গল্পের নাম:হ-য-ব-র-ল,পর্ব_০২
লেখনীতে:অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
অহি বিস্ফারিত নয়নে রোদ্দুরের পেটের দিকে তাকালো।চোখ সরিয়ে এপ্রোনের নিচের অংশ হাত থেকে একটানে ছাড়িয়ে নিল।বিস্ময় মাখা গলায় বলে উঠলো,
‘কি উঠেছে?’
‘লেবার পেইন ডক্টর!প্লিজ একটু হেল্প করুন।’
‘লেবার পেইন কখন উঠে জানেন?’
রোদ্দুর কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।পরক্ষণে দুহাতে নিজের পরণের মেরুন রঙের শার্টটার কলার উঁচু করলো।গুটানো হাতায় আরেক বার ছুঁয়ে দিল।ডান হাতে মাথার পরিপাটি চুলগুলো আরেকবার ব্রাশ করে বলল,
‘অজান্তা,আপনি কিন্তু আমায় আন্ডারস্টিমেট করছেন।আমি কে সে বিষয়ে আপনার কোনো আইডিয়া আছে আপনার?নাহ!নেই!আমি হলাম এই পৃথিবীর সবচেয়ে হার্ড সাবজেক্ট।আমাকে ধারণ করা এত সহজ নয়।সূত্রের সহজ ও বিকল্প পদ্ধতি অনুসিদ্ধান্তের মতো আমার একটা সহজ রূপ আছে।সেটা হলো আমি একজন সফল সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার।চুয়েট থেকে থার্ড ডিভিশনে পাস করেছি।এই রোদ্দুর হিমের কাজ পছন্দ না বলে কোনো জব করছি না।’
‘রোদ্দুর হিম,রাইট?লেবার পেইন কখন উঠে বলেন।আমি জানি না,জানতে চাই!’
‘হে হে হে!ডেলিভারি পেইন।’
অহি নিজের মুখে হাত রাখলো।স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
‘তাহলে কোন যুক্তিতে বলছেন আপনার লেবার পেইন উঠেছে?আপনি মা হতে চলেছেন?’
রোদ্দুর অবাক কন্ঠে বলল,
‘মিস অজান্তা অহি।আপনি কি মানসিক ভাবে সুস্থ?আমার তো মনে হচ্ছে না।আমি মা হবো কেন?বিয়েই তো করিনি!তাছাড়া বিয়ে করলে বড়জোর বাবা হবো!মা তো হবে আপনার মতো কোনো নারী!’
‘তাহলে বললেন যে আপনার লেবার পেইন উঠেছে?’
‘নাউজুবিল্লাহ!আমি তো বললাম আমার ভাবীর লেবার পেইন উঠেছে।আপনি ভুল শুনেছেন।তাই বলে এতটা ভুল?আচ্ছা,বাদ দিলাম।আপনি প্লিজ এবার আমার সাথে আসুন!’
অহি সন্দেহের দৃষ্টিতে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।ছেলেটাকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।চাল -চলন,কথাবার্তা ভয়ানক সন্দেহজনক।সে আর মাথা ঘামাল না।রোদ্দুরকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে সামনে এগিয়ে যেতে রোদ্দুর আবার সাদা এপ্রোণের নিচের অংশ টেনে ধরল।অহি বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘আপনি তো ভারী অসভ্য।টানাটানি করছেন কেন?ছাড়ুন বলছি!’
রোদ্দুর চোখে মুখে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বলল,
‘ভাবীর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে।আমার একটিমাত্র ভাইয়ের এই একটিমাত্র বউ।আপনি প্লিজ আসুন।এই একটু দূরে ১৩ নাম্বার কেবিনে পেশেন্ট।’
‘আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না।আপনি একটা কিন্তু-পার অর্থাৎ বাটপার।বুঝতে পেরেছেন?’
