অপ্রকাশিত ভালোবাসা,পর্বঃ২৭+২৮
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ২৭
সবাই ঘুমাতে যাওয়ার পর আমরা ছোটরা ছাদে আসলাম আড্ডা দেয়ার জন্য এটা আমাদের পুরনো অভ্যাস। আবির ভাইয়া আসলেই রাতে ছাদে গিয়ে গল্প করি। আমি ছাদে গিয়ে চিলেকোঠার ঘর থেকে একটা মাদুর এনে বিছিয়ে সেখানে বসে পরলাম। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,
গাইজ আজকে অনেক দিন পর যেহেতু সবাই একসাথে হয়েছি তাই আজকে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করবো আর আবির ভাইয়া তুমি কাল আমাদের ট্টিট দিবে নয়তো তোমার বিয়ে হতে দিবোনা বলে দিলাম – আমি।
একদম ঠিক বলেছিস হিয়া,, এই কথায় আমি তুর সাথে আছি – নিলয়।
বাব্বাহ ভুতের মুখে রাম নাম,, তুমি তো আমাকে দেখতেই পারোনা আবার এই কথা বলতেছ সব খাওনের ধান্ধা আমি খুব ভালো করেই জানি – আমি।
আহ হা তুর সাথে তো দেখি কথাই বলা যাবে না,, কইতরি একটা সব কথায় ফোড়ন না কাটলে শান্তি পাস না – নিলয়।
নিলয় দোকানে যাইয়া কিছু নিয়ে আয় যা,, খালি মুখে আড্ডা জমতেছেনা – সিহাব।
টাকা দে আমি গিয়া নিয়া আসি,, মাইনষের টাকা নষ্ট করতে মজা লাগে তাই না,, নিজের টাকায় খাও বুঝছ – নিলয়।
তুর কাছে টাকা নাই – রায়হান।
ঐটা তো একটা ফকিন্নি টাকা থাকবো কেমনে,, এক কাজ করো বাসার নিচে থাল নিয়া বসো আমি গিয়ে টাকা দিয়ে আসবো,, যাও থাল টা খুজে বের করো গিয়ে (সবাই হেসে দিলো) – আমি।
কি রে ভাইয়া (আবির) আমাকে পচাইতেছে আর তুমি হাসতেছ আমি কিন্তু এবার চলে যাবো (মুখ ফুলিয়ে) – নিলয়।
আচ্ছা সবাই শান্ত হ আর নিলয় এই নে (কিছু টাকা দিয়ে) যা কিছু নিয়ে আয় গিয়ে,, তারপর জমিয়ে আড্ডা দিবো – আবির।
তারপর নিলয় ভাইয়া চলে যায় নিচে দোকানে আর আমরা এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম এর মধ্যেই আবির ভাইয়া বলল,,
হিয়া পড়াশোনা কেমন চলছে – আবির
ঝাক্কাস,,, সুপার ডুপার,,,, এক কথায় পরিক্ষায় ফেল মারমু – আমি।
এটা কেমন কথা,, ফেল মারবি কেন পড়াশোনা করিস না নাকি – সিহাব।
নাহ গো শুধু স্যার রে দেখি (রায়হানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে) কি হ্যান্ডসাম আমাদের সোহাগ স্যার তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবেনা। তুমি দেখলে তুমিও ক্রাশ খাবে – আমি।
কচু খাবে,, কি তোদের সেই সোহাগ স্যার রে সারাক্ষণ চোখে সানগ্লাস পরে থাকে মনে হয় যেনো কানা স্যার একটা। আর জানো ভাইয়া স্টুডেন্ট দের সারাক্ষণ জ্ঞান দেয় মেনারস পোশাক-চুল এসব নিয়ে অথচ সে নিজেই স্টাইল করে কলেজে আসে – রায়হান।
খবরদার আমার ক্রাশ কে নিয়ে কিছু বলেছ তো,,, তোমাকে আমি এখন ছাদ থেকেই ফেলে দিবো আর একবার যদি উলটা পালটা কিছু বলো – আমি।
আচ্ছা আচ্ছা এবার থাম সামান্য ক্রাশ নিয়ে এতো ঝগড়া কেনো রে রায়হান। হিয়া ক্রাশ খেয়েছে তাতে তুর জলে নাকি – আবির।
