অপ্রকাশিত ভালোবাসা,পর্বঃ ২১ +২২
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ২১
আমি নিচে এসে অবাক হয়ে গেলাম কারন। ড্রয়িংরুমে নিল আর মেঘলা ইসরাতকে নিয়ে খেলছে ওদের পাশে ভাইয়ু ছোট ফুপ্পি আর মামনি বসে আছে। আমি দৌড়ে সিরি বেয়ে নিচে ড্রয়িংরুমে আসলাম।
নিল মেঘলা কখন এসেছো তোমরা – আমি।
তুমি তো আমাদের ভুলে গেছো একটিবারের জন্য ও দেখতে যাও না আমাদের তাই আমরাই আজ চলে এলাম তোমায় দেখতে – মেঘলা।
মেঘু সোনা পরীর পক্ষ থেকে অনেক সরি। আসলে কিছুদিন খুব ব্যস্ত ছিল তোমাদের পরী (কান ধরে) সরি আমার কলিজা গুলা এবারের মতো মাফ করে দাও – আমি।
মাফ করতে পারি যদি আমাকে তোমার ছোট বোনের জামাই বানাও – নিল।
এ্যা এখন আবার কাকে পছন্দ হলো তোমার – আমি।
এই পিচ্ছি (ইসরাত) মেয়েটাকে আমি বিয়ে করবো – নিল।
কিন্তু ও তো অনেক ছোট কি করে বিয়ে করবে তোকে – মেঘলা।
উফ বিয়েতো এখন করবোনা বড় হলে করবো। পরী তোমার বোনের জামাই বানাবে তো আমাকে – নিল।
হুম বানাবো তো আমার নিল সোনামণি টা আগে বড় হোক তারপর বোন জামাই বানাবো। এখন তোমরা কি খাবে বলোতো – আমি।
আমি চকলেট – নিল।
আমি আইসক্রিম – মেঘলা।
না বাবু এখন এসব খাওয়া যাবে না তোমরা এখন পাস্তা খাবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো আমি তোমাদের জন্য পাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসছি – আমি।
আচ্ছা পরী – নিল&মেঘলা।
আমি রান্নাঘরে চলে আসলাম। নিল আর মেঘলা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে ক্লাস ২ তে পড়ে এখন দুজনে তবে খুব দুষ্টুমি করে। নিলের দুষ্টুমির কথা বললে কম পরে যাবে। নিলের যাকে ভালো লাগবে সে তাকেই বিয়ে করবে। এরকম হাজারো দুষ্টুমি ঘুরে নিল আর মেঘলার মাথায়। তবে হিয়ার প্রতি ভালোবাসা এখনো কমেনি তাদের সপ্তাহে এক বার করে হলেও তাদের দেখে আসতে হবে হিয়ার।
আড়াল থেকে হিয়ার মামনি আর মা সব দেখছে তারা অবাক হচ্ছে এটা ভেবে যে, হিয়া নিজেই এখনো একটা বাচ্চা কিন্তু নিল আর মেঘলার খেয়াল হিয়া নিজেই রাখছে। যে মেয়েকে হাজার বলেও রান্নাঘরে নিতে পারেনি সে হিয়া আজ দুটু বাচ্চার জন্য নিজে থেকেই রান্নাঘরে চলে আসলো পাস্তা বানানোর জন্য। তাদের মন আনন্দে ভরে উঠছে এসব ভেবে।
আমি পাস্তা বানিয়ে নিল আর মেঘলাকে চামচ দিয়ে খায়িয়ে দিলো। তারপর অনেক্ষন তাদের নিয়ে গল্প করলো। নিল মেঘলা বায়না ধরলো হিয়াকে এখন তাদের সাথে খেলতে হবে। নিল সাহেবের বায়না কি হিয়া ফেলতে পারে তাই তাকেও রাজি হতে হলো। নিল আর মেঘলা গিয়ে মামনি আম্মু ভাইয়ু মামু আব্বিজান ছোট ফুপ্পি সবাইকে বাগানে নিয়ে যায়। সবাই মিলে কানামাছি খেলবে।
