মায়াজাল (ভৌতিক গল্প),পর্ব-৪

মায়াজাল (ভৌতিক গল্প),পর্ব-৪
লামিয়া আক্তার রিয়া

এতক্ষনের মজা একটা কলেই মিইয়ে গেলো।সবাই মুখ ভার করে বসে আছে।কেন?

কিছুক্ষন আগেই সানভির আদ্র আর রত্নার পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন।আসমা বেগমও সোফায় ‌বসে মজা নিচ্ছিলো।হঠাৎ আদ্রর কল এলে আদ্র সবাইকে চুপ করিয়ে কল রিসিভ করলো।

আদ্র: হ্যালো?

: আমি কীর্তিপাশা থানার ওসি নাসিম বলছি।

আদ্র: জ্বী বলুন।

নাসিম: আপনাকে আজকেই আসতে হবে এখানে।

আদ্র: কেন?আমারতো কালকে থেকে জয়েন করার কথা।আমি রাতে রওনা‌ দিবো।

নাসিম: বুঝতে পেরেছি।কিন্তু আমাকে কালকে চলে যেতে হবে আমার যেখানে পোস্টিং সেখানে। আর এখানে আজ একটা ভয়াবহ খুন হয়েছে।কেসটা খুবই জটিল।আপনি এলে আপনার আর আমার দুজনেরই সুবিধা হতো।

আদ্র: কিন্তু-

নাসিম: প্লিজ মিস্টার সাফওয়ান।আই নিড ইওর হেল্প।আমি জানি এটা কঠিন বাট আপনি যদি আধঘন্টার মধ্যে রওনা দেন তাহলে আসা করি বিকেলের আগেই আসতে পারবেন।প্লিজ ট্রাই টু আড্র্যাসটেন্ড।

আদ্র: কেসটা কি?

নাসিম: কালকে রাতে উমা নামক একটা মেয়েকে রেপ‌ করে খুব বাজেভাবে খুন করা হয়েছে।মনে হচ্ছে বন্য কোনো হিংস্র জন্তু সারাদেহে আক্রমন করেছে।কিন্তু রেপও করা হয়েছে।এসব মানুষের পক্ষে সম্ভব না।কেসটা পুরোই রহস্য।আর আপনি যেখানে থাকবেন বলেছেন মেয়েটা ওখানেই থাকতো।

আদ্র: হোয়াট?বাট ওখানেতো কেয়ারটেকার ছাড়া কেউ থাকেনা জানতাম।

নাসিম: হুম কিন্তু গত পরশুই চারটা মেয়ে আসে।ওনারা এখানের একটা স্কুলের টিচার হয়ে আসেন।

আদ্র: এতে বাকি তিনজনের হাত নেইতো?

নাসিম: যতটুকু জেনেছি চারজন খুব ভালো বন্ধু ছিলো।তাছাড়া কালকে নাকি মেয়েটা নিজেই সন্ধ্যার পরে বেরিয়ে গিয়েছে ওই ‌জমিদার বাড়ি থাকবেনা বলে।কেয়ারটেকারও তাই বললো।তাছাড়া-

আদ্র: কি?থামলেন কেন?

নাসিম: বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা,তবে জমিদার বাড়িতে অশরীরি আছে।আত্না।তাও খারাপ।

আদ্র: ওহ্ মিস্টার নাসিম।একজন পুলিশ হয়ে ওসবে বিশ্বাসী আপনি?

নাসিম: আমিও আপনার মতোই ভাবতাম।কিন্তু গত ৫বছরে সে ধারনা একদম পাল্টে গিয়েছে।প্লিজ মিস্টার সাফওয়ান আপনি আসুন।

আদ্র: ওকে আই উইল কাম।আধঘন্টার মধ্যেই রওনা দিচ্ছি।আপনি আমার থাকার জায়গার ব্যবস্থা রাখুন।

নাসিম: থ্যাংস এ লট মিস্টার সাফওয়ান।

আদ্র কল কেটেই মায়ের পাশে বসে পরলো।

আসমা: কি হয়েছে বাবা?কে কল দিয়েছে?

আদ্র: ঝালকাঠী থেকে।আজই যেতে হবে।

সানভির: আজকে মানে!!তুইতো বললি কালকে।

আদ্র: আজ রাতেই যেতাম তবে এখন আধঘন্টার মধ্যে যেতে হবে।

আসমা: আদ্র?

