অপ্রকাশিত ভালোবাসা,পর্বঃ ১৫+১৬

অপ্রকাশিত ভালোবাসা,পর্বঃ ১৫+১৬
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ১৫

প্রায় ৪০ মিনিট পর রায়হান হিয়াদের বাসায় আসে। এসেই হিয়ার দাদুর রুমে পা বাড়ায়।
হিয়াকে কি বলেছেন আপনি। (রায়হান দাদু কে উদ্দেশ্য করে বলল)
যা বলার বলেছি তার কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে। (দাদু)
অবশ্যই দিতে হবে কারন হিয়ার গার্ডিয়ান আমরা আমি আমার বাবা আমার মা। আমার বাবা মা এখানে নেই আমি হিয়ার গার্ডিয়ান এখানে। (রায়হান)
তুমি কি ভুলে যাচ্ছ হিয়া আমাদের বংশের সন্তান। তাহলে তুমি আর তোমার বাবা মা হিয়ার গার্ডিয়ান হলে কিভাবে।(দাদু)
বাহ দাদু বাহ। যখন হিয়াকে অবহেলা করতেন তখন কোথায় ছিল আপনার এই বংশ। যখন আপনার বউ আর মেয়ে হিয়াকে অপয়া অলক্ষি বলে কথা শুনাইত তখন কোথায় ছিল আপনার একটু আগের কথাটা। (রায়হান)
দাদুর রুমে চিল্লানোর শব্দ পেয়ে বাড়ির সবাই দাদুর রুমে চলে আসি আমরা।
ভাইয়ু চুপ করো কি বলছ তুমি এসব। (আমি)
তুই চুপ থাক আজকে একটা কথা বলবি তো এখানেই পুতে দিয়ে যাবো তোকে। (অনেক রেগে)
তোমার সাহস কি করে হয় আমাদের বাড়ির মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলার। (দাদু)
আপনাদের বাড়ির মেয়ে রাইট। হিয়া যদি আপনাদের বাড়ির মেয়ে হতো তাহলে ৬ বছর পর কেনো হিয়াকে নিজের বাড়িতে পা রাখতে হলো। (রায়হান)
আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে তুমি কথা বলার কে। (পেছন থেকে ফুপ্পি)
আপনি সেই মহিলা তাই না যে কিনা নিজের ভাইজি কে অপয়া অলক্ষি উপাধি দেয়। নিজের ভাইয়ের টাকায় খাচ্ছেন থাকছেন সেই ভাইয়ের মেয়েকেই সজ্য করতে পারেন না। দারুণ মহিলা আপনি। (রায়হান)
মুখ সামলে কথা বলবে। (ফুপ্পি)
আমাকে ফুপ্পিমনি আর হিয়া ভাবছেন নাকি যে সব কষ্ট মুখ বুজে সজ্য করে যাবো। (রায়হান)
তাকিয়া (আমার মায়ের নাম) তোমার ভাইপোকে চুপ করতে বলো। (দাদি)
আরে দাদি যে। আসেন সালাম করি আপনাকে। (সালাম করে) সেকি পা পিছিয়ে নিলেন না যে। এই হাত ২ টা হিয়ার নয় তাই পা পিছান নি। আচ্ছা দাদি আপনিও তো একটা মেয়ে তাহলে আপনি কিভাবে নিজের নাতনিকে অপয়া বলতে পারেন। নিজের নাতনির জায়গায় নিজেকে একবার দাড় করিয়ে ভাবুন আপনাকে কেউ এসব বললে আপনার কেমন লাগতো। (রায়হান)
দাদি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রায়হান চুপ কর। অনেক হয়েছে এবার হিয়াকে নিয়ে তুই চলে যা। (আম্মু)
ফুপ্পিমনি তোমাদের জন্য শুধু মাত্র তোমার আর ফুপাজান এর জন্য এরা সবাই এতো বেড়েছে। (রায়হান)
তুমি এই বাসায় কেনো এসেছ। (দাদু)
আপনাদের এতো বছরের করা পাপ কমাতে। (রায়হান)
মানে।(দাদু)
শারমিনের (যে আপুটা আমার জন্মের কিছুদিন পর মারা যায়) এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যাথা সেটা কি আপনারা জানতেন না। (রায়হান)
হ্যা জানতাম। (ফুপ্পি)
শারমিন এপেন্ডিসাইটিস রোগের কারনে মারা গিয়েছে। আপনি তো মা তাহলে মেয়ের রোগটাকে এতো হালকা ভাবে নিয়ে নিলেন যে মেয়ের চিকিৎসাই করালেন না। (রায়হান)
আমার মেয়ে আমি যা ভালো মনে করেছি তাই করেছি তুমি নাক গলানোর কে।(ফুপ্পি)
সেটাই তো। আপনার সেই ছোট মেয়েটা এপেন্ডিসাইটিস রোগে মারা গেছে আর আপনারা কিনা হিয়াকে উপাধি দিলেন হিয়া অপয়া অলক্ষি। আজ আপনি এই বাড়িতে শান্তিতে আছেন কার জন্য জানেন ঐ অপয়া অলক্ষি মেয়েটার জন্যই। ঐ মেয়েটাই ফুপ্পিমনি আর ফুপ্পিজান কে দিব্যি দিয়ে রেখেছে আপনারা জেনো কোনো কষ্ট কোনোদিন কোনো কষ্ট না পান। আর সেই আপনারা ছোট থেকে এই মেয়েটাকে অবহেলা করে এসেছেন। এমনকি কালকে সালাম টা পর্যন্ত নেন নি। হাশরের মাঠে পারবেন তো নিজেকে ক্ষমা করতে। (রায়হান)
সবাই চুপ করে আছে কারো মুখে কোনো কথা নেই। আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে কেনো করলো ভাইয়ু এমনটা। দাদু দাদি যে খুব কষ্ট পেয়েছে আজ। আমি নিজেকে ক্ষমা করবো কিভাবে আমার জন্য আজ সবাই কষ্ট পাচ্ছে। এসব ভাবছিলাম আর তখনি ভাইয়ু আমার হাত ধরে ব্যাগ নিয়ে আম্মুর সামনে গেলো।
ফুপ্পিমনি আজকে থেকে হিয়া আর কখনো এই বাড়িতে পা রাখবেনা। মেয়েকে দেখতে ইচ্ছে হলে মেয়ের বাসায় চলে যেও দেখতে পাবে। আমরা এখন আসি। নিজের খেয়াল রেখো। (পিছনে ঘুরে) আপনাদের কষ্ট দিয়ে থাকলে আমাকে মাফ করবেন। হিয়াকে নিয়ে গেলাম আর কখনো হিয়ার ছায়া এ বাড়িতে পরতে দিবোনা আমি। (রায়হান)
চলে আসলাম আমরা ও বাড়ি থেকে।
____________________________________________________

