#লাল_নীল_ঝাড়বাতি(পর্ব:৯)
#নাফিসা_আনজুম
,,
মিসেস আয়ান চৌধুরী কি নিজের বাসরঘর নিয়ে সাজিয়েছে,,
ওনার এই কথাটা শুনে লজ্জায় আমার বলতে ইচ্ছা করতেছে, আল্লাহ একটা মই দাও আমি উপরে উঠে যাই।
উনি আস্তে করে আমাকে বিছানায় নামিয়ে দিলেন। তারপর আমার পাশেই সুয়ে পরলেন।
ওনার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না,মুখটা ওনার বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে আছি , উনি একটা হাত শাড়ির নিচ দিয়ে আমার পেটের উপর রেখে আমাকে ওনার দিকে টেনে নিলেন। তারপর ঘারে, গলায় চুমুতে ভরিয়ে দিলেন, একটু পর ওনার দিকে চোখ পরতেই চোখ নামিয়ে নিলাম, ভীষণ লজ্জা লাগছে।
উনি হাতের ওপর হাত রেখে ওনার দিকে তাকাতে বললেন,আমি পিট পিট করে তাকালাম। আবারো চোখে চোখ পরতেই আমার ওষ্টদ্বয় ওনার দখলে নিয়ে নিলেন।
তারপর বাকীটা ইতিহাস,,(লেখীকার লজ্জা লাগে)।
,,,,
অনেক সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, নিজেকে ওনার বুকের মধ্যে দেখতে পেয়ে কালকে রাতের সব কথা মনে পরে গেলো। ইশশশ কি রোমান্টিক মানুষটা।
আজকের সকালটা অন্যান্য সকালের থেকে আলাদা আমার কাছে। হয়তো প্রত্যেক মেয়ের কাছেই এই সকালটা আলাদা মনে হয়। স্বামির সম্পুর্ন ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দে আলাদা এক অনুভূতি কাজ করছে মনে।
সময় চলমান,,
দিন,মাস বছর পার হয়ে আমার বীবাহিত জীবনের দুই বছর চলছে।পুরো বাড়িটা#লাল_নীল_ঝাড়বাতি
দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাড়িতে একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠান। আমি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার বাবার বাড়ি থেকে সবাই চলে এসেছে,, ডায়েরিটা বন্ধ করে রেখে রুম থেকে বের হলাম। উপরে ওঠা নামা করতে পারি না তাই নিচেই একটা রুম এ থাকি। আমি বাহিরে যেতেই রাইয়ান আর ফাইজা এসে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। রজনী আপু আর ফাহিম ভাইয়ার জমজ বাচ্চা রাইয়ান আর ফাইজা। যবে থেকে হাঁটতে শিখেছে তখন থেকে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে। দুই বাড়ির চোঁখের মনি এরা দুজন।
হাসি কান্না মিলিয়েই মানুষের জীবন। তবুও এই দুই বছর অনেক ভালো কেটেছে, ওনাকে ঠিক যতোটা গম্ভীর আর একরোখা ভাবতাম উনি একদমি ওমন না। একটাই কি উনি সবকিছু নিয়ম মতো চলে। কোনো কিছু বেশি বেশি পছন্দ করে না। এই দুই বছরে আমি অনেকবার রাগ করেছি মানুষটার সাথে কিন্তু উনি কখনো আমাকে হার্ড করে কিছু বলে নাই।
সারাদিনের ব্যাস