গাঙচিল,পর্ব_০৭,০৮ (বোনাস পার্ট)
লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
পর্ব_০৭
অহি প্রচন্ড রাগে ফেটে পড়ছে।রোদ্দুরের দিকে চেয়ে কপাল কুঁচকে বলল,
—“আপনি বাবার মাথা ন্যাঁড়া করে দিলেন কেন?”
রোদ্দুর কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।জলিল মোল্লার ছিপের কাছে কিছু চুল রয়েছে।সে মনোযোগ সহকারে ছিপের চুলগুলো কেটে জলিলের গা থেকে ঝেরে দিল।মাথার চুল কাটা কমপ্লিট!জলিল মোল্লাকে মোঘলদের সম্রাটের মতো লাগছে।সে অহির দিকে চেয়ে হেসে বলল,
—“মিস!রেগে যাচ্ছেন কেন?আমার তো কোনো দোষ নেই।আপনার বাবা সকাল সকাল বায়না ধরলো চুল কেটে দিতে।থানায় কিছুদিন থেকে নাকি তার মাথায় উকুন হয়েছে।সারা রাত মাথা চুলকেছে।উকুনের যন্ত্রণায় ঘুম পাড়তে পারেনি।আমি আবার খুবই দয়ালু মানুষ।চাচাজীর জন্য কষ্ট হলো।মনে হলো চাচাজী কে ন্যাঁড়া করে দেয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব!তাই করে দিলাম!”
—“তাই বলে আপনি সত্যি সত্যি……. ”
অহি রেগে জলিলকে ডাক দিল!
—“বাবা!”
জলিল উঠে দাঁড়ালো।গা থেকে আলগা চুলগুলো ঝেরে হাসিমুখে অহির দিকে তাকালো।জলিলকে ন্যাঁড়া মাথায় অদ্ভুত লাগছে।তিনি তার সম্পূর্ণ টাক মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
—“চুলগুলো বড্ড জ্বালাতন করছিল রে মা!”
—“বাবা!তুমি কেমন যেন হয়ে গেছো!”
রোদ্দুর জলিলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
—“এসব বয়সের দোষ।তোমার না মানে আপনার বয়স হলে আপনিও পাল্টে যাবেন।তখন সিংহী থেকে ইঁদুর হয়ে যাবেন।”
অহি আর কিছু বলল না।রেগে রান্নাঘরে চলে গেল।রান্নাঘরে রেখা নিঃশব্দে রান্না করছে।বড় একটা কড়াইতে ডাল নাড়ছে।কিন্তু বিন্দুমাত্র শব্দ হচ্ছে না।অহি অবাক হলো না।তার মা সবসময় এভাবে নিঃশব্দে কাজ করে।
অহি চুপচাপ প্লাস্টিকের বোলে রাখা আধাসিদ্ধ ময়দা দিয়ে রুটি বেলতে শুরু করলো।
১১.
কিছুক্ষণ পর অহি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় আসলো।চারপাশে নজর বুলিয়ে দেখলো কেউ আছে কি না।তার বাবা বাজারের থলে হাতে বেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে।ফেরেনি এখনো।একটু পর পর তার বাবা তার ন্যাঁড়া মাথায় হাত বুলাচ্ছে এবং তাকে দেখে মনে হচ্ছে কাজটা করে ভীষণ মজা পাচ্ছে সে।
শফিক নিজের রুমে কারো সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত!অহি রোদ্দুরকে খুঁজলো।বাইরে নেই!তার মানে নিশ্চিত তার রুমে বসে আছে।সে নিজের রুমের দরজা সম্পূর্ণ খুলে ভেতরে ঢুকলো।
রোদ্দুর রুমে নেই।ওয়াশরুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো।হয়তো ওয়াশরুমের দেয়ালে দেয়ালে চুমু খাচ্ছে।কি জঘন্য মানুষ।অহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার পাল্লা একটা ভারী জিনিস দিয়ে সম্পূর্ণ ফাঁকা করে রাখলো।যাতে বাইরে থেকে সব দেখা যায়।
দরজার মৃদু শব্দে রোদ্দুর চেঁচিয়ে বললো,
—“কে?চাচাজী?”
অহি বিছানায় বসে ক্ষীণ স্বরে বলল,
—“বাবা বাজারে!”
—“অজান্তা!তোমার ব্রাশ খুঁজে পাচ্ছি না তো।রাতে যেটা দিয়ে আমিও ব্রাশ করলাম।সেটা কই?”
অহি একটা হাই তুলল।তার ঘুম ঘুম পাচ্ছে।এত সকাল সকাল আবার ঘুম পাচ্ছে কেন?মাত্রই না উঠলো!
