অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব অতিরিক্ত
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
.
সাদিয়া সাদাদকে থাপ্পড় মারতেই সাদাদ অবাক হয়ে তাকালো। সাদিয়ার চোখের পানি সে সহ্য করতে পারছে না। তাই মনে মনে সুবহাকে এইভাবে জোর করে বিয়ে করার একটা ভয়ংকর পদক্ষেপ নিয়েছিল আর তার পরিনতি চোখের সামনে ভাসছে। আচ্ছা সাদিয়া কি তাহলে সুবহাকে মেনে নিবে না? কিন্তু সুবহাকে এভাবে রাখলে আসিফ সুবহার ক্ষতি অবশ্যই করবে। কাল যা দেখেছি তাতে ওকে আর বিন্দুমাত্র বিশ্বাসও আমার হয় না। হ্যাঁ সাদাদ কাল সবটাই দেখেছে! কিন্তু আসিফকে মেরে সিনক্রিয়েট করলে একেতো তার বোন কষ্ট পেতো দ্বিতীয়ত বিয়েবাড়ির পরিবেশটাই নষ্ট হতো। সাদাদ খুবই বিচক্ষন বুদ্ধিসম্পন্ন! তাই একটু নাটক সেও করলো। কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি সুবহাকে বিয়ে করা। যে করেই হোক সুবহাকে রাজি করাতে হবে। অনেকক্ষন সুবহা তার চোখের আড়ালে যদিও লোক ঠিক করা আছে। এদিকে সাদিয়া উঁচু হিল পড়ে পায়ে মচকা খেতেই সাদাদ স্প্রে করতে নিয়ে আসে। তখনই ওইসব আকাশপাতাল ভাবছিলো সে। কয়েকবার ডেকেও যখন সাদিয়া তার ভাইয়ের কোন পাত্তা পেলো না তখন দিলো এক থাপ্পড়। যদিও আস্তে ছিল। হাসতে হাসতে সাদিয়া বলল,
-কিরে ভাই? কাছে থেকেও সুবহার ভাবনায় ডুবে গেলি?
সাদাদ মুচকি হেসে বলল,
–জানিস আপু মনে মনে ভয়ংকর এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছিলাম!
সাদিয়া অবাক হয়ে বলল,
-মনে মনে আবার কান্ড ঘটানো যায় নাকি!
সাদাদ আগের ন্যায় বলল,
–হুম যায়। এটা একটা হ্যালুসিনেশনের মতো!ভাবনা এতো গভীর হয় যে মনে হচ্ছে সবই বাস্তব! এই ঘটনাটা সবচেয়ে বেশি ঘটে ডিপ্রেসড মানুষের।
সাদিয়া হালকা ভ্রু কুঁচকে বলল,
-তুই কি নিয়ে ডিপ্রেশনে আছিস? সাদ! তুই ঠিক আছিস তো?
সাদাদ হালকা হেসে বলল,
–দি আমি বিয়ে করবো! যে করে হোক ম্যানেজ কর! আমি সুবহাকে আর সময় দিতে পারবো না। বিয়ের পর যতখুশি সময় নিক আমার কোন সমস্যা হবে না। প্লিজ দি মানা করবি না।
সাদিয়া বেশ চিন্তিত গলায় বলল,
-ঠিক কি ঘটেছে তা আমি জানি না। কিন্তু তুই যখন বলছিস অবশ্যই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন আংকেল আন্টির এক মেয়ে বিয়ে দিয়ে তারা কি চাইবেন তাদের অন্য মেয়ে কে এতো তাড়াতাড়ি বিদায় দিতে? এমনিতেই সুবহা অনেক বেশি আদুরে!
সাদাদ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
–আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না দি। তোর কাছে আমার এই একটা আবদার। প্লিজ!
সাদিয়া বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। কিভাবে যে তাদের মধ্যে কথা তুলবে তাই ভাবছে সে।
.
