কাশফুলের মেলা,পর্ব_৩,৪
Writer_Nusrat Jahan Sara
পর্ব_৩
ইশানকে হঠাৎ এতোটা কাছে দেখে আরশি ঘাবড়ে গেলো।জলদি নিজের শাড়িটা ঠিক করে একটা শ্বাস টানলো।ইশান বেশ শান্ত গলাতেই বলল,
—-এই মেয়ে ভালো করে কাপড় মেইনটেইন করতে পারোনা।আর এই শাড়িটাই বা পড়েছো কাকে জিজ্ঞেস করে।আমি কী তোমার জন্য শাড়িগুলো কাবার্ডে সাজিয়ে রেখেছিলাম?এগুলো এক্ষুনি খুলে এসো আমি তোমার জন্য জামা নিয়ে আসছি।
ইশানের নরম কন্ঠস্বর শুনে আরশির মনের ভয় কিছুটা দূর গেলো।এতক্ষণ তো তার হৃৎপিণ্ড দ্রুতগতিতে কম্পন হচ্ছিলো এই না ইশান ওকে থাপ্পড় দিয়ে বসলো।ইশান মায়ের কাছ থেকে লাগেজটা নিয়ে এসে আরশির সামনে ছুড়ে মারলো।
—-এক্ষুনি শাড়িটা চেঞ্জ করে নিজের জামা বা শাড়ি পরে এসো।আর তোমার পরনের শাড়িটা যেখানে ছিলো সেখানে আবার আগের মতো রেখে দিবে। আমি বাইরে যাচ্ছি।
ইশান চলে যাওয়ার পর আরশি মুখটা গোমড়া করে নিলো।আরশির কেনো জানিনা শাড়িটা খুলতে একদমি মন মানছেনা।শাড়িটাতে ইশানের গায়ের গন্ধ লেগে আছে।হয়তো কাবার্ডের সব কাপড় ইশানের ছিলো তাই শাড়িগুলোতেও ইশানের গায়ের গন্ধ বসে গেছে। অনিচ্ছা থাকা সত্বেও আরশি শাড়িটা চেঞ্জ করে আগের জায়গায় রেখে দিলো।
সবকিছু ঠিকঠাক করে সে নিচে গিয়ে দেখলো ইশানের মা খাবার বেড়ে ডাইনিংয়ে রাখছেন। আরশি আর এগুলো না শাড়ির রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।ইশানের মা একবার আরশির দিকে তাকিয়ে গোমড়া মুখ করে বললেন,,,,
—-আরশি খাবার খেতে এসো সব রেডি হয়ে গেছে।আর ইশানকেও ডেকে দাও।
আরশি একবার নিচে আরেকবার উপরে তাকিয়ে ইশানে ডাকতে চলে গেলো।একদৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে ইশান।কী যেন গভীর ভাবে ভাবছে। আরশি একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,,,,
—-আপনার মা আপনাকে খাওয়ার জন্য ডাকছেন নিচে আসোন খাবেন।
—-খাবোনা।
—-সে কী কেনো খাবেননা???
তোমাকে কী সবকিছু বলতে হবে নাকি৷ যাও এখান থেকে।
আরশি মন খারাপ করে চলে গেলো। ইশান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো মনে করতে লাগলো তিনবছর আগের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা।
সেদিন আরশিকে খুঁজে না পেয়ে ইশান বাড়ি ফিরে ঠিকি কিন্তু নিজেকে চারদেয়ালে বন্দি করে নেয়।দেয়ালে টাঙ্গানো আরশির বড়ো একটা ফ্রেমের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো সে৷ মা বাবার সাথেও প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতো না।বন্ধুদের সাথে কথা বলতো না মিশতো না।সবকিছুতেই যেন ভালো না লাগা কাজ করতো। এভাবেই কেটে গেলো আরও তিন বছর ইশান সেরকমি আছে।ইশানের মা বাবা ঠিক করলেন নিজের ছেলেকে নিয়ে দেশে ফিরবেন ইশানকে এরকম অবস্থায় আর দেখতে পারছেননা উনারা।।দেশে ফেরার কিছুদিন পর ইশান একটা রেস্টুরেন্টের সামন দিয়েই যাচ্ছিলো হঠাৎ আরশিকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।তারাতাড়ি কারটা আরশি সামনে থামিয়ে বেশ কয়েকবার হর্ন বাজালো।আরশি বিরক্ত হয়ে একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। এতে ইশানের কষ্ট হলেও সে কষ্টাকে পাত্তা না দিয়ে বলল,,,
—-আরশি উঠবে?
