ইনসাইড_দ্যা_ডোর
#পর্ব_৭_৮_ও_শেষ_পার্ট
লেখিকা_সাইবা_চৌধুরী
———————————-
“জানিনা তুমি কে। তোমার এখানে আসার উদ্দেশ্যটাও আমার জানা নেই।
শুধু বলবো, যদি নিজের প্রাণের প্রতি মায়া থাকে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যাও। এতে তোমারও ভালো হবে সাথে আমারও।
তাবিয়ার কথা শুনে আরিকা কান্না থামিয়ে ভয়ংকর অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে।
আরিকার এমন রাগান্বিত চোখের দিকে তাকিয়ে তাবিয়ার গলা শুকিয়ে যায়।
“আমাকে কি তুমি নিজের মতো ভীতু মনে করো?
কিভাবে পারো তুমি এতো অন্যায় সহ্য করে থাকতে? আমি যদি তোমার জায়গায় থাকতাম সোহান নামক এই পশুটাকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে কবে মুক্ত হয়ে যেতাম।
অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়াও সমান অপরাধ সেটা তো নিশ্চয়ই তুমি জানো। তাহলে সোহানের এসব কাজে প্রতিবাদ না করে তুমিও কি তার পাপের সমান ভাগিদার হচ্ছো না?”
তাবিয়াকে উদ্দেশ্য করে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলো আরিকা। তাবিয়া তার কোনো কথার জবাব দিলো না। শুধু মাথা নিচু করে অনবরত চোখের পানি ফেলতে লাগল।
তাবিয়াকে চুপ থাকতে দেখে আরিকা আবার বলে উঠলো,
-“জানো এ বাড়িতে আসার পেছনে আমার উদ্দেশ্য কি ছিলো?
“তুমি”। তুমিই ছিলে আমার প্রথম লক্ষ্য। সাহেরা আন্টি আমাকে সবার প্রথমে বলেছিলেন, তাবিয়াকে দেখে আমার খুব মায়া হচ্ছে। ও বোধহয় কোনো বিপদে আছে, তুমি যেভাবে পারো সকল রহস্য উদঘাটন করে মেয়েটাকে মুক্ত করো।”
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখো, তোমার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা মানুষটা আজ তোমার স্বামীর হাতেই কতোটা নৃশংসভাবে খুন হয়েছে।
কথাগুলো বলার সময়ে দুচোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকলো আরিকার।
আরিকার কথা শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে তাবিয়াও।
তাবিয়ার কান্না দেখে আরিকা ধীরে ধীরে উঠে তাবিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তার কাঁধে হাত রেখে আরিকা বলে,
“আমি জানি, তুমিও এসব থেকে মুক্তি পেতে চাও।
আমার মতো তুমিও চাও না কোনো নির্দোষ মানুষের এমন ভয়াবহ পরিণতি হোক। তুমি চাইলেই পারবে এ সব কিছু আটকাতে।
আমাকে সবকিছু খুলে বলো তাবিয়া, আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে এমন অভিশপ্ত জীবন থেকে খুব শীঘ্রই বের করে নিয়ে আসবো। ”
আরিকার কথা শুনে তাবিয়া শব্দ করে কেঁদে ওঠে। কান্নার এক পর্যায়ে সে আরিকার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাতজোড় করে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে,
-দয়া করে এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব চলে যাও।
আমি নিরুপায়, আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারবো না। আন্টির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা আমাকেও খুব কষ্ট দিয়েছে কিন্তু শত চেষ্টা করলেও আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না। আমি চাই না আর কোনো নিরপরাধ মানুষের এমন নিষ্ঠুর পরিণতি হোক। আমি আমার অভিশপ্ত জীবনে যেমন আছি বেশ আছি, এতোদিনে মানিয়ে নিতেও শিখে গেছি। তুমি দয়া করে এসব বিষয় নিয়ে কোনো কথা বাড়িও না। এর ফলাফল একদমই ভালো হবে না।”
তাবিয়ার এমন ধরণের কথা শুনে আরিকা বেশ বিরক্ত হলো। তাবিয়ার থেকে একটু সরে গিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
-আমি তোমার থেকে এটা আশা করিনি তাবিয়া। আমার ধারণা ছিলো ডাঃ সোহানের হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করতে ও তাকে তার কর্মের সাজা দিতে তুমি হয়ত আমাকে সাহায্য করবে।
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। এখন তো দেখছি এতোগুলো মানুষের মৃত্যুতে তোমার কিছুই যায় আসে না। তবে ভয় পেয়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো মেয়ে আমি নই।
ডাঃ সোহানের এমন ধ্বংসাত্মক খেলার ধ্বংস আমি করেই ছাড়বো তাতে আমার যা-ই করতে হোক না কেন আমি সবকিছুতেই রাজি। সবচেয়ে বড় কথা কি জানো তাবিয়া!
এবার আর তোমাকে নিয়ে আমি একবিন্দুও ভাববো না।
-তোমার যা খুশি করো কিন্তু আপাতত এখান থেকে চলে যাও দয়া করে।
তাবিয়ার কথায় আরিকা রাগে ফেটে পড়লো। তবুও যতোটা সম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে তাড়াহুড়ো করে পুতুলগুলোর কয়েকটা ছবি তুলে হনহন করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো সে।
আরিকার যাওয়ার পথে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তাবিয়া।
.