রোদ্দুর আবার বলল,
—“অজান্তা চলে গেছো?ব্রাশ খুঁজে পাচ্ছি না।কোথায় গেল বলো তো?”
—“ফেলে দিয়েছি।আমার টেবিলের উপরের জানালা দিয়ে।”
—“ও মাই গড!কেন?”
অহি এগিয়ে ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে বলল,
—“আপনি একটা পাগল!উন্মাদ!আপনার চিকিৎসা প্রয়োজন।জীবনে শুনেছেন একজনের ব্রাশ দিয়ে আরেকজন ব্রাশ করে?ছি!ইয়াক থু!”
রোদ্দুর অবাক হয়ে বলল,
—“অদ্ভুত!এভাবে রিয়েক্ট করার কি আছে?ব্রাশই তো!দুদিন পর যে গন্ধযুক্ত মুখ নিয়ে, দাঁত পরিষ্কার না করেই চুমু খাবে তখন কি হবে?আমি ঠিক করে রেখেছি,বিয়ের পর আমরা এক ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করবো।ওয়াশরুমে একটা ব্রাশ থাকবে।ওয়ান এন্ড অনলি পিস ব্রাশ!বুঝতে পেরেছো?”
—“ওগুলো আপনার চিন্তাতেই থাকবে।বাস্তবে হবে না কখনো!”
রোদ্দুর ফ্যানাযুক্ত মুখে বের হয়ে আসলো।অহি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।এই ছেলে কথায় কথায় ওয়াশরুম থেকে বের হয় কেন?
—“আপনি কি গাধা?”
রোদ্দুর মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
—“চুপ!এত যাচ্ছে তাই মনে করো কেন আমাকে?তোমাকে কিন্তু কঠিন শাস্তি দিবো এরকম ব্যবহার করলে।”
অহি গলার স্বর নামিয়ে বলল,
—“চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকে যান। ফ্রেশ হয়ে তারপর বের হবেন।”
রোদ্দুর এক হাতে চোখের পাশের সাবানের ফ্যানা মুছলো।টিপটিপ চোখে এগিয়ে একদম অহির কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল।মুখটা কাছে এনে বলল,
—“দেখো তো,গন্ধ বের হয়েছে কি না?ব্রাশ ফেলে দিয়েছো এখন দাঁত পরিষ্কার করবো কি দিয়ে?”
অহির নাকে লাক্সের গন্ধ এলো।সাবানের গন্ধ।গতকাল রাতেই সে নতুন সাবান বের করে ওয়াশরুমে রেখেছে।সে দু পা পিছিয়ে বলল,
—“ড্রেনের পঁচা গন্ধ আসছে!”
রোদ্দুর কিছু বলল না।সে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতেই অহির বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো।রোদ্দুর কি করতে চাইছে?কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে রোদ্দুর যখন তার বুকের সাথে বুক লাগিয়ে দাঁড়াল,সে এক ঝটকায় সরে গিয়ে বিছানাতে বসলো।চকিতেই দু চোখ দরজার বাইরে চলে গেল।খোলা দরজা দিয়ে যদি কেউ দেখে ফেলে?সে বেরিয়ে যেতে নিতেই রোদ্দুর তার পথ আগলে দাঁড়ালো।
রোদ্দুর দরজার দিকে কিছুটা এগিয়ে গেল।তার গায়ে সে কালকের জলপাই রঙা শার্ট,কালো প্যান্ট!তাকে কেমন ছবির মতো লাগছে।ছবি কি কথা বলে?রোদ্দুর তো বলছে।
রোদ্দুর অহির দিকে তাকিয়ে ফিসফিস শব্দে বলল,
—“দরজা বন্ধ করি অজান্তা?”
অজানা আশংকায় অহির বুক কেঁপে উঠলো।সে বিস্ফারিত নয়নে রোদ্দুরের দিকে চেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
—“ক-কেন?দ-দরজা বন্ধ করবেন কেন?”
—“দরজা বন্ধ করে মানুষ কি করে?”
—“আমায় যেতে দিন!”
রোদ্দুর বেশ স্বাভাবিক ভাবে বলল,
—“তোমায় ধরে রেখেছে কে?চলে যাও!তবে তুমি চাইলে দরজা বন্ধ করতে পারি।তাহলে আমাদের বিয়েটা দ্রুত হয়ে যাবে।”
অহির কানে কিছু ঢুকলো না।তার মস্তিষ্ক বোধ হয় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।সে মাতালদের মতো টলতে টলতে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।রোদ্দুরকে পাশ কাটিয়ে বের হতে নিতে রোদ্দুর এক টানে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।অহির কোমড় জড়িয়ে গলার খোলা অংশে মুখ ডুবাতে অহি সবশক্তি হারিয়ে ফেলল যেন।সে নিস্তেজ হয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। রোদ্দুর তাকে ছেড়ে বলল,
—“মুখের ফ্যানা গলায় একটু মুছতে নিয়েছিলাম তাতেই এই অবস্থা?”
