অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_২

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_২
লেখনিতে:সুমাইয়াnইসলাম মিম

দুপুর ২ঃ৩০ থেকে প্রেক্টিক্যাল ক্লাস শুরু হবে। এখন বাজে ১ঃ৩৫। হাতে বেশ কিছুক্ষণ সময় আছে। ক্ষিধে ও পেয়েছে। ব্যাগে হাত দিতেই দেখি বাসা থেকে লাঞ্চবক্স আনতেই ভুলে গেছি। কি আর করার! গেলাম ক্যাফেটেরিয়াতে কিছু খাওয়ার জন্য। ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে পুরোদমে অবাক হয়ে গেলাম। পুরো ক্যাফেটেরিয়া ফাঁকা। আজকে ক্যাফেটেরিয়া অফ নাকি? ভাবতে ভাবতে এগুচ্ছি। নাহ! সামনে কয়েকটা লোক দেখা যাচ্ছে। একটা টেবিলে গোল হয়ে বসে আছে পাঁচ ছয়জন। দুইটা মেয়েও আছে। তাই মোটামুটি ভরসা পেলাম। এগিয়ে গিয়ে দুইটা সিংগাড়া কিনে নিয়ে একটা ফাঁকা টেবিলে বসলাম। সিংগাড়া চিবুচ্ছি আর ফোন বের করে রাত্রিকে কল দিচ্ছি। আজ কেন যে এলো না মেয়েটা! অবশেষে রাত্রিকে ফোনে পাওয়া গেলো।
–আসসালামুয়ালাইকুম! রাত্রি?
রাত্রি হাই তুলতে তুলতে বলল,
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুই এতো সকালে?
রাত্রির কথা শুনে আমার মুখ হা হয়ে গেলো! এতো বিরক্ত লাগছিলো যে কি বলব! ইচ্ছে হচ্ছিলো রাত্রির বাসায় যেয়ে চার পাঁচটা চড় দিয়ে আসি। কিন্তু পরক্ষনে নিজের ব্যর্থতাকে ডাকতে মনকে বুঝালাম যে এতো ভাড়া দিয়ে ওকে চার পাঁচটা চড় দিলে আমারই লস। তাই বাসায় গিয়ে চড় দেওয়ার চিন্তা বাদ৷ কাল ভার্সিটি আসলে নাহয় সুদে আসলে গোটাকতক চড় মারা যাবে নে।
–তা ম্যাডাম ১ঃ৫০ এ খুব ভোর তাই না?
রাত্রি আমার কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে যে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে তা আমি ফোনেই বুঝতে পারছি। আমার এতো হাসি পাচ্ছে কিন্তু এখানে অযথা হাসাটা একদমই বেমানান। তাই ঠোঁট চেপে হাসছি! তারমানে উনি ঘুম থেকে জাগ্রত হতে পারেনি বিধায় ভার্সিটি আসে নি।আর আমি কি কি না ভাবছিলাম। তাও দুষ্টামি তো করতেই হবে।
–তা রাত্রি ম্যাডাম! কার চিন্তায় আপনি বিভোর ছিলেন যে ভার্সিটি আসার সময় পেলেন না?
রাত্রি হয়তো নিজেই খেয়াল করে নি। তাই বেখেয়ালিতে খুব সাধারণ ভাবেই বলল,
-তুই বিভোরকে কিভাবে চিনিস?
রাত্রির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম৷ তাই একটু জোরেই বললাম,
–বিভোরটা কে?
প্রশ্নটা করে নিজেই বোকা বনে গেলাম। ভাগ্যিস ক্যাফেটেরিয়াতে তেমন লোক নেই। নয়তো আমায় শিওর পাগল ভাবতো।
রাত্রি হয়তো জিহবা দাঁত দিয়ে কামড়ে বলল,
-সরি মাই মিস্টেক। কাল ভার্সিটি এসে বলছি। অনেক বড় কাহিনী।
আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম,
–হুম হুম ঠিক আছে। এমনিতেও তোর জন্য পাঁচটা চড় পেন্ডিং আছে। আয় শুধু।
রাত্রি অসহায় গলায় বলল,
-মাফ কর বইন।
ফোনটা কেটে দেখি সামনে একটা কোল্ড কফি রাখা! এটা কে অর্ডার করলো? আমি তো করিনি! তাই টেবিল থেকে মাথা উচু করে ক্যান্টিনের মামাকে বললাম,
–এই যে মামা! কোল্ড কফি তো আমি অর্ডার করি নি। হয়তো ভুলে দিয়ে গেছে!
মামা মাথা হালকা নেরে বলল,
-না মামনি! আজকে যেকোন ডিসের সাথেই কোল্ড কফি ফ্রি!
আমার ভ্রু কুঁচকে এলো। কোল্ড কফি ফ্রি ভালো কথা! তাই বলে ১০ টাকার সিংগাড়ার সাথে নিশ্চয়ই ৬০ টাকার কোল্ড কফি ফ্রি দিবে না! কিছু বলতে যাবো তার আগেই ওই টেবিলটা থেকে একটা আপু বলল,
-হ্যাঁ আমাদেরও ফ্রি দিয়েছে। তুমি খেতে পারো।
বিষয়টা কেমন যেন গোলমেলে। তাও মাথা না ঘামিয়ে কোল্ড কফিতে সিপ দিলাম। এর মধ্যেই দুইজনের কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি এতো সাদাদ ভাইয়ের টিম মেম্বার সাব্বির ভাই আর তমাল ভাই! তারা বলছিলো,
-সাদাদ ভাই! শালাকে এমন পিটানো পিটিয়েছি যে আমাদেরই হাত ব্যাথা করছে!
আমার চোখ বড় হয়ে গেলো। সাথে সাথে ঢোক গিলে সামনে ডানদিকে তাকাতেই দেখি আমার বরাবর লোকটা মাথা হাত দিয়ে নিচু হয়ে আছে। পাশের দুই আপুও কাচুমাচু করছে। আর টেবিলে যে দুইটা ভাইয়া ছিলো তারা রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছে সাব্বির ভাই আর তমাল ভাইকে। আমি ভয়ে ভয়ে ওই টেবিলে তাকিয়ে আছি। এর মধ্যেই মাথায় হাত দেওয়া লোকটি শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। ব্যস! আর কি লাগে, ইনিই সাদাদ ভাই। ভয়ে আমার হাত কাঁপছে। কোনমতে এখান থেকে আমি বের হতে চাই। সিংগাড়া, কোল্ড কফি সেখানে রেখে কোনমতে ব্যাগটা নিয়েই উঠে এক প্রকার দৌড় দিয়ে ক্যাফেটেরিয়া থেকে বের হলাম। এই সাদাদ ভাইকে আমি যমের মতো ভয় পাই। ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারনও আছে। সেইদিনটা ছিল ভার্সিটি জীবনের প্রথমতম দিন। হাহ! লাইফে বোধহয় এমন ভয় পাইনি আমি!