রুবাইয়া আর আরফানের বিয়ের সকল রীতি শেষ। এখন দুজনের কবুল বলার পালা। আরফানকে প্রথমে কবুল বলতে বললে সে ধীরেসুস্থেইই কবুল বলে। তাকে রুবাইয়া থ্রেট দিয়ে বলেছে অসভ্যের মতো কবুল বললে খবর আছে তার! তাই নিজের ইমোশনকে কন্ট্রোল করে কবুল বলল। এবার রুবাইয়াকে বলতে বললে তার মুখ থেকে কিছুই বের হচ্ছে না। এটা দেখে আরফান বেশ বিরক্ত। বিড়বিড় করে বলছে,
-আমাকে সভ্য ভাবে কবুল বলতে বলে নিজে একদম চুপ করে আছে। আরে কবুলটা বলে দাও না। তারপর তোমাকে বাসায় নিয়ে চলে যাই!
আমি যে ভাইয়া মুখের কাছে কান নিয়ে ওনার কথা শুনছি তা বেচারা বুঝতে পারে নি।
–এতো সহজে তো আমি আমার রুবাপুকে ছাড়বো না। বললেই হলো কবুল বললেই বাড়ি নিয়ে চলে যাবেন?
আরফান ভাইয়া আমার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে তাকালেনন আর সবাই হেসে দিলো শালীকা আর দুলাভাইয়ের কান্ডে। আপুও হালকা হেসে কবুল বলে দিলো।
.
হঠাৎ সামনে তাকাতেই দেখি সাদাদ ভাইয়ের কাধে ভর করে সাদিয়া আপু এখানে এসে দাঁড়ালেন। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,
–আপু তোমার কি হয়েছে? এভাবে দাঁড়িয়েছো?
আপু হেসে বলল,
-আর বলো না পা টা মচকে গেছে। টেনশন নিয়ো না স্প্রে লাগিয়ে নিয়েছি! শুধু হিলটায় সমস্যা হচ্ছে।
আমি আপুকে বললাম,
–আপু আমিও বেশিক্ষণ হিল পড় থাকতে পারি না তাই সবসময় স্লিপার রাখি। তুমি আপাতত ওইটা পড়ো! পায়ের ব্যাথাটা বাড়বে না।
আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-খুব উপকার হবে।
আমি তাড়াতাড়ি ভাইয়ার কাছে গিয়ে ব্যাগ থেকে জুতোটা নিয়ে আপুকে দিলাম। ভাইয়া বারবার জিজ্ঞাসা করছিলো কিন্তু আমি কিছুই বলি নি। ভাইয়ার ভালোবাসা এখানে যদি ভুলে প্রকাশ করে ফেলে তাহলে সমস্যা।
.
বিয়ের পরে বর কনে কে খাবার দেওয়া হলো। তখন থেকে দেখছি এই সাদাদ ভাই আমার দিকে তাকিয়েই আছে। হুহ! উনি কাল আমার সাথে যা ব্যবহার করেছে তার জন্য কোন ক্ষমা নেই। কিন্তু বারবারই আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। আর আমি ওনাকে সমানে এভোয়েড করছি। হিহি! এবার উনি সবার সামনেই বললেন,
–সুবহা তোমার সাথে আমার কথা আছে।
আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সব আমার দিকে তাকিয়ে। আপুর দিকে তাকাতেই আমাকে সাদাদ ভাইয়ের সাথে যেতে বলল। আমিও ভয়ে ভয়ে ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম। উনি একটু ফাঁকা জায়গা দেখেই দাঁড়িয়ে গেলেন। আমিতো ওনার পিছু পিছু যাচ্ছিলাম তাও আবার নিজের দিকে চোখ দিয়ে যার ফলাফল হলো ধপ করে ওনার পিঠের সাথে পুরো নাকমুখে বাড়ি খেলাম! নাক ডলতে ডলতে ওনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন,
–আমার প্রতি সব ভয় কি চলে গেছে?
আমি তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
–না তো! এখন কি বিয়ে বাড়িতেও আপনার থেকে পালাবো?
উনি কেন যেন মুচকি হেসে দিলেন। হেসে বললেন,
–তার মানে তুমি মানছো যে আমার থেকে পালাও?
আমি কিছুই বললাম না। উনি আমার বললেন,
–সেই আসার পর থেকে দেখছি আমাকে এভোয়েড করছো কেন?
,
,
,
চলবে……………….❤️