Crush Villain,পর্ব ২০
লাবিবা ওয়াহিদ
– উফফফ আপনার এই সানি সানি বলা অফ করবেন? আমার নাম সানি না সানিয়া! সেদিন আপনারে মাতাল অবস্থায় ফেলে আসাই উচিত ছিলো! অন্তত আপনার মুখে এই আমার নামের আকিকা হতো না!!
আয়াফ মুচকি হেসে বলে,”ওহ তাই নাকি? তা তোমাকে কি আমি হাত পা ধরে ক্লাবে এনেছিলাম? না তুমি নিজে থেকে এসেছো!”
– বললাম তো জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করে ফেলেছি এখন ছাইড়া দে বাপ কাইন্দা বাচি!(দুই হাত প্রসারিত করে)
– আমি তোমার বাপ নই সানি তোমার #Crush_Villain!(বাকা হেসে)
সানিয়ার বিরক্তি ধরে গেলো আয়াফের প্রতি! ইদানীং এতো পরিমাণে জ্বালাচ্ছে সানিয়া শান্তিমতো বসতেও পারেনা। সেইরাতের ঘটনায় আমাদের প্লান সাকসেসফুল হলেও টাকলা দাড়োয়ানে মাথায় বাজ ফেলসিলো! পরেরদিনই যা অঘটন ঘটানোর ঘটিয়েছিলো। বাবা মা খুব রেগে ছিলো, কেন এতো রাতে বেরিয়েছি তার জন্য তাও এরকম মিথ্যা বলে। কোন ছেলে বাসা থেকে কোথায় নিয়ে গেছে ব্লা ব্লা ব্লা। শেষে আলিজার কথা বলি যে আলিজা অসুস্থ ছিলো ওর বাসায় কেউ ছিলো না সেই জন্য রাতে কল করে জানাতেই এই কৌশল অবলম্বন করি! এই কথা বলে সব সামলাতে নিলেও ঘুরেফিরে সেই তিনয়ের কথা ঠিকই বললো! পরে বললাম আলিজার পাশের ফ্লাটে একটা ছেলে থাকে আর তার গাড়ি আছে তাই আলিজা আমার জন্য তাকে পাঠিয়েছিলো। এভাবে নানাভাবে কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে তাদের শান্ত করেছিলাম। এরপর আর আয়াফের সাথে যোগাযোগ হয়নি। ২ সপ্তাহ পর ভার্সিটি আসি ভর্তি-টর্তির সব কাজ কমপ্লিট করে। এর মাঝে রুহিও এডমিশন দিয়েছে এবং চান্সও পেয়েছে। তবে সমস্যা সেটা না সমস্যা হলো আয়াফ নামক জ্বালাতন টা। যেদিন থেকে ভার্সিটি যাওয়া শুরু করেছি তখন থেকে আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। এর জ্বালায় একদিন ভার্সিটি মিসও দিতে পারিনা! ফোন দিয়ে নানানরকম থ্রেড দিয়ে বাসা থেকে বের করিয়েই ছাড়ে! আগে তো মুখে মুখে ভিলেইন বলতাম এই হালারে কিন্তু এখন সিরিয়াস ভিলেইনে রূপ নিসে! উফফ এ ক্রাশ না বাঁশ ভেবে পাইনা। এইতো আজকের ঘটনা, আজ ডেকে পাঠয়েছিলো কিন্তু দেখা করতে যাইনি! এর জন্য ফুল ক্লাসভর্তি স্টুডেন্ট এর মাঝ থেকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে হলরুমে। এসব জ্বালাতন সহ্য করা যায় আপনারাই বলেন? মান-ইজ্জত সব শেষ!
