ধূসর পাহাড়,পর্ব_০৭

ধূসর পাহাড়,পর্ব_০৭
লেখিকা আমিশা নূর

কুয়াশা ছোট করে শুধু ‘ওও’ বললো।তারমানে অরণ্য হিন্দু!!আর সে কিনা মুসলিম ভেবে বসেছিলো।কুয়াশা বুঝতে পারছে না সে নিজে বিষয়’টা মানতে পারছে না কেনো?অরণ্য হিন্দু হতেই পারে তাতে এতো অভাক কেনো হচ্ছে?কেনো বিশ্বাস করতে পারছে না?কারণ কী এর?

“স্তব্ধ অবাক হলো।শুধু অবাক নয় যথেষ্ট অবাক হলো।সে মনে মনে মন্তব্য করছে ‘ধর্মের জন্যই হয়তো অরণ্য-কুয়াশা’র মিল হয়নি!আচ্ছা শুধু কী এটাই কারণ?’নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো স্তব্ধ।তার জানতেই হবে কুয়াশা’র আত্মহত্যা’র কারণ কী?”

~টিইইচার।

~হুম।

~কুয়াশা যাও ও কে পড়াতে বসো।

~হুম আপু।
.
.
.
আধ ঘন্টা হয়ে গেলো এখনো অবধি আয়ন’কে একটা ‘ক’ও পড়াতে পারেনি কুয়াশা।হাজার’টা কথা বলছে কিন্তু পড়ছে না।

~আয়ন এবার পড়া শুরু করো।

~টিইইচার,শুধু পড়ো পড়ো,আগে আমার কথা শুনো,সেদিন আমার ফ্রেন্ড রাআআঘব আমাকে চকলেইইট দিলো না তাই আমি ওকে টিফিন দিইইনি। ভাআলো করেছি না টিইইচার?

~হুম,বাট তোমাকে পড়া..

~এরপর শুওনো কী হলো…

কুয়াশা মাথায় হাত রেখে চোখ বুঝে নিলো।আয়নের কথায় সে প্রচুর বিরক্ত হচ্ছে।ইচ্ছে করছে এখনি উঠে চলে যেতে।কিন্তু আবার ছেলেটাকে কিউটও লাগছে।সব কথা সে টেনে টেনে বলে।কুয়াশা বুঝেছে বাসায় অরণ্য থেকেও কেনো টিচার রাখা হচ্ছে। আয়নকে পড়াতে হলে কাঠখড় পুড়াতে হবে।হঠাৎ কারো হাসার শব্দে কুয়াশা আর ভাবতে পারলো না।চোখ খুলে দেখে অরণ্য পেন্টের পকেটে দু’হাত রেখে আরামে হাসছে।এতোক্ষণ একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছিলো। অরণ্যকে দেখে প্রশ্নের তীর ছুড়ে মারলো।

~আয়নের আগে টিচার ছিলো?

~হ্যা ছিলো, বাট একটা টিচার একমাসের বেশি টিকেনি।

~আমারও তো তাই মনে হচ্ছে।

__চাচ্চু দেখছো না আয়ন পড়ছে।কেনো বিরক্ত করছো টিইচার’কে।

__পড়ছিস আর তুই?হাহাহা আমাকে কেউ জাদু’টোনা করেনি যে তোর কথা বিশ্বাস করবো।

__মামুনিইইইই,,,শুনছো চাচ্চু…

বাকিটা শেষ করার আগেই অরণ্য আলো’র গতিতে উধাও হয়ে গেলো।

__আয়ন আর একটা শব্দও করবে না।নাহলে টিইইচার রাগ করবে।

__ওকে।আয়ন আর কথা বলবে না।

কুয়াশা খুব কঠিন ভাবে একঘন্টা পড়ালো।যদিও এর মাঝে আনন্দ হাজার কথা বলেছে।

__আয়ন এখন পড়া শেষ?(কৃষ্ণা)

__ইয়েস মামুনি।

__কুয়াশা ডিনার করে যেও।

__না আপু অলরেডি নয়টা বেজে গেলো।আমাকে যেতে হবে।

__ওমা সেকি,,আমি তো তোমার জন্য চিকেন বিরিয়ানি বানালাম।খেয়ে যাবে না?

__রাতে বিরিয়ানি??

__হুম।আসলে কাজের ভুয়া আজ আসেনি।তাই রান্না’টা আমি করলাম আর আমি চিকেন বিরিয়ানি ছাড়া অন্যকিছু রাঁধতে পারিনা।

__ওহ।না আপু অন্যদিন আপনার রান্না খাবো আজ আসি।

__মামুনি আমি টিইইচারের সাথে খাবো।

__ছেড়ে দাও বৌদি,এতো করে যখন খাবে না বলছে তাহলে নিশ্চয় কোনো ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে।

সিড়ি দিয়ে নামার সময় ওদের কথার মাঝখানে উত্তর দিলো অরণ্য।তারপর কুয়াশা’কে উদ্দেশ্য করে বললো,

__আপনি যেতে পারবেন?

__হুম।টাটা আয়ন,

__এই দাড়াও,

এইটুকু বলে কৃষ্ণা রয় রান্না ঘরের দিকে ছুটে গেলো।সহজ-সরল,এবং জেদি মেয়ে হলো কৃষ্ণা।নিজে একবার যেটা হ্যা বলে দিয়েছে সেটা যে কোনো উপায়ে সঠিক করবেই।

__এইনাও টিফিনে করে দিছি।তোমারও খাওয়া হলো আর আমার শখও পূরণ হলো।

এবার আর না করতে পারলো না সে।টিফিন’টা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে এলো একা।অরণ্যের বাসা একটি গলির দিকে।সেই গলি থেকে বের হতেই অনেকটা জোরে একটা বাইক সামনে আসলে।সেই বাইকে অরণ্য নিজে বসা।কুয়াশা কিঞ্চিৎ অবাক হলো।এখানে সে কী করছে?

