হৃদপিন্ড পর্ব-১২
#জান্নাতুল নাঈমা
প্রথমে অপ্রস্তুত হলেও পরোক্ষনেই ইমনের মেজাজ টা বিগরে গেলো। চোখ মুখ শক্ত করে চেয়ে রইলো।
এতো বড় সাহস আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটায়,আমি কি খারাপ কিছু করতে আসছি নাকি, যা আমি করতে চাইছি তা তো আমাকে করতে দিতেই হবে ভেবেই মুসকানের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো।
মুসকান ইমনের অমন রাগী চাহনী, শক্ত স্পর্শে ভয়ে কুঁকড়িয়ে গেলো।
ইমন কেমন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে বিছানায় চেপে ধরলো। আরেক হাতে মুসকানের ঘাড়ে শক্ত করে চেপে ঠোঁট এগিয়ে নিলো কপালে।
কপালে ঠোঁটের ছোয়া যে এতো তীব্রভাবে কেউ দিতে পারে তা বোধহয় কোন মেয়েরই জানা নেই।
মুসকানের তো একেবারেই নেই।
শরীরটা কেমন শিরশির করছে তাঁর, বুকের ভিতর চ্ঞ্চলতা ক্রমশও বেড়ে যাচ্ছে ঘন নিশ্বাসের মৃদু ছোঁয়া গুলো ইমনের গলায় লাগছে ক্রমশ।
কপাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে মুখের দিকে তাকালো ইমন।
মুসকানের মুখো ভঙ্গি দেখে হাতের বাঁধন আলগা করে সরে গেলো বিছানা ছেড়ে ওঠে হালকা কেশে কাঠকাঠ গলায় বললো এতো ঘুম কিসের।
এখানে কে ঘুমাতে বলেছে নিজের রুমে গেলেই পারতে,যাও খাবাড় রেডি করো আমার বেশী টাইম নেই বলেই বাথরুমে ঢুকে গেলো।
মুসকান কয়েকদফা শ্বাস নিয়ে চট করে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। ভ্রু কুঁচকে একবার নিজের ডান হাত আবার কপাল ছুঁয়ে দেখছে।
ওনি এমনটা কেনো করলো,ঘুমিয়ে গেছিলাম বলে শাস্তি দিলো?ইশ চোখটা লেগে গেছিলো।
আল্লাহ কি ভয়টাই না পেয়েছি। কপালে চুমু খেলো না কি, কি করলো কিছুই তো বুঝলামনা। চোখ, মুখ দেখে তো বোঝা যাচ্ছে বেশ রেগে গেছে।
যাই তারাতারি সব রেডি করি গিয়ে তবেই রাগটা কমে যাবে বলেই এক ঢোক গিলে ছুটে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
ফোনে কথা বলতে বলতে ইমন সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে। সাদা শার্ট, কালো কোর্ট, কালো প্যান্ট পড়া, হাইট অনুযায়ী একদম পারফেক্ট বডি। মুসকান রান্নাঘর থেকেই ইমনকে লক্ষ করছে সামনাসামনি সেভাবে দেখতে পারে না। দূর থেকে দেখে শুধু এতেই বেশ ভালো লাগে তাঁর। কাছাকাছি শুধু তাঁর প্রয়োজন গুলো খেয়াল করে যায়।দূর থেকে তাঁর সবটাই খেয়াল করে।কথা বলা, হাঁটা চলা,রাগ সবটাই মুখস্থ হয়ে গেছে তাঁর।
তাঁর চোখে এমন পুরুষ, এমন ব্যাক্তিত্ব আর দুটো ধরা পরেনি। কেমন যেনো বড্ড ভালো লাগে।
টিভিতে দেখা হিরোদের মতো জিম করা বডি, এততো লম্বা। দাদীর কথায় লম্বা খাম্বার মতো কিন্তু আমি তো এইটুক আমার সাথে কি ওনাকে মানায় ভেবেই মনটা খারাপ করে ফললো মুসকান।
আবারো চোখ তুলে তাকালো অপলক ভাবে চেয়ে দেখতে লাগলো।
গাল ভর্তি ঘন কালো দাঁড়ি, গোলাপি ঠোঁট জোরা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে এলো।
ডায়নিং টেবিলের সামনে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। ফোন কেটে পকেটে ঢুকিয়ে রান্না ঘরের দিকে একবার চেয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
বুঝলো আজ একটু দেরী হয়ে গেছে। বুয়াও আসেনি একা একা করছে তাই লেট হচ্ছে বোধহয়।