.
.
বাসায় ফিরে আরিকা প্রবল কান্নায় ভেঙে পড়ে।
সাহেরা বেগমের এমন পরিণতির কথা কিভাবে বলবে সে আতিক সাহেব কে!
আতিক সাহেব একজন হার্টের রুগী। হুট করে এমন একটা খবর তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবেন না। কিন্তু তার থেকে সবকিছু এড়িয়ে যাওয়াও ঠিক বলে মনে হচ্ছে না আরিকার।
কি করবে না করবে বিশাল এক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে সে। ভাবতে ভাবতে গভীর চিন্তায় হারিয়ে যায়। অবশেষে আরিকা সিদ্ধান্ত নেয়, সর্বপ্রথম সে পুলিশকে জানাবে। তারা এসে তদন্ত করে ডাঃ সোহানকে এরেস্ট করার পরে সবকিছু সে খুলে বলবে আতিক সাহেবকে। আরিকা আর কোনো জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে চায় না।
ভাবামাত্রই আরিকা নিকটস্থ থানায় কল দিলো।
কয়েকবার রিং হতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর একটা কন্ঠ ভেসে এলো,
-হ্যালো, আমি ইন্সপেক্টর মুরাদ বলছি।
ইন্সপেক্টর মুরাদের কন্ঠ শুনে আরিকা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। বিচলিত কন্ঠে আরিকা বলে,
-স্যার আমি আরিকা। এইমুহূর্তে আমাদের জন্য আপনার সাহায্যের খুব প্রয়োজন৷ আশা করি একটু সময় করে আমার সম্পূর্ণ কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।
ইন্সপেক্টর বলার অনুমতি দিতেই আরিকা দেরি না করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে গড়গড়িয়ে সব বলতে শুরু করলো।
আরিকার মুখে সব কথা শুনে ইন্সপেক্টর মুরাদ অনেক অবাক হয়। বিস্ময়কর স্বরে বলে ওঠেন ” এটা কি করে সম্ভব! ”
ইন্সপেক্টর মুরাদের প্রতিউত্তরে আরিকা বলে,
“অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব আপনারা ডাঃ সোহানের বিরুদ্ধে স্টেপ নিন। নাহলে বড় কোনো বিপদ হতে পারে শীঘ্রই। ”
ইন্সপেক্টর আরিকাকে জানান, হাতের কাজ শেষ করে খুব দ্রুত তিনি আরিকার সাথে যোগাযোগ করবেন।
.
.
.
রুম জুড়ে পায়চারি করতে করতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে আরিকা। সবার সামনে ডাঃ সোহানের মুখোশ উন্মোচন না করা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না সে। ইন্সপেক্টরের ফোনের আশায় আরিকা মরিয়া হয়ে ওঠে।
প্রায় ঘন্টাখানেক পরে আরিকার ফোন বেজে ওঠে।
ফোনের স্ক্রিনে ইন্সপেক্টরের নাম্বার দেখে আরিকা দ্রুত রিসিভ করে ফোনটা কানে ধরে,
-মিস আরিকা! আমি ইন্সপেক্টর মুরাদ বলছি।
ডাঃ সোহানের বিষয় নিয়ে আমি অনেক ভেবে দেখেছি। আপনার কথা যদি সত্যি হয় আমরা বাসা সার্চ করলে হয়ত সব প্রমাণ পাবো কিন্তু সার্চ ওয়ারেন্টের জন্য আমাদের কিছু কাগজপত্রের দরকার হয়। শুধুমাত্র একটা ফোন কলের উপর ভিত্তি করে আমরা কারও উপর দোষারোপ করতে পারি না। আপনার কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে?
ইন্সপেক্টরের প্রশ্নের উত্তরে আরিকা তার ফোনে তোলা ছবিগুলোর কথা জানায়।
ইন্সপেক্টর আরিকাকে বলেন,
-আপনি যতো দ্রুত পারেন প্রমানগুলো নিয়ে আমার সাথে দেখা করুন। আমি চাচ্ছি আপনার এ সমস্যার দ্রুত কোনো সমাধান দিতে।
ইন্সপেক্টরের কথায় সম্মতি জানিয়ে আরিকা ফোন কেটে দেয়। দেরি না করে সে দ্রুত তৈরি হয়ে ইন্সপেক্টরের দেওয়া ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় ডাঃ সোহানের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে আরিকা মনে মনে বলে,
“খুব শীঘ্রই তোমার সব খেলার সমাপ্ত হতে চলেছে। নিজের চোখে নিজের শেষ দেখার প্রস্তুতি নাও ডাঃ সোহান ”
দোতলায় দাঁড়িয়ে বেশি সময় নষ্ট না করে দ্রুত বের হয়ে যায় আরিকা।
.
.
