Crush Villain,পর্ব ০৫
লাবিবা ওয়াহিদ
নীল ড্রাইভ করছে আর নীলের পাশে মানিশা বাইরের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। কেউ বুঝতে না পারলেও নীক বেশ ভালো বুঝেছে কারণ মানিশা এদিকে একবারও চোখ ফেরায়নি। পিছে আয়াফকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করে চলেছে যাহির আর তিনয়। আয়াফের রাগে যেনো মাথা ফেটে যাচ্ছে। হুট করে আয়াফ বলে উঠে,”মানিশা তুই কেন কাঁদছিস ওই অমানুষটার জন্য। মানা করেছি না তোকে!”
মানিশা চট করে চোখ মুছে পিছে ফিরে তোতলিয়ে বলে,”কককই? আমি তো কাঁদছিনা!”
– তুই মুখে স্বীকার না করলেও তোর লাল ফোলা চোখ ঠিকই বকে দিচ্ছে সবটা।
মানিশা চোখ নামিয়ে ফেলে আয়াফের থেকে তারপর আবার সামনে ফিরে বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়। কি বলবে সে তার তো কোনোকিছু বলার ভাষাই নেই। বারবার নিজের কালো অন্ধকার অতীত থেকে নিজেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই পারেনা কোনো না কোনো ছুঁতোয় সেটা তাকে মনে করিয়ে দিবেই। সে যে কেউ-ই হোক। কবে তার এই কষ্টের সমাপ্তি হবে জানে না সে।
★
কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি ২০ মিনিট হবে। এখনো ওই টাকলা স্যার আমায় ক্লাসে ডাকছে না। সামনে আয়াফ দাঁড়িয়ে আমার মজা উড়াচ্ছে ভালোমতো৷ আমি পারছি না আয়াফটাকে ওই টাকলার দৌড়ানি খাওয়াই বজ্জাত ক্রাশ! বেগুনের মতো এটারে গরম তেলে ভাজতে পারতাম শান্তি হতো ধুর! আয়াফ হাসতে হাসতে বলে,”তোমাকে এই কান ধরা অবস্থায় বেশ সুইট লাগছে।”
“সুইট” বলায় কয়েক মিনিটের জন্য থেমে গেলাম। আবার মাথায় রাগ চড়ে বসে এবং জোরে চেঁচিয়ে বলি,”সুইট মাই ফুট! আপনি ইচ্ছা করে আমাকে এভাবে কান ধরিয়ে রেখেছেন তাইনা?”
আয়াফ হাসতে হাসতেই মাথা নাড়িয়ে “না” বোঝায়। তারপর বলে,”এস.আলী স্যার নিজে থেকেই তোমায় পানিশমেন্ট দিয়েছে এইটা তো জানো নিশ্চয়ই কেন?”
বলেই হাসতে হাসতে চলে গেলো কারণ কিছুক্ষণের মাঝেই ক্লাস থেকে এস.আলী স্যার বের হবে। এদিকে আমি রেগে বিড়বিড় করে আয়াফ বজ্জাতটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ছি। ঠিক ৫ মিনিট পর এস.আলী স্যার বের হয়। ড্রোনাল ট্রাম্পের মতো একটা চাহনি দিয়ে বলে,”পরের বার থেকে অংক করতে না পারলে দেখিও কি করি!”
বলেই হনহন করে চলে গেলো। পেছন থেকে তার টাকলা মাথা ফাটানোর মতোই হাত দিয়ে ইশারা করে ক্লাসে চলে গেলাম। মাথায় ভালোরকম প্লান দেখা দিয়েছে। আলিজাকে চেঁচিয়ে বলি,”কুত্তি মাইয়া, তুই ম্যাথ জানতি তবুও ক্যান দিলিনা হ্যাঁ? এখন তো মনে হচ্ছে শত্রুও তোর থেকে ভালো।”
আলিজা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আমি কি করতাম ওই আয়াফ ভাই-ই তো নিষেধ করেছে।”
– বাব্বাহ! ১ সপ্তাহ আগে যার ভালোবাসায় চুম্বকের লাফাচ্ছিলো আজ তার মুখে ভাই!! লাইক সিরিয়াসলি?
– উফফফ শাট আপ সানিয়া! আমি কোন দুঃখে ভালোবাসতে যাবো, আয়াফ ভাই আমার ক্রাশ ছিলো এর বেশি কিছু না!