মুসকান সব খাবাড় গুছিয়ে সামনে দিলো। ইমন খেতে শুরু করলো।
মুসকান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছুক্ষন পর নিচু গলায় বললো সায়রী আপা আসবে আজ,,,
ইমন খেতে খেতে জবাব দিলো হুম। রিক্তাও আসবে।
ওও।
দাদী কালকে আসবে।
মুসকানের মুখে হাসি ফুটে এলো উত্তেজিত হয়ে বললো সত্যি।
ইমন চোখ তুলতেই মুসকান মুখটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো না মানে খুব ভালো হবে তাহলে।
শুধু দাদী নয় ইয়ানা,অভ্র, বাবা ও আসবে।
অভ্র ইয়ানার বড় ভাই আর আমার ছোট কাকার ছেলে।
ওও তাহলেতো সবার জন্য অনেক রান্না করতে হবে।
বাজারও করতে হবে অনেক।
ইমন হালকা কেশে পানি খেয়ে নিয়ে ওঠতে ওঠতে বললো সে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।
সায়রী আসার আগে যেই আসুক না কেনো দরজা খুলবে না। রুমে বসে পড়াশোনা করবে।
মুসকান ঘাড় কাত করে সম্মতি দিলো।
ইমন উপরে ওঠে গেলো।
মুসকান সব গুছিয়ে নিজের জন্য বাড়া খাবার টা ঢেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে উপরে চলে গেলো।
ইমন বেরিয়ে গেলেই সে খেতে বসবে।
,
দরজার সামনে আসতেই ইমন মুসকানের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বেরিয়ে গেলো।
বড্ড ভালো লাগে তাঁর এই জিনিস টা সে যখন বেরিয়ে যায় মুসকান তখন এভাবেই তাঁর সাথে পায়ে পা মিলিয়ে দরজা অবদি আসে। দুটো বছর একি নিয়মে একি অভ্যেসে চলছে।
এই নিয়ম, এই অভ্যেস গুলোতে দুজনেই যেনো দুজনাতে মিশে গেছে। অবাক লাগে ভীষণ এ বয়সি মেয়েরাও এতো দায়িত্ববান হতে পারে তা মুসকান কে না দেখলে ইমন বুঝতে পারতো না।
মানুষ বলে বড়রা যা বুঝে ছোটরা তা বুঝে না।
বড়রা সব সময় ছোটদের দায়িত্ব নেয়।
কিন্তু মানুষ এটা জানেইনা কিছু কিছু মানুষ আজো পৃথিবীতে আছে যারা বয়সে ছোট হলেও অসীম ক্ষমতা তাদের মাঝে আল্লাহ তায়ালা দিয়ে দিয়েছে।
মুসকান তেমনি একটা মানুষ তেমনি এক নারী।
যে কিনা নিজের অজান্তেই ইমনের দায়িত্ব টা নিয়ে নিয়েছে।
নিজের কাজের জন্য, নিজের একটা থাকার জায়গার জন্য এখানে থাকতে রাজি হলেও প্রত্যাহিক জীবনে ইমনের যাবতীয় কাজ দায়িত্ব সহকারে করতে করতে কখন যে এগুলোতেই নিজের মন,আবেগ সবটা জরিয়ে ফেলেছে মেয়ে টা বুঝতেই পারেনি।
কিশোরী বয়সের প্রথম প্রেমের ফুল তাঁর মনে ফুটেছে কিন্তু আর পাঁচটা সাধারন মেয়ের মতো করে নয়। কারন সে যে সত্যি অনন্য, সাধারণের মাঝেও অসাধারণ তাঁর ব্যাক্তিত্ব। যার মাঝে হাজারো বার মোহিত হতে থাকে ইমন।
,
দাদী আর অভ্র আগেই চলে এলো। ইয়ানার কলেজে অনুষ্ঠান থাকায় সে বিকেলে আসবে।
সায়রী দরজা খুলতেই দাদীকে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকতে বললো। সুপ্তি দৌড়ে এলো অভ্র মামা অভ্র মামা বলতে বলতে।
অভ্রও এক গাল হেসে হেই প্রিন্সেস বলেই সুপ্তিকে কোলে তুলে নিলো।
সায়রী দাদীকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো।
আর বললো কিরে অভ্র আংকেলের সাথে এতোদিন লন্ডনে কেমন কাটালি।
অভ্র বললো বিন্দাস,,, এতো সুন্দরী, সুন্দরী মেয়ে কি আর বলবো, আমার পিছুই ছাড়ে না ওরা।
সায়রী হাসতে হাসতে বললো শয়তানি এখনো ছাড়লিনা। আমার মেয়েটাকে তো পাকা বানিয়ে ফেলবি।
তোমার মেয়ে কাঁচা কবে ছিলো?