—-তোমার মতো চরিত্রহীন লম্পটের গাড়িতে উঠবো ভাবলে কী করে। আমার জন্য কী গাড়ির অভাব পড়েছে নাকি? এক্সিডেন্ট করে মরে যাব তারপরও তোমার গাড়িতে উঠবনা আমি।
হঠাৎ একটা ছেলে কোথা থেকে এসে আরশির কাছে এসে দাঁড়ালো৷ আরশি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।আরশির মুচকি হাসি ইশানকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে।
—-এখন এসেছো?? কতক্ষন অপেক্ষা করছিলাম জানো।
—-স্যরি স্যরি।আচ্ছা এই ছেলেটা কে আর কী বলছিলো???
—-আর বলুনা সুন্দরী মেয়ে দেখলেই এদের জিভে জল চলে আসে।দেখনো আমাকে লিফ্ট দিতে চাইছে একরকম সুযোগ নেওয়া যেটাকে বলে। চলো তুর্ব এখানে থেকে লাভ নেই।এমন ছেলেদের দেখলে ঘৃণায় শরীর রি রি করে৷
তুর্ব ছেলেটা ইশানের কাছে এসে গ্লাস দিয়ে উঁকি মেরে বলল,,,,,
—-কী ভাই সমস্যা কী আপনার? আমার গার্লফ্রেন্ডকে লিফট দেওয়ার কথা বলছিলে কেনো? মেয়ে দেখলেই সুযোগ নেওয়ার ইচ্ছে জাগে তাই না??
ইশান কিছু না বলে রেগে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।এমন অপমান সে চাইলেই ভুলতে পারবেনা৷ চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু মুক্তোর দানার মতো বিঁধে আছে।ইশান অনামিকা আঙুল দিয়ে চোখের জলটা মুছে নিলো ঝরার আগেই ।
ডাইনিংয়ে আরশি,আর ইশানের মা বাবা বসে আছেন৷ ইশানের বাবা অনেক্ষন যাবত কিছু বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু কী দিয়ে শুরু করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বললেন,,,
—-আরশি তোমাকে একটা সিক্রেট বলি???
—-হ্যাঁ বলুন।
—-আমি তোমার বাবার আপন ভাই না৷
আরশি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা৷ ও অবিশ্বাস আর প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে ইশানের বাবার দিকে।উনি আবার বলতে শুরু করলেন,,,
—-আমি তোমার বাবার রক্তসম্পর্কহীন দূর সম্পর্কের এক ভাই। খুব কম বয়সেই আমি আমার মা বাবা হারাই।আর কোনো দিশা না পেয়ে তোমাদের বাড়িতে এসে আশ্রয় নেই।তোমার দাদাও আমায় ফেলে দিতে পারেননি নিজের ছেলের মতোই আমাকে আগলে রেখেছেন ভালোবেসেছেন।তোমার বাবা আর আমি বেশি দিনের ছোটবড় নই ওই ধরো ছয়মাসের ব্যবধান।আমি আর আশরাফ এক সাথে বড় হয়েছি। আমার মনে হলো বিষয়টা তোমার থেকে আর হাইড করা দরকার নেই তাই বললাম।
আরশি একেবারে নির্বাক হয়ে গেছে।সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা ইশান ওর আপন চাচাতো ভাই নয়। ইশানের মা এখনো ছেলেকে আসতে না দেখে ওকে ডাকতে চলে গেলেন। দুইহাত ভাজ করে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে খাটের দিকে তাকিয়ে আছে ইশান। খাটের উপরে আরশির ওরনাটা পরে আছে। ইশানের মা ছেলের হাতে হাত রাখতেই সে মায়ের দিকে তাকালো।
—-খেতে আসলে না কেনো।
—-এমনি মা।
—-চলো
ইশানের মা ইশানকে এক প্রকার টেনেই নিয়ে গেলেন ডাইনিংয়ে। ইশান প্লেটে রুটি নিতে নিতে বলল,,,
—-মা এখন আর তোমার কাজ করার দরকার নেই।বাড়িতে তো এখন আরেকজন আছেই।এখন থেকে তুমি রেস্ট করবে।আর ও আজ দুপুর থেকে রান্না করবে।আশা করি ওর হয়ে কেউ সুপারিশ করবেনা।
