অপ্রকাশিত ভালোবাসা,পর্বঃ ১৭ +১৮
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ১৭
নিলা ছেলেটাকে হাটু গেরে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায়। কারন এই ছেলেটাকে গত এক বছর যাবৎ পাগলের মতো খুজেছে নিলা। এই একটা মানুষকে ভালোবেসেছিল সে খুব ভালোবাসতো কিন্তু কখনো প্রকাশ করতে পারেনি অথচ আজ সে মানুষটা নিজের চোখের সামনে মাথা নিচু করে আছে। নিলার এখন অনুভূতি কেমন প্রকাশ করা উচিত সেটা সে বুঝতে পারছে না। নিলার অজান্তেই নিলার চোখ তার সাথে বেইমানি করছে। নিলার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। চোখের পানি মুছে নিলা ঘুড়ে চলে যেতে নিলেই ছেলেটা নিলার হাত ধরে ফেলে আর বলে..
নিলা ক্ষমা করে দাও আমাকে। প্লিজ -ছেলেটি।
কে আপনি আজব আপনাকে আমি চিনিনা প্লিজ হাত ছাড়ুন – নিলা।
নিলা হাত ছাড়িয়ে নেয় আবার। আপনি তো নিজেকে অন্ধকারের নিয়ে গিয়েছিলেন তাহলে এখন আবার কেনো আলোর মধ্যে নিয়ে এসেছেন মিঃ শাহরিয়ার আহমেদ জয়। আর আমার হাত ধরেছেন কোন অধিকারে হাত ছাড়ুন – নিলা।
ভালোবাসার অধিকারে। (নিলা অবাক হয়ে তাকায়) হ্যা ভালোবাসি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নিকের অনুভূতি গুলো নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম যে আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি তো তাই নিজেকে লুকিয়ে নিয়েছিলাম তোমার থেকে কিন্তু বিশ্বাস করো আমি পারিনি তোমাকে ভুলে থাকতে নিজেকে তোমার উপযুক্ত তৈরি করে তারপর বাংলাদেশ চলে আসি সেখানে ছোটবেলার খেলার সাথি হিয়াকে পাই। হিয়ার ফোনেই আমি তোমাকে ১ বছর পর দেখি তুমি যানো সেদিন আমি আমার জান ফিরে পেয়েছিলাম। হিয়াকে সব খুলে বলি তারপর হিয়া আমাকে আজকে এখানে নিয়ে আসে। খুব ভালোবাসি তোমাকে আমার জানপাখিটা। প্লিজ অভীমান কমিয়ে একটাবার আমাকে সুজুক দাও কথা দিচ্ছি সারাজীবন তোমাকে আগলে রাখবো। দিবেনা আমাকে সেই সুযোগ টা – জয়।
মিঃ জয় আপনার বলা শেষ হলে আমার হাত টা ছাড়ুন। আপনার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বসুলভ তাহলে এখানে ভালোবাসাবাসি কিভাবে আসলো আমি আপনাকে ভালোবাসিনা শুনতে পাচ্ছেন আপনি আমি ভালোবাসিনা আপনাকে। চলে যান আমার জীবন থেকে। আজ থেকে ভাববো জয় নামে কারো অস্তিত্ব আমার জীবনে কখনো ছিলই না – নিলা।
একটিবার বলো ভালোবাসি তোমাকে আর কোনোদিনো ভালোবাসতে হবেনা
মরুভূমির তপ্ত বালুতেও পা দিতে হবেনা
আমার জন্য তোমাকে নিশিরাতে পা ভেজাতেও হবেনা
আকাস বাতাস শুনুক তোমার প্রতিধ্বনি
সবাই জানুক কেউ আমাকে ভালোবেসেছিল
আমার হৃদয়ের ডাকে কেউ সারা দিয়েছিল
আমি এটুকুই চাই এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না
কাছে আসো বা না আসো এতে আমার কোনো আপত্তি নেই
হৃদয়কে নাহয় একটিবারের জন্য শান্তনা দিতে পারবো
