অতলস্পর্শ,পার্ট_১০_১১

অতলস্পর্শ,পার্ট_১০_১১
জান্নাতুল বিথী
পার্ট-১০

কুশান ভাইয়া আর আমি গাড়িতে বসে আছি।ভাইয়া ড্রাইভ করছে।আমি বসে বসে ভাইয়ার সাথে বকবক করছি আর ভাইয়া চুপচাপ ড্রাইভ করছে।আমার সাথে এক বারের জন্যও কথা বলে নাই।ভাইয়ার সাথে বকবক করতে করতে আমি খেয়ালই করি নাই যে আমরা বাড়ির ঠিক উল্টো রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।এটা দেখেই আমি আৎকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকাই।তার দৃষ্টি সামনে নিবদ্ধ।..

“ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি.??”

ভাইয়া কোনো কথা না বলে ড্রাইভ করতে থাকে মনোযোগ দিয়ে।এবার আমার মনটাই খারাপ হয়ে যায়।আমি ভাইয়ার দিকে মন খারাপ করে তাকাই। ভাইয়ার এক হাত ধরে হালকা টান দিয়ে তার হাতের উপর হাত রেখে বলি..

“ভাইয়া আমি কি কোনো ভুল করছি যার কারনে আপনি আমার উপর রেগে আছেন.??”

কুশান ভাইয়া এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে..

“কই না তো।আমি কি তোকে বলছি যে আমি রাগ করছি বা অন্য কিছু.??

“নাহ কিন্তু আপনি তাহলে আমার সাথে কথা বলেন না কেনো।আমি তো সেই কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছি কিন্তু আপনি মনে হচ্ছে কিছুই শুনেন না।কি হলো আপনার.??”

“তোর প্রতিটা কথা সব সময় আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনি।সো কখনোই এই ধরনের কথা মুখেও আনবি না।আর বাকী রইলো কথা না বলা।ওইটা এমনিই আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তাই চুপ করে আছি।তোর কথা শুনতে ভালো লাগছে।”

কুশান ভাইয়ার কথা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে যায়।আমি গাল ফুলিয়ে বলি..

“তার মানে আমি আপনাকে বিরক্ত করছি।আর আপনি আমার কথায় বিরক্ত বোধ করছেন বলেই চুপ করে আছেন ভালো লাগছে না আপনার।তো সেই কথাটা আগে বললেই পারতেন এতো অভিনয় করার কি ছিলো??”

আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া জোরে গাড়ি ব্রেক কষে। সিটবেল্ট থাকায় এই যাত্রায় বেচে গেলাম।আমি একবার চারপাশে তাকিয়ে দেখি আমরা একটা জন মানবশূন্য গ্রাম সাইড এলাকায় আছি।বাইরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ভাইয়া দিকে তাকাতেই দেখি ভাইয়া স্টিয়ারিং এর উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।আমার কথায় ভাইয়া হয়তো রেগে গেছে।কিন্তু আমি এখানে রেগে যাওয়ার মতো কোনো রিজনই খুজে পাই নাই।তাই ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলি..

“ভাইয়া আমি যা বলছি সত্যি বলছি এখানে রেগে যাওয়ার…”

“জাস্ট সাট আপ জিহা।যে সব কথার কোনো মানে বুঝিস না তা নিয়ে এতো গবেষনা করতে কে বলছে তোকে।??”

আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ভাইয়া জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠে ভাইয়া।আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে এই প্রথম বারের মতো দেখলাম কুশান ভাইয়া আমাকে পুরো নামে ডাকছে।নয়তো সব সময় আমাকে সে জিহু বলেই ডাকতো।ভাইয়া কতো টা না রেগে গেলে তার রাগ কন্ট্রোলে থাকে না।আমার এবার অনেক ভয় করছে।ভাইয়া বাইরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে এনে আমার দিকে তাকায়।তারপর বলে…

“জিহা তুই নিজেও জানিস না আমার কাছে তোর মুল্য ঠিক কতোটুকু।কি বলবো আমি তোকে.?? কথার বলার কোনো অবস্থাতেই নেই এখন আমি।যে মানুষটার একটু কথা শুনার জন্য দিশেহারা হয়ে যেতাম। যাকে একটা মুহূর্ত দেখার জন্য মন চাইতো সে যখন আমার পাশে থাকে কিংবা কথা বলে তখন কেনো আমার বিরক্ত লাগবে জিহু।কেনো.??এন্সার মি.”

ভাইয়ার চিৎকারে আমি কেপে উঠি।নিচের দিকে তাকিয়ে ভাইয়ার বলা কথা গুলো আমি ভাবতে থাকি।ভাইয়া কেনো এই কথা গুলো বলছে।আমাকে দেখতে তার ইচ্ছে করে।আমার কথা শুনতে সব সময় মন চায়। কেনো.??তার মানে কি ভাইয়া আমাকে.??

আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে।তার চোখ মুখ পুরোটাই লাল হয়ে আছে।বেশি রেগে গেলে যা হয় আর কি।ভাইয়া গাড়ি ঘুরিয়ে আবার বাড়ির পথে যেতে থাকে।আমার একবার ইচ্ছে করছিলো তাকে জিজ্ঞেস করি যে আমরা কোথায় যাচ্ছিলাম।কিন্তু সাহসে হয় নাই তার সাথে দ্বিতীয় বারের মতো কথা বলার।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

কেটে যায় আরও তিনদিন।এই তিনদিনে প্রতিটা দিন আবার আমাকে ইমন ডিস্টার্ব করে গেছে।সিনিয়র ভাই কারনে আমি কিছু বলতে পারি নাই।এই তিনদিনের মধ্যে কুশান ভাইয়া একবারের জন্যও আমাদের ফ্ল্যাটে আসে নাই।ধরতে গেলে এই তিনদিনের একদিনও আমি ভাইয়াকে দেখি নাই।আমি তো ভেবেছিলাম কুশান ভাইয়া হয়তো বাড়িতে নেই।কিন্তু বড়মা কে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলছে ভাইয়া নাকি বাড়িতেই আছে।অফিসে কাজের চাপ হয়তো একটু বেশিই যার কারনে ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু আমার তা মনে হচ্ছে না।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে ভাইয়া আমাকে ইগনোর করছে।আমার সাথে ইচ্ছে করেই দেখা করছে না।আমার কিচ্ছু ভাল্লাগে না।সব সময় ইচ্ছে করে একবার কুশান ভাইয়ার সাথে কথা বলি।ভাইয়াকে একবারের জন্য একটু দেখতে ইচ্ছে করে।আমার অনেক কান্না আসছে।সহ্য করতে পারছি না কিছুই।

এখন রাত প্রায় ৯ টা বাজতে চলেছে।আমি বেলকনিতে রেলিয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি।চোখ দিয়ে এক ফোটা জল অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে।আমি জানি না ভাইয়ার জন্য আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো।শুধু জানি তাকে ছাড়া আমার সময় কাটে না।তাকে ছাড়া আমি একেবারেই অচল।হঠাৎ আমার চোখ যায় ভাইয়ার রুমের দিকে।আলো জ্বলছে।তার মানে ভাইয়া এখন বাড়িতে আছে।আমি এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে যাই কুষান ভাইয়াদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্য।লিভিংরুমে এখন কেউ নেই।জিদান ভাইয়া এখনো অফিস থেকে ফিরে নাই।বাবাও অফিসে আর মা হয়তো রুমে আছে।যার কারনে আমি আসার সময় কারো চোখেই পড়ে নাই।
,

আমি ভাইয়ার রুমে আসতেই দেখি কুশান ভাইয়া সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হইছে।কালো ট্রাউজার আর খালি গায়ে গলায় টাওয়াল জুলানো।আমি ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেই।ভাইয়াকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাইয়া আমাকে এখানে মোটেই আশা করে নাই।আমাকে এভাবে হঠাৎ তার রুমে আসতে দেখে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।তারপর নিজেকে কিছুটা সামলে বলে..

“কি চাই এখানে.??”

“ভাইয়া আপনি আমাকে এভাবে ইগনোর করছেন কেনো.??”

“আমি তোকে ইগনোর করতে যাবো কেনো।আমি তোকে ইগনোর করার কে হুমম??নিজেকে এতো ইম্পরট্যান্ট ভাবার কোনো প্রশ্নই উঠে না।এখানে কি তোর.??যা না ভার্সিটিতে যা।ওইখানে তো তোর জন্য কতো জন অপেক্ষা করছে তাহলে আমার কাছে কি তোর।বিরক্ত লাগছে আমার জিহু প্লিজ রুম থেকে বের হয়ে যা।একা থাকতে দে আমাকে একটু প্লিজ।”

কুশান ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া আমার সামনে থেকে সরে বেলকনিতে চলে যায়।

চলবে

অতলস্পর্শ
পার্ট_১১
জান্নাতুল বিথী

পড়ন্ত বিকেলে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে।চারদিকে পাখিদের নীড়ে ফেরার তোড় শুরু হয়ে গেছে।পড়ন্ত বিকেলে পাখিরা যখন পশ্চিম আকাশে উড়ে নীড়ে ফেরার উদ্দেশ্য তখন প্রকৃতির দৃশ্য হয়ে উঠে মনোমুগ্ধকর। আর সেই কখন থেকে ছাদে দাড়িয়ে আমি প্রকৃতির এই মনোরম দৃশ্যকেই উপভোগ করছি।কতো নিখুত ভাবে তৈরি এই দৃশ্য নেই কোনো কৃত্রিমতা। মানুষের মতো এই দৃশ্য কখনো চলনা করতে পারে না।মানুষের মতো অভিনয় করতে পারে না।মানুষ তো তার সারাটা জীবন অভিনয় করতে করতেই কাটিয়ে দেয়।ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার আকাশের দিকে তাকাই আমি।