সায়রী আর অভ্র টুকটাক কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। মুসকান কিছু হালকা খাবাড় এনে ট্রি টেবিলে রাখলো।
দাদীর কাছে গিয়ে দাদীকে জরিয়ে ধরলো।
দাদীও মুসকান কে পরম স্নেহে বুকে টেনে নিলো।
কপালে কয়েকটা চুমু খেলো।
অভ্র সায়রীকে ইশারা করে ফিসফিস করে বললো বাংলা সিনেমার মতো এসব কি শুরু হলো।
সায়রী চোখ গরম করে চুপ করতে বললো।
সুপ্তি বললো মামু মুসু আন্টি,,,
অভ্র বললো আন্টি এই বেবি গার্ল কে কেউ আন্টি বলে??
সুপ্তি অভ্রর নাক চেপে বললো আমার থেকে তো বেবী না।
সায়রী বললো মুসকান এ হলো অভ্র ইমনের ছোট ভাই।
মুসকান ওঠে সালাম দিলো।
অভ্র হকচকিয়ে গেলো। মুসকানের নমনীয়তা দেখে।
ভালো লাগার পাশাপাশি অবাক টা একটু বেশীই লেগেছে তাঁর কাছে।
সুপ্তি হাত নাড়াতেই অভ্র চোখ সরিয়ে নিলো। হালকা কেশে বললো ওয়ালাইকুম আসসালাম।
মুসকান চলে গেলো।
সায়রী বললো কি রে কেমন??
অভ্র সুপ্তিকে নামিয়ে দিয়ে বললো অসম্ভব ভালো।
একদম আনকমন যাকে বলে।
হুম ভাবী হিসেবে চলবে,,,
অভ্র আরো হকচকিয়ে গেলো।
এইটুকু মেয়ে ভাবী। এতো কমপক্ষে নয়,দশ বছরের ছোট হবে।
দাদী খেঁকিয়ে ওঠলো। এই হতচ্ছাড়া তাতে কি হয়েছে তোর দাদা সতেরো বছরের বড় ছিলো আমার জানিসনা।
অভ্র যেনো বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে। হালকা কেশে বললো কিসব হচ্ছে সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এতোবছর পর দাদাভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে। শুনে বেশ ভালো লাগছিলো কিন্তু এসব দেখে কেমন একটা যেনো লাগছে।
সায়রী অভ্রর সামনে এসে বললো চুপ। এসব কি কথা মুসকান শুনতে পারবে তো। ইমন শুনলেও প্রবলেম হবে।
অভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো কেনো মুসকান দাদাভাইয়ের বয়সের ব্যাপারে জানেনা।
আরে ছাগল সব জানে।
তুমি আমায় ছাগল বললে আপু।
আরে হাদারাম ধ্যাত তোকে কিচ্ছু বোঝাতে পারবো না আমি বলেই চলে গেলো।
দাদীকে তাঁর রুমে পৌঁছে দিলো সায়রী। বুয়া অভ্র যে রুমে থাকবে সে রুম পরিষ্কার করছে।
অভ্র সুপ্তিকে চকলেট বক্সগুলো দিয়ে কয়েকটা কিটকাট চকলেট নিয়ে নিচে চলে গেলো।
এদিক সেদিক তাকালো,রান্নাঘরে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গিয়ে পিছনে দাঁড়ালো।
বাহ! তুমি রান্নাও পারো।
মুসকান চমকে ওঠলো। অভ্র কে দেখে ইতস্ততভাবে বললো হ্যাঁ পারি।
