অপ্রকাশিত ভালোবাসা,পর্বঃ১৯+২০
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ১৯
আমি ছাদে সিরি বেয়ে ছাদে উঠে আসলাম। যা ভেবেছিলাম তাই ভাইয়ু ছাদের রোলিং এ বসে চাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি পা টিপে টিপে ভাইয়ুর পেছনে গিয়ে দাড়ালাম।
কিরে না খেয়ে ছাদে এলি যে – রায়হান।
তুমিও তো খাও নি। তোমাকে নিয়ে তারপর খাবো – আমি।
আমার খিদে নেই তুই খেয়ে নে যা – রায়হান।
আমারো খিদে নেই। আমিও এখানেই বসি [রোলিং এ বসে] তোমার সাথে – আমি।
খিদে নেই মানে কি যা খেয়ে নে কাল তো চলে যাবি আমাদের ছেড়ে – রায়হান।
উফ কোথাও যাবোনা আমি। এখানেই থাকবো সারাজীবন তোমার কোনো সমস্যা। এখন আমাকে চকলেট দাও সারাদিনের ঝামেলায় চকলেট খেতে ভুলে গেছি – আমি।
চকলেট তো আনিনি আজ আমি – রায়হান।
ভ্যায়ায়া ভ্যায়ায়া ভ্যায়ায়ায়া [ন্যাকা কান্না] আমার জন্য চকলেট আনেনি আমি মামনির কাছে বিচার দিয়ে আসছি দাড়াও – রায়হান।
এই কোথায় যাচ্ছিস বস এখানে। কথায় কথায় কাদতে হয় নাকি পাগলি [ অনেক গুলো চকলেট সামনে ধরে ] তুর আর ইসরাতের জন্য। একা একা খেয়ে নিস না আবার – রায়হান।
আমি মাত্র ১ টা খাবো বাকি সব গুলো আমার বোনের জন্য – আমি।
আজ রাতটা আমাকে দিবি হিয়া – রায়হান।
মানে [ অবাক হয়ে ] -আমি।
মানে হচ্ছে আমার সাথে আজ আড্ডা দিবি । নিলয় আর সিহাবকে বলে দিবো আমাদের সাথে জয়েন করার জন্য – রায়হান।
আচ্ছা -আমি
সব কিছুতে খারাপ মানে বের করতেই হবে তোকে তাই না। পাকা বুড়ি হয়ে গেছিস খুব [ আমার মাথায় টোকা দিয়ে ] – রায়হান।
ব্যাথা পাই তো নাকি। তোমার বউকে একবার আসতে দাও। তারপর আমরা দুজন মিলে তোমার ক্লাস নিবো হুম – আমি।
অনেক হিয়েছে এবার নিচে চলেন খেয়ে নিবেন – রায়হান।
আমাকে খায়িয়ে দিলে খাবো নয়তো না – আমি।
ওকে মহারাণী – রায়হান।
আমরা নিচে এসে খাবার খেয়ে ইসরাতকে নিয়ে নিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। ইসরাতকে নিয়ে অনেক্ষন খেলা করার পর ভাইয়ু এসে ডাকলো নিলয় ভাইয়া আর সিহাব ভাইয়া চলে এসেছে। ভাইয়াদের নাস্তা দিয়ে আমি ইসরাতকে ঘুম পাড়িয়ে ছোট ফুপ্পির কাছে দিয়ে আসলাম।
ছোট ফুপ্পি বোন ঘুমিয়ে গেছে বিছানা করো – আমি।
বাবাহ আজকে তো ইসরাত লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমিয়ে গেছে। আমার কাছে থাকলেতো ঘুমাতেই চায় না – ছোট ফুপ্পি।
আমি কিছু না বলে বোন কে বিছানায় দিয়ে মশারি টানিয়ে দিয়ে ছোট ফুপ্পিকে নিয়ে ভাইয়ুর রুমে গেলাম।
Hey গাইস….. কেমন আছো – আমি।
আলহামদুলিল্লাহ…. তুই – সিহাব।
বিন্দাস আছি – আমি।
থাকবি ই তো খাচ্ছিস আর মোটা হচ্ছিস কাজের কাজ তো কিছুই করিস না – নিলয়।
শয়তান ছেমড়া, বিটকেলের নাতি, মহিষের লেজ আমার পেছনে না লাগলে ভালো লাগেনা হুহ – আমি।
আজিব আজিব কথা কই পাস তুই – নিলয়।