‘আমি সত্যি বলছি ডক্টর।এবার কিন্তু আপনাকে জোর করে নিয়ে যাব।’
অহি বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল।সে না গেলে তুলে নিয়ে যাবে?এই ভরা ট্রেনে,আনুমানিক ৭০০ যাত্রীদের মাঝে থেকে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে?সে এক ঝটকায় এপ্রোন টেনে ঘুরে দাঁড়াল।
রোদ্দুর লম্বা একটা দম নিল।থুথু ছিটিয়ে বুকে ফু দিল।সে এখন সাংঘাতিক একটা কর্ম করবে।খুবই সাংঘাতিক!ট্রেনের লম্বা করিডোরের দুই পাশে সে নজর বুলাল।কাউকে চোখে পড়ছে না!
অতঃপর সে দ্রুত কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে হ্যাঁচকা টানে অহিকে নিজের দিকে ঘুরাল।অহির বিস্ময় মিশ্রিত মুখের দিকে না তাকিয়ে এক ঝটকায় তাকে কোলে তুলে নিল।তারপর দিল ভৌ দৌঁড়।মনে মনে উল্টো কাউন্ট শুরু করলো।তার হিসেব মতে মেয়েটার বিস্ময় ভাব কাটতে ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড লাগবে।তারপর সে চিৎকার করবে।তার চিৎকার করার আগেই লিরা ভাবীর কেবিনে পৌঁছাতে হবে।কেবিনে পেশেন্ট দেখে এই মেয়ের সব ভুল ভেঙে যাবে।
সে মনে মনে কাউন্ট ডাউন শুরু করলো,
‘এইট,সেভেন,সিক্স,ফাইভ,ফোর,থ্রি,টু……..’
কেবিনের দরজা খোলার আগেই ঠাস করে রোদ্দুরের গালে চড় পড়লো।থাপ্পড় খেয়ে ভয়ানক চমকে উঠল সে।বিস্ফারিত নয়নে তার দুহাতের মাঝে শায়িত অবস্থায় থাকা অহির দিকে তাকালো।অহির চোখ দিয়ে আগুনের হল্কা বের হচ্ছে।যার একটুখানি আঁচে রোদ্দুরের ভেতরটা পুড়ে ছারখার হয়ে গেল।নিজেকে সামলে ছাড়া ছাড়া ভাবে বলল,
‘অজান্তা,আপনি আমার কোলে উঠে থাপ্পড় মারলেন?’
‘তাছাড়া কি করবো?বাবু বাবু বলে গলা জড়িয়ে ধরবো?এক্ষুণি নিচে নামান বলছি!’
‘নেহায়েত আমার হাত দুটো বন্দী বলে বেঁচে গেলেন।না হলে আপনার গালেও দুটো পড়তো!থাপ্পড় নয়,চুমু!’
বলে রোদ্দুর অপেক্ষা করলো না।হাত দুটো ঢিলে করে ছেড়ে দিতে অহি ভয়ার্ত চেহারায় গলা জড়িয়ে ধরলো।শেষ মুহূর্তে রোদ্দুর ধরে ফেলল।তার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটুকু সারা মুখে বিস্তৃত হলো।সে এক পায়ে কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল।অহিকে নামিয়ে দিয়ে এক নিঃশেষে বলল,
—‘মা,ভাবী!ডক্টর নিয়ে এসেছি।আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।কিছু লাগলে অবশ্যই জানাবে।’
রোদ্দুর দ্রুত বাইরে বের হয়ে দরজা টেনে লাগিয়ে দিল।দরজার সাথে পিঠ লাগাতে তার হাত পা নিস্তেজ হয়ে আসল।শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে।সে বুকে হাত চেপে পা টান টান করে ফ্লোরে বসে পড়লো।চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ সময় নিয়ে ফুসফুস ভরে শ্বাস নিল!মেয়েটাকে কোলে তোলার পর থেকেই তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।কি এক অসহ্যকর ছোঁয়া।দম বন্ধ করা অনুভূতি!মেয়েটাকে ছুঁয়ে দেয়ার পরো সে যে বেঁচে আছে এই অনেক।
‘আপনি কি অসুস্থ?’
