কাশফুলের মেলা,পর্ব_১৮ শেষ
Writer_Nusrat Jahan Sara
অনুর বিয়ের আর দুইদিন বাকি আছে।আজ সকাল থেকে অনু শুধু একটা কথাই ভেবে যাচ্ছে বিশ বছর আগে কে বা কারা ওর বাবা মায়ের উপরে এ্যাটাক করেছিলো। অনু অনেকবার ওর বাবা মাকে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলো কিন্তু উনারা কাজের চাপে আর ওর কথা শুনতে পারেননি।রাতে সবাই ফ্রি হলে অনু ওর বাবা মায়ের রুমে গেলো।
“বাবা মা আমার তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করার আছে।
“কী বলো?
“আসলে বিশ বছর আগে তোমরা কার ভয়ে আমাকে ফেলে এসেছিলে?আর কী শত্রুতাই বা ছিলো তোমাদের সাথে তার?
আরশি আর ইশান অনুর এমন প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। আরশি অনুর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“সবই জানো দেখছি।
“হ্যাঁ জানি কারণ আমি সেই ডায়েরিটা পড়েছি। প্লিজ বলো না মা কে সেদিন তোমাদের উপরে এ্যাটাক করেছিলো।
‘ডায়েরিতে তুর্ব নামে একজন ছেলের নাম পড়েছিলে তাই না?
“হ্যাঁ তো?
“তুর্বই সেদিন আমাদের উপরে এ্যাটাক করেছিলো।
“কিন্তু কী শত্রুতা ছিল তোমাদের সাথে?
“ওর স্ত্রী ওকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছিলো আর ও মনে করত আমাদের কারণেই ওর স্ত্রী ওকে ডিভোর্স দিয়েছে। সেদিন ছিল শ্রাবণ মাস। চারিদিকে ছিল কাশফুলের মেলা।বরাবরই কাশবন আমার খুব পছন্দের।কাশবনের শুভ্র কাশফুল দেখার জন্য আমি আর তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে সেই গ্রামে গিয়েছিলাম যে গ্রামে তোমাকে প্রথম রেখে দিয়ে এসেছিলাম। গ্রামটা শহরের চাইতে অনেক দূরেই ছিল। সেদিন জানিনা কী করে তুর্ব আমাদের খুজ পেয়েছিলো। আসতে আসতে অনেক লেইট হয়ে গিয়েছিলো। মাঝ রাস্তায় গাড়িটা আসতেই সামনে আরেকটা গাড়ি এসে থামলো। আর সেখান থেকেই তুর্ব আর তিনটে ছেলে এসে আমাদের উপরে এ্যাটাক করে।
এতটুকু বলেই আরশি থেমে গেলো। অনুর আরশির দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।ওর যে আরও কিছু জানতে ইচ্ছে করছে। আরশি আবারো অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আবির আমাকে আর তোমাকে আরও আগেই গাড়ি থেকে বেড় করে দিয়েছিলো। তারপর নিজে তুর্বর সাথে মোকাবিলা করে।অনেক চোটও পেয়েছিল। তোমার বাবা আবার ফাইটিং ভালোই জানে।কিন্তু একজন চারজনের সাথে তো আর একা পেরে ওঠতে পারবেনা না।ছেলেগুলোদের কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে আমাদের নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে লাগল। তারপর কী হয়েছিলো নিশ্চয় জানো।
অনু মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হ্যাঁ জানি।কিন্তু তুর্ব?তুর্ব এখন কোথায়?
“জেলে আছে।
“ওহ ভালোই হয়েছে।এটা হওয়ারই ছিলো আচ্ছা আসি আমি।
অনু ওর মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আজ এতদিন পর মনটা হাল্কা লাগছে।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পরলো। চোখে সবে মাত্র ঘুম এসে হানা দিয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ মাথার পাশের হেড লাইটটা জ্বলে উঠাতে অনু চোখ মেলে তাকালো। একটা ছেলেকে ওর দিকে ঝুকে থাকতে দেখে অনু চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই সে অনুর মুখ চেপে ধরল।
“আরে আরে ডাফার আমি।আবির।তোমার উড-বি।
অনু আবিরের কন্ঠে কিছুটা সস্তিবোধ করল।কিছুটা হাপিয়ে বলল
“আপনি এতো রাতে কী করেন?
