অরুর সংসার,পর্ব-২১,২২

অরুর সংসার,পর্ব-২১,২২
লেখিকা-নিশিকথা
পর্ব-২১

সেদিন রাত টা নীলাচল স্কেপ রিসোর্টেই কাটিয়েছে মৌ,সাদ,অরু আর অয়ন…..
তাদের নেক্সট গন্তব্য
নীলগিরি….

♦ বান্দরবান জেলা
সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ২২০০
ফুট উঁচু পাহাড়ের নাম নীলগিরি।
নীলগিরির দীগন্ত জুড়ে সবুজ পাহাড় আর
মেঘের লুকোচুরি যে কাউকে এর রূপ দিয়ে
বিমোহিত করতে সক্ষম….
শরৎ আর হেমন্তের মেঘ আর নীল আকাশ
মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে সেখানে । শীতে
কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকে চারপাশ। সে এক
দেখার মত দৃশ্য…..
আর সেই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতেই যাবে তারা……….

♥♥
♥♥♥
পরদিন সকালে অরুর সারা শরীর অনেক ব্যাথা। হবেই বা না কেন সারাদিন ঘোরাফেরার পর রাতে অয়ন দীর্ঘ সময় তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে….. অরু বুঝে পারে না যে এটা কি অয়নের ভালবাসা নাকি মোহ মাত্র…. অরু ভাবে যে সে কি সেদিন অয়নের দিকে এগিয়ে ভুল করেছিল? অয়ন তো তার কাছে আসে নি, সে তো নিজেই অয়নের কাছে নিজেকে সোঁপে দিয়েছিল সে রাতে।অয়নকে দেখলে বোঝা যায় না যে তার মনে কি চলে …. অরু শত চেস্টা করেও বুঝতে পারে না……মাঝেমাঝে অয়নের ছোঁয়ায় অরুর মনে হয় যে অয়ন তাকে অনেক ভালবেসে…. আবার মাঝেমাঝে অয়নের ছোঁয়ার মাঝে অরু পায় শুধু ভোগের তারনা….

অয়নের কাছে গেলে সে অরুকে কাছে টেনে নেয় আর না গেলে দুরেই থাকে মানে কেমন উদাসীন টাইপের সে…….

এসব নানান কথা ভাবছে অরু……অয়নের ডাকে অরুর ভাবনায় ছেদ ঘটে..
-অরু
-হু
-এভাবে খালি শরীরে বসে আছ কেন? কি হয়েছে? যাও ফ্রেশ হয়ে আসো…… নীলগিরি যাবো আজ।
-কিন্তু
-কিন্তু কি?
-কয়টা বাজে?
-সকাল ৫:৪৫!
-এত সকালে?
-হ্যা অনেক সকালেই যেতে হয় ওখানে
-কেন??
– এখন তো শরৎ কাল চলছে অরু…
বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তে মেঘের ভেলার লুকোচুরি
খেলা দেখা যায় নীলগিরিতে…..এ কারনে খুব সকালে যেতে হবে।
বুঝছো?
-জ্বি
-হুম। যাও গোসল করে আসো
♥♥♥
♥♥

