গল্পের নাম:হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্বঃ৪ কাছে আসার মুহূর্ত,পর্বঃ৫ এটা কি আমার জন্যে?

গল্পের নাম:হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্বঃ৪ কাছে আসার মুহূর্ত,পর্বঃ৫ এটা কি আমার জন্যে?
নবনী নীলা
পর্বঃ৪ কাছে আসার মুহূর্ত

অভি আমার দুপাশে হাত রেখে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি পিছাতে পিছাতে সোফার হ্যান্ডেল এর সাথে ঘেঁষে আছি। অভি আমার দিকে ঝুঁকে আসছে এইটা দেখে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। ভয়ে মনে হচ্ছে ভিতরের আত্তা বেরিয়ে আসবে, বুকটা ধুক ধুক করছে।আমি চোখ খুলে দেখি অভি একদম আমার মুখের কাছে নিজের মুখ রেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি এর আগে এত কাছ থেকে অভিকে কখনো দেখিনি। আমার জামাইটা এত সুন্দর কেনো? দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করে। নিজে নিজে ভেবে হাসছি।

অভি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো,” হাসছো কেনো তুমি?”

অভির গলা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। আমি এতো বলদ এভাবে কেনো হাসছিলাম। উফফ ভালো লাগে না।
” কিছু না আপনি সরুন।” বলে আমি উঠে যেতেই অভি আমার কাধ ধরে আমাকে শুইয়ে দিলো সোফায়।

অভি শোচারচর এমন করে না। আমার কাছে চলে এলে নিজেকে সামলে নেয়। হটাৎ এমন করছে কেনো? আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। অভি আমার খুব কাছে এসে বললো,” তুমি যা করেছো এরপর তোমাকে আমি তোমাকে এমনেই ছেড়ে দিবো ভাবছো।”

অভির কোথায় আমি ঢোক গিললাম। হায় হায় বলে কি এমনেই ছাড়বে না মানে? আমি কি বলবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এনার সাথে আবার জ্বীন নেই তো এইটা তো স্বাভাবিক আচরণ না। আমি চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলাম।
চোখ খুলে দুইহাত দিয়ে অভির গাল স্পর্শ করলাম। অভি অবাক হয়ে আমার হাতের দিকে তাকালো আমার হাত রীতিমতন কাপছে।

” শুনুন বন্ধু আছেন বন্ধুর মতন থাকেন, হাসব্যান্ড হবার কোনো প্রয়োজন নেই।” বলেই অভির গাল থেকে হাত নামিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলাম। অভি ভ্রু কুঁচকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,” মানে?”

আমি মাথা নিচু করে বললাম,” আপনিই তো বলেছিলেন আপনি বন্ধুর চেয়ে বেশী কিছু হতে পারবেন না ভুলে গেলেন।”

অভি চুপ করে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর উঠে স্বাভাবিক ভাবেই নিজের রুমে চলে গেল। কি হলো ব্যাপারটা? হুট করে কি হয় এই লোকটার। যাক যা হয়েছে ভালো হয়েছে কিন্তু রাগ করেছে নাকি। ধুরো রাগ করুক, আমাকে যে সারাদিন রাগায় এইবার বুঝুক কেমন লাগে।
খাবার সময়ে অভি তেমন কথা বললো না নিজের ফোন দেখতে দেখতে খাওয়া শেষ করলো। আমার ওষুধ এনে পানিসহ আমার সামনে রেখে গেলো।
নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে।

আমি আমার ফোনটা হাতে নিয়ে রুমের বাহিরে এলাম অভি নিজের রুমে বসে ল্যাপটপ এ কাজ করছে।ফোন ধরে দেখি মা, রচনা কল করেছে অনেকবার। ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো তাই বুঝিনি। রচনা ২১বার ফোন করেছে আর এত্তগুলো ম্যাসেজ। আমি ওকে কল ব্যাক করতেই একগাদা কথা শুনতে হলো আমাকে কারন আগামীকাল রচনার গায়ে হলুদ। আমি তো একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম। যা কথা শুনিয়েছে সেটা আমার প্রাপ্য ছিল।

