কাশফুলের মেলা,পর্ব_১১,১২

কাশফুলের মেলা,পর্ব_১১,১২
Writer_Nusrat Jahan Sara
পর্ব_১১

অনু রেগে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম ওর মা ওকে এড়িয়ে যাচ্ছেন তাও একটা ডায়েরির জন্য।অনু আবারো বেশ ঠান্ডা গলায়ই বলল,

“মা বলো এই ডায়েরি তোমার কাছে কী করে এলো?

“বললাম তো তোমার এতো কিছু না জানলেও চলবে। আর এই ডায়েরি কী করে এলো সেটা সত্যিই জানিনা আমি।

“তুমি মিথ্যা বলছো মা।তুমি জানো।যদি তুমি না-ই জানো তাহলে ডায়েরিটা কী করে এলো বলোতো?

অনুর মা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,

“আগে বলো তুমি অস্বাভাবিক কোনো আচরন করবে না?।

“মানে?

“বলো

“না করবনা।

“এই ডায়েরি পড়ে তুমি যাদের সম্বন্ধে জেনেছো উনারা হচ্ছেন তোমার বাবা মা।

অনু যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে চাইছেনা।কানের চারিপাশে শু শু শব্দ করছে।এমনও একদিন আসবে যে নিজের মা তার সন্তানকে অন্যের সন্তান বলবে এটা কোনোদিনও ভাবেনি অনু। কী বলছেন কী উনি?অনু বিস্ময়কর দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“এসব কী বলছো তুমি মা? আমি শুধু তোমারই মেয়ে আর তুমি আমারই মা।

অনুর মা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

“হ্যাঁ আমি তোমার মা।আমি তোমাকে গর্ভে ধরিনি তাতে কী হয়েছে তোমাকে ছোট থেকে লালন পালন করে বড় তো করেছি।আজ থেকে বিশ বছর আগে,

বাইরে উতালপাতাল ঝড় বইছে।রান্নাঘর থেকে ছুটে গেলাম সামনের দরজা বন্ধ করার জন্যে।হঠাৎ দুজন মানুষকে আমাদের ঘরের দিকে আসতে দেখে বেশ অবাক হলাম।ভদ্র লোকটির হাতে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিলো।আর মহিলাটি সেসময় তোমাকে আর এই ডায়েরিটা আমার হাতে তুলে দিয়ে শুধু এটুকুই বলেছিলো”আমার মেয়েকে আমি আপনার হাতে শপে দিলাম।আমি জানিনা বোন আপনি কে?তারপরও নিজের বোন ভেবে বলছি আমার মেয়েটাকে আপনি দেখে রাখবেন। আর ওর গলায় যে লকেটটি দেখছেন ওটাতে ওর নাম লিখা আছে। আর এই ডায়েরিতে আমারদের ব্যাপারে লিখা আছে। ও যখন বড় হবে তখন ওকে সব জানতে হবে।”
কথাটি বলে উনারা আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালেন না চলে গেলেন।আমি পিছনে ডেকেছিলাম কিন্তু উনারা শোনেননি।

“কিন্তু কেন কী এমন হয়েছিলো?

“সেটাতো জানিনা।কিন্তু আমার মনে হয় উনাদের উপরে প্রাণঘাতী আক্রমন হয়েছিলো।কারন উনারা চলে যাওয়ার পরই কয়টা সন্ত্রাস দেখতে ছেলে কাউকে খুঁজ করার জন্য আমার ঘরে ঢুকেছিলো ভাগ্যিস তখন তোমাকে রান্নাঘরের এক কোনে লুকিয়ে রেখেছিলাম।

অনুর মা সেই লকেটটি এনে অনুর হাতে তুলে দিলেন। স্বর্নের লকেট তাতে খোদাই করে অনুর নাম লিখা।উনি এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

“দামী লকেট।বুঝতেই পারছিস আমার মতো গরীব আর মূর্খ মানুষ এইরকম লকেট বানাতে পারবেনা। হয়তো এটা তোর মা বাবা তোর জন্য খুব যত্নসহকারে বানিয়ে ছিলো। কারও দৃষ্টি যাতে তোর লকেটের উপরে না পরে সেই জন্যে খুলে রেখে দিয়েছিলাম।এখন এটা তোর কাছে রাখ কাজে দিবে।

অনুর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে।এতো ঝটকা তাও একসাথে মেনে নিতে পারছেনা সে। কোনো রকমে চোখটা মুছে বলল,

“উনারা বেচে আছেন তো?

