ধূসর পাহাড়,পর্ব_০১

ধূসর পাহাড়,পর্ব_০১
লেখিকা আমিশা নূর

১.
~কুয়াশাা ডোন্ট ডু দিস।

~ভালো থেকো অরণ্য,বাই।

চোখ ভর্তি জল নিয়ে শীতল কন্ঠে চারটি শব্দ বলে একপা একপা করে পেছনে গিয়ে খাদে পড়ে গেলো কুয়াশা। ভি-ষ-ন ভয়ংকর এই খাদ,নিচে রয়েছে তার আশ্রয়স্থল বিশাল সমুদ্র।একবার সমুদ্রে পড়ে গেলে যে তার লাশও খুজে পাওয়া যায় না। কুয়াশা তো নিজ ইচ্ছায় সব কিছু শেষ করে ওপাড়ে পাড়ি জমালো।পড়ে যাওয়ার একমুহূর্ত আগেও কী ভাবে নি তাকে ছাড়া অরণ্য কীভাবে থাকবে?

~কুয়াশা,,আই সেড ডোন্ট ডু দিইইইইস,,কুয়াশাআ

অরণ্য দৌড়ে পাহাড়ে শেষ সীমানায় গেলো।কিন্তু ততক্ষণে কুয়াশার দেহটা এলোমেলো ঢিরার সাথে খেয়ে হইতো খুব বাজে ভাবে থেতলে গেছে,আর সে দেহেটাই সমুদ্রের জোয়ার অনেক দূরে নিয়ে যাবে।যে সমুদ্রের শেষ আজ অবধি কেউ খুজে পেলো না সেখানে কুয়াশার দেহ পাওয়াটা যে বড্ড অসম্ভব!অরণ্য কোনো দিন ভাবেনি তার পছন্দের #ধূসর_পাহাড়েই কুয়াশা হারিয়ে যাবে। অরণ্য যে তার মায়াময়ী’র মৃতদেহটাও দেখতে পাবে না¿অরণ্য শেষ বারের মতো কুয়াশা’র নাম ধরে চিৎকার দিলো।তার চিৎকারে গাছের ডালে বসে থাকা রংবেরঙের পাখিগুলোও উড়ে গেলো।সমুদ্রের জোয়ার গুলোও হইতো থেমে যেতে চাইছে।কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম যে ভঙ্গ করা যায় না।

“এইটুকু পড়ে নড়েচড়ে বসলো স্তব্ধ।স্তব্ধ হলো সেই মেয়েটি যে #ধূসর_পাহাড় বইটি পড়ছে।সেন্টমার্টিনে এসে বইটি কুড়িয়ে পেয়েছে সে।তবে এই বইটি কারো নিজ হাতে লিখা।সামনে বই দেখলে সে লোভ সামলাতে পারে না।তাই পড়া শুরু করে দিয়েছে গাছের নিচে বসে।পরণে তার ক্রীম কালারে স্কার্ট আর হোয়াইট পিঙ্কের টপস।পায়ে অরেঞ্জ কালারের সুজ।চুল দুপাশ করে বাধা।হাতে কালো রংয়ের বইটি।একদম চোখ আটকে থাকার মতো দৃশ্য।”

স্তব্ধ বইটি আবার পড়া শুরু করলো:

৩১/১২/২০১৬

অর্থাৎ মাত্র ১বছর আগে অরণ্য-কুয়াশা’র দেখা হয়েছিল।সেদিনই হইতো কুয়াশা’র মৃত্যু হয়ে যেতো কিন্তু অরণ্য তাকে নতুন একটা বছর উপকার দিয়েছিলো।হইতোবা সৃষ্টিকর্তার এইটাই চাওয়া ছিলো।

১.

