ধূসর পাহাড়,পর্ব_০৬
লেখিকাnআমিশা নূর
~আমরা কীভাবে বলবো আমাদের কারো সাথে যোগাযোগ নেই তো।(রৌদ্রময়)
~ওয়েট দোস্ত…
অধ্রী দু’টা শব্দ বলে ব্যাগ থেকে বাদাম বের করলো।হঠাৎ বাদাম বের করায় ওর বন্ধুরা অবাক হলো।কারণ অধ্রী তখনি বাদাম খায় যখন খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে চিন্তা করে।তাহলে এবার কী “কুয়াশা” কে নিয়ে চিন্তা করবে?
~দোস্ত কুয়াশা মেয়েটা অদ্ভুত।
বাক্যটি শেষ করে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে মুখে দিলো অধ্রী।কানন তার থেকে ভাগ চাইতে হাতে থাপ্পড় দেয়।তারপর আবার বললো,,
~প্রথমত, মেয়েটা সুইসাইড করতে যাচ্ছিলো।
দ্বিতীয়ত,আমার মনে হয় ওর ফ্রেন্ড,ফ্যামেলি,কলেজ এসব থেকে ও অনেক কষ্ঠ পায়।কারণ অরণ্য তুই যখনি ওর সুইসাইডের কারণ জিজ্ঞেস করতি ও বিরক্ত হতো।সাধারণত কারো থেকে সুইসাইডের কারণ জিজ্ঞেস করলে কেঁদে দেয় বা মুখ কালো করে ফেলে।কিন্তু কুয়াশা’র কেইস আলাদা।
এন্ড থার্ডলি ও এর আগে অনেকবার সুইসাইড করার ট্রাই করেছে কিন্তু সাহস হয়নি।তাই এবারে অন্য জগতে চলে যাওয়ার জন্য কানে তুলা গুজে দিয়েছিলো।তবে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি আর কোনো রকমের নতুন কষ্ট না পেলে কুয়াশা সুইইইসাইড করার ট্রাই করবে না।
~হুম।সবটা পরিষ্কার কিন্তু মেয়েটা যে এরপরও সুইসাইড করবে না তার কী গ্যারান্টি?(অরণ্য)
~ও আমাদের দেখে এক ধরণের আনন্দ অনুভব করেছে।ও আমাদের সাথে থাকলে আর কোনোদিন সুইসাইড করবে না।লাইফের আসল মজাটা বুঝবে।
~কিন্তু ও আমাদের সাথে থাকবে কীভাবে? ওর সাথে যোগাযোগ করার কোনো ক্লু তো নেই (রৌদ্রময়)
~আমার কাছে ওর নাম্বার আছে কিন্তু কল দিনি এখনো,,, ও দুদিন বাদে আমার সাথে কথা বলে কী রিয়েক্ট করে তা দেখার জন্য। মিস করে কী না তা এখন বুজবো।
~এইটা তুই ভূল বললি না।”মানুষ নিজের অভ্যাসকে মিস করে”।কিন্তু আমরা ওর অভ্যাস হয়ে যাইনি।(অরণ্য)
~হ্যা, অভ্যাস হয়নি কিন্তু ওর লাইফে হালকা প্রভাব ফেলেছি।ওয়েট এখন কল করবো ও’কে।
~হুম।
.
.
.
কুয়াশা’র ড্রয়িং শেষ।এই দৃশ্য’টা সে নিজের রুমে বাধিয়ে রাখবে।দৃশ্য’টা দেখতে একদম সেদিনের মতো। সবার পেছন দিকটা আর্ট করেছে, প্রজাতির মতো ডানা মেলে রেখেছে।দৃশ্য’টির দিকে ততক্ষণ তাকিয়ে ছিলো যতক্ষণ না ওর ফোন বাজছে।ফোন’টা হাতে নিয়ে দেখলো
“কি উ টি” নামটা ভাসছে।খুশিতে সে লাফিয়ে উঠলো কিন্তু হালকা অভিমান ও হলো।তাই সে নাম্বার না চেনার ভান করলো।
~হ্যালো,কে বলছেন?
~আমি অধ্রী।
~ওহ,, আসলে কিউটি নাম’টা খেয়াল করিনি। ই
কথাটি বলে সে নিজেই জিভা কাটলো।
~হাহাহাহা।আমার নাম্বার কিউটি দিয়ে সেইভ করছো?গুড।
~হুহ।এতোদিন পরে আমাকে মনে পড়েছে?আমি তো ভাবলাম ভূলেই গেছো।
~নাহ, আসলে বিজি ছিলাম।কালকে দেখা করতে পারবে?
~হুম।কখন?কোথায়?কে কে থাকবে?
~বিকালের দিকে,আমাদের ক্যাম্পাসে চলে আসো,আর আমরা সবাই থাকবো।
~ওহ।কেমন আছো?
~ভালো।তু..
এইভাবেই কিছুক্ষণ তারা কথা চালিয়ে গেলো।
৬.