“জানিনা রে মা।

“মা আমি উনাদের খুঁজ করার জন্য শহরে যেতে চাই।

“বেশ তাই হবে।

“তাহলে আমি রওনা দেই?।

“না এখন না সোহেল ওই হিজল গাছটার নিচে বসে আছে যদি একবার জানতে পারে তুই কোথাও চলে যাচ্ছিস তাহলে তোকে মেরে ফেলবে রে।তুই তো জানিস ছেলেটা কী পরিমানের গুন্ডা।

“ওকে ফাকি দিয়ে যেতে হলে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সন্ধ্যা ছয়টা বাজে অনু অপেক্ষায় আছে কখন চারিদিক একেবারে বিদঘুটে অন্ধকার হয়ে যাবে।
আসল মা বাবার কথা শুনে তাদেরকে দেখার জন্য আর তর সইছে না। যদিও জানে ওদেরকে ফিরে পেতে হলে অনেক কষ্ট পোহাতে হবে।চারিদিকে অন্ধকার হওয়ার সাথেসাথেই অনু বেড়িয়ে গেলো ওর মা বাবাকে খুজার উদ্দেশ্যে।সে আদৌ জানেনা তার মা বাবাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব কী না। বর্ষাকাল। বৃষ্টি না হলে যেন না-ই। অনু এই অন্ধকারেই একা একা হেঁটে যাচ্ছে।ল্যাম্পপোস্টের আলোতে যতটুকুই দেখা যাচ্ছে ততটুকুই অনুসরন করে সে হেঁটে যাচ্ছে। তীব্র বাতাসে ওর জামা বারবার উল্টে যাচ্ছে। আর সব চুলগুলোও বিরক্ত করার জন্য সামনে আসছে।
আকাশে বিজলির রেখা দেখা যাচ্ছে সাথে হার কাঁপানো বজ্রপাত। অনুও আরশির মতোই বজ্রপাত অনেক ভয় পায়।সে কানে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে হাঁটছে। নিজেকে এখন বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। জানিনা এই সোহেলটা আমি নেই সেটা জানলে মায়ের সাথে কী করে।জানিনা আমি আদৌ মা বাবাকে পাবো কী না? নাকি শুধুই নিজের আবেগের বশিভূত হয়ে ছোটে চলেছি ওদের খুঁজে। ঝোম ধারায় বৃষ্টি পরছে।মুষলধারে বৃষ্টি।একেকটা বৃষ্টির ফোটা মনে হচ্ছে শরীর থেকে এক টুকরো মাংস তুলে নিতে যথেষ্ট। বাতাস আর বৃষ্টির মিশ্রণে একটা ঠান্ডা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।অনু দুইহাত দিয়ে শরীর ডেকে হাঁটছে।মাঝেমধ্যে হিচকিও উঠছে।ভাঙা যে ছাতাটা সাথে করে নিয়ে এসেছিলো বাতাসে সেই ভাঙা ছাতাটি আরও ভেঙে গেছে।অনু রেগে কখনই ছাতাটা বটতলায় ফেলে এসেছে।ভাঙা ছাতাটাই যদি থাকতো তাহলে হয়তো বৃষ্টির প্রকোপ ওর শরীরের উপর পরা থেকে একটা রক্ষা করতো।অনু এসব ভাবছে আর এগিয়ে যাচ্ছে। শহরে পৌঁছাতে হলে আরও এক ঘন্টা হাঁটতে হবে।অনু এবার হাঁটার বেগ বাড়িয়ে দিলো। কিছুটা দূরে একটা ছাওনি দেখে অনুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সে দ্রুত হেঁটে ছাওনির কাছে গিয়ে দাঁড়াল সাথেসাথেই মুখে যে হাসিটা ছিলো সেটাও নিমিষেই মিলিয়ে গেলো।কয়েকটা ছেলে ছাওনির ভিতরে খরের উপরে বসে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ছেলেগুলো বখাটে একদম সোহেলের মতো।অনুর মনে ভয় বেড়ে গেলো। সে দ্রুতপদে হেঁটে যেতে লাগল।পিছনে একবার তাকিয়ে দেখলো ছেলেগুলো আসছে কী না।হ্যাঁ ছেলেরা আসছে।চারটে ছেলে দুটি ছাতা নিয়ে ওর পিছন পিছন আসছে।অনুর মনে ডিপডিপ করে দ্রতবেগে হৃদপিণ্ড পরিচলন হচ্ছে।অজানা এক আশংকায় মন বারবার কেঁপে উঠছে। পেছন থেকে একটা ছেলে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