নিলার থেকে। আচ্ছা পরিচিত হও এই হলো আমার ছোট ফুপ্পি। আর ছোট ফুপ্পি এরা হচ্ছে আমার আরো ২ টা বাদর ভাই.. নিলয় আর সিহাব – আমি।
আসসালামু আলাইকুম ফুপ্পি ভালো আছেন – নিলয়।
ওয়ালাইকুম আসসালামু. আলহামদুলিল্লাহ.. তোমরা কেমন আছো – ছোট ফুপ্পি।
আলহামদুলিল্লাহ…. ফুপ্পি আমি কিন্তু আপনার উপর ক্রাশ – নিলয়।
এই শুরু হইছে ছেছড়ামি। আরে ভাই ফুপ্পি হয় আমার একটা মাইয়া ও আছে একটু তো রহম কর – আমি।
ক্রাশ খাওয়ার কি কোনো বয়স হয় নাকি। তুরা কি বুঝবি ক্রাশ খাওয়ার ব্যাপারে নিজেরা তো আর ক্রাশ খাবানা – নিলয়।
না রে ভাই আমাদের তুর মতো এতো ক্রাশ খাওয়ার সখ নাই আমরা এমনিতেই ভালো আছি – সিহাব।
এই আবির ভাইয়াকে নিয়ে এলেনা কেনো [ রাগি চোখে তাকিয়ে ] – আমি।
আবিরের কাজ আছে তাই আসেনি। ফুপ্পি আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসেন না – সিহাব।
রায়হান তুমি কি আমার বা আমাদের বাড়ির মানুষের উপর কোনোভাবে রেগে আছো – ছোট ফুপ্পি।
না ফুপ্পি আপনার উপর আমার কোনো রাগ নেই আপনি হিয়াকে কতোটা ভালোবাসেন সেটা আমি যানি – রায়হান।
তোমাদের কাছে থাকলেই হিয়া ভালো থাকবে খুশি থাকবে। হিয়াকে কখনো কষ্ট দিও না – ফুপ্পি।
ফুপ্পি হিয়া এ বাড়ির মেয়ে। আর আমার ঘাড়ে কটা মাথা যে আমি মিঃ শরিফ সাহেবের মেয়েকে কষ্ট দিবো – রায়হান।
উপস্থিত সবাই হেসে দেয় রায়হানের এই কথায়।
কিছুক্ষন আড্ডা দিয়েই ফুপ্পি চলে যায় কারন ইসরাত একা আছে রুমে তাই। আমরা ৪ জন ছাদে চলে গেলাম ৪ কাপ কফি নিয়ে। ছাদে একটা পাটি বিছিয়ে সেখানে বসে গেলাম ৪ জন গোল হয়ে।
কি করা যায় বল তো হিয়া – রায়হান।
ট্রুথ অর ডেয়ার খেলা যেতে পারে – আমি।
আমারে মগা পাইছো তাই না। আমি খেলমু না – নিলয়
কেনো খেলবা না – সিহাব
হিয়ার আজিব আজিব বকার মতো ডেয়ার গুলা ও আজিব আমি খেলমু না – নিলয়।
আচ্ছা থাক তোমাকে কঠিন ডেয়ার দিবোনা তাও খেলো [ সবাই হাসছে ] – আমি।
আচ্ছা শুরু কর – রায়হান।
বোতল ঘুড়ানো শুরু করলে প্রথমে আমার দিকে বোতল থামে আমি ডেয়ার নিলাম…
হিয়াকে ডেয়ার আমি দিবো – নিলয়।
আচ্ছা দাও – আমি।
তুর ডেয়ার হলো [ কিছুক্ষন ভেবে ] তুই তুর ক্রাশের সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দে [ ডেভিল স্মাইল দিয়ে] – নিলয়।
নিলয়ের বাচ্চা আমারো সময় আসবে আমিও এর শোধ তুলবো -আমি।
আমার ফোন হাতে নিয়ে সদ্য ক্রাশ খাওয়া একটা ছেলের প্রফাইলে গিয়ে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে অফলাইন চইলা আসলাম নইলে ক্রাশ আমারে লবন ছারাই রান্না করি খাই ফেলবো। আম্মু তোমার মেয়ে আজকে শেষ।
ডেয়ার ডান – আমি।
হিয়ার চেহারা দেখে সবার খুব হাসি পাচ্ছে খুব কষ্টে হাসি চাপিয়ে রেখেছে কিছু শেষের কথা টা শুনে সবাই হেসে দিলো। সবাই পেটে হাত দিয়ে হাসছে। এদের হাসি দেখে আমার রাগ উঠে গেলো। ছাদের একপাশে কতোগুলা লাঠি ছিল সেখান থেকে একটা লাঠি নিয়ে এসে সবাইকে উরাধুরা মার শুরু করলো।
