ধূসর পাহাড়,পর্ব_১১
লেখিকা আমিশা নূর
১১.
কুয়াশা গলি দিয়ে হাটছে। হাটতে হাটতে একসময় গলিটা পার করলো।ওমনি অরণ্য বাইক নিয়ে হাজির।সেদিনের মতো কুয়াশা অভাক হলো না।কারণ প্রতিদিনই অরণ্য তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।চুপচাপ সে বাইকের পেছনের সিটে বসলো।অরণ্য বাইক স্টার্ট দিলো।রাত সাড়ে আট’টা বাজে হয়তো এখন!ঠান্ডা বাতাস তাদের গা ছুয়ে যাচ্ছে।কুয়াশা অনুভব করলো বাতাসের সাথে একটি মিষ্টি সুগন্ধ আসছে।প্রতিদিনই আসে এমন সুগন্ধি।অরণ্যের পারফিউম হয়তো!
“কাল থেকে আয়ন আর্ট ক্লাসে যাবে মনে হয়?”
“হুম।কালকে তো সোমবার!”
“হুহ।আচ্ছা আয়ন কী ড্রয়িং জানে?”
“সাত বছরের ছেলের যতটুকু জানা দরকার তার চেয়ে অনেক কম জানে”
কথাটি কুয়াশা বুঝলো না।কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেসও করলো না।তবে অরণ্য ঠিকই উত্তর দিলো,”একটু-আধটু জানে এই আরকি।”কুয়াশা ছোট্ট করে ‘ওহ’ উত্তর দিলো।অরণ্য তাকে কিছুটা হলেও বুঝে।তাই তার বলতে হয় না কিছুই।আরো কিছুক্ষণ কথা বলতে বলতে রাস্তা শেষ করলো তারা।
.
.
.
সীয়ামা অনেকক্ষন ধরে রৌদ্রময়কে কল করেই যাচ্ছে। কিন্তু ওপাশ থেকে বার বার মেয়েলী কন্ঠে বলছে,”আপনি যে নাম্বারে ডায়াল করেছেন তা এই মূহুর্তে ওয়েটিং আছে,অনুগ্রহ ক..”।সীয়ামা ফোন কেটে দিলো।এই কথাটি শুনতে শুনতে তার মুখস্থ হয়ে গেছে।কার সাথে কথা বলছে রৌদ্রময় এতোক্ষণ?কী হয় একটু সীয়ামা’র কল রিসিভ করলে?কতোদিন হয়ে গেলো রৌদ্রময়ের সাথে কথা হয় না।রৌদ্রময়ের কী তার কথা একটুও মনে পড়ে না?ফুপিয়ে কেদে উঠলো সীয়ামা।আর যে পারছেনা সে!
.
.
“একি কুয়াশা তুই এতো রাতে টিউশনি কেনো নিলি?”
বাড়িতে ডুকতেই বাবা’র মন্তব্য শুনে কুয়াশা থেমে গেলো।একদম পছন্দ হয় না লোকটাকে।এই প্রশ্নের উত্তর না দিলে এখন তুলকালাম করে ফেলবে।
“কী হলো উত্তর দিচ্ছিস না যে?নাকি টাকা আয় করছিস বলে বড় হয়ে গেলি?”
ঝাঁঝালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো রহমান।কুয়াশা শান্তভাবে জবাব দিলো,”না বাবা,দিনে আমার কলেজ থাকে তাই সন্ধ্যায় নিলাম”
“ওহ!তোর তো আবার কলেজ আছে।”
“হুহ”
কোনোমতে কুয়াশা রুমে চলে আসলো।চার রুমের একটা ছোট বাড়িতে তার বাস। তার মধ্যে কুয়াশা’র রুমটা বা’দিকে।রুমে এসে কুয়াশা ফ্যান,লাইট অন করলো।যদিও এখন গরম না তারপরও ভীষণ ঘেমে গেছে সে।হয়তো তার বাবা সামনে পড়েছিলো বলে।কুয়াশা’র দিনগুলো বেশ কাটছে এখন।হুটহাট রেগে গেলেও এখন নিজের মধ্যে কন্ট্রোল এনেছে।আগের মতো আর নিজেকে আঘাত করে না।এসব অবশ্য অরণ্যের বন্ধুদের অবদান!কাল সোমবার,কালকেই দেখা হবে তাদের সাথে।প্রতি সোমবার আর্ট ক্লাস শেষ করে কুয়াশা তাদের সাথে দেখা করতে যাই।অরণ্যের সাথে রোজ দেখা হলেও বাকিদের সাথে একবারই হয়!
.
.
সকালের সূর্যের আলো পর্দা ভেদ করে তার চোখে উঁকি দিতেই সীয়ামা চোখ-মুখ কুঁচকে নিলো।কাথা মুড়িয়ে আবার ঘুমানোর ট্রাই করলো।কাল রাতের কথা মাথায় আসতেই তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিলো।
“ইউ মিসড এ কল ফ্রম রৌদ্র”
লেখা পড়ে সীয়ামার মন খারাপ হলো।ইশশ কাল রাতে যদি না ঘুমাতো তাহলে হয়তো রৌদ্রময়ের কল রিসিভ করতে পারতো।সীয়ামা কোনোকিছু না ভেবেই কল দিলো।দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম কন্ঠে কেউ একজন বললো,”হ্যালো”।ব্যাস!এটুকুতেই সীয়ামা গলে পানি হয়ে গেলো।কী মিষ্টি কন্ঠ!
