গল্প:রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব ১৮,১৯

গল্প:রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব ১৮,১৯
লেখনীতে:স্বর্ণা সাহা (রাত)
পর্ব ১৮,

দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—বেশি ভালো ভালো না।আপনারা যা ডেসক্রিপশন দিলেন তাতেই বুঝে গেছি আপনাদের কপালে দুঃখ আছে, কিন্তু আপসোস এটা বোঝবার ক্ষমতা আপনাদের মধ্যে নেই। এই মেয়েই আপনাদের সোজা করে দেবে। কথায় আছে না লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।

সুজাতা বিরক্ত হয়ে বললো,
—শোনো তোমার চ্যাটাং চ্যাটাং কথা তোমার কাছেই রাখো। আমাদেরকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবেনা আর শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।

দিশানী চুল ঠিক করতে করতে বললো,
—সেম টু ইউ শাশুড়িমা।এখন যান রান্নাঘরে গিয়ে আমার জন্য কড়া করে এক-কাপ চা করে নিয়ে আসুন,যান।

সুজাতা রাগে ফুসতে ফুসতে বললো,
—চা করবো মানেটা কি?বাড়ির সব কাজ তো আমাদের দিয়ে করাও নিজে শুধু রান্না করো। এটাও এখন আমাদের দিয়ে করাতে চাইছো?

—হুম করবেন!আমি আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়ে আপনারই ভালো করছি।সারাদিন বসে থাকলে আপনারই সমস্যা হবে।তাই একটু খাটাখাটনি করুন শরীর ভালো থাকবে।

—এটা যখন বোঝোই তাহলে নিজে চুপ করে বসে থাকবে কেনো? নিজেও কাজ করো।

—এমন ভাবে বলছে যেনো উনিই এতদিন সব কাজ করে উল্টে দিয়েছেন।এতদিন আমি অনেক কাজ করেছি এখন সময় একটু অবসর নেওয়ার।এতদিন আমি সব কাজ করেছি এখন আপনারা কাজ করবেন আর আমি দেখবো। এতদিন আপনারা আমাকে অর্ডার করেছেন এখন আমি আপনাদের অর্ডার করবো। যদিও এই কাজটা আমি এক মাস আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছি কিন্তু বানরকে মাঝে মাঝে থাপ্পড় না মারলে আবার বানর মাথায় চড়ে বসে তাই আরেকবার মনে করিয়ে দিলাম।

সুজাতা রেগে গিয়ে বললো,
—তুমি আমাকে বানর বললে?

সুজাতার কথায় দিশানীর প্রচুর হাসি পাচ্ছে।কিন্তু দিশানী কোনোরকমে হাসি চেপে রেখে বললো,
—আমি তো উপমা দিলাম। আপনি যদি নিজেই নিজেকে বানর বলেন তাহলে আমি কি বলতে পারি বলুন?

—অসহ্য!

—সে আপনার সহ্য হোক আর না হোক তাতে আমার কি? আপনি শুধু তাড়াতাড়ি আমাকে এক-কাপ চা বানিয়ে দিন ঝটপট করে।

সুজাতা রাগে ফুসতে ফুসতে রান্নাঘরে চলে গেলো।

নিরা নিজের ঘরে যেতে নিতেই দিশানী নিরাকে ডাক দেয়। নিরা বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
—আবার কি হয়েছে? এতক্ষন মাকে এতো কথা শুনিয়ে শান্তি হয়নি? এখন কি আমাকেও কথা শোনানোর ইচ্ছা আছে নাকি?

—না গো!তোমার মতো ফালতু মেয়েকে কথা শুনিয়ে যে কোনো লাভই হবেনা তা আমি জানি। তাই তোমাকে কথা শোনালে শুধু আমার সময়ই নষ্ট হবে কোনো লাভ হবে না। যাকে বলে অপাত্রে ঘি ঢালা। তোমার ক্ষেত্রেও ঠিক সেরকম। যাই হোক বলছিলাম যে কালকে রাতে তো ভালো ভাবেই খেয়েছো তাহলে বাসনগুলো কেনো ধোওনি শুনি?

—মা টায়ার্ড হয়ে গেছিলো। এমনিতেই কালকে মেয়ে দেখতে যাওয়া হয়েছিলো, তাই টায়ার্ড হয়ে যাওয়ার কারণে আর বাসন ধোয়নি।

—মা না-হয় টায়ার্ড ছিলো তাহলে তুমি কি করছিলে হ্যাঁ? তুমি নিজেও তো ওগুলো ধুতে পারতে!