সে শিস বাজাতে বাজাতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।ওয়াশরুমে ঢুকেই বড় বড় করে শ্বাস নিল।ও মাই গড!মেয়েটার মধ্যে কি সম্মোহন ক্ষমতা আছে?ধীরে ধীরে তাকে কেমন সম্মোহিত করছে।এই মেয়ে ছাড়া তো তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
সে ট্যাপ ছেড়ে তার নিচে মাথা দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।একসেট এক্সট্রা কাপড় চোপড় সে নিয়েই এসেছে।
১২.
—“ভাইগণ,আপাগণ!!এদিকে আসেন।এদিকে আসেন।আমাদের দোকানে ‘যাহা চাবেন,তাহা পাবেন’!দেখেন থরে থরে জুতো সাজিয়ে রেখেছি।সব ধরনের মাপের আছে।যার যেটা লাগবে নিয়ে যান।কি সুন্দর, ঝকঝকে জুতো।নিয়ে যান!নিয়ে যান!”
জলিল হুংকার দিয়ে দিয়ে সদা বলে যাচ্ছে এসব।তিনি আপাতত বসে আছে লক্ষী বাজারের ফুটপাতে।লাল রঙা ছোট্ট টুলে লুঙ্গি পড়ে বসে আছে।তার সামনে চটের কাগজে আটত্রিশ জোড়া জুতো।বিকেল দুটো থেকে বেঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এখন সাড়ে চারটে বাজে প্রায়।এতক্ষণে দু জোড়া জুতো বিক্রি হয়েছে।
কালো বোরখা পড়া মধ্য বয়স্কা এক মহিলা বাচ্চা দুটো মেয়ের হাত ধরে এটা ওটা কেনাকাটা করছে।জুতোর দোকান পাস করে সামনে এগিয়ে যেতেই তাকে উদ্দেশ্য করে জলিল বলল,
—“নিয়ে যান!নিয়ে যান আপা!এমন জিনিস আর পাইবেন না!”
মহিলাটি অদ্ভুত দৃষ্টিতে জলিলের দিকে তাকালো।জলিল ইতস্তত অনুভব করছে।দরদাম করে বেচা তার জন্য অসুবিধে মনে হচ্ছে।তাছাড়া সবাই তার ন্যাঁড়া মাথার দিকে অন্য রকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।মহিলাটি বাচ্চা নিয়ে চলে গেল।জলিল অসহায় মুখ নিয়ে অহির দিকে তাকালো।
অহি এতক্ষণ বাবার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।সে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এতক্ষণ বাবার দোকানে ক্রেতা হিসেবে অভিনয় করছিল।দোকানে ভিড় জমলে সেদিকে সবার আগ্রহ থাকে।কিন্তু তাদের দোকানে কাস্টমার নেই।সে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
—“বাবা!তুমি এমন ভাবে ‘নিয়ে যান!নিয়ে যান!’ করছো,মনে হচ্ছে মাগনা জুতা দিয়ে দিবে।একটু প্রফেশনাল হওয়ার চেষ্টা করো।”
—“আরে ধুর!স্যান্ডেল বিক্রি করার চেয়ে মানুষের চুল কাটা সহজ ছিল।রোদ্দুর বাবাজীবন বলেছিল আমাকে এক সপ্তাহ ট্রেনিং দিয়ে সব শিখিয়ে দিবে।কিন্তু তুই তো তা করতে দিচ্ছিস না অহি।”
অহি বিড়বিড় করে বলল,
—“রোদ্দুর আবার বাবাজীবন হলো কবে থেকে?কি সাংঘাতিক!”
সে বাবার পাশে বসলো।দুজন অল্প বয়সী মেয়ে এসে জুতো নেড়েচেড়ে দেখলো।অহি অত্যন্ত বিনয়ের সহিত দেখালো তাদের।মিনিট পনেরো দরদাম করে,পায়ে ঢুকিয়ে, ময়লা লাগিয়ে জুতা না নিয়েই চলে গেল।অহি চরম বিরক্ত হলো।বেলা পড়ে গেছে। এখানে তার কোনো কাজ নেই।সে চলে যেতে উদ্যত হলো।
বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে রোদ্দুরের কন্ঠ কানে আসলো।
—“চাচাজী!বেচাকেনা কত দূর?”
জলিলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।অহির দিকে চেয়ে বলল,
—“বাবা জীবন এসেছে।বসো!বসো বাবাজীবন!”