“কী হে সুন্দরী ছাতা লাগবে নাকি তোমার?

অনুর এবার কেঁদে দেওয়ার পালা। সে কিছু না বলে নিজের মতো হাঁটতে লাগল। একটা ছেলে হুট করেই ওর হাত এসে খপ করে ধরে ফেলল,

“এত দেমাগ কিসের তোর? চল আজ আমাদের সাথে। তোর দেমাগ আজ বেড় করছি অসভ্য মেয়ে।

ছেলেটি এমন ভাবে হাত চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে হাতের হাড় একেবারে ভেঙে গুড়ো হয়ে যাচ্ছে।অনু এবার ফুপিয়ে কেঁদে দিলো।ওর কাঁদা দেখে ছেলেরা অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।অনু ওকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনেক আকুতি মিনতি করছে কিন্তু ছেলেরা ওর কথা এক কান দিয়ে শুনছে আরেক কান দিয়ে বেড় করছে।আরেকটা ছেলে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ ওদের সামনে একটা কার এসে থামাতে ছেলেগুলো একটু হকচকিয়ে গেলো। কিন্তু অনুকে ছাড়লো না। অনুর সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে তো কাঁদতে ব্যস্ত।কার থেকে ছাতা মাথায় দিয়ে একটা ছেলে নামলো। পরনে সাদা শার্ট কালো জিন্স।কিছু চুল কপালে এসে পরেছে। ছেলেগুলো হা করে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে।আরেকটা ছেলে অস্ফুট স্বরে উচ্চারন করলো,, “””আবির রায়হান চৌধুরী””
ছেলেগুলো এবার অনুকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। নিজের দুহাত মুক্তি পেয়ে অনু আশেপাশে একবার তাকিয়ে দেখলো ছেলেগুলো চলে গেছে।কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখে সে একদমি খুশি হয়নি। আবির অনুর দিকে দুকদম এগিয়ে এসে বলল,

“কেমন মেয়ে আপনি যে এই ঝড় আর বৃষ্টির সময় বাইরে বেড়িয়েছেন তাও রাতের বেলা। আপনার বাড়ির মানুষই বা কেমন দায়িত্বশীল যে একা একটা মেয়েকে এই রাতের বেলা ছেড়ে দিয়েছে। কোনো অঘটন যদি আজ ঘটে যেতো তাহলে সমাজে মুখ দেখাতে কী করে? ইডিয়ট!!!

অনু কিছু বলল না।মাথা নিচু করে রেখেছে কীই বা বলবে আবিরকে। আবির আবারো কর্কশ কন্ঠে বলল,,

“কী হলো বলছেন না কেন?

“আসলে আমার বাড়ি নেই

“কীহ!!!!