আরশির ভিষণ রাগ হচ্ছে ইশান জানে যে সে রান্না করতে জানেনা তবুও জেনে বুঝে এমন করছে।অন্যসময় হলে ওকে বুঝিয়ে দিতো কিন্তু এখন সে পড়ে গেছে এক মহা মুসিবতে।
সন্ধ্যা সাতটা বাজে বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। পাতায় পাতায় ঝাপ্টা ঝাপ্টি করছে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।আরশি এক দৃষ্টিতে আকাশ দেখছে আর ইশান ওর থেকেই আরেকটু দূরে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ প্রচন্ড রকমে বাজ পরলো আরশি চিৎকার দিয়ে ভয়ে ইশানকে দুহাত দিয়ে ঝাপ্টে ধরলো।
—-প্লিজ আমাকে ছাড়বেননা বজ্রপাত খুব ভয় পাই আমি৷
বলার সাথে সাথে আরেকটা বাজ পরলো। আরশির আরও শক্ত করে ইশানকে জড়িয়ে ধরলো।আরশিকে বুকে পেয়ে ইশান ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে তাছাড়াও আরশির গরম শ্বাস ইশানের বুকের মধ্যে পরছে ইশান মুহুর্তেই এক ঘোরে চলে গেলো। সেও আস্তে আস্তে নিজের হাত আরশির পিটে রাখলো।ইশানের হাতের ছোঁয়া পেয়ে আরশি কেঁপে উঠলো।কেমন এক শীতল শিহরণ বয়ে গেলো তার শিরায় উপশিরায়। ইশান অতি স্লো মোশনে আরশির মুখ ওর বুক থেকে তুলল আরশি এখনো তাকাচ্ছেনা ইশানের দিকে।ইশান আস্তে আস্তে আরশির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলো। একরাশ আবেশে আরশি চোখ বন্ধ করে নিলো।আরেকটা বাজ পরার সাথে সাথে দুজনই চিটকে দূরে সরে গেলো। ইশান নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে আরশির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আর আরশি কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফ্লোরে তাকিয়ে আছে।
চলবে,,,,,
কাশফুলের মেলা
পর্ব_৪
Writer_Nusrat Jahan Sara
আরশির এমন ভাবভঙ্গি দেখে ইশান আরও ঘোরে চলে যাচ্ছে।কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু মুক্তোর ন্যায় ঘামগুলোকে হাত দিয়ে মুছে সে চলে গেলো রুম ছেড়ে।ইশান চলে গেছে দেখে আরশি একটা বড় শ্বাস নিলো। সে তো ভেবেই নিয়েছিলো আজ কোনো না কোনো অঘটন নিশ্চয় ঘটে যাবে। বুকের ভিতরের ধুকপুকানি আওয়াজটা কিছুটা কমে আসছে। আরশি ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের ঠোঁটটা দেখলো কেমন জানি লাল হয়ে গেছে।প্রথমে ঠোঁটে আলতো করে হাত বুলালেও এখন রাগে জোড়ে জোড়ে ঠোঁট ঢলছে।পাশে থাকা টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু নিয়ে ঠোঁটে ঘষতে লাগলো সে। ইশান দরজার ওপার থেকে সবকিছুই দেখছে।সে আরশির আচরন দেখে যথটুকু বুঝতে পারলো যে আরশির মনে এখোনো সেই ছেলেটা আছে।তাই ইশানকে সময় দিচ্ছেনা
পরেরদিন সকাল সকাল আরশিকে লাগেজ গোছাতে দেখে ইশানের বেশ খটকা লাগলো। আশ্চর্য আরশি লাগেজ গোছাচ্ছে কেনো?তাহলে কী কালকের আচরনের জন্য সে এমন করছে।কিন্তু কাল যা হয়েছে তার জন্য তে আমি একলা দায়ি ছিলাম না।ও নিজে থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।তাহলে এখন কেনো এমন করছে?