ছবিগুলো নিয়ে থানায় বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর ও মুরাদের দেখা না পেয়ে আরিকা তাকে পুনরায় ফোন করে।ইনেস্পেক্টর মুরাদ জানায় এ এখন তার নিজের বাড়িতে অবস্থান করছে। যদি এ মুহুর্তে দেখা করতেই হয় তবে তার বাড়িতে যেতে হবে আরিকাকে। আরিকা যেতে সম্মত হলে
ইন্সপেক্টর মুরাদ তার নিজের বাড়ির ঠিকানা দেয়৷ ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে যায় আরিকা। সেখানে গিয়ে আরিকা বিশাল এক বাংলো দেখতে পায়। বাংলোর চারপাশ নানারকমের ফুলগাছ দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো। তবে এই মুহূর্তে কোনো সৌন্দর্যই মন কাড়ছে না আরিকার। তার মাথায় একটা বিষয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে, ডাঃ সোহানের শাস্তি।
বাংলোর সামনে গিয়ে আরিকা ইন্সপেক্টর মুরাদকে কল করে জানায় সে এসে গেছে। কিছুক্ষণ পরে একজন ৩৪-৩৫ বয়সী পুরুষ দরজা খুলে ইশারা করে ভেতরে ঢুকতে বলে। আরিকা বুঝতে পারে ইনি ই ইন্সপেক্টর মুরাদ। সে কিছু না বলে ইন্সপেক্টরকে অনুসরণ করে ভেতরে প্রবেশ করে।
বাংলোর ভেতরে ঢুকে আরিকা বেশ অবাক হয়ে যায়। বাইরের থেকে বাংলোটার ভেতরে আরও সুন্দর করে সাজানো। পুরো বাসাটা দামি দামি ঝাড়বাতির আলোয় চকচক করছে। যতদূর চোখ যায় সৌন্দর্যের কোনো অপূর্ণতা নেই। তবে এতোবড় বাংলোতে অন্য কোনো মানুষের সাড়াশব্দ পায় না আরিকা।
“আমার সাথে এসো”
– বলেন মুরাদ। সারিকা ইন্সপেক্টরকে অনুসরণ করতে শুরু করে।
ইন্সপেক্টর মুরাদ একটি দেওয়ালের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দেওয়ালের সাথে টানানো একটা ঘড়ি সরিয়ে তার পেছনে লুকানো একটি সুইচ প্রেস করে। সুইচ প্রেস করতেই নিঃশব্দে দেওয়াল থেকে একটা দরজা খুলে যায়। আরিকা বুঝতে পারে সামনেই রয়েছে অন্ধকারময় বিরাট এক কামরা। সবকিছু দেখে অনেক অবাক হয় সে।
দেওয়ালের পেছনে এমন একটা কামরা থাকতে পারে এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। এমনকি দেওয়ালের সাথে যে দরজা যুক্ত আছে এটা বাইরের থেকে দেখে বুঝতে পারাটা একদমই অসম্ভব। কিন্তু ইন্সপেক্টর মুরাদ তাকে এই কামরায় কেন নিয়ে আসলো! নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন রাখলো আরিকা।
ইন্সপেক্টর মুরাদ একটু এগিয়ে একটা সুইচ চাপতেই লাল আলোয় পুরো কামরাটা আলোকিত হয়ে উঠলো। আরিকা কামরার ভেতরের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে।
সে দেখতে পেলো কামরাটার ভেতরে ডাঃ সোহানের বাসার মতো রয়েছে শত শত পুতুল। আরিকা বুঝতে পারলো তাড়াহুড়োর কারণে সে নিজের অজান্তেই খুব বড় বিপদে ফেঁসে গেছে।
.
.
.
.
#পর্ব_৮_ও_শেষ_পার্ট
——————————————-
ইন্সপেক্টর মুরাদ একটু এগিয়ে একটা সুইচ চাপতেই লাল আলোয় পুরো কামরাটা আলোকিত হয়ে উঠলো। আরিকা কামরার ভেতরের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে।
সে দেখতে পেলো ভেতরে ডাঃ সোহানের বাসার মতোই রয়েছে বেশ কয়েকটি পুতুল। আরিকা বুঝতে পারলো তাড়াহুড়োর কারণে সে নিজের অজান্তেই খুব বড় বিপদে ফেঁসে গেছে। ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পেছনে ফিরতেই সে দেখতে পায় দরজা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ডাঃ সোহান। এ পুলিশ ডাক্তারের আসল খেলা টা এখনো বুঝে আসছে না তার। তবে আরিকা যে সামনে খুব ভয়াবহ ঘটনার সম্মুখীন হতে চলেছে এটা সে নিশ্চিত। নড়াচড়া না করে আরিকা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যেখানে ছিল সেখনােই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
-“আমার সাথে কিসের শত্রুতা তোমার? তোমাকে তো আমি চিনিও না! তাহলে কিসের এতো তাড়া আমার ক্ষতি করার?
আমার বাসায় যাওয়া, সেখানে গিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করা আবার সেটা পুলিশের কাছে জমাও দেয়া বাহ! তোমার সাহসিকতার প্রশংসা করতেই হয়। কিন্তু মিস আরিকা একটু ভুল হয়ে গেলো না!