—পাগল নাকি? আমি ওসব করতে পারবোনা। বাসন মাজতে গেলে আমার হাতের নখ নষ্ট হয়ে যাবে, হাত অসুন্দর হয়ে যাবে। তাই আমি ওগুলো করবোনা।

দিশানী মুখ ভেংচিয়ে বললো,
—কি এলেন রে আমার ননীর পুতুল!বাসন মাজলে নখ নষ্ট হয়ে যাবে হাত অসুন্দর হয়ে যাবে আর কেউ যেনো বাসন মাজেই না। বলি রূপ ধুয়ে কি জল খাবে নাকি?তোমাকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার!এখন থেকে বাড়ির সব বাসন তুমি মাজবে, বুঝেছো?

—পারবোনা!আমার নখ ভেঙে যাবে।

দিশানী এই কথা শুনে নিরার হাত ধরে জোর করে একটা নখ ভেঙে দিলো।তারপর বললো,
—নাও একটা নখ ভেঙে দিয়েছি। এমনিতেই নখ অসুন্দর হয়ে গেছে। এখন যাও বাসনগুলো মেজে ফেলো। আর হ্যাঁ আমি যখন একবার বলেছি তুমি এখন থেকে বাসন মাজবে তাহলে তুমিই এখন থেকে বাসন মাজবে।আর যদি আমার কথা না শোনো তাহলে আমি তখন তখনি অ্যাকশন নেবো আগে খাওয়া বন্ধ করতাম এখন হাতাহাতি করবো।এখন যাও ভালোই ভালোই বাসনগুলো মেজে ফেলো।

নিরাও রাগে ফুসতে ফুসতে বাসন মাজতে গেলো।

নির্ঝর চুপচাপ এসব দেখে গেলো।

নীলাদ্রির ফোন আসতেই দিশানী ফোন নিয়ে রুমে গেলো।

দিশানী ফোন ধরে বললো,
—হুম বলুন

—কালকে ফ্রি আছি আমি ফর্ম টা কালকে জমা দিতে যাবো বুঝেছো?

—হুম বুঝলাম।

—হুম!

নীলাদ্রির সাথে কথা বলতে বলতেই নিরা চা দিয়ে গেলো দিশানীকে।দিশানী হেসে হেসে নীলাদ্রির সাথে টুকটাক কথা বলছে। নিরা চা দিতে এসে দিশানীর মুখে নীলাদ্রির নাম শুনে আর দিশানীকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে রাগে ফুসতে ফুসতে বের হয়ে গেলো।

নির্ঝর ঘরে আসতেই দিশানী ফোন রেখে দিলো।নির্ঝর আসাতে বললে ভুল হবে দুজনের কথা শেষ হয়ে গেছিলো তাই ফোন কেটে দিয়েছে আর নির্ঝরও ঠিক ওই সময়ই ঘরে ঢোকে।

নির্ঝর দিশানীকে বললো,
—কার সাথে কথা বলছিলে আর আমায় দেখে ফোনটা কাটলে কেনো?

দিশানী ভ্রু কুঁচকে বললো,,
—কে তুমি? কোনো মহান ব্যক্তি যে তোমায় দেখে ফোন কাটবো? কথা শেষ হয়ে গেছিলো তাই ফোন কেটে দিয়েছি।

—কার সাথে কথা বলছিলে?

—তোমার জেনে কোনো লাভ নেই।

—নীলাদ্রির সাথে কথা বলছিলে তাইনা? যখন তোমার ফোন আসে তখন আমি তোমার ফোনের স্ক্রিনে নীলাদ্রি নাম লেখা ওঠা দেখেছি।

—জানোই যখন নীলাদ্রি ফোন করেছিলো তখন আবার ঘটা করে জিজ্ঞাসা করতে আসার মানে কি?

—লজ্জা করে না বিবাহিত মেয়ে হয়ে পরপুরুষের সাথে এতোটা মেলামেশা করতে?