রোদ্দুর মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো সাদা পোশাকের এটেনডেন্ট!বাম হাতে একটা নোটপ্যাড,ডান হাতে কালো কলম।কলমের হেড নেই।সে ছন্নছাড়া দৃষ্টি মেলে বলল,
‘অামাকে কি দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে ব্রাদার?’
‘এভাবে পা ছড়িয়ে বসে আছেন কেন?এখানে বসে থাকা যাবে না।এগুলো নিয়ম বর্হিভূত।স্পেশাল কেবিন এগুলো।সরে যান!’
রোদ্দুর উঠে দাঁড়ালো।এটেনডেন্টের দিকে চেয়ে বলল,
‘ব্রাদার,এই দুটো কেবিনে আমি পরিবার নিয়ে যাচ্ছি।’
‘তাহলে বাইরে কেন এভাবে?’
লোকটার দৃষ্টি সরু হচ্ছে।রোদ্দুর হেলাফেলা করে কিছু বলার চেষ্টা করতে কেবিনের দরজা একটুখানি খুলে গেল।ভেতরে অহির ভয়ার্ত মুখ দেখা গেল।সে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল,
—‘মি. রোদ্দুর!এই বরাবর যান!গিয়ে ১৯ নাম্বার কেবিনে নক করুন।মধ্য বয়স্কের এক লোক বের হবে।আমার বাবা উনি।উনাকে গিয়ে বলুন যে,আমার ডাক্তারি ব্যাগটা এক্ষুণি দরকার!দিতে নিমরাজি হলে বাবাকে সাথে করে নিয়ে আসবেন।দ্রুত যান!’
রোদ্দুর মাথা নেড়ে ছুট লাগাল।অহি এটেনডেন্টের দিকে চেয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘একটা ঘটনা ঘটে গেছে।এই কেবিনে একজন অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে যাচ্ছিল।আকস্মিক ভাবে তার ডেলিভারি পেইন উঠেছে।রোগীর পানি ভাঙা শুরু হয়ে গেছে।মিনিট বিশেকের মধ্যে বাচ্চা হবে।আপনি কি এই রুমের এসিটা বন্ধ করে দিতে পারবেন?’
এটেনডেন্ট মাথা চুলকে বলল,
‘ম্যাডাম,এটা সরকারি ট্রেন।কোনো জিনিসের ইয়ত্তা নেই।ট্রেনের বেশকিছু কেবিনের রিমোট কন্ট্রোল নেই।অটো চলে।তবুও আমি ব্যবস্থা করছি।’
লোকটা চলে যেতে অহি দরজা আটকে দিল।সে এগিয়ে গিয়ে লিরা নামক মেয়েটাকে ফ্লোরে আধ শোয়া করে রাখলো।ডেলিভারিতে তেমন জটিলতা দেখা যাচ্ছে না।তবুও তার হাত পা কাঁপছে।গলা শুকিয়ে আসতে চাইছে।সে মনকে নিয়ন্ত্রণ করার চাবিকাঠি মস্তিষ্ককে দিয়ে দিল।ঝরঝরে গলায় বলল,
‘আন্টি, কিছু এক্সট্রা কাপড় বের করুন।’
হাজেরা পাশ থেকে লাগেজ টেনে তার বেশকিছু নতুন শাড়ি বের করে দিল।পানির বোতলটা পাশেই ছিল।অহি সেটার মুখ খুলে রাখলো।কেবিনের দরজায় টোকা পড়ছে।সে এক হাত বাড়িয়ে নিজের কালো চামড়ার ব্যাগটা ভেতরে টেনে নিল।প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে লিরার পা উঁচু করে ধরলো।
লিরার চোখ মুখ ব্যথায় নীল হয়ে গেছে।মুখ দিয়ে অস্ফুট শব্দ করছে।নিজেকে ভেঙ্গে চূড়ে নতুন করে গড়ছে যেন।হঠাৎ এক আর্তচিৎকার দিয়ে নিস্তেজ হয়ে গেল সে।
প্লাসেন্টার সঙ্গে শিশুর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।এখনো নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেয়া শুরু হয়নি।অহি শিশুটির পিঠে ছোট্ট একটা থাবা দিল।তৎক্ষনাৎ শিশুটি কাঁদতে শুরু করলো।যেন তেন কান্না নয়,গগনবিদারী চিৎকার।তার ফুসফুস সচল হয়েছে,মারাত্মক সুন্দর পৃথিবীতে সে প্রবেশ করলো।কত না বিস্ময় তার চোখে!
