#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_৪০ (অন্তিম_পর্ব)
#Esrat_Ety
[২য় অংশ]
রাওনাফ চলে যাওয়ার পরে উর্বীর মনটা আবারো খারাপ হয়ে যায়। কোনো এক অজানা কারনে সে ছটফট করছে। এই বৃষ্টি তার ভালো লাগছে না। বৃষ্টি কেনো থামছে না!
আমীরুন উর্বীর ঘরে আসে, বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”ভাবি কোনো অসুবিধা?”
“না আপা। তুমি বসো। দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
আমীরুন বসে। উর্বীকে দেখতে থাকে। হঠাৎ বলে ওঠে,”একদিন আমি বলছিলাম আপনি একদিন না একদিন ভাইজানের মায়ায় পইরা যাইবেন। কথাটা মিলছে নাকি বলেন। আইজ হের সন্তানের জন্য অপেক্ষা করতাছেন কত আনন্দ নিয়া।”
উর্বী চুপ করে থাকে। আমীরুন হাসতে হাসতে বলতে থাকে,”আমীরুনের কথা বাসি হইলে সত্য হয়।”
হঠাৎ লোডশেডিং হয়। উর্বী চ’ম’কে ওঠে। আজও বিদ্যুৎ এভাবে চলে গেলো। এটা কি কাকতালীয়?
অন্ধকারে উর্বীর ভীষণ ভয় লাগছে।
সে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”কি হলো আমীরুন আপা। কি হলো?”
_জানি না ভাবি। দাড়ান আমি দেখতাছি।
_না তুমি যেও না। আমার ভ’য় করছে হঠাৎ। অস্থির লাগছে। যেওনা তুমি।
আমীরুন বসে থাকে।
বাইরে নাবিলের গলার আওয়াজ পাওয়া যায়। সে নিচের বারান্দায় দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে দা’ড়োয়ানকে ডেকে বলছে,”কি হলো দাদু? কোনো সমস্যা?”
_দেখতেছি আমি দাদুভাই।
দারোয়ান জবাব দিয়ে টর্চ জ্বেলে জেনারেটর রুমে চলে যায়।
অন্ধকারে উর্বীর ওয়াশ রুমে যেতে হবে। এতো ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পায়। বড্ড হয়রান হয়ে গিয়েছে উর্বী। আমীরুনকে বলে,”একটু ওয়াশ রুমে দিয়ে এসো আমায়।”
আমীরুন তাই করে।
দশ মিনিট পরে বিদ্যুৎ চলে আসে। উর্বী স্বস্তি ফিরে পায়।
ও ঘর থেকে নাবিল আমীরুনকে ডাকে,”খালামনি ভাত খাবো। ভাত বেরে দাও তো।”
আমীরুন উর্বীর দিকে তাকায়। উর্বী বলে,”যাও তুমি। আমি ঠিক আছি।”
আমীরুন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়।
কিন্তু হঠাৎ করে উর্বীর শরীরটা খারাপ লাগতে শুরু করে। আমীরুন নাবিলের কাছে যাওয়ার পরে আরো দুইবার সে ওয়াশরুমে গিয়েছে,একা একা। এমনও হয়েছে ওয়াশরুম থেকে বেরোনোর এক মিনিটের মাথায় পুনরায় বেগ এসেছে।
পেটে হাত দিয়ে বিছানায় পাচ মিনিট হলো বসেছে, হঠাৎ উর্বী খেয়াল করে তার উরুর নিচ টা ভেজা। পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পেরে উর্বী হতভম্ব হয়ে যায় পুরো।
আমীরুন নাবিলকে খাইয়ে উর্বীর কাছে আসে। উর্বী ভীত চোখে আমীরুনের দিকে চায়!
“কি হইছে ভাবি? কোনো সমস্যা?”
আমীরুন ছুটে এসে উর্বীকে ধরে।
“এদিকে একটু দেখো আপা।”
ককিয়ে উঠে উর্বী বলে।
আমীরুন উর্বীর উরুর দিকে দৃষ্টি দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে,”হায় হায়। আপনার তো পানি ভাঙছে ভাবি। হায় হায়,ওখন আমি কি করুম।”
উর্বী ছ’ট’ফ’ট করতে শুরু করেছে । সে এখন কি করবে।
তলপেটে প্রচুর ব্যাথা করছে। উর্বী স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছে না।
আমীরুন ভীত কন্ঠে বলে,”ভাইজানরে ফোন দেন ভাবি। ফোন কই, আমিই দিতাছি।”
আমিরুন ফোন খুঁজতে থাকে। উর্বী পেটে হাত চে’পে ধরে কোনোমতে বলে,”লাভ নেই আপা। উনি ওটিতে। ফোন বন্ধ ওনার।
আমীরুন এখন কি করবে! সে তবুও রাওনাফকে ফোন লাগায়। রাওনাফের ফোন বন্ধ,যেমনটা উর্বী বলেছে।
উর্বীর ব্যাথা বাড়তে থাকে। সে সহ্য করতে পারছে না।
এখন এই মুহূর্তে আমীরুন কি করবে? সে দৌড়ে নাবিলের ঘরে যায়।
নাবিল ডিনার সেরে বই নিয়ে বসেছিলো একটা। আমীরুন হাপাতে হাপাতে বলে,”নাবিল বাবা। বড় ভাবীর শরীরটা ভালো না। খুব অসুস্থ। ভাইজানের ফোন তো বন্ধ। কি করুম এখন? মাইয়াডা বেজায় কষ্ট পাইতেছে।”
নাবিল খুবই মনযোগ দিয়ে বই পড়ছিলো। অবাক হয়ে সে আমীরুনের দিকে তাকায়। সে কি করবে এখন? আশ্চর্য!