11:03pm

ব্ল্যাক জ্যাকেট,ব্ল্যাক সুজ, ব্ল্যাক পেন্ট আর ব্ল্যাক হেলমেট’টা হাতে নিয়ে চুপিচুপি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো রৌদ্রময়।বাড়ির পেছন দিক থেকে তার পছন্দের দূরন্ত বাইক’টা দূরন্ত গতিতে স্টার্ট দিলো ।গন্তব্য তার তিন বন্ধুর বাড়ি।আর ৫৭মিনিট পর নতুন বছরের আগমন হবে।এইদিন অনেক ছাত্র-ছাত্রী ক্লাবে গিয়ে, নয়তো পার্টি করে নিউ ইয়ার পালন করে।কিন্তু রৌদ্রময় এবং তিন বন্ধু এর মধ্যে কোনোটাই করে না।তারা প্রত্যেক বছর এইদিন বাইক নিয়ে কয়েক রকমের প্রতিযোগিতা করে।আজকে তারা রেললাইনে যাবে।যে জিতবে তার টূরের টাকা অন্যরা বহন করবে।রৌদ্রময় তার এক বন্ধু বাসায় গিয়ে শিস দিলো।প্রতিক্রিয়া হিসাবে তার প্রথম বন্ধু হাত দেখালো।সে ও রৌদ্রময়ের মতো ব্ল্যাক পড়ে আছে।আর পেছনে একটা কালো রংয়ের ব্যাগ।রৌদ্রময় মুচকি হেসে আবার বাইক স্টার্ট দিলো।কিছুদূর গিয়ে আবার শিস দিলো।কিন্তু প্রতিক্রিয়া হিসাবে কিছুই পাওয়া গেলো না।সেটা খেয়াল না করেই রৌদ্রময় চলে গেলো। কিছুদূর যেতেই দেখা গেলো তার তিন নাম্বার বন্ধু অপেক্ষা করছে।তবে সে বন্ধু নই বান্ধবী।

~সরি সরি বান্ধবী তিন মিনিট লেইট।

~জলদি চল।

বাইক না থামিয়ে কথাগুলো বলে দুজনই চলে গেলো তাদের গন্তব্য স্থানে। তিনমুখো একটা রাস্তায় মোড়ে দেখা গেলো তার প্রথম বন্ধু তার মতোই বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

~অরণ্য কয়টা বেজে গেছে দেখ?

রৌদ্রময়ের প্রশ্নটা শুনে অরণ্য অর্থাৎ তার প্রথম বন্ধু তাদের দিকে তাকালো। ল্যাম্পলাইটের ঝাপসা আলোতে অরণ্যের হেলমেটের ভিতরের চোখ দুটো ছোট করে কিছুটা বিরক্তিভাব নিয়ে কালো রংয়ের ছোট ব্যাগটা থেকে ঘড়ি বের করে সময়টা দেখে অভাক হয়ে উত্তর দিলো।

~১১:২৯. ও মাই গড।গাইস দাড়িয়ে দেখছিস কী?বাইক স্টার্ট দে।

~ইয়াহ।অধ্রী কী হলো?

রৌদ্রময়ের কথা শুনে তার তিন নাম্বার বান্ধু মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেললো। রাস্তার মোড়ের লাইটের আলোতে তার চেহেরা দেখা যাচ্ছে। কোনো রকমের সাজগোজ নেই সেই চেহেরায়।চুলগুলো বয়কাট করে কাটা।যে কেউ প্রথম দেখলে ভাববে অধ্রী নিসন্দেহে ছেলে।

~আমরা যে যাবো আমাদের গোপালবাবু কই?যে আমাদের রেডি দিবে সে কই?

প্রথম বাক্যটি শান্তভাবে বললেও এরপরের বাক্যটি প্রচন্ড ককর্শ স্বরে বললো।অরণ্য আর অধ্রী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রৌদ্রময়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।

~আরে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?আমি তো ওর বাসার সামনে গিয়ে একবার না দু’বার না চার, চার না না পাঁচ,হ্যা পাঁচ বার শিস দিয়েছি।

হাতের আঙ্গুল দেখিয়ে দাত কেলিয়ে হেসে উত্তর দিলো।অরণ্য আর অধ্রীর চেহেরা দেখে বুঝা গেলো রৌদ্রময়ের কথায় তারা বিশ্বাস করলো না।কারণ ছোটখাটো বিষয়ে একটু বাড়িয়ে বলা তার স্বভাব।

~দোস্ত আমার সিক্সসেন্স বলতেছে হেতে এহন ঘুমে।

~ছিঃ তোরে না বলছি এইরকম মিক্স করা কথা না বলতে।

~আরেএএ, আচ্ছা এখন ঐ গোপালরে ফোন দে।

~হা করে দেখছিস কী রোদু কল দে।

~হুহ দিচ্ছি।

তিন বার কল করার পরও ওপাশ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলো না।চতুর্থ বারের মতো কল করতে গিয়ে দেখলো কল বেক করেছে।কল রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিলো।

~কুত্তা,মেয়েবাজ, লম্পট কই তুই।

~আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন সে এই মুহূর্তে ঘুমিয়ে আছে,দয়া করে কাল সকাল অবধি অপেক্ষা ক..

“এতোটুকুতে থেমে স্তব্ধ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।বন্ধুরা পারেও এমন। সে আবার পড়তে লাগলো:”

~এই হারামি,আজকে যে রেস আছে ভূলে গেলি।তোর কী শুধু খাওয়ার কথা মনে থাকে।শালা!আমরা সবাই তৃমোড়ে বসে আছি।তুই দু’মিনিটের মধ্যে আয়।(অরণ্য)

~দোস্ত..

