মাতাল হাওয়া,সূচনা_পর্ব
তাসনিম জারিন
“তুলি এইখানে কি করছিস” কথাটা খুব রেগে বললো নিরব। তুলি তো ভয় এ জমে গেসে নিরব কে দেখে মুখ দিয়ে কথাই ভের হচ্ছে না কারন ও অনেক ভয় পায় নিরব কে। ” কি রে কথা বলছিস না কেন?” চোখে কঠোর ভাব নিয়ে বললো কথা টা। আমি আস_লে ক্লা_স করছিলাম কিন্তুু মাথা টা অনেক ব্যাথা করছিল তাই একটু আইসক্রিম খেতে আসছি একটা ক্লাস এ ওফ টাইম ছিল। অনেক ভয় পেয়ে বললো কথাটা তুলি।”আর যদি কখন ও দেখি ক্লাস টাইম এ বাইরে বের হতে তর পা ভেংগে রেখে দিব কথাটা ক্লিয়ার।” ‘জি’ ছোট করে বললো তুলি। ক্লাস শেষ হলে আমি নিতে আসব আমার যাতে লেট না হয়। ‘ঠিকাছে’ তুলি বললো। নিরব চলে গেল। দেখতে বেশ সুদর্শন নিরব। উচু লম্বা, গায়ের রঙ উজ্জল শেমলা, চওড়া বাহু, আর সবচেয়ে নজর কারা লোকটার হাসি কিন্তু রাগ মাথার উপর চড়া থাকে সবসময় এইটা খুব বেশি রাগ লাগে তুলির। যখন ই আমাকে দেখবে তার রাগ যেন আরও বেরে যায় আর আমাকে বকবে ই বকবে এইসব বলছে আর গুস্টি উদ্ধার করছে তুলি নিরব এর। দোস্ত এত সুন্দর ছেলে কি হয় রে তোর?সেতু বললো, আমি তো প্রেমে পরে গেলাম রে একদম হিরো দের মত দেখতে কিন্তু মনে হচ্ছে তোকে খুব ভালবাসে রে তোর উপর কেমন অধিকার খাটালো। ভালবাসে না ছাই সারাক্ষন শুধু বকে আর উনি আমার খালাতো ভাই আমি উনাদের বাসায় থাকি। তুই তো জানিস আমি এতিম আমার মা বাবা আমি ছোটো থাকতে একটা এক্সিডেন্ট এ মারা যায় তারপর থেকে আমি আমার খালার কাছে ই থাকি। আমার খালাই আমাকে আদর ভালবাসা দিয়ে বড় করেছে। আর পরিবার এর বাকি সদস্য গুলো ও অনেক ভালো আমাকে অনেক আদর করে শুধু নিরব ভাইয়া ই একটু কেমন জানি,মুখ উলটে বললো তুলি। আচ্ছা বাদ দেয় চল ক্লাস এ যাই। হুম চল।
অফিস এ যেয়ে নিরব রাগ এ নিজের চুল ছিড়ছে ও কিছু তেই বুঝাতে পারে না মেয়েটাকে, তুলি যখন বাইরে আইসক্রিম খাচ্ছিল তখন অনেক ছেলে তুলি কে গিলে খাচ্ছিল এইটা সহ্য হয় নাই নিরব এর ওর মন চাচ্ছে সব ভেংগে ফেলতে সাথে তুলি কে দুইটা কসিয়ে চর মারতে। কিন্তুু কি আর করার বাচ্চা মেয়ের প্রেম এ পরেছে এইগুলা তো সহ্য করতে হবে। ভালবাসা জিনিস টাই নেশা যে নেশার সাথে কেও পেরে উঠে না নিরব ও পারবে না। ঘড়ির টাইম দেখে নিরব বের হল তুলির ছুটির টাইম হয়ে গেছে তাই।
তুলি বের হয়ে দেখে নিরব দাঁড়িয়ে আছে তাই যেয়ে গাড়িতে উঠলো। তুলি দেখলো নিরব এর চোখ লাল হয়ে আছে চুলগুলো উস্কো খুস্কো হয়ে আছে বুঝাই যাচ্ছে অনেক রেগে আছে আর রাগ টা ওর উপর ই মনে হচ্ছে কিন্তু ও বুঝে পায় না এত রাগ কেন ওর উপর কিসের এত অধিকার খাটায় নিরব ওর উপর তবে কি সেতু ঠিক ই বললো যে উনি আমাকে ভালবাসে নাহ কি যে ভাবি আমি আমার মত এতিমকে কে ভালবাসবে হয়তো উনাদের বাসায় থাকি তাই একটু কেয়ার নেয় বেশি উনাদের দায়িত্ত আমি তাই। কিন্তু কেন জানি উনার বকা অধিকার ফলানো আমার ভিষন ভাল লাগে উনাকে ভিষন ভাল লাগে এই যাহ কি ভাবছি উনি কই আর আমি কই মাটি হয়ে চাঁদ ছুতে চাওয়া ভিষন বড় অপরাধ। এইসব ভেবে নিরব এর দিক এ আরচোখে তাকাল দেখল ঠিক ঐ ভাবে ই গাড়ি চালাচ্ছে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল তুলি। নিরব বিষয় টা খেয়াল করল কিন্তুু কিছু বললো না আপনমনে গাড়ি চালিয়ে বাসায় পৌছাল। তুলি ইন্টার ২য় বর্ষে পরে এখন আর নিরব গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে নিজের বিজনেস সামলাচ্ছে ওদের বয়স এর ডিফারেন্স ১২ বছর এর। তাই নিরব তুলি কে এখন ও বলে নাই ওর মনের কথা। ও চায় তুলি কে আরও সময় দিতে যাতে তুলি ওর ভালবাসা বুঝে ওকে কাছে টেনে নেয়।
