গল্পের নাম: হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্বঃ৩ you are beautiful
নবনী নীলা
আমি অভির কাছ থেকে সরে যেতেই অভি আমার হাত ধরে ফেললো। এতক্ষন কি তাহলে অভি ঘুমের ভান করেছিলো? আমি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকিয়ে আছি। সে আমাকে পাত্তা না দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে গেল। এনার শক্তির সাথে কি আমি পারি?
” আপনি কি করছেন?” বিরক্ত হয়ে বললাম।
” সাঁতার কাটছি। দেখতে পাচ্ছো না।”
” না আমার চোখে তো ছানি পরেছে আমি কিভাবে দেখবো? আচ্ছা আপনি সাতার কাটুন আমাকে ছাড়ুন। আমি সাঁতার জানি না ডুবে যাবো।” নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছি কারন অভির সাথে আমি কখনোই পারি না।
” আমি থাকতে ডুববে না।”, এই লোকটা আবার মজা নিচ্ছে।
” এই আপনি থামবেন?কি বলতেছেন এইগুলা? এইটা আপনার পুকুর মনে হচ্ছে? এইভাবে বিছানায় শুয়ে কে সাঁতার কাটে?”
” তুমি যখন দেখতেই পাচ্ছিলে আমি শুয়ে আছি তুমি আমাকে প্রশ্ন করলে কেনো আমি কি করছি?”
” হে আল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্য্য দেও এই লোকটা কে সহ্য করার ক্ষমতা দেও।” অভি একটু ঠোঁট টিপে হাসছে। হাসবেই তো কারো পৌষ মাস তো কারোর সর্বনাশ। আমি নিজেকে ছড়িয়ে উঠে দেখি আমাদের রুমের দরজা ভিতর থেকে লাগানো। হটাৎ দরজা ভিতর থেকে লাগানোর কি দরকার পড়লো এই বাসায় তো আমি আর শুধু অভি থাকি। আমি দরজার সামনে এসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।
” আপনি হটাৎ দরজা লাগলেন কেন?”
অভি নিজের কাঁধ ঠিক করে উঠে বসতে বসতে বললো,” দরজা খুলে দেখো নিজেই বুঝতে পারবে।”
আমি দরজা খুললাম কিন্তু কিছুই তো দেখছি না আমাকে কি আবার বোকা বানালো এই লোকটা। আমি হেঁটে রান্নাঘরে এলাম পানি নিতে এসে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো অভির মা আর পিসি এসেছে। ওনারা কখন আসলো, কালকে এসেছিলো? অয়হায় আমি তো বাসায় ছিলাম না কি বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার।
অভির মা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। উনি আমাকে একটু বেশী আদর করে। আজ পর্যন্ত নিজের শাশুড়ির কাছে বকা না খাওয়ার রেকোর্ড আছে আমার।
” এখন কি একটু বেটার ফিল করছো ?” আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন।
” হ্যা একদম ঠিক আছি। আপনি চলে আসছেন আমি একদম সুস্থ এবার।” ভাগ্য করে এমন একটা শাশুড়ি পেয়েছি।
অভির ফুফু ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে উনি আজগুবি কথা বার্তা বলেন।
উনি কি জানি খাচ্ছিলেন আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,” ভালা আছো?”
” জ্বি ভালো। আপনি ভালো আছেন?”, বললাম।
” হ্যা আছি। এই বয়সে আর যেমন থাকে মানুষ। তোমার জ্বর কমসে অখণ?”, পান মুখে দিয়ে বললেন।
” হ্যা জ্বর নেই তো আমার।”
” হুঁ থাকবো কমনে জ্বর হুইন্যা আমাগো অভি যেমনে দৌড়াইয়া গেছে, আবার কোলে কইরা নিয়া আসছে যাতে তোমার ঘুম না ভাঙ্গে।”
অভির এই ফুফু যা মুখে এসে বলে দেয়।লজ্জায় আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
” লজ্জা ফাইতে হইবো না, থাক”, বলেই উনি পান মুখে নিয়ে হাসতে লাগলেন।
কি এমন অবস্থায় পরলাম আমি। সব ওই লম্বুটার জন্যে হয়েছে। অভির মা আমার অস্বস্থি বুঝতে পেরে আমাকে নিয়ে করিডর এসে বসে।
” কি ? তোমার ভার্সিটিতে যাওয়া হয়?”,
বললেন অভির মা।
” না দুদিন যাইনি। দেখি কাল পরশু যাবো।”
” জানো নওরীন আমি না অনেক খুশী আজকে, তোমার জন্যে হয়েছে সব। আমি জানতাম তুমি পারবে। আমি সেদিনই বুঝেছিলাম তুমি পারবে যেদিন তোমার সাথে দেখা করে এসেছিলো অভি। তোমার কথা জিজ্ঞেস করতেই ছয়মাস পর আমি আমার ছেলের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখেছি। আমি আমার ছেলের জন্য যোগ্য মেয়ে খুঁজে পেয়েছি।” বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
” আমার কথা জিজ্ঞেস করায় হেসেছিলো কিন্তু আমিতো হাসির কোনো কথা বলিনি সেদিন।” সেদিন ঠিক কি কি হয়েছে সেটা নিয়েই ভাবতে লাগলাম। নিজের অজান্তেই মানুষকে খুশী করে দিয়েছি বাহ্ ভালো প্রতিভা আছে আমার মাঝে।
” সেটা বলতে পারছিনা। তবে যখন বলি নওরীনকে কেমন দেখলি তখন ঠোঁটের কোন হাসি রেখে বলেছিলো out of the box।”
” এটা আবার কেমন কথা?out of the box!”