আরোহীর শরীর টা রাত থেকে ভাল না।গতকাল বিকালে খুব করে ঘুরেছে আরোহী, অনিক আর রুশা…… বিকালে, রাতে বাইরেই খেয়েছে তারা.
….সময়টা খুবই ভাল কেটেছে তাদের… তবে রাত থেকে খুব করে বমি হচ্ছে আরোহীর……
অনিক খুব টেনশনে আছে এই নিয়ে।
সকাল হতেই ডঃফারহানাকে ফোন দিল অনিক….
ডঃ ফারহানা জানালো যে সে দেশের বাইরে। অনিক কি করবে এখন!! অয়নকে ফোন দিল
-হেলো
-হেলো ভাই।
-কি খবর অয়ন?
-আলহামদুলিল্লাহ ভাই।এত সকালে? is everything alright??
-হুম তোমার আপুর রাত থেকে খুব বমি হচ্ছে। ডঃ ফারহানা কে ফোন দিয়েছিলাম…. বলল সে দেশের বাইরে! কাকে দেখাবো এখন অয়ন?
-আপুর বমি হচ্ছে কেন? হাবিজাবি কিছু খেয়েছিল?
-আমরা গতকাল বাইরে খেয়েছিলাম বিকালে আর রাতে। তোমার আপুর ফেভারেট রেস্তোরায়
-ওখানের খাবার তো অনেক ভাল।বমি হবার কথা না তো
-হতে পারে।
-কেন? হবার কথা না
-আরোহী গর্ভবতী
-ভাইয়া ডঃজয়ার কাছে কান্সাল্ট কর।ওয়েট আমি উনার নাম্বার টেক্সট করছি।
-ওকে।
….. অয়ন দ্রুত জয়ার নাম্বার এস এম এস করে দিল অনুক কে… টেনশন হচ্ছে এখন অয়নের নিজের বোনকে নিয়ে……
অন্যদিকে আবার মামা হবে বলে সে অনেক খুশিও…..
.
অরু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। পরনে তার ডার্ক পার্পেল কালারের লং ফ্রক……. অরু খেয়াল করলো অয়ন ও আজ সেম কালারের শার্ট পরে আছে। অনেক হান্ডসাম লাগছে অয়নকে। এমনিতেও অয়ন অনেক হান্ডসাম। অরু আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভাবছে যে সেও দেখতে খারাপ না।তাহলে তাদের সন্তান দেখতে অনেক সুন্দর ই হবে। হেসে দিল অরু…..

খুব সকাল সকাল বের হল অরু, অয়ন, সাদ আর মৌ নীলগিরির উদ্দেশ্যে…..
মৌ বলল………
-আজ কোথায় কোথায় যাবো আমরা???
-প্রথমে নীলগিরি,তারপর বগালেখ, নাফাখুম আর লাস্ট কেওক্রাডং
-হুম সাদ আজ কেওক্রাডং যাওয়া হবে বা।
বগালেখ ঘুরে ওখানেই তার কাটাবো কাল যাবো
কেওক্রাডং
-ওয়াও! বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ
পাহাড় চূড়া নাম না কেওক্রাডং!!
-বাহ মৌ তুমি জানো?
-না হানার কি আছে সাদ আমি বই এ পড়েছি
(সাদ হেসে দিল… সে তার বউ এর সাথে মশকরা করছিল)

নীলগিরি পাহাড় চূড়াতেই রয়েছে
সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশের
সবচেয়ে সুন্দর পর্যটক কেন্দ্র গুলোর একটি
নীলগিরি পর্যটক কেন্দ্র।
নীলগিরি থেকে চারপাশে চোখ মেলে
তাকালে সারি সারি মেঘের পাহাড়ে আছড়ে
পড়া ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য আপনাকে
বিমোহিত করে। অরু অবাক নয়নে দেখছে সেখানের চারিপাশ….. ভাবছে যে মহান আল্লাব রব্বুল আলামীন কত নিখুঁত হাতে সৃষ্টি করেছেন এই গোটা পৃথিবী কে।।।। আর আমাদের বাংলাদেশ তো অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি……. বাংলাদেশের রূপ এই দুই চোখে দেখতে পারলে আর দরকার কি টাকা খরচ করে প্রবাসে ভ্রমনের….. নীলগিরির চূড়া থেকে
পাহাড়ের সারির পাশাপাশি আকাশ তখন
পরিস্কার….অরুর দেখছে মুগ্ধ নয়নে চারিপাশ…. হটাৎ কারো কথায় ফিরে তাকালো সে…..
অয়ন দাড়িয়ে আছে পিছনে …
অয়ন অরুর কাছে এসে তাকে দেখালো আর বলল…..
-ওই দেখো ওখানটায় বগালেক, কেওক্রাডং
দেখতে পাচ্ছো ওই যে , ওটা
-কক্সবাজারের সমুদ্র
সৈকত
-হুম রাইট
– ওখানে ওটা কি নদী?
-ওখানে চট্টগ্রাম বন্দর ও সাঙ্গু নদী।
-হু..আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
-কেন?
-এখানে ঘুরতে নিয়ে আসার জন্য…আপনি না আনলে হয়তো কোনদিন এত অপরুপ স্থায় দেখার সৌভাগ্য হত না
-আমি এখানে কিছুই করি নি অরু…. তোমার কপালে ছিল এখানে আসা এসেছো। আমি উসিলা মাত্র।
-হু
-চল বগালেখ যাওয়া যাক
-আর একটু থাকি না এখানে??
-আচ্ছা।
(অরু আস্তে আস্তে অয়নের হাত ধরলো…… তাকিয়ে আছে সে অয়নের দুকে আর অয়ন তাকিয়ে আছে সামনে… অয়ন অরুর হাতটা আরো একটু আকড়ে ধরে অরুকে নিজের কাছে নিয়ে এলো সামনে দিকে তাকিয়েই…. অয়নের এক্সপ্রেশন দেখে তার কাজ অনুমান করা পসিবল না….এক্সপ্রেশনলেস একটা মানুষ )

