গাঙচিল,পর্ব_১৩
লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
২০.
বাইরে থেকে সমুদ্রের গর্জন কানে আসছে।কানে মৃদু ঝংকার তুলে যাচ্ছে।সেই সাথে মনে শান্তি যোগানো কেমন কুলকুল ধ্বনি।অহি বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার সামনে দাঁড়াল।ডান হাতে মসৃণ পর্দা সরিয়ে কাচ ঠেলে সরাতেই স্নিগ্ধ বাতাস ছুঁয়ে গেল।সে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ মুত্ত শ্বাস নিল।
চোখ খুলে বাইরে তাকাল।জানালা দিয়ে সমুদ্রের অনেকখানি দেখা যাচ্ছে।কেমন হালকা নীল জলরাশি।গোধূলি সন্ধ্যার লাল লাল আভা বিচ্ছুরিত হয়ে সেই জলরাশির উপর পড়েছে।কি সুন্দর লাগছে দেখতে!
দরজায় মৃদু টোকা পড়ছে।রোদ্দুর ফিরেছে হয়তো।অহি জানালা থেকে সরে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
সকাল দশটার বাসে তারা কক্সবাজার রওনা দিয়েছিল।বিকেলের দিকে পৌঁছে গেছে।এসেই লম্বা এক ঘুম দিল সে।দূর্বল শরীর নিয়ে অহির জার্নি করার ইচ্ছে ছিল না।কিন্তু রোদ্দুরের রিকুয়েষ্ট ফেলতে পারেনি।শেষমেশ রাজি হয়েছে।
দরজার উপর হাত রেখে অহি আলতো স্বরে বলল,
—“কে?”
ওপাশ থেকে কেউ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল,
—“তোমার এসআই!”
অহি কিছু বলল না।দরজা খুলে সরে দাঁড়াল।রোদ্দুরের দিকে ভুলেও তাকাল না।রোদ্দুরকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে বিছানার পাশে রাখা লাগেজ খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
রোদ্দুর কাগজে মোড়ানো ব্যাগটা লুকিয়ে বালিশের নিচে রেখে ছোট্ট টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল।তার এক হাত ভর্তি খাবারের প্যাকেট।বিকেলবেলা পৌঁছে শাওয়ার নিয়ে সে বাইরে বের হয়েছিল।সন্ধ্যার সময় ফিরলো!
—“অজান্তা,খাবার এনেছি।”
রোদ্দুরের আগ্রহ ভরা কন্ঠে অহির কোনো হেলদোল হলো না।সে লাগেজে কাপড় খুঁজতে ব্যস্ত!সাবধানে কাপড়ের তলদেশ থেকে সাদা রঙের সিল্কের শাড়ি বের করলো অহি।রোদ্দুর বিয়ে উপলক্ষে তাকে আটটা শাড়ি গিফট করেছে।
অহি কাপড়চোপড় হাতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতে রোদ্দুর এগিয়ে এসে বলল,
—“এক ছটাক রক্ত শুকিয়ে, সাহস সঞ্চয় করে ভোরবেলা কারো দিকে একটু এগিয়ে গিয়েছিলাম।সে কি করলো?মুখ ভর্তি বমি করে দিল!”
অহি কিছুই বলল না।রোদ্দুর তার সামনে এসে দাঁড়াতে কাপড় শক্ত হাতে চেপে থেমে গেল।তার ভাবলেশহীন মুখের দিকে তাকিয়ে রোদ্দুর অনুনয়ের স্বরে বলল,
—“অজান্তা,ইগনোর কেন করছো আমাকে?তুমি নিজেই আমার গায়ের উপর বমি করে দিলে,আবার নিজেই রাগ করছো!বিষয়টা কেমন হয়ে যাচ্ছে না?আচ্ছা, বলো!আমি কি তোমাকে কোন ভাবে হার্ট করেছি?করলে শাস্তি দাও।কিন্তু প্লিজ কথা বলা বন্ধ করো না!এখানে কষ্ট হয় তো!”