—কাল রাতের থাপ্পড়টা মনে নেই তাইনা? আরো খাওয়ার শখ হয়েছে? দেবো আর কটা? সিরিয়াসলি বলছি এবার গাল লাল না করা অবধি কিন্তু চড় দেওয়া থামবে না।খেতে চাও আরো?আর আরেকটা কথা নিজের সীমার মধ্যে থাকার চেষ্টা করো। আর বিবাহিত ছেলে হয়েও দ্বিতীয় বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য তোমার যদি লজ্জা না করে তাহলে আমার কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে লজ্জা কেনো করবে? আমিও মানুষ তুমিও মানুষ ওহ না তুমিতো অমানুষ!আমারো কি বুদ্ধি আমি তোমার সাথে মানে তোমার মতো কুরুচিপূর্ন মানুষের সাথে নিজের তুলনা করছি।ধুর আমারি ভুল!

—জাস্ট শাট আপ!তুমি মেয়ে আর আমি ছেলে তোমার সাথে আমার তুলনা চলে না। আমি বিবাহিত হয়েও বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যেতে পারি এতে সমাজ আমাকে কিচ্ছু বলবে না কিন্তু তুমি বিবাহিত হয়েও একটা ছেলের সাথে মিশলে সমাজ তোমাকে কটু কথা বলবে। চরিত্রহীন বলবে।

দিশানী এই কথা শুনে নির্ঝরের গালে এলোপাথারি চড় মারতে থাকে একের পর এক একের এক চড় মেরেই যাচ্ছে।ঐদিন শুধু চারটা থাপ্পড় মারলেও আজকে হিসাব ছাড়া থাপ্পড় দেয় দিশানী নির্ঝরকে। একদম গাল লাল করে দেয়।নির্ঝর অনেক কষ্টে দিশানীকে আটকায়।

দিশানী উত্তেজিত হয়ে ওঠে তারপর বলে,
—ধিক্কার জানাই তোমার এমন সমাজকে। যে সমাজে নারীকে সম্মান দেওয়া হয়না। নারীকে মানুষ বলে গণ্য করা হয়না।যে সমাজে তোমাদের মতো মানুষরুপী শয়তানের বসবাস চলে সে সমাজকে আমি চরম ধিক্কার জানাই।আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় তোমার এই কলুষিত সমাজের জন্য।আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই মানুষগুলোর জন্য যারা নারীকে অবহেলা করে,আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই পরিবারগুলোর জন্য যারা নিজেরাই নিজেদের ছেলে আর মেয়ে সন্তানের প্রতি ভেদাভেদ করে,আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই পরিবারগুলোর জন্য যারা নিজের মেয়েকে রাজরানী করে রাখে অথচ ছেলের বউকে চাকরানী বানিয়ে দেয়,আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই সমাজের জন্য যারা নিজের ছেলের অক্ষমতাগুলোকে স্বীকার না করে অযথা একটা মেয়েকে অক্ষম বানিয়ে দেয়, আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় তোমার মতো কাপুরুষের জন্য,আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই সমাজের জন্য যারা মেয়েদের দুর্বল ভাবে।এমনকি আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই নারীদের জন্যও যারা কোনো প্রতিবাদ না করে তার প্রতি করা অন্যায়গুলোকে চুপচাপ সহ্য করে।মেয়েরা কখনোই দুর্বল না!মেয়েরা যেমন শান্তশিষ্ট হতে পারে তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অশান্ত হয়ে ঝড় তুলতে পারে।

চলবে

গল্প:রঙহীন জীবনের রঙ
পর্ব ১৯
লেখনীতে: স্বর্ণা সাহা (রাত)

নির্ঝর দিশানীকে ধাক্কা মারলো। টেবিলের সাথে মাথা বাড়ি খেয়ে দিশানীর মাথা খানিকটা কেটে গেলো। নির্ঝর দিশানীকে তুলে উল্টো থাপ্পড় দিলো তারপর বললো,
—অনেক সহ্য করেছি তোকে আর সহ্য করবো না তুই তোর সীমা ছাড়িয়ে গেছিস। কি ভেবেছিলে কালকে থাপ্পড় মারায় কিছু বলিনি জন্য আজকেও কিছু বলবো না? মা আর নিরাকে দিয়ে কাজ করাস তবুও কিছু বলিনি ভেবেছিলাম আর থাকবিই তো মাত্র কয়েকদিন ছেড়েই দিই না হয়। খুব প্রতিবাদ করতে শিখে গেছিস তাইনা? আমাকে কালকে কি কি যেন বলেছিলি আমি কাপুরুষ তাইনা? আমি মা-বোনের খেলার পুতুল তাইনা? কালকে খুব মুখের বুলি ফুটেছিলো তাইনা? তোর ভাই নিয়ে যায়নি তো কি হয়েছে তোর তো কত বন্ধু জুটেছে ওদেরকে বল তোকে এসে নিয়ে যাক।