♥♥♥♥♥♥♥♥♥

নীলগিরির পর চারজন মিলে পাড়ি জমালো নাফাখুম জলপ্রপাতে… বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার
রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত এটি…..
পানি প্রবাহের
পরিমানের দিক থেকে এটিকে বাংলাদেশের
অন্যতম বড় জলপ্রপাত হিসাবে আখ্যায়িত করা
হয়। আবার কেউ কেউ একে বাংলার নায়াগ্রা
বলে অভিহিত করেন। নাফাখুম দেখতে থানচি
বাজার থেকে সাঙ্গু নদী পথে নৌকা দিয়ে
রেমাক্রি যেতে হয়। অরু নৌকাকে উঠে সেইই খুশি… পানি নিয়ে খেলা করছে সে আর মৌ…….
সেখানের এক বৃদ্ধ অধিবাসী অরুদের সাথে নৌকায় ছিলন…… তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন…….
-ঘুরতে এসেছো বুঝি?
সাদ বলল..
-হুম
-বাড়ী কই?
-ঢাকা
-নাফাখুম যাবা?
-জ্বি। আপনি কি এখানের আধিবাসী?
-বলা যায়
-তাহলে আমাদের মত কথা বলছেন কেন চাচা
-বাড়ী আমার রাজশাহী
-এখানে?
-টুরিস্ট দের ডিটেইলস জানাই
-ওহ! তা আমাদেরওও কিছু বলেন চাচা এই জলপ্রপাত সম্পর্কে??
-শুনো রেমাক্রীতে রয়েছে
মারমা বসতি….. মারমা ভাষায় খুম মানে
জলপ্রপাত। রেমাক্রী থেকে প্রায় তিন ঘন্টা
পায়ে হাটলে তবেই দেখা মিলে প্রকৃতির এই
অনিন্দ্য রহস্যের। রেমাক্রী খালের পানি
নাফাখুমে এসে বাক খেয়ে প্রায় ২৫-৩০ ফুট
নিচের দিকে নেমে গিয়ে প্রকৃতি জন্ম
দিয়েছে এই জলপ্রপাতের। দ্রুত গতিতে নেমে
আসা পানির জলীয় বাষ্পে সূর্য্যের আলোয়
প্রতিনিয়ত এখানে রংধনু খেলা করে।তুমি
যদি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হও ও বান্দরবানে
ট্রেকিং করার ইচ্ছে থাকে, কিংবা দেখতে
চাও বান্দরবানের গহীনের সবুজের খেলা,
আদিবাসীদের জীবন চিত্র, সাঙ্গুর ভয়ংকর রূপ
বা শীতের টলমলে পাথুরে জলের খেলা তবে
তোমার জীবনে একবার হলেও যাওয়া উচিত
অনিন্দ্য সুন্দর ঝর্ণায়।

-বাহ সুন্দর বললেন চাচা।ধন্যবাদ
(অয়ন আর সাদ যাবার পথে ওই বৃদ্ধ চাচাকে ৩হাজার টাকা দিয়ে গেল।
বৃদ্ধ চাচা অনেক খুশি হয়েছে….)

♥♥
♥♥♥
প্রতিটা জায়গা অরুকে নতুন করে মুগ্ধ করেছে।
নাফাখুমের কাছে যেয়ে অরু পানি ধরার চেস্টা করছে কিন্তু বারবারর হাত নিয়ে আবার সরিয়ে ফেলছে…… হটাৎ অয়ন অরুর হাত ধরে নিজের কোলে বসালো….. দুজনে পাশে একটা পাথরের উপরে বসা…. অয়ন অরুর হাত ধরে পানি ছুঁয়ালো আর অরু খিলখিল করে হেসে দিল…..অরুর হাসির সাউন্ড যেন অয়নের বুকের ঠিক মাঝে যেয়ে বিঁধেছে…. এই মুহুর্তে অয়নকে খুব টানছে অরুর হাসি…. অয়ন এক হাত দিয়ে অরুর পেটে স্পর্ষ করলো … অরু কেঁপে উঠলো……. দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে
আছে…… অয়ন অরুর ঠোঁটের কাছে আসতেই অরু মুখ সরিয়ে নিল
-অরু
– ………..
-এর শোধ রাতে তুলবো
♥♥♥
♥♥