****
উর্বী যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে “মাগো !” বলে মৃদু চিৎকার দিয়ে ওঠে।
তারপর সে নিজের মুখ চেপে ধরে। পাশের ঘরে নাবিল আছে। সে এভাবে চেঁচাতে সংকোচ বোধ করছে। কিন্তু তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করার মতো ক্ষমতা তার নেই।
নাবিল উর্বীর চিৎকার শুনে বিব্রত হয়। এতো মহা মুশকিল! এখন সে কি করবে !
উর্বী হঠাৎ একটা বিকট চিৎকার দিয়ে ওঠে।
আমীরুন উর্বীর চিৎকার শুনে দৌড়ে উর্বীর কাছে আসে।
নাবিল ফোন বের করে একবার রাওনাফকে ফোন দেয়। রাওনাফের ফোন একই ভাবে বন্ধ। এখন তবে উপায়!
এই বৃষ্টির রাতে এভাবে একটা প্রেগন্যান্ট মহিলা পরে পরে কষ্ট পাবে? নাবিল তো এতোটাও বিবেকহীন নয়। কিন্তু সে কি করবে? কাকে ফোন করবে? বাড়ির লোক গুলোর বিবেক দেখে নাবিল বিরক্ত হয়। নাবিল ছোটো হয়েও বোঝে এই সময়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে বাড়িতে রেখে যাওয়া উচিত না, তবুও নাচতে নাচতে চলে গেলো! বিয়ে খেতে! যত্তসব!
নাবিল কিছু একটা চিন্তা করে সিটি মেডিকেয়ারের রিসিপশনে ফোন লাগায়।
রিসিপশনের মেয়েটা ফোন তুলতেই নাবিল দ্রুত বলে,”হ্যালো। সিটি মেডিকেয়ার? আমি ডক্টর রাওনাফ করীম খানের ছেলে বলছি। কাইন্ডলি আমার পাপাকে ডেকে দিন।”
রিসিপশনের মেয়েটি অবাক হয়ে বলে,”ও আচ্ছা আচ্ছা। ”
তারপর দুমিনিট এদিক সেদিক কথা বলে নাবিলকে বলে,”সরি। বড় স্যার তো ওটিতে। স্যার ব্যস্ত। এই মুহূর্তে দেয়া পসিবল না।”
নাবিল বলে,”দেখুন। ইটস আর্জেন্ট। ওনার স্ত্রী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরেছে।”
নাবিলের মুখে “ওনার স্ত্রী” কথাটি শুনে রিসিপশনের মেয়েটি আরো অবাক হয়। তারপর বলে,”আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। তবে স্যারকে দিতে পারছি না। আপনি চাইলে লামিয়া ম্যামের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন। সে আপাতত ডিউটি ফ্রি।”
_আচ্ছা তাই করুন। দিন আন্টিকে ডেকে।
দ্রুত জবাব দেয় নাবিল।
লামিয়া সব শুনে ফোনের ওপাশ থেকে বলে,”ও মাই গড। নাবিল আমি এখুনি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিচ্ছি। সাথে দুজন নার্স। ডোন্ট ওরি। রাওনাফ দু ঘন্টায়ও বের হতে পারবে না ওটি থেকে। সিরিয়াস কেস। আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি অ্যাম্বুলেন্স!”
নাবিল “আচ্ছা আন্টি” বলে রেখে দেয়। পাশের রুমে উর্বীর গোঙানির আওয়াজ নাবিল শুনতে পায়। সে বিছানার উপর বসে থাকে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, এ কোন ঝামেলায় পরলো সে!
উর্বী ছটফট করছে। আমীরুন উর্বীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,”ও ভাবী একটু ধৈর্য্য ধরেন। নাবিল বাবা বলছে অ্যাম্বুলেন্স আসতেছে। আরেকটু কষ্ট সহ্য করেন।
উর্বী হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”ওনাকে ফোনে পাওয়া যায়নি তাই না আপা?”
আমীরুন বিষন্ন ভঙ্গিতে উর্বীকে দেখে। মেয়ে মানুষ তো এমনই। কঠিন সময়ে প্রিয় মানুষকে দেখার জন্য মন ছটফট করে।
****
অ্যাম্বুলেন্স এসে গিয়েছে। দুজন নার্স উর্বীকে ধরে ধরে অ্যাম্বুলেন্সে তোলে। আমীরুন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠে। নাবিল দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ,এক হাত ট্রাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে।
আমীরুন নাবিলকে বলে,”নাবিল বাবা,যাইবা না?”