—-একি আপনি রেডি হবেননা??
আরশির কন্ঠস্বর কানে আসতেই ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলো ইশান। কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,,,,
—-কিছু বলছিলে কী??
—-বলছি আপনি রেডি হবেননা
—-কেনো কোথায় যাবো??
—-ওমা আজ তো আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা। আড়াই দিন এখানে আড়াইদিন সেখানে।আমি এতোক্ষন আপনার জন্য অপেক্ষা করতে পারবনা। তারাতাড়ি রেডি হোন নয়তো আমি আপনাকে ছেড়েই চলে যাবো।
—-হ্যাঁ ছেড়ে চলে যেতেই পারো।এছাড়া আর কীই বা করতে পারো।পারলে জীবন থেকেও সরে যেতে পারো আটকাবো না আমি।
ইশান কথাটা বলে খাটের উপরে রাখা একটা টিশার্ট নিয়ে বাথরুমে চলে গোলো
—এভাবে ইশানকে বলা আমার উচিৎ হয়নি।ওর জন্য আজ আমার সম্মান বেচে আছে।এ কথাটা আমাকে ভুলে গেলে চলবেনা।আর আমিই বা কী করবো।ওকে আমার একদমি ভালো লাগেনা।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে।জানালায় হাত রেখে তার উপরে থুতনি রেখে বাইরে চলন্ত গাড়ি দেখায় ব্যস্ত আরশি।যতই বাড়ির দিকে এগোচ্ছে ততই তার মন ভারি হয়ে আসছে।যদি ইশান বাড়ির সকলের সাথে উল্টাপাল্টা ব্যবহার করে তাহলে। নানা ইশান এটা করবেনা কেনোই করবে।ওতো আমায় ভালোবাসে।
আরশি ঘার কাত করে একবার ইশানের দিকে তাকালো ইশান ফোন ঘাটছে আরশিকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ইশানের ভ্রু কুঁচকে তাকানো দেখে আরশি সাথেসাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
—-ছিঃছিঃ এসব কী ভাবছিলাম আমি।ইশান কোন দুঃখে আমায় ভালোবাসতে যাবে।অন্যবার তাকালে সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতো আর আজ ভ্রু কুচকে তাকালো তারমানে এখন আর সে আমাকে ভালোবাসে না।
আরশি এসব ভাবতে ভাবতে কখন নিজের বাসায় পৌছে গেছে টেরই পায়নি।চোখে ঘুম এসেও লেপ্টে আছে।দুচোখের পাতায় ভর করে আসছে দুই রাজ্যের ঘুম তারউপরে আবার ইশানও ওকে গাড়ি থেকে নামার জন্য বকছে।
আরশি টলমল পায়ে গাড়ি থেকে নামলো। ওর থেকেই কিছুটা দূরে ওর মা বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। ইশান দুজনের সাথেই কোশল বিনিময় করে বাসার ভিতরে চলে গেলো।আরশিও ওর মা বাবার সাথে কোশলবিনিময় করে বাসার ভিতরে চলে আসতে নিবে ওমনি ওর মা খপ করে ওর হাত ধরে ফেললেন।আরশি হাত ধরার মানেটা বুঝতে না পেরে ওর মায়ের দিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকালো।
—-তুমি কী এখনো ইশানকে মেনে নাওনি? ওর হাবভাব এমন কেনো?অন্যসময় হলে সে তোমাকে ধরে আমাদের কাছে নিয়ে আসতো কিন্তু আজ তাকালো পর্যন্ত না।নিশ্চয় তুমি এখনও ওকে মেনে নাওনি। শুনো আরশি বেশি অহংকার ভালো না।তোমার অহংকারের জন্যই তোমার আজ এই অবস্থা।
—-মা আমি এখন কথা বলতে চাইছিনা।আমার ঘুম পাচ্ছে আমাকে রুমে যেতে দাও।