আর হাসবে আমাকে নিয়ে। এতো দুঃখ আমি কই রাখি আমার ক্রাশের সাথে আমার ব্রেকাপ হয়ে যাবে আর তোমরা হাসছো। বলো আর হাসবে আমার উপর [ মারছে আর বলছে ] – আমি
আচ্ছা এবার থাম আর মারিস না হাসি বন্ধ করে দিয়েছি। [ হিয়ার লাঠি ধরে] রাক্ষসী শরির ব্যাথা করে দিলো গো – নিলয়
আমাকে ডেয়ার দেয়ার ফল এটা। এবার খেলা শুরু করো – আমি।
বোতল ঘুড়ালে এবার সিহাবের দিকে বোতল থামে…
আমি ট্রুথ – সিহাব।
এমন একটা কথা বল যা তুই ছাড়া আর কেউ জানেনা – রায়হান।
আমার ক্যান্সার। কথাটা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা আজ তুরা জানলি প্লিজ বাবা-মা কে কথাটা বলিস না। ওনারা একথা শুনলে মরে যাবে হয়তো [ চোখের কোণে পানি ] – সিহাব।
এতোদিন বলিস নি কেনো। আমাদের আপন মনে হয়নি তুর – নিলয়।
এজন্যই বলতে চাই নি তুরা ইমোশনাল হয়ে যাবি জানতাম তো। আমি চেয়েছিলাম যতোটা দিন আছি মজা মাস্তিতেই কাটাতে – সিহাব।
ভাইয়া আমাদের ছেড়ে তুমি যেতে পারবেনা আমরা তোমাকে কোথাও যেতে দিবোনা [ জরিয়ে ধরলাম গিয়ে ] – আমি।
লক্ষি বোন আমার। কিরে তোরা দুরেই দাঁড়িয়ে থাকবি – সিহাব।
সবাই এসে গ্রুপ হাগ করলো।
আবার খেলা শুরু হলো। এবার নিলয়ের সামনে গিয়ে থামলো…
তোমার ডেয়ার হলো তুমি এখনি নিশু ( নিলয়ের প্রেমিকা) আপুর সাথে এখনি ব্রেকাপ করবে -আমি।
আমি ডেয়ার নিবোনা – নিলয়।
যা বলেছি তাই করো – আমি।
নিলয় ভাইয়া নিশু আপুকে কল করে…
নিশু আমি এতোদিন তোমার সাথে ফান করেছি আজকের পর আর আমাকে কল দিবে না। এই বলেই কল কেটে দিলো। ভাইয়ার মুখের দিকে তাকানোই যাচ্ছেনা।
মুখটা হুতুম পেচার মতো না রেখে খেলা শুরু করো – আমি।
আমারো সময় আসবে তখন আমিমি শোধ তুলবো – নিলয়।
আবার বোতল ঘুড়ালাম এবার আমার দিকেই থামলো।
এবার ট্রুথ -আমি।
তুর প্রথম ভালোবাসা কে – রায়হান।
আমার আব্বিজান – আমি।
এবার রায়হান বোতল ঘুড়ালে রায়হানের দিকেই বোতল থামে। সে ট্রুথ নেয়।
কাউকে ভালোবেসেছিস এখনো – সিহাব।
হুম ভালোবেসেছি ভালোবাসি আর যতোদিন দেহে প্রান আছে ততদিন ভালোবাসবো – রায়হান।
আমাদের খাওয়াবি কবে ঐটা আগে বল – নিলয়।
কেনো খাওয়াবো – রায়হান।
প্রেমে পরছিস আমাদের খাওয়াবি না – সিহাব।
হিয়া তুই বল তুই না বললে খাওয়াবে না আমাদের – নিলয়।
ভাইয়ু আমাদের খাওয়াতে হবেই হবে [ মুখে ফেইক হাসি ফুটিয়ে ] – আমি।
আচ্ছা ঠিক আছে। অনেক রাত হয়েছে এবার চল ঘুমাতে যাই আমার ঘুম পাচ্ছে অনেক [হাই তুলে]
তোরা ( নিলয় & সিহাব) আমার সাথে আমার রুমে ঘুমাবি আয় আজ বাড়িতে অনেক মানুষ রুম।খালি নেই। হিয়া রুমে গিয়ে শুয়ে পড় যা – রায়হান।
আমরা সবাই রুমে এসে ঘুমিয়ে পরি।