আমার কেনো জলতে যাবে,, আমি শুধু এমনি বললাম আর কি, শালা নিলয়ের কতক্ষণ লাগে আসতে ওখানে গিয়ে মেয়ে পটাচ্ছে নাকি – রায়হান।
দেড়ি হলে মেয়ে পটাবে কেন (অবাক হয়ে) -আবির।
তারে তো তুমি চিনোনা এক নাম্বারের ছেছড়া, যেখানে মেয়ে দেখবে সেখানেই নিলয়কে পাবে – সিহাব।
এইভাবে আমার মান ইজ্জত শেষ করতে পারলি তোরা, এখন কেউ আমার উপর ক্রাশ খাবে না, তখন আমার কি হবে, তখন তো আরর প্রেম করতেও পারবো না – নিলয়।
আচ্ছা এবার খাবার এসে গেছে আর সবাই একসাথে আছি তাই আমরা একটা গেম খেলবো – আমি।
কি গেম,, ফালতু গেম হলে কিন্তু আমি খেলবোনা – রায়হান।
আহ চুপ করে শোন না কি গেম,, পুরো কথা না শুনেই খেলবো না বসে দিচ্ছিস – আবির।
গেম টা হলো,, আমি আমার সঙ্গিকে একটা কথা বলবো সেই কথাটা শুনে তার মনে প্রথম যে কথাটা মনে হবে সেটাই বলতে হবে মিথ্যে বলা যাবেনা – আমি।
দারুন,, আগে কে শুরু করবে,, আর কে কার সাথে খেলবে – সিহাব।
আমি আবির ভাইয়ার সাথে আমি ভাইয়াকে প্রশ্ন করবো ভাইয়া উত্তর দিবে এখন তোমরা ঠিক করে নাও কে কার সাথে খেলবে – আমি।
আমি রায়হানকে প্রশ্ন করবো – সিহাব।
আমি নিলয়কে – রায়হান।
এন্ড আমি হিয়াকে – আবির।
আমি আবির এন্ড সিহাব ভাইয়া দুজনকেই – আমি।
আমরা খেলা শুরু করলাম,,,
আমিঃ খেলা — ফুটবল,
খাবার — খিচুড়ি
প্রথম ক্রাশ — বিজ্ঞান বিভাগের একটা মেম
হবি — পথচারী শিশুদের পাশে দাঁড়ানো
ভালোবাসা– ইরা
ইয়েএএএএএএএ আমি পেরেছি তোমার পেট থেকে কথা বের করতে পেরেছি আমি, (কিছুক্ষণ ভেব) এই ইরা টা কে কোন ইরার কথা বলছ তুমি (অবাক হয়ে) সে ইরা কি কোনোভাবে ঐ খালামনির বাসার সেই ইরা – আমি।
হুম সেই ইরা, পিচ্ছিটাকে মনে ধরে গিয়েছিল রে সেই প্রথম দেখায়, তখন বুঝতাম না ভালোবাসি তবে এসব বুঝি, তাই তো আর দেড়ি করতে চাই না খুব জলদি আমার করে নিতে চাই – আবির।
ইরা তো অন্য কাউকে ভালোবাসে আমাকে বলেছিল আর আবির ভাইয়া ইরাকে এখন কি হবে, এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হবে কোনোদিন ভাবিনি, ভাইয়া এসব জানতে পারলে ইরাকে কাচা খেয়ে ফেলবে – মনে মনে বললাম।
আচ্ছা এবার আমি নিলয়কে প্রশ্ন করি,,,,
রায়হানঃ পছন্দের নায়িকা — সাবানা (হেসে)
বেন্সনের দাম কতো — আমি কি খাই যে জানবো
খাবার — পায়েস
ভালোবাসা — আরশি (চোখের কোণে পানি)
এখনো ভালোবাসিস — পাগলের মতো
ভালোবাসলে বলো নি কেনো আরশি আপুকে – আমি।
সে অন্য কাউকে ভালোবাসে আর তার ভালোবাসার মাঝে আমি বাধা হয়ে দাড়ালে আমার ভালোবাসা মূল্যহীন হয়ে যাবে,, একতরফা ভালোবাসাতে অনেক আনন্দ আছে যা আমি ফিল করি,, আর ভালোবাসলেই যে তা প্রকাশ করতে হবে সেটা তো কোথাও লিখা নেই,, আমার #অপ্রকাশিত_ভালোবাসা নিয়ে আমি ভালোই আছি,, (মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে) এমনিতেই বিন্দাস আছি ৫-৬ টা প্রেমিকা আমার আহা কি শান্তি – নিলয়।
আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি যে নিলয় ভাইয়ার মতো ছেলে বুকের মধ্যে এতো কষ্ট নিয়ে এরকম হাসি খুশি থাকতে পারে, সবাই খুব অবাক হয়েছে এটা নিয়ে সত্যি ভালোবাসা মানুষকে কতকিছু শিখিয়ে দেয়,, কাউকে একা থাকতে শিখায়, কাউকে ভালোবাসতে শিখায়, কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শিখায়,কাউকে নিয়ে ভাবতে শিখায়, তার জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে শিখায়, তার সুখের জন্য নিজেকে গুটিয়ে নিতেও শিখায়। সত্যি ভালোবাসা বড় অদ্ভুত।
আরশি হচ্ছে নিলয় ভাইয়ার বন্ধু তারা একিসাথে ভার্সিটিতে পরে।
আচ্ছা এবার আমি কাকে প্রশ্ন করবো – নিলয়।
তুমি সিহাব ভাইয়াকে প্রশ্ন করো – আমি।
ওকে,,,, নিলয়ঃ বাবা-মায়ের মধ্যে কে প্রিয় — মা
বেষ্ট ফ্রেন্ড — রায়হান,নিলয়,আয়ান,রবিন
এমন কি কথা যা আমাদের বলতে চাস না –আমার ক্যান্সার রোগ ধরা পরেছে
মানে এসব কি বলছিস তুই (সবাই অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি) এটা মিথ্যে তাই না। আমরা কিন্তু বলেছিলাম সত্যি কথা বলতে মিথ্যে বলছিস কেনো – রায়হান।
এটাই সত্যি, আরর এই সত্যিটা আমি কখনো কাউকে জানতে দিতে চাই নি – সিহাব।
কিন্তু কেনো আগে বললে আমরা শহরের বেষ্ট ডক্টর দেখাতাম তোকে, আগে বলিস নি কেনো আমাদের – আবির।
ধুর কি বলো তোমরা, সিহাব ভাইয়া এটাও মজা করছে, আগে দেখতে না এরকম অনেক মজা করতো এখনো সেরকম মজা করছে, আর সিহাব ভাইয়া শুনো এরকম মজা করোনা আর আমাদের তো খারাপ লাগে – আমি।
আচ্ছা সেসব কথা পরে হবে (কথা এড়িয়ে) এখন খেলায় মন দাও – সিহাব।
আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি সিহাব তুই আমাদের কথা এড়িয়ে গিয়েছিস, হিয়ার জন্য তোকে এখন কিছু বলতেও পারবোনা তাহলে মেয়েটা ভয় পাবে, আমাকে যা করার পরে ঠান্ডা মাথায় ভেবে কাজ করতে হবে – মনে মনে এসব ভাবলো আবির।
এখন আমি রায়হানকে প্রশ্ন করবো – সিহাব।
সিহাবঃ ডাইরিতে কাকে নিয়ে লিখিস — আমার ভালোবাসাকে নিয়ে
সেই মানুষটাকে কি বলতে ইচ্ছে করে — খুব ভালোবাসি তাকে তবে মুখ ফোটে বলতে পারিনা
আমি না থাকলে আমাকে মিস করবি — কোথাও যেতে দিবোনা তোকে
এই বলেই রায়হান সিহাবকে জরিয়ে ধরলো, তারপর আবার খেলা শুরু হলো এবার আবির হিয়াকে প্রশ্ন করবে,,
আবিরঃ প্রথম ক্রাশ — Mr. Faisu😍😍
সবচেয়ে বেশি ভালোবাসিস কাকে — আব্বিজানকে
তুর আদরে কেউ ভাগ বসালে তাকে কি উপাধি দিবি — খচ্চর বেডা/বেডি
আমাকে কতটা ভালোবাসিস — এতটা (দু’হাত ছড়িয়ে) অনেকটা তাই না
সবাই হেসে দিলো হিয়ার কথা শুনে,, তারপর আবির ভাইয়া আমাদের বলল,, অনেক রাত হয়েছে চল সবাই ঘুমাতে যাই, হিয়া এখন আর কোনো আড্ডা দিতে হবেনা কাল কলেজে যেতে হবে তাই জলদি গিয়ে ঘুমিয়ে পর।