বাসায় পৌছে তুলি মন খারাপ করে রুম এ চলে গেসে ওর মনটা অনেক খারাপ নিরব ওকে কিছু বললে ওর অনেক মন খারাপ হয়। নিরব এর মা সালেহা বেগম বিষয় টা খেয়াল করল আর নিরব কে বললো ” তুই আবার ওকে বকেসিস তাই না?” ” মা বকার মত কাজ করলে তো বকবই” বিরক্ত নিয়ে বলে চলে গেল নিরব ও এখন অনেক টায়ার্ড কোনো কিছু নিয়ে বলার মুড নেই এখন। সালেহা বেগম তুলির রুম এ গেল যেয়ে দেখে তুলি মাত্র গোসল শেস করল উনি মুগ্ধ চোখ এ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ওজান্তেই মুখ দিয়ে বের হল ” মাশাল্লাহ” এত স্নিগ্ধ লাগসে তোকে, দেখলে চোখ ফিরাতে পারি না ” আমার মিস্টি মেয়ে টা”। তুলি তাকিয়ে দেখে খালামনি দারিয়ে আছে ও মিস্টি হেসে খালামনি কে জরিয়ে ধরে আর বলে ” আমি কার মেয়ে দেখতে হবে না হুম তুমি তো আমার থেকে ও মিস্টি দেখতে আর আমি তোমার মেয়ে বলে কথা জানো খালু এখন ও তোমাকে দেখলে ডেব ডেব করে তাকিয়ে থাকে” “মাশাল্লাহ”। সালেহা বেগম লজ্জা পেয়ে বলে থাক আর দুস্টুমি করতে হবে না অনেক পাকা হয়ে গেছিস এখন চল লাঞ্চ করবি।” যথা হুকুম মেরি রানি” দুস্টুমি করে বললো তুলি। খাবার টেবিলে যেয়ে দেখল খালু আর নিরব বসে আছে তুলি বরাবর ই এই দুইজন কে ভয় পায়। তুলি যেয়ে খালু কে সালাম দিয়ে খেতে বসল। রহমান সাহেব তুলি কে বললো, সুনলাম পরা লিখা নাকি মন দিয়ে কর না যদি রেসাল্ট ভালো না আসে তবে আমি আর তোমাকে পড়াব না বিয়ে দিয়ে দিব। এই কথা সুনে নিরব এর রাগ উঠে গেল আর বললো, দেখ বাবা তুলি কে নিয়ে তোমার টেনশন করতে হবে না আমি আছি ওকে দেখার জন্য। অপমানে রহমান সাহেব এর মুখ কালো হয়ে গেলো তার ছেলে তাকে একটা এতিম মেয়ের জন্য কথা সুনাচ্ছে এটা তার ভাল লাগলো না।তুলির মন টা ও খারাপ হয়ে গেলো। সালেহা বেগম কথা ঘুরানোর জন্য বললো ডাল টা আজকে ভালো হয়েছে দিব একটু রহমান সাহেব খাবার রেখে উঠে গেলো। কি দরকার ছিল নিরব কথা বারানোর তোর বাবা খাবার রেখে উঠে গেল, না তোদের নিয়ে আর আমি পারি না। মা বাবা সবসময় তুলি কে কথা সুনায় যেটা ঠিক না ও আমাদের দায়িত্ব কোনো ফেলনা বস্তু না যে বাবা ওকে এইভাবে কথা সুনায়। দেখুন উনি তো আমার বাবার মতোই উনি বলতেই পারে শাসন করতেই পারে প্লিজ আপনি উনাকে কিছু বলবেন না, কথাটা বললো তুলি। এই মেয়ে বাচ্চা মানুষ বাচ্চাদের মতো থাক এত কথা বলতে হবে না তোর, আমাকে শিখাতে আসিস না, এইটা বলে উঠে গেল নিরব। তুলি ও মন খারাপ করে রুম এ চলে গেল।
রাত এ ছাদ এ যেয়ে তুলি কান্না করছে আর বলছে মা বাবা আমাকে কেন তোমরা নিয়ে গেলে না যানো খুব মিস করি তোমাদের। আমার জন্য আজকে খালু কে কথা সুনালো নিরব ভাই উনাদের বাবা ছেলের মধ্যে বেসিরভাগ কথা কাটাকাটিই হয় আমাকে নিয়ে যা আমার পছন্দ না। কান্না করতে করতে হুট করে তুলির ঘাড় এ কারো গরম নিঃশ্বাস টের পেল। পিছনে ফিরে একটা ধাক্কা লাগলো কারো সাথে তাকিয়ে দেখল নিরব দারিয়ে আছে। নিরব তুলির চোখের পানি মুছে ভেজা চোখ এ চুমু খেল এরপর কপাল এ চুমু খেল। তুলি বরফ এর মতো জমে গেল চোখ বন্ধ করে ওরনা শক্ত করে পেচিয়ে ধরলো। নিরব বললো ” আমি থাকতে তুই কখন ও নিজেকে একা ভাববি না, আমি ছিলাম আছি থাকব আজীবন”। তুলি কেন জানি নিরব এর চোখ এ অজস্র ভালবাসা দেখতে পেল, নিরব এক মাতাল করা চাহনী নিয়ে তাকিয়ে আছে তুলির দিক এ। তুলি নিরব এর চোখ এর মাঝে হারিয়ে যায়, অনেক্ষন এভাবে কেটে যায় দুইজন দুইজন এর দিক এ তাকিয়ে থাকে, হুট করে হুস আসে দুইজন এর তুলি লজ্জা পেয়ে রুম এ চলে আসে আর নিরব মুচকি হাসে।
চলবে