অনেক কষ্ট করে রচনাকে বুঝলাম মাফ চাইলাম। আমার কাজে রচনা যে কষ্ট পেয়েছে সেটা বুঝাই যাচ্ছে। কিন্তু এবার আরেক সমস্যা অভিকে কিভাবে বলি। আমার সাথে তো সে কথা বলছে না। আমি নিজে থেকে নিলজ্জের মতন গিয়ে কথা বলতে পারবো না তাই রচনার সাথে কথা বলাতে আমি আমার ফোনটা নিয়ে অভির সামনে ধরলাম।

অভি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,” কি হয়েছে?” তারপর ফোন নিয়ে কানে ধরলো। তারপর তারা কি বলেছে বুঝিনি। অভি শেষে হেসে দিয়ে বললো,” আচ্ছা নওরীনকে আমি ড্রপ করে দিবো। আর আমি চেষ্টা করবো নিজেও যাওয়ার।”

কথা শেষ করে অভি ফোনটা পাশের টেবিলে রাখলো। আমি বললাম,” আপনি যাবেন না রচনার গায়ে হলুদে?”

অভি কাজ করতে করতে বলল,” I’m not sure but I’ll try.”

” কিন্তু আপনি না আমার জন্যে দুইদিন ছুটি নিয়েছেন।”, প্রশ্ন করে ফেললাম।

অভি আমার দিকে তাকালো না তার সব মনোযোগ এখন লেপটপে,” যার জন্যে নিয়েছিলাম আমারতো মনে হচ্ছে না তার কোনো প্রয়োজন আছে।”

আমি আর কথা বললাম না আমার দিকে একবার তাকাচ্ছেও না, আমাকে রাগ দেখাচ্ছে। আমি চুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম রাত ১২ বেজে ৩৯ মিনিট। আমি অভির দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

অভি সাথে সাথে রুমের বাতি নিভিয়ে লেপটপে নিজের কাজ করতে মনোযোগ দিলেন। আমার অসুবিধা হয় লাইট জ্বালিয়ে রাখলে তাই লাইট বন্ধ করেছেন। ওনাকে কে বলেছে আমার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে ভাবতে। আমি জামাও বদলালাম না শাড়ি পরেই শুয়ে আছি অস্বস্থি বোধ হচ্ছে। এসি চলছে তাও আমার গরম লাগছে তাও আমি ঘাওড়ামি করে শুয়ে আছি।

খুব সকালে ঘুম ভাঙলো আমার শীত লাগছিলো তাই গায়ে জড়ানোর জন্য শাড়ির আঁচল খুঁজছিলাম।চোখ খুলে দেখি আমার গায়ে উপর আঁচলটা নেই। লজ্জায় আমি লাল হয়ে গেলাম। যদিও অভি উল্টো দিকে মুখ করে ঘুমাচ্ছে। আমাকে এ অবস্থায় দেখেনিতো।

আমি খেয়াল করলাম আমার শাড়ীর আঁচলটা অভির পিঠের নিচে। নিশ্চয় আমি রাতে এটা ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। আমি শাড়ীর আঁচলটা দিয়ে কোনমতে নিজেকে ঢেকে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। এক হাতে আঁচলটা গায়ে ধরে অন্য হাতে অভির পিঠের নিচ থেকে আঁচলটা টেনে আনার চেস্টা করছি আর আল্লাহকে ডাকছি যাতে অভির ঘুম না ভাঙ্গে। আমাকে এ অবস্থায় দেখলে কি ভাববে কে জানে।

আঁচলটা অনেকখানি নিয়ে এসেছি কিন্তু পুরোটা বের করার আগে অভি আমার দিকে ফিরতেই আমার কাছের আঁচলটুকুও চলে গেলো। আমি হেচকাটান সামলাতে না পেরে অভির গায়ে পড়ে গেলাম। অভির ঘুম ভেঙে গেলো। অভি আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ বন্ধ করে অভির বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললাম। অভি প্রথমে কিছু বুঝেনি আমি ভয় পেয়েছি ভেবে আমাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে আমার কোমরে স্পর্শ করায় আমি কেপে উঠি। অভি সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে হাত দুটো সারেন্ডার করে রাখে।