রোদ্দুর ডান হাত বুকের বাঁ পাশে নিল।তার কন্ঠে গভীর আবেগ।অহি সে আবেগের জোয়ারে ভাসলো না।মুখের অভিব্যক্তিরও কোনোরূপ পরিবর্তন সাধিত হলো না।রোদ্দুরকে অভারটেক করে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো।
রোদ্দুর ওয়াশরুমের দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বলল,
—“অজান্তা,এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।আমি এবার রেগে যাব।সত্যি সত্যি রেগে যাব বলে দিলাম।দরজা খুলো!কথা আছে!”
অহি কোনো প্রতিত্তর করলো না।ভেতর থেকে পানি পরার শব্দ কানে যেতে রোদ্দুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে আসলো।
ভোর রাতে অহি তার গায়ের উপর বমি করার পর থেকে এখন অবধি একটা কথাও বলেনি তার সাথে।সে নিজেই বকবক করে যাচ্ছে।নানাভাবে হাসানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।রোদ্দুর ফোন বের করে বিদ্যুৎকে কল দিল।এবার তাহলে বিদ্যুৎতের পরামর্শ অনুসরণ করা যাক!কোনো উন্নতি হয় কি না!
২১.
দীর্ঘ সময় নিয়ে শাওয়ার নিল অহি।কক্সবাজারের হোটেল গুলোর ওয়াশরুম তুলনামূলকভাবে অনেক সুন্দর না হলেও অন্তত এটা সুন্দর।শাড়িটা সুন্দর মতো পড়ে মাথার চুল টাওয়ালে মোড়ালো।ভেজা কাপড়গুলো দু হাতে নিয়ে ছিটকিনি খুলে বেরিয়ে পড়ল সে।
দু পা সামনে এগোতেই তার চোখ আটকে গেল রুমের মাঝামাঝি চেয়ারে পা তুলে বসে থাকা মানবটির উপর।সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে চিন্তার বলিরেখা দেখা দিল।
কয়েক পা এগিয়ে ভালো মতো লক্ষ্য করলো।হ্যাঁ,রোদ্দুর হিমই তো!এমন সাজ দিয়েছে কেন?আর এত মুড নিয়ে বসে থাকারই কি মানে?
রুমের মাঝামাঝি দুটো চেয়ার।রোদ্দুর বসে আছে একটাতে।আরেকটাতে পা তুলে ত্রমাগত নেড়ে যাচ্ছে।তার পায়ে কালো বুট!ছেঁড়া ফাঁড়া জিনস!পরণে কালো সাদার সংমিশ্রণে শার্ট!শার্টের কলার উঁচু করা,কনুই গুটানো,সামনের তিনটা বোতাম খোলা!যার জন্য উদাম বুকের অনেকখানি দৃশ্যমান।একহাতে মোটা ঘড়ি।ডান হাতে প্রচুর হাবিজাবি লাগানো।কব্জি বরাবর এক টুকরো কাপড়ও পেঁচানো।আঙুল গুলোতে আঙটির বহর।গলায় অদ্ভুত রকমের লকেটসহ দু তিনটা মালা পড়া।বুকপকেটে সানগ্লাস ঝুলছে একটা।আরেকটা সানগ্লাস চোখে লাগানো।চুলগুলো উঁচু করে ব্যান্ড লাগানো।কপালে দড়ির মতো কিছু একটা বাঁধা।সর্বোপরি বাম হাতে সিগারেট নিয়ে ক্রমাগত তার ধোঁয়া উড়িয়ে যাচ্ছে।
অহি বিস্ময়ে হা হয়ে গেল।এ কোন রোদ্দুরকে দেখছে।গুন্ডা,বদমাশদের মতো সাজ দিয়েছে কেন?
সে আর নির্বাক থাকতে পারলো না।এগিয়ে গিয়ে বিস্ময় মাখা কন্ঠে বলল,
—“রাতেরবেলা রুমের মধ্যে সানগ্লাস পড়ে আছেন কেন এসআই?তাও আবার দুটো?একটা চোখে আর একটা বুকপকেটে ঝুলানো?”