আমার সাথে টক্কর দেওয়ার আগে আমার সবকিছু সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া তোমার উচিৎ ছিলো না?
আমার করা সবকিছুর প্রমাণ তুমি এনে দিলে কার কাছে! আমারই বন্ধুর কাছে। হা হা হা
কথাগুলো বলেই সোহান অট্টহাসিতে মেতে ওঠে।
সাথে যোগ দেয় ইন্সপেক্টর মুরাদও।
ওদের এভাবে হাসতে দেখে আরিকা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
এক পর্যায়ে হাসি থামিয়ে ইন্সপেক্টর মুরাদ এগিয়ে এসে আরিকার চুল মুঠো করে ধরে বসে।
ব্যাথায় আরিকা কুঁকড়ে ওঠে।
ইন্সপেক্টর মুরাদ হাসতে হাসতে বলে,
-এতো বুদ্ধিমতী হয়েও উত্তেজনার বসে ছোট্ট একটা ভুল করে ফেললে।
আর এই ভুলের শাস্তি হিসেবে সামনে কতোটা ভয়াবহ পরিণতি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে সেটা হয়ত তুমি বুঝতেই পারছো।
ইন্সপেক্টর মুরাদের কথা শুনে আরিকার মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠলো।
এই পরিস্থিতিতে আরিকাকে এভাবে হাসতে দেখে রাগে ফেটে পড়লো মুরাদ ও সোহান দুজনেই।
রেগে ইন্সপেক্টর মুরাদ আরিকার মুখে জোরে একটা থাপ্পড় দিলো। আঘাত সামলাতে না পেরে আরিকা অনেক দূরে ছিটকে পড়ে যায়।
কান থেকে গরম কোনো কিছু একটা বেয়ে পড়ছে বুঝতে পেরে হাত দিয়ে আরিকা দেখতে পায় কান থেকে রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
আরিকা কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করে।
সে পেছন ফিরে দেখতে পায় ইন্সপেক্টর মুরাদ ও ডাঃ সোহান তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে এগিয়ে আসছে। এদিকওদিক তাকিয়ে আরিকা দেখে তার পাশেই পড়ে আছে সাথে করে আনা কালো ছোট ব্যাগটি। মুরাদ ও সোহান কাছাকাছি এগিয়ে আসতেই আরিকা তার ব্যাগ থেকে একটি হাই ভোল্টেজের ইলেক্ট্রিক টেজার বের করে।
ভালোভাবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দু’জনকে শক দেয় আরিকা। ইলেক্ট্রিক শক
হাই ভোল্টেজ এর শক খেয়ে ইন্সপেক্টর মুরাদ ও সোহান দুজনেই কাবু হয়ে হয়ে ফ্লোরে ঢলে পড়ে। আরিকা তাদের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করে বুঝতে পারে দু’জনেই জ্ঞান হারিয়েছে।
খুব কষ্ট করে দু’জনকে টেনে নিয়ে,
মোটা রশি দিয়ে শক্ত করে চেয়ারের সাথে বেঁধে দেয় সে।
আশেপাশে তাকিয়ে আরিকা একটি লাল রঙের পানিভর্তী একুরিয়াম দেখতে পায়। একুরিয়াম থেকে কিছু পানি এনে দু’জনের মুখমন্ডলে ছিটিয়ে দেয়। পানির ছিটের স্পর্শ পেয়ে উভয়েরই জ্ঞান ফিরে আসে। নিজেদের চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখে আরিকার দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে থাকে দুজনই।
আরিকা মুখে বাঁকা হাসি টেনে তাদের উদ্দেশ্যে বলে,
-তোমাদের সম্পর্কে তো অনেক জানলাম। এখন আমারও কর্তব্যে,
আমার সম্পর্কে তোমাদের কিছু জানাই। আমি আরিকা সেটা তো জানোই।
ছোট থেকেই রহস্য সমাধান আমার বিরাট নেশা। বড় হওয়ার সাথে সাথে সেটা এখন পেশায় পরিণত হয়ে গেছে। আর হ্যা আমাদের একটা টিম ও আছে। সবচেয়ে বড় কথা কি জানো?
ইন্সপেক্টর মুরাদ তুমি বললে না,
আমি অতি উত্তেজনায় ভুল করে ফেলেছি!
হাহাহা এতো কাঁচা কাজ আমি করি না।
তোমার উপর সন্দেহ তো আমার তখনই হয়েছিল যখন তুমি আমাকে থানার বাইরে দেখা করতে বলেছিলে। এখন হয়ত প্রশ্ন উঠবে বিপদ বুঝেও আমি কেন এলাম?
ওইযে রহস্য সমাধান!