নাবিল অবাক হয়ে বলে,”আমি?”
_হ তুমি। যাইবা না?
নাবিল একবার বাড়ির অন্দরমহলের দিকে চায় একবার অ্যাম্বুলেন্সের দিকে চায়। সে দ্বিধায় পরে গিয়েছে। হঠাৎ-ই সে বাড়ির মধ্যে ঢুকে বাড়ির চাবি নিয়ে আসে,দরজায় তালা লাগিয়ে নিজেও অ্যাম্বুলেন্সে উঠে পরে।
****
ও.টির মধ্যে রাওনাফের ভয়ে ইন্টার্ন ডক্টর এবং নার্স তটস্থ হয়ে আছে। আজ বড় স্যার একটু বেশিই রাগারাগী করছেন সবার সাথে। সাথে “গাধা,হাদারাম” বলে গালাগাল তো আছেই।
রাওনাফের প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে। বারবার উর্বীর মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে শুধু। এর মাঝে একবার সার্জিক্যাল নাইফ দিয়ে নিজের আঙ্গুল কেটে ফেলেছে সামান্য। এতো অস্থিরতার কারণ সে বুঝতে পারছে না।
উর্বীর যন্ত্রনা বেড়েই যাচ্ছে। লামিয়া উর্বীকে চেক করে। বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে। সব স্বাভাবিক একেবারেই। তবে হাতে সময় নেই। তাকে যা করার এখনি করতে হবে।
একজন সিনিয়র নার্স এসে বলে,”ম্যাম।”
_হু। সব রেডি করো।
তাড়াহুড়ো করে জবাব দেয় লামিয়া।
নার্স অবাক হয়ে বলে,”ম্যাম স্যার তো ও.টি. তে!”
_তোমাদের স্যার ও.টি.তে তো আমি কি করবো ফারিন? বাচ্চা প্রসব কি তোমাদের স্যার করবেন? কিচ্ছু করার নেই । আমাদের হাতে সময় নেই।
লামিয়া উঠে উর্বীর মাথার কাছে বসে। উর্বী কাতরাচ্ছে।
দাঁতে দাঁত চেপে সে বলে,”আপা। উনি কি আসবেন না? ওনাকে খবর দেননি? উনি কখন আসবেন?”
লামিয়া বলে,”আসবে উর্বী। অবশ্যই আসবে। একটু ধৈর্য ধরো। ”
বলে সে উর্বীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
উর্বী কাঁদছে। তার শরীরের যন্ত্রনার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে রাওনাফকে না দেখতে পেয়ে। শুধু মনে হচ্ছে উর্বী আর রাওনাফকে দেখতে পাবে না।
সে ফোপাতে ফোপাতে লামিয়াকে বলে,”আপা সব বুঝি শেষ হয়ে গেলো। আমি ওনাকে একটিবার দেখতে চাই।”
লামিয়া খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে,”এটুকু ধৈর্য্য না ধরতে পারলে মা হওয়া যায়না উর্বী। মনকে শক্ত করো। তোমার কিচ্ছু হবে না। তোমার এই বড়বোনের ওপর ভরসা রাখো।”
উর্বী স্থির হতে পারছে না। কিছু একটা হারিয়ে ফেলার ভয় ক্রমশ তাকে ঘিরে ধরছে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমার মনে হচ্ছে আমি মরে যাবো আপা।”
লামিয়া উর্বীর মুখের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,”হ্যা তো অসুবিধা কি? তখন আমরা রাওনাফকে আবার বিয়ে করাবো।”
উর্বী কান্না থামিয়ে তাকিয়ে আছে লামিয়ার দিকে। লামিয়া হেসে ফেলে। কিছুক্ষণ হেসে বলে,”চুপ করো মেয়ে! আল্লাহকে ডাকো।”
****
নাবিল একটা বেঞ্চিতে চুপচাপ বসে আছে। রাওনাফ এখনো ওটিতে। ওদিকে আমীরুন এক এক করে সবাইকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছে। রওশান আরা কিছুক্ষণ পরপর নাবিলকে ফোন করছে। তারা বিয়ে বাড়ি রেখে রওনা দিয়ে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ হলো সবার ফোনের যন্ত্রণা থেমেছিলো। হঠাৎ শায়মী ফোন দেয়। নাবিল কলটা রিসিভ করে এইবার বিরক্ত হয়ে বলে,”আবার ফোন দিলি কেনো?”
শায়মী বলে ,”কখন পৌঁছাতে পারি জানি না। বাবুর ছবি দিবি আমাকে। দেরি করবি না।”
নাবিল “হু” বলে ফোন রেখে দেয়।
শায়মীর উৎসাহ দেখে সে ভেবে পায়না এতো আনন্দের কি আছে! বেবিই তো আসছে একটা!