অহি কপালের খাদ গভীর করে রোদ্দুরের দিকে তাকালো। বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর প্রকৃতি যেমন সজীব আর ঝকঝকে হয়,রোদ্দুরকে তেমন লাগছে।ব্রাউন টিশার্ট আর চেক ট্রাউজারে কি স্নিগ্ধ লাগছে মানুষটাকে।অহির কুঁচকানো কপাল শিথিল হলো।
সে বাবার পাশ থেকে সরে এসে বলল,
—“বাবা!তুমি আর তোমার বাবাজীবন সব জুতা বিক্রি করে তবে বাড়িতে ঢুকবে আজ।তা না হলে খবরদার!বাড়িতে ঢুকবে না। ”
অহি রিকশা দেখে রাস্তার অপর পাশে গেল।কিছুদূর হাঁটতে ফোন বেজে উঠলো।ব্যাগ থেকে বের করে হাতে নিতে কেটে গেল।রোদ্দুর ফোন দিয়েছিল।সে পেছন ঘুরে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।এখান থেকে দেখা যাচ্ছে।সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ আসলো,
“তাহলে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলে!আহা!কি শান্তি!একটা কথা!জুতো গুলো তোমায় পরার জন্য দিয়েছিলাম।আচ্ছা যাও!বাদ দিলাম।আপাতত বলো, যদি সব জুতো ভালো দামে বিক্রি করি তাহলে কি পুরষ্কার দিবে আমায়?”
অহি উত্তর দিল না।সে ঘুরে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল।রোদ্দুর এক পলক অহির দিকে চেয়ে হাসিমুখে জলিলের পাশে বসে পড়লো।অফিস শেষ করে, মায়ের সাথে দেখা করে,শাওয়ার নিয়ে, ভরপেট খেয়ে সে এখানে এসেছে!একদম ফুল এনার্জি!
মুহুর্তে ভার্সিটির একদল তরুণী দোকানে ভিড় জমালো।রোদ্দুর হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাদের জুতো দেখাল।
(চলবে)
গাঙচিল
লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
পর্ব_০৮ (বোনাস পার্ট)
১৩.
—“চাচাজী!কিছু দরকারী কথা বলবো।আমি অজান্তাকে বিয়ে করতে চাই!”
রোদ্দুরের কথায় জলিল কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না।যেভাবে বসে ছিল সেভাবেই রইলো।রোদ্দুরের মনে ক্ষীণ সন্দেহ হলো চাচা শুনতে পেয়েছে কি না।রোদ্দুর আরেক বার বলল,
—“চাচাজী আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।”
জলিল এবারও কোনো উত্তর দিল না।তিনি কাছেই চেয়ারে বসে আছেন।মাথা অত্যধিক নিচু করে আছে।অন্ধকারে চোখও দেখা যাচ্ছে না।ঘুমিয়ে পড়েছে কি না কে জানে!
রোদ্দুর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অহির রুমের দিকে তাকালো। সে আর জলিল চাচা উঠোনে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে।এদিকটা অন্ধকার।ভেতর ঘরে অহির মায়ের রুম অন্ধকার।আলো জ্বলছে অহি আর শফিকের রুমে।শফিকের পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে।সে দিনরাত এক করে পড়ছে।সেজন্য রোদ্দুর আর তাকে ডিস্টার্ব করছে না।সে বসে আছে জলিল চাচার সাথে।
রোদ্দুর কিছুক্ষণ অহির রুমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।এই মেয়ে সব বোঝার পরেও তাকে ইগনোর কেন করছে?এশার আযানের সময় জুতা বিক্রি করে সে এ বাড়িতে এসেছে।প্রেম-প্রকৃতি তার অনুকূলে ছিল না।সেজন্য দু জোড়া জুতো বিক্রি করতে পারেনি।তবে সে কায়দা করে অহিকে বিপদে ফেলার জন্য অবিক্রিকৃত দুই জোড়া জুতো লুকিয়ে ফেলেছে।জলিল চাচাও জানে না।অবশ্য সে সন্দেহ করেছিল।অবাক হয়ে বলেছিল,
—“বাবা জীবন, মাত্র না এখানে দুই জোড়া জুতো দেখলাম?”
রোদ্দুর বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বলেছিল,
—“চাচাজী!মাত্র এক ভদ্রলোক গেল না!উনি কিনে নিয়ে গেল তো।ওনার বাসার কাজের বুয়ার জন্য একটা আর ওয়াশরুমের জন্য একটা!”