সকালে উঠে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করে ভাইয়ুর রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে রুমের অবস্থা দেখে আমার রাগ সপ্তম আসমানে। সারা রুম অগোছালো। নিলয় ভাইয়া নিচে পরে আছে। ভাইয়ু আর সিহাব ভাইয়া খাটে আড়া আড়ি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ফ্লোরে বালিশ কম্বল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রুম দেখে মনে হচ্ছে না এটা মানুষের রুম। যে দেখবে সেই বলবে এটা গরু ছাগলের ঘর। এ ঘরে কোনো গরু ছাগল থাকে। আমি বাথরুম থেকে এক জগ পানি নিয়ে এসে সবগুলার উপরে পানি ঢেলে দিলাম। সবাই হুরমুর করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো।
বাসায় মধ্যে বৃষ্টি এলো কিভাবে – নিলয়
বৃষ্টি না আপনাদের ঘুম থেকে উঠানোর উপায় এটা। ঐ বজ্জাতের দল ঘর টার এই অবস্থা করছিস কেন। মানুষ থাকার উপযোগী রাখিস নি। ভালো করে দেখ ঘরটার কি হাল করেছিস একদিনে (অনেক রেগে) – আমি।
আমি কিছু করিনাই রায়হান আমারে লাথি দিয়া খাট থেইকা ফালাইয়া দিছে যা কয়ার তুর ভাইয়ু রে ক যা – নিলয় ভয় পেলে গ্রাম্য ভাসায় কথা বলে।
নবাবজাদার ঘুম তাহলে ভাঙল। বেড টি নিয়ে আসবো আপনার জন্য (রায়হান কে উদ্দেশ্য করে) – আমি।
না বেগম সাহেবা। দয়া করে আমার রুম টা একটু গুছিয়ে দিন তাহলেই হবে – রায়হান।
এই বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলো এদিকে হিয়া নিজে নিজেই বক বক করতে করতে রুম।গুছাতে থাকে… বজ্জাতের হাড্ডি, কাঠালের বিচি,আরশোলার বংশধর, ইগলের ডিম,বাদুরের চোখ গুলা আমাকে জালিয়ে খেলো। এক দন্ড শান্তি দিবেনা আমাকে বদমাইশ গুলা। হাজার বকা দিয়ে রুম গুছাচ্ছে হিয়া। গুছানো শেষ হলে নিজের রুমে চলে আসে হিয়া।
আমি রুমে এসে কলেজের জন্য তৈরি হয়ে নিচে গেলাম আব্বিজান,আম্মু, ছোট ফুপ্পির সাথে দেখা করে হালকা নাস্তা করে কলেজে চলে আসলাম। আজকে আমি ৫ মিনিট দেড়ি কলেজে গিয়েছি তাই কারো সাথে তেমন কথা হয় নি। ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছি।
আজকে দেড়ি করে আসলি যে – শরিফা।
বাসায় মেহমান এসেছে তাই দেড়ি হয়েছে – আমি।
তোদের বাসায় আবার কে এলো – শান্তা।)
দাদা দাদি আব্বিজান আম্মু ফুপ্পিরা – আমি।
ওনারা কেনো এসেছেন হঠাত – লাভলি।
আমাকে একেবারের জন্য বাসায় নিয়ে যেতে – আমি।
তাহলে কি তুই আমাকের ছেড়ে চলে যাবি (ভেজা গলায়) – নিলা
নাহ পড়াশোনা এখান থেকেই শেষ করবো আমি। তারপর কোথায় যাবো জানিনা – আমি।
আমার দেবরের জন্য তুরে নিয়ে যামু আমি – নিলা।
তুর দেবর নাই জয়ের শুধু একটা ছোট বোন আছে ভাই নাই – আমি।
সে একটা হলেই হবে। চল বাসায় যাই – নিলা।
চল।।।।