নাফাখুম থেকে ফেরার পথে আবার সেই বৃদ্ধ চাচার সাথে দেখা হল সবার
-আরে চাচা।এবার বগালেখ যাচ্ছি
-ভাল ভাল।কেমন ঘুরলে নাফাখুম?
-অস্থির। এবার বগালেখ নিয়ে কিছু বলেন
– শুনো তাইলে……
বগাকাইন লেক বা বগালেক বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা থেকে ১৭
কিলোমিটার দূরে কেওক্রাডং পাহাড়ের
কোল ঘেসে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১২০০ ফুট
উচ্চতায় ২০০০ বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট
এক হ্রদ।
ভূ-তত্ত্ববিদগনের মতে এটি মৃত কোন
আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ অথবা উল্কাপিণ্ডের
পতনের ফলে এই লেক তৈরী হয়েছে।
-ওয়াও তারপর চাচা??? -বগালেক
অনেকের কাছে ড্রাগন লেক বলে পরিচিত।
সকাল, সন্ধ্যা কিংবা রাতে রূপের ভিন্ন
ভিন্ন শোভায় মোহিত হয় এখানে আসা
পর্যটকরা। যেমন তোমরা আজ হবে…. যাত্রাপথের সমস্ত ক্লান্তি এক
নিমিষেই দূর করে দেয় লেকে শান্ত শীতল
জল। পাহাড়ের কোলে প্রায় ১৫ একর জায়গা
জুড়ে আকাশ, পাহাড় আর নীল জলের পসরা
সাজিয়ে বগালেক তাই পর্যটকদের কাছে হয়ে
উঠেছে অনন্য।
-অসাধারণ বলেন চাচা
….খুব সাজিয়ে কথা বলেন। এত কথা মাথায় থাকবে না বলে রেকর্ড করে নিলাম………..
-ভাল ভাল

অয়ন সাদের কথা শুনে মৌকে বলল….
-মৌ
-হুম ভাইয়া
-তোমার বর এত পাম মারে কেমনে?
-আমিও তাই ভাবছি
যাকে পায় তার সাথেই খাতির শুরু উনার
-হুম। পারেও!!!!!
(অয়ন আর মৌ এর কথা শুনে অরু হাসছে…..
সবাইকে এভাবে হাসতে দেখে সাদ তখন কিছু বলে নি…. ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ছিল শুধু….)

সাদ আবার চাচার কথায় মন দিল…..
– চাচা কিওক্রাডাং নিয়ে এবার কিছু বলেন…..

কেওক্রাডং পাহাড়
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত। প্রায়
৩১৭২ ফুট উঁচু এ পর্বতকে এক সময় বাংলাদেশের
সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মনে করা হত কিন্তু আধুনিক
পদ্ধতিতে পরিমাপে বর্তমানে সর্বোচ্চ
পর্বতশৃঙ্গ হিসাবে এর অবস্থান পঞ্চম।
-হুম জানি… তারপর??
-কেওক্রাডং নামটি এসেছে স্থানীয়
আদিবাসী মারমাদের থেকে। মারমা ভাষায়
কেওক্রাডং মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের
পাহাড়।
দূর থেকে কেওক্রাডাং এর চূড়া
শূন্যে মিলিয়ে আছে বলে মনে হয়। আর চূড়ায়
উঠলে পাহাড় মেঘের মিতালী আপনাকে
আন্দোলিত করবে মায়াবী আকর্ষনে।
-বাহ ধন্যবাদ চাচা
-আচ্ছা বাবা

সেখানের থেকে এসে পরে সাদ বলল
-ওই। তোরা হাসতেছিলি কেন?
-কই???
-বল
-আরে না আমরা অন্য কথায় হাসছিলাম
-বেটার!!!!