মাগরিবের নামাজ আদায় করে জায়নামাজ তুলে রাখছিলো কুয়াশা।তখনি ওর সৎমা এসে বললো আজকে রাতের রান্না তাকেই করতে হবে।এই নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই কারণ রান্না তার ভালোই লাগে।কিন্তু আজকে তো টিউশনি আছে।তাই সে তার মায়ের কাছে গেলো…
__খালু আমি তো সাত’টার দিকে টিউশনিতে যাবো।নয়’টার দিকে এসে রান্না করি?
__হুম হুম,পাইছিস হেই একটাই।টিউশন,টিউশন, কি দরকার টিউশন করার?তোর পরার খচর তো তোর বাপে দে।হে দেয় না?তাইলে?
__খালু দেয় কিন্তু আমি নিজের’টা নিজে দিতে চাই।
তার সৎমায়ের সামনে কথাটি বললেও মনে মনে উত্তর দিলো “এখন যদি আমাকে টাকা দে, তা নিয়ে পরেও তো খোঁটা দিবেন,”।রাশেদা বেগম পানের রস কৌটাই ফেলে বললেন,
__হুহ নিজের টা নিজে টানবো,,কয়দিন দিতে পারস আমিও দেহুম।কেন তুই কী তোর বাপের টাকা নিস না?এতো টাকা তুই করস টা কী?ঐ ছেড়ি কী করস তুই?
কথাটি শুনে প্রচন্ড রাগ হলো তার।নিজের বাবা’র টাকা নিতেও উনাকে বলতে হবে।
__আচ্ছা আমি,রাতে এসে রান্না করবো।
__হু আমিও দেখুম, কয়..
বাকিটুকু কুয়াশা’র কর্ণ অবধি পৌছানোর আগেই সে তার রুমে চলে আসলো।আজ পযর্ন্ত কোনোদিন সে তার সৎমা’কে মা ডাকেনি।কীভাবে ডাকবে?কুয়াশা’র মতে সে-তো মা ডাক শুনার যোগ্যই না।তার নিজের মা মারা যাওয়ার ছয়’মাসের মধ্যেই তার বাবা রাশেদা বেগম’কে বিয়ে করেন।তবে রাশেদা হলো তার মায়ের ছোট বোন।ছোট থেকে সে খালু ডাকতো এখনও তাই ডাকে।
.
.
.
__আয়ন কী করছিস তুই?
__চাচ্চু প্লিইইজ প্লিইইজ বাস দাও।
__এখন কী তোর বাস নিয়ে খেলার বয়স আছে?ক্লাস টু’তে পরিস তুই।
__তাহলে কী তুওমি খেলবে?
__আমি কেনো খেল..
অরণ্য খেলনা বাস’টি হাতে নিয়ে উপর করে রেখেছে।আনন্দ সম্পূর্ণভাবে চেষ্টা করছে সেটি নেওয়ার।অরণ্যের সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগে কলিং বেল বাজলো।
__অরণ্য কে এসেছে দেখ।আয়নের টিচার মনে হয়।
রান্নাঘর থেকে উচু গলায় আদেশ দিলো তার কৃষ্ণনা বৌদি।অরণ্য আয়নের দিকে তাকাতেই আয়ন ভেংচি কেটে টেবিলে চলে গেলো।বিরক্তি নিয়ে অরণ্য দরজা খুলতে গেলো।
.
.
.
টিউশনিতে এসে দরজার সামনে দাড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে কুয়াশা।কয়েকবার বেল বাজানোর পরও যখন কেউ দরজা খুললো না তখন সে মোবাইল বের করলো।আর তখনি কেউ একজন দরজা খুললো।ব্যাগে থেকে মোবাইল বের করে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।বিষময়ে মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছে না তার।
.
.
.
দরজা খুলে অরণ্য শুধু ‘হা’ করে রইলো।কুয়াশা!সয়ং কুয়াশা তার সামনে দাড়িয়ে আছে।তারমানে আয়নের টিচার কী কুয়াশা?নাকি অন্য কোনো কাজে এসেছে?কুয়াশা কানের দুলে’র “ঠুং” শব্দে অরণ্যের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘঠলো।
~কুয়াশা! আপনি?
~আপনি এখানে?
~আমার বাড়িতে আমি থাকবো না?
~আপনার বাড়ি?
~কী মুশকিল প্রশ্ন করেই যাচ্ছো।আপনি আয়নের টিচার?
~হ্যা।
~টিইইচার!কাম…
আয়ন এসে কুয়াশা’র হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো।অরণ্য এখনো সেই যায়গায় স্থির।আনন্দ অরণ্যের হাতে চিমটি দিয়ে বললো,”চাআচ্চু,আমার টিইইচারের দিকে নজর দিবে না।”এইটুকু বলেই চোখটিপ দিলো।অরণ্য শুধু ছোট্ট করে বললো, “কী ফাজিল!”
.
.
__আরে কুয়াশা তুমি তো একদম ঠিক টাইমে চলে এসেছো।(কৃষ্ণা)
__হ্যা আপু আসলে রাস্তায় তেমন জ্যাম ছিলো না।
__ওহ।ও হলো আমার দেবর,আর আয়ন।
__ওও।
কুয়াশা ছোট করে শুধু ‘ওও’ বললো।তারমানে অরণ্য হিন্দু!!আর সে কিনা মুসলিম ভেবে বসেছিলো।বিষয়টা কিছুতেই সহজভাবে নিতে পরছে না সে। কুয়াশা বুঝতে পারছে না সে নিজে বিষয়’টা মানতে পারছে না কেনো?অরণ্য হিন্দু হতেই পারে তাতে এতো অভাক কেনো হচ্ছে?কেনো বিশ্বাস করতে পারছে না?কারণ কী এর?
(চলবে)