****
রাওনাফ পেশেন্টের স্টিচিং করছে। সে চায় খুব সাবধানে কাজটি করতে। কোনো অঘটন ঘটে গেলে সর্বনাশ। কিন্তু তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে। নিজের প্রতিই প্রচন্ড বিরক্ত সে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নার্সকে ধ’ম’কে বলে ওঠে,”ঘাম মোছো স্টুপিড! হা করে দাঁড়িয়ে আছো।”
নার্স কেঁ’পে উঠে টিস্যু পেপার দিয়ে রাওনাফের কপাল থেকে ঘাম মুছিয়ে দিতে থাকে।
রাওনাফ নিজেকে ধাতস্থ করে কাজে মনযোগ দেয়।
অন্যান্য ডাক্তার দুজন একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। দ্যা গ্রেট রাওনাফ করীম খান আজ এতো অঘটন ঘটাচ্ছে! আজ কাজে মন নেই মনে হচ্ছে! এটাও আবার হয় নাকি।
রাওনাফ পেশেন্টকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে হাত থেকে গ্লাভস খুলতে থাকে। কাজটা করছে সে অনেক দ্রুত।
****
উর্বীর আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে। সে গগন কাঁপানো চিৎকার দিতে থাকে।
লামিয়া নার্স দুটোকে বলে,”ওর হাত পা ম্যাসাজ করতে থাকো। ”
নার্স দুটো তাই করে।
লামিয়া চেষ্টা করছে ধীরে সুস্থে কাজটি করতে কিন্তু উর্বীর অধৈর্য্য আর চিৎকারে তারও টেনশন হতে শুরু করে।
বাচ্চা প্রসবের সাথে সাথেই উর্বী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ছোটো পুতুলের মতো মানুষটি ভুমিষ্ট হবার সাথে সাথেই হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।
লামিয়ার কানে সেই কান্না পৌঁছায় না। সে উর্বীর দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। উর্বীর কি হয়েছে সে বুঝতে পারছে না!
লামিয়া নার্স দুটোকে ইশারা দিয়ে বাচ্চাটাকে নিতে বলে। সে এসে উর্বীকে ধরে। উর্বীর পালস রেট চেক করে।
তারপর আরেকজন নার্সকে ইশারা করে জলদি একটি ইনজেকশন দিতে বলে।
অন্য দুজন নার্স হাসিমুখে সেই পুতুলের মতো মানুষটিকে ওয়াশ করাতে থাকে। এ যে সে কেউ না। তাদের বড় স্যারের সন্তান।
****
নাবিল মাথা নিচু করে বসে ছিলো । এতক্ষণ ডেলিভারি রুমের ভেতর থেকে আসা উর্বীর আর্তনাদ শুনে সে বিব্রত। তার কাছে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে,তারও যথেষ্ট টেনশন হচ্ছে। সবার মতো। উর্বীর আর্তনাদের মৃদু আওয়াজে তার হাত পা রীতিমতো কাঁপছে।
হঠাৎ ডেলিভারি রুমের দরজা খুলে কেউ একজন বাইরে বের হয়। নাবিল সেদিকে তাকায়। একজন নার্স নরম কাপড়ে পেঁচিয়ে বাচ্চাটাকে এদিকে নিয়ে আসছে। তার মুখ হাসি হাসি।
নাবিল নিজের অজান্তেই উঠে দাঁড়ায়। একবার নার্সের মুখের দিকে তাকায়,একবার তার হাতের দিকে।
নার্স এসে আনন্দের সাথে নাবিলকে বলে,”বোনকে কোলে নেবে?”
নাবিল কিছু বলতে পারে না। সে বোকার মতো বাচ্চাটির মুখের দিকে তাকায়। কি চমৎকার গোলাপী আভা লেগে আছে ছোট্ট দুই গালে। রক্তিম ঠোঁট দুটো,মনে হচ্ছে এই মাত্র কেউ লাল রং লাগিয়ে দিয়েছে। নাবিল চোখ ফেরাতে পারে না।
নার্স আবারও বলে,”বোনকে কোলে নাও!”
নাবিল নার্সের দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”বোন?”
_হ্যা। তোমার বোন।
নাবিল খানিকটা অবাক হয়,সে শুনেছিলো তার ভাই হবে।
আমীরুন দৌড়ে আসে। বাচ্চার মুখ দেখে চেঁ’চি’য়ে ওঠে,
“ওমাহ। মাশাআল্লাহ নাবিল বাবা। এইডা তো পুতুল।”
নার্স নাবিলকে বলে,”নাও হাত পাতো। বোনকে কোলে নেবে না?