আবির ভাইয়ার কথা মতো সবাই রুমে এসে শুয়ে পরি, আমার ঘুম আসছেনা তাই ফেসবুকে লগ ইন করলাম সাথে সাথেই নিলার মেসেজ, তারপর নিলা আর জয়ের সাথে কিছুক্ষণ চ্যাটিং করে ঘুমিয়ে পরলাম।
______________________==______==____==__________________
আজও সকালে দেড়ি করে উঠলাম, ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিক্র তাকাতেই দেখি ৮:৪০ বাজে, আমার মাথায় বাজ,, আল্লাহ আজকেও দেড়ি,, হিয়া জলদি কর নয়তো সোহাগ স্যার তোরে আবারো দাড় করিয়ে রাখবে,, জলদি উঠে ফ্রেশ হয়ে ইউনিফর্ম পরে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আসলাম। তারপর আবির ভাইয়া আমাকে খায়িয়ে দিলো আমি দৌড়ে কলেজের দিকে ছুটলাম।
কলেজে আসেই আমার চোখ কপালে সামনে এটা কে দাঁড়িয়ে আছে…………
To be continue……………
অপ্রকাশিত ভালোবাসা
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ২৮
আমি কলেজে এসে আমার চোখ কপালে। মিমি (জয়ের মা) নিলাকে জেরা করতেছে মানে নিলাকে আচ্ছা মতো ঝারতেছে। তাই আমি এগিয়ে মিমির সামনে দারালাম,,
মিমি তুমি এখানে কেনো,, আর নিলাকে এভাবে ঝারতেছ কেনো – আমি।
আরে হিয়া ভালো হয়েছে তুই এখানে আছিস,, দেখ এই মেয়েটা (নিলা) আমার জয়ের ফোনে কল দিয়েছিলি,, আমি ফোনটা রিসিভ করাতে যাচ্ছে তাই করে কথা শুনালো আমাকে। বড়দের সম্মান করতে শিখেনি এখনো – মিমি।
আমি নিলার দিকে তাকাতেই দেখি বেচারি করুণ মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,, তাই আমি মিমিকে বললাম,,
মিমি শুনো চলো ক্যান্টিনে বসে আমরা কথা বলি। নিলা তুই ও চল আমাদের সাথে।
তারপর মিমিকে নিয়ে ক্যান্টিনে বসলাম,,
মিমি নিলা আর তোমার শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট গুণধর ছেলে একটা রিলেশনশিপ এ আছে,, নিলা হয়তো ভেবেছিল কোনো অন্য মেয়ে জয়ের ফোন রিসিভ করেছে তাই সে তোমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে এবার তোমার কাছে সব ক্লিয়ার তো – আমি।
ধুর কি বলিস আমার জয় প্রেম করতেই পারেনা,, কতো ভালো আমার ছেলে তুই আমার ছেলের নামে বদনাম করছিস – মিমি।
না আন্টি আসলে হিয়া সত্যি বলছে,, আমি জয়কে ভালোবাসি আর জয় ও আমাকে অনেক ভালোবাসে (মাথা নিচু করে) ফোনের ব্যাপারটার জন্য আমি দুঃখীত। আমি আসলে বুঝতে পারিনি – নিলা।
আচ্ছা ঠিক আছে মেয়ে এবারের মতো তোমাকে মাফ করলাম,, আর আমার গুণধর ছেলেকে বলো তার আজকে বাসায় যেতে হবেনা মাকে লুকিয়ে প্রেম করছে,, করুক তার আমার বাড়িতে যায়গা নেই – মিমি।
টিপিক্যাল মাদার ইন ল দের মতো হইছে এতক্ষণে জিও মিমি,, ঐ নিলা শাশুড়ি মার থেকে কিছু শিখে রাখিস – আমি।
নিলা হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,, আর ভিতরে ভিতরে প্রচুর ভয় পাচ্ছে। মিমি গিয়ে নিলার পাশে বসে আর বলে,,,