আমি রাগি চোখে আলিজার দিকে তাকালাম। মন চাচ্ছে তো চোখ দিয়ে গিলে খাই। বলে কি ফহিন্নি? এতোদিন ক্রাশরে জিজু ডাকার কষ্টে মরতাসিলাম আর এখন শুনি কি না মাইয়া খালি ক্রাশ খাইসে? এইরে আমি এসব কি ভাবছি ধুর রাগে মাথাটাই পুরো গেছে। কুল সানিয়া কুল!
ভেবে চোখ বন্ধ করে কয়েকবার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তারপর বলি,”আচ্ছা এই টপিক বাদ দে। রোজা কোথায়?”
– তুই ক্লাসে আসার আগেই তো ছিলো হঠাৎ কই চলে গেলো?
এমন সময়ই রোজা এসে বলে,”এইতো আমি হাজির। আসলে মানিশা আপুর কাছে একটা খাতা ছিলো আমার সেটা নিয়ে এসেছি।”
– ওওও আচ্ছা চল ক্যান্টিনে যাই খুদা পেয়েছে আর পায়েও অনেকটা ব্যথা করছে উফফফ!
– আগে ক্যান্টিন না করে মেডিকেল কর্ণারে যাই সেখান থেকে পায়ের জন্য একটা মলম কিনে পায়ে লাগিয়ে নিস।
– কথাটা মন্দ বলিসনি চল তাহলে সেখানেই আগে যাই।
বলেই নিচের দিকে যেতে লাগি। কিন্তু পায়ের যা অবস্থা ঠিকমতো হাটতে পারছি না মনে হচ্ছে পায়ে যেনো মরিচীকায় ধরেছে উফফ কি যন্ত্রণা। অনেক কষ্টে নিচে নামলাম। কেন যে মেডিকেল কর্ণারটা অন্য ভবনে দিলো ধুর সেখানে গিয়ে আবার শিঁড়ি দিয়ে উঠো নামো ভালোলাগে না আর এসব জ্বালা। আয়াফকে শিক্ষা দিতে পারতাম ঠিকমতো তাহলেই হতো এক সেকেন্ড, উমমমম…. ভালো একটা আইডিয়া তো দাঁড়া না ব্যাটা তোরেও আমি একই ফাদে ফেলবো।
এসব ভাবতে ভাবতেই মাঠ দিয়ে আরেক ভবনে যেতে লাগি।
★
যাহির- মেয়েটার নাম সানিয়া ইবনাথ। সামনের যে আবাসিক এলাকা আছে না সেখানেই ওর বাসা। বাবার একটা বিজন্যাস আছে। এর বেশি কিছু?
– না এইটুকুই যথেষ্ট। মেয়েটাকে দেখেও মনে হয়নি যে সে একজন বিজন্যাসমেনের মেয়ে। আচরণ, চলাফেরা ফুল সাধারণ।
তিনয়- কেন রে আয়াফ প্রেমে পড়লি নাকি হুম?(আয়াফকে গুতিয়ে)
আয়াফ তিনয়ের পিঠে জোরে চাপড় মারলো আর রেগে বলে,”কিসব ইডিয়েটের কথা বলছিস তুই?”
তিনয় নিজের বাম হাত উল্টিয়ে পিঠের দিকে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে,”সত্যি বললেও দোষ হয়ে যায় এখন!”
– কথা অযৌক্তিক আর ভিত্তিহীন হলে তো দোষ হবেই।
বলতে বলতেই হঠাৎ নীলের চোখ যায় মাঠের দিকে। রোজা আর আলিজা সানিয়াকে ধরে ধরে ওই বিল্ডিং এ নিয়ে যাচ্ছে। নীল সেদিকে তাকিয়েই আয়াফের কাধে হাত রেখে বলে,”দেখ!”
আয়াফ নীলের দৃষ্টি অনুসরণ করে মাঠের দিকে তাকায়। আয়াফ ভ্রু কুচকালো তারপর হাসতে হাসতে বলে,”এস.আলী স্যার তো আমার রিভেন্স সুন্দরভাবেই নিয়ে নিলো বাহ!”
সবাই হতভম্বের মতো তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। যাহির, তিনয় আর নীলের ধারণা আয়াফ অতিরিক্ত করছে। শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েই চলেছে। নীল আয়াফের কাধে হাত রেখে বলে,”তোকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।”
– কি কথা?