নাবিল রোবটের মতো হাত বাড়িয়ে শিশুটিকে কোলে নেয়। যদিও তার বুক ধুকপুক করছে। আলতো করে কাপড়ের পুটলি টাকে আগলে নিয়ে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।
টুকটুকে পুতুলের মতো একখানা মুখ। ছোট্ট ছোট্ট চোখ দুটি পিটপিট করছে।
নাবিল খেয়াল করে তার বুকে সুক্ষ্ম আনন্দ হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে এই শিশুটি তার অতি আপন। সে একদৃষ্টে শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে মুখে রাজ্যের মুগ্ধতা এসে ভীড় করেছে।
****
রাওনাফ অপারেশন থিয়েটার থেকে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বের হচ্ছে। তার মনটা কেমন জানি করছে। যার কারন সে বুঝতে পারছে না।
রাওনাফকে দেখে দুজন নার্স দৌড়ে আসে। রাওনাফ তাদের দিকে তাকায়।
একজন নার্স বলে ওঠে,”স্যার। আপনি ঠিক আছেন?”
_হ্যা,কেনো? আচ্ছা শোনো,আমি সব বুঝিয়ে দিয়েছি। ঘন্টা খানিক পরে পেশেন্টকে ইনজেকশনটা দিয়ে দিও। আর রুমিন কোথায়? ও.টি. তে ওকে “গাধা” বলেছি, ওকে সরি বলতে হবে। আমি এখন বাড়ি যাবো।
নার্স দুজন একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। তারপর রাওনাফকে বলে,”স্যার। আমরা আপনাকে জানাতে পারিনি। দুঃখিত। ম্যাম অসুস্থ হয়ে পরায় তাকে হসপিটালে নিয়ে আসা হয়। এবং আপনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন স্যার।”
রাওনাফ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এরা কি মজা করছে তার সাথে!
নার্স বলে,”কংগ্রাচুলেশন স্যার। বাচ্চা সুস্থ আছে। নরমাল ডেলিভারি। তবে ম্যাম একটু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। লামিয়া ম্যাম দেখছেন। ডোন্ট ওরি।”
রাওনাফ কিছু বলে না। গায়ের এপ্রোন খুলে মাটিতে ফেলে সে হাঁটতে থাকে। সে নিজেকে নিজে কখনো মাফ করতে পারবে না।
নাবিল বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি ওই চাঁদ মুখ থেকে সরছে না। নাবিলের অদ্ভুত লাগছে। তার এতো আনন্দ হচ্ছে কেন! এমন তো হবার কথা ছিলো না!
আমীরুন খুশিতে একপ্রকার লাফাতে থাকে। সে একের পর এক ফোনকল রিসিভ করে কথা বলছে বাড়ির সবার সাথে।
রাওনাফ এসে গাইনী ওয়ার্ডের নরমাল ডেলিভারী রুমের লবিতে দাড়িয়ে পরেছে। নাবিলের দিকে একবার তাকিয়ে সে সেদিকে এগিয়ে যায়।
লামিয়া ডেলিভারি রুম থেকে বেরিয়ে এসে রাওনাফকে দেখে। তারপর উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে ওঠে,” মেয়ে একেবারে মায়ের মতো হয়েছে তাই না? সৃষ্টিকর্তা মায়ের রুপ ঢেলে দিয়েছে মেয়ের মধ্যে।”
রাওনাফ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছেনা,সে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। লামিয়া বলে,”আমাকে শাড়ি দিতে হবে রাওনাফ।আমি তোমার মেয়ের ধাই মা।”
রাওনাফ ম্লান হেসে অস্ফুট স্বরে বলে,”উর্বী!”
_উর্বী ঠিক আছে। জ্ঞান ফিরেছে। তুমি এভাবে দাড়িয়ে থাকবে? মেয়েকে ধরবে না?
রাওনাফ তার উত্তর দেয়না। সে সোজা উর্বীর কাছে চলে যায়।
লামিয়া নাবিলের দিকে তাকায়,নাবিল বোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। লামিয়া এসে বাচ্চাকে কোলে তুলে নেয়। বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে।
নাবিল লামিয়াকে বলে,”কোথায় নিচ্ছো লামু আন্টি!”
_বোন খাবে তোমার।
****
রাওনাফ উর্বীর পাশে গিয়ে বসে। তার মুখ শুকিয়ে একটুখানি হয়ে আছে। উর্বীর চোখের দিকে সে তাকায় না।
উর্বী রাওনাফের হাত নিজের কাছে টেনে নেয়। নরম গলায় বলে,”মেয়েকে দেখেছেন? ”
রাওনাফ মাথা নাড়ায়,মুখে কোনো জবাব দেয়না। উর্বী বলে,”আমি দেখিনি। ওকে নিয়ে আসুন না।”
রাওনাফ উর্বীর হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে উর্বীর দুহাত আকরে ধরে। ব্যাকুল কন্ঠে বলে ওঠে,
“তুমি আমার উপর রাগ করে আছো তাইনা? বিশ্বাস করো। আমি নিজেই নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না। কোনোদিনও না।”
উর্বী রাওনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর হেসে ফেলে। বলে,
“ধুর। আমি রাগ করবো কেনো? আপনি বুঝি ইচ্ছে করে আমার কাছে আসতে পারেন নি?”