আদ্র: সরি মা।রাতে তোমার ফ্লাইট কিন্তু আমি যেতে পারবোনা।প্লিজ মা রাগ কোরো না।

আসমা: আজকে যেতেই হবে?

আদ্র: হুম মা।হাসিমুখে যেতে দিবেতো?

আসমার চোখ ছলছল করে উঠলো।নিজেকে সামলে নিলো উনি।

আসমা: যেয়ে রেডি হয়ে নে।দ্রুত।নয়তো দেড়ি হবে।

আদ্র: মা?

আসমা: আরে বাবা দৌড় দে।

আদ্র মুচকি হেসে রুমে চলে গেলো।সানভির এসে আসমার পাশে বসলো।

আসমা: চিন্তা নেই।আদ্রর সামনে কাঁদবোনা।একজন সাহসী পুলিশ অফিসারের মায়ের চোখে এসব তুচ্ছ কারনে পানি আসে বলো?চলো ওকে গুছাতে হেল্প করি।রত্না?

রত্না: জ্বী আম্মা?

আসমা: খাবার রেডি কর।আদ্র খেয়ে বের হবে।

রত্না: আইচ্ছা আম্মা।

আসমা বেগম স্বামিকে নিয়ে ছেলেকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করলেন।আদ্রকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন।আদ্রের সামনে উনি হাসিমুখে ছিলেন।আদ্রর খুব কষ্ট হচ্ছিলো মাকে ছেড়ে যেতে কিন্তু মাকে দুর্বল করতে চায়না সে।তাই নিজের আবেগকে চেপে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।আদ্র চলে যেতেই আসমা বেগম নিজের স্বামীকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পরলেন।কেন যেন ছেলেকে আজ ছাড়তে মন সায় দিচ্ছেনা।

🍀🍀🍀🍀🍀

[নিচের লেখাগুলো পড়বেন]

সকালে ইমুর ঘুম ভাঙলো লিয়া আর সামুর‌ ডাকে।চোখ মেলেই ওদের ভয়ার্ত মুখ দেখতে পেয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলো ইমু।

ইমু: কি হয়েছে তোদের?চোখমুখ এমন লাগছে কেন?

সামু: ইমুরে,আমাদের উমা আর নেই।(কাঁদতে কাঁদতে)

লিয়া: বাড়িতে পুলিশ এসেছে।উমার লাশ নিচে রেখেছে।

ইমু কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।

ইমু: স সত্যিই?

লিয়া আর সামু মাথা নেরে সম্মতি জানালো।ইমু বিছানা থেকে নেমে নিচে নেমে এলো।লিয়া আর সামুও ইমুর পেছনে এলো।উমাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে।মুখটা ঢাকা।ইমু সামনে যেতেই একজন কন্সটেবল মুখের চাদরটা সরিয়ে দিলো।ইমু একনজর দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো।

ইমু: ওর তো মুখ-

অফিসার: বোঝা যাচ্ছেনা।কালকে রাতে কেউ ওনাকে মেরে ফেলেছে।খুব হিংস্রভাবে শরীরে আঘাত করা হয়েছে।কয়েকজন বললো এখানের কথা তাই এখানে নিয়ে এলাম।

ইমু: এ এখন কি করবেন?

অফিসার: কালকে নতুন অফিসার আসবে।উনিই যা করার করবে।আপাততো পোস্টমার্টাম করতে হবে।

ইমু: এই অবস্থা আবার কাটাছেড়া?

অফিসার: রুলস এটাই।আপনি বরং ওনার ফ্যামিলিকে খবর দিন।

ইমু: ওর কেউ নেই।

অফিসার: মানে?অনাথ?

ইমু: আমরা প্রত্যেকেই।

অফিসার: সো সেড।ওকে আপনারা এখন এখান থেকে কোথাও যাবেন না।মনে হয় রেপ করা হয়েছে।আগে টেষ্ট হোক বাকিটা পরে জানা যাবে।এখন আসছি।

ইমু: হুম।

পুলিশ উমার লাশ নিয়ে চলে যেতেই‌ ইমু চুপ করে সোফায় বসে পরলো।

লিয়া: ইমু?

