মি এইভা_বে বলতে চাই_নি’ তোতলিয়ে বললো তুলি। নিরব আর কিছু বলেনা তুলি কে এমনিই পারেনা কান্না করে দিচ্ছে আর কিছু বললে ভে ভে শুরু করবে। আরে ভাইয়া আমরা এতদিন পর আসলাম আর তোমরা ঝগড়া করছো এই বলে নিরবকে জরিয়ে ধরে তিনবোন। নিরব মিষ্টি করে হেসে বলে ‘তোরা কখন এলি? এতদিন পর ভাইকে মনে পরল’। কি যে বলো না ভাইয়া তোমাকে সবসময়ই মনে পরে, আমরা এইতো আসছি এইবার অনেকদিন থাকব। ভাইয়া আমাদের নিয়ে কিন্তু তোমার সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা ছিল তাই এইবার আমরা বেশিদিন এর প্ল্যান করে আসছি। নিরব মুচকি হাসি দিয়ে বললো, হ্যাঁ আমার মনে আছে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ অনেক তারাতারি, অফিস এর কাজগুলো একটু গুছিয়ে কাল বা পরসু নিয়ে যাব, খুশি এইবার? সবাই লাফিয়ে উঠে বলে ইয়েস! ভাইয়া তুমি আমাদের গ্রেট ভাই, অনেক খুশি আমরা। তুলি চুপচাপ এক কোনায় দারিয়ে আছে আর ওদের কথা শুনছে কিন্তু কোনো রিয়েক্ট করল না, কারণ ও জানে নিরব ওকে নিয়ে যাবেনা তাই শুধু শুধু আশা করেনা। নিরব তুলিকে অবাক করে দিয়ে বললো “তুই ও সব গুছিয়ে নেয় যা যা লাগবে, আমরা কালকে রাত এ রওনা দিব”। তুলি খুশিতে চিতকার দিয়ে বললো “সত্যি”! নিরব মুচকি হেসে বললো ‘হ্যাঁ’। তুলি খুশিতে ওদের কে জরিয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করছে আর নিরব এক ধ্যান এ তাকিয়ে দেখছে তুলিকে, ওর হাসিটাই তো সব নিরব এর কাছে, তুলির হাসির জন্য ও সব করতে রাজী।
রাত এ সবাই খেয়ে ঘুমাতে চলে গেল কিন্তু নিরব এখন ও এলোনা তাই সালেহা বেগম তুলিকে বললো, তুই তো খাসনি তুলি আর নিরব টাও এলোনা আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে রে আমি যেয়ে শুয়ে পড়ি। হ্যাঁ খালামনি যাও তুমি শুয়ে পড়ো আমি নিরব ভাইকে খাবার বেড়ে দিব। সালেহা বেগম তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আমার লক্ষি মা”। তুলির কপাল এ চুমু দিয়ে ঘুমাতে চলে যায়। তুলি বসে বসে ওয়েট করতে থাকে নিরব এর কখন যে ঘুমিয়ে যায় টের ও পায়না। নিরব এক্সট্রা চাবি দিয়ে ঘর এ ঢুকে তুলিকে দেখে থমকে যায়, তুলি সোফায় ঘুমিয়ে আছে ওর মুখে কিছু চুল খেলা করছে ওকে দেখলে বরাবরই নিরব এর হার্টবিট বেরে যায়। ফর্সা মুখ, গাল গুলো গোলাপি, ঠোঁটটা দেখলে মনে হয় যেন গোলাপের পাপড়ি, একদম বাচ্চাদের মতো করে ঘুমিয়ে আছে। নিরব আস্তে করে তুলির পাশে যায় যাতে উঠে না যায়, তুলির সামনে হাটু গেড়ে বসে চুলগুলো গুজে দেয় কানের পাশে, আস্তে করে বলে “তোকে দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ে রে, অনেক কষ্ঠে নিজেকে আটকে রাখি, কবে বড় হবি তুই কবে বলতে পারব মনের কথা আমার”। এইটা বলে কপাল এ আলতো করে চুমু খায় নিরব। তুলি নড়েচড়ে উঠে চোখ মেলে নিরবকে ওর এত কাছে দেখে থমকে যায়, নিরবকে দেখলে এম্নিতেই ওর অন্যরকম একটা ফিল হয় যা ও বুজে পায়না কেন হয়, আর নিরব যখন ওর এতো কাছে থাকে তখন মনে অন্যরকম এক শিহরণ জাগে, এখনও ঠিক একই ফিল হচ্ছে। তুলি আলতো করে বলে, তুমি এসেছ!তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি ভাত বাড়ছি টেবিল এ, এইটা বলে উঠতে নিলে নিরব হাত ধরে বলে, তুই খেয়েছিস? না এখন ও না। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুই ভাত বাড় একসাথে খাব। “আচ্ছা”।
পরদিন সকাল এ কলেজ এ গিয়ে ছুটি নিয়ে নিল তুলি ৫ দিন এর। আজকে রাতে নিরব, নিপা, সুমি, রায়না, তুলি আর নিরব এর ক্লোজফ্রেন্ড রাকিব সেন্ট মার্টিন এর উদ্দেশ্যে রওনা হবে। তুলি তো খুব এক্সাইটেড ও জীবন এ প্রথম কোথাও টুর এ যাচ্ছে। সবাই রাত আটটার দিকে সালেহা বেগম এর কাছে বিদায় নিয়ে রওনা হলো। রাত ১০ টার বাসে উঠে তারা সেন্ট মার্টিন এর উদ্দেশ্যে রওনা হলো। নিপা আর সুমি একসাথে বসে, রায়না আর রাকিব একসাথে বসে,আর তুলি আর নিরব একসাথে বসে। তুলির তো সেই মন খারাপ,ভাবছে কই একটু ওদের সাথে বসে আড্ডা দিতে দিতে যাবে না এইখানেও উনার সাথে বসতে হলো। নিরব তুলির মুখ দেখে আন্দাজ করতে পারছে কিছুটা যে কেন তুলির মুখ কালো, মুচকি হাসি দিয়ে নিরব মনে মনে বলে উঠে, “আমার হাত থেকে এতো সহজ এ ছাড়া নেই তোর, আজীবন পাশে থাকব, একটাবার শুধু নিজের বউ করে নেই তোকে মৃত্তু পর্যন্ত আমার কাছেই থাকবি”। ভাবতে ভাবতে তাকিয়ে দেখে তুলি ঘুমে তলিয়ে গেছে আর মাথাটা ওর কাধে এসে পড়েছে। নিরব আলতো হাত এ তুলিকে বুকে জরিয়ে নিল।
চলবে……