_হ্যলো,আমি সীয়ামা বলছি।
“সীয়ামা?কোন সীয়ামা?”
মূহুর্তের মধ্যে ভীষণ রাগ হলো সীয়াম’র।নামটা অবধি মনে নেই তার?কী এমন তাকে তার মনে?সীয়ামা উত্তর দেওয়ার আগেই ওপাশ থেকে বলল,”ওহ হ্যা সীয়ামা? কেমন আছো?কাল রাতে কিছু হয়েছিল?এতো করে কল দিলে?হাহ”
কথা শেষ করে রৌদ্রময় হাই তুললো।সীয়ামা হেসে ফেললো।তারপর মৃদুস্বরে বললো,”আপনি আগে উঠে নাস্তা করুন,তারপর জানাচ্ছি”
১২.
কুয়াশা সেই খোলা মাঠে রয়েছে।হাতে ব্রাশ,সামনে আর্ট বোর্ড। আজকে আয়ন আসবে বলে আর্টের প্রাথমিক বিষয়গুলি শিখাবে।
“কুয়াশা দি!”
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে কুয়াশা পাশে ফিরে তাকালো।সীয়ামা আয়নের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে!কথাটি অবশ্য ভূল।আয়নই সীয়ামার হাত ধরেছে।
“আরে তুমি?আয়নকে দিতে এসেছো?কলেজ যাওনি?”
“কলেজে বিকেলের ক্লাসগুলো করবো তাই যাওয়া হয়নি।বৌদি বললো আয়নে নিয়ে আসি।”
কুয়াশার মুখটা কালো হয়ে গেলো।সে ভেবেছিলো অরণ্য আসবে আয়নকে দিতে কিন্তু সীয়ামা এসে পড়েছে।
“আয়ন ক্লাস করবে তো এখানে?”
“ইয়েস টিইইচার”
“টিইইচার?”
আয়নের কথাটা নিপু ভেঙ্গালো।বাকিরা সবাই হেসে উঠলো।আয়ন রাগি চোখে তাকলো,ওর থেকে ভালো হতেই তো এসেছে সে এখানে। ভালো হয়েই যাবে।
“নিপু অন্যের কথাকে ভেঙাতে নেই”
“সরি সুগারদি”
কুয়াশা আর কিছু বললো না।আয়ন গিয়ে নিপুর পেছনে বসলো।তার মূল উদ্দেশ্য নিপুর বেণি দুটাতে চুইংগাম লাগানো।কুয়াশা সীয়ামা’কে বললো,
“তুমি কী ওয়েট করবে সীয়ামা?”
“না দি,আমি চলে যাবো।তুমি তো ছোটদা’র সাথে দেখা করতে যাবে তখন দা’র সাথে পাঠিয়ে দিও।”
“আচ্ছা।”
কুয়াশা কিষ্ণিৎ অভাক হলো।সীয়ামা জানে যে অরণ্য তার বন্ধু!তাহলে কী কৃষ্ণা আপুও জানে?
“সুগাররররদিইই”
নিপুর চিৎকার শুনে কুয়াশা পেছনে ফিরে তাকালো।আয়ন নিপুর চুল ধরে টানাটানি করছে আর মাইশা আয়নকে উল্টো পাল্টা বকছে।
“স্তব্ধ আবারোও হুহু করে হেসে উঠলো।আয়ন ছেলেটা বেশ ফাজিল! পছন্দ হয়েছে তার ছেলেটাকে।হাসা বাদ দিয়ে আবার পড়া শুরু করলো।”
“আয়ন ওর বেণি ধরে টানছো কেনো?”
“টিইইচার তুমি জানো না?এইটা একটা আর্ট!এখন আমি কীভাবে বেণিয়ার চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দিই দেখো।”
“হয়েছে এবার যা বুঝাচ্ছি তা একটু বুঝো।”
।
“সরি একটু ধেরি হয়ে গেলো।”
কথাটি বলে কুয়াশা মৃদু হাসলো।তার হাত ধরে আছে আয়ন।আয়ন দৌড়ে এসে অরণ্যকে ঝাপটে ধরলো।কুয়াশা চেয়ার টেনে বসলো।
“কী শিখছিস আজকে?”
“টিইইচার কী শিখছি?”
অরণ্যের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার বদলে আয়ন কুয়াশাকে উল্টো প্রশ্ন করলো।এতে করে চার নাম্বার টেবিল’টাতে হাসাহাসি হলো।
“অরণ্য,আয়ন একদম তোর মতো হয়েছে।”
“আমি কী ওর মতো ছোট বেলায় উল্টো প্রশ্ন করতাম?”
“তা করতি না কিন্তু পড়াশোনাও তো কিছু মনে রাখতে পারতি না।”
অধ্রীর কথা শুনে কুয়াশা হুহু করে হেসে দিলো।অরণ্য রাগী চোখে অধ্রীর দিকে তাকালো।বিষয়টা এড়ানোর জন্য রৌদ্রময় বললো,”কুয়াশা আমরা ভাবছিলাম জানুয়ারি’র শেষে ট্রিপে যেতে। তুমি কী বলো?”
“আমিও সেটাই ভাবছিলাম।কোথায় যাবে ঠিক করেছো?”
“যেখানে ভালো খাবার পাওয়া যায়।”
(চলবে)
ভূলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