—ঠিকই তো বলেছি আমি ভুল কি বলেছি।

নির্ঝর আবার দিশানীকে আরেকটা থাপ্পড় মারলো।
দিশানী গর্জে উঠে বললো,
—এতোই যখন মারার ইচ্ছা তাহলে মেরে ফেলছো না আমায় একেবারে মেরে ফেলতে।

নির্ঝর বললো,
—না তোমায় আমি মারবো না তোমার সাথে তো আমার যৌতুক কিংবা জায়গাজমি এসব নিয়ে কোনো শত্রুতা নেই যে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো। এসব ভুল আমি করবো না।আমাদের সমস্যাই হলো বাচ্চা না হওয়া নিয়ে।

—বাচ্চা না হলে কি ভালো থাকা যেতো না? মানুষ কি বাচ্চা ছাড়া স্বাভাবিক জীবন যাপন করে না? তোমাকে তো কতবার বলেছিলাম তুমি নিজে একটা টেস্ট করাও তোমার মধ্যেও তো কোনো খামতি থাকতে পারে কিন্তু না তুমি তো আমাকেই দোষ দিয়ে গেলে।তোমার মধ্যেও দোষ থাকতে পারে।

নির্ঝরের এই কথায় প্রচুর রাগ হলো। ও এবার আর ঠিক থাকতে পারলো না।আবার দিশানীর গালে চড় বসালো তারপর বললো,
—তোর সাথে ভালোভাবে কথা বলাই ভুল। অনেক সহ্য করেছি তোকে আর পারবো না।যা বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।
নির্ঝর চিৎকার করে বললো,
—বেড়িয়ে যা এখনি নাহলে তোর লাশ বেরোবে এই বাড়ি থেকে।

নির্ঝরের চিৎকার শুনে সবাই উপরে এলো।নির্ঝর দিশানীকে টানতে টানতে রান্নাঘরে নিয়ে এলো। তারপর চুলায় থাকা ফুটন্ত গরম জলে দিশানীর হাত ডুবিয়ে দিলো। দিশানী চিৎকার করে উঠলো,
—নির্ঝর!ছাড়ো লাগছে, প্লিজ। আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট করছি।
নির্ঝর দিশানীর হাত শক্ত করে ধরে থাকে। দিশানী চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে। দিশানী বার বার নির্ঝরকে ছেড়ে দিতে বলে কিন্তু নির্ঝর ছাড়েনা।দিশানীর আকুতি নির্ঝরের কান অবধি পৌঁছায় না।এভাবে কিছুক্ষন থাকার পর নির্ঝর দিশানীকে ছেড়ে দেয় তারপর বলে,
—এখন দেখলি তো আমি কি করতে পারি আর কি না করতে পারি। কালকে চুপ করে ছিলাম ভেবে আজও চুপ করে থাকবো সেরকম ছেলে আমি নই।
দিশানী বেসিনে যেয়ে ট্যাপকল ছেড়ে দেয় আর হাত ট্যাপকলের নিচে দিয়ে রাখে কিছুক্ষন। তারপর দিশানী
আর সহ্য করতে না পেরে ব্যাগ গোছানো আরম্ভ করে। ডান হাত ফুটন্ত গরম জলে ডুবিয়ে দেওয়ার কারণে ডান হাত দিয়ে দিশানীর ব্যাগ গোছাতে প্রচুর কষ্ট হয় কিন্তু তবুও কষ্টে ব্যাগ গুছিয়ে নেয় তারপর বাম হাত দিয়ে কোনোরকমে ব্যাগ নিয়ে নিচে আসে, তারপর বলে,
—এই বাড়িতে থাকা আর আমার পক্ষে সম্ভব না।নিজের ক্ষতি করে এই বাড়িতে আমি থাকতে পারবো না। আর তোমরাও চাওনা আমি এখানে থাকি, আর চিন্তা কোরোনা ডিভোর্স আমি দিয়ে দেবো। তবে শেষবারের মতো একটা কথা বলছি আজকে অবহেলা করলে তো তবে একদিন তোমাদের মনে হবে দিশানীই তোমাদের জন্য পারফেক্ট ছিলো। আর এইদিন বেশি দূরে নেই। আর প্রতিবাদ যেটুকু করেছি সেটুকুতে চাপা শান্তিটুকু পেয়েছি। কিন্তু নিজের জীবন বাজি রেখে তো প্রতিবাদ করতে পারবো না।আর আমি তো বলেছিলামই আমি তোমাদের শাস্তি দেবো না সৃষ্টিকর্তা তোমাদের শাস্তি দেবে। তাই তার উপরেই ছেড়ে দিলাম সবকিছু। আসছি!
দিশানীর কথাগুলো বলতে গলা ধরে আসছিলো কিন্তু তবুও কষ্ট করে ও কথাগুলো বলেছে। দিশানী কথাগুলো বলে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো।