কেউ তো অন্তত একটিবারের জন্য হলেও প্রানের ছোয়া দিয়েছিল
কয়েক সেকেন্ডের জন্য হলেও এই শুকিয়ে যাওয়া নদীতে
আবার ঝড়ের বেগে অশ্রু বন্যা বয়েছিল
শুধু এটুকুই আমি চাই এর চেয়ে বেশি চাই না
এর চেয়ে বেশি কিছুই চাই না আমার
এর জন্য তুমি কি চাও
হয়তোবা আমি তোমাকে আকাসের চাঁদ টা এনে দিতে পারবোনা
পূর্ব দিকে উঠা সূর্যটিকেও হাতে তুলে দিতে পারবোনা
কিন্তু আমি পারবো তোমার জন্য রজনীর পর রজনী জেগে থাকতে
পারবো আজীবনের জন্য তোমার অপেক্ষায় থাকতে
হয়তো আমার এ শূন্য হৃদয়ে কেউ স্থান করে নেবে
কিন্তু তুমি তো আমার হলেনা কি হবে ভরে এ শূন্য হৃদয়
আমি তো চাই নি অন্য কেউ এসে আমার হৃদয়ে গোলাপ ফোটাক
পোড়ামন আবার সতেজ হয়ে উঠুক
আমি চেয়েছি শুধু তোমার মুখ থেকে একটিবার হলেও পতিধ্বনি হয়ে বেজে উঠুক
শুধু একটি শব্দ
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি
শুধু এটুকুই তো আমিমি চাই
এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না
এর থেকে বেশি কিছু চাইবার নেই আমার
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি
(কবিতাঃ ভালোবাসি)
জয় জানে নিলা কবিতা অনেক পছন্দ করে তাই কবিতার মাধ্যমে নিজের অনুভূতির কথা জানালো নিলাকে। আর নিলা কবিতা শুনে স্তব্দ হয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। জয় এই কবিতার মধ্য দিয়েই যে নিজের মনের কথা নিলাকে জানিয়েছে সেটা নিলা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।
তোমাদের এতোটা সময় নষ্ট করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তোমরা নিজেদের বন্ধুর জন্মদিন শুরু করো আমি চলে যাচ্ছি। I’m sorry nila আমি পারিনি নিজের ভালোবাসা আপন করে নিতে চলে যাচ্ছি আর কখনো তোমার সামনে আসবোনা কথা দিলাম। ভালো থেকো – জয়।
জয় চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিছুদূর যাওয়ার পর জয়ের মনে হলো কেউ জয়কে আকড়ে ধরে আছে যেনো জয় কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে। জয় বুঝতে পারছে এটা নিলা ।
আবার ভলে যাচ্ছো আমাকে ফেলে। জয় ১ বছর কম সময় নয় এই ১ টা বছর আমার কেমন কেটেছে তোমার ধারণা নেই। নেটওয়ার্ক সাইটে তোমাকে অনেক খুজেছি আমি কিন্তু পাই নি। তুমি আমাকে একা ফেলে চলে গিয়েছিলে। তোমার নাম আর ছবি ছাড়া আর কিছুই ছিলনা আমার কাছে। কিভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম নিজেও জানতাম না। তুমি অনেক খারাপ তোমাকে উগান্ডা পাঠিয়ে দেয়া উচিত – নিলা।
চলো দুজনেই উগান্ডা চলে যাই। উফ কতো দিন পর আমার ঝাছেকি রানীকে ফিরে পেলাম আমি এখন আর দূরে যেতে দিবো না (নিলার কপালে চুমু দিয়ে) – জয়।
লজ্জা শরম কিছু নেই তাই না লুচু ছেলে যাও সরো (লজ্জা পেয়ে) – নিলা।
আমরা কেউ কিছু বুঝতে পারছি না আমাদের কেউ কিছু বলবি এখানে কি হচ্ছে – শান্তা।
বুঝাবুঝি সব পরে নিলা জয় চল কেক কাটি তারপর সব কথা বলা যাবে – আমি।