কথাটি বলতে বলতে উর্বীর মুখে বিষন্নতা এসে ভিড় করে । রাওনাফ তা খেয়াল করে।
উর্বী বলে,”তবে কি জানেন শর্মীর পাপা,একটা সময় আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমি আর আপনাকে দেখতে পাবো না।”
রাওনাফ উর্বীর কথায় চ’ম’কে উঠলেও নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,”কেনো! একদিন তো খুব সাহস দেখিয়ে আমাকে দেখবে না বলে চলে যাচ্ছিলে!”
উর্বী রাওনাফের কথায় ম্লান হাসে। দু’চোখের কার্নিশ বেয়ে তরল গড়িয়ে পরে। একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”এখানেও আমার লোভ আর স্বার্থপরতা কাজ করেছে শর্মীর পাপা। লোভ আপনার কোলে আমার মেয়েকে দেখার,আর স্বার্থপরের মতো ভেবেছি আপনাকে আরো ঝামেলা দিতে কিভাবে আপনার জীবনে থেকে যাওয়া যায়। আপনার থেকে শুধু নেওয়া যায়।”
রাওনাফ উর্বীকে জরিয়ে ধরে। উর্বী রাওনাফের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে,শান্তিতে।
লামিয়া বাচ্চাটাকে এনে কেবিনে ঢোকে। তারপর উর্বীর পাশে শুইয়ে দেয়। উর্বী তার জীবনের নতুন ফুলটির দিকে তাকায়। তার গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। অস্ফুট স্বরে রাওনাফকে বলে,”কোলে নিন তো ওকে। একটু দেখবো।”
রাওনাফ হাত বাড়িয়ে উর্বীর চোখের পানি মুছিয়ে দেয়। তারপর মেয়েকে উর্বীর পাশ থেকে উঠিয়ে কোলে নিয়ে কপালে একটা চুমু খায়।
লামিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে স্বামী স্ত্রীর সে অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যটি দেখতে থাকে।
কিছুসময় পরে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে ওঠে,”অভিনন্দন রাওনাফ। আপনাদের বাপ বেটিকে দারুণ লাগছে।
রাওনাফ ম্লান হাসে, মেয়েকে উর্বীর কোলে তুলে দেয়। তারপর বলে,”সবকিছু তো নরমাল ছিলো। এরকমটা হবার তো কথা ছিলো না লামিয়া।”
_উর্বীর এংজাইটি থেকে প্রেশার বেড়ে গিয়েছিলো সম্ভবত রাওনাফ।
রাওনাফ উর্বীর দিকে তাকায়। উর্বী তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসছে। রাওনাফ মা মেয়ের থেকে চোখ সরাতে পারছে না।
****
রওশান আরা হসপিটালে পৌঁছেছেন। সে এসেই পুরো হসপিটাল মাথায় তুলে ফেলেছেন। তার নাতনি কোথায়।
রওশান আরার নাতনি নাবিলের কোলে। সে ভিডিও কলে সব বন্ধুদের দেখাচ্ছে। শর্মী শায়মী অবাক হয়ে বাচ্চাটাকে দেখছে। তাদের হতভম্ব ভাব কাটছে না। তাদের ভাই তাদের বোন হয়ে গেলো কি করে?
রাওনাফ কেবিনের বাইরে যায়না। সবাই বাইরে হৈ হুল্লোড় করছে। সে উর্বীর কাছে বসে আছে। সকাল হয়ে এসেছে প্রায়।
রওশান আরা এসে প্রায় থাবা মে’রে তার নাতনিকে কোলে তুলে নেয়। বাকিরা উঁকি দিচ্ছে। একজন আরেকজনকে সরিয়ে বাবুর মুখটা একটু বেশি দেখতে চাচ্ছে।
উর্বী আর রাওনাফ তাদের হাসাহাসির শব্দ শুনতে পায়। রওশান আরা বলে,সব ঠিক আছে। তবে নাকটা এমন কেনো? আমাদের বাড়ির কারো নাকতো বোচা না। বৌমার নাকও তো ঠিকঠাক!
নাবিল বলে ওঠে,”ও শর্মীর মতো হয়েছে। শর্মীর নাক তো বোচা দাদু,ভুলে গেলে।”
সবাই চুপ হয়ে যায়। রওশান আরা এতক্ষন খেয়াল করেনি বিষয়টি। আসলেই। এই মেয়ে পুরোপুরি শর্মীর ফটোকপি।
রওশান আরা নাতনিকে নিয়ে দুলতে দুলতে উর্বীর কাছে আসে,উর্বী শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি হাসে। রওশান আরা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,
“রাগ করলে? তোমাকে না দেখতে এসে নাতনি নিয়ে পরে আছি তাই?”
উর্বী হেসে মাথা নাড়ায়।
রওশান আরা বলতে থাকে,”কি বলো তো। শাশুড়িরা এমনই।”
উর্বী ফিক করে হেসে দেয়। রওশান আরাও হাসতে থাকে।
শায়মী আর শর্মী কেবিনে ঢোকে। রওশান আরা ওদের দেখে উর্বীকে বলে,”নাও,তুমি তোমার মেয়েদের নিয়ে থাকো। আমি গেলাম।”
বলেই রওশান আরা তার ছোটো নাতনিকে উর্বীর পাশে শুইয়ে দিয়ে চলে যায় কেবিন থেকে। উর্বী শর্মী আর শায়মীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর শর্মীকে বলে,”বোনকে কোলে নেবে না?”
