অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,অতিরিক্ত পর্ব

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,অতিরিক্ত পর্ব
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম

প্রেক্টিক্যাল ক্লাস শেষ করে বের হয়ে রিকশা খুঁজছি। কিন্তু আজ বোধহয় রিকশাওয়ালা মামা রা স্ট্রাইক করেছে যে সুবাহ নামক মেয়েটাকে তারা রিকশায় তুলবে না। কি আর করার। হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি। রিকশা দিয়ে গেলে ভাড়া লাগে ৮০ টাকা! পথ তো আর এইটুকু নয়! হঠাৎ সামনে তাকাতেই আমার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। আমার প্রানপ্রিয় ভাইয়া রিকশা নিয়ে এদিকেই আসছে। আহ! ভাইয়াকে এখন একটা আইসক্রিমের ট্রিট দিতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ধান্দায় আছি আজ ভাইয়ার থেকে ট্রিটটা আমি নেবো। আমাকে দেখে ভাইয়া হাত নাড়িয়ে ইশারা করলো৷ আমিও একটু এগিয়ে গিয়ে উঠে পড়লাম রিকশায়। হঠাৎ কি মনে করে ভার্সিটি গেটে চোখ পড়লো অমনি আমার ঠোঁটের হাসি গায়েব। সাদাদ ভাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি একটা ঢোক গিলে ভাইয়ার দিকে চেপে বসলাম। ভাইয়া কোনমতে রিকশা ধরে নিজেকে পড়ে যাওয়া থেকে আটকালো। আমাকে একটু চাপা স্বরে বলল,
-সুবাহমনি কি আমায় ফেলে দেওয়ার চিন্তায় আছে।
আমি একটু করুন সুরে বললাম,
–সরি ভাইয়া! খেয়াল করিনি। আচ্ছা গাড়ি নিয়ে আসলে না কেন?
ভাইয়া হালকা হেসে বলল,
-সবসময় গাড়িতে চড়তে মজা লাগে না। আর আমার সুবাহ মনির যে সেটা অপছন্দের তা তো আমি জানি তাই।
আমি হেসে দিলাম ভাইয়ার কথায়। আমি একটু কেশে ভাইয়াকে বললাম,
–ভাইয়া আজকে না আমার তোমাকে আইসক্রিমের ট্রিট দিতে ইচ্ছা হচ্ছে!

ভাইয়া হেসে বলল,
-আচ্ছা! ঠিক আছে। মামা ক্লাব জেলাটো চলেন!
আমি আবার মিনমিনে গলায় বললাম,
–ভাইয়া ট্রিট কিন্তু তোমার পক্ষ থেকে।
ভাইয়া এবার জোরে হেসে বলল,
– আচ্ছা ঠিক আছে। আর আমি এটাও জানি যখন আমার সুবাহ মনি এত্তো এত্তো টাকা রোজগার করবে তখন আমাকে এত্তো এত্তো আইসক্রিম এনে খাওয়াবে! কি তাই তো?

–হু!
ভাইয়াকে নিয়ে আইসক্রিম পার্লারে গিয়ে মনমতো আইসক্রিম খেলাম। ভাইয়ার সাথে আড্ডা দিতে দিতে আজকের ঘটনা ভুলেই গেছি। বাসায় যাওয়ার সময় সবার জন্য আইসক্রিম নিলো ভাইয়া। ওহ সবাইকে বলতে ভুলে গেছি আমার ভাইয়া একজন বাংলাদেশ আর্মি! এখন লেফটেন্যান্ট পদে আছে। আজই দুই মাসের ছুটিতে আসলো। যদিও ইমার্জেন্সি থাকলে সেই ছুটি ক্যান্সেল হতে পারে। আর আপুর বিয়েও এই মাসের ২৮ তারিখ! হাতে গোনা ১৪ দিন আছে আর। বাসার সবাইই মোটামুটি ব্যস্ত। আর আমার কোন কাজ নেই। সারাদিন ফাও ঘুরি। সবার ধারনা আমি ছোট মানুষ! আমার দ্বারা কিছু হবে না। এটা কোন কথা!

.
বাসায় এসেও সবার সাথে খুব মজা করলাম। বাসায় আমি শুধু আম্মুকে ভয় পাই। কিছু হলেই সুবাহ! এটা করো কেন? সুবাহ! ওটা করবে না। সুবাহ! তুমি বড্ড দুষ্টু হয়ে গেছো। হাহ! কেন যে ছোট হতে গেলাম! অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট আমি আমাকে বলে কিনা বাচ্চা! হুহ! সারাদিন শেষে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মনে পড়লো সবার প্রিয় সাদাদ ভাইয়ের কথা! কেন তা আমার নিজেরই অজানা। হুট করে যেন মাথা ঝেঁকে বসলো। কয়েকটা বড় শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলাম ঘুমানোর উদ্দেশ্যে কিন্তু বেইমান ঘুমটাও আজ ধরা দিচ্ছে না। আবার ভাবতে বসলাম সাদাদ ভাইয়ের কথা!