নিলা কেক কেটে প্রথমে হিয়াকে তারপর সব বন্ধুদের খায়িয়ে দিয়ে সবার শেষে জয়কে খাওয়ায়। তারপর কিছুক্ষন দুষ্টুমি করে নদীর পারে গোল হয়ে বসে।
এবার প্লিজ বলো নিলার কাহিনী টা কি – তিথি।
আমি বলছি। আমাদের কাহিনী টা শুরু হয় প্রায় দেড় থেকে ২ বছর আগে থেকে। জয় ছিল আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড প্রথমে জয়কে এড়িয়ে চললেও একসময় জয়ের সাথে কথা না বললে আমার ভালো লাগতো না। তাই বেশি বেশি জয়ের সাথে অভিমান করতাম জয়কে।বকা দিলাম। এভাবেই বুঝতে পারি জয়কে আমিমি ভালোবাসি চাইলেও জয়কে ভুলতে পারছিলাম না। জয় মাঝে মাঝে আমার সাথে কথা বলতো না তখন আমার খুব কষ্ট হতো। মান অভিমান এসবেই আমাদের কয়েকমাস চলে যায়। অনেক ভেবে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম জয়কে আমার মনের কথা জানাবো। জয়কে ছাড়া যেনো আমার চলছিলই না। হঠাত জয় ফেইসবুকে আসা বন্ধ করে দেয়। এক সপ্তাহ একমাস এবং সব শেষে একবছর চলে যায় জয়কে আর আমি অনলাইনে আসে না। আমি এতোদিন অপেক্ষা করে ছিলাম জয়ের জন্য। আমার মন বলছিল জয় একদিন আসবে এসে আমাকে সারপ্রাইজ দিবে আমাকে বলবে nila I love you…. I love you so much my jhacheki rani। আর আজ দেখো আমার মন আমাকে মিথ্যে আসা দেখায় নি আমার জয় ফিরে এসেছে – নিলা।
দেখেছিস তোরা নিলা আমাদের থেকে এতো বড় কথাটা কিভাবে লুকিয়ে গেলো জয় আমাকে না বললে আমি জানতেই পারতাম না যে নিলা ভিতরে ভিতরে এতোটা কষ্ট পাচ্ছিলো – আমি।
নিলা আমাদের কখনো বন্ধু ভাবেনি যদি বন্ধু ভাবতো তাহলে আমাদের থেকে কিছু লুকাতে পারতো না – শান্তা।
আমি চাইনি আমার কষ্টের জন্য তোদের ও কষ্ট হোক। তাই তো তোদের সাথে এতো এতো সময় কাটাতাম – নিলা।
আমার ফোনে মামনি কল করে তাই আমি সবার থেকে একটু দূরে এসে ফোনে মামনিকে বললাম কিছুক্ষনের মধ্যে বাড়ি চলে আসছি। তারপর আবার সবার কাছে ব্যাক করলাম…
গাইজ আমাকে বাসায় যেতে হবে মামনি কল করেছিলো – আমি।
চল আমরাও যাবো। – নিলা ছাড়া বাকি সবাই।
নিলা তুই জয়ের সাথে সময় কাটিয়ে বাড়ি চলে যাস আমি তুর বাসায় ফোন দিয়ে বলে দিচ্ছি তুই আমার সাথে আমাদের বাসায় আছিস – আমি।
হিয়া তুই বাড়ি যা আমি নিলাকে পৌছে দিয়ে তারপর বাসায় যাবো – জয়।
নিলা আর জয়কে একা ছেড়ে দিয়ে আমরা সবাই বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে শাওয়ার নিয়ে মামনির সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম। রাতপর দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
রাতে………
আমি পড়াশোনা শেষ করে ভাইয়ুর রুমে উকি দিলাম এটা আমার প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ভাইয়ু রুমে নিজের ডাইরি তে কি যেনো লিখতেছে। আমার মাথায় আবার দুষ্টু বুদ্ধি উদয় হলো। চুপিচুপি ভাইয়ুর পেছনে গিয়ে চিল্লিয়ে বললাম..