“হুম আমার বাড়ি নেই তাই শহুরে যাচ্ছিলাম নিজের মা বাবাকে খুজতে।

অনু কী বলছে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা আবিরের। তাতে তার কী?তবুও কর্তব্যের খাতিরে একবার বলল,

“আপনি যদি চান তাহলে আমি আপনাকে শহরে পৌছে দিতে পারি।

চলবে,

কাশফুলের মেলা
পর্ব_১২
Writer_Nusrat Jahan Sara

অনু আবিরের কথা শুনে ওর দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওর সঙ্গে যাবে কী না সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে।এক প্রকার মনের সাথে যুদ্ধ করছে বলতে গেলে। মন বলছে আবিরের সাথে যেতে কিন্তু মস্তিষ্ক না করছে।আজকালকার ছেলেদের বিশ্বাস নেই।ওরা যেকোনো সময় যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

অনুকে এমন বিষন্নভাবে কিছু ভাবতে দেখে আবির এবার বেশ সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকালো। হালকা পাতলা গায়ের গঠন দেখতে একদমি খারাপ না।আবির এবার বেশ শক্ত কন্ঠেই বলল,,

“দেখো আমি এতো টাইম নষ্ট করতে পারবনা। তুমি যদি যেতে চাও তাহলে আসো তা নাহলে এখানেই পরে থাকো।

অনু নিজের তর্জনী আঙুলের নখটা কামড়াতে কামড়াতে বলল,,

“আগে বলুন আপনি আমার কোনো ক্ষতি করবেননা?

“মানে তোমার কী আমাকে ধর্ষক মনে হয়?

অনু ওর ভ্রু দুটি দুই দিকে প্রসারিত করে বলল,

“আমি সেটা কখন বললাম?

“তুমি তো সেটাই মিন করছো।দেখো তোমাকে সাহায্য করছি বলে এটা ভাববে না যে আমার তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট আছে।তোমাদের মতো মেয়েদের প্রতি আবির রায়হান চৌধুরীর কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি আর একবার বলব আসার কথা তারপর আসা না আসা এজ ইওর উইশ।

অনু কিছুক্ষণ ভাবার ভঙ্গি করে বলল,

“আচ্ছা ঠিকাছে চলুন।

অনু আবিরের সাথেই শহরে যাচ্ছে।যতই সামনে এগুচ্ছে ক্রমশ তার মনের ভয় বেরে চলেছে।আদৌ সে পাবে তো তার বাবা মাকে খুঁজে।আবেগে তো চলে এলো গাও ছেড়ে।নিজের শৈশবকে বড্ড মিস করছে।আবির বেশ কয়েকবার অনুর দিকে আঁড়চোখে তাকিয়েছে।অনু ওর বড় ওরনাটা দিয়ে সারা শরীর ডেকে রেখেছে।চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে এখনও।বেবি হেয়ারগুলো কপালের সাথে ভিজে লেপ্টে আছে। আবির কিছুক্ষন নিরব থেকে গলা খাকারি দিয়ে বলল,

“হুয়াট সঙ্গস্ ডু ইউ লিসেন টু?

আবিরের কথা শুনে অনু ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।আবির কী বলেছে কিছুই মাথায় ঢুকেনি ওর। অনুকে এভাবে আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবিরও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।যেন সে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে। তারপরও নিজেকে কিছুটা ঠিক করে বলল,

“তুমি কী আমার কথা বুঝতে পারনি একটু আগে আমি যা বললাম?

অনু মাথা নাড়িয়ে না বলল।আবির আবারও রিপিট করে বলল,

“হুয়াট সঙ্গস্ ডু ইউ লিসেন টু?

অনু ভ্রু কুঁচকে বলল,

“এটার মানে কী?

আবির বেশ অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

“কেনো তুমি জানোনা?

“না।

“ইয়ার্কি করেন নাকি?এখনকার দিনে ইংলিশ জানেনা সেটা ভাবা যায়।

“দেখুন আমি ইয়ার্কি করছিনা সবই তো আর আপনাদের মতো বড়লোক না যে বড় বড় ইস্কুলে ভর্তি করবে।

“ওটা ইস্কুল না স্কুল হবে।

“হ্যাঁ হ্যাঁ জানি আমি।আমাকে শিখাতে হবেনা। আমি যথেষ্ট শিক্ষিত।

“হ্যাঁ তুমি তো অনেক শিক্ষিত মানুষ। আর আমরা তো মূর্খ হাহাহা।

আবিরকে হাসতে দেখে অনু ওর দিকে ছোটছোট চোখে তাকালো।

“আপনি কী আমাকে কোনো ভাবে অপমান করছেন?