জলিল চাচা মাথা চুলকে ‘ওহ আচ্ছা!’ বলেছিল।ব্যস!রোদ্দুরের খুশি আর ধরে কে!সে তক্ষুনি চট, কাগজ ভাঁজ করে বাড়ি ফিরেছে।ফেরার আগে লক্ষী বাজারের সেরা মাছটা কিনেছে।সাথে কাঁচা বাজার!
এ বাড়িতে আসার পর থেকে অহি তাকে ইগনোর করছে।তার থেকে দূরে দূরে রয়েছে।সে খাওয়ার সময়ও ছিল না।দু বার ইচ্ছে কৃত ভাবে ওয়াশরুমে গেছে। তাও কথা বলার সুযোগ দেয়নি।টেবিলে এক টুকরো কাগজে থ্রেড দিয়ে কিছু লিখেছে সেটারও ফল পায়নি।
নাহ!এভাবে বসে থাকলে চলবে না।রোদ্দুর আস্তে করে জলিলের কাঁধে হাত রেখে বলল,
—“চাচাজি!ঘুমিয়ে পড়েছেন?উঠুন!রুমে গিয়ে ঘুমান।”
জলিল চোখ তুলে তাকালো।সংবিৎ ফিরে পেতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেল!যেন রোদ্দুরের সামনে ঘুমিয়ে পড়ে চরম অপরাধ করেছে।রোদ্দুর বুঝতে পেরে বলল,
—“আপনাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে।আপনি বরং ঘুমিয়ে পড়ুন।রুমে যান!”
—“আজ অনেকদিন পর প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।বুঝতে পারছি না কেন!”
—“আপনি উঠুন।রুমে যান।”
জলিল উঠলো।রোদ্দুর তাকে আরো একটু নিশ্চিন্ত করতে আমতা আমতা করে বলল,
—“চাচাজি!আমি আপনার মেয়ে অজান্তা অহিকে বিয়ে করতে চাই।আপনাদের সম্মতি নিয়ে।কাল সকালে আমরা কথা বলবো।আপনি এখন ঘুমান।”
জলিলের ঘুম যেন হুট করে কর্পূরের মতো উবে গেল।তিনি ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন।তার চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়।আলো থাকলে হয়তো রোদ্দুর দেখতে পেত।তার যেন বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না।সত্যিই তার সামনে বসে থাকা বাচ্চা মনের মানুষটি তার মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছে?তার মেয়ের চলার পথের সঙ্গী হবে?
জলিল বিস্ময় নিয়ে বলল,
—“তুমি কি বলছো গো বাবা?আমি কি ভুল কিছু শুনলাম?তুমি কি সত্যি অহি মাকে বিয়ে করতে চাও বাবাজীবন?”
—“জ্বি চাচাজি!এত অবাক হওয়ার কিছু নেই।আপনার মেয়েকে ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।আমার মায়ের ব্যাপারটা তো জানেনই!আপনি রাজি থাকলে পরশু দিন মাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করবো।সেদিন রাতেই বিয়ে হবে।”
—“আমি রাজি!আমি রাজি।আমি সুখবরটা রেখাকে দিয়ে আসি।বলে আসি যে অহির জন্য রাজপুত্র এসেছে।রাজপুত্র স্বয়ং এসে আমার মেয়েকে চাইছে!”
রোদ্দুর খুশি হলো।সে যদিও ধারণা করেছিল সবাই রাজি হবে,তবুও জানানোর পর আরো ভালো লাগছে।এখন একটা মানুষকে নিয়ে চিন্তা!যে সবসময় দেড় লাইন বেশি বোঝে।সে হলো অহি।অজান্তা অহি!
জলিল চেয়ার ছেড়ে উঠে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলো।রোদ্দুরের দিকে চেয়ে বলল,
—“বুঝলে বাবাজীবন!অহির যখন জন্মের সময় অনেক সংকটাপন্ন সময়ে ছিলাম।এইট পাশের সার্টিফিকেট আর অহির মাকে নিয়ে গ্রাম থেকে সদ্য ঢাকাতে পা রেখেছি।অহি তখন ওর মায়ের গর্ভে।রেখা তখন প্রচুর বমি করতো।
কিচ্ছু খেতে পারতো না।হাতে পায়ে পানি ধরে ফুলে কলাগাছ হয়ে গেল।মুখে ঘা!উঠতে পারে না!বসতে পারে না।কি একটা অবস্থা।সেই সময় আবার পড়েছি অর্থ সংকটে।রেখাকে ভালো খাবার খাওয়াতে পারি না,ডাক্তার দেখাতে পারি না।চরম দুঃসময় যাকে বলে।রেখার তখন সব রাগ গিয়ে পড়লো গর্ভের সন্তানের উপর।যে পৃথিবীতে আসছে সে কুফা!