গাড়িতে আমি একটা কথাও বলিনি আর না ভাইয়ু কথা বলেছে জয় কল করেছিল বলেছি মামার বাসায় যাচ্ছি। বাসায় চলে আসলাম মামনি আমাদের দেখার পর বললেন…
কিরে রাত ১১ টা বাজে এখন হিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে এলি যে আর হিয়া তো ওবাড়িতে থাকার কথা ছিল আজ। আর তুই বা গেলি কখন আমাকে জানালি না কেনো। (মামনি)
মামনি আমি উপরে গেলাম কেউ আমাকে বিরক্ত করবেনা প্লিজ। আমি একা থাকতে চাই কিছুক্ষণ। (আমি)
আমি উপরে চলে আসলাম।
রায়হান কি কান্ড বাধিয়ে এসেছিস আবার।(মামনি)
শুনবে তাহলে শুনো (শুরু থেকে সব বললাম আম্মু কে) এবার বলো আমি কি কোনো ভুল করেছি আম্মু।(রায়হান)
নাহ কোনো ভুল করিস নি। হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়। হিয়া আর আজ খাবে না তাই তাকে আর ডাকিস না। (মামনি)
আমিও খাবোনা আম্মু আমি ঘুমাতে গেলাম। (রায়হান)
আচ্ছা যা। (মামনি)
রায়হান নিজের রুমে চলে গেলো আর মিসেস: সেলিনা গেলেন নিজের রুমে।
শুনছ রায়হান আর হিয়ার কথাটা এখন দুজনকে জানিয়ে দেয়া দরকার। (মিসেস: সেলিনা)
এতো জলদি বলার দরকার কি। তাদের পড়াশোনা টা শেষ হতে দাও। (মি. শরিফ)
ওরা দুজন বড় হয়েছে। রায়হান বা হিয়া যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে বসে তখন কি করবে। আমি বলে দিচ্ছি হিয়াকে আমি এবাড়ি থেকে কোথাও যেতে দিবো না। (মিসেস: সেলিনা)
আচ্ছা কাল আমিমি রায়হানের সাথে কথা বলবো। (মি. শরিফ)
সেটাই করো। (মিসেস: সেলিনা)
_____________________________________________________

সকালে………..