আজ ভার্সিটিতে যাই নাই আমি। নাঈমা ফোন করে কারন জানতে চাইলেই বলছি আমি অসুস্থ তাই আসতে পারবো না।বাসায় ও একটা বলে কাটিয়ে দিয়েছি।সেই ঘটনার পর রাত গড়িয়ে সকাল এবং এখন বিকেল বেলা।তারপরও আমি কুশান ভাইয়ার বলা একটা কথাও ভুলতে পারছি না।আমার মনে হচ্ছে আমি ভাইয়াকে সত্যিই ভালোবাসি।কিন্তু আমি কি করবো এখন।মানুষটা তো বলেই দিলো আমাকে নাকি তার বিরক্ত লাগে।যার কাছে আমি একটা বিরক্তি কর প্রানী সেই মানুটা আমাকে কি করে ভালোবাসবে।মনে পড়ে যায় আবার ভাইয়ার কাল রাতে বলা শেষ কথাটা..

“আমি তোকে ইগনোর করতে যাবো কেনো।আমি তোকে ইগনোর করার কে হুমম??নিজেকে এতো ইম্পরট্যান্ট ভাবার কোনো প্রশ্নই উঠে না।এখানে কি তোর.??যা না ভার্সিটিতে যা।ওইখানে তো তোর জন্য কতো জন অপেক্ষা করছে তাহলে আমার কাছে কি তোর।বিরক্ত লাগছে আমার জিহু প্লিজ রুম থেকে বের হয়ে যা।একা থাকতে দে আমাকে একটু প্লিজ।”

কথাটা মনে পড়তেই আবার চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।হঠাৎ কোনো কিছুর শব্দে আমি ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসি।আমার ঠিক পেছন দিক থেকেই শব্দটা আসছে।তাই আমি পেছনে ঘুরতেই কুশান ভাইয়ার মুখোমুখি হয়ে যাই।ভাইয়া আমার বরাবর দাড়িয়ে আছে।আর শব্দটা ছিলো ভাইয়া এসেই ছাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।সকাল থেকে আমার বেহায়া চোখ দুটো শুধু তাকেই খুজেছিলো।এখন মনে একটু শান্তি হলো তাকে দেখে।তার দিকে তাকিয়ে আমার মুখে ক্ষীন হাসির রেখা ফুটে উঠার আগেই তা মিলিয়ে যায়।কাল রাতে বলা তার কথা গুলো মনে পড়তেই।আমি চোখ বন্ধ করে আবার উল্টা দিকে ঘুরে দাড়িয়ে আকাশ দেখার অভিনয় করতে থাকি।ভাইয়া এতক্ষন আমার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।আমি বুঝি না যে মানুষটার কাছে আমি বিরক্তিকর প্রানী সে এখন আমার কাছে কেনো আসছে।এখন যদি কিছু জিজ্ঞেস করি তাহলে বলবে আমার চাচ্চুর বাসা আমি যখন ইচ্ছে তখন আসবো তাতে তোর কি.??

হঠাৎ আমার ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাস পড়তেই আমি কেপে উঠি।পেছনে ঘুরে দাড়ানোর ক্ষমতা আমার নেই।কুশান ভাইয়া আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।মুহূর্তেই আমার শরীরে একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায়।ভাইয়া আমার চুলে মুখ গুজে আছে।তার গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে।আমার নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম।আমি চোখ বন্ধ করে ভাইয়াকে অনুভব করতে থাকি।হঠাৎ আমার কাল রাতের কথা মনে হতেই আমার চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।আমি ভাইয়াকে ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেই।

হঠাৎ এমন আক্রমনের জন্য কুশান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।তাই সে ছিটকে কিছুটা দুরে চলে যায়।আমার দিকে তাকাতেই আমি বলি…

“লজ্জা করে না আপনার এভাবে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে।অবশ্যই লজ্জা করার কথাও না যে ছেলে ছোট বেলা থেকে আমেরিকায় বড় হয়েছে সে তো এমন করবেই যখন তখন এভাবে জড়িয়ে ধরতেই পারে স্বাভাবিক।কিন্তু মিস্টার কুশান চৌধুরি আপনি ভুলে যাবেন না এটা বাংলাদেশ।আমেরিকা না তাই আপনার এসব মেয়েদের সাথে ঘেসাঘেসি করাটা এখানে মানায় না।”

কিছুটা জোরেই আমি কথাটা বলি।আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া কিছুটা হকচকিয়ে যায়।ও যে এমন কথা বলবে সেটা কুশান জীবনেও ভাবে নাই।তাই অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে..