শর্মী মাথা নাড়ায়। এগিয়ে এসে বোনকে কোলে নেয়। শায়মীর হাত নিশপিশ করছে,সে শর্মীকে বলে,”তুই ফেলে দিবি। দে আমার কাছে দে।”
বোনকে জোর করে নিয়ে যায় শর্মীর কোল থেকে। উর্বী শর্মীর দিকে তাকিয়ে বলে,”মন খারাপ হয়েছে ভাই হয়নি বলে?”
শর্মী মাথা নেড়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”না।”
_বোন বাবুকে কম ভালো বাসবে?
শর্মী খিকখিক করে হেঁসে ওঠে, তারপর বলে,”আরো বেশি ভালোবাসবো।”
উর্বী হাসে। শায়মী বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”আমি একটু কম ভালোবাসবো।”
শর্মী শায়মীর দিকে তাকিয়ে বলে,”তাহলে ওকে আমার কাছে দাও।”
শায়মী দেয়না। হাসতে থাকে। শর্মী তার ছোটো বোনকে টানছে শায়মীর কোল থেকে। দুইবোনের মধ্যে যু’দ্ধ লেগে গিয়েছে।
উর্বী মুগ্ধ চোখে সে দৃশ্য দেখতে থাকে।
****
নাবিলকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে লামিয়া এসে নাবিলের পাশে বসে। নাবিলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি ভাবছো নাবিল?”
নাবিল নড়েচড়ে বসে,বলে,”কিছু না আন্টি!”
_খুব ধকল গেছে তাই না নাবিল? আসলে সব দোষ আমার। রাওনাফকে আমিই ফোন করে জোর করেছি আসার জন্য। ও থাকলে ব্যাপারটা অন্যরকম হতে পারতো।
_না আন্টি। ইট ওয়াজ অ্যান এক্সিডেন্ট। এতে তোমার হাত নেই। দূর্ঘটনা ঘটার থাকলে ঘটবেই। আমরা চাইলেও,আগে থেকে জানলেও তা আটকাতে পারবো না।
লামিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে ,”সেটাই। দূর্ঘটনা ঘটার থাকলে ঘটবেই, আমরা চাইলেও আটকাতে পারবো না। শর্মীর সেই এ্যাক্সিডেন্ট টাও এরকম একটা দূর্ঘটনা ছিলো। হওয়ারই ছিলো।ওভাবে না হলে অন্যভাবে হতো। এতে উর্বীর হাত ছিলো না নাবিল। আমি এটাই বিশ্বাস করি।”
নাবিল কোনো জবাব দেয় না। সে চুপ হয়ে বসে থাকে ।
****
উর্বীকে আর তার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। উর্বীর বাপের বাড়ি থেকে সবাই এসেছে।
সে সারাদিন রুমে বসে থাকে। সবাই বাচ্চাটাকে নিয়ে হৈ হৈ করে। উর্বী তাকে খুব একটা কাছে পায়না। শুধু ঘুমানোর সময় আর খাওয়ানোর সময়টাতে সে তার মেয়েকে ধরতে পারে। উর্বী বাধা দেয় না। এর মাধ্যমে যদি সবাই একটু ভালো থাকে খারাপ কি তাতে? সবচেয়ে বড় কথা, নাবিল তার বোনকে চোখে হারায়।
সে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে তার বোনের নাম রেখেছে “রাহা”!
কি সুন্দর নাম! উর্বীর ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
কখনো কখনো সব সম্পর্কের সমীকরণ মেলানো যায়না। সমঝোতাও হয় না। উর্বী আর নাবিলের সম্পর্কটা ঠিক সেরকম। তবে রাহা একটা বিরাট অবদান রাখতে পারে।
আজ দুপুরে যখন সবাই নিচে খাচ্ছিলো। উর্বী তখন ওয়াশ রুমে ছিলো। হঠাৎ রাহা কাঁদতে শুরু করলে উর্বী তড়িঘড়ি করে ওয়াশ রুমের দরজা খুলে দেখে নাবিল তার বোনকে কোলে তুলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। উর্বী আবার ওয়াশ রুমে ঢোকে। সে নাবিলের সামনে পরতে চায়নি । নাবিল লজ্জা পাবে। এমনিতেই নাবিলকে শর্মী আর শায়মী সারাদিন ক্ষেপাতে থাকে কারণ নাবিল একদিন বড় গলা করে বলেছিলো,”ঐ বেবীকে আমি একটুও আদর করবো না।”
এভাবেই উর্বীর দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।
সে চায় তার জীবনটা যেন এভাবেই কেটে যায়। আর বেশি কিছু সে চায়না। আর বেশি কিছু যে চাওয়ারই নেই উর্বীর।
***
উর্বী রাহাকে খাওয়াচ্ছে। সারাদিন পরে এই একটু সে নিরিবিলি হয়েছে তার মেয়ের সাথে। রাহা সারাদিন তার তিন ভাইবোনের হাত বদল হতেই থাকে।
খাওয়ানো হয়ে গেলে উর্বী রাহার সাথে গল্প করতে থাকে। রাওনাফ ঘরে ঢুকে মা মেয়ের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
উর্বী রাওনাফের দিকে তাকিয়ে বলে,”ক্লান্ত খুব?”