সবাই নিল আর মেঘলার আবদার ফেলতে পারবনা তাই সবাই খেলার জন্য রাজি হয়ে যায়।প্রথমে ভাইয়ুর চোখ বাধা হলো। ভাইয়ুর সাথে অনেক হাসি খেলার পড় পড়লো আম্মুর উপর। আম্মুর চোখ বেধে দেয়া হলো। এভাবে প্রত্যেকের চোখ বেধে আমরা কানামাছি খেলা শেষ করলাম। বিকেলের দিকে নিল আর মেঘলাকে বাসায় দিয়ে আসলো ভাইয়ু।
নিল আর মেঘলা বাসায় থাকাকালীন বাসাটা অনেক ভরপুর ছিল। ওরা চলে যাওয়াতে বাসাটা কিছুটা নিরব হয়ে গেছে। সবাই অনেক ক্লান্ত কারন কানামাছি খেলে অনেক এনার্জি লস হয়েছে আমি সবাইকে শরবত বানিয়ে দিলাম। তারপর রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলাম।
আযানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। বিছানা ছেড়ে উঠে অজু করে এসে নামাজ আদায় করে নিলাম। তারপর নিচে গেলাম মাথাটা ভিশন ভাবে ধরেছে কড়া করে এক কাপ কফি দরকার এখন আমার তাই রান্নাঘরে এসে কফি বানিয়ে আবার রুমে চলে এলাম। কিছুদিন পর ইয়ার চেঞ্জ এর পরিক্ষা। এখন থেকে সব পড়ে না রাখলে পরে সব কভার দিতে পারবোনা।
১০ টার দিকে আব্বিজান আমার রুমে আসলেন।
কি করছে আমার আম্মিজানটা – আব্বু।
পড়ছিলাম আব্বিজান। তুমি কখন এলে – আমি।
এসেছি কিছুক্ষন আগে। তোমাকে সারাদিন দেখিনি তাই বাসায় এসেই তোমাকে দেখতে চলে এলাম – আব্বু।
বেশ করেছো। রাতুল ভাইয়া তোমার অফিসে গিয়েছিল – আমি।
হ্যা বিকেলে এসেছিল। ভিশন মেধাবী ছাত্র বেশ ভালো একটা কাজ দিয়েছি – আব্বু।
ধন্যবাদ আব্বিজান আমাকে বিশ্বাস করে রাতুল ভাইয়াকে কাজটা দেয়ার জন্য – আমি।
তুমি আমার একমাত্র মেয়ে তোমার কথায় আমি সব করতে পারি আম্মিজান। তুমি শুধু বলবে আর তোমার আব্বিজান সেটা তোমার সামনে হাজির করবে – আব্বু।
আমার চাহিদা খুব সামান্য আব্বিজান তাই ওসব নিয়ে তোমাকে আপাতত ভাবতে হবেনা। কফি খাবে তোমার মেয়ের হাতের ব্লাক কফি – আমি।
মেয়ের হাতের কফি খেয়ে দেখতে হয় – আব্বু।
আচ্ছা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো আমি কফি নিয়ে আসি – আমি।
চলো আমিও নিচে যাই – আব্বু।
আমি আর আব্বিজান দুজনে নিচে গেলাম। মামু ড্রয়িংরুমে বসে ম্যাগাজিন পড়ছে। আব্বিজান গিয়ে মামুর পাশে বসলেন তারপর কি নিয়ে যেনো কিছুক্ষন কথা বললেন। কিছু নিয়ে হাসছেন। আমি সেদিকে খেয়াল না দিয়ে রান্নাঘরে চলে এলাম কফি বানানোর জন্য। মামুর জন্য চা আর আব্বিজানের জন্য ব্লাক কফি নিয়ে চলে এলাম ড্রয়িংরুমে। তারপর তাদের সাথে অনেক্ষন গল্প করলাম আমার কলেজ নিয়ে মামুর স্কুল নিয়ে।
১১টায় মামনি ডিনারের জন্য ডেকে দিলো সবাইকে। আমরা সবাই ডিনার করে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
আজকে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেড়ি করে ফেললাম আমি। ঘড়ির দিয়ে তাকিয়ে দেখি অলরেডি ৯ টা বাজে। আমি আর দেড়ি না করে শাওয়ার নিয়ে কলেজ ইউনিফর্ম পড়ে চুল গুলো সাইড সিথি করে ছেড়ে দিলাম চোখে কাজল আর ঠোটে লিপবাম দিয়ে নিচে চলে আসলাম।