আরশি ওর হাত মায়ের হাত থেকে ছাড়িয়ে ওর রুমের দিকে ছুটলো।রুমের দরজাটা খুলেই খাটে গিয়ে দড়াম করে শুয়ে পরলো।ইশান বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আরশি খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।তোয়ালে দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। আয়নার এক সাইডে তোয়ালেটা রাখতে যাবে তখুনি ওর চোখে পরলো একটা বুকসেল্ফের নিচের তাকটায়।সেখানে একটা নীল রঙের ডায়েরি আছে যেটার উপরে খুব সুন্দর করে নকশা করা। ইশান আগ্রহবশত ডায়েরিটা হাতে নিলো।অনেকদিন হয়ে গেছে মনে হয় এই ডায়েরিতে কেউ হাত লাগায়নি।ধুলোবালি জমে আছে ডায়েরির কবারে। ইশান ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টাতেই একটা নাম দেখে থমকে গেলো। প্রথম পাতায় খুব সুন্দর করে লেখা আছে”””””খুব ভালোবাসি তুর্ব”””” এই তুর্ব নামটা দেখে মুহুর্তেই ইশানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। বুঝার আর বাকি রইলো না এই সারা ডায়েরিতে কী আর থাকতে পারে। একবার আরশি আরেকবার ডায়েরিটার দিকে তাকিয়ে ডায়েরিটা আরশি উপরে ছুড়ে মারলো। হাতে হঠাৎ আঘাত লাগাতে ঘুম ভেঙে গেলো আরশির।হাতের কনুইর উপর নীল ডায়েরিটা দেখে সেও হকচকিয়ে গেলো।ভ্রু কুঁচকে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-এটা এখান কেনো??
—-সেম কুয়েশ্চন আমারও এই ডায়েরিটা এখানে কেনো
—-আশ্চর্য আমার জিনিস তো আমার কাছেই থাকবে। আমি বলতে চাইছি এই ডায়েরি আপনি কেনো ধরলেন আর আমার দিকেই বা কেনো ছুড়ে মারলেন?
আরশির কথায় ইশানের রাগ হলেও সে রাগটাকে কন্ট্রোল করে বলল,,,
—-সি আরশি তোমার এখন বিয়ে হয়েছে যত পুরোনো জিনিস আছে সব ফেলে দাও শুধু শুধু অতীত নিয়ে পরে থাকার কী কোনো মানে আছে বলো?
—-আপনি কী ভাবছেন আমি সবকিছু ভুলে আপনার সাথে সুখে সংসার করব কক্ষনো না।
ইশানের রাগ এবার সপ্তম আকাশে। সে রেগে আরশির মুখ চেপে ধরলো,,,
—-বেশি বারাবাড়ি করিস না আরশি। আগের ইশানকে আবার ফিরিয়ে আনিস না।তোর যদি এতই ইচ্ছে হয়ে তাহলে তুর্বর কাছে ফিরে যা আর আমি তোকে বাধা দিবনা।আর ডিভোর্সের বন্দোবস্তও হয়ে যাবে।
ইশান আরশির মুখ এতই জোড়ে চেপে ধরেছে আরশি কথা পর্যন্ত বলতে পারছেনা শুধু গোঙাচ্ছে। আরশির গোঙানো দেখে ইশান ওর মুখ ছেড়ে দিলো।আরশি বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলল,,,,
—-আপনি একটা জানোয়ার। দেখিয়েই দিলেন যে আপনি এখনো পাল্টাননি আগের ইশানই আছেন।
দেখতে দেখতে দিন ফুরিয়ে রাত চলে এলো। ইশান আর আরশি একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে পর্যন্ত না।আর যদি ভুলে তাকায় তাহলে সাথেসাথে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে যেনো তাকালেই কতো বড় পাপ হয়ে যাবে। আরশি ওর খাট থেকে একটা বালিশ এনে সেটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মেরে নিজে খাটে শুয়ে পরলো। ইশান বুঝতে পারলো আরশি ওকে ফ্লোরে ঘুমানোর নির্দেশ দিচ্ছে।ইশানও কম যায়না সেও আরশির হাত ধরে টেনে ওকে নিচে নামিয়ে নিজে খাটে শুয়ে পরলো।
