ধূসর পাহাড়,পর্ব_১০

ধূসর পাহাড়,পর্ব_১০
লেখিকা আমিশা নূর

গতো বারোদিনে বারো হাজার বার বুঝিছে আয়নকে সে ড্রয়িং-এ ভর্তি হওয়ার জন্য। কিন্তু এই পড়াচোর আয়ন কিছুতেই ড্রয়িং শিখবে না।মনে মনে হাজার’টা গালি দিলো অরণ্য।কী হতো একটু রাজী হলে?কুয়াশা’র সাথে দেখা করার আরেকটা সুযোগ হয়ে যেতো! এসব বিষয় নিয়ে ভাবছিলো অরণ্য তার মাঝেই সীয়ামা আসলো,

_কী হলো দাদা মুখটা এমন শুকিয়ে গেলো কেনো?
_আর বলিস না আয়ন কিছুতেই ড্রয়িং শিখতে রাজী না।

মুখ গোমড়া করে অরণ্য উত্তর দিলো।সীয়ামা সন্দিহান দৃষ্টিতে অরণ্যের দিকে তাকালো।মতলব কী ছেলে’টার?প্রেমে টেমে পড়েনি তো?

_দাদা কুয়াশাদি কে নিয়ে এতো সিরিয়াস কেনো তুই?

শীতল কন্ঠে সীয়ামা প্রশ্ন করলেও অরণ্যের মনে উতালপাতাল সৃষ্টি হয়েছে!সত্যিই কী সে কুয়াশা’কে নিয়ে সিরিয়াস?গত বারো দিনে এমন একটি দিনও মিস যায়নি যে কুয়াশা সাথে কথা হয়নি।রোজই কথা হতো!কিন্তু তবুও অরণ্যের মন ভরে না। প্রতিদিন যেনো কুয়াশা’কে নতুন রুপে দেখে সে! সীয়ামা’কে বলবে এসব?না থাক,সব কিছু ছোট বোনকে বলার দরকার নেই।

_কী হলো দাদা?উত্তর দিচ্ছিস না যে?
_নাহ তেমন কিছু না।আয়নের জন্য বলছিলাম।ও তো ড্রয়িং একটু আধটু পারে যদি শিখে তাহলে তো ভালই হয়।
_ওও।আমি বলে দেখবো।

কথাটি শেষ করে এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করে সীয়ামা চলে গেলো।রৌদ্রময়ের কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলো সে।কিন্তু তার ভাইয়ের বিষণ্ণ মন দেখে কিছুই বললো না।এখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। কুয়াশা কিছুক্ষণ পরেই আসবে।কে জানে আয়নকে সে আধোও রাজি করাতে পারবে কী না?

.
.এখন সাতটা বাঝে।অরণ্য দরজার সামনে পায়চারি করছে।গত পনেরো দিনে সাতটা বাজলেই অরণ্য দরজার সামনে হাজির হয়েছে,,কুয়াশা আসলেই দরজা খুলে দেয়।এটা যেন তার বিশেষ কাজ!

“টিং টিং টিং”

কলিং একবার বাজতেই অরণ্য দরজা খুলে দিলো।দরজার ওপাশ থেকে কুয়াশা মুচকি হেসে প্রবেশ করলো। এ কয়দিনে তাদের সম্পর্ক খুব গাড় হয়েছে। আপনি থেকে ‘তুমি’তে চলে এসেছে।

_আয়ন কোথায়?
_কে জানে?
_টিইইচার আমি এখানে।

হাত উচু করে আয়ন ডাক দিলো কুয়াশা’কে।কুয়াশা তাকিয়ে দেখলো ড্রয়িংরুমের টেবিলের নিচ থেকে আয়ন বের হচ্ছে। ভারী অভাক হয়ে কুয়াশা প্রশ্ন করলো,”তুমি টেবিলের নিচে কী করো?”

_টিইইচার আজকেএএ ক্লাসের একটা বেণীওয়ালা মেয়ে আমাকে বলেছে আমি নাকি টেবিলের অতোটুকু তাই আমার বুদ্ধি নেই।
_কী বলো?টেবিলের অতটুকু হলে কী বুদ্ধি থাকে না?
_কে জানে? কিন্তু আমি দেখলাম টেবিলের নিচে আমি ভালো করে দাড়াতে পারছি না।তাআআহলে আমার বুদ্ধি আছে।কালকে গিয়ে মেয়ে’টার বেণি টান দিবো।

কুয়াশা হালকা হেসে আয়নের সামনে গিয়ে বললো,,
_তোমার বুদ্ধিতে টেবিল কোনো অবদান রাখে না,চেষ্টায় তোমাকে তোমার লক্ষ্যে পৌঁছে দিবে!

অতবড় কথাটার আগামাথা কিছুই বুঝলো না আয়ন। তা তার চেহেরা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কুয়াশা চেয়ারে বসে কথাটা সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলো।

_আমরা কোনো কিছু করতে পারি বা না পারি চেষ্টা কিন্তু অবশ্যই করি।কখনো হেরে যায় আবার কখনো জিতি।কিন্তু হাল আমরা ছেড়ে দি না।মেয়েটি তোমাকে কথাটি বলার পর নিশ্চয়ই তুমি মুখ গোমড়া করে চলে এসেছো?