শুনো মেয়ে আমি স্টার জলসার শাশুড়িদের মতো একদমি না,, ভুল করলে শাস্তি পেতে হবে আর আমার মেয়ে হয়ে থাকলে আমার ছেলেকে আর আমার সংসারটাকে দেখে রাখতে হবে – মিমি।
আপনি মেনে নিয়েছে আমাকে,, সত্যি এটা কি শুনছি আমি,, হিয়া আমাকে একটা চিমটি কাট -নিলা
হইছে আর ঢং করতে হইবো না ঢংগি,, মিমি এখন বলো কি খাবে – আমি।
আন্টি বলেন কি খাবেন – নিলা।
আমি কিছুই খাবোনা এখন,, আমাকে বাসায় যেতে হবে ওদিকে অনেক কাজ ফেলে এসেছি তোমরা ক্লাস করো আমি এখন যাই,, নিলা ভালো থেকো,, হিয়া নিলাকে নিয়ে আমার বাড়িটা দেখিয়ে আসিস। গেলাম,,, আল্লাহ হাফেজ – মিমি
আল্লাহ হাফেজ – নিলা&আমি।
মিমি চলে।যাওয়ার পর আমরা সব ক্লাস করে বাসায় চলে আসলাম।।
________________________
এভাবেই কেটে গেলো কিছু দিন,,, আজকে হিয়ার ১৮ তম জন্মদিন। তাই রায়হান ঠিক করেছে আজকে হিয়াকে তার মনের কথা জানাবে,, সেই অনুযায়ী সব প্ল্যানিং করে সবাইকে জানিয়ে দিলো সে।
প্রতিদিনের মতো আজও আমি ঘুম থেকে উঠে বাগানে গেলাম। কাল রাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি তাই মনটা ভালো নেই। কেনো যেন মনে হচ্ছ আজ কিছু একটা হারিয়ে ফেলবো আমি। আমার খুব প্রিয় কিছু আমার থেকে দূরে চলে যাবে। এমনটা কেনো মনে হচ্ছে সেটা আমার অজানা। তাহলে কি আমার মনে আশঙ্কা সত্যি হয়ে যাবে আমি আমার কাছে কাউকে হারিয়ে ফেলবো। ধুর কিছু ভালো লাগছেনা। যতই এসব মনে করতে না চাইছি ততোই যেন মনে এসবি আসছে। আল্লাহ প্লিজ খারাপ কিছু করোনা কারো সাথে। সবাইকে সুস্থ রেখো ভালো রেখো। আমি এসব মনে মনে চিন্তা করছিলাম তখনি কেউ আমার কাধে হাত রাখে আমি ঘার ঘুড়িয়ে তাকাতেই দেখি ভাইয়ু দারিয়ে আছে।
কিরে এখানে দারিয়ে আছিস কেনো,, কলেজে যাবিনা আজ – রায়হান।
ভালোলাগছেনা কাল রাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি এখন সেটা মাথায় যেকে বসে আছে – আমি।
একটা দুঃস্বপ্নের জন্য এভাবে মন খারাপ করে আছে আমার মহারাণী সাহেবা। এসব কুসংস্কারে তুই কবে থেকে বিশ্বাস করা ধরলি বল তো, মন খারাপ করে থাকলে তোকে ভুত্নির মতো লাগে,, এবার জলদি করে আমাকে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দে তো দেখি (আমি ভাইয়ুর কথা শুনে মুচকি হাসলাম) হুম এবার আমার মহারাণীর মতো দেখাচ্ছে। সব সময় এভাবেই হাসি খুশি থাকবি। তোকে এভাবেই সব থেকে বেশি ভালো লাগে – রায়হান।
কি যে বলোনা তুমি – আমি।
না রে সত্যি বলছি,, আমি কখনো চাই না তুর মুখ আধারে ঢেকে থাকুক। আমি চাই তুই ভালো থাকবি সাথে তোর আশেপাশের সবাইকে ভালো রাখবি। তুর মুখের ঐ। মিষ্টি হাসিটা যেন সারাজীবন অটুট থাকে হিয়া। ঐ হাসিটাকে কখনো মুছে যেতে দিবিনা। কিরে রাখবিনা আমার কথা – রায়হান।
তুমি এসব কেনো বলছ আজ সেটা বলো আমাকে – আমি।
কোনো কারন নেই আমার হিয়া রানী। শুধু এটা জানি আমি আজ যা বলবো তাই শুনবি তুই সারাজীবন শুনবি,, বল শুনবি তো আমার কথা – রায়হান।