“একদম না।

“দেখুন আমি তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। তাই আমি যথেষ্ট শিক্ষিত আছি।

“তৃতীয় শ্রেণী!!!!!ওহ মাই গড!!!! তৃতীয় শ্রেনীতে তো আমি জীবনেও লেখাপড়া করিনি। ডিগ্রীর পর আর কতটুকু পড়লে আমি তৃতীয় শ্রেনীর নাগাল পাবো একটু বলবে?

অনু ভেঙচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।যতটুকু বুঝতে পারল এই ছেলেটার সাথে কথায় পেরে ওটা অসম্ভব।
অনুকে নিরব দেখে আবির হুহু করে হেঁসে দিলো।
আবিরকে এভাবে প্রানখুলে হাসতে দেখে অনু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।হাসলে আবিরের দুই গালেই টুল পরে। সামনের চুল গুলো বারবার এসে কপালে পরছে আর আবির সেগুলো হাত দিয়ে উপরে তুলছে।এই মুহুর্তে আবিরকে অনুর চোখে অন্যরকম লাগছে।অনু বেশিক্ষণ আর তাকালো না চোখ ঘুরিয়ে নিলো
গাড়িতে কেউই আর কোনো কথা বলেনি দুজনই খুব চুপচাপ ছিলো।শহরে পৌঁছে আবির গাড়ি থামাল। টিস্যুটা দিয়ে নিজের নাখটা মুছে পাশে তাকিয়ে দেখলো অনু সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।অগোছালো চুলগুলো সব মুখে এসে পরেছে।আবির অনুর চুলগুলো কানের পিটে গুজে দিলো। আবিরের ছুঁয়াতে অনু একটু কেঁপে উঠলেও ঘুম থেকে উঠলোনা।আবির কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অনুকে ডাকতে লাগল।তাকেও বাসায় ফিরতে হবে।অনেক লেট হয়ে গেছে।অনু উঠছেনা দেখে আবির ওর গালে আস্তে একটা তাপ্পর দিলো।অনু তারাতাড়ি চোখ মেলে সে কোথায় আছে সেটা বুঝার চেষ্টা করলো।

“এই যে ম্যাডাম কোথায় যাবেন এখন?

অনু এবার ভাবনায় পরে গেছে।সত্যিইতো কোথায় যাবে সে।এই শহরের কাউকেই চেনা নেই তার।ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছে শহরের মানুষগুলো খারাপ থাকে গ্রামের মানুষের মতো সহজসরল নয়। এই রাতের বেলা কোথায়ই যাবে সে।তার ওপর এখনকার যা দিনকাল।

“কী হলো বলো?

অনু মুখ কাঁদো কাঁদো করে বলল,

“আমাকে একটু সাহায্য করুন। এই শহরের কাউকেই চিনিনা আমি শুধু আপনাকে ছাড়া।এখন সাহায্য করতে পারলে একমাত্র আপনিই করতে পারেন।দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।

আবির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

“ঠিকাছে কয়দিন নাহয় আপনি আমার বাসায়ই থাকবেন।এই কয়দিনে তুমি তোমার যাওয়ার জায়গা বের করে নিতে পারবে?

“হুম চেষ্টা করব।

আবির অনুকে নিয়ে ওর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপলো।অনুর বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে।কী ভাববে আবিরের পরিবার ওকে নিয়ে।আর ওকে থাকতেই বা দিবে কী ওদের কাছে। অনুর ভাবনার মাঝেই একজন মধ্যবয়সী মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো। আবির হেসে ভিতরে ঢুকার আগেই একটা মেয়ে এসে চিৎকার করে উঠল,

“ভাইয়া তুমি বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছো আর আমরা জানিইনা।