—-আপনি একটা অভদ্র, অসভ্য,অসহ্য। সব জায়গায় অধিকার ফলান কেনো?আপনার বাড়িতে আমায় ফ্লোরে জায়গা দিতেন মেনে নিলাম কিন্তু আমার বাড়িতে এসে আমাকে কেনো ফ্লোরে জায়গা দিচ্ছেন বলুন
—-অতি বাড় বেড়োনা ঝরে পরে যাবে।কথাটা নিশ্চয় শুনেছো।আর যাই বলো তোমার মুখে এসব অভদ্র অসভ্য কথাগুলো শোভা পায়না।আমি যে তোমার সম্মান তোমাকে ভিক্ষা দিতে পেরেছি সেটাই অনেক নয় কী।আর যদি বেশি কথা বলোতো তুমি আমার সঙে যে অভদ্রের মতো ব্যবহার করছো সেই সব গুলো কথা আমি তোমার মা বাবার কাছে বলে দিব। আর এটাও বলে দিব যে আমি আপনাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে চাইছিনা।কাল কক্সবাজার যেতে হবে আমি চাইনা আর কোনো সিন ক্রিয়েট হোক
আরশি গোমড়া মুখ করে গায়ে কাঁথা টেনে শুয়ে পরলো।
সকাল সকাল চোখে মুখে পানির ছিটে পরতেই ঘুম থেকে ধরফরিয়ে উঠলো আরশি। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটির দিকে তাকিয়ে বুঝার আর বাকি রইলোনা কে ওকে পানির ছিটে দিয়েছে।আরশি মুখ খোলার আগেই ইশান বলল,,,,
—-যদি কারও কক্সবাজার যাওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে সে আমার সাথে আসতে পারে।আর আমি বেশি সময় অপেক্ষা করতে পারবনা কক্সবাজর তো মামার বাড়ি না যে চাইলেই এক দৌড়ে চলে যেতে পারবে।
ইশানের এমন পিঞ্চ মার্কা কথা শুনে আরশি একটা ভেঙচি কেটে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর রোবটের ন্যায় হেঁটে হেঁটে বাথরুমে চলে গেলো।
সকাল সাড়ে দশটা বাজে।আরশি আর ইশান মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। আরশির মা আরশিকে পইপই করে বলে দিয়েছেন যেন সে সেখানে গিয়ে কোনো অঘটন না ঘটায়। গাড়ি চলেছে তার আপনি গতিতে।রাস্তায় ফুচকা ওয়ালারা ফুচকা নিয়ে বসেছে।আরশি কাঁদো কাঁদো মুখ করে মানুষের ফুচকা খাওয়া দেখছে।ইশান অনেক্ষন ধরেই আরশির কান্ড দেখছে সে মুচকি হেসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে এক প্যাকেট ফুচকা নিয়ে এলো। ইশানের হাতে ফুচকা দেখে আরশির কেঁদে দেওয়া উপক্রম সে জানে ইশান থাকে একটা ফুচকাও দিবেনা। ইশান মুখে দুইটা ফুচকা দিয়ে বাকিগুলো এগিয়ে দিলো আরশির দিকে।
কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে চারটা বেজে গেলো। ইশান আর আরশি গিয়ে রিসোর্টে উঠলো।আরশির বাবার এক ফ্রেন্ড আছেন যিনি এই রিসোর্টের ম্যানেজার উনাকে বলে তিনি আগেই রুম বুক করে রেখেছিলেন। ইশান আগেই রুমে চলে গেছে আরশিও যাবে তার আগেই একটা মানুষকে দেখে ওর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো।,,,,,
চলবে