খুশিতে অহির চোখ ভিজে উঠলো।তার ইন্টার্নসহ দেড় বছরের ডাক্তারি জীবনে এত খুশি কোনোদিন হয়নি।অপার আনন্দ নিয়ে সে শিশুটিকে বলল,
‘অনিন্দ্য সৌন্দর্যের এই পৃথিবীতে তোমায় স্বাগতম লিটল এঞ্জেল।ওয়েলকাম!’
২.
উসমানী আলী বেকায়দায় পড়েছেন।এই মুহূর্তে তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মনে হচ্ছে।ভেতরে ভেতরে ছটফটের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন তিনি কিন্তু কিছু করতে পারছেন না।চোখের সামনে যেন সর্ষে ফুল দেখছেন।তিনি ঝপ করে বুফে কারের বেঞ্চে বসে পড়লেন।
তার মূলত দুটো সমস্যা দেখা দিয়েছে।প্রথম সমস্যা হলো ওযু করার পানি পাচ্ছেন না।লিরার একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।লিরাও সুস্থ আছে।সেই উপলক্ষে তিনি শোকরানা নামায আদায় করবেন,অথচ অযুর পানি মিলছে না।দুপুরের দিকে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে অযু করে তিনি ট্রেনে উঠেছিলেন।তাদের উদ্দেশ্য খুলনা!পথিমধ্যে তিনি অযুর কথা ভুলে রোদ্দুরকে মনে মনে বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়েছেন।গালি দেওয়ার পরো অযু থাকার কথা না!
দ্বিতীয় সমস্যা হলো ট্রেন চলছে এলোমেলো গতিতে সর্পপদক্ষেপ অনুসরণ করে।কখনো উত্তর দিকে তো কখনো দক্ষিণ দিকে।একটু পর পর বাঁক ঘুরছে।কিন্তু কিবলা হলো পশ্চিম দিকে।এখন তার মনে খটকা লাগছে কোন দিক হয়ে নামায আদায় করবেন!
মনে মনে নিজেকেও জঘন্য একটা গালি দিলেন তিনি।এই বিষয়ে আগে থেকে হাদিস জেনে রাখা উচিত হলো।অথবা মসজিদের বড় ইমামের থেকে জেনে স্মরণে রাখা উচিত ছিল।এতবড় উচিত কাজ না করার জন্য নিজেকে ঠাস করে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে।
‘আরে উসমান আলী যে!চা খাচ্ছেন নাকি?’
উসমান আলী চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলেন তার চেয়ে একটু বয়স্ক এক লোক কিছুটা কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।লোকটির মুখ হাসিহাসি।মাথার সম্পূর্ণ চুল সাদা।গায়ে ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি!তাকে অনেকটা মুনী ঋষিদের মতো লাগছে।এই লোকটিকে তিনি চিনেন।লিরা মায়ের চিকিৎসা করা সেই ডাক্তার মেয়েটির বাবা জনাব লুৎফর রহমান ইনি!তিনি মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে বললেন,
‘চা আমি পছন্দ করি না।বসে বসে আরাম করছি।’
লুৎফর রহমান এসে উসমান আলীর পাশে বসলেন।এক কাপ চা হাতে নিয়ে বললেন,
‘আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না বসে থেকে আরাম পাচ্ছেন ভাইসাহেব!’