যেখানে রহস্যের আনাগোনা সেখানে তো আমার আগমন থাকবেই। তবে আসার আগে লোকেশন টা আমার টিমকে জানাতেও ভুল করিনি। এখন শুধু আমার একটা ইশারাই যথেষ্ট তোমাদের সব প্লানকে ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু আমি এটা করবো না।
কারণ তোমাদের থেকে আমার অনেককিছু জানার আছে। অনেক রহস্য এখনও রয়েছে অজানা। আমি চাই সেই সবকিছু তোমরা আমাকে বলো।
এসব কিছু করার পেছনে তোমাদের কারণ কি? ডাঃ সোহান ও ইন্সপেক্টর মুরাদ কেউ ই আরিকার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না। ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে দু’জনেই তাকিয়ে থাকে আরিকার দিকে।
আরিকা আবারও বলতে শুরু করে,
-আমি চাইলেই এখন তোমাদের শেষ করে দিতে পারি। আমি বা আমার টিম ব্যতিত কেউই এই কামরা টা চেনে না। তাছাড়া তোমাদের মতো এমন নিকৃষ্ট মানুষদের আগ্রহ নিয়ে কেউ খোঁজ করবে বলে মনে হয় না। আমি চাচ্ছি না এমন কিছু হোক। এতো ভয়াবহ অন্যায় যারা করে তারা অন্যায়ের সত্যতা স্বীকার করার মতো সাহস ও রাখে বলে আমি জানি।
বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে। কোন পথটি বেছে নিবে সেটা এখন তোমাদের উপর নির্ভর করে।
আরিকার কথা শুনে ইন্সপেক্টর মুরাদ বলে উঠলো,
-আমাদের কি হবে সেটা নিয়ে না ভেবে তোমার কি পরিণতি হতে পারে সেটা নিয়ে ভাবো মিস আরিকা। তবে এটা আমি তেমার শেষ ইচ্ছা হিসেবে ধরে নিতে পারি। সেই হিসেবে কারও শেষ ইচ্ছা তো পুরণ করাই যায়।
মুরাদের কথা আরিকার ভেতরে কোনো প্রভাব ফেললো না। সে স্থির হয়ে মুরাদের কথায় মনোযোগ দিলো।
ইন্সপেক্টর মুরাদ আবারও বলা শুরু করলেন,
-আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে। আমারও সুন্দর একটা সংসার ছিলো। ভালোবাসার মানুষ ছিলো।
আমার পুরো পৃথিবী ছিলো আমার স্ত্রী লীনা। কিন্তু আমাদের ভালো থাকতে দেয়নি কিছু পশুরা। নির্দয়ভাবে গনধর্ষণ করেছিলো আমার লীনা কে।
কষ্টে আর ঘৃণায় আমার লীনা আত্মহত্যা করেছিলো। সেখান থেকেই আমার ভেতরে জন্ম নেয় প্রবল হিংস্রতা। হিংস্রতা ও প্রতিশোধের আশায় আমি বিভোর তখনই আমার পাশে দাড়ায় সোহান। বেঁচে থাকার একটা উপায় আমি পেয়ে যাই। এখানে যেসব মমি আছে এদের ভেতর কেউ রেপিস্ট বা কেউ ইভটিজার। সত্যি বলতে আমার এসব করার পেছনে দুইটা কারণ আছে,
প্রথমত আত্মশান্তি, দ্বিতীয়ত আমার লীনার আত্নার শান্তি। সমাজ নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। এতে সমাজের উপকার হলেও আমার লাভ নেই ক্ষতি হলেও কিছু না। যদি অপরাধ হয় তাহলে এই অপরাধে অপরাধী হয়ে আমি খুশি।
আরিকা একমনে মুরাদের কথা শোনে।
কোথাও কোথাও নাড়া দিয়েছে তার মনও, তবে এটা অবশ্যই অন্যায়। আবেগের বশবর্তী হয়ে ভুলকে সঠিক বলা ঠিক না।
আরিকা লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-এবার আসি তোমার কথায়। ইচ্ছে তো করছে এখনই শেষ করে দেই তোমাকে মিঃ সোহান। কিন্তু আমি চাই না তোমার ধ্বংসের সাথে কোনো রহস্য চাপা পড়ে যাক। তাই কোনোরকম ভণিতা না করে সোজাসুজি আমাকে সবটা খুলে বলো।
আরিকার কথা শুনে ডাঃ সোহান আবারও অট্টহাসিতে ভেঙে পড়ে।
হাসি থামিয়ে দাত কটমট করে আরিকার দিকে তাকিয়ে বলে,
-মৃত্যুর ভয় দেখাও কাকে? স্বয়ং মৃত্যুকে! আমি আজ তোমার মৃত্যু হয়ে সামনে এসেছি। যদি সবকিছু জানা-ই তোমার শেষ ইচ্ছা হয় তাহলে সেটা পূরণ করাও আমার দায়িত্ব।
“কি জানতে চাও বলো? আমার বাসায় রাখা ওই মৃতদেহগুল সম্পর্কে?
-আমার স্ত্রী তাবিয়া, যাকে আমি খুব ভালোবাসি। এক কথায় ও আমার পৃথিবী। কিন্তু কেমন লাগে শুনলে যে নিজের অপরিমাণ ভালোবাসা দিয়েও অপর পাশের মানুষটার থেকে পাচ্ছো ধোঁকা!