হিয়া খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পরেছে আজ। কাল রাতে কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেই বুঝেনি। হিয়া বিছানা থেকে উঠে অজু করে নামায আদায় করে নেয়। তারপর বাড়ির পেছনে ছোট বাগানটায় যায়। বাগানে এসে মন টা আনন্দে ভরে উঠলো। আমার প্রিয় বকুল ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। আমি গাছের নিচে পড়ে থাকা ফুল গুলো কুড়িয়ে নিলাম। বকুল ফুল আমার খুব ভালোলাগে। ফুলের প্রতি এমনিতেও আমার আলাদা একটা টান আছে তবে বকুল ফুলের প্রতি দুর্বলতা আমার। তাই ভাইয়ু আমাকে ৩ টা বকুল ফুলের গাছ এনে দিয়েছিল। অনেক্ষন বাগানে ফুলের সাথে সময় কাটিয়ে আমি আমার রুমে চলে আসলাম রুমে এসে ফুল গুলো দিয়ে সুন্দর করে ৫ টা মালা বানালাম। তারপর লম্বা শাওয়ার নিয়ে কলেজ ইউনিফর্ম পরে ব্যাগ আর মালা গুলো নিয়ে নিচে আসলাম। মামনি ব্রেকফাস্ট টেবিলে সাজাচ্ছে আমাকে দেখে বলল….

হিয়া মন ভালো হয়েছে। (মামনি)
হুম। (মলিন হাসি দিয়ে)
কাল যা হয়েছে ভুলেযা মা। আর কখনো তুরে ঐ বাড়িতে পাঠাবো না আমি। মন খারাপ করেনা তুর আম্মুকে আসতে বলেছি আমি। (মামনি)
বারন করে দাও। আম্মু এ বাড়িতে আসলে আম্মুকে অনেক কথা শুনতে হবে।(আমি)
আচ্ছা। এবার খেতে আয় আজকে আমি তোরে খায়িয়ে দেই। (মামনি)
না খেতে ইচ্ছে করছেনা। মামু আর ভাইয়ু কই কাউকে দেখছি না যে। (আমি)
তুর মামু একটা কাজে বেড়িয়ে গেছে আর রায়হান রুমেই আছে চলে আসবে। এখন কথা না বলে খেতে বস। (মামনি)

আমি আর কথা বাড়ালাম না আমার খিদে লেগেছে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছিলো না। মামনির হাতে খাবারটাও মিস করা যায় না তাই চুপ চাপ খেয়ে নিলাম। ভাইয়ু এসে টেবিলে বসে আমার খাওয়া দেখছে আর হাসছে। আমি কিছু বললাম না খাবার শেষ করে কলেজে চলে আসলাম। ক্লাসে গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে। তাই আমিও গিয়ে টেবিলে বসে পড়লাম।

কখন এলি বিয়ে বাড়ি থেকে। (শান্তা)
কাল রাতে। (আমি)
তোর কি কোনো কারনে মন খারাপ বাবুই। (নিলা)
উহু আমি ঠিক আছি। তোরা কেমন আছিস সেটা বল। (আমি)
ভালো আছি। (ইরা)
শরিফা আর ঊর্মী কই। (আমি)
লাইব্রেরি তে। বিয়ে কেমন কাটালি বল আর তুর বন্ধু জয়কে জব্দ করেছিস তো। (নিলা)
হুম। আচ্ছা এই নে আমার গাছের ফুলের প্রথম মালা তোদের জন্য নিয়ে এলাম। (মালা গুলো সবাইকে দিয়ে)
সত্যি অনেক সুন্দর হয়েছে মালাটা। (ইরা)

শরিফা আর ঊর্মী আসার পর সবাই মিলে আড্ডা দিলাম। কলেজ ছুটির পর আর আড্ডা দিলাম না। নদীর পারে যেতে ইচ্ছে হলো তাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে নদীর পারে চলে আসলাম।এই একটা যায়গায় আমি আমার সব কষ্ট মুছে ফেলতে পারি। নদীর পারে বসে অনেক্ষন কান্না করলাম। আমি চাই না আমার কান্না কেউ দেখুক। আমি চাই না কেউ আমার জন্য কষ্ট পাক। তাহলে কেনো আমার জন্য কেউ কষ্ট পাবে। নিজের কষ্টকে একটু হালকা করে বাসায় চলে আসলাম।