★
আবরার অনেকদিন মানিশার পিছে ঘুরে কিন্তু মানিশা তাকে বরাবরের মতোই এভয়েড করে। এবার আবরার মাত্রাতিরিক্ত রেগে যায়। মানিশার হাত ধরে টেনেটুনে পার্কিং এ নিয়ে যায়। মানিশা ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছিলো। গাড়িতে জোর করে ঢুকিয়ে আবরারও উঠে বসে। তারপর গাড়ি চালিয়ে ডিরেক্ট নিজের বাসায় চলে যায়। সারারাস্তায় মানিশা চেঁচিয়েছে যার কারণে গাড়ির গ্লাস সব লাগিয়ে লাউড স্পিকারে গান চালু করেছে যাতে মানিশার চিৎকার বাইরে না যায়! শেষ বাসায় এসে পৌঁছাতেই আবার টেনেটুনে বাড়ির ভেতরে নিয়ে সোফায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে মানিশাকে আবরার! রাগে আবরারের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে! সারাবাড়িতে কেউ নেই এটা মানিশা বাড়ির নিস্তব্ধতা দেখেই বুঝতে পারে! হঠাৎ মানিশা কোনো কথা না বলেই ডুকরে কেঁদে উঠে। মানিশার কান্না দেখে আবরার বোকা বনে গেলো। হঠাৎ মানিশা এমন মরণ কান্না কেন জুড়ে দিলো? আবরার ভ্রু কুচকে মানিশাকে বোঝার চেষ্টা করছে। মানিশা মিনুতির সুরে বলে,”প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন! প্লিজ এতোটা নির্দয় হবেন না দোহাই লাগে! আচ্ছা আমি বিয়েতে রাজি তবুও প্লিজ আমার সম্মান নর্দমায় ফেলবেন না প্লিজ!!”
আবরার চোখ বড় বড় করে তাকালো। “সম্মান” মানে কি হঠাৎ এসব কি আবোলতাবোল বলছে মানিশা? আবরার মানিশার দিকে এক পা এগোতেই মানিশা আরও জোরে কেঁদে বলে,”না কাছে আসবেন না আপনি! দোহাই লাগে কাছে আ..আসবেন না!!”
কাঁদতে কাঁদতে মানিশার ঢেকোর উঠে যায়। আবরার কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়েই ভেবে বুঝলো মানিশা কি মিন করছে। আবরার অবাক হয়ে মানিশার দিকে তাকিয়ে রইলো! এখনো ছুঁয়েও দেখলো না আর এই মেয়ে এতো গভীর কিছু ভেবে ফেললো স্ট্রেঞ্জ। আবরার বুঝলো এভাবে একা একটা বাড়িতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে থাকলে খারাপ কিছুই হবে কিন্তু মানিশা তো আবরারকে চিনে তাহলে কেন সে আবরারকে ভুল বুঝলো? আবরার মানিশাকে টাইম দেবে ভেবে দূরের একটা সোফাতে গিয়ে বসলো আর মনোযোগ দিয়ে মানিশাকে দেখতে লাগে। মানিশা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়। আবরার আনমনে বলে ফেলে,”আমাকে এইটুকু বিশ্বাসও করতে পারলে না মানিশা?”
মানিশা ছলছল দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকায়। আবরারের কথায় সে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তারপর কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলে। আবরারও আর উত্তর আশা করেনি। কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করে তাদের মাঝে। নিরবতা ভেঙে মানিশা বলা শুরু করে,” আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগের কথা। ভার্সিটিতে নতুন ছিলাম। তখনই আয়াফদের সাথে পরিচয় হয় এবং ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে ওদের সাথে। এমনই আরেকজনের সাথেও পরিচয় গঠে তবে বন্ধু হিসেবে নয় ভালোবাসার সঙ্গী হিসেবে। ”
বলেই মানিশা থামলো। আবরার হা করে মানিশার দিকে তাকিয়ে রয়। মানিশা নিচের দিকে তাকিয়ে আবার বলা শুরু করে,
-“ছেলেটার নাম নেহাল। একদিন হুট করেই পরিচয় তারপর কিছুটা ক্লোজ হওয়া তারপর ভালোবাসার সম্পর্ক হওয়া। বেশ ভালোই কাটছিলো সময় টা। নেহাল আমাকে সব দিয়েছে মুখ ফুটে না চাইলেও। রিলেশনের কথা টা আয়াফরা কেউ-ই জানতো না বলা যায় নেহাল জানাতে মানা করেছিলো তাই কাউকে জানাইনি। রিলেশনের ছয়মাসের মাথায় নেহাল প্রস্তাব রাখলো তার সাথে যেনো আমি এক রাত স্পেন্ড করি কিন্তু আমি রাজি হইনি। এভাবে টানা এক মাস চেষ্টা করেও আমার মুখ থেকে হ্যাঁ শব্দটি উচ্চারণ করাতে পারেনি। আমার একটাই কথা ছিলো,”বিয়ের আগে এসব কিছুই হবে না এমনকি আমি হতেও দেবো না!”