রোদ্দুর কোনো উত্তর দিল না।চোখের সানগ্লাসটা মাথায় ঝুলিয়ে বড় করে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লো।অহি ভ্রু যুগল কুঁচকে চিন্তিত কন্ঠে বলল,
—“আপনি মাস্তানদের মতো সেজেছেন কেন? গুন্ডা বদমাশদের মতো লাগছে আপনাকে!আর! আর আপনি তো ধূমপান করতেন না।এসব কি তাহলে?”
রোদ্দুর উঠে দাঁড়ালো এবার।ঠোঁটে বাঁকা করে সিগারেট ঝুলিয়ে দু হাতে শার্টের কলার পেছন দিকে দিল।চুলগুলোতে আঙুল চালিয়ে অহির কাছে এগিয়ে এসে একরাশ ধোঁয়া ছাড়লো তার মুখের উপর।অহি নাক মুখ কুঁচকে ডান হাতে হাওয়া করে সিগারেটের ধোঁয়া সরিয়ে বলল,
—“আপনি কোন ধরনের পাগলামি শুরু করেছেন মি. রোদ্দুর হিম?এসবের মানে কি?”
রোদ্দুর হাতের সিগারেটটা মেঝেতে ফেলে বুট দিয়ে পিষে ফেলল।তারপর অহির কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,
—“বাহ!আমার মাফিয়া লুকে দেখি ভয় পেয়ে গেছিস!এখন মুখে কথার খই ফুটেছে!”
রোদ্দুরের মুখ দিয়ে সিগারেটের দূর্গন্ধ আসছে।অহি নাক চেপে বলল,
—“মাফিয়া?আপনি?এসআই আপনাকে রাস্তার দু পয়সার পকেটমারের মতো লাগছে।ভং ছাড়ুন!”
রোদ্দুর চোয়াল শক্ত করে বলল,
—“আমাকে ভয় পাচ্ছিস না?আজ তোকে জন্মের শিক্ষা দিবো।আমাকে ইগনোর করিস?তোর ইগনোরের গোষ্ঠীর ষষ্ঠী পূজো করবো!”
অহি অবাক হয়ে বলল,
—“আপনি আমার সাথে তুই তুকারি করছেন কেন?খবরদার!তুই তুকারি করবেন না।”
—“একশবার করবো!হাজার বার তুই তুকারি করবো!তুই কি করবি রে?”
রোদ্দুরের কন্ঠে কিছু একটা ছিল যা শুনে ঘাবড়ে গেল অহি।মুখের কথাও যেন ফুরিয়ে গেল।কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।ডান হাতের ভেজা কাপড়গুলো শক্ত হাতে চেপে ধরলো।রোদ্দুর হঠাৎ এক ঢিলে তার হাতের ভেজা কাপড় গুলো ফেলে দিল।তারপর একদম কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল অহির।
এই প্রথম অহির মনের ভেতর ভয় ঢুকে গেল।একে আবার ভূতে ধরলো নাকি?জ্বিনে টিনে আছড় করেছে কি?কেন যে এতদূর আসলো!রোদ্দুর কাছ ঘেঁষে দাঁড়াতেই সে পেছাতে শুরু করলো।তোতলানো স্বরে বলল,
—”কাপড় গুলো ফেলে দিলেন ক-কেন?ওগুলো ধুতে কষ্ট হয়নি?”
রোদ্দুরের কানে হয়তো সেসব ঢুকল না।আপনমনে তার দিকে এগোতে এগোতে বলল,
—“আমাকে ইগনোর করা?এই রোদ্দুর হিমকে ইগনোর করা?সকাল থেকে কথা কথা বলার চেষ্টা করছি!তার পরো ইগনোর করা!তুই আমাকে চিনিস?”
অহির দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।অসহায় দৃষ্টিতে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুর এখনো চোখ মুখ শক্ত করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
রোদ্দুর ডান হাত ক্ষীণ গতিতে উঁচু করতেই অহি মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করলো।রোদ্দুর এক টানে তার মাথার টাওয়াল খুলে কোথাও ছুঁড়ে মারলো।ভেজা চুল চোখের সামনে আসতেই সে চোখ খুলল।ডান হাতে চোখের সামনের চুলগুলো সরিয়ে রোদ্দুরের চোখে চোখ রেখে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,
—“আপনি হঠাৎ সাহসীদের মতো আচরণ করছেন কেন এসআই?আপনার সাথে এসব যাচ্ছে না।”
মনে মনে বলল,
—“শালা ভিতুর ডিম।সাহসী সাজতে এসেছে।”
সে সরে যেতে নিতে রোদ্দুর বাম হাত দেয়ালে দিয়ে তাকে আটকে ফেলল।রাগী গলায় দু বার বললো,
—“ভালোবাসা দিবি কি না বল!”