ভাওওওওওওওওওওওও –
কে কে (ধড়ফড়িয়ে উঠে পেছনে তাকায়) ও তুই এভাবে কেউ ভয় দেখায়। যদি মরে যেতাম – রায়হান।
আবার মরার কথা তোমার সব চুল আজকে ছিড়ে ফেলবো (চুল টেনে ধরে) আর মরার কথা বলবে বলো – আমি।
উফ লাগছে চুল ছাড় আচ্ছা আমি আর এসব কথা বলবো না প্লিজ চুল ছাড় – রায়হান।
Good… এবার আমার চকলেট দাও – আমি।
আনি নি আজকে – রায়হান।
কথা বলবো না তোমার সাথে আমি হুহ গেলাম – আমি।
আরে হিয়া (পেছন থেকে জরিয়ে ধরে) দাড়া তো। চকলেট নিয়ে যা – রায়হান।
টিংকু – আমি।
অনেকক্ষন ভাইয়ুর সাথে আড্ডা দিয়ে। সবার সাথে ডিনার করে রুমে চলে এলাম। রুমে এসে প্রতিদিনের মতো ডাইরি লিখে বিছানা ঠিক করে। ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে আযানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো অজু করে নামাজ আদায় করে। বাগানে চলে আসলাম। ফুল গাছে পানি দিয়ে কিছুক্ষন হাটাহাটি করে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম…….
অপ্রকাশিত ভালোবাসা
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ১৮
বাসায় এসে আমি অবাক কারন বাসায় আমার দাদু দাদি আব্বিজান আম্মু বড় ফুপ্পি ছোট ফুপ্পি সবাই বসে আছে। আমাকে দেখে আব্বিজান সোফা থেকে উঠে আমার কাছে আসলেন।
আম্মিজান এতো দেরি হলো যে আজ। স্পেশাল ক্লাস ছিল নাকি আজ কলেজে – আব্বু।
না আব্বিজান কোনো স্পেশাল ক্লাস ছিলনা নিলার জন্মদিন ছিল আজ তাই ছোট খাটো একটা পার্টির করেছি বন্ধুরা মিলে তাই একটু দেড়ি হলো কিন্তু তোমরা হঠাত এ বাসায় কিছু হয়েছে কি -আমি।
না আম্মিজান কিছু হয় নি তোমার দাদা দাদি তোমার সাথে দেখা করার জন্য এসেছেন – আব্বু।
আমি দাদা দাদি কে গিয়ে সালাম করলাম। কেমন আছেন দাদু দাদি – আমি।
আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে আমরা খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না দাদুভাই – দাদু।
না দাদুভাই আমি কখনো কষ্ট পাই নি শুধু খারাপ লাগতো যে আমার সব ভাই-বোনেরা তোমাদের আদর পেতো কিন্তু আমার ভাগ্যে সেটা জুটে নি – আমি।
আমাদের ক্ষমা করে দিও দাদুভাই – দাদি।
আরে দাদি কি যে বলো না। আচ্ছা তোমরা বসো আমি আমার রুমে যাই – আমি।
কেউ কিছু বলার আগেই আমি চলে আসলাম। কারন ওখানে বেশিক্ষণ সবার সামনেই নিজের আবেগটা প্রকাশ করে ফেলতাম। তাই রুমে চলে আসলাম রুমে এসে দরজার সাথে হেলান দিয়েই বসে পড়লাম চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কতোক্ষন এভাবে বসে কান্না করেছি জানিনা ছোট ফুপ্পির ডাকে হুস ফিরলো আমার। ছোট ফুপ্পি দরজার বাহিরে থেকে আমাকে ডাকছে তাই ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে তারপর দরজা খুললাম।