আয়ন মাথা নাড়লো।যার অর্থ “হ্যা”।কুয়াশা আবারও বললো,

_দেখো মেয়েটা তোমাকে কথাটি বলেছে কারণ তুমি পড়াশোনায় ভালো না।যদি তুমি পড়াশোনায় ভালো হও তাহলে মেয়েটাকে তুমিও এই কথা বলতে পারবে।তুমি চাও মেয়েটাকে কথা ফেরত দিতে?

কথাগুলো আয়ন খুব মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলো।বেণিয়া মেয়েটি পড়াশোনায় ভালো বলে অনেক পটর পটর করে,যদি আমি ওর চেয়ে ভালো হয় তাহলে আমিও ওকে মি.গাধা বলতে পরবো।কথাটি মনেমনে ভেবে আয়ন হাসিমুখে জাবাব দিলো,” হ্যা,ঐ বেণিয়াকে আমি হারাবো টিইইচার।কী করতে হব্বে আমাকে?”

_বেশি কিছু না,শুধু পড়তে হবে।
_পড়া ছাড়া আর কিছুওও নেই টিইইচার?
_নাহ।
_ওক্কে।

আয়ন খুব সিরিয়াস মুড নিয়ে বই খুলতে লাগলো।এতোক্ষণ ধরে ওদের সব কথা শুনছিলো অরণ্য,কোনো মতে হাসি আটকে রেখেছিলো এতোক্ষণ কিন্তু আয়নের মুড দেখে এবার “হোহো” করে খুব উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো।হাসির শব্দ শুনে কুয়াশা মাথা তুললো।ছেলেটা নিখুঁত ভাবে হাসতে পারে।কোনো ক্রুটি নেই হাসিটার মাঝে।কুয়াশা তার দিকে তাকিয়েই রইলো,,

_আয়ন তোকে যা,লাগছে না?
_চাচ্চু ডোন্ট ডিসটার্ব মি।নাহলে মামুনিকে ডাকবো।

অরণ্যের মুখের হাসি উধাও হয়ে গেলো।পড়াশোনার সময় হাসাহাসি, কথাবলা কৃষ্ণা একদম পছন্দ করে না।তাই বার বার আয়ন কৃষ্ণার ভয় দেখায়।তাই তক্ষুনি অরণ্য উধাও হয়ে গেলো।
.
.
.
আয়ন খুব মন দিয়ে পড়ছে।গত পনেরো দিনে আজই প্রথম বার আয়নকে সে মনোযোগ দিয়ে পড়তে দেখলো।কুয়াশা মৃদু হাসলো,যাক অবশেষে ছেলেটা পড়ায় মন দিলো। হঠাৎ “ঠুং” শব্দে কুয়াশা এবং আয়ন দুজনই বিরক্ত হলো।কুয়াশা মেবাইলের পাওয়ার ওপেন হয়েছে। আয়ন তাকিয়ে দেখলো ওয়ালপেপারে কুয়াশা’র সাথে বেণিয়া মেয়েটা।সাথে সাথে কুয়াশা’কে প্রশ্ন করলো,

“টিইইচার,বেণিয়া তোমার ফোনে কী করছে?”
“বেণিয়া?আরে বেণিয়া না ওর নাম নিপু,আমার আর্ট ক্লাসের স্টুডেন্ট।”
“আরে টিইইচার এই বেণিয়ায় তো আমাকে মি.গাধা বলে।আজকে টেবিলের কথাটা ও বলেএএছে।”
“নিপু?ও হ্যা ও তো তোমাদের স্কুলে।”
“হুম।সাথে ওর বান্ধবীও আছে নাম মাইশা।”
“তাই নাকি?তাহলে তোমরা তো ফ্রেন্ড।”
“ওরা সবসময় আমাকে বকেএএ”
“এবার থেকে তুমি ভলো করে পড়লে আর বকবে না।”
“আচ্ছা টিইইচার আমিও তোমার আর্ট ক্লাসে ভর্তি হবো।”
“তাই?”
“হুম।চাচ্চু বলছি..”
“হ্যা তোমার চাচ্চু বলেছে তুমি আর্ট শিখতে চাও”
“কুয়াশা পড়ানো কী শেষ?”

ওদের কথার মাঝখানে কৃষ্ণা নাস্তা নিয়ে এসে পড়ায় কুয়াশা কথা চাপা পড়ে গেলো।কুয়াশা হেসে ইতিবাচক উত্তর দিলো।তারপর কিছুক্ষন আয়নের আর্ট নিয়ে কথা বললো।

“স্তব্ধ যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।মনে মনে বললো,’আয়ন রাজি হলো।হায়রে একটা ছোট ছেলের মাথায় কতকিছু থাকে!’স্তব্ধ আকাশের দিকে তাকালো,আকাশ পুরাটাই নীল হয়ে আছে,তার নিচে রয়েছে নীল জল।সবই তো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি! তিনি কী চাইলে পারতেন না অরণ্য-কুয়াশা’কে এক করতে?খুব বেশি কী ক্ষতি হতো এমনটা হলে?”

১১.
কুয়াশা গলি দিয়ে হাটছে। হাটতে হাটতে একসময় গলিটা পার করলো।ওমনি অরণ্য বাইক নিয়ে হাজির।সেদিনের মতো কুয়াশা অভাক হলো না।

(চলবে)

ভূলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।আবারো ধেরি করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here