আজকে কি কিছু স্পেশাল আছে নাকি হিয়া – মামনি।
না তেমন কিছু স্পেশাল নেই। আমাকে নাস্তা দাও জলদি অলরেডি অনেকটা দেড়ি হয়ে গিয়েছে আমার – আমি।
বাহ আমার মেয়েটাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে তো সব সময় এরকম হালকা সেজে থাকলে তোমাকে দারুন লাগবে হিয়া – আম্মু।
কি যে বলোনা আম্মু। আমি আর খাবোনা আমি গেলাম মামনি আম্মু – আমি।
একমিনিট হিয়া – আম্মু।
হুম জলদি বলো ( আম্মু এসে আমার চোখ থেকে হালকা কাজল নিয়ে কানের নিচে লাগিয়ে দিলো) – আমি।
এখন আর কারো নজর লাগবেনা আমার মেয়েটার উপর – আম্মু।
কি যে করোনা তোমরা। আমি গেলাম টা টা – আমি।
আমি দৌড়ে রাস্তায় চলে আসলাম তারপর একটা রিক্সা নিয়ে একেবারে কলেজে চলে আসলাম। অলরেডি ৫ মিনিট লেট আমি। ইংরেজি ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে।
May I come in sir – আমি।
আজকে এতো দেড়ি হলো কেনো তোমার – স্যার।
সরি স্যার ইয়ে মানে আসলে (কি বলবো খুজে পাচ্ছি না) আর হবেনা স্যার – আমি।
ভিতরে এসে হোম ওয়ার্ক দেখাও আমাকে – স্যার।
শালা একটা খবিসের উপরে ক্রাশ খাইছিলাম। ধলা ইন্দুরের ছাও কনেকার, আগে যদি জানতাম যে তুই এমন বদমেজাজি তাইলে জীবনেও তুর উপর ক্রাশ খাইতাম না। জীবনটা তেজপাতা বানায় দিলো এই ক দিনে। যাই হোক স্যারকে আজ পুরাই হিরো লাগতেছে আবারো ক্রাশ আমি। এসব মনে মনে ভাবলাম।
কি ব্যাপার হিয়া বাড়ির কাজ দেখাতে বলেছি আমি দেখাও না কেনো (ধমক দিয়ে) – স্যার
হ্যা স্যার এইতো বাড়ির কাজ (ব্যাগ খুলতেই আমার মুখ চুপসে গেলো হোম ওয়ার্কের খাতাটা বাসায় ফেলে এসেছি) সরি স্যার খাতা বাসায় রেখে এসেছি – আমি।
তোমার কি কখনো একটু ভালো হবেনা সারাক্ষণ বাচ্চামি করে বেড়াও। কলেজে এসে দুষ্টুমি বাদড়ামি করে বেড়াও। এটা কলেজ তোমার বাসা না হিয়া কলেজে পড়তে হলে কলেজের রুলস ফলো করতে হবে। কিন্তু তুমি কিছুই ফলো করোনা ক্লাসে দুষ্টুমি করে বেড়াও আবার আজ হোম ওয়ার্ক নিয়ে মিথ্যে বললে। এর পর থেকে আমার ক্লাসে মনোযোগী হলে ক্লাসে এসো নয়তো না। আরর এক্ষুনি আমার ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যাও তুমি। তোমার মতো ছাত্রী আমার লাগবেনা – স্যার।
স্যারের প্রত্যেকটা কথা আমার গায়ে কাটার মতো বিধছিল আর চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। তাই ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে চলে আসলাম। প্রিন্সিপ্যাল স্যারের থেকে ছুটি নিয়ে সোজা নদীর পারে চলে আসলাম। এর আগে কখনো কোনো স্যার আমাকে এমনভাবে কথা শুনায় নি আমি যতোই দুষ্টুমি বাঁদরামি করি না কেনো সব সময় স্যারদের প্রিয় ছাত্রী ছিলাম আমি। সব সময় ক্লাসের টপার আমি। আর আজ শুধু মাত্র একটা কারনে স্যার আমাকে এভাবে অপমান করতে পারে সেটা আমি ভাবতেই পারিনি।