এতো ডাকছিলে কেনো ফুপ্পি – আমি।
নিচে সবাই ডাকছে তোমাকে। তোমার চোখ মুখ ফুলা কেনো কান্না করেছিলে – ছোট ফুপ্পি।
যাচ্ছি। ইসরাত কে আমার কাছে দিবে ফুপ্পি – আমি।
তুর বোন তুই নিবি এতে পারমিশন নেয়ার কি আছে আমাকেও কি সবার মতোই ভাবতি হিয়া – ছোট ফুপ্পি।
আমি কিছু না বলে ইসরাত কে কোলে নিলাম। ইসরাত আমার ছোট ফুপ্পির ১ বছরের মেয়ে। ছোট ফুপ্পি আমাকে সবার মতো অবহেলা করতো না। আদর করতো তার জন্য সবার কাছ থেকে অনেক কথা শুনতে হতো ফুপ্পি কে। ইসরাতের জন্মের পর আমাকে বলেছিল যেতে কিন্তু আমি যাই নি আমি চাই নি আমার জন্য কারো ক্ষতি হোক কেননা আমিও সবার মতো মেনে নিয়েছিলাম যে আমি অপয়া অলক্ষি। ইসরাতকে কোলে নিয়ে আমার গলার সর্ণের চেইন টা ইসরাতকে পড়িয়ে দিলাম। ইসরাতের জন্য আনা জামা গুলোর থেকে একটা ইসরাতকে পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে নিচে গেলাম আমরা।
সবাই দেখো তো আমাদের ইসরাতকে কেমন দেখাচ্ছে – আমি।
মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে এসব কখন কিনলে আম্মিজান -আব্বু।
অনেক আগেই আমার এই ছোট বনুর জন্য এরকম অনেক অনেক গিফট আমার কাছে রয়েছে আব্বিজান – আমি।
হিয়া ইসরাতের গলায় কিসের চেইন – ছোট ফুপ্পি।
সর্ণের চেইন ফুপ্পি ইসরাত কে আমি আজকে প্রথম কোলে নিয়েছি বড় বোন হিসেবে আমাকে তো কিছু দিতে হবে তাই এই সামান্য জিনিসটাই দিলাম আমার বনু কে – আমি।
এটা সামান্য জিনিস হিয়া চেইন টা তুই নিজের কাছেই রাখ – ছোট ফুপ্পি।
ফুপ্পি বনুর গলা থেকে চেইন খুলবেনা বলে দিচ্ছি। মামনি সবাইকে খাবার দিয়েছ – আমি।
না কেউ তোকে ছাড়া খাবেনা। তুই এখন এসেগেছিস তাই এখনি খাবার দেবো চল খাবার খেয়ে নিবি – মামনি।
ভাইয়ু আর মামু আসবেনা আজ – আমি
তুর ভাইয়ু ভার্সিটি গিয়েছে আসতে রাত হবে। আর ভাই একটা কাজে আটকে পড়েছে। তুই খেতে বস তো – আম্মু।
আমি অল্প কিছু খেয়ে ইসরাতকে নিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে ইসরাত কে নিয়ে দুষ্টুমি করছিলাম। তখনি বড় ফুপ্পি আমার রুমে আসে। ফুপ্পি কে দেখে আমি চুপটি করে বসে আছি কারন এই মানুষটার কাছে আমি অপরাধী। ফুপ্পি আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল..