মামনি ও মামনি কোথায় তুমি। (আমি)
রান্নাঘরে আছি কিছু লাগবে নাকি তুর। (মামনি)
তোমাকে মিস করছিলাম খুব। (জরিয়ে ধরে)
পাগলি মেয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ যা আমি তুর জন্য কফি নিয়ে আসছি। (মামনি)
তোমার গুনধর ছেলে কি বাসায় আছে।
হ্যা রুমেই আছে। (মামনি)
একটু জালিয়ে আসি তাহলে। (আমি)
শুরু হয়ে গেলো আবার। (মামনি)
টা টা। এই বলে আমি রুমে এসে ইউনিফর্ম পালটে নরমাল একটা টপ্স পরে ভাইয়ুর রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি সাহেব চোখ বন্ধ করে মনের সুখে সিগারেট টানতেছে। আমি চুপিচুপি ভাইয়ুর সামনে গিয়ে সিগারেট টা নিয়ে নিলাম। ভাইয়ু চমকে উঠলো। আমি সিগারেটে ফু দিতে যাবো তখন ভাইয়ু বলল…
এটা কি করছিস তুই। (রায়হান)
কেনো সিগারেট খাচ্ছি তোমার মতো। আচ্ছা দেখো তো তোমার মতো খেতে পারি কিনা। (সিগারেটের ফিল্টার টা মুখে নিবো তখনি ভাইয়ু সিগারেট টা আমার হাত থেকে ফেলে হাত পিছনে মুচরে ধরে)
সিগারেট খাবি কেনো হ্যা। সিগারেট খেলে শরিরের ক্ষতি হয় জানিস না। (রায়হান)
উফ লাগছে হাতে লাগছে ছাড়ো আমার হাত। তুমি খাও কেনো তাহলে। (আমি)
এতো কথা জানিনা। এসব কথা যেনো আর না শুনি তুর মুখে। (রায়হান)
তাহলে তোমাকেও ছাড়তে হবে। (ভাইয়ুর চোখের দিকে তাকিয়ে)
আচ্ছা কমিয়ে দিবো খাওয়া। একেবারে ছেড়ে দিলে অসুস্থ হয়ে যাবো। (রায়হান)
ঠিক আছে। এবার তো ছাড়ো। (আমি)
হুম।
আমরা অনেক্ষন আড্ডা দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ঘুমিয়ে নিলাম।

রাতে…………….

রায়হান তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমার রুমে এসো তো। (মি. শরিফ)
আচ্ছা আসছি।
মি. শরিফের রুমে….
আমি তোমাকে আমার একটা সিধান্ত জানাতে চাই। (মিঃ শরিফ)
হুম কি সিধান্ত বলো। (রায়হান)
সেটা হলো…………..।
কি কথা বলবে সেটা আগামী পর্বে জানবেন।

To be continue………………

অপ্রকাশিত ভালোবাসা
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ১৬

মিঃ শরিফের রুমে রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। মিঃ শরিফ খাটে বসে কিছু একটা ভাবছে সেটা তার চেহারা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যা রায়হানকে ভাবাচ্ছে। রায়হান চুপ করে এক কোনায় দারিয়ে ভাবছে তার বাবা হঠাৎ তাকে এভাবে জরুরি কি কথা বলার জন্য রুমে ডাকলো। নিরবতা ভেঙ্গে রায়হান বলল..
আব্বু সেই তখন থেকে চুপ করে আছো সিরিয়াস কিছু হয়েছে কি। তোমার শরির ঠিক আছে তো। (অস্থীর হয়ে)
না আমার কিছু হয় নি আসলে আমি আর তোমার মা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটা তোমার কেমন লাগবে তাই ভাবছি। তোমাকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। (মিঃ শরিফ)
কি সিদ্ধান্ত আব্বু। আর তোমরা আমার ব্যাপারে যা ভাববে ভালোর জন্যই তো ভাববে তাহলে আমি মানবো না কেনো। (রায়হান)
আচ্ছা বাবা তোমার কোনো পছন্দ আছে কি – মিঃ শরিফ।
না আব্বু আমার কোনো পছন্দ নেই। তুমি এসব জিজ্ঞাসা করছো কেনো – রায়হান।
(একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলেন) আসলে আমি আর তোমার মা চাইছি হিয়া সারাজীবনের জন্য এ বাড়িতে থেকে যাক তোমার বউ হয়ে। এতে তোমার মতামত কি এখন। – মিঃ শরিফ।
তোমরা আমার গুরুজন তোমরা যা বলবে তাই হবে আব্বু ( কি কথা শুনাইলা আব্বু মন চাইতাসে এখানেই নাগিন ডান্স দেই – মনে মনে) – রায়হান।
আচ্ছা ঠিক আছে। মন দিয়ে পড়াশোনা করো তাহলেই হিয়াকে এ বাড়ির বউ করে নিয়ে আসতে পারবো – মিঃ শরিফ।
ওকে আব্বু। আমি এখন আমার রুমে যেতে পারি – রায়হান।
ওকে। – মিঃ শরিফ।