অহির জন্মের দিন বড় হসপিটালে নিয়ে যাই রেখাকে।ঢাকা মেডিকেলের স্বনামধন্য চিকিৎসক রেখার ডেলিভারি করে।আশ্চর্যজনক ভাবে রেখাও সুস্থ থাকে।দূর্বলতার জন্য রেখাকে কেবিনে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়।অহিকে তখন আলাদা কেবিনে স্থানান্তর করেছে।নার্সের পরামর্শে কেবিনে ঢুকতেই মধ্য বয়স্ক সুদর্শন ডাক্তার আমার কোলে ফুলের মতো একটা শিশু দিল।এতটুকুন বিড়ালের বাচ্চার মতো।কি নরম হাত পা!যেন একটু চেপে ধরলেই ফুলের মতো নেতিয়ে পড়বে।
কর্তব্যরত ডাক্তার আমায় হাসিমুখে বললেন,
“আপনাদের ঘরে সৃষ্টিকর্তার রহমত নাযিল হয়েছে।এক টুকরো জান্নাত দান করেছেন আল্লাহ।চাঁদের মতো এই মেয়ের কি নাম ঠিক করেছেন?”
আবেগে আমার চোখে পানি এসে গেল।জড়ানো কন্ঠে বললাম,
“কোনো নাম ঠিক করিনি স্যার।”
ডাক্তার প্রচন্ড অবাক হলেন।সন্তান পেটে আসলে বাবা-মার আগ্রহের সীমা থাকে না।বাচ্চার কাপড়চোপড় কেনা,নাম ঠিক করা,ছেলে বাচ্চা হবে না মেয়ে বাচ্চা হবে ইত্যাদি নিয়ে হাজারো খুনশুটি।এসব আমাদের মধ্যে ছিল না।ডাক্তার হয়তো মনের কথা পড়তে পেরেছিলেন।তিনি আমার কোল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা পড়লেন।মুখের উপর ফু দিয়ে বললেন,
“আজ থেকে এই চাঁদমুখীর নাম অজান্তা অহি।অজান্তা অহি,ওয়েলকাম!ওয়েলকাম টু দ্য বিউটিফুল আর্থ!ওয়েলকাম লিটল এঞ্জেল!”
তারপর কত ঝড়,তুফান গেল।মেয়েটার আশ্চর্য রকমের সহ্যশক্তি।ব্যথায় কুঁকড়ে গেলেও যেন উঁহু শব্দ করবে না।ছোট্ট বেলার একটা ঘটনা বলি।স্কুলের ছাত্র ছাত্রী দৌঁড়ঝাপের সময় ধাক্কা লেগে সে বেঞ্চের উপর পড়ে গেছিল।চোখ বাঁচিয়ে কপালের ডানপাশে টেবিলের কোণা লেগে রক্তে শরীর ভেসে গেছে।কিন্তু মেয়ে আমার উঁহু শব্দ করেনি।আমার তখন থেকেই ভয় শুরু হয় ওকে নিয়ে।নিজের কষ্ট গুলো প্রকাশ করতে পারে না ও।ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরে।তুমি ওকে সামলাতে পারবে তো বাবাজীবন?আগলে রাখবে তো গো বাবা?”
রোদ্দুরের বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো।তার ভেতরে পুড়ে যাচ্ছে।পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সব।সে কি অজান্তা অহি নামক ফুলটার যোগ্য?যোগ্য না হলেও তাকে যোগ্য হতে হবে যে।এই ফুলকে ছাড়া তো সে বাঁচবে না।তাকে বাঁচতে হবে যে!
সে জলিলের হাত চেপে ধরলো।আশ্যস্তের সুরে বলল,
—“আপনি একদম চিন্তা করবেন না চাচাজি।আপনার কলিজার টুকরোকে আমি সবটা দিয়ে আগলে রাখবো।ওকে আর কোনো অশুভ স্পর্শ করতে দিবো না।”
জলিলের চোখ জলে ভরে গেছে।নিজেকে তার আজ বড় বড় মনে হচ্ছে।সত্যি সে বয়স্ক হয়ে গেছে।তার মেয়ের বিয়ে হবে,সে নানু -দাদু হবে!তারপর উপরের টিকেট ধরে চলে যাবে।কত ক্ষণস্থায়ী জীবন!প্রতিটি সেকেন্ড জীবন যুদ্ধ করেও মানুষ বাঁচার আনন্দ উপভোগ করে।সীমাহীন যন্ত্রণা পেয়েও ছাড়তে চায় না এই মায়াময় পৃথিবী।এখানেই হয়তো সৃষ্টির সৌন্দর্য লুকিয়ে!