বগালেখ ঘুরে সন্ধা নাগাদ ওখানের একটা স্থানীয় হোটেলে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিল তারা…. কাল সকাল সকাল যাবে
কিওক্রাডাং
কাল রাতে ফিরবে তারা ঢাকায়……………
.

♥♥♥♥♥♥♥♥
জয়ার কাছে চেক আপ করে সন্ধায় বাড়ী ফিরল
আরোহী আর অনিক…
-আরোহী
-হু
-এখন কেমন লাগছে?
-ঠিক আছি
-তুমি আর বাইরের খাবার খাবে না
-হু
-হুম
-টেনশন করেছিলে খুব?
-স্বাভাবিক কি না?
-হুম
-আরোহী!!!
-বল
-একটু সাবধানে থাকো প্লিজ। ভালবাসি তোমাদের। তোমাদের কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না
-আমি ঠিক আছি অনিক! তুমি পাশে থাকলে আমি ঠিক আছি
(অনিক আরোহীকে বুকে জড়িয়ে নিল)
♥♥♥♥♥♥♥♥

রাত ৩ টা। অরু শুয়ে আছে……. চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে….
আজ দিন টা যত সুখের গেছে তার রাত টা ততই কষ্টের গেল……..
না আজ সে প্রস্তুত ছিল না শারীরিক সম্পর্কের জন্য…. চাচ্ছিল না অয়ন আজ ও এমন কিছু করুক! ৪ রাত পরপর এত শারিরীক চাপ যে সে নিতে পারছে না………

চলবে…………

অরুর সংসার
পর্ব-২২
লেখিকা-নিশিকথা

বগালেখ ঘুরে রাতে ওখানের এক স্থানীয় হোটেলে থেকে গেল সবাই.. তবে পরের দিন আর কেওক্রাডং ঘোরা হয় নি ……
কেননা রাতে মৌ খুব অসুস্থ হয়ে পরে…. 😭😭 খেতে পারছিল না মেয়েটা বমি হয়ে যাচ্ছিল…. সকালে উঠতেই পারছিল না বেচারি 😣😣 এজন্য সবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সকালের ফিরে যাবে তারা।
অরুর ও ইচ্ছা হচ্ছিলো না বের হতে…..
ঢাকায় ফিরবে নিজের সংসারে এটাই ভাল লাগছে এখন তার….
সকাল ৯টায় রওনা দেওয়ায় সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ী পৌছিয়েছে তারা….