~নো মোর ওয়ার্ড।

কঠিন কন্ঠে তিনটি শব্দ বলে ফোন রেখে দিলো অরণ্য। ভিষন বিরক্ত সে তার দ্বিতীয় বন্ধুর উপর।দু’মিনিট বললেও আট মিনিট শেষে আসলো কানন অর্থাৎ তাদের দ্বিতীয় বন্ধু।কিন্তু সে একা আসেনি না অন্য বন্ধুদের মতো বাইক আর ব্ল্যাক পড়ে।একটা ট্যাক্সি আর কয়েক রকম চিপস গালায় ঝুলিয়ে নিয়ে।আর পরনে বড়সড় একটা হাতকাটা জ্যাকেট।

~১১:৩৮…ও নো।গাইস জলদি বাইক স্টার্ট দে।(অরণ্য)

~শালা,আসছে তো আসছে পাঁচ মিনিট লেইট।

~হের কথা বাদ দে।

~কানন এই নেয় ব্যাগ।ফিতা রাখা আছে।

~ওকেহ।

কানন নিজের মতো করে উত্তর দিলো।বাকিদের কথায় সে কান দিলো না। এরপর ওরা তিনজন বাইকে উঠার পর “কানন” নিজের মতো রেডি দিয়ে দিলো।তিনজন একসাথেই স্টার্ট দিয়ে ‘ব্রু’ শব্দ করে এগিয়ে গেলো।আর কানন তার সাথে আসা ট্যাক্সি করে অন্য রাস্তা ধরলো।সবার গন্তব্য রেললাইনের ধারের মাঠটি।মাঠের পাশে রাস্তায় গিয়ে থামবে তারা। তাদের প্রতিযোগিতায় কানন অংশ নেয় না।কারণ সে বাকিদের তুলনায় মোটা এবং পেটুক।সবসময় খাবার তার চাই চাই।তাই সে রেসে যায় না।অর্থাৎ আগে থেকে হার মেনে নেয়।

১১:৫৫pm

অরণ্যেদের পাঁচ মিনিট আগে এসে হাজির হলো কানন।অরণ্যের দেওয়া কুচকুচে কালো ব্যাগটি খুলে লাল রংয়ের ফিতা নিয়ে রাস্তার মাথায় বসিয়ে দিলো।এখন আপাতত তার কাজ নেই।গলায় ঝুলিয়ে রাখা চিপসের প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করলো।দু’টুকরো চিপস মুখে দিয়ে না চিবিয়ে হা করে রইলো।

২.
প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে আসছে রৌদ্রময়। তার একটু পেছনে আছে অধ্রী আর সবার শেষে আছে অরণ্য।কানন হা করে তাকিয়ে রইল।সে কোনোদিন ভাবেনি শেষে রৌদ্রময়ের ট্রিপের টাকা দিতে হবে।কিন্তু যেটা সবাই দেখছে সেটা হইনি।হঠাৎ করেই রৌদ্রময়ের বাইক থেমে গেলো আর তাকে এড়িয়ে সবার প্রথমে অধ্রী ফিতা পার করলো।তার পরে পরেই এলো অরণ্য। সবার শেষে বাইকটা ধাক্কা দিতে দিতে আনলো রৌদ্রময়।এই মূহুর্তে কাননের ইচ্ছা করছে খুশিতে সব চিপস একসাথে খেয়ে ফেলতে।

~ইয়াহু….দোস্ত আমি জিতে গেছি।হুওওর।এবার আমার ট্রিপ ফ্রী।হাহাহা

~ধ্যাৎ,বালের এক গাড়ি।এখনি পেট্রোল শেষ হতে হলো। আর শুন বাংলা ছবির রিনা খানের মতো হাসবি না দাত ভেঙে দিবো।

~দে দে একবার ভেঙে দেখা।

~এ থামবি তোরা?তোরা দুজন আমাকে ধাক্কা দিছিলি।এইটা ঠিক না।

~এ কই ধাক্কা দিছিরে??শুধু একটু লাগিয়ে দিছি।(অধ্রী)

~আবার সেই ভাষা?

ওরা তিনজন নিজের মতো হার-জিত নিয়ে কথা বলছে।কানন ওদের কথায় ইন্টারেস্ট না দেখিয়ে রেললাইনের দিকে এগিয়ে গেলো।রেললাইনের এক ধারে আছে বন।আর এপাশে আছে খোলা মাঠ।কানন সামনে এগোচ্ছে,,,,হঠাৎ সাদা রংয়ের কিছু দেখে চিৎকার দিলো।

~ভূওওওওওওত

(চলবে)

ভূলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here