“এত কথা বলো কেনো তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে তাই এসেছি।
“আচ্ছা তা মিস্টার আবির আপনার এতো রাতে আমাকে মনে পরেছে।সত্যি।কিন্তু আমার তো মনে হয় আপনি শুধু দেখা করার জন্যই আসেননি বরং আপনার আরও কোনো বিশেষ মতলব আছে।
আবির অনুর দুইহাত ওর দুইহাতে মুষ্টিবদ্ধ করে বলল,
“সত্যিই বলেছো।আমি আরও একটা মতলবে এসেছি।
আবির অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে ওর পকেটে হাত দিল।
“চোখ বুঝো?
“কিন্তু কেন?
“যা বললাম তাই করো।
“আচ্ছা বাবা করছি।
অনু চোখ বুঝলো। আবির অনুর হাত নিয়ে ওর অনামিকা আঙুলে আংটি পরিয়ে দিলো।
“এবার চোখ খুলো।
অনু চোখ খুলে ওর আঙুলের দিকে তাকিয়ে একেবারে হা। এই আংটি সোনা বা হিরের নয় সাধারন একটা হিজল ফুলের।অনুর চোখ খুশিতে চিকচিক করছে। সে আবিরের দিকে তাকিয়ে হেঁসে দিল।
“পছন্দ হয়েছে?
“ভীষণ।
“এবার গলায় হাত দিয়ে দেখো।
অনু ওর গলায় হাত দিয়ে দেখল গলায়ও হিজল ফুলের মালা।
“আমি জানি এই ফুল তোমার খুব পছন্দের তাই এসবের ব্যবস্থা।
“আচ্ছা আপনি কী করে ভিতরে এলেন?
“ডাফার!ব্যালকনির দরজা যদি এভাবে খুলে রাখো তাহলে যে কেউই আসতে পারবে পাইপ বেয়ে।
“তারমানে আপনি পাইপ বেয়ে এসেছেন?
“জ্বী।আর এখন থেকে দরজা বন্ধ করে ঘুমাবা।খুব চিন্তা হয় তোমাকে নিয়ে আমার।
অনু আবিরের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আর দুই-তিন দিন বাকি।তারপর আর আপনার আমাকে নিয়ে ভয় থাকবেনা মিস্টার আবির রায়হান চৌধুরী।
আবির অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
“তো তুমিও মিস থেকে মিসেস অনু আবির রায়হান চৌধুরী হওয়ার জন্য প্রস্তুত তো?
“একদম।
“আমি আপনার সাথে রাগ করেছি!
“আবে ওই।কী হলো আবার হঠাৎ? আমি কী করেছি?
“সেদিন আপনি আমার সাথে ফোনে কথা বলেননি কোনো জানেন কতটুকু মিস করেছি আমি আপনাকে।
“আমিও খুব মিস করেছিলাম।কিন্তু তখন এত এত ব্যস্ত ছিলাম।তাই কথা বলতে পারিনি।স্যরি।
“আচ্ছা ঠিকাছে।জানেন আজ আরুহি এসেছিলো।এসে ক্ষমা চেয়ে গেছে।সেদিন ও ইচ্ছাকৃত ভাবাে আমায় অপমান করতে চায়নি। যদি ও বলত যে আপনি আমায় আপনার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন তাহলে নাকি মা আপনার উপরে রাগ করত। পরবর্তীতে সে আমায় স্যরি বলতে চাইছিলো কিন্তু তার আগেই তো আমি আপনাদের বাড়ি থেকে চলে এসেছি।
“হুম সব বুঝলাম।আচ্ছা আজ আসি তুমি শুয়ে পরো। সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখো আর স্বপ্নে আমায় রেখো।
আবির অনুকে ছেড়ে দিয়ে ওর কপালে একটা কিস করে দিয়ে চলে গেলো।
বেঁচে থাকুক এদের ভালোবাসা।
————-সমাপ্ত———