ধূসর পাহাড়,পর্ব_১৩
লেখিকা আমিশা নূর
সীয়ামার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।রৌদ্রময় একটু শব্দও করলো না।খোলা চুলে সীয়ামা’কে এতোটা সুন্দর লাগে সে কোনোদিন যান তো না।হোয়াইট পিঙ্ক কালারের থ্রিপিস’টা যেনো সীয়ামা’র সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে।সীয়ামা রৌদ্রময়ের দিকে এক পলক তাকালো।সে আসাতে রৌদ্রময় কী খুশি নই?নাকি তার কিছু যায় আসে না?
জানালার সাথে মাথা লাগিয়ে বাইরের শীতল হাওয়া অনুভব করছে কুয়াশা।তার চোখের সামনে বার বার একটু আগের দৃশ্যটি ভাসছে।বাসে উঠার সময় কুয়াশা পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলো তখনি অরণ্য টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়।এক অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছিলো!তার ইচ্ছে করছে সারাজীবন ঐ বুকে রয়ে যেতে।কেনো এমন অদ্ভুত ইচ্ছে জেগেছে তার মনে?কেনো?
কুয়াশা’র সামনের সিটে অরণ্য বসেছে।অরণ্যের ইচ্ছে করছে কুয়াশা’কে চড় দিতে।মেয়েটাকি একটু সাবধানে চলতে পারে না?কয়েকদিন আগেও এক্সিডেন্ট করতে যাচ্ছিলো ভাগ্যিস তখন অধ্রী বাঁচিয়ে ছিলো।অরণ্যের বুক’টা খা খা করছে।ভয় হচ্ছে তার ভীষণ!কুয়াশাকে হারানো ভয়!মাথা ঘুরিয়ে কুশায়া’কে একবার দেখে নিলো।কুয়াশা’র পাশে আরামে সীয়ামা ফোন টিপছে আর কানে ইয়ারফোন।
হঠাৎ মোবাইল ভাইব্রেট হওয়ার কুয়াশার ভাবনায় অবসান ঘঠলো।এক পলক মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কল রিসিভ করলো।অরণ্য মনোযোগ সহকারে কুয়াশা’র কথোপকথন শুনছে,
“কেমন আছো?”
“………..”
“নাহ ভাবনায় মগ্ন।”
“…………”
“আছে, কোনো একটা।”
“………….”
“ওয়াও!গুড নিউজ।মাহিরের সাথে?”
“…………”
“ওকে।”
“…………”
“কক্সবাজার,এখন বাসে আছি।”
“………”
“বাই।”
“কে ফোন করেছিলো দি?”
কুয়াশা উত্তর দিতে গিয়ে খেয়াল করলো অরণ্যে আড়িপেতে আছে।কুয়াশা শয়তানি বুদ্ধি দিয়ে উত্তর দিলো,”বিএফ।”
মুখ থেকে শব্দটি বের হতেই বাকিরা সবাই কুয়াশা’র দিকে ঝুঁকে পড়লো।ওরা কেউ জানতো না কুয়াশা’র বিএফ আছে।অরণ্য হা করে রইলো।কুয়াশা’র বিএফ আছে না জেনেই সে তার অনুভূতি’কে সম্মান দিচ্ছিলো?এটা তো ঘোর পাপ।
“কী হলো?এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?”
কুয়াশা’র পেছন থেকে অধ্রী উত্তর দিলো,”তোমার বিএফ আছে বলোনি তো।”
“আবব ছিলো আর কী।”
“ওহহ”
চুইংগাম চিবিয়ে অরণ্যের পাশ থেকে কানন বিজ্ঞদের মতো ‘ওহ’ শব্দ করলো।বাকিরা কেউ আর প্রশ্ন করলো না।রৌদ্রময় এদের কোনো কথায় কান দিলো না।সে নিজেই আজ ভাবনায় মগ্ন।অধ্রীর পাশ থেকে সরে গিয়ে রৌদ্রময় পেছনের সিটে বসলো।
পাঁচ ঘন্টার মতো হবে বাসে উঠেছে।কিছুক্ষণ আগে অধ্রীর পাশে এক অচেনা ব্যাক্তি বসেছে।শুরু থেকে অধ্রী’কে ছেলে মনে করে ভাই ডাকা শুরু করেছে।এবার আর থাকতে না পেরে অধ্রী উত্তর দিলো,
“আপনি একটু চুপ করবেন?কী ভাই ডাকা শুরু করেছেন?মানছি আমার স্টাইল ছেলেদের মতো তাই বলে কী আমি ছেলে হয়ে যাবো?অসহ্য একদম।কোথা থেকে আসে এমন আবুল মার্কা পাগল।এতো পাগল হলে বাংলাদেশ তো পরে পাগলের কারখানা হয়ে যাবে।আজিব এক লোক।আর একবার যদি আমাকে ভাই ডাকিস তাহলে তোকে যেনো আর কেউ ভাই ডাকতে না পারে সেই অবস্থা করে দিবো।”
অধ্রীর কথা শুনে ছেলে ঢোক গিললো।বাপরে কী দজ্জাল মেয়ে!কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে ছেলেটি বললো,”সরি।আমি বুঝতে পারিনি।”এতোক্ষণে অধ্রীর রাগও কমেছে তাই সেও আর ঝগড়া করলো না।
“ওকে।”
“আমি রোদ।”
“অধ্রী।”
“নাইস নেইম।”
“আই নো।”
রোদ ভ্যাচকা খেলো সাথে মুচকি হাসলো।অধ্রী’কে পছন্দ হয়েছে তার।মেয়েটা সবার থেকে আলাদা।
১৫.