আমি তো নিজ চোখে দেখেছি আমাকে ধোঁকা দিয়ে আমার অবর্তমানে তাবিয়াকে তার সাবেক প্রেমিক রাকিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে লিপ্ত হতে। ছোট থেকেই আমার প্রিয় কোনোকিছুতে কারও দখল আন্দাজ আমি পছন্দ করি না তাহলে ভালোবাসায় অন্য কাউকে কিভাবে মেনে নেই?
মেরে ফেলেছি রাকিবকে। কঠোর শাস্তি দিয়েছি তার কর্মের। তারপর রইলো আমার মা বাবার কথা,আমি তো আমার মা বাবাকে খুব ভালোবাসি।
আমি তাদের চোখের মনি ছিলাম কিন্তু তারাও আমার ভালোবাসা তাবিয়াকে কষ্ট দিতো। ব্যাপারটা আমার একদমই ভালো লাগেনি তাই তাদের পুতুল করে সাজিয়ে রেখে দিয়েছি। মা-বাবাকে কিন্তু আমি মারিনি তারা পুতুলের মাঝে এখনও জীবিত আমি রোজ তাদের সাথে কথা বলি। এরপরে আমি আর আমাদের মাঝে ঝামেলা চাইনি তাই কাজের বুয়াটাকেও মা বাবার পুতুল পরিবারের সদস্য করে দিলাম।
আরিকা বুঝতে পারে সোহান তার মা বাবাকে জীবিত মমি করে রেখেছে। তার এমন নৃশংস কাজের কথা কল্পনা করে ভেতরে ভেতরে শিউরে উঠলো আরিকা।
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আরিকা বলে,
-তোমার পরিবার নিয়ে তোমার সমস্যা থাকতেই পারে সেটা তোমার একান্ত ব্যাপার কিন্তু সাহেরা আন্টি আর সুমনকে কেন মারলে তুমি? তারা কি ক্ষতি করেছিলো তোমাদের?
আরিকার প্রশ্নের জবাবে ডাঃ সোহান বলে,
-সুমন মোটেও ভালো ছেলে নয়। সে ড্রাগস এডিক্টেড ছিলো। বন্ধুদের নিয়ে রাত হলে দোতলার বাসায় নানাধরণের নেশায় মেতে উঠতো। তাদের অসুবিধা হবে বলে কোনো ভাড়াটিয়া ও উঠতে দিতো না। মাঝে মাঝে দু একটা ভাড়াটিয়া উঠলেও বিভিন্ন হরর থ্রিডি ভিডিও রেকর্ডার ও অদ্ভুত সাউন্ড রেকর্ড এর দ্বারা ভয় দেখিয়ে বাসা ছাড়তে বাধ্য করে। এভাবেই দোতলার নামকরণ হয়ে যায় ভুতুড়ে বাসা। তবে এতে আমার কোনো সমস্যাই ছিলো না। আমি তার এসব ব্যাপার নিয়ে একদমই মাথা ঘামাতাম না যদি না আমার তাবিয়াকেও ভয় না দেখাতো। অতি বাড় বাড়লে তো ঝড়ে ভেঙে পড়বেই। বাকি রইলো সাহেরা বেগমের কথা, বেচারি আন্টি তো একজন সহজ সরল ভোলাভালা মানুষ। তার কোনো ক্ষতি করার ইচ্ছা আমার ছিলো না। তার সাথে যা হয়েছে তার সম্পুর্ন দায়ভার তোমার।
সোহানের কথা শুনে বিস্ময়ে আরিকার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
-কি বলছো কি! আমার জন্য সাহেরা আন্টির এমন অবস্থা কেন হবে?
-তুমি যদি সেদিন বাসায় না ঢুকতে তাহলে অবশ্যই এমন কিছু হতো না। আমি বাসায় ঢুকে ভিন্ন পারফিউমের গন্ধ পেয়েই বুঝে গিয়েছিলাম কেউ বাসায় প্রবেশ করেছিলো। আমি কখনোই চাইবো না আমার বাসার ভেতরের কথা কেউ জানুক। আমি এই বিষয়েও নিশ্চিত ছিলাম, যে এসেছিলো সে আবারও আসবে। তাকে অনুসন্ধান করার দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়াটা তো বোকামি হতো তাই না! তাই আমি মৃত্যুফাঁদ তৈরি করে রেখেছিলাম।
কিন্তু সাহেরা আন্টির সত্যিই দুর্ভাগ্য।
সেদিন তোমার জায়গায় আন্টি বাসায় ঢুকে পরে।তার সাথে যা হয়েছে সেটা আসলেই কাম্য নয় কিন্তু তুমি শুধু তুমিই এর জন্য দায়ী।
সবকিছু শুনে আরিকার দুচোখ পানিতে ভরে ওঠে।
সোহানের দিকে তাকিয়ে রাগে আরিকা কাঁপতে থাকে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নিজে বসে থাকা চেয়ার দিয়ে সোহানকে আঘাত করে।
চেয়ারসহ ডাঃ সোহান ইন্সপেক্টর মুরাদের পেছনে উল্টে পরে যায়।
অগ্নিদৃষ্টিতে আরিকা ইন্সপেক্টর মুরাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আরেকটি বিষয় জানার আছে আমার। এই মৃতদেহগুলো এতোটা জীবন্ত করে এতোদিন পর্যন্ত কিভাবে সংরক্ষণ করা হয়? সঠিক উত্তর চাই আমার, নইলে ১ সেকেন্ড ও লাগবে তোদের সব খেলা আমার শেষ করতে।