অনেক্ষন নদীর পারে বসে মনটাকে হালকা করে রাতুল ভাইয়াকে কল করলাম। ২ বার রিং হবার পর ভাইয়া কল পিক করলো।
আসসালামু আলাইকুম.. ভাইয়া কেমন আছো – আমি।
ওয়ালাইকুম আসসালামু.. আলহামদুলিল্লাহ.. তুমি কেমন আছো আপু – রাতুল।
আলহামদুলিল্লাহ.. মা কেমন আছেন ভাইয়া – আমি।
আলহামদুলিল্লাহ.. মা তোমাকে দেখতে চেয়েছেন একবার এসে দেখে যাও মা কে – রাতুল।
হুম যাবো কিছুদিন পর। কোথায় আছো তুমি এখন – আমি।
এইতো অফিসে কাজ করছিলাম। তুমি কলেজ যাও নি আজ – রাতুল।
হ্যা ১ ঘন্টা করে চলে আসলাম।ভাবলাম মায়ের খোজ নেই কেমন আছেন তিনি। ছোটকি কেমন আছে ভাইয়া – আমি।
হুম ভালো আছে – রাতুল।
আচ্ছা ভাইয়া তুমি কাজ করো। আমি এখন রাখছি ফোনটা – আমি।
আল্লাহ হাফেজ আপু – রাতুল।
আল্লাহ হাফেজ – আমি।
ভাইয়ার সাথে কথা বলে বাড়ির দিকে হাটা দিলাম। ২ মিনিটের মধ্যে বাড়িতে চলে আসলাম। এসে কারো সাথে কথা না বলে উপরে চলে আসলাম মামনি অনেক ডেকেছিল কিন্তু আমি শুনিনি। আমার মন খারাপ থাকলে আমি কারো কথাই শুনিনা। রুমে এসে ডোর লক করে বিছানায় বসে পড়লাম।
ঐ স্যারের সাহস হয় কি করে আমাকে অপমান করার। স্যার হয়েছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছি নাকি আমার কাল থেকে ১ম ক্লাস করবোনা আমি। করবোনা তুর ক্লাস কি করবি তুই আমার। এর মধ্যেই জয়ের কল আসে প্রথমে কলটা কেটে দিলাম তারপর আবার কল করে এবার কলটা রিসিভ করলাম।
আসসালামু আলাইকুম – আমি।
ওয়ালাইকুম আসসালামু.. কিরে রেগে আছিস কেনো এতো – জয়।
সব জানিস তুই তাও এখন নাটক করছিস আমার সাথে। নিলা এতোক্ষনে সব বলে দিয়েছে তোকে আমি ভালো করেই জানি সেটা – আমি।
হুম সব বলেছে তাই তো আমি আমার তিতুপাখির রাগ টা কিভাবে কমানো যায় সেই চেষ্টা করছি – জয়।
রাগ কমবেনা এখন তুই ফোন রাখ নইলে তুর উপর দিয়েই রাগ ঝেড়ে দিবো এখন – আমি।
তো ঝাড় না। আমি তো চাই তুই আমার উপর রাগ ঝাড়িস – জয়।
তুই ও ঐ খবিস স্যারের মতোই। শালা হারামির দল – আমি।
হা হা হা আর কি – জয়।
কুত্তা বিলাই মহিষ ইদুর করল্লা ডায়েন আর মনেনাই এখন – আমি।
তাহলে এবার এট্টু হেসে দাও জানু – জয়।
হা হা হা অসভ্য পুলা প্রেমিকা থাকতে অন্য মেয়েরে জানু বলিস – আমি।
নিলার আগে তো তুই ছিলি আমার জানু। আচ্ছা বাদ দে এখন ফ্রেশ হয়ে গিয়ে খাবার খেয়ে আয় যা – জয়।
আল্লাহ হাফেজ
আল্লাহ হাফেজ
কল কেটে আমি হাত মুখ ধুয়ে নিচে আসলাম। আর সবার প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে সামনে হাজির হলো…
To be continue..