তিনি রোদ্দুরের মাথায় হাত বুলিয়ে মনে মনে বললেন,
—“আল্লাহ এদের তুমি সুখী করো।শান্তিতে রাখো!”
তারপর চট করে রুমের দিকে পা বাড়ালেন।পরম নিশ্চিন্তে সে ঘুমাবে আজ!
১৪.
রান্নাঘরে খুটখাট আওয়াজ হচ্ছে।রান্নাঘরটা অহির ঘরের সাথে প্রায়।সেজন্য ইঁদুর নড়ার শব্দ টুকুও কানে যায় তার।রান্নাঘরে একটু না!বেশ শব্দ হচ্ছে।তাও আবার অনেক্ক্ষণ যাবত!
অহির ঘুম আসছে না কিছুতেই।দুই ঘন্টা যাবত সে বিছানার এপাশ ওপাশ করছিল।চোখ একটু ভারী না হতেই রান্নাঘরের শব্দ!সে বিরক্ত হয়ে উঠে পড়লো।
অন্ধকারে কিছুটা সময় সে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।জানালার ফোঁকর দিয়ে চোখে পড়া এক টুকরো আকাশ অন্য রকম লাগছে তার কাছে।মনে হচ্ছে আকাশ একদম নিচে নেমে এসেছে।জানালা দিয়ে হাত বাড়ালেই স্পর্শ করা যাবে।সে উঠে গিয়ে হাত বাড়ালো না।অপলক চেয়ে রইলো শুধু!
রান্নাঘরের আওয়াজ বেড়ে চলেছে।অহির একবার মনে হলো তার দরজার সামনে এসে কেউ ইচ্ছে কৃত ভাবে বাজাচ্ছে।সে বালিশের তলা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে চাপ দিল।অনেকগুলো মিসড কল!সে পাত্তা দিল না।ঘড়িতে রাত দেড়টার কাছাকাছি।সে কি!এত রাত হয়ে গেছে?অথচ আজ ঘুমেরা ধরা দিচ্ছে না?
সে আস্তে করে দরজা খুলে বের হলো।রান্নাঘরে আলো জ্বলছে।রোদ্দুর এ বাড়িতে আছে বলে রান্নাঘরের আলো সারাত জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে।যাতে বারান্দার দিকটা অন্ধকার না হয়।যাতে অন্ধকারে মানুষটার কষ্ট না হয়।
মা-বার রুমের দরজ বন্ধ।তারা এতক্ষণে গভীর ঘুমে।শফিকের রুমে ক্ষীণ আলো।ছোট লাইট জ্বালিয়ে শফিক পড়ছে হয়তো।
অহি রান্নাঘরের দরজায় উঁকি দিতে চমকে উঠলো।রোদ্দুর স্টিলের কাঁটা চামচ আর ম্যালামাইনের খালি মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে।মগের উল্টো পাশে চামচ দিয়ে ঢোলের মতো ক্রমাগত শব্দ করে যাচ্ছে।তাকে বিধ্বস্ত লাগছে।চুলগুলো এলোমেলো।টিশার্টের কলার এবড়োথেবড়ো।টিশার্ট কোমড়ের কাছে অনেখানি উঠে আছে।ফর্সা পেটের কিছুটা অংশ চোখে পড়ছে।অহি চোখ সরিয়ে নিল।
অহি কপাল কুঁচকে গলার স্বর নামিয়ে বলল,
—“আপনি মানুষ হবেন না?মাঝরাতে কি ধরনের পাগলামো শুরু করেছেন?দয়া করে কাল ভোরে চলে যাবেন।আর যেন আমাদের বাড়িতে না দেখি।দেখলে কিন্তু ভা………..”
অহির কথা সম্পূর্ণ হতে দিল না।রোদ্দুর এগিয়ে এসে অহিকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো।কিছুটা পা বাঁকিয়ে অহির কাঁধে নিজের মুখ রেখে চোখ বন্ধ করলো।এলোমেলো কন্ঠে বলল,
—“আধঘন্টা হলো শব্দ করছি।এতক্ষণ লাগে বের হতে?কতগুলো মেসেজ করেছি,ফোন করেছি অজান্তা!আমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাচ্ছি বোধ হয়!আমাকে বাঁচাও!”
রোদ্দুরের কন্ঠে গভীর আকুতি।অহির বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে গেল।রোদ্দুরের হাত শক্ত হয়ে আসছে।তাকে যেন আজ বুকের খাঁচায় ঢুকিয়ে ছাড়বে।অহির পিঠের কাছে কাঁটা চামচের মুখ বিঁধে যাচ্ছে।মগের কোণা গায়ে চেপে যাচ্ছে যেন।এই ছেলে এমন গাধা কেন?হাতের জিনিস গুলো কি ছুঁড়ে ফেলে জড়িয়ে ধরা গেল না?