– সেদিন লেটার টা সানিয়া তোকে দেয়নি আলিজা দিয়েছিলো।
সাথে সাথে আয়াফের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো। তারপর নীলের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে,”কিযে বলিস না সেদিন মিথিলা নিজে সানিয়ার খাতার সাথে চিঠির লেখা মিলিয়ে দেখালো আর তুই বলিস কি না সানিয়া দেয়নি দিয়েছে তার ফ্রেন্ড! হাসালি।”
– দেখ আয়াফ আমি অত্যন্ত সিরিয়াস হয়েই বলছি সানিয়া তোকে লেটার দেয়নি আলিজাই দিয়েছে সানিয়া শুধু লিখে দিয়েছিলো কারণ তার লেখা সুন্দর। তুই শুরু থেকেই অনেক ভাবে মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে চলেছিস এখন প্লিজ এসব অফ কর!!
– কিভাবে অফ করবো তুই বল! হ্যাঁ মানলাম আমি ওকে ভুল করে চড় মেরেছি কিন্তু ওই মেয়ে তো আরও এক্সপার্ট! পরেরদিনই আমায় চড় মেরেছে তারপর সবার সামনে নানানভাবে অপমান করেছে কি ভাবলি তুই ওকে এতো সহজে ছেড়ে দিবো?
– আয়াফ প্লিজ বুঝ! সেদিন তুই ওকে ভুল করে চড় মেরেছিস আর সানিয়াও তোকে ভুল করে চড় মেরেছে এতেই তো ব্যাপারটা মিটমাট তাইনা? তবুও কেন তুই এর মাঝে আরও ঝগড়ার রাস্তা বানাচ্ছিস? দেখ দোস্ত আমরা তোর ভালো জন্যই বলি প্লিজ এগুলা ঠিক না তাই জাস্ট ইগনোর!
– আমি পারবো না যতোই বুঝাস না কেন চড় কেন মারবে ওয়?
হঠাৎ নীল বলে উঠে,”তোর কি মনে হচ্ছে না তুইও নেহালের মতো করে প্রতিশোধটাই বেশি বড় করে দেখছিস?”
সাথে সাথে আয়াফ চুপ হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ তাদের মাঝে নিরবতা বিরাজ করলো। নিরবতা ভেঙে আয়াফ বলে,”চল!”
যাহির অবাক হয়ে বলে,”কই?”
– মেডিকেল কর্ণার!
★
মানিশা নিশিকে খুঁজতে গিয়ে মেডিকেল কর্ণারে কিছু স্টুডেন্টদের চেকআপ করতে দেখে। নিশিকে সেই অবস্থায় ডিস্টার্ব না নিশি সেখান থেকে এসে বাকিদের খুঁজতে লাগে। এদিক সেদিক খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খায় আর সাথে সাথে ছেলেটার হাতে থাকা বইগুলো পরে যায়। মানিশা “সরি” না বলে রেগে বলে,”চোখ কি পকেটে রেখে ঘুরেন দেখতে পাননা সামনে কেউ আছে কি নেই?”
ছেলেটা নিচে বসে বইগুলো হাতে নিতে নিতে মানিশার দিকে তাকিয়ে চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটা নাকের ডগা থেকে চোখের সামনে নিয়ে বলে,”আমার হাতে তো এতোগুলা বই ছিলো আমি তো সামনে দেখতে পাইনি তবুও সরি!”
মানিশা ছেলেটার বোকা ফেস আর বোকা বোকা কথা শুনে হা হয়ে যায়। এই যুগেও এমন বোকা টাইপ আছে ভাবতেই অবাক লাগছে তার। ছেলেটা ব্যাগের মধ্যে কয়েকটা বই ঢুকিয়ে হাতে অবশিষ্ট গুলো নেয়। মানিশা নিজের অজান্ততেই বলে ফেলে,”সরি আসলে আমারই দেখার উচিত ছিলো।”
ছেলেটা মুচকি হেসে বলে,”কোনো ব্যাপার না!”
– আপনার নাম?(মুখ ফোস্কে)
ছেলেটা আগের মতো করেই বোকা চাহনিতেই বলে,”আবরার আজাদ!”
বলেই আবরার কোনো কথা না বলে চলে গেলো আর মানিশা হ্যাবলার মতো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। এখনকার যুগের বেশিরভাগ ছেলেরা সারাক্ষণ মেয়েদের সাথে একটা কথা বলার জন্য অথৈ হয়ে থাকে আর আবরার সেখানে সুযোগ পেয়েও সুযোগকে গুরুত্ব দিলো না? অদ্ভুত তো!
চলবে!!!