#অপ্রকাশিত_ভালোবাসা
#আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ২২
নিচে আসতেই সবাই প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসলো…
হিয়ামনি এতো রেগে আছে কেনো আজ টিচার বকা দিয়েছে বুঝি – মামনি।
হু মামনি আমি আর ইংরেজি ঘন্টা করবোনা তুমি মামু কে সেটা বলে দিও – আমি।
সেকি তাহলে টিচারকে দেখবে কিভাবে প্রতিদিন আমার মামনিটা – মামনি।
ঐ বান্দর টিচারের উপর আমি আর ক্রাশ খামু না। সে আমাকে বিনা দোষে বকা দিয়ে ক্লাসরুম থেকে তারিয়ে দিয়েছে – আমি।
নিশ্চই কোনো দুষ্টুমি করেছিস তাই তো – আম্মু।
না হোম ওয়ার্ক এর খাতাটা নিতে ভুলে গিয়েছি বলে অনেক বাজে ভাবে বকা দিয়েছে সবার সামনে – আমি।
এটা নিয়ে মন খারাপ করতে আছে। পাগলি মেয়ে টিচার তো একটু আকটু বকবেই নইলে তারা টিচার কেনো হয়েছে বলো – মামনি।
তাও আমি তার ক্লাস করবোনা, করবোনা, করবোনা ব্যস – আমি।
আচ্ছা ক্লাস করতে হবেনা এখন চলো খেয়ে নিবে – আম্মু।
আমি আর কিছু না বলে খাবার খেতে চলে আসলাম। খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
তোরা সবাই হিয়াকে আদর দিয়ে বড্ড জেদি বানিয়ে ফেলেছিস – আম্মু।
তাতে কি হয়েছে আপা। মেয়েকে তো অন্য কোথাও দিবেনা আমার মেয়ে আমার সংসারেই থাকবে তাই না – মামনি।
পরে তুর কথার অমান্য করবে সেটা বুঝতে পারছিস না – আম্মু।
হিয়া জেদি তবে অবাধ্য নয়। আমার মেয়েটাকে আমি খুব ভালো করে চিনি সে এমন কোনো কাজ করবেনা যাতে আমাদের কষ্ট হয়। তুমি এতো কিছু ভেবো না তো – মামনি।
তুরা যা ভালো বুঝিস তাই কর। তবে আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস আজ বিকেলেই চলে যাবো আমরা। হিয়া হয়তো ঘুমাচ্ছে এখন ডাকা দরকার নেই যাওয়ার সময় আমি ডেকে দিবো – আম্মু।
তোমার মেয়েকে কি কখনো পর করে দেখেছি আপা বলো। হিয়া আমাদেরও মেয়ে । তোমরা নিশ্চিন্তে আমাদের হিয়া আমার কাছে খুব ভালো থাকবে – মামনি।
তোরাই তো আমার শেষ ভরসা। তুই গিয়ে একটু বিশ্রাম নে যা। সারাদিন ছোটা ছোটি করেই কাটাস বিশ্রাম নিস না। এভাবে অসুস্থ হয়ে যাবি – আম্মু।
আচ্ছা বাবা তুমিও যাও। একটু বিশ্রাম নাও – মামনি।
বিকেলে আমার ঘুম ভাঙে। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে হাত মুখ ধুয়ে ছোট ফুপ্পির রুমে যাই। আজকে সারাদিনে ইসরাতকে কোলে নেয়া হয়নি একবারো। গিয়ে দেখি ফুপ্পি ইসরাতকে জামা পড়াচ্ছে তাই আমি বললাম,,