এটুকু বলেই ডান হাতের তালু সমস্ত শক্তি দিয়ে সজোরে অহির মাথার কাছের দেয়ালে আঘাত করলো।অহি চমকে চোখ বন্ধ করলো।তার বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে।হার্টবিট বেড়ে গেছে।এক্ষুনি হয়তো রোদ্দুর কিছু একটা করে বসবে।
কয়েক সেকেন্ডে কোনো সাড়া না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলল সে।রোদ্দুরের মুখের দিকে চোখ পড়তে কপাল কুঁচকে গেল।রোদ্দুরের মুখের সর্বত্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়েছে যেন।মুখটা কাঁদো কাঁদো।দাঁত চেপে কিছু একটা সহ্য করছে।অহি কুঁচকানো কপালই বলল,
—“সাহসের চাকা পাংচার হয়ে গেছে?আর বের হচ্ছে না?”
রোদ্দুর সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে বলল,
—“অজান্তা!আমার ডান হাত!আমার ডান হাত ছিঁড়ে গেছে।বিস্ফোরণ হয়ে উঁড়ে গেছে হয়তো।দেখো,আমি ফিল করতে পারছি না।মনে হচ্ছে শরীরে হাত নেই!”
অহি চমকে তার বা পাশে মাথার কাছে তাকালো।সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো।রোদ্দুরের হাত সোজা একটা ক্ষীণ রক্তের ধারা।সে আস্তে করে রোদ্দুরের হাতটা টেনে সরাতেই রোদ্দুর আর্তচিৎকার দিয়ে উঠলো।অহি দেয়ালের দিকে তাকালো।দেয়ালে একটা সূচালো তারকাঁটা আটকানো।হয়তো ট্রিপে আসা মানুষদের প্রয়োজনীয় কিছু ঝুলিয়ে রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা।
রোদ্দুর না দেখেই সমস্ত শক্তি দিয়ে দেয়ালে আঘাত করেছে। তৎক্ষনাৎ পিনটা হাতের তালুতে গেঁথে গেছে।অহি ব্যথাতুর চোখে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুরের চোখে মুখে যন্ত্রণার ছাপ।
সে রোদ্দুরের হাতের কব্জিতে বেঁধে রাখা কাপড়টা একটানে খুলে রোদ্দুরের হাতে চেপে ধরলো।বিরক্ত কন্ঠে বলল,
—“আপনি মানুষ হবেন না?কবে পাগলামো করা বাদ দিবেন?”
রোদ্দুর শান্ত গলায় বললো,
—“আমার কি দোষ!বিদ্যুৎ বলেছিল, মাফিয়া সেজে তোমাকে ইমপ্রেস করতে অজান্তা।তুমি কি ইমপ্রেসড হয়েছো?”
অহি রোদ্দুরের মাথায় আলতো করে ছুঁয়ে দিল।মাথার ব্যান্ড,কপালের দড়ি টড়ি খুলে ফেলল।অতিরঞ্জিত প্রতিটা জিনিস খুলে শার্টের কলার ঠিক করে দিল।সামনের বোতামগুলো লাগিয়ে বলল,
—“আমার সাথে আসুন।ডক্টরের কাছে যেতে হবে।হাতটা ড্রেসিং করতে হবে!”
২২.
—“অজান্তা,তুমি খাবে না?”
রোদ্দুর ড্রেসিং করা হাতটা বিছানায় মেলে রেখে অহির দিকে চেয়ে বলল।অহি ফ্লোরে পরে থাকা কাপড়গুলো পুনরায় ধুয়ে শুকাতে দিচ্ছিল।শেষ কাপড়টা শুকাতে দিয়ে এগিয়ে এলো রোদ্দুরের কাছে।
পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
—“হুঁ, খাবো তো!”