.
সেদিন বাবা আমায় ভার্সিটি নিয়ে এসেছিল। এখানে বাবার এক ফ্রেন্ড আছে যিনি আমাদের কেমেস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর। কথা ছিল আমাকে আংকেল এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে আর বাবাও সাক্ষাৎ করবে আংকেল এর সাথে। কিন্তু বাবার ভার্সিটি থেকে ফোন আসায় তাড়াতাড়ি চলে যেতে হয়। আমিও বাবাকে বিদায় জানিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি। ভার্সিটিতে পা দিতে না দিতে আমার পায়ের কাছে একটা ছেলে ধুপ করে পরে আর্তনাদ করতে শুরু করে। আমি এতো ভয় পেয়েছিলাম যে বুকে হাত দিয়ে দুই কদম পিছনে চলে গিয়েছিলাম। এর মধ্যেই দেখি বেশ সুদর্শন এক যুবক এসে ছেলেটার ঘাড় ধরে টেনে তুলল। সেই যুবকটিই ছিল সাদাদ ভাই। তার চিৎকারে আমার কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম মুখ কুঁচকে। বরাবরই আমি একজন ভীতু প্রকৃতির মানুষ। মারামারি থেকে কয়েকশ হাত দূরে থাকি। যেখানে ফ্যামেলির কেউ আজ পর্যন্ত উচু গলায়ও আমার সাথে কথা বলে নি। এমন নয় শাসন পাইনি। আসলে আমার পরিবারে শাসন ছিল বুঝিয়ে বলা। এখন পর্যন্ত বাবা-মা বা ভাইয়া আপু কারো কথাই তেমন অমান্য করি নি দেখেও হয়তো বকা বা মার কপালে জোটে নি। সাদাদ ভাই ছেলেটার ঘাড় ধরা অবস্থাতেই ছুড়ে ফেলে দিল। আর ছেলেটা ছিটকে গিয়ে পড়লো সাব্বির ভাইয়ের হাতে। সেও উত্তম মধ্যম দিচ্ছিলো। ছেলেটার মুখ বিভৎস দেখাচ্ছিলো। এখনো মনে হলে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। সেদিন প্রথম থেকেই জানতে পেরেছিলাম ভার্সিটিতে সাদাদ ভাইয়ের রাজ চলে। তার কথা কেউ অমান্য করে না। তাকে দেখলেই আমার ভয়ে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হয়। যাকে হয়তো আমি জোর করেই ভয়ের নাম দিয়েছি।

.
ক্যাফেটেরিয়া থেকে বের হতে হতেই শুনেছিলাম সাদাদ ভাইয়ের উচ্চকন্ঠে বলা, “এ আমাকে এতো ভয় পায় কেন? কখনোই কি আমাকে বুঝবে না?” আর টেবিলের উপর জোরে হাত দিয়ে শব্দ করার আওয়াজ পেয়েছিলাম। ভয়ের চোটে এখনো হাত পা কাঁপছে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম প্রেক্টিক্যাল ক্লাসের উদ্দেশ্যে।
,
,
,
চলবে……………❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here