কোথাও যাবে নাকি ফুপ্পি।
অনেক দিন তো থাকলাম তুর কাছে। এখন বাড়ি না গেলে আমার সংসার কে সামলাবে বল তাই আজকে আমরা চলে যাচ্ছি – ফুপ্পি।
আর কটা দিন থেকে যাও না ইসরাত থাকলে আমার অনেক ভালো লাগবে -আমি।
না রে তুর ফুপা কল দিয়ে বলল আজকেই বাসায় যেতে,, মন খারাপ করেনা লক্ষিটি ফুপ্পি ইসরাতকে নিয়ে আবার আসবো তোকে দেখার জন্য – ফুপ্পি।
ধুর ভালো লাগেনা,, ইসরাতের জন্য আমি একটা জামা নিয়ে আসি ওটা পড়াবে ইসরাতকে – আমি।
হুম। নিয়ে আয় – ফুপ্পি।
আমি ছুটে রুমে আসলাম তারপর ইসরাতের জন্য এতোদিন যা যা কিনে রেখেছিলাম সে সব একটা ব্যাগে নিয়ে আমার ফুপ্পির রুমে চলে আসলাম,, তারপর লাল একটা ফ্রক বাহির করলাম ব্যাগ থেকে,,
ফুপ্পি এটা ইসরাতকে এটায় মানাবে তো – আমি।
একি হিয়া এসব কি করেছিস তুই,, এতো কিছু কেউ কিনে,, এসব টেডিবিয়ার, গাড়ি,পুতুল,জামা-কাপড়,খেলনা এতোসব কিনতে কে বলেছে তোকে – ফুপ্পি।
আমি ইসরাতের বড় বোন। তাই আমার বোনের জন্য আমি কিনেছি তোমার কি। এগুলা ছাড়াও আরও আছে, জামাটা পড়িয়ে সেগুলো পড়িয়ে দিবো আমিমি – আমি।
তবুও হিয়া এতো কিছুর প্রয়োজন ছিলনা, তুর ফুপা আমার সাথে ঘেন ঘেন করবে দেখিস – ফুপ্পি।
উফ চুপ করো আর নিজে তৈরি হয়ে এসো যাও,, আমি আমার বোনকে তৈরি কড়িয়ে দেই – আমি।
ফুপ্পি চলে গেলো রুম থেকে আমি বোনকে ফ্রক টা পড়িয়ে দিয়ে, ব্যাগ থেকে আরও একটা ছোট ব্যাগ বের করে সেখান থেকে ২টা চুড়ি, পায়ের নুপুর বের করে বোন কে পড়িয়ে দিলাম। কপালে কাজলের টিপ দিয়ে কোলে নিয়ে নিচে আসলাম। বোন চুড়ি আর নুপুর পেয়ে খুব খুশি, তার হাসি যেনো থামেই না। বোনের হাসি দেখে আমার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। আমি তো এমনি একটা বোন চেয়েছিলাম। কিছু আল্লাহ আমার কোনো ভাই বা বোন কাউকেই দিলোনা,, আমাকেই একা পাঠালো আব্বিজান – আম্মুর কাছে।
ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি আম্মু আব্বিজান,মামু মামনি আর ভাইয়ু বসে আছে। আমাকে দেখে আব্বিজান আমাকে পাশে ডাকলো,,
আম্মিজান আমার পাশে এসে বসুন তো দেখি – আব্বু।
হুম,,আগে বলুন তো আমার ছোট্ট মিষ্টি বোনটাকে কেমন দেখাচ্ছে – আমি।
মাশাআল্লাহ,, এসব কি তোমার ফুপ্পি সাথে করে নিয়ে এসেছিল, তাহলে এতোদিন পড়ায় নি কেনো সে,,, এভাবে কতো ভালো লাগছে আমাদের মেয়েটাকে – আম্মু।