অভি বড়ো রকমের একটা শক খেয়েছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বিষয়টা বুঝতে পেরে আঁচলটা ছাড়িয়ে সেটা দিয়ে আমাকে মুড়িয়ে দিলো। আমি আঁচলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে উঠে বসলাম। অভি কিছু না বলে ফ্রেশ হতে গেলো।

অভিও ভীষণ লজ্জা পেয়েছে কিন্তু সে প্রকাশ করেনি। আমারতো ইচ্ছে করছে মুখটা একটা কিছুর মাঝে ঢুকিয়ে বসে থাকি। আমি মনে হয়না কোনোদিন আর অভির চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবো। লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে গেছে। এ জীবনে আর কোনোদিন শাড়ি পড়ে ঘুমাবো না। আমার শিক্ষা হয়েছে।

[ চলবে ]

গল্পের নাম :হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে
পর্বঃ৫ এটা কি আমার জন্যে?
নবনী নীলা

আমি আগে রেডি হয়ে গাড়ীতে এসে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর অভি নিজের সীটে এসে বসে আমার দিকে ঝুঁকে আসলো। আমি একটা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে ওড়নাটা শক্ত করে ধরলাম। সকালে যা হয়েছে তারপর আবার উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছে কেনো এমনেই ওনার দিকে তাকালে নিজেকে হার্টের রোগী মনে হয় বুক ধুকপুনি শুরু হয় আমার। আমি অনেক্ষন হলো চোখ বন্ধ করে আছি কিন্তু কিছু হচ্ছে না কেনো?

আমি চোখ খুলে দেখি অভি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এদিক সেদিক তাকাতে লাগলাম। অভি আমার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিতে একদম কাছে চলে এলো। অভির চেহারা একদম আমার মুখের সামনে।আমি জোরে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলাম। অভি সিটবেল্ট লাগিয়ে নিজের সীটে চলে গেছে। আমার কেনো এমন অবস্থা হয় এর আসে পাশে থাকলে। অভি কি সুন্দর স্বাভাবিক থাকে আমি এমন তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতন হয়ে যাই। আমি গাড়ির ড্রয়ার খুলে পানির বোতলটা বের করে পানি খেলাম। অভি মনযোগ দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছে, যেনো গাড়ী চালানোটাই তার আসল কাজ।

রচনা বাসার সামনে আমি নেমে পরি। আমি আর কিছু বলতে গিয়েও বললাম না।

” নওরীন দাড়াও।”, অভির আওয়াজ শুনে পিছে ফিরলাম।

অভি গাড়ি থেকে নেমে পিছনের সিট থেকে রাপিং পেপার এ মুড়ানো কিছু বক্স এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,” এতে রচনার জন্য কিছু গিফট আছে ওকে দিয়ে দিও।”

আমার বেস্টফ্রেন্ড রচনা ওর সাথে অভির গলায় গলায় খাতিল। অনেকটা মামা ভাগ্নির মতন। রচনাকে গিফট দিচ্ছে এতে আমার খুশি হবার কথা কিন্তু কেনো জানি মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কই আমাকে একবার চকলেট ছাড়া তো আজ পর্যন্ত কিছু দেয়নি। আমাদের বিয়ের দুমাস হতে চললো।

আমি আচ্ছা বলে বাড়ির দিকে ঢুকতেই অভি আবার আমাকে ডাকলো। অনিচ্ছা নিয়ে ওনার দিকে ফিরলাম।
আমার দিকে আরেকটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললেন,” এটা নেও।”
বাহ্ আরেকটা গিফট।আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,” এটাও রচনার জন্য?”
অভি না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” এটা মা তোমাকে দিতে বলেছে।”