“কি বলস এসব তুই জিহু.??মাথা ঠিক আছে তোর.??”

কুশান ভাইয়ার কথা শুনে আমি প্রচন্ড রেগে যাই।হঠাখ ভাইয়ার কলার চেপে ধরে বলি..

“একদম আমাকে এই নামে ডাকবেন না।আমার নাম জিহা আর ওই নামেই আমাকে ডাকবেন।আমাকে জিহু তো তারাই বলবে যাদের কাছে আমি কখনোই বিরক্তিকর প্রানী হয়ে থাকবো না।যারা আমাকে মনে প্রানে ভালোবাসে একমাত্র তাদেরই এই নামে ডাকার অধিকার আছে।আর আপনার সেই অধিকার নেই মিস্টার কুশান চৌধুরি। কজ আপনি সেই অধিকার টুকু হারিয়েছেন।কারো বিরক্তির কারন হয়ে থাকতে চাই না আমি।”

শেষের কথাটা অনেক জোরে চিৎার করে বলি।আর কান্না করে দেই।আমি তাড়াতাড়ি ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে যাই।
,

কুশান এখনো হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে।সব কিছু যেনো তার মাথার উপর দিয়ে গেলো।কিছু একটা হবে এটা জানতে সে।কিন্তু জিহা যে এমন কিছু করবে বা বলবে তা স্বপ্নেও ভাবে নাই সে।কালকে রাতে যে সে কতো বড় ভুল করলো তাই ভাবছে।কিন্তু তার নীল পরীর মুখ থেকে যে শেষ পর্যন্ত এই কথাটা শুনতে হবে তা কখনোই ভাবে নাই।কুশান এখন বুঝতে পেরেছে যে সে তার অজান্তেই তার নীল পরীকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।ভাবতেই তার চোখ ছলছল করে উঠে।তার এখন মাথাটাকে ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু সে তো তার নীলপরীর সাথে এমন ব্যবহারের জন্য নিজেকে শাস্তি দিয়েছেই।তারপরও কি করবে সে এখন তাই ভাবছে..

আমি রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ফ্লোরে বসে হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে থাকি।আমি কি তার সাথে এভাবে কথা বলতে ছেয়েছি.??তাহলে কেনো করলাম এমন।কিন্তু আমারও বা কিই বা করার ছিলো।আমার যে প্রচুর রাগ উঠেছিলো।এসব ভেবেই কান্না করতে থাকি আমি।

রাত ঠিক ১০ টার দিকে আমার রুমের দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।আমি উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি ছিটিয়ে দরজা খুলে দেই।দরজার পাশেই হেলান দিয়ে জিদান ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে বলি..

“কি হলো ভাইয়া কিছু লাগবে তোমার.??”

ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে..

“নাহ তেমন কিছুই না।এখন বের হতে পারবি আমার সাথে।??”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।এতো রাতে ভাইয়া বের হতে বলছে কেনো তাই ভেবে পাচ্ছি না।আমি ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলি..

“কেনো ভাইয়া.??কোথায় যাবে এতো রাতরে.??”

“ট্রিট দেবো তোকে ভুলে গেছিস নাকি তুই সব।আসলে ব্যস্ততার জন্য সময় পাই না তো তাই এখন বের হতে চাইছি।বাট যদি তোর কোনো সমস্যা থাকে তাহলে যেতে হবে না।”

“আরে না না সমস্যা হবে কেনো।আমি আমার ট্রিট পাবো এটাই তো অনেক।তুমি ১০ মিনিট অপেক্ষা করো আমি তৈরি হয়ে আসছি।”

আমার কথা শুনে ভাইয়া আচ্ছা বলে চলে যায়।আসলে ভাইয়া নাকি মিতুকে পছন্দ করে।আর ওকে বিয়ে করতে চায়।এটার জন্য আমি একটু মিতুকে যেনো রাজি করাই।আমিও কোনো কিছু না ভেবেি মিতুকে রাজি করানোর পেছনে লেগে যাি।কারন মিতুকে আমার অনেক পছন্দ।আমার বন্ধ বলে কথা।ওকে রাজি করানোর পর ওর ফ্যামিলিকে জানানো হয়।তারাও এক কথায় রাজি হয়ে যায়।সেদিন ভাইয়া এতোই খুশি হয়েছিলো যে আমাকে বলছে ট্রিট দেবে।আর তাই এখন নিজের কথা রাখতে আসছে।

ঠিক ১০ মিনিট পর আমি রেডি হয়ে নিচে নামতেই ভাইয়া আমাকে মেসেজ করে বলে সে বাহিরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে আমি যেনো বাহিরে চলে যাই।তার মেসেজ দেখে আমি মাকে বলে বের হয়ে বাহিরে আসতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।…

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here