ইমু: ইদ্রিস চাচাকে ডাক।

সামু: আমি যাচ্ছি।

সামু যেয়ে ইদ্রিস‌ মিয়াকে ডেকে আনলো।ইদ্রিস মাথা নিচু করে ইমুর সামনে দাড়িয়ে রইলো।ইমু মুখ তুলে তাকাতেই লিয়া আর সামু ভয় পেয়ে গেলো।ইমুর চোখ লাল হয়ে আছে।

ইমু: মৃন্ময়ি কে ইদ্রিস মিয়া?

ইদ্রিস চমকে ইমুর দিকে তাকালো।

ইদ্রিস: ম মৃন্ময়ি?

ইমু: সবটা বলবেন?নয়তো এরপর যা হবে তার জন্য আমি দায়ি থাকবোনা।

ইদ্রিস: মা?আপনে-

ইমু: না পেচিয়ে সোজা ভাবে বলুন।কালকে কে এসেছিলো আমার কাছে?অনুভব কে?

ইদ্রিস: সবটা বিশ্বাস করবেন তো?

ইমু: শুরু করুন।

ইদ্রিস: যদি বলি তুমিই মৃন্ময়ি?

ইমু না চমকালেও লিয়া আর সামু চমকে উঠলো।

লিয়া: কিসের মৃন্ময়ি?ও ছোট থেকে আমাদের সাথে আছে।ও মৃন্ময়ি হবে কেন?

ইদ্রিস মুচকি হাসলো।

ইদ্রিস: এই জন্মে আপনাগো লগে ছিলো তো কি হইছে?আগের জন্মে ও মৃন্ময়ি ‌ছিলো।

সামু: ফাজলামি শুরু করেছেন?ইমু আমি বলছি এরা কোনো চক্র চালাচ্ছে।উমাকেও এদের লোকই মেরেছে।ইমু চুপ থাকিসনা কিছু বল।

ইমু: ইদ্রিস মিয়া,আপনার কথা বিশ্বাস কিভাবে করবো?

ইদ্রিস: কাইলকে আমাবশ্যা।কালকেই সব জানতে পারবা।কাইলকে তোমার ২৬ বছরে আর অনুভব বাবার ৩০ বছরে পরবো।নতুন কইরা আবার খেলা শুরু হইবো।

ইমু: কালকের লোকটা কে ছিলো?

ইদ্রিস: কোন লোক?

ইমু গতকাল রাতের সবটা ইদ্রিস মিয়াকে বললো।ইদ্রিস মিয়ার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ দেখা গেলো।

ইদ্রিস: তাসমির।

ইমু: এটা কে?

ইদ্রিস: ও কালকে রক্ত পাইয়া যাইগা উঠছে মা।আমি কইছিলাম উমা মায়রে রাইতে না বাইরাইতে।ওরে এবার-

ইমু: তাসমির কে চাচা?

ইদ্রিস: বড় জমিদারের পোলা তাসমির চৌধুরি।আর অনুভব বাবা আমগো ছোট জমিদারের পোলা।

ইমু: এসবের সাথে আমার সম্পর্ক কি?

ইদ্রিস: তুমিই তো সবকিছুর মূলে ছিলা মা।এই‌বাড়ির পরান ছিলা তুমি। আর-

সামু: এই লোকটা একটার পর একটা গল্প বানাচ্ছে আর তুই তা বিশ্বাস করছিস ইমু?

ইমু: দেখ-

ইমুর কথা মাঝেই আটকে গেলো।বাড়িতে আবার পুলিশের এক কন্সটেবল এলো।

ইমু: কি ব্যাপার?

কন্সটেবল: আমাদের যে স্যারের কালকে আসার কথা ছিলো সে আজকেই আসবে।

ইদ্রিস: কহন আইবো?

কন্সটেবল: সন্ধ্যার মধ্যেই এসে পরবে।

ইদ্রিস: সন্ধ্যার আগেই যেন বাড়িতে ঢোকে।সন্ধ্যার পর বাইরে না যাওয়াই ভালা।উমা মায়রেও কালকে মানা করছিলাম।

সামু: কিসের ভালো হ্যা?আর আপনারা পুলিশরা কি করেন?আমাদের‌ বান্ধবী কালকে মারা গেলো আর তা এই বাড়ি থেকে বের হয়েই।আমি সিওর এতে এই ইদ্রিস মিয়ার হাত আছে।এক্ষুনি এরেস্ট করুন এনাকে।

কন্সটেবল: প্রমান ছাড়া আমরা কিছু করতে পারিনা।তাছাড়া আপনাদের বলা হয়নি এই‌ জায়গাটা ভালোনা?দিনের বেলায়ই কেমন শ্মশান শ্মশান লাগে।রাতে বের হবে কেন আপনার বান্ধবী?