‘তা ঠিক বলেছেন।আরাম পাচ্ছি না!’
‘লুডু খেলবেন?’
উসমান আলী ভয়াবহ ভাবে চমকে উঠলেন।অভ্যাসবশত মাথাটার টুপিতে হাত ছুঁইয়ে দেখলেন ঠিক আছে কি না!কি সর্বনেশে কথাবার্তা!তিনি গলার স্বর উঁচিয়ে বললেন,
‘কি খেলবো?’
‘লুডু!আপনাদের গন্তব্য খুলনা।আমাদেরও।খুলনা পৌঁছাতে এখনো অনেক সময় লাগবে।চলুন,সময় কাটা্নোর জন্য কয়েক দান লুডু খেলি!’
‘আপনি চলন্ত ট্রেনে লুডু কোথায় পেলেন?’
লুৎফর রহমান চায়ের কাপে পর পর কয়েক চুমুক দিলেন।মুখ দিয়ে সুখানুভূতির শব্দ করে বললেন,
‘আমার মেয়ে অহির কাজ!যেকোনো জার্নিতে সে লুডু নিয়ে যাবে এবং বাপ মেয়ে সমস্ত পথে কয়েক দফা লুডু খেলা তার অভ্যাস।তা খেলবেন ভাই সাহেব?’
উসমান আলী উত্তর দিলেন না।তার গা ম্যাজ ম্যাজ করছে।পাশের এই বুড়োটাকে অসহ্য লাগছে।একে অবশ্য বুড়ো বলা চলে না।কারণ সে নিজেও বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন!ফুটো বেলুনের মতো একের পর এক বছরগুলো চুপসে যাচ্ছে।পাশের ভদ্রলোককে বুড়ো বলার জন্য তিনি মনে মনেই তওবা কাটলেন।
৩.
রোদ্দুর গভীর আগ্রহ নিয়ে ধারালো কিছু খুঁজছে।এই মুহূর্তে ছুরি টাইপের ধারালো কিছু তার খুবই প্রয়োজন।তবে মানুষ খুন বা কাউকে আঘাত করার জন্য নয়!নিজেকে আঘাত করার জন্য।ডক্টর অজান্তা অহি তাকে একদমই পাত্তা দিচ্ছে না।তার থেকে পাত্তা আদায় করার জন্য এই মুহূর্তে তার নিজেকে একটু রক্তাক্ত করা প্রয়োজন।
নিজের ব্যাগটা সে উল্টে পাল্টে ফেললো।ধারালো কিছু চোখে পড়লো না।ভীষণ মর্মাহত হলো সে।কিছুক্ষণ ইতি উতি করতে ব্যাগের ছোট্ট চেইনে থাকা রেজারের দিকে তার নজর পড়লো।খুশিমনে সেটা হাতে নিয়ে ডান হাতের শাহাদাত আঙুলের ডগার কাছে নিল।সঙ্গে সঙ্গে তার বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠলো।এভাবে ভালো ত্বক কেটে ফেলবে?সে তো ব্যথা একদম সহ্য করতে পারে না।কি মুশকিল!
কিন্তু অহির পাত্তা তার চাই-ই চাই!চোখ বন্ধ করে সে আঙুলের ডগায় একটা টান দিল।অতঃপর রেজারটা ঢিল দিয়ে ফেলে রেখে অহির কেবিনের দিকে ছুট লাগাল।
কেবিনের দরজা টেনে চিড়বিড় করে বলল,
‘অজান্তা, আমার হাত উড়ে গেছে।কব্জি থেকে খসে পড়েছে।মরে গেলাম!’
(চলবে……)
গল্পটি কিছুটা সামাজিক এবং রোমান্টিক ক্যাটাগরির হবে।বেশকিছু পর্ব ট্রেনে ঘটবে।আবার চলন্ত ট্রেনে শুরু হয়ে চলন্ত ট্রেনেই শেষ হতে পারে।পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে।🤎