সে নিজেকে শক্ত করে রোদ্দুরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল,
—“আমার সাথে পাগলামি করবেন না।আমি কারো পাগলামির অংশ হতে চাই না।চুপচাপ গিয়ে শফিকের রুমে ঘুমিয়ে পড়ুন।এতরাতে শব্দ করছেন যদি মা বা বাবা জেগে যেত?”
রোদ্দুর সুবোধ বালকের মতো বলল,
—“বলতাম চা বানানোর জন্য উঠেছি।আর যদি শব্দ করা দেখে ফেলতো তাহলে বলতাম, ‘আমার দাদু মরার আগে বলেছে চা বানানোর আগে গভীর মনোযোগ দিয়ে পাঁচ মিনিট টুংটাং আওয়াজ করবি।তাহলে চায়ের স্বাদ দূর্দান্ত হবে।দাদুর ধারণা এই মধুর শব্দে জ্বীন জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।জ্বীন জাতির নজর পড়লে এমনিতে সব সুস্বাদু হয়ে যায়।’অজান্তা বলো তো ব্যাখ্যা কেমন হয়েছে?তোমার ভাই বলেছে, আমি নাকি গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারি না।সেজন্য চেষ্টা করছি গুছিয়ে মিথ্যে বলার।”
অহি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রোদ্দুর জিভ কাটল।আমতা আমতা করে বলল,
—“ভেরি স্যরি অজান্তা!একবার তুমি আমার হয়ে যাও!কসম!আমি আর মিথ্যা বলবো না।বিশ্বাস হচ্ছে না তো?এই মগ ছুঁয়ে বলছি!তুমি আমার হলেই আর মিথ্যা বলবো না।”
—“মিথ্যের ঝুড়ি খালি হলে এবার ঘুমাতে যান।”
—“বারে!এত কষ্ট করে জ্বীনের ঘুম ভাঙালাম।জ্বীন পুরষ্কার স্বরূপ একটু অমৃত খাওয়াবে না?”
অহি চরম বিরক্ত হলো।মনে মনে রোদ্দুর হিমকে জঘন্য একটা গালি দিল।তার পিঠ জ্বলছে।কাঁটা চামচের ঘা লেগেছে।চামড়া ছিঁড়ে টিড়ে গেছে বোধ হয়।এই ছেলে তার কাছে আসলেই কোনো না কোনোভাবে কষ্ট দেয়।সে নরম গলায় বললো,
—“আপনি সারারাত এখানে থাকুন বা জাহান্নাম করুন।আমার কিচ্ছুটি আসে যায় না।আমি এখন রুমে গিয়ে ঘুমাব।খবরদার!ঢোল পিটিয়ে জ্বীন ডাকুন বা পাশের বাসার রিনা ভাবিকে ডাকুন আই ডোন্ট কেয়ার!শুধু আমার কানে যেন না যায়।”
অহি সরে আসতে নিতে রোদ্দুর বাম হাত চেপে ধরলো।অহি তার ধরে রাখা হাতটার দিকে তাকালো।তার হাগ ধরে রাখা রোদ্দুরের ফর্সা লোমযুক্ত হাতটা ঠকঠক করে কাঁপছে।রোদ্দুর যতবার তার কাছে আসে ততবার সে এভাবে কাঁপে।তারপরো কাছে আসা বাদ দেয় না।
অহি গম্ভীর হয়ে বলল,
—“আপনার কি কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে?কাঁপছেন কেন ঠকঠক করে?”
রোদ্দুরের চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।সে অহির হাত ছাড়লো না।তবে নিজের বাম হাতে ধরে রাখা মগ আর কাঁটাচামচ নিচু হয়ে ফ্লোরে নামিয়ে রাখলো।
অহি ভেবেছিল হাত মুক্ত করে হয়তো বাম হাতেও তার হাত চেপে ধরবে।কিন্তু অহিকে অবাক করে দিয়ে রোদ্দুর বাম হাতে নিজের ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা হাতের কবজি চেপে ধরলো শক্ত করে।কাঁপুনি থামানোর জন্য।তবুও তার হাতের কাঁপুনি কমছে না।এখন অহির ধরে রাখা হাতসহ দুই হাতই ক্রমাগত কাঁপছে।
অহির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।রোদ্দুরের রক্তহীন ফ্যাকাশে মুখ দেখে তার নিষিদ্ধ একটা কাজ করতে মন চাইলো।বহু বছর পর সে নিজের মনের কথা শুনলো।উঁচু হয়ে রোদ্দুরের বাম গালে চুমু খেল
(চলবে)