সন্ধ্যা ৭;৩০ বাজে হয়তো..অয়ন লেপটপ নিয়ে বসেছে….
হটাৎ কিছু একটার বিকট শব্দে সামনে তাকালো অয়ন…
<অরু আয়রন স্ট্যান্ডের সাথে ধারাম দিয়ে বারি খেয়েছে কোমড়ে.... ব্যাথা পেয়ে কোমড় চেপে -আরে কি হল? দেখে হাটতে পারো না (অরু কেঁদে দিল, ব্যাথা পেয়েছে অনেক.... অয়ন অরুকে কোলে তুলে খাটে উপুর করে শুইয়ে দিল) -দেখি কোথায় লেগেছে? ওয়েট এভাবেই শুয়ে থাকো ভলিনি স্প্রে করে দিচ্ছি (ভলিনি স্প্রে করার ১৫ মিনিট পর ব্যাথা কমলো অরুর) -ধন্যবাদ -রাখো তোমার ধন্যবাদ।কিভাবে বলদের মত বাড়ি টা খেলে। উফ (অরু মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। অয়ন কিছু বলতে যাবে তখনি কল আসিলো তার...অয়ন ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেল রুমের ) ♥অরু অয়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে... অয়নের এটিটিউট, কথা বার্তা,হাটা চলা সব কিছুর প্রতি পাগল অরু... রোজ নতুন নতুন করে প্রেমে পরে সে তার স্বামীর... যতই অয়নের ব্যবহারে অভিমান করুক কিছুক্ষন বাদে সকল মান অভিমান মিলিয়ে যায়..... এটাই হয়তো ভালবাসা ♥♥♥ এভাবেই ১০,১২দিন কেটে গেল...... ফেরার পর থেকে অয়ন আবার ব্যস্ত হয়ে পরেছে নিজের কাজে আর অরু নিজের সংসারে...... ♥এদিকে মৌ প্রেগন্যান্ট... বান্দরবন থেকে ফিরে পরদিনই টেস্ট করিয়েছিল.... রিপোর্ট পজেটিভ এসেছিল।। দেড় মাসের অন্তঃসত্বা সে ♥সেদিন থেকে সাদের খুশির যেন ঠিকানাই পাওয়া যাচ্ছে না।বাবা হবে সে♥♥♥ মৌ এর প্রেগন্যান্সির খবর শুনে অরুও খুব খুশি. .....অরুও তো একটা সন্তান চায় এখন। অরুর ধারনা একটা সন্তান আসলে অয়ন আর তার মাঝে সব ঠিক হয়ে যাবে... সে অয়নের ভালবাসা পাবে। শুনেছে একজন পুরুষ এই পৃথিবী তে ২জন নারীকে সব থেকে বেশি ভালবাসে। এক তার জন্মদাতা মা কে আর দ্বিতীয় তার সন্তানের মা কে। যদিও অরুর জীবনে এই কথা ভিত্তিহীন কারন তার বাবা এই কথার মান রাখে নি আর অয়ন!!! .... অয়নের ক্ষেত্র কি এই কথাটা আদোও সম্ভব? সে তো তার জন্মদাতা মা কেই ঘৃণা করে......তাহলে সন্তানের মা কে কি ভালবাসতে পারবে? না এসব কথা ভ্যালুলেস কেননা অয়ন তো সন্তান ই চায় না।। অয়নের বলে বাচ্চা পছন্দই না..... মৌকে ইদানিং রোজ সকালে অয়নদের বাড়ী দিয়ে যায় সাদ আর ফেরার পথে বাসায় নিয়ে যায়। কেননা বাসায় মৌ একাই থাকে....আর এই অবস্থায়য় একা থাকা মানে রিস্ক.. কখন কি লেগে বসে।। এর থেকে অয়নের বাড়ী থাকলে অরুর সাথে সাথে সময় কেটে যাবে মৌ এর. ... অরুর ও সময়টা ভালই কাটে মৌ এর সাথে.... রাতে মৌ আর অরু গল্প করছিল.. -আপু -হু -তোমার হাতের আংটি টা অনেক সুন্দর -হুম সাদ দিয়েছিল... আমাদের বাসর রাতে। (মৌ এর কথায় অরুর নিজের বাসর রাতের কথা মনে পরে গেল..... তাকেও তো অয়ন দিয়েছিল....... কোন গিফ্ট নয় টাকা। সেদিন অতশত না বুঝে টাকাটা নিয়ে ব্যাগে রাখলেও এটা এখন অরু ভালই বোঝে যে টাকা কোন বাসর রাতের গিফ্ট হতে পারে না।সেদিন টাকা টা দিয়ে অয়ন তাকে নিরবে অপমান করেছে যে অপমান অরুও নিরবে মেনে নিয়েছে....... মৌ এরা কথায় অরুর হুশ ফিরলো.........) -তোমায় কি দিয়েছিল ভাইয়া? (অরু কিছু বলতে যাবে তখনই অহনা হাজির....অহনার মুখে বিষন্নতার ছাপ..... ) -ভাবি -জ্বি আপু - নিচে বাবা ডাকছে।