বলেই আর দারালোনা না সাই করে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।
রাগ এবার আমার মাথায় উঠেছে। আমার শাশুড়িই ভালো এনার মতো নাকি। চিরতার রসের মতন জামাই পেয়েছি। এর নাকি এককালে প্রেম ছিলো।
অবশ্য আমার জন্যে কেনো কিছু কিনবেন আছে না অথৈ ওনার। ফিরে আসবে ওনার অথৈ ওনার কাছে যত্তসব। অসহ্য লাগে, ব্লক মেরে রেখেছি ওই ডাইনির নাম্বার আমি। আমাকে হুমকি দেয় এদের দুই জনের নামে আমি মামলা করবো, অসহ্য।

রাগে গজগজ করে উপরে উঠতেই একটা ধাক্কা খেলাম। হাতে আবার এতো কিছু অনেক কষ্টে পরে যাওয়া থেকে নিজেকে সামলে নিলাম। যার সাথে ধাক্কা খেলাম তার চেহারা দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল। রাহাত ভাইয়ের সাথে ধাক্কা খেয়েছি। রাহাত ভাই রচনার কাজিন এই ব্যাটা আমাকে বহুত জ্বালিয়েছে। ফুল নিয়ে আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। একবার বারান্দা দিয়ে ময়লা পানি মাথায় ঢেলে দিয়েছিলাম কিন্তু তাও শিক্ষা হয়নি।

আমাকে দেখে হাসলেন,” কি ব্যাপার নওরীন কেমন আছো? ”

আমি জ্বি ভালো আছি বলে হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু হাসি আসলো না।

” আমাকে মনে আছে তোমার?”, এমন ভাবে বলছে দেখো মনে হচ্ছে এনার সাথে কতো জনমের পরিচয়। কম সমস্যায় ফেলেছে যে একে ভুলে যাবো।

” ভাইয়া আপনার সাথে পরে কথা বলবো রচনা রেগে আছে ওর সাথে দেখা করে আসি।”, বলেই কেটে পরলাম।
কোনো কথা বলার সুযোগ দিলাম না। রাহাত ভাই দেখতে ভালো কিন্তু ওনার সেন্টি মার্কা অভ্যাস। অ্যাটিটিউড কম, ছেলেদের অ্যাটিটিউড না থাকলে কেমন পানসে পানসে লাগে।

রচনার রুমে এসে দেখি সে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আণ্টি বলেছে আজ সারারাত জাগবে তাই নাকি ঘুমিয়ে পড়ে আছে। ওকে অনেক কষ্টে জাগিয়ে তুলে ওকে গিফট গুলা দিলাম।

রচনা চোখ ডলতে ডলতে বললো,” এইগুলো তুই এনেছিস?”

আমি ওর পাশে বসে বললাম,” নাহ, আমার জামাই দিয়েছে। আমার গিফট বিকালে আসবে ”

” তা আমার জামাইবাবু আসেনি?”

আমি বললাম,” না।”

” কখন আসবে কিছু বলেছে?”

আবার বললাম,” না।”

রচনা আমাকে একটা ধাক্কা মারলো ,” কি শুরু করেছিস তখন থেকে। না ছাড়া কিছু বলতে পারিস না।”

“রাহাত ভাই এখানে কেনো বলবি একটু আমাকে।”, আমি রেগে বললাম।

” আরে ওনাকে না বলে পারি? তারউপর বিয়ে বলে কথা ওনাকে আমারও পছন্দ না।গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে।”রচনা আমার হাতের প্যাকেটা টান মেরে নিয়ে বললো,” এইটা কি?” বলে খুলে দেখলো মেরুন রঙের একটা শাড়ি। শাড়ীটা ভীষণ সুন্দর। আমারও খুব পছন্দ হয়েছে।

” বাহ্ তোর জামাইতো দেখি খুব রোমান্টিক।”, রচনা দুষ্টামি করে বললো।

” ফালতু কথা বলিস না, এটা আমার শাশুড়ি দিয়েছে।”বলে আমি শাড়িটা দেখতে লাগলাম।

“তোর শাশুড়ি তোকে দিয়েছে আর তুই এটা না দেখে এখানে নিয়ে এলি।”,প্রশ্ন করলো রচনা।

” আরে না, আসার সময় আমাকে এটা দিয়েছে উনি, আমি খোলার সময় পাই কি করে।”, মন খারাপ করে বললাম।