—“ইয়ে মানে অজান্তা!আমি তো অকেজো হয়ে গেছি।না মানে আমি না!আমার হাত!খাবো কি করে?”
—“বাম হাতে খাবেন!”
—“অ্যা?একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবে না তো অজান্তা!আমায় খাইয়ে দাও তুমি!”
অহি মুখ ঘুরিয়ে হাসলো।টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্যাকেট বের করলো।
রোদ্দুরের পাশে বসে এক লোকমা তার মুখে তুলে দিল।রোদ্দুর পরম আয়েশ করে তা চিবিয়ে খেল।ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলল,
—“হাত ফুঁটো হয়ে ভালোই হয়েছে একদিকে।এখন সারাজীবন তোমার হাতে খেতে পারবো।”
অহি আরেক লোকমা রোদ্দুরের মুখে পুড়ে দিয়ে বলল,
—“এক সপ্তাহের মধ্যে হাত ঠিক হয়ে যাবে।”
রোদ্দুর মুখ গোমড়া করে বলল,
—“হাত ঠিক হয়ে গেলে এইবার ইচ্ছে কৃত ভাবে ফুটো করবো।তুমি আমার সাথে সাথে খাও তো অজান্তা!”
অহি নিজের মুখেও খাবার পুড়ে দিল।
অহি ফোন কেটে জানালা থেকে সরে আসলো।বাড়িতে কথা বলে নিল সবার সাথে।তিনদিনের ট্রিপে তারা এসেছে।তার একদিন শেষ হয়ে গেল।অথচ ক্লান্তিতে কিছুই দেখা হলো না।
অহি বিছানার দিকে তাকালো।রোদ্দুর ডান হাতটা মেলে বিছানায় শুয়ে আছে।সে অপলক রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে রইলো।এরকম একটা পাগলাটে মানুষকে পাশে পাওয়ার জন্য সে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিল।
দক্ষিণের দেয়ালের সুইচ চেপে লাইট বন্ধ করে দিল অহি।আরেকটা সুইচ টিপার সঙ্গে সঙ্গে হালকা সবুজ শেডের আলোতে রুম ভরে গেল।সে মাথার চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল।রোদ্দুরের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ তার দিকে চেয়ে রইলো।মাথার চুলে হাত বুলিয়ে সরে আসলো সে।
জানালার পর্দা বাতাসে নড়ছে।সে এগিয়ে গিয়ে জানালা ঘেঁষে দাঁড়াল।ওপাশের জলরাশি যেন ফুলে ফেঁপে উঠছে।গর্জনের মৃদু মধুর স্বর আর মাতাল করা বাতাসে অহি যেন অন্য জগতে চলে গেল।
তার ঘোর কাটলো কারো গভীর স্পর্শে।পেছন থেকে কেউ তাকে গভীরভাবে জড়িয়ে নিয়েছে।মানুষটার শরীরের কাঁপুনি টের পেয়ে অহি মৃদু কেঁপে উঠলো।
মানুষটার একটা হাত তার পেটের কাছে।অহি সেই হাতের উপর নিজের হাতটা স্পর্শ করালো।মানুষটা তার ঘন আধভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে জড়ানো গলায় বলল,
—“অজান্তা,আ-আমার ঘুম আসছে না।”
অহির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।নিজেকে ছাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়াল সে।আবছা আলোয় রোদ্দুরের চোখের দিকে গভীর মায়া নিয়ে তাকালো।ডান হাতে আলতো করে রোদ্দুরের মুখে হাত বুলাল।তার চোখ বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে রোদ্দুর ফট করে মুখটা নিচু করে তার ঠোঁটে চুমু খেল!
বাইরে সমুদ্রের গর্জন সময়ের সাথে বেড়ে যাচ্ছে। জানালার পর্দাগুলো এলোমেলো গতিতে উড়ে চলেছে। সেই সাথে উড়ে চলেছে দুটি মন!দূর থেকে সূদুরে!
(চলবে)