যখন রাজি হচ্ছিলাম না তখন বলে,
– ঠিক আছে তোমায় আর জোর করবো যা হবে বিয়ের পরেই।
বলেই নেহাল চলে যায়। আমি সেদিন মুচকি হাসি আর সেদিনই আয়াফদের সব বলে দেই যে নেহালের সাথে আমার রিলেশন আছে। তারা সবাই কংগ্রেস জানিয়েছিলো সেদিন। বিকালের দিকে নেহালের একটা ফোন আসে যে সে নাকি একটা পার্টি রেখেছে আমিও ইনভাইটেট সেই পার্টিতে। সেদিন আমি, নিশি, আয়াফ আর নীল গিয়েছিলাম পার্টিতে। নেহাল আমাকে একটা জুস খাওয়ায় এতে আমার মাথা কেমন চক্কর দিয়ে উঠে চারপাশটা কেমন ঝাপসা লাগছিলো ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিলাম না। নেহালকে খারাপ লাগার কথা বলতে সে পার্টিহলের উপরে একটা রুমে নিয়ে গেলো আর আমায় বিছানায় বসালো। মাথা চক্করের কারণে আমি দুই-হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরেছিলাম আর সামনে নেহালের দিকে ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। নেহাল দরজা লক করে নিজের জ্যাকেট আর টাই খুলে আমার দিকে এগোতে থাকে, একসময় শার্টের বোতাম খুলে আমার উপর ঝাপিয়ে পরে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই…”
বলেই মানিশা কাঁদতে লাগলো। নাক টেনে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”সেইরাতে অনেক মিনতি করেছিলাম যাতে করে আমায় ছেড়ে দেয় কিন্তু না সে আমাকে লুফে নিয়েছে। চিৎকার করার কারণে আমার তলপেটে জোরে আঘাত করে যার ব্যথায় আমি আরও নিস্তেজ হয়ে যাই বাকশক্তি যেনো হারিয়ে যায়। আস্তে আস্তে আমি জ্ঞান হারালাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলাম আমি এক সাদা চাদরে জড়িয়ে নেহালের নগ্ন বুকে আষ্টেপৃষ্টে আছি। নিজের দিকে খেয়াল করতে দেখলাম আমার শরীরে ১ সুতা পরিমাণ জামার ছোঁয়া নেই…..”
বলেই চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো মানিশা। একটা মেয়ের সতীত্ব-ই হচ্ছে তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সেখানে সে এভাবে নিজের সতীত্ব হারিয়েছে তার থেকে কষ্টের কিছু পৃথিবীতে আর কি আছে? হ্যাঁ সে ধর্ষিত হয়েছে। তার গায়ে কলঙ্কের দাগ লেগেছে যা এতো সহজে মুছে যাওয়ার নয়। আবরারের চোখেও জল! কখনো ভাবেনি নিজের ভালোবাসা এতোটা কষ্টের মুখোমুখি হয়েছে। মানিশা বেশ কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে বলতে লাগে,”তার পর থেকে আমি নিজেকে গুটিয়ে নেই। নেহালও আমার খোঁজখবর রাখেনি। রেখেই বা কি করবে সে? তার যা পাওয়ার সে তো পেয়েই গেছিলো। এভাবে মাসখানেক নিজেকে ঘরবন্দি রেখেছিলাম, যখনই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলাম তখনই একটা সুসংবাদ আসে যে আমি মা হতে চলেছি! তখন যেনো নতুনভাবে বাচার অনুপ্রেরণা পেলাম। হাজারো ঘৃণা নিয়ে নেহালের সাথে দেখা করলাম এবং বাচ্চাটার কথা বললাম। ভেবেছিলাম বাচ্চার কথা শুনে নেহাল শোধরে যাবে কিন্তু না! সে তখনই বলে দিলো বাচ্চাকে মেরে ফেলতে।
– এ তুমি কি বলছো নেহাল? সে তোমার সন্তান এবং তোমারই একটা অংশ কি করে আমি তাকে মেরে ফেলবো? আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের কর্মফলের শাস্তি সে কেন পাবে?