রচনা হাসতে লাগলো। যেনো আমি ওকে কোনো ফানি জোকস বলেছি।

” তুই হাসি থামবি রচনা।”, ওর হাসি দেখে আরো রাগ হচ্ছে আমার।

রচনা কিছুক্ষনের জন্য হাসি থামিয়ে বললো,” তোর মাথায় যে ঘিলু নেই সেটা আমার জানা ছিলো না। এটা যদি তোর শাশুড়ি দিয়ে থাকে তাহলে অভি তোকে আমার বাসার সামনে এসে দিবে কেনো? বাসায় থাকতেই দিতে পারতো না।”

রচনা কি বলতে চাচ্ছে বুঝতে না পেরে বললাম,” ভুলে গেছিলো হয়তো।”

” জ্বি না ম্যাডাম, আপনার জামাই আপনার জন্যই কিনেছে। কি বলে দিবে বুঝতে না পেরে তোর শাশুড়ির কথা বলেছে। তুই আস্ত একটা গাধা।”, বলে ঠোঁট টিপে হাসছে রচনা।

আসলেই তো আম্মু যদি এটা এনে থাকে তাহলে সেটা নিজেই দিবে আমাকে অভিকে দিয়ে কেনো পাঠাবে। একটা ভালোলাগা কাজ করছে কেনো জানি। নিজের অজান্তেই মুখে হাসি এসে গেলো। রচনা এই নিয়ে আমাকে আরো লজ্জা দিচ্ছে।

রচনার ফোন বেজে উঠতেই আমি ফোনটা রিসিভ করলাম। শাকিল ফোন করেছে, রচনার সাথে যার বিয়ে হতে যাচ্ছে। রচনা শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি ফোন কানে দিয়ে বললাম,” হেলো ”
ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,” রচনাকে দেওয়া যাবে?”। আমি ফোনটা loudspeakers এ দিলাম, রচনাও শুনছে।

” আমি রচনা, বলুন কি বলবেন।”,বলেই আমি মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলাম। রচনা বসে আমার কান্ড দেখছে।

” ভয়েসটা অপরিচিত মনে হচ্ছে আমার।”, ওপাশ থেকে বললো শাকিল।

” আমার ঠান্ডা লেগেছে তাই হয়তো আপনার এমন মনে হচ্ছে।” এটা বলার সাথে সাথে ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ পেলাম। আমি আর রচনা কিছু না বুঝে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি।

“কি হলো হাসছেন কেনো?”, আমি আবার বলতেই শাকিল বললো,” প্রথমত আমি ফোন দিলে রচনা সবসময় বলে কি চাই তোমার? আর সে আমাকে আপনি করে বলে না। তাই তুমি যেই হও না কেনো, অভিনয়টা ভুল করেছো সেটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে।”

ফোনটা রচনার হাতে দিয়ে আমি চুপ করে বসে পড়লাম। এভাবে ধরা খাবো বুঝতে পারিনি। রচনা ফোন কানে নিয়ে বলে,” তোমার কোনো কাজ নেই সারাদিন ফোন দেও কেনো?”

আমি ওদের কোথায় মনযোগ না দিয়ে শাড়ীটা হাতে নিলাম। সত্যিই কি অভি এটা আমার জন্য কিনেছে? যদি আমাকেই দিবে তাহলে সোজাসুজি বললো না কেনো। কি লেভেল এর আনরোমান্টিক হলে নিজ শাড়ি কিনে মা দিয়েছে বলে কেউ। আমার এবার কেনো রাগ লাগছে না? উল্টো হাসি পাচ্ছে।
শাড়ির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দেখি ভিতরে একজোড়া ঝুমকাও রয়েছে। বাহ্ ভালোই উন্নতি হয়েছে উনার কিন্তু আমি এগুলো আজ পড়বো না। অন্য একদিন এইগুলো পড়ে অবাক করে দিবো। সে নিশ্চয়ই ভাবছে আজ ওনার দেওয়া শাড়ি গয়না পড়বো কিন্তু তা হচ্ছে না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here