আমরা কলেজ থেকে বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ি আমরা। রাস্তায় একটা বখাটে ছেলে আমাকে টিজ করছিল মাথা নিচু করে চলে আসছিলাম কিন্তু এতে ছেলেটা একটু সাহস পেলো এবার সে আমার বন্ধুদের নিয়ে বাজে কথা বলতে শুরু করলো। এবার আর সজ্য হলোনা ব্যাগটা নিলাকে দিয়ে ছেলেটাকে ইচ্ছে মতো কিছুক্ষন পিটাইলাম। ( আগে থেকেই মারপিট জানতাম আমি) । আমাকে বাজে কথা বলছিস কিছু বলিনি এতো সাহস তুর তুই আমার বন্ধুদের বাজে কথা বলিস। তুর বাড়িতে বোন নাই তুর বোন রাস্তায় বের হয় না। তুর বোনকে কেউ বাজে কথা বললে কেমন লাগবে রে তুর এখানে যাদের দেখছিস তারাও কারো বোন।
ছেলেটি বলল.. বোন আজকে ছেরে দাও আজকের পর এরকম ভুল আর কখনো করবোনা। প্লিজ বোন আমাকে আর মেরোনা আমি আমার অসুস্থ মায়ের জন্য এই কাজ টা করেছি। আমাকে একজন বলেছে তোমাদের টিজিং করলে আমাকে ১০০০০ টাকা দিবে তাই আমি এমন করেছি।
আমি ছেলেটাকে রাস্তার পাশে বসিয়ে তার পাশে বসলাম… এই কাজ টা করতে কে বলেছে আপনাকে।
ছেলেটি… শুভ ভাই।
আমি.. আচ্ছা চলুন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আর আমি দুঃখীত আপনাকে এভাবে আঘাত করার জন্য ( মাথা নিচু করে) আসলে আমার রাগ উঠে গিয়েছিল।
ছেলেটি.. না বোন আমি কিছু মনে করিনি। তুমি সঠিক কাজটাই করেছ। আমি এখন যাই বোন শুভ ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মায়ের জন্য ঔষধ নিতে হবে।
আমি.. বোন যখন ডেকেছেন তাহলে বোনের একটা আবদার রাখতে হবে। এই নিন ৫ হাজার টাকা এটা দিয়ে মায়ের আজকের ঔষধ নিয়ে যান আর কাল এই সময় এখানে থাকবেন। ( ছেলেটি কিছু বলতে নিলে) চুপ একটা কথাও না বোন যা বলে তা শুনতে হয়।
ছেলেটি.. তুমি অনেক ভালো বোন তোমার সাহায্যের কথা আমি কোনোদিন ভুলবোনা।
আমি.. এবার গিয়ে নিজের আর মায়ের জন্য ঔষধ নিয়ে বাসায় যাও আর আজ যা বললাম তা মাথায় রেখো। কাল আমি অপেক্ষা করবো।
ছেলেটার থেকে বিদায় নিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম। এসে আব্বিজানের কাছে গেলাম।….
আসসালামু আলাইকুম
আব্বু.. ওয়ালাইকুম আসসালামু…. আম্মিজান কখন এলে।
আমি.. এই মাত্র আব্বিজান আমার তোমার থেকে কিছু চাই। আমাকে দিবে তো।
আব্বু.. কি চাই শুধু বলো। তোমার জন্য আমার সব দিয়ে দিতে রাজি।
আমি.. আসলে আব্বিজান আমার টাকা লাগবে। আর একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
আব্বু.. কার জন্য আম্মিজান। আমাকে খুলে বলো না বললে তো বুঝবোনা আমি।
আমি.. আসলে আব্বিজান ( ছেলেটার সব কথা বললাম) আমি কি ভুল কিছু করছি আব্বিজান।
আব্বু.. না আম্মিজান আজকে আমার আম্মিজানকে নিয়ে খুব গর্ব হচ্ছে আমার। এই নাও ২০০০০ টাকা এটা কাল তাকে দিয়ে দিবে। আর সার্টিফিকেট নিয়ে আমার অফিসে চলে আসতে বলবে কেমন।
আমি.. ধন্যবাদ আব্বিজান আমাকে এতো বুঝার জন্য। আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।
এই বলে হিয়া নিজের রুমে চলে যায়। তখনি দরজার আড়াল থেকে একজন রুমে আসে আর বলে…
মেয়েকে এতো বেশি লাই দিস না। পড়ে মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিবে
To be continue….