সকালের কড়া রোদ কাচ ভেদ করে চোখে পড়তেই কুয়াশা’র ঘুম ভেঙে গেলো।হাত-পা নেড়েচেড়ে উঠে বসলো।কুয়াশা’র মনে পড়লো সে বাসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাহলে এই রুমে কীভাবে আসলো?কুয়াশা উঠে গিয়ে কাচের দেওয়ালের পর্দা সরালো।দূরে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে তারমানে কক্সবাজারে এসে গেছে।রুমে সীয়ামা আর অধ্রীর ব্যাগ দেখাচ্ছে কিন্তু ওরা সবাই কোথায়?তখনি কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলো।কুয়াশা পেছনে না ঘুরেই বুঝতে পারলো অরণ্য এসেছে।
“গুড মর্নিং!”
“মর্নিং!তুমি একা?বাকিরা কোথায়?”
“ম্যাডাম আপনি এতো ঘুমান!হাহ”
“আমি জানি আমি বেশি ঘুমাই।বাই দা ওয়ে আমি এখানে?”
কুয়াশা’র কথা শুনে অরণ্য কেশে উঠলো।আমতা আমতা করে উত্তর দিলো,
“আসলে তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই তাই তোমাকে আমি.. আ..মি নিয়ে আসি।সরি!”
অরণ্যের কথা শুনে কুয়াশা হেসে উঠলো।সাথে সে কল্পনাও করছে ঠিক কীভাবে এনেছে অরণ্য তাকে।অরণ্য মন ভরে কুয়াশা’কে দেখছে।তার মোটেও মনে হচ্ছে না কুয়াশা’র বিএফ আছে।কিন্তু তবুও কেমন যেন ভয়টা লেগেই আছে!
“ও হ্যালো?কফিটা কি দিবে?”
“ও হ্যা।নাও।বাই দা ওয়ে তুমি তো আগে আমাদের বলো নি তোমার বিএফ আছে।”
“কার বিএফ?”
কফি’তে চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করলো কুয়াশা।অরণ্য চোখ বড় বড় করে উত্তর দিলো,
“তোমার বিএফ।গত কাল না বললে তোমার বিএফ..”
“ওহহ…হ্যা।আচ্ছা বাকিরা কোথায়?”
অরণ্য বেশ বুঝতে পারছে কুয়াশা কথা কাটিয়ে নিচ্ছে।তাই সে আর ঐ টপিক নিয়ে প্রশ্ন করলো না।
“ওরা সবাই রেডি হয়ে নাস্তা করতে বেরোলো।তুমি রেডি হয়ে পাশের রুমে নক দিয়ো।”
“আচ্ছা।”
সীয়ামা’র সকালে কিছু খাওয়ার অভ্যাস নেই।তাই শুধু কফিই খেলো।এখানে আসার পর থেকে রৌদ্রময় একটা কথাও বলেনি তার সাথে।কিন্তু কেনো?নাস্তা করে সবাই সমুদ্রের দিকে হাঁটা শুরু করলো।অধ্রী আর কানন সামনে হাটছে একটু পেছনে সীয়ামা আর কিছুটা দূরে রৌদ্রময় বালিতে পা নেড়ে নেড়ে আসছে।এই ফাঁকে সীয়ামা রৌদ্রময়’কে প্রশ্নটা করেই ফেললো।
“কেমন আছেন?”
হঠাৎ চেনা কন্ঠ শুনে রৌদ্রময় কেঁপে উঠলো।এই মেয়েটা থেকে থাকতে চাই আর এখন সে নিজেই হাজির?কী চাই মেয়েটা?
“আপনাকে বলছি রৌদ্রময়।”
“হ্যা ভালো।তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!কিন্তু আপনি এমন মন মরা কেনো হয়ে আছেন?ব্রেকআপ হয়েছে নাকি?”
“দু সপ্তাহ আগে হয়ে গেছে।কিন্তু তার জন্য মোটেও আপসেট নয় আমি।”
“হু,হবেন বা কেনো?আপনার কাছে তো রিলেশনের মূল্যই নেই।”
“লিসেন এসব বিষয় নিয়ে কোনো কথা তুলবে না।মেয়েরা নিজ থেকেই আমার সাথে রিলেশনে যায় আর নিজেই ব্রেকআপ করে।”
“ব্রেকআপ করতে বাধ্য হয় বলেন।”
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বাক্যটি বলে সীয়ামা এগিয়ে গেলো।এই প্রথম বারের মতো রৌদ্রময়ের অপরাধবোধ হচ্ছে।হ্যা এটাই সত্যি মেয়েরা ব্রেকআপ করতে বাধ্য হয়।সীয়ামাও হয়েছিলো।কিন্তু সেদিনও সীয়ামা’র কান্নায় সে কষ্ট পেয়েছিলো আর আজও তার কান্না মোটেও সহ্য হচ্ছে না।কিন্তু কেনো?
(চলবে)