মৌ ভাবি তুমিও যাও। -আচ্ছা যাচ্ছি আমরা (অরু, মৌ নিচে নামতেই দেখে হল রুমে অয়ন, বাবা,সাদ,অনিক আর একজন বয়স্ক,আর মহিলা লোক বসা। -এইতো অরু মা, মৌ মা।এদিকে এসো... -জ্বি বাবা -এই যে এনামুল ভাইয়া,রুনা ভাবি....এ অরু অয়নের স্ত্রি আর মৌ সাদের স্ত্রি ..। ইনারা অহনাকে দেখতে এসেছে (কথাটা শুনে অরু সাথেসাথে অহনার দিকে তাকালো... অহনার মুখ লাল হয়ে আছে.......) -আসসালামুআলাইকুম -ওয়ালাইকুম আসসালাম।বস বস (রুনা আহমেদ বলল....) -না আন্টি আপনারা বসুন আমি আসছি। (অরু দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে গেল সাথে মৌ ও....) -আজিব হুট করে এমন দেখতে এলো। জানতে তুমি অরু? -না আপু -তাও রাত ৯ টায়! এমন সময় কেউ আসে নাকি... (অরু কিছু বলতে যাবে আবার অহনা হাজির.. অহনা বলল... ) -অভদ্রতা এগুলা মৌ ভাবি!মেজাজ টা যা খারাপ হচ্ছে.... (অহনা অরুকে বলল...) ভাবি তুমি কিন্তু ভাইয়া কে বলে দেও আমি এখন বিয়ে করবো না -আপু মাথা ঠান্ডা কর -না ভাবি তুমি না পারলে আমি নিজেই ভাইয়া কে বলবো -আচ্ছা বল কিন্তু উনারা যাক তারপর -হুম . সেদিন রাতে অহনা কিছু বলার আগেই পাকা কথা দিয়ে যায় ছেলে পক্ষ... ছেলের মা অহনাকে আংটি পরিয়ে চলে যায়.. অহনা কিছু বলবে কি সে এমন তড়িঘড়ি দেখে শকড............. অহনার চোখ থেকে পানি পরছে.... এটা কিভাবে করলো তার পরিবার। এত বড় একটা সিদ্ধান্ত তাকে জিজ্ঞাস না করেই নিয়ে নিল তার বাবা! আর তার ভাইয়া?? সে কি করে পারলো এটা....?? রাত ২ টা....... অহনার চোখে কোন ঘুম নাই।তার বিয়ে তার মতামত না জেনেই কিভাবে ঠিক করে ফেলল তার পরিবার.....? কিভাবে পারলো এটা? অহনা তো ছেলেকে চেনেও না....দেখেও নি.......... এই আধুনিক যুগে এসে অহনা যেন নিজেকে আদি যুগের মেয়ে মনে হচ্ছে...যে যুগে মেয়েরা না দেখেই পরিবারের কথা মত বিয়ে করে সংসার করতো..... না অহনা এর বিয়ে করতে পারবে না....সে যে রাজকে ভালবাসে। নিজের থেকে বেশী ভালবাসে....... রাজ তো তাকে কথা দিয়েছিল যে বিদেশ থেকে ফিরে তাকে বিয়ে করবে...... রাত তো তাকে অপেক্ষা করতে বলেছিল........ অহনা আর রাজ একই ক্লাশে পড়তো ....... দেখা হয়েছিল প্রথম তাদের কোচিং এ।সেখান থেকেই আলাপ.... তখন অহনা পড়তো ক্লাশ ৯ এ। ক্লাশ ১০ থেকে তাদের প্রেম..... একই কলেজ, একই ভার্সিটি তে পরে তারা। রাজদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না।তাই সে প্রায় ই ফ্রাস্টেটেড থাকতো যে অহনার বাসা থেকে তাকে মেনে নিবে কি না....... দেশে চাকুরীরর অবস্থাও ভাল ছিল না....তারপর সমবয়সী........ কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।অহনার ও ভয় হত রাজকে হারিয়ে ফেলার..... তবে রাজের বড় বোন রিমার বিয়ে হয়ে প্রবাসে... রিমা রাজকে নিয়ে যেতে চায় বাইরের দেশে কারন এই দেশে থাকলে রাজের ইস্টাব্লিস্ট হয়ে অনেক বছর লেগে যেত...... রাজ অহনাকে ছেড়ে যেত চায় নি.....অহনা ই রাজ কে পাঠিয়েছিল তার বেটার ফিউচারের জন্য ....১ বছর আগে যখন রাজ বিদেশে যাবার আগে শেষ দেখা করতে এসেছিল অহনার সাথে সেদিন অহনার হাত ধরে বারবার বলেছে রাজ তার জন্য অপেক্ষা করতে। রাজের শেষ কথা ছিল.. -অহনা যাচ্ছি...... -কতবার বলেছি তোমায় যাচ্ছি বলবে না। -ওহ হুম। সরি। -হু -আচ্ছা অহনা তাহলে যেয়ে আসছি -তাড়াতাড়ি ফিরে এসো রাজ... -আসবো...