রায়হান আব্বুর রুম থেকে নিজের রুমে চলে আসে। আর উরাধুরা ডান্স দিতে থাকে।
উফ এতো দিনে আমার মনটা শান্তি লাগছে আমার হিয়া আমারি থাকবে। ইয়াহু হিয়া ইজ অনলি মাইন। হিয়া আমার বউ। উফ কি অদ্ভুত অনুভূতি মনে আসছে। ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে বুকে জরিয়ে নেই আর বলি তুই শুধু আমার হিয়া। কিন্তু সেটা করতে পারবো না। হিয়ার জন্য নাহয় এটা সারপ্রাইজ থাকবে। -রায়হান।

রায়হান যাওয়ার পড় মিসেস: সেলিনা রুমে গেলো..
কি গো তোমার ছেলে কি বলল। দেখলাম লাফাতে লাফাতে নিজের রুমে গিয়ে উলটা পালটা নাচতেছে – মিসেস: সেলিনা।
আমার সন্দেহ টাই ঠিক বুঝলে তোমার ছেলে হিয়ামনি কে ভালোবাসে অনেক ভালোবাসে। শুনো তোমার ছেলের কাহিনী ( সব কিছু বলেন) রায়হানের মুখের ভাব ভঙ্গিমা দেখেই বুঝলাম সে কথাটা শুনে খুব খুশি হয়েছে – মিঃ শরিফ।
তাহলে তো ভালোই আমাকে আর হিয়া ছাড়া থাকতে হবে না। এবার হিয়ার আব্বু কে কথাটা বলো তিনি কি বলে জানিও। – মিসেস: সেলিনা।
আচ্ছা।

সকালবেলা………

আমার আজকে ঘুম থেকে উঠতে খুব দেড়ি হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ইউনিফর্ম পড়ে ব্যাগ নিয়ে ছুটলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তা আরর হলোনা নিচে নামিতেই মামনি আর যেতে দিচ্ছেনা না খেলে কলেজে যাওয়া হবেনা আর। তাই একটা আপেল হাতে নিয়ে কলেজের জন্য দৌড় লাগাই। ক্লাসে গিয়ে দেখি সবগুলা আমাকে রেখেই আড্ডা দিচ্ছে। আমি পেছনের টেবিলে গিয়ে বসে পড়লাম। তখন আমার ক্লাসের সিয়াম বলল…
আরে হিয়া তুই আজকে তুর গ্রুপের সাথে না বসে পেছনে বসেছিস কেনো। ওদের (আমার বিন্ধুদের) সাথে ঝগড়া হয়েছে – সিয়াম।
না এমনিতেই। তুই চাইলে আমার সাথে বসতে পারিস – আমি।
আচ্ছা বাবা বসলাম এবার বল তো কি হয়েছে – সিয়াম।
কিছুই না আজকে নিলার জন্মদিন তাই এভয়েড করে চলতেছি। সারপ্রাইজ প্ল্যান আছে আর কি আর তুই তো জানিস নিলা আমার মনের কথা বুঝে যায় তাই আর কি – আমি।
বাব্বাহ। ভালো তো কখন শুভেচ্ছা জানাবি নিলা কে – সিয়াম।
ছুটির পর। এই নিলা আসতেছে তুই আমার সাথে গল্প কর। আর হ্যা নিলা যেনো কিছু বুঝতে না পারে – আমি।
হিয়া তুই পেছনে বসেছিস কেনো – নিলা।
এমনিতেই সিয়াম বলল আমার থেকে কি পড়া নাকি বুঝে নিবে তাই একসাথে বসলাম যাতে অসুবিধে না হয় তাই না সিয়াম – আমি।
হ্যা হ্যা একদম তাই। নিলা আজ তুই অন্য টেবিলে বস গিয়ে প্লিজ – সিয়াম।