আরিকার কথায় ইন্সপেক্টরের ভেতর কোনো প্রভাব ফেলে না। বরাবরের মতোই একটু হাসি দিয়ে বলে,
-এটা ডাঃ সোহানের এক ধরণের আবিষ্কার। বিভিন্ন গাছের নির্যাস ও কিছু কেমিক্যালের মিশ্রণে এক ধরণের মেডিসিন তৈরি করেছে। যেটা শরীরে লাগালে মাংস সহ ফ্রিজের মতো শক্তভাবে এটে ধরে। এতে মৃতদেহ সতেজ ও থাকে এবং একদম জীবন্ত ও মনে হয়। এই ব্যাপারে যদি তোমার সবকিছু জানতে হয় তাহলে সামনের ওই বুকশেলফে রাখা নীল রঙের বইটা পড়ে দেখতে পারো। সেখানে সবকিছুর বিস্তারিত ফর্মূলা পাবে।
ইন্সপেক্টরের কথা অনুযায়ী আরিকা বুকশেলফের দিকে তাকিয়ে একটি নীল বই দেখতে পায়।
ধীরে ধীরে সে বুকশেলফের দিকে এগিয়ে যায়।
এদিকে চেয়ার সহ পরে থাকা ডাঃ সোহান অতি সতর্কতার সহিত মুখ দিয়ে ইন্সপেক্টর মুরাদের রশির বাঁধন খুলতে থাকে। যেটা ছিল আরিকার দৃষ্টির অগোচরে।
বুকশেলফের কাছাকাছি যেতেই বেখেয়ালে আরিকার পা গিয়ে পরে একটা সুইচের উপরে।আরিকা কিছু বুঝে ওঠার আগেই উপর থেকে একটা জাল এসে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে পেচিয়ে ফেলে। নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সে। রাগে লাল হয়ে যায় আরিকার চোখ।
চিৎকার করে মুরাদকে বলে,
-ব্লাডি সাইকোপ্যাথ! আই উইল কাট ইউর বল’স।
ইতিমধ্যে ডাঃ সোহান মুরাদের বাঁধন খুলে দেয়। একে অপরকে মুক্ত করে পৈশাচিক হাসিতে মেতে ওঠে তারা।
রাগে আরিকার পুরো শরীর কাঁপতে থাকে।
ডাঃ সোহান ও ইন্সপেক্টর মুরাদ আরিকার চারপাশে ঘুরতে থাকে। ডাঃ সোহান বলে,
-তোমার মতো একটা ছিঁচকে ইদুর করবে আমাদের শিকার! তোমার ভাবা উচিৎ ছিলো আরিকা, যাদের দ্বারা এতোকিছু সম্ভব তারা তোমার মতো অতোটা নির্বোধ হবে না।
বেশি সাহসের ফল কি হয় জানো!
জানবে বা কি করে তুমি, কিছুক্ষণের মধ্যে হাড়েহাড়ে টের পাবে মিস আরিকা।
কথাটা বলে ডাক্তার সোহান জালবদ্ধ অবস্থায় আরিকার শরীরে এনেস্থিসিয়া ইনজেকশন পুশ করে দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝিনঝিন করে পুরো শরীর অবশ হয়ে আসে আরিকার। এক পর্যায়ে আরিকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ইন্সপেক্টর মুরাদ আরিকাকে জাল থেকে ছাড়িয়ে চেয়ারে বসিয়ে রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়।
তারা জানে আরিকার জ্ঞান সহজে ফিরবে না কিন্তু আর কোনো রিস্ক তারা নিতে চায় না।
ডাঃ সোহান তার আবিষ্কৃত মেডিসিন নিয়ে আসে।
ইন্সপেক্টর মুরাদ বলে,
শত্রুকে বাঁচিয়ে রাখতে নেই। এই একটা মানুষ শেষ হলেই আমাদের পথের আরেকটা কাটা দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
ডাঃ সোহান সম্মতি জানিয়ে তার সাথে আনা স্পেশাল মেডিসিন দিয়ে আরিকার শরীরে প্রলেপ দিতে যাবে ঠিক তখনই অনেকগুলো পায়ের শব্দ পেয়ে থমকে দাঁড়ায় তারা। ডাঃ সোহানের আর বুঝতে দেরি হলো না যে এখন কি হতে চলেছে।
মেডিসিন হাত থেকে ফেলে দিয়ে ভাঙা চেয়ারের কাছে বসে পড়ে সে।
হুড়মুড়িয়ে ইন্সপেক্টর মুরাদের কামরায় অনেকগুলো পুলিশসহ আরিকার পুরো টিম এসে হাজির হয়। বিপদ সন্নিকটে বুঝে আরিকা তার টিমের কাছে সিগনাল পাঠিয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু এখন সময় নষ্ট করা যাবে না। নিজেকে যেভাবেই হোক সেভ করতে হবে। ভাবামাত্রই ডাঃ সোহান ইন্সপেক্টর মুরাদের কাছে কাকুতিমিনতি করতে থাকে,
-আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার ইন্সপেক্টর সাহেব! দয়া করে আমার সাথে এমন করবেন না। আপনি যেই অপরাধ করছেন তার প্রতিবাদ করাটা কি ভুল?