না এসব ফুপ্পি আনেনি। এগুলা আমি বানিয়েছিলাম বোনের জন্য, আব্বিজান আমাকে যে টাকা দিতো সেটা আমার তেমন কাজে আসতো না তাই ভেবেছিলাম বোনের জন্য গিফটস চুড়ি নুপুর বানিয়ে রাখি কোনোদিন দেখা হলে দিয়ে দিবো। বোন কতো খুশি হয়েছে দেখো – আমি।
বেশ করেছে আমার আম্মিজান,, সেই জন্যই তো আমার আম্মিজানকে আমি এতো গুলা ভালোবাসি আর বিশ্বাস করি – আব্বু।
আমিও আমার আব্বিজান,আম্মু,মামনি,মামু সব্বাইকে অনেক ভালোবাসি – আমি।
ফুপিমা তোমরা আর কটা দিন থেকে যাও না – রায়হান।
না রে বাবু, ওদিকে বাবা – মা কিভাবে আছে কে জানে, আবার এসে থাকবো কেমন – আম্মু।
তখন অনেকদিন থাকতে হবে কিন্তু আম্মু – আমি।
ঐ তুই আমার আর আমার ফুপিমার কথার মাঝে কথা বললি কেনো – রায়হান।
আমার মায়ের সাথে কথা বলেছি আমি তোমার কি – আমি।
না আমি যখন কথা বলছি তুই বলবিনা আর তুর মায়ের আগে সে আমার ফুপিমা তুই ভাগ সুহ সুহ যাহ যাহ – রায়হান।
তোমার চুল আজকে আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো শয়তান ছেলে – আমি।
এই বলে ইসরাতকে আব্বিজানের কাছে রেখে আমি ভাইয়ুর চুল টেনে ধরলাম গিয়ে।
কি যেনো বলেছিলা এখন আবার বলো এখন – আমি।
আয়ায়া চুল ছাড়,, আল্লাহরে আমার চুল সব নিয়ে গেলো এই শাঁকচুন্নি মাইয়াটা,, আল্লাহ তুমি এর বিচার কইরো,, এমন একটা জামাই দিয়ো সে যাতে ৩ বেলা মার দেয় এই মেয়েরে [অভিনয় করে ] – রায়হান।
জামাই আমারে কি মারবো আমি নিজেই জামাইরে মারতে পারি। ভুইলা যাওয়োনা আমাকে তুমি নিজেই আত্মরক্ষার কৌশল শিখিয়েছ [ হুদাই ভাব লইলাম ] – আমি।
হায়রে কি ভুলটাই না করলাম আমি তুরে মারপিট শিখাইলাম – রায়হান।
হি হি হি
৫টার দিকে সবাই চলে গেলো। আবার আমি আর মামনি একা।
এভাবেই কয়েকদিন চলে গেলো আমি ইংরেজি ক্লাস করিনা। স্যার ক্লাস করে বেড়িয়ে গেলে আমি ক্লাসে আসি বাকিসয়ম কমনরুমে বসে থাকি। আমার ইংরেজি টিচারের নাম হচ্ছে মেরাজুল ইসলাম সোহাগ। স্যার অনেকদিন আমার খোজ করেছে তবে পায় নি। কারন স্যার আমাদের ১ম পিরিয়ড আর ২য় বর্ষের ২য় পিরিয়ড, ই পায়। তাই সে কলেজ ছুটি হয়ার আগেই চলে যায়,, আমিও ঐ দিনের পর থেকে স্যারের থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই। আমি স্যারের মুখোমুখি হতে চাই না। কারন এর আগে কেউ আমাকে এভাবে বকেনি।