অভ্রর বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো। আর বললো আমার দুটো বোন একজনও রান্নার র ও জানে না।
মুসকান মৃদু হেসে রান্নায় মনোযোগ দিলো।
অভ্র নিজে থেকেই বেশ গল্পস্বল্প করতে লাগলো।
হঠাৎ ই বলে ওঠলো বাহ তোমার চুলগুলোতো নাইস। বেশ লম্বা। পিচ্চি দের এতো লম্বা চুল বেশ লাগে কিন্তু,,,
মুসকান জোর পূর্বক হাসলো।
অভ্র বললো ওয়াও তোমায় হাসলে তো খুব কিউট লাগে। এই ওয়েট এদিকে তাকাও তো।
মুসকান চমকে গেলো অভ্রের দিকে অবাক চোখে তাকালো।
অভ্র হা হয়ে গেলো ওয়াও গ্রেট। ইউ লুক সো সুইট।
এতো সুন্দর চোখ লাইফে প্রথম দেখছি,,,এই তুমি চোখে কি ইউস করো।
মুসকান ভ্রু কুঁচকালো।
অভ্র বললো হেই রেগে গেলে নাকি,,,
মূহুর্তেই মুখটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো কিছু না।
অভ্র বললো ওয়াও রেইলি ন্যাচারাল,,,
মুসকান কিছু বললো না।
চোখে আবার কে কি ইউস করে। ইনি কি পাগল নাকি,,,নাকি অন্য কোন মতলব আছে। কেমন যেনো ভয়ে শিউরে গেলো। ইভানের বিহেইভ ভাবতেই মুসকান গ্যাসটা নিভিয়ে চলে যেতে নিতেই অভ্র সামনে দাঁড়ালো।
মুসকান ভয়ে ভয়ে তাকাতেই অভ্র বললো কিউটনেসে ভরা মুখটা এমন ন্যাচারাল সৌন্দর্য ভরা মুখ কবে দেখেছি মনে পড়ছে না।
মুসকান বিরক্ত হলো ভীষণ তবে তা প্রকাশ করলো না।
অভ্র বললো ইউ নো বেবী গার্ল,,, আমার মতো এতো স্মার্ট, হ্যান্ডসাম ছেলের থেকে প্রশংসা পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। আই নো তুমিও মনে মনে ভীষণ খুশি হচ্ছো কিন্তু একটু ভাব নিতে গিয়ে সেটা বুঝতে দিচ্ছো না। আরে ইয়ার বুঝি তো তিনটা গার্লফ্রেন্ড আমার তিনটাকে বুঝতে গিয়ে মেয়েদের বিষয়ে বেশ ধারনা হয়ে গেছে। বলেই একটু ঝুঁকে বললো তবে আমার তিনটার থেকেও তুমি ভীষন কিউট,এক কথায় আনকমন লেডী, একদম ন্যাচারাললল,,,
মুসকান এক ঢোক চিপে ভয়ে ভয়ে পাশ কাটাতে যেতেই অভ্র মুসকানের হাতটা চেপে ধরলো।
ভয়ে মুসকানের আত্মাটা কেঁপে ওঠলো।
কেঁদে দেবে এমন ভাব।
অভ্র মুচকি হেসে বললো সত্যিই বেবী বলেই চকলেট গুলো হাতে ভরে দিয়ে চলে গেলো।
,
অভ্রর ফোনে ফোন আসতেই অভ্র মৃদু হেসে ফোন রিসিভ করলো। হেই দাদাভাই কোথায় তুমি,কখন আসছো?
ওপাশ থেকে কি বললো বোঝা গেলো না।
অভ্র বললো এই আর কি মুসকানের সাথে মজা করছিলাম। মেয়েটা সত্যি ভীষন কিউট আর একদমই ছোট ভাবা যায় এর দেবর হবো আমি।
এবারেও বোঝা গেলো না ওপাশে কি বললো।
অভ্র হোহো করে হেসে বললো কখন আসছো,,,
তারাতারি চলে এসো রাতে ড্রিংকস পার্টি হবে,,,
………….