আরিকার টিম দৌড়ে আরিকার কাছে যায়।
এদিকে সব প্রমাণ ইন্সপেক্টরের বাসায় পেয়ে পুলিশ, ইন্সপেক্টর মুরাদকে এরেস্ট করে নেয়।
ডাঃ সোহান পুলিশের কাছে বয়ান দেয়,
সে এবং আরিকা ইন্সপেক্টর মুরাদের কর্মকান্ডের ব্যাপারে জেনে গিয়েছিলো। তার প্রতিবাদ করাতেই তাকে আর আরিকাকে এখানে ধরে আনা হয়। পুলিশ সময়মত আসার কারণে আজ তারা দুজনেই বেঁচে যায়।
ডাঃ সোহানের এরূপ বয়ান শুনে রাগে ফুলে ওঠে ইন্সপেক্টর মুরাদ। কিন্তু যেহেতু সব ঘটনা ঘটেছে তার বাসায় এবং কামরার ভেতরে রয়েছে বেশ অনেকগুলো মৃতদেহ তাই সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কোন প্রকার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় না।
আরিকার টিম আরিকার বেহুশ দেহটাকে এম্বুলেন্সে তুলে হসপিটালের দিকে চলে যায়।
ইন্সপেক্টর মুরাদকেও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সুযোগে ডাঃ সোহান খুব দ্রুত ওই বাসা থেকে বের হয়ে যান।
বাসা থেকে বের হয়ে লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে মনে মনে বলে,
– এই যাত্রায় তো বেঁচে গিয়েছি। তবে আরিকার জ্ঞান ফেরার আগে শীঘ্রই তাবিয়াকে নিয়ে এই শহর ছাড়তে হবে আমাকে।
.
.
.
.
.
কয়েকদিন পর।
আতিক সাহেব সাহেরা বেগমের চলে যাওয়ার ধকল কিছুটা সামলে উঠেছেন।
সাহেরা বেগমের দায়িত্বগুলোও এখন তার কাঁধে এসে পড়েছে। প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটের ভাড়া তুলতে হয় তাকে। উপর তলা থেকে ভাড়া সংগ্রহ করতে করতে দোতলায় এসে থামেন তিনি। বেশ কয়েকবার কলিংবেল প্রেস করেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পান না। অগত্যা দরজা নক করতে হাত বাড়ালেই হালকা শব্দে দরজা নিজ থেকে খুলে যায়।
আতিক সাহেব দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেন। চারদিকে তাকিয়ে দেখেন বাসার ভেতরটা খুব অন্ধকার। দেওয়াল হাতড়ে একটা সুইচ চাপ দিতেই রুম জুড়ে লাল আলো জ্বলে ওঠে। তিনি বাসার আরও ভেতরে প্রবেশ করেন। কিছুটা এগুতেই ভেতরে অদ্ভুত সব পুতুলের দেখা পেয়ে যান। একে একে সাহেরা বেগম, সুমন সবার পুতুলগুলোকে মমির মত অবস্থায় খুঁজে পান তিনি। সুমনের পুতুল দেখে সাহেরা বেগমের বলা সেই কথাগুলো মনে পড়ে যায় আতিক সাহেবের।
“আজ আমি সুমনের চেহারার একটা পুতুল দেখেছি।দোতলার কোনোকিছুই আমার ঠিক লাগছে না। ওরা না খুব অদ্ভুত ”
এই মুহূর্তে দাড়িয়ে আতিক সাহেবের কেন যেন মনে হচ্ছে, সেদিন যদি সাহেরা বেগমের বেগমের কথাকে গুরুত্ব দিতো তাহলে হয়ত সবকিছু আজ ভিন্ন হতো।
সাহেরা বেগমের পুতুলের সামনে দাঁড়িয়ে দুচোখের পানি ছেড়ে দেন তিনি। কিন্তু এ বাসার মানুষেরা কোথায়! ডাঃ সোহান বা তার স্ত্রী কারোরই কোনো খোঁজখবর পায় না।
আশেপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে হঠাৎ আতিক সাহেবের চোখ আটকে যায় অন্য একটা পুতুলের উপর।
ভালো করে তাকিয়ে দেখেন এটা ডাঃ সোহানের পুতুল। পুতুলটির কাছে গিয়ে দেখতে পান, ডাঃ সোহানের পুতুলটির গলা বরাবর ছুড়ির আঘাতের চিহ্ন। সাথে ঝুলানো একটি চিরকুট,
যাতে লেখা-
——
দুঃখিত সোহান।
তোমাকে খুন করা ছাড়া এ পাপচক্র থামানোর অন্য কোন উপায় আমার ছিলো না। আজ থেকে তুমিও পুতুল পরিবারের এক নতুন সদস্য হয়ে থাকো।
ইতি,
– তাবিয়া।
_____________________
সমাপ্ত