আজকে স্যারের ক্লাস নেই তাই তাড়াতাড়ি কলেজে চলে এসেছি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য। রোজকার মতো কলেজের বকুল তলায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা। তখনি সোহাগ স্যার এসে আমাকে বলল,,
মিস: হিয়া এখনি আমার সাথে আসুন – সোহাগ স্যার।
কেনো স্যার আমি আবার কোনো ভুল করেছি কি – আমি।
আপনাকে আমি কি বলেছি সেটা আপনি শুনতে পান নি,, ৫ মিনিটের মধ্যে আপনাকে আমার রুমে দেখতে চাই আমি – সোহাগ স্যার।
এই বলেই তিনি চলে গেলেন আর আমি করুন চোখে তার যাওয়ার দিকে চেয়ে আছি। কোন শয়তানে পেয়েছিল তোকে হিয়া যে আজ এতো জলদি কলেজে এলি তুই,, গর্দভ কোথাকার এখন এই সোহাগ তোরে কেটে কুচি কুচি করে কলেজের ছাদে নিয়ে শুকিয়ে তারপর মাছকে খাওয়াবে ( নিজেকেই বকা দিলাম কতক্ষন)
হিয়া জলদি স্যারের রুমে যা নইলে স্যার আবার কি করে বসে কে জানে – নিলা।
আমি আর কিছু না বলে স্যারের রুমের দিকে হাটা দিলাম। ( আমাদের কলেজটা অনেক বড় এখানে প্রতিটা প্রফেসরের জন্য আলাদা আলাদা করে রুম দেয়া আছে,, তবে মিটিং এর জন্য আলাদা একটা হল থাকে) স্যারের রুমের সামনে এসে,,
May I come in sir….
Come in – স্যার।
আমাকে ডেকেছেন কেনো স্যার – আমি।
আমার ক্লাসে প্রেজেন্টস থাকেন না কেনো – স্যার।
এমনি স্যার আমি আপনার ক্লাসে থাকলে ক্লাসের সভ্যতা নষ্ট হবে তাই থাকিনা – আমি।
দেখেন মিসঃ হিয়া আমি আপনার টিচার তাই আমি আপনাকে।শাসন করতেই পারি তাই না – স্যার।
জি স্যার – আমি।
আপনি আমাদের কলেজের মেধাবী একজন ছাত্রী। এবং ক্লাস ক্যাপ্টেন আপনি যদি ক্লাসে দুষ্টুমি করেন তাহলে বাকিরা কি করবে বলুন তো – স্যার।
সরি স্যার। আমার এরকম ভুল আর হবেনা – আমি।
এমা ভুল হবেনা বলছেন কেনো,, অবশ্যই ভুল করবেন। এখনই তো ভুল করার সময় দুষ্টুমি করার সময়,, দুষ্টুমি করবেন তবে সেটা কোনো স্যার ম্যামের চোখে পড়লে সেটা বেয়াদবি হবে তাই না বলো – স্যার।
অবশ্যই স্যার। ধন্যবাদ আমাকে আমার ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য (মুচকি হেসে) – আমি।
Your smile is so pretty – স্যার।
Thank you (ব্লাসিং) – আমি।
আচ্ছা এখন ক্লাসে যাও। আর একটা কথা.. স্যারদের ও ভুল হয় মাঝে মাঝে ঐ দিনের জন্য আমি দুঃখিত। এখন থেকে কোনো সমস্যা হলে আমাকে অবশ্যই জানাবে – স্যার।
জি স্যার। আসি স্যার…
স্যারের রুম থেকে সোজা ক্লাসে চলে আসলাম এসে সবগুলা ক্লাস করে সবার সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসি। আর তখনি……
To be continue……