~আপনি?

~অলরেডি নয়’টা বেজে গেলো আর এদিকের রাস্তাটাও খারাপ তাই ভাবলাম আপনাকে পৌঁছে দি।

__ওও।ওকে।

কুয়াশা হেয়ালি না করে বাইকে উঠলো,,কিন্তু অরণ্যকে ছোঁয়লো না অবধি।যেনো মনে হচ্ছে অরণ্যের উপর সে খুব অভিমান করেছে।কিন্তু এখন অতো কিছু না ভেবে, বাসায় পৌঁছাতে হবে।তার চেয়েও বড় কারণ “অরণ্যের কাছে কিছু জানার আছে।” তাই ধেরি না করে চট করে প্রশ্ন’টা করেই ফেললো,,,,”আপনি আমাকে সেদিন তুমি করে বললেন আর আজকে আপনি?কেনো?”প্রশ্ন’টা শুনে অরণ্য মুচকি হেসে এমন ভাবে উত্তর দিলো যেনো এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলো।

__আমার ফ্রেন্ডদের সামনে “তুমি” করে বলেছি কারণ তখন তুমি আমারও ফ্রেন্ড ছিলে কিন্তু আজকে তো আয়নের টিচার,দুটাই আলাদা না?

__হুম।আচ্ছা আপনাদের বাসায় আর কেউ নেই?

__আমার ছোট বোন আছে,আজকে ও ওর ফ্রেন্ডের বাসায় গেছে।

__নাম কী?

__সীয়ামা।তোমাদের কলেজেই অনার্স ফাস্ট ইয়ারে।

__ওহ।আর আপনার বাবা-মা?দাদা?

__মা বেঁচে নেই।বাবা আর দাদা ডিউটি’তে।বাবা সিআইডি অফিসার আর দাদা পুলিশ ইন্সপেক্টর।কি এক নতুন কেইস নিয়ে সন্ধ্যায় বেরিয়ে গেলো।

__ওহ,

কুয়াশা’র এখন নিজেরই লজ্জা লাগছে অরণ্য পুরা ডিটেইলস বলায়।লজ্জা পেয়ে সে আর কিছু জিজ্ঞেস করছে না।কিন্তু অরণ্য পাল্টা প্রশ্ন করলো,

__আচ্ছা, আপনি কেনো আমাকে “তুমি” করে বলেন না?

__অভ্যাস নেই।কাউকে তুমি করে আজ অবধি বলিনি।

__তোমার বাবা-মা কেও না?

কুয়াশা’র হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো।তাই সে ছোট করে জবাব দিলো “নাহ”। সে তো,তার মাকে কাছেই পাইনি ‘তুমি’কাকে ডাকবে?তবে কুয়াশা’র মনে আছে,,,তার বাবা খালুকে বিয়ে করার পর যখন তাকে “মা” বলে ডাকেনি তখন তার বাবা যথেষ্ট মেরেছিলো।এমনকি তার দাদি’ও মেরেছিলো।সেদিন ঐ তার জেদ হয় আর কোনোদিন এই মহিলা’কে ‘মা’ বলে ডাকবে না।কোনোদিন না।

__এক্সকিউজ মি?

__হ্যা।

__কোথায় হারিয়ে গেলেন?

__এমনি কোথায়ও না।আচ্ছা আমার না হয় অভ্যাস নেই কিন্তু আপনার তো আছে।

__ওকে,,ট্রাই করবো।

৭.
সকাল দশ’টা বেজে গেলো এখনো কুয়াশা’র রুমের দরজা খুলছে না দেখে রাশেদা বেগম অভাক হলেন। মেয়ে টা তো এমন কখনো দিন করে নাহ!আজকে কী হলো? কাল রাতে কী একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করেছে সে,টিউশনি থেকে এসে রান্না করতে দিয়ে?কিন্তু তার ননদ সাথী যে বললো মেয়েদের চাপে রাখতে হই নইতো পরিবারে’র মান সম্মান ধূলিসাৎ করে ফেলে!!কে জানে?
রাশেদা বেগম আর কিছু না ভেবে রান্না করতে গেলেন কারণ কুয়াশা’কে ঘুম থেকে উঠানোর অধিকার তার নেই!না সে অধিকার কুয়াশা দিয়েছে না তার বাবা,,,কুয়াশা’র জন্যই তো সে তার বড় বোনের স্বামীকে বিয়ে করেছে কিন্তু তার ননদের কথায় যে সে বাধ্য।

.
.
কৃষ্ণা অরণ্যের রুমে গিয়ে দেখে আয়ন অরণ্যের গা’য়ে পা তুলে দিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে।এরা দুজন পারেও বটে। সারাজীবন এভাবে ঘুমাতে পারবে কিন্তু কোনো অসস্তী হবে না।আজকে অরণ্য এখনো কেনো ঘুমে?ও কী কলেজ যাবে না?

(চলবে)

ভূলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছ❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here