আমাকে কি ক্ষমা করা যায় হিয়া – বড় ফুপ্পি।
তুমি কোনো ভুল করনি ফুপ্পি। তুমি আমার গুরুজন তাই এমন কথা আমাকে বলো না – আমি।
তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম অনেক আমি তোমাকে তোমার নিজের বাড়ি থেকে দূরে রেখেছি ১০ বছর। আমার জন্যই সবাই তোমাকে অবহেলা করতো প্লিজ ফুপ্পিকে মাফ করে দাও – বড় ফুপ্পি।
আমার কারো উপর কোনো অভিযোগ নেই ফুপ্পি আগের সব কিছু আমি ভুলে গেছি আর তোমরাও ভুলে যাও প্লিজ এসব নিয়ে আর কথা বলো না কেউ – আমি
আচ্ছা এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলবোনা। কিন্তু তার জন্য তোকে আজ আমাদের সাথে বাড়ি যেতে হবে – বড় ফুপ্পি।
না ফুপ্পি এখন সম্ভব না কিছুদিন পর আমার পরিক্ষা। এখন কোথাও গেলে পরিক্ষা ভালো করে দিতে পারবোনা – আমি।
আচ্ছা পরিক্ষা শেষ হলে যাবি তো – বড় ফুপ্পি।
অবশ্যই যাবো – আমি।
কিছুক্ষণ ফুপ্পির সাথে আড্ডা দিয়ে। তারপর আব্বিজান আম্মু বড় ফুপ্পি ছোট ফুপ্পি মামনি সবাইকে নিয়ে বাগানে গেলাম। আমার ফুল গাছের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারপর কানামাছি খেললাম। এভাবেই হেসে খেলে সন্ধে হয়ে গেলো আমরা সবাই বাসায় এসে হালকা নাস্তা করলাম সাথে হাসি মজা তো আছেই। ৭ টার দিকে ভাইয়ু বাসায় আসলো এসে দাদা দাদু আর বড় ফুপ্পিকে বাসায় দেখে চিল্লিয়ে বাসা মাথায় তুলে ফেলছে।
আপনারা আমাদের বাসায় কি করতে এসেছেন আবার হিয়াকে অপমান করতে এসেছেন তাই না সেদিন অপমান করে মন ভরেনি আবার চলে এসেছেন (প্রচণ্ড রেগে) – রায়হান।
রায়হান বাবা একটু শান্ত হও এনারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন হিয়াকে আপন করে নিতেই এখন এ বাসায় এসেছেন – আব্বু।
আমরা দুঃখীত রায়হান সেদিনের ব্যাবহারের জন্য। তোমার জন্য আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছিলাম তাই আমরা আজ এসেছি আমাদের বাড়ির মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য – দাদু।
হিয়া কোথাও যাবেনা। আপনাদের আমি বিশ্বাস করিনা হিয়া আমাদের বাসায় থাকবে। এটাই আমার শেষ কথা -রায়হান।
নিচে চেঁচামেচি শুনে আমি দৌড়ে নিচে আসলাম। নিচে এসে এসব কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেলো।
আমি কোথাও যাবোনা এ বাসা থেকে – আমি।
কিন্তু হিয়া তুর নিজের বাড়ি থাকতে মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করবি কেনো – দাদু।
নিজের বাড়ি কোনটাকে বলছেন আপনি দাদু যে বাড়িতে এতোদিন আমার কোনো অধিকার ছিলনা সে বাড়িটা। এতোদিন তো এসব কথা বলতে আসেন নি আপনারা তাহলে এখন কেনো বলছেন। আমার স্কুল কলেজ যেহেতু আমি এখান থেকেই শুরু করেছি সেহেতু এখান থেকেই আমি পড়াশোনা শেষ করতে চাই – আমি।
হিয়া দাদুর মুখের উপর কথা বলছিস কেনো তুই ( ধমকের সুরে) – আম্মু।