অপ্রকাশিত ভালোবাসা
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ২০
মেয়েকে এতো লাই দিস না পরে দেখা যাবে মান ইজ্জত নিয়ে চলে যাবে – বড় ফুপ্পি।
আমার মেয়েকে নিজের মেয়ের সাথে তুলনা করোনা আপা আমার মেয়ে তোমার মেয়ের মতো কাজ কখনো করেনি আর করবেও না – আব্বু।
রিতা (ফুপ্পির মেয়ে) কে টানছিস কেনো এর মধ্যে – বড় ফুপ্পি।
তোমার মেয়ে ছিল একটা স্বার্থপর তার সাথে আমার মেয়ের তুলনা করতে এসোনা আপা তাহলে আমি ভুলে যাবো তুমি আমার বড় বোন – আব্বু।
একদিন এই মেয়ের জন্য পস্তাবি তুই তখন আমার কথা মিলে যাবে দেখিস – বড় ফুপ্পি।
মিঃ আশফাক সাহেব আর কিছু বললেন না কারন তিনি জানেন তার বোনের স্বভাব সম্পর্কে। তিনি নিঃশব্দে একটা দীর্ঘস্বাস ফেললেন।
আমি আমার রুমে এসে টাকা টা ব্যাগে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিলাম তারপর একটা ফতুয়া আর জিন্স পরে ছোট ফুপ্পির রুমে গেলাম সেখান থেকে ইসরাতকে কোলে নিয়ে নিচে আসলাম মামনি আর আম্মু ড্রয়িংরুম এ বসে গল্প করছিলেন।
আমাকে কি কারো মনে পড়ে। সেই কখম কলেজ থেকে ফিরলাম কেউ একটু খুজ ও নিলোনা – আমি।
এখনি উপরে যেতাম আমরা। একটু বস আমি তুর খাবার নিয়ে আসছি – আম্মু।
শুধু খাবার নিয়ে এলেই হবেনা আমাকে খায়িয়ে দিতে হবে। নইলে খাবোনা – আমি।
আচ্ছা বাবা একটু অপেক্ষা কর – আম্মু।
আজকে কাকে মেরে এসেছিস রাস্তায় – মামনি।
তোমাকে আবার কে বললো – আমি
আমার কাছে সব খবরি আসে। এবার বল কাকে মেরেছিস আর কেনোই বা মেরেছিস – মামনি।
( শুরু থেকে সব বললাম) এবার বলো আমি কি কোনো ভুল কাজ করেছি – আমি।
সব বুঝলাম কিন্তু আজকে একজন বলে তুমি তার সাথে পেরে উঠেছ কিন্তু যদি অনেকজন হতো তাহলে কি হতো ভেবে দেখেছো। নিজের রাগটাকে সঠিক জায়গায় ব্যবহার করতে শিখো বুঝেছ – মামনি।
হিয়া হা কর ( ভাত মেখে মুখের সামনে নিয়ে) চুপচাপ খাবার শেষ করবে কোনো কথা না – আম্মু।
কিন্তু আম্মু এতোগুলা ভাত আমি খেতে পারবোনা ২ বেলার ভাত এখনি খায়িয়ে ছাড়বে নাকি – আমি।
এতো কথা না বলে চুপচাপ খাবার শেষ করো। এতো অল্প খেয়েই কাঠির মতো শরির করেছো – আম্মু।
আর একটু বলো এই মেয়ে আমার কোনো কথাই শুনেনা আপা – মামনি।
২ জন মিলে কি শুরু করলে। আম্মু আমি আর খাবোনা – আমি।
খেতে হবে নইলে মারবো এখন – আম্মু।
মেরে দেখো এমন কান্না করবো সবার কাছে বকা খাবে তোমরা ২ জন হা হা হা – আমি।
বড্ড পাকামি হচ্ছে তাই না – মামনি।
আমি খাবোনা আমি পানি খেয়ে আসি তোমরা খাও বাকিটা – আমি।
ইসরাতকে মামনির কাছে দিয়ে আমি পানি খেয়ে আমার আসলাম মামনিদের কাছে তারপর অনেক্ষন বসে গল্প করলাম আমরা। বিকেলে দাদা দাদি আর বড় ফুপ্পি চলে যাবে। আব্বিজানকে বলে আম্মু আর ছোট ফুপ্পিকে যেতে দেই নি আমি। কিছুদিন আম্মুর সাথে কাটাতে চাই। এতো বছরের অভিমান এখন ভালোবাসায় বদলে দিতে চাই।
বিকেলে ওনাড়া চলে গেলেন এবার আমি স্বাধীন আমাকে আর পায় কে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে ধুম ধারাক্কা নাচ সাথে আম্মু ছোট ফুপ্পি আর মামনিকে সাথে নিয়ে।