.
সাদাদ রহমান সাদ! লোকটাকে আমি যমের মতো ভয় পেলেও এই লোকটা নাকি আমাদের ভার্সিটির প্রান ভোমরা! নিঃসন্দেহে সে একজন সুদর্শন পুরুষ! মেয়েরা তো হুমরি খেয়ে পড়ে এমনকি আমার বেস্টু রাত্রিও! কিন্তু জানি না কেন লোকটাকে দেখলে এতো ভয় আমার কোথা থেকে আসে৷ এমনিতেতো হরর মুভি দেখেও ভয় পাই না। ভাবলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়৷ সাদাদ ভাই আমার সাথে কখনোই কোন খারাপ আচরণ করে নি। আসলে বলতে গেলে করার সুযোগ পায় নি। আমি তো ওনাকে দেখলেই পালাই! হিহি! সেবারের কথা! তার সাথে আমার দ্বিতীয় সাক্ষাত।

.
নবীনবরনে সবার ড্রেসকোড ছিল লাল! ভার্সিটির ৯৯% মেয়েই লাল শাড়ি পড়েছিল। ছেলেদের ইম্প্রেস করতে সে কি মেকআপ করা! বাবারে বাবা একেকজনকে চিনতেই সময় লেগেছে কে আসলে কোনটা। আর ১০০% এর ভিতর ৯৯% মেয়ে শাড়ি পড়লেও বাকি ওই ১% ছিলাম আমি। যেকিনা একটা লাল লং কুর্তি পড়ে মাথায় গোল্ডেন কালারের হিজাব বেঁধেছিলাম। আম্মু বলেছিল আমাকে নাকি ছোট্ট পরীদের মতো লেগেছে। কিন্তু ভার্সিটি গিয়ে নিজেকে আমার সবার সামনে এলিয়েন মনে হয়েছিল। সেই সবার মাঝে আলাদা আমিকে দেখেও যে কেউ মুগ্ধ হয়েছিল তা আমি জানতাম না। ভার্সিটির ছেলেদের ড্রেসকোড ছিল নীল। কিন্তু নীলের মাঝে নজর কাড়লো সাদাদ ভাইয়ের গোল্ডেন কালারের পাঞ্জাবি। মেয়েরা তো সেইদিন ওনাকে দেখে মুখ থেকে হায়! ছাড়া কোন কথাই বের করতে পারলো না। বসে বসে এতো তেষ্টা পাচ্ছিলো তাই ক্যাফেটেরিয়ার দিকে যাচ্ছিলাম পানি পান করতে। পানি পান করে বের হতেই দেখি সাদাদ ভাই একটা ছেলের কলার ধরে নিয়ে একটা রুমে ঢুকলো। আমিও কৌতুহল বশত সেখানে গিয়ে দেখি সাদাদ ভাই ইচ্ছেমতো ছেলেটাকে পেটাচ্ছে আর বুলি আওড়াচ্ছেন,
–আর ওইদিকে নজর দিবি? তুই কি মনে করেছিস আমি কিছু দেখিনি? তোর সাহস কি করে হয় আমার সম্পত্তিতে হাত দেওয়ার? হাতটা গুড়ো করে ফেলব একদম!

সেদিন এমন ভয় পেয়েছিলাম। বাবাগো! ওনার সম্পত্তিতে হাত দিয়েছে বলে এতো মারবে? আল্লাহই জানে ওনার বাড়িতে না গাড়িতে হাত দিয়েছিলো! কি ভয়ংকর! করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলাম আর নিজে নিজে জোরেই কথাগুলো বলছিলাম এর মধ্যেই পাশে থেকে কেউ বলল,
–ও আমার নারীতে হাত দিতে চেয়েছিলো যা আমার কাছে বাড়ি গাড়ির থেকেও বেশি। তা আমার কাছে অমূল্য সম্পদ!
আমি চোখ বড় করে সাদাদ ভাইকে পাশে দেখেই ভো দৌড় দিয়েছিলাম। ভয়ে সব হিতাহিত জ্ঞানই ভুলে গিয়েছিলাম যে কোন উত্তর না দিয়েই দৌড় দিয়েছিলাম সেদিন। তারপর থেকেই শুরু ওনার থেকে আমার পালানো!
,
,
,
চলবে…………..❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here