” সেটা অভি ভালো বলতে পারবে।”
আম্মু আর ফুফু বিকালে চলে যায় তারা নাকি আমাকে দেখতে এসেছিলো। আমার অবস্থা ভালো আছে দেখে চলে গেছে। কিন্তু অভির ফুফু এক কাণ্ড ঘটিয়েছে। উনি যাবার আগে দোয়া পড়া পানি বলে আমাকে এক গ্লাস পানি খাইয়েছেন। আমি সরল মনে খেয়েও নিয়েছি।
খাওয়া শেষ করার পরে উনি হেসে দিয়ে বললেন এবার কাজ হবে। হুজুর থেইক্কা বাচ্চা হওয়ার ওষুধ নিয়ে আসছিলো সে সেটাই পানিতে গুলায়ে সূরা ফাতিহা ৩বার পড়ে ফু দিয়ে আমাকে খাইয়েছেন। আল্লাহ যদি চায় এরপর জলদি বাচ্চা হবে। আমাকে কেও বলুক যে যেইখানে বাচ্চা হওয়ার কোনো প্রচেষ্টা নেওয়াই হচ্ছে না সেইখানে বাচ্চা কি আকাশ থেকে টুপ করে আমার কোলে এসে পড়বে।
আমি মাথা ধরে খাটের কোণে বসে আছি। ওয়াশরুম এ গিয়ে বমি করার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অভি রুমে এসে আমার এমন অবস্থা দেখে ভেবেছে আমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছি। অভি আমার মাথায় হাত দিয়ে জ্বর আসছে কিনা দেখতে এলো।
” আরে আমি ঠিক আছি এতো ব্যাস্ত হবেন না ।”
” তাহলে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছো কেনো?”
” আপনার ফুফু যা করেছে এরপর আমি মাথায় হাত দিবো নাতো কি মাথায় পা দিয়ে বসবো।”
” ফুফু আবার কি করলো?”
” উনি আমাকে কোন হুজুরের দেওয়া ওষুধ পানির সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছেন।”
” What? কিসের ওষুধ।”
” বাচ্চা হওয়ার ওষুধ।”
আমার কথা শুনে অভি হাসতে লাগলো। মনে হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ মজার গল্প তাকে শোনানো হয়েছে। রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
” আপনি হাসি থামাবেন?”
অভি ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো
,” জিনিসটা কিন্তু খারাপ না, আমার আর কোনো কষ্টের প্রয়োজন হবে না। কোনো কষ্ট ছাড়াই আমি বাবা হবো। I think that’s great.”
” আপনার খুব মজা লাগছে তাই না?”
অভি আবার হেসে ফেললো। আমি রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি ছেড়ে দিলাম। আমার সাথেই পৃথিবীর আজগুবি ঘটনা ঘটে। আমি বসে এখন ড্রামা দেখবো। আমি রুমের লাইট বন্ধ করে আমার প্রিয় ড্রামা দেখতে শুরু করলাম, নিজের মুড ঠিক করতে হবে।
কিছুক্ষণ পর অভি এসে আমার পাশে বসে। আমি কোনো কথা বলিনা।
” এটা কি দেখছো তুমি ”
” Ask laftan Anlamaz ” বলেই আমি ড্রামার দিকে মনযোগ দিলাম। এইটা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।
” What?”, বলে অভি গল্পের কাহিনী বোঝার চেষ্টা করছে।
” এটা টার্কিশ ড্রামা আপনি বুঝবেন না।
“না বুঝার কি আছে By the way তুমি টার্কিশ ভাষা পারো?
আমি টার্কিশ ভাষার ট ও পারি না। কিন্তু আমি ভাব নিয়ে বললাম,” আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আমি টার্কিশ পারি কিনা? আরে আমি তো এক্সপার্ট টার্কিশ ভাষায়।”
অভি হাতভাজ করে আমার দিকে সন্দেহর চোখের তাকালো।
“güzel görünüyorsun”,( you’re looking beautiful) এটা বলেই মুচকি হাসলো।
” এইগুলা আবার কি?”
” তুমি না টার্কিশ ভাষার এক্সপার্ট এইটা বুঝতে পারছো না।”
আমি না শুনার ভান করলাম।
” বসে বসে হিন্দি ডাবিং দেখছে সে নাকি আবার টার্কিশ এক্সপার্ট।”কথা শুনে আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমাকেও পাগলে ধরসে মাঝে মাঝে বেশি কথা বলতে গিয়ে নিজের মান ইজ্জত ডুবিয়ে বসি।
আমি অভির হাতটা ধরে নিজের মুখের সামনে এনে হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম। বাহ্ এবার শান্তি লাগছে। কিন্তু ভয়ে অভির দিকে তাকাতে পারছি না।
[ চলবে ]