আব্বিজান বাহিড়ে গিয়েছে তার নাকি কি কাজ আছে আর মামু এখনো স্কুল থেকে ফেরেনি। মামুর ফেরার সময় হয়ে এসেছে। ইসরাতকে নিয়ে ছাদে আসলাম দোলনায় দোল খাচ্ছি আর ইসরাতকে নিয়ে খেলছি বুড়িটা খিলখিলিয়ে হাসছে। এতে আমার অনেক ভালো লাগছে। বাচ্চাদের আমার অনেক ভালোলাগে আর বাচ্চারাও আমাকে পছন্দ করে।
অনেক্ষন ছাদে কাটানোর পর আব্বিজান এসে আমাদের ডেকে নিয়ে আসলেন। নিচে এসে দেখি সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছেন। আম্মু আর মামনি রান্নাঘর থেকে শিঙাড়া আর চা নিয়ে আসলেন। আমিও গিয়ে সবার সাথে বসলাম। সবাই চা শিঙাড়া খাচ্ছি আর গল্প করছি। ভাইয়ু এখনো আসেনি হয়তো বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত।
সন্ধেবেলা আমি গিয়ে পড়তে বসলাম। ৯ টার দিকে পড়া শেষ করে ভাইয়ুর রুমে উকি দিলাম।
উকি না দিয়ে রুমে আসলেই পারিস – রায়হান।
কিভাবে বুঝলে আমি এসেছি – আমি।
আয়নায় দেখেছি। পড়া হয়েছে নাকি পড়তে বসনি – রায়হান।
পড়েই এসেছি। তোমার মতো ফাকিবাজ আমি না বুঝেছ – আমি।
আমি ফাকিবাজ তাই না – রায়হান।
হ্যা তুমি ফাকিবাজ – আমি।
তবেরে দাড়া খবর আছে তুর আজ (হিয়াকে ধরতে নিলে) – রায়হান।
পারলে ধরে তো দেখাও। আমাকে ধরা এতো সহজ না (হা হা হা) ( নিচে চলে আসলাম ছুটে) – আমি।
আমি ছুটে নিচে চলে আসলাম। ভাইয়ুর হাত থেকে বাচার জন্য।
হিয়া দারা বলছি আমি ধরতে পারলে কিন্তু তুর নিস্তার নেই – রায়হান।
পারলে ধরে দেখাও না। পারেনা ভাইয়ু আমাকে ধরতে পারে না – আমি।
ওই তো ধরে নিয়েছি ( কোলে নিয়ে) এবার কোথায় পালাবি। এখান থেকে ফেলেদেই – রায়হান।
না ভাইয়ু ব্যাথা পাবো ( ভয়ে গলা জরিয়ে ধরে) প্লিজ নামিয়ে দাও – আমি।
আগে আমার গলা ছাড় নখের দাগ পড়ে গেছে গলায় উফ – রায়হান।
আমি গলা ছেড়ে দিলাম।
রাক্ষসীদের মতো বড় বড় নখ রাখিস কেন। আজকেই নখ কাটবি – রায়হান।
মুখ ভেংচি দিয়ে চলে আসলাম।
রাতে সবার সাথে ডিনার করে আব্বিজান আম্মুর সাথে কিছুক্ষন গল্প করে আমি রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি বিছানায় চকলেট রাখা অনেকগুলো। আমি জানি এটা ভাইয়ুর কাজ। চকলেট গুলো ড্রয়ারে রেখে ডাইরি লিখলাম। তারপর আমার কিটি (টেডিবিয়ার) কে জরিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অজু করে নামায আদায় করে নিলাম। তারপর বাড়ির পেছনে বাগানে গেলাম গাছে পানি দেয়ার জন্য। গাছে পানি দিয়ে ছাদে গেলাম ছাদের গাছে পানি দেয়ার জন্য। পানি দেয়া শেষ করে রুমে এসে কিছুক্ষন গল্পের বই পড়লাম। তারপর শাওয়ার নিয়ে কলেজের ইউনিফর্ম পড়ে ব্যাগ আর টাকা নিয়ে নিচে গেলাম। সবার সাথে নাস্তা করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে কলেজের জন্য চলে আসলাম। ২০ মিনিট পর কলেজে পৌছে। সবগুলো ক্লাস করে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে সেই রাস্তাটায় চলে আসলাম।
রাস্তাটায় এসে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। হা কালকের ভাইয়াটা দাঁড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে সালাম দিলাম।
আসসালামু আলাইকুম -আমি।