আবির ওর বোনের মুখে কথাটা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতেই পারছেনা।সে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“দেখ না জেনে কিছু বলিস না।মেয়েটির যাওয়ার মতো কোথাও নেই তাই আপাতত আমাদের বাসায় থাকবে কয়েকদিন এখন সর এখান থেকে।আর এই যে আপনি ভেতরে আসুন নাকি ফুল দিয়ে বরণ করে বাসায় তুলব।

আবিরের কথা হয়তো অনুর কান অব্দি পৌছায়নি। তাই তো সে কোনো পতিক্রিয়া না করে চোখ বড় বড় করে বাসার চারিদিক দেখায় ব্যস্ত।আবির এবার জোড়ে ডাক দিলো ওকে। তারপর ওর বোনকে ইশারা করলো যাতে অনুকে বাসার ভিতরে নিয়ে আসে।
ড্রয়িংরুমে বসেও অনু বারবার চারিদিকে তাকাচ্ছে। এর আগে এত বাড়ি চোখেও দেখেনি সে আর আজ থেকে এই বাড়িতেই থাকবে কথাটি ভাবতেই অনুর মন খুশিতে বরে গেলো।পরক্ষনে যখন মনে হলো এই বাড়িতে তো সে কয়েকদিনের জন্য আছে তখনি আবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।আবিরের বোন এসে অনুকে ওর সঙ্গে রুমে নিয়ে গেলো।

“আচ্ছা তোমার নামটাই তো জানা হলো না কী নাম তোমার?

“অনু।৷

“ওয়াও নাইস নেম।মাই নেম ইজ আরুহি।

অনু ইংলিশ না জানলেও এতটকু বুঝতে পেরেছে মেয়েটির নাম আরুহি।প্রতিউত্তুরে সে একটু মুচকি হাসলো

“বাই দ্যা ওয়ে এই নাও ড্রেস আর বাথরুমে চলে যাও।বৃষ্টিতে ভিজেছো এখন গোসল করতে হবে নইলে বৃষ্টির পানি শরীরে থাকলে জ্বর, সর্দি লেগে যাবে।

“আপনি কী ডাক্তার?

অনুর কথা শুনে আরুহি হেসে দিয়ে বলল,,

“ডাক্তার কেনো মনে হলো তোমার কাছে? তোমাকে এডভাইস দিয়েছি তাই হাহাহা?।না আমি ডাক্তার নই।

অনু আর কোনো কথা না বারিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। এখন সমস্যা হলো গিয়ে দরজা লাগাবে কী করে সেটা বুঝতে পারছেনা।অনুকে এভাবে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরুহি ওর দিকে এগিয়ে গেলো।

“কিছু লাগবে?

“না

“তাহলে দাঁড়িয়ে আছে যে?

“আসলে দরজাটা কী করে লাগায় বুঝতে পারছিনা।

“লক মানে ওইটায় মুচড় দাও তাহলে লেগে যাবে। আবার বেড়িয়ে আসার সময় উল্টো মুচড় দিও তাহলে খুলে যাবে।

“আচ্ছা ঠিকাছে।

অনু বাথরুমে গিয়ে আরও অবাক।

“হায় আল্লাহ্ এই বাড়িতে এত যন্ত্রপাতি কেনো?আর বাথরুমেই তো বেশি।এত বড় বোল এখানে আল্লাহ্, এটাতে কী করে গোসল করে।আমিই বা গোসল করবো কীভাবে।

হঠাৎ অনুর চোখ পরলো শাওয়ারের দিকে।

“আরেহ বাহ্ এটা আবার কী?দরজার লকের মতোই তো লাগছে দেখিতো এটাতে মুচড় দিয়ে।

শাওয়ারের কলে মুচড় দেওয়ার সাথেসাথেই পানি পরতে শুরু করলো।অনুতো সেই লেভেলের খুশি।

“হু বড়লোকের বিরাট কারবার।এদের মনে হয় বৃষ্টিতে ভেজার শখ হলে এটার নিচে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।

ইচ্ছে মতে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজছে।দরজা খুলার আওয়াজে অনু তারাতাড়ি পিছন ফিরে দেখে আবির।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here