দিশানী বের হয়ে যেতেই নিরা বলে উঠলো,
—আপদ বিদায় হলো।

সুজাতা নিরার কথার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
—একদম ঠিক বলেছিস!

——————-
দিশানী মেঘাদের বাড়ির কলিংবেল বাজাতেই মেঘা এসে দরজা খুললো। দরজা খুলেই দিশানীকে দেখে বললো,
—দিশু তুই?আর তোকে এরকম দেখাচ্ছে কেনো?
মেঘার চোখ দিশানীর হাতের দিকে যায় মেঘা উত্তেজিত হয়ে দিশানীকে বলে,
—দিশু তোর হাতের এই অবস্থা হলো কি করে? ভেতরে আয় তুই।

মেঘা দিশানীর ব্যাগ হাতে নিয়ে দিশানীকে ঘরে নিয়ে গেলো। তারপর বললো,
—এসব কি করে হলো?তোর হাতের এ অবস্থা কেনো?

দিশানী মেঘাকে সব বললো। মেঘা বললো,
—ভালো করেছিস ওখান থেকে এসে। তোর হাতের অবস্থা ভীষণ খারাপ। আমি নীলাদ্রি দা কে ফোন করছি।

মেঘা নীলাদ্রি কে ফোন দিলো।মেঘা নীলাদ্রি সব বলতেই নীলাদ্রি উত্তেজিত হয়ে বললো,
—আমি এখুনি আসছি।

মেঘা ঠান্ডা জল নিয়ে এসে দিশানীর হাত ডুবিয়ে দিলো। তারপর নীলাদ্রি এলো। তারপর ওর হাতে অয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিলো। দিশানী শান্ত গলায় বললো,
—আমি হেরে গেলাম তাইনা?আমি তো আর প্রতিবাদ করতে পারলাম না আমি তো ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাম।

নীলাদ্রি দিশানীকে বললো,
—কে বলেছে হেরে গেছো?প্রতিবাদ তো তুমি করেছোই।ওরা সীমা ছাড়িয়ে গেছে সেক্ষেত্রে তুমি যে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছো নিজেকে বাঁচাতে এটাই অনেক। এরকমই বা কয়জন করতে পারে?

—নির্ঝর গায়ে হাত তুলতো কিন্তু এরকম কাজ করতো না আজকে ও ওর সীমা ছাড়িয়ে গেছে,তাই আমি আর ওখানে থাকিনি চলে এসেছি।কিন্তু আমি তো ওদের শিক্ষা না দিয়েই চলে এলাম আর তো প্রতিবাদ করতে পারলাম না।

—তুমি তোমার শাশুড়ি আর নিরাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কাজ করিয়ে নাও, এখন তুমি ওই বাড়ি থেকে যখন বের হয়ে এসেছো তখন এই কাজগুলো ওদেরকে করতেই হবে।

—কিন্তু আমি যে এতদিন এতো এতো কথা বললাম, এতো বড় বড় কথা বললাম সেগুলো তো পূরণ করতে ব্যর্থ হলাম আমি

—শোনো দিশানী তোমার এখন সবথেকে বড় প্রতিবাদ কি হবে জানো?

—কি?

—তুমি যদি এখন ভেঙে না পড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করো, নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলো তাহলে সেটাই তোমার শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ হবে। তখন তারা বুঝতে পারবে ওরা কি রত্ন হারিয়েছে।এক মাস প্রতিবাদ করেও যখন ওরা সোজা হয়নি ওরা সোজা হবে বলে আমার আর মনে হয়না। ওরা এখন পশুতে পরিণত হয়ে গেছে, ওদেরকে নিজে থেকেই নিজের ভুল বুঝতে শিখতে হবে। তুমি যদি নিজেকে যোগ্য বানাও তাহলেই এটা সম্ভব।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here