ওয়ালাইকুম আসসালামু – ভাইয়া।
ভালো আছেন ভাইয়া – আমি।
আলহামদুলিল্লাহ … কাল তোমার সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ আপু তোমার জন্য আমার মা এখন কিছুটা সুস্থ – ভাইয়া।
আমার নাম হিয়া। আমাকে নাম ধরেই ডেকো ভাইয়া – আমি।
আমি রাতুল। আজকে এখানে ডেকেছিলে কেনো আপু – রাতুল।
পড়াশোনা কতোটুকু করেছো তুমি ভাইয়া – আমি।
অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি আপু কেনো – রাতুল।
এই কার্ডের (আব্বুর কার্ড) এই ঠিকানায় যাবে এটা আমার আব্বিজানের অফিস তোমার একটা কাজ হয়ে যাবে আব্বিজানকে বলে রেখেছি আমি। আর এই ২০০০০ টাকা মায়ের চিকিৎসা আর ছোট বোনের এমাসের পড়ার খরচ। – আমি।
না আপু টাকাটা আমি নিতে পারবোনা কাল ৫০০০ নিয়েছি ওটাই যথেষ্ট এখনের জন্য আর তুমিতো কাজ জোগাড় করে দিয়েছো এটাই অনেক – রাতুল।
আমাকে বোন মনে করলে এটা তোমাকে নিতেই হবে। রোজগার করে নাহয় আমার টাকা আমাকে ফেরত দিবে ওই নাও (একটা কাগজ) এতে আমার ঠিকানা আর ফোন নাম্বার আছে। যোগাযোগ রেখো – আমি।
আচ্ছা আপু। আবারো ধন্যবাদ তোমাকে – রাতুল।
বোন ডেকে আবার ধন্যবাদ দিচ্ছো। যাও কথা নেই তোমার সাথে ( মুখ ফুলিয়ে ) – আমি।
আচ্ছা বোনটি রাগ করেনা। আর এমন হবেনা আমার (কান ধরে) সরি – রাতুল।
যাও বাসায় যাও মায়ের খেয়াল রেখো। আমি আজ আসি – আমি।
আল্লাহ হাফেজ – রাতুল।
আল্লাহ হাফেজ – আমি।
আমি হাটতে হাটতে বাড়িতে আসতে নিলাম তখন দেখি ভাইয়ু একটা মেয়ের সাথে রাস্তায় দারিয়ে কথা বলছে। বুকে হঠাত ব্যাথা অনুভব করলাম। মনকে বুঝ দিলাম ভাইয়ুকে ঐ মেয়েটার পাশেই মানায় আমার মতো গাইয়া মেয়ের সাথে না। ভাইয়ুর সামনে দিয়ে মাথা নিচু করে চলে আসতে নিলে।ভাইয়ু আমার নাম ধরে ডাকে। তাই মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে পেছনে ফিরলাম।
বলো – আমি।
কলেজ ছুটি হয়ে গেছে তুর – রায়হান।
হুম বাসায় ফিরছি এখন – আমি।
আচ্ছা চল একসাথে বাসায় যাই। সিথি(পাশের মেয়েটা) আজ আসি। কাল ভার্সিটি তে কথা হবে। হিয়া চল। – রায়হান।
হুম চলো – আমি।
ছেলেটা কে ছিল যার সাথে এতোক্ষন কথা বললি – রায়হান।
আমার ভাই – আমি।
রাস্তাঘাটে ভাই পাতিয়ে বেরাস নাকি – রায়হান।
তোমার কোনো সমস্যা। সে আমার আপন ভাই। আর কিছু বলার আছে – আমি।
না কিছু বলার নাই মেম। এবার চলেন – রায়হান।
আমরা বাসায় চলে আসলাম। তারপর রুমে গিয়ে নরমাল ড্রেস পরে হাত মুখ ধুয়ে নিচে আসলাম।
আমার খিদে পেয়েছে – আমি।
টেবিলে বস আমি খাবার দিচ্ছি – মামনি। (রান্নাঘর থেকে)
জলদি আমার পেটের পোকা গুলো কিড়মিড় কিড়মিড় করছে গো – আমি।
নাও খাবার শেষ করো – মামনি।
চুপচাপ খাবার শেষ করলাম।আমার বেশি খুদা লাগলে আমি একদম চুপচাপ খাবার শেষ করি। খাবার খেয়ে ইসরাতের কাছে গেলাম অনেক্ষন ইসরাতের সাথে খেলা করে নিজের রুমে এসে ঘুমালাম।
ঘুম থেকে একেবারে সন্ধেবেলা উঠলাম। হাতমুখ ধুয়ে নিচে গেলাম সেখানে সবাই আছে। একটা পিচ্ছিকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম কারন তাকে আমি এখানে এখন আশা করিনি…
To be continue…..