নিলা সবাইকে বকা দিতে দিতে অন্য টেবিলে গিয়ে বসে…
শালা নাইজেরিয়ার বটগাছ, উগান্ডার সবজি, সব গুলা আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে আজ। ইচ্ছে করছে ইতালিয়ান চাকু দিয়া সব কয়টারে কুচি কুচি কইরা আমার বিড়ালকে খেতে দেই। কেউ আমাকে ভালোবাসে না। আম্মুউউউ তোমার মেয়েরে কেউ ভালোবাসে না সবগুলা পচা, খবিস, টাকলা কুমড়া, কুত্তিগুলারে ইচ্ছে করতাসে তেলাপোকার চাইনিজ সুপ খাওয়াই।

কলেজ ছুটির পর হিয়া সহ বাকি সবাই ক্লাস থেকে চলে গেলো কিন্তু কেউ নিলাকে একবার ডেকেও যায় নি। নিলা সবাইকে বকা দিতে দিতে ক্লাস থেকে বের হয়। তখনি শান্তা নিলার সামনে দৌড়ে এসে বলতে থাকে….
নিলা হিয়ার এক্সিডেন্ট হিয়ে গেছে জলদি চল – শান্তা।
কি করছিলি তোরা যে হিয়ার খেয়াল রাখতে পারিস নি। বেখেয়ালি ভাবে হাটতে নিয়েই এক্সিডেন্ট করেছে তাই না হিয়ার কাছে নিয়ে চল আমাকে (ভেজা গলায়) -নিলা।
শান্তা নিলাকে নিয়ে নদীর পার চলে আসে নিলা খেয়াল করে দেখে এখানে কেউ নেই।
হিয়া কই শান্তা বল হিয়া কই -নিলা।
আমি গিয়ে নিলার চোখ বেধে দিলাম। নিলা আমি ঠিক আছি তুই সাথে আয় একটা জিনিস দেখাই তোরে। – আমি।
নিলা এতোক্ষনে শান্ত হয় আর অপেক্ষা করতে থাকে কখন চোখের বাধন খুলা হবে। ৫ মিনিট পর হিয়া চিল্লিয়ে বলে…
নিলা চোখের বাধন টা খুলে দে -আমি।
নিলা হিয়ার কথা মতো চোখের বাধন খুলে র সবাই একসাথে বলে উঠে…
Happy Birthday To You…. Happy Birthday Dear Neela… Happy Birthday To You……..
সারপ্রাইজ কেমন দিলাম বল – আমি।
তোদের মনে ছিল আর আমি ভেবেছিলাম সবাই ভুলে গেছিস (জরিয়ে ধরে) । আজকে সারাদিন কেউ আমার সাথে কথা বলিস নি। তোদের সাথে কাট্টি কাট্টি কাট্টি হুহ (মুখ ফুলিয়ে পেছনে ঘুরে) – নিলা।
আমি, শান্তা,শরিফা, ঊর্মী, তিথি একসাথে কান ধরে বালিতে বসে বললাম….
Sorry…………… তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলে তুর সাথে কথা বলিনি এতে কি আমাদের কষ্ট হয়নি বল – সবাই।
তোদের সাথে আমার কোনো কথা নেই আমার – নিলা।
ওকে গাইজ সবাই সবার কান টেনে লাল বানিয়ে ফেলি চল। তাহলে আমরা আমাদের শাস্তি পেয়ে যাবো -আমি।
যেই কান টান তে যাবো তখনি নিলা পেছনে ঘুরে আমাদের সবার কান থেকে হাত ছাড়িয়ে দেয়। আর সবাই একটা গ্রুপ হাগ করি।
এই নিলা তুর জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ আছে-আমি।
কি সারপ্রাইজ। কই সারপ্রাইজ। – নিলা।
নিলার চোখে হাত দিয়ে… ১.. ২…৩… চলে এসেছে তুর সারপ্রাইজ – আমি। (নিলার চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিলাম)
নিলার চোখ থেকে হাত সরানোর পর সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে হাটু গেরে বসে আছে তার সামনে ছেলেটাকে দেখে এতো অবাক হয়েছে নিলা যে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেছেলে। এই তো সেই মানুষ টা যাকে সে গতো ৩ বছর ধরে ভালোবেসে এসেছে।

( কে সেই ছেলেটা আপনাদের কি মনে হয় কে হতে পারে সেই ছেলেটা)

To be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here