সামু: তার মানে আপনি এনাকে এরেস্ট করবেন না?

কন্সটেবল: দেখুন আমি‌ সামান্য দারোগা।বড় অফিসাররা না বললে কিছু করতে পারবোনা।আর আজকেই‌ তো ওসি‌ সাহেব আসছেন।আর থাকবেনও নাকি এখানে।তাই যা বলার তাকেই বলবেন।অযথা আমার উপরে চেঁচাবেন না।এখন আসছি আমি।
জানিনা স্যার কেন এই বাড়িতেই থাকতে চান(বিরবির করে)

কন্সটেবল চলে গেলো।

ইদ্রিস: আম্মা আমার উপরে রাগ হইতাছে তাইনা?আপনে বরং বড়বাবু আইলে দেইখেন কি করতে পারেন।কিন্তু হের লইগ্গাতো শক্তির দরকার।আহেন খাইয়া নেন।

ইমু: হুম খেয়ে চল‌ স্কুলেও‌ যেতে হবে।

লিয়া: স্কুলে?

ইমু: আমরাই‌ কালকে অতো কথা‌ বলে‌ এসেছি এখন আমরা স্কুল মিস দিতে পারিনা।খেয়ে নে।আমি উপরে যাচ্ছি।

ইদ্রিস: হ আহো।আমি খাওন বারি।

ইদ্রিসমিয়া মুচকি হেসে খাবার বারতে গেলো।সামুও ইদ্রিস মিয়ার পেছনে পেছনে কটমট করতে করতে গেলো।লিয়া ইমুকে ডাকতে উপরে চলে গেলো।

ইমু রুমে ঢুকতে লিয়া ওকে ডাক‌ দিলো।

লিয়া: ইমু?

ইমু: প্লিজ এখন কিছু জানতে চাসনা।

লিয়া: (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আচ্ছা।তাহলে খেতে আয়।

ইমু: ইচ্ছে করছেনা।তুই খেয়ে নে।আমি গোসল করে রেডি হই।

লিয়া: আজ না গেলে‌ হয়না?

ইমু: নাহ্।

লিয়া: ইমু তোর কান্না পাচ্ছেনা?

ইমু: অপরাধবোধ হচ্ছে।নিজেকে ভিষনভাবে অপরাধী মনে হচ্ছে।

লিয়া: তুই কিভাবে অপরাধী?

ইমু: আমি এখানের কথা‌ বলেছি।তাই তোরা এখানে এসেছিস।আর ইদ্রিস চাচা যা বলছে-

লিয়া: দেখ সবটা হয়তো কোনো প্ল্যান।সামুই হয়তো ঠিক-

ইমু: না লিয়া।কালকে যা হয়েছে তা কোনো প্ল্যান না।আর না ইদ্রিস চাচা খারাপ‌ কিছুর সাথে জড়িয়ে।

লিয়া: তাহলে কালকে রাতে আমাদের ওই অবস্থায় উনি এলেন না কেন?

ইমু: নিজের জীবনের ভয় সবার আছে।

লিয়া: তুই কিভাবে এসব বুঝছিস?

ইমু: সময় হলে তুইও বুঝবি।এবার যা খেয়ে নে।

লিয়া: তুই একটু খা।

ইমু: আচ্ছা একবারে রেডি হয়ে আসছি।তোরা খেয়ে নে।চাচাকে বল অল্প খাবার রেখে দিতে।

লিয়া: আচ্ছা আয়।

লিয়াকে বিদায় দিয়ে ইমু গোসল করে রেডি হয়ে নিচে নেমে খেয়ে নিলো।এরমধ্যে লিয়া আর সামুও রেডি হয়ে নিলো।তিনজন একসাথেই স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো যেখানে গতকালও চারজন ছিলো।তিনজনের মধ্যেই প্রচন্ড খারাপলাগা কাজ করছে।কিন্তু দায়িত্ব সবার আগে।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here