হুম সব শুনবো বলো – আমি
হুম শুনতে হবে,, শুন আমি যখন থাকবোনা তখন তুই আব্বু আম্মু সবাইকে দেখে রাখবি। আর এই বাড়ি থেকে কোথাও যাবিনা। প্লিজ আমার আব্বু আম্মুর খেয়াল রাখিস তুই – রায়হান।
তোমার কি হয়েছে বলোতো তুমি আমাকে এসব কেনো বলছ আর কোথায় যাবে তুমি আমাদের ছেড়ে। তোমাকে আমরা কোথাও যেতে দিবোনা বলে দিলাম – আমি।
কোথায় যাবো আমি,, আজকে বিকেলে একটা বন্ধুর বাসায় যাবো কাল আসবো তাই তোকে বললাম আব্বু আম্মুর খেয়াল রাখবি,, আর নিজেরো খেয়াল রাখবি – রায়হান।
কোথাও যেতে হবেনা তোমাকে – আমি।
বাচ্চামি করেনা হিয়া,, আমি তো চলে আসবো। আর শুন আজ রাতে একবার আমার ঘরে যাবি তারপর আলমারির লকার খুললেই একটা কালো ডাইরি পাবি। ওটা নিজের কাছে নিয়ে এসে পড়বি আর অনেক যত্নে রাখবি কিন্তু। ওটায় তোর জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে – রায়হান।
এখনি গিয়ে দেখে আসি আমি – আমি।
না এখন না,, রাত ৮ টায় দেখবি। ঠিক আছে – রায়হান।
আচ্ছা।
আর শুন পড়ায় ফাকি দিস কেনো এতো,, তোর টিচার আমার কাছে বিচার দিছে কিন্তু,, ঠিক মতো পড়াশোনা করবি,, নয়তো তোরে কেউ বিয়ে করবে না – রায়হান।
এখন সেই ছোট্ট হিয়াটা থাকলে বলতো— তুমি আছো তো আর কাউকে বিয়ে করতে হবেনা (হা হা হা) – আমি।
আমি তো সেটাই চাই – মনে মনে বললাম আর মুখে বললাম,,,হিয়াপাখি তো এখন বড় হয়েছে তাই না তাই তাকে সব বুঝতে হবে। আর জীবন তোর তাই যা সিদ্ধান্ত নিজেই নেয়ার চেষ্টা করবি। যা করবি কয়েকবার চিন্তা করে তারপর কাজের এক ধাপ আগাবি। মনে রাখবি আমি সবসময় তোর পাশে আছি আর থাকবো – রায়হান।
আজকে কি হয়েছে বলো তো,, কিসব আজেবাজে কথা বলতেছ। তুমি আজকে কোথাও যেওনা তোমাকে ছাড়া আমাদের কিছু ভালো লাগেনা। প্লিজ যেওনা – আমি।
কলেজে যেতে হবেনা আপনার হা,, ঘড়ির দিকে তাকান একবার ৮:৩৫ বাজে। যা গিয়ে তৈরি হয়ে আয় আজ আমি তোকে কলেজে নিয়ে যাবো – রায়হান।
আমি ভাইয়ু কে বায় বলে বাসায় চলে আসলাম তৈরি হয়ার জন্য।
হিয়া চলে যাওয়ার পর রায়হান বাগানে চেয়ারে বসে পরে তারপর মনে মনে বলে,,,,আমি আজকে হিয়াকে এসব কেনো বলেছি। আজকেই কেনো এসব চিন্তা – ভাবনা আমার মাথায় আসলো। সত্যি বলছি হিয়া আমি জানিনা কেনো তোকে এসব কথা বলেছি আমি। তবে আমার ভয় করছে তোরে হারানোর ভয়। সব পারি কিন্তু তোরে ভুলে থাকবো কিভাবে আমি। আচ্ছা হিয়া আমাকে ছাড়া কি তুই ভালো থাকবি। আমাকে কি একটুও মনে পরবেনা তোর। আজকে কি হবে সেটাই ভাবছি আমি তুই কি আমাকে মেনে নিবি। নাকি রিয়েক্ট করবি আচ্ছা কেমন রিয়েক্ট করবি তুই। আমাকে কি মারবি খুব করে নাকি ভালোবেসে একটুখানি আদর দিবি আমাকে। ধুর এতো ভাবতে পারছি না আমি যা হবার রাতেই হবে এখন হিয়াকে নিয়ে কলেজে যাই।।।
এসব ভেবে নিজের মাথায় হালকা করে একটা বারি দিয়ে বাসায় চলে আসে…..
To be continue…..