এই ব্রো রেগে যাও কেনো এমনি বলছিলাম ওসব আমি খাইনা।
,
ইয়ানা এসেছে।ইয়ানা, সুপ্তি, মুসকান বসে লুডু খেলছে সায়রী আর দাদী গল্প করছে।
হুট করে ঝড়ের বেগে অভ্র এসে মুসকানের পাশে বসলো।
মুসকান চমকে গেলো ইতস্ততভাবে সরে বসলো একটু।
তোদের সাথে আমিও জয়েন করি।
ইয়ানা বললো না ভাইয়া তুই চিটিং করিস। তোকে নেবো না।
সুপ্তি বললো না না মামা খেলবে, মামা খেলবে।
মুসকান আরেকটু সরে বললো তোমরা খেলো আমি আসছি বলেই ওঠতে নিতেই অভ্র হাতটা চেপে বসিয়ে দিলো।
হেই ওঠছো কেনো বসো না,,,
মুসকান এবার বুঝি কেঁদেই দিবে। বার বার এভাবে হাত চেপে ধরা জোর করে আজব সব কথা কেমন যেনো লাগছে তাঁর। খুব কষ্টে নিজেকে সামলে চুপ করে বসে রইলো। সবাই খেলাতে মনোযোগি।
,
ইমন বুয়ার কাছে শুনলো সবাই সায়রীর রুমে আছে।
ইমন ফেরার সময় সবসময় মুসকান কে নিচেই পায়।
আজ পেলো না। ভাবলো বোধহয় ওদের সাথে আছে।
সায়রীর রুমে ঢুকতেই চোখ পড়লো অভ্রর হাতে মুসকানের হাত আবদ্ধ জায়গাটায়। মুসকান স্বাভাবিক রয়েছে তবে মুখ দেখে অস্বস্তি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ইমন হালকা কেশে ওঠতেই মুসকান হাতটা ঝটকায় ছেড়ে ওঠে বেরিয়ে গেলো। অভ্র হোহো করে হেসে ফেললো। দাদাভাই মেয়েটা ভীষন অদ্ভুত আমি খেলতে বসেছি বলে বার বার ওঠে যাচ্ছিলো তাই জোর করে বসিয়ে রেখেছিলাম।
দাদী বললো তুই ওকে এতো জ্বালাচ্ছিস কেনো?
দাদুভাই পোশাক পাল্টে খেয়ে নাও আমরা সবাই খেয়েছি শুধু মুসকান বাদে।
ইমন হালকা কেশে গম্ভীর গলায় বললো সায়রী রিক্তা কোথায়,,,
ওতো কাল আসবে আজ কি নিয়ে যেনো বিজি। সকাল সকাল এসে পড়বে কাল। আর বাকিরাও আসবে।
ইমন কিছু বললো না। রুম ছেড়ে বেরিয়ে নিচে একবার তাকিয়ে নিজের রুমে পা বাড়ালো।
ইমন পোশাক পাল্টে কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে বাথরুম থেকে বেরুতেই দেখলো মুসকান পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইমন গিয়ে পানিটা খেয়ে গ্লাসটা হাতে দিতে দিতে বললো গায়ের জোর,মুখের জোর
এতো উইক থাকলে চলবে না। সব মানুষ সমান নয়। ভালো,মন্দ মিশিয়েই মানুষ। ইভান আর অভ্র এক নয়। মনের দিক থেকে অভ্র ভীষন ভালো। মেয়েদের যথেষ্ট রিসপেক্ট করে। খুব ইজি ভাবেই মিশে সবার সাথে। তোমার সাথে ঠিক সেভাবেই মিশছে।
কিন্তু তোমার নিজের দূরত্ব টা বজায় রেখে চলা উচিত। একঘন্টা যাবৎ কারো হাতে তোমার হাত আবদ্ধ থাকবে খারাপ লাগা সত্বেও, অস্বস্তি হওয়া সত্বেও বাধ্য হয়ে সহ্য করতে হবে কেনো,,,
কথাটা এতো জোরে বললো যে ভয়ে মুসকান কেঁপে ওঠলো হাত ফঁসকে গ্লাসটা নিচে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
চলবে………