“হু, আমার মাকে দাও।”
বলেই রাওনাফ রাহাকে টেনে নিয়ে নিজের বুকের উপর শুইয়ে দেয়। তার দু’চোখ বন্ধ করে থাকে।
উর্বী চেঁচিয়ে ওঠে,”এটা কি হলো? সারাদিন আমি মেয়েকে কাছে পাই? এভাবে নিয়ে নিলেন?”
“তবে কি আমি পাই?
রাওনাফ বিরক্ত হয়ে বলে।
উর্বী রাহাকে নিতে যায়। রাওনাফ দেয়না। দুজনের টানাটানির এক পর্যায়ে দরজায় টোকা পরে।
রাওনাফ বলে,”কে?”
_পাপা আমি নাবিল।
রাওনাফ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। অবাক হয়ে বলে,
_কি হয়েছে বাবা?
নাবিল উর্বীর দিকে না তাকিয়ে রাওনাফকে বলে,
_বোনকে দাও।
উর্বী রাওনাফ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। বাধ্য হয়ে উর্বী রাহাকে দিয়ে দেয়। নাবিল তাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায়। আজ সারাদিন সে বাড়ির বাইরে ছিলো,বোনকে কোলে নিতে পারেনি একটুও।
রাওনাফ দরজা লাগাতে লাগাতে বলে,”এই তিন ভাইবোন বড্ড বিরক্ত করছে।”
উর্বী হাসে।
রাওনাফ বলে,”তুমি জানো না। যখন শর্মী হয়েছিলো। তখন শর্মীকে নিয়ে এদের মধ্যে কি ঝগড়া! সারাদিন শর্মীর কাছে দুজন উবু হয়ে বসে থাকতো।!”
উর্বী কিছু বলে না। রাওনাফ এসে উর্বীর পাশে বসে। উর্বী রাওনাফের কাধে মাথা রাখে।
রাওনাফ উর্বী মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বলে,”অন্তরা ফোন দিয়েছিলো?
_হু। ও প্রেগনেন্ট। আপনাকে জানাতে বললো।
_মোহনা আর ও কি বুদ্ধি করেছে নাকি! দু’জনেই একসাথে প্রেগনেন্ট!
উর্বী হাসে,বলে,”মা খুশিতে লাফাচ্ছে।”
পাশের ঘর থেকে নাবিল আর শর্মীর ঝগড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।রাহাকে নিয়ে টানাটানি লেগে গিয়েছে তিনজনের মধ্যে।
শক্তিতে নাবিলের সাথে কেউ না পেরে হার মেনে নিয়ে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে রাহার দিকে।
শর্মী ঠোঁট উল্টে বলতে থাকে,”কখন দেবে?”
নাবিল বোনকে কোলে নিয়ে দোলাতে দোলাতে বলে,”আমার মন ভরে গেলে।”
শায়মী চেঁ’চি’য়ে বলে,”আর সেটা কখন?”
_কখনও না।
কথাটা বলে নাবিল ফিক করে হেসে দেয়। তারপর শর্মীর দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি খারাপ তাই ভাই চেয়েছিলি, আর দেখ আল্লাহ আমাকে বোন দিয়েছে কারণ তোরা দুইজন শাকচুন্নী।”
দোতলার লিভিং রুমে তিন ভাইবোন চেঁচামেচি করছে। ঘরের ভেতরে বসে রাওনাফ আর উর্বী হাসছে। উর্বী রাওনাফের কাঁধে মাথা রেখেই একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে রাওনাফের একটা হাত ধরে। রাওনাফ নিজের আরেক হাতে উর্বীর অন্য হাতটা আকরে ধরে। পাশাপাশি বসে দু’জনেই চুপচাপ তাকিয়ে আছে নিজেদের হাতের দিকে, একে অপরের হাতের দিকে। যে হাত তারা ধরেছিলো আরেকটি বার মায়ায় জড়াতে। আরেকটি বার লোভী হতে, জীবনের প্রতি। আরেকটি বার ভালোবাসতে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~~~~~~~~~~
[ আমি অনুভূতিশূন্য হয়ে গিয়েছি। আপনারা আপনাদের অনূভুতি জানাতে চাইলে জানিয়ে যাবেন কমেন্ট বক্সে। ধন্যবাদ সবাইকে!]
Fall in love with”Rawnaf” as well as The Writer.Can’t express my feelings.Just wanna request to Mis Writer that am eagerly waiting to read this types of stories again and again and again.Take love from Nidra.Just love you sis.