– এতো কথা কিসের? তুমিও যেমন এঞ্জয় করেছো তেমনই আমিও এঞ্জয় করেছি যাইহোক এখন এই বাচ্চা রাখবা কি মেরে ফেলবা তোমার ব্যাপার তবে হ্যাঁ নেক্সট টাইম ভুলেও এই বাচ্চা নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করতে আসবা না!
বলেই নেহাল চলে যাচ্ছিলো এমন সময় মানিশা চিৎকার করে রেগে বলে,”ছিহ নেহাল ছিহ! তুই এতোটা কাপুরুষ যে নিজের বাচ্চাকে অস্বীকার করলি? উপরে একজন আছে নেহাল মনে রাখিস! তোর এইসব কুকর্মের জন্যই তোর মাকে অনেক আগেই উপরওয়ালা নিয়ে নিয়েছেন যাতে করে তোর কুকর্ম দেখে যেনো থুকে থুকে না মরে!”
মানিশার কথা নেহাল এতো রেগে গেলো যে পিছে ফিরে মানিশার তলপেটে হাটু দিয়ে এতো জোরে আঘাত করলো যে মানিশা তলপেটে দুইহাত দিয়ে চিৎকার করে বসে পরলো। নেহাল রাগে ফোস ফোস করতে করতে বললো,”নে এবার বুঝ এই কাপুরুষ তোর সাথে কি করতে পারে? আর কখনো তুই আমার সামনে আসবি না!”
বলেই হনহন করে চলে গেলো মানিশা। আর মানিশা সেখানে পড়ে ব্যাথায় কাঁতরাচ্ছে আর তার গোঙ্গানি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। একজন স্টুডেন্ট সেখান দিয়ে যাচ্ছিলো দূর থেকে মানিশাকে চেঁচাতে দেখে আয়াফকে কল করে বলে। তখনই আয়াফরা এসে আমায় খুব জলদি হসপিটাল নিয়ে যায়।
যখন জ্ঞান ফিরে তখন একটা স্টিলের ট্রেতে সাদা কাপড়ে জড়ানো একটা ছোট্ট প্রাণ দেখতে পেলাম। নাহ প্রাণ নয় মৃত শিশু। হাতগুলো বোঝা যাচ্ছিলো না পা বোঝা যাচ্ছিলো তবে পায়ের আঙুলগুলো স্পষ্ট ছিলো না শুধু মাথাটাই দেখছিলাম! সন্তানটার দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। যাকে বাচানোর জন্য আমার এতো লড়াই সব নিমিষেই শেষ করে দিলো তারই পিতা? আচ্ছা বাস্তবতা অন্যরকম আনন্দময় হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো? না তো! আমি তো নিজহাতে সন্তানকে বড় করতে চেয়েছিলাম! কেন নিজের সন্তানকে হারালাম?”
মানিশা কাঁদতে কাঁদতে যেনো পাথর হয়ে গেলো। পাথরের নেয় আনমনেই কথাগুলো বললো সে। আবরার চোখে পানি নিয়ে কিছু না ভেবেই মানিশাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। মানিশার তাতে কোনোরকম ভাবান্তর নেই!
হঠাৎ মানিশার ফোন আসে। আবরার মানিশাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। সে শান্ত দৃষ্টিতে ফোনটা হাতে নেয় এবং ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই তার চেহারার ভঙ্গি বদলে যায়। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে কানে দেয়। কিছুক্ষণ ওপাশ থেকে কে কি বলতেই মানিশা ঘাবড়ে যায় এবং সাথে সাথে ফোন কেটে বলে,”আবরার দয়া করে আমায় বিয়ে করুন আমি রাজি আছি। এই মুহূর্তে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই!”
চলবে!!!
(মানিশা এবং আবরারের বিয়ের অগ্রিম দাওয়াত রইলো সবার।)