একটা বছর সময় দেও প্লিজ। প্লিজ অপেক্ষা কর আমার জন্য প্লিজ। আমি ফিরে আসবো অহনা। এসে তোমায় বিয়ে করে আমাদের সুখের সংসার গড়বো...... ১টা বছর সময় চাচ্ছি তোমার চাচ্ছি তোমার কাছে... অপেক্ষা করো... এই ১বছরের আমি যোগাযোগ না করলেও অপেক্ষা করবে..... আর ১বছর পর যদি ঠিক এই দিনে এই সময় আমি তোমার সামনে না ফিরতে পারি তাহলে ভেবে নিয়ো আর কোনদিন ফিরবো না...... খেয়াল রেখো নিজের... ♦♦♦♦♦♦♦♦ কথাগুলা ভাবতে ভাবতে হুহু করে কেঁদে দিল অহনা। কাল সেই দিন সেই তারিখ...... ১টা বছর অপেক্ষা করেছে এই দিনের। কাল তার রাজ ফিরবে.... কলেকের পিছনের ছোট্ট চায়ের দোকানের সামনে দেখা করবে অহনার সাথে....... এ কথাই তো দিয়ে গেছিলো রাজ তবে?? রাজ যদি না আসে কাল????? তবে বিদেশে যাবার পর থেকে এই ১ বছর রাজ কোন যোগাযোগ ও তো করে নি অহনার সাথে.... তাহলে কি রাজ অহনাকে ভুলে গেল??? ভুলে গেল ৭ বছরের সম্পর্কটাকে?? .... ......... .... অরুর খারাপ লাগছে অহনার জন্য.... পাকা কথা হবার সময় সে অহনার চোখে পানি দেখেছে......... অহনা খুশি না এই বিয়েতে.... খুশি হওয়া তো বাদ অরু অহনার চোখে এক অদ্ভুত যন্ত্রনা অনুভব করেছে। অরু অয়নের দিকে তাকালো.......... অয়ন কাজ করছে লেপটপে... -কিছু বলবে?? -জ্বি!না মানে -কি? হ্যা নাকি না কোনটা ? -অহনা আপু এই বিয়েতে খুশি না -কে বলেছে তোমায়??? -আমি বুঝেছি। আপুর চোখ দেখেই (অরুকে আর বলতে দিল না অয়ন.... নিজে বলল...... -ওহ তুমি মানুষ এর চোখ দেখে মনের কথা বুঝে ফেল নাকি? -না -তাহলে? -আপু কাঁদছিল -তো? তুমি তোমার বিয়ের কথা শুনে জোরে জোরে হেসেছিলে বুঝি? - .................. -ছেলে টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার.... দেখতে ভাল,বংশ ভাল........ এই বিয়েতে না খুশি হবার তো কিছুই নেই! - ..................... -ঘুমাও (রুমের বাইরে দাড়িয়ে কথাগুলা শুনলো অহনা.. .. আর সে আগে থেকে কি বলবে এখন গিয়ে তার ভাইকে?? রাজের কথা বললে কি ভাই মেনে নিবে.... এদিকে তো ছেলেপক্ষ আংটি দিয়ে গেছে। আগামী মাসের ১ম সপ্তাহে বিয়ের ডেটও ফাইনাল করে দিয়েছে.... এত দ্রুত গতিতে সব কেন হচ্ছে অহনার জীবনে?? . না এ বিয়ে অহনা করতে পারবে না। তবে কি এখনি অয়নকে বলবে রাজের কথা?? আর বললে যদি অয়ন মেনেও নেয় আর তারপর যদি কাল রাজ না আসে? তখন কি হবে??? তাহলে তো বাধ্যতামূলক ওই অচেনা অজানা মানুষটা কে বিয়ে করতে হবে.... এমন হাজার কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অহনার.... একসময় মাথাটা ঘুড়ে পরে যেতে নিলে কোনভাবে কোনভাবে নিজেকে সামলিয়ে নিজের রুম পর্যন্ত গেল সে........ .. ..... .. সকালে অয়ন হাসপাতালে ঢোকার সাথেসাথে এক লোক কাঁপতে কাঁপতে রিসিপ্সন থেকে যাচ্ছে..... -excuse me.R u ok?? -Yeah i am -it doesn't seems like everything is ok (লোক টা কিছু বলার আগে পিছন থেকে এক ডাক্তার ডাক দিল) -আপনি এবার যেতে পারেন আপনার বেবীকে দেখতে -ওকে (লোকটা চলে গেল) -কি হয়েছে ডাঃ উনার? - স্যার একচুয়ালী উনার প্রিমেচুয়ার বেবী হয়েছে -ওহ (অয়ন কেবিনে যাবার সাথেসাথে জয়া নক করলো) চলবে....

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here