এতোক্ষন তো কোনো কথা বলেন নি আপনি তাহলে এখন কেনো কথা বলছেন। আপনি আমার আম্মু আমাকে জন্ম দিয়েছেন কিন্তু আর কিছু কি করতে পেরেছেন নিজের মেয়ের জন্য। ঐ মানুষটা (মামনি) জানেন ঐ মানুষটা আমার জন্য সব করেছেন। যখন গভীর রাতে খারাপ সপ্ন দেখে ঘুম থেকে চিল্লিয়ে উঠে যেতাম তখন আপনাকে আমার প্রয়োজন ছিল কিন্তু আপনার অভাব টা আমার মামনি কখনো বুঝতেই দেয় নি। নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছে আমাকে। আমার যখন শরির খারাপ থাকতো আপনাকে তো খবর পাঠানো হতো এসেছিলেন কোনো দিন নিজের মেয়ের কি হয়েছে সে খবর নিতে তাহলে আজ কেনো আমাকে ধমক দিচ্ছেন আপনি। কোন অধিকারে – আমি।
হিয়ামনি আম্মুর সাথে এভাবে কথা বলেনা মা। তোমার আম্মু তোমাকে খুব ভালোবাসে হয়তো সেটা সে প্রকাশ করেনি তাই বলে মায়ের ভালোবাসাটা তো মিথ্যে হয়ে যায় না মা – মামনি।
আমার কি দোষ ছিল বলতে পারেন দাদুভাই কেনো আপনারা আমাকে আমার মায়ের আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করলে। প্রতিটা রাতে আমি কাদতাম আমার মায়ের জন্য খুব করে চাইতাম মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিক। মায়ের কোলে মাথা রেখে মার সাথে আমি আমার মনের সব কথা বলি। কিন্তু সেটা হয় নি কেনো জানো শুধু মাত্র তোমার জন্য দাদুভাই আপনি যদি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে না দিতে তাহলে আমার মা আমার থেকে পর হতো না – আমি।
হিয়া রুমে চল এখানে আর থাকতে হবেনা – রায়হান।
রায়হান হিয়াকে নিয়ে রুমে চলে গেলো।
আপনারা কেউ কিছু মনে করবেন না। এতো বছরের অভিমান আজকে প্রকাশ করেছে হিয়া। হিয়ার মনে এতোদিন এসব কথা জমে আপনাদের প্রতি একপ্রকার রাগ জন্মেছিল আশা করি এখন সব ঠিক হয়ে যাবে। আপা ( আমার আম্মু) তুমি উপরে হিয়ার কাছে যাও – মামনি।
হিয়া যদি আমাকে দেখে আরও বেশি কষ্ট পায়। পরে যাবো আমি এখন তুই যা হিয়াকে আমার থেকে তুই ভালো বুঝিস। যা মেয়েটাকে একটু সামলা গিয়ে – আম্মু।
পারবোনা হিয়া ছাড়া ও আমার অনেক কাজ আছে – মামনি।
আব্বিজান আর আম্মু উপরে আমার রুমে চলে আসে। এসে দরজায় দারিয়ে থাকে।
এদিকে ভাইয়ু আমাকে রুমে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো আর আমি ফোনে আব্বিজান আর আম্মুর একটা ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছি।
আম্মু আমাকে ক্ষমা করে দিও আজকে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমি। তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি আমি কিন্তু কি করবো বলো এতো কষ্টের মাঝে তোমার ঐ কথাটা আমি মেনে নিতে পারিনি। জানো আম্মু আগে স্কুলে গেলে সবাই বলতো আমার মা আমাকে ভালোবাসে না তাই মামার বাসায় দিয়ে গেছে আমাকে। খুব কষ্ট হতো তখন বাসায় এসে কান্না করতাম। তোমার উপর খুব রাগ হতো কেনো তুমি আমাকে মামা বাড়িতে দিয়ে গেছো। মাঝে মাঝে আমার খুব ইচ্ছে হতো তোমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমাই। কিন্তু তখন তুমি ছিলেনা আমার পাশে। রাতে একা ঘুমাতে ভয় পেতাম আমি তোমাকে খুব করে ডাকতাম কিন্তু তুমি শুনতে না আমার কথা। এখন আমি কেনো শুনবো আমি তোমার কথা। আমি তোমার কেউ না আমার মামনি ভাইয়ু মামু আব্বিজান এড়াই আমার সব – আমি।
দরজার ওপারে হিয়ার মা-বাবা এসব শুনছিল হিয়ার মা নিরবে চোখের পানি ফেলছে তার মেয়ে এতো কষ্ট পেয়েছে। অথচ আমি মা হয়ে কিছুই করতে পারলাম না আমার মেয়ের জন্য। আমার মা হয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই। এই বলে হিয়ার মা রুমের সামনে থেকে চলে যায়। হিয়ার বাবা রুমে যান মেয়েকে শান্ত করার জন্য।
আমার আম্মিজান টা কি করছে – আব্বু।
কিছু না আব্বুজান কখন এসেছো তুমি (চোখের পানি মুছে) – আমি।
আমার আম্মিজান তো বেশ বড় হয়ে গেছে। আব্বিজানের কাছে নিজের কান্না লুকাচ্ছে এখন আমার আম্মিজান – আব্বু।
কি যে বলোনা আব্বিজান। চোখে পানি আসবে কোথা থেকে – আমি।
আব্বিজান এতোক্ষন তোমার সব কথাই শুনেছি – আব্বু।
লুকিয়ে কথা শুনেছো কেনো আব্বিজান – আমি।
জানো আম্মিজান আমার বাবা তোমার মা কে দিব্যি দিয়েছিল। যদি তোমার সাথে দেখা করতে আসে তাহলে তোমার মরা মুখ দেখবে কোনো মা কি তার সন্তানের মৃত্যু কামনা করে আম্মিজান- আব্বু।
আব্বিজানের কথা শুনে আমি অবাক। আমি আম্মু কে এতো গুলো কথা শুনালাম যেখানে আমার আম্মুর কোনো দুষ ছিলই না। আমি এতো বড় ভুল কিভাবে করলাম।
আব্বিজান আম্মু কোথায় – আমি।
রুমে গিয়েছে কান্না করতে করতে -আব্বু।
আমি দৌড়ে আম্মুর রুমে গেলাম। আমার আম্মু কান্না করছে।আমি গিয়ে আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম আম্মুর হাত আমার মাথায় দিয়ে বললাম..
আম্মু মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে।
আম্মু যেনো চাঁদ হাতে পেয়েছে এতোটা খুশি হয়েছে আম্মু। চুপচাপ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আম্মু I’m Sorry আমি না বুঝে তোমাকে আঘাত দিয়ে ফেলেছি আজ – আমি।
না আম্মু তোকে সরি বলতে হবেনা। ভুলটা আম্মুর ছিল তুই কেনো সরি বলছিস – আম্মু।
আমাকে মাফ করেছো বলো – আমি।
হুম । বাসায় ফিরে চলো আম্মু -আম্মু।
না আম্মু। আমি ভাইয়ুকে না দেখে থাকতে পারবো না (আল্লাহ কি বলে ফেললাম এটা আমি -মনে মনে) – আমি।
আমার মেয়ে প্রেমে পড়েছে তাই না – আম্মু।
না কিছুনা আম্মু – আমি।
আম্মুকে বলবেনা – আম্মু।
হুম আম্মু ভাইয়ুকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আমি অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি। তাকে না দেখে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই আমি এখানে থেকেই পড়াশোনা করবো – আমি।
আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এখানেই থাকবে কিন্তু মাসে একবার আম্মুর সাথে দেখা করে আসবে প্রমিস করো – আম্মু।
পিংকি প্রমিস আম্মু – আমি।
আমরা অনেক্ষন মজা করে নিচে ডিনারের জন্য গেলাম। টেবিলে সবাই আছে কিন্তু ভাইয়ু নেই তাই আমি ভাইয়ুর রুমে আসলাম ভাইয়ু কে ডাকতে। ভাইয়ুকে রুমে পেলাম না তাই ছাদে গেলাম ভাইয়ু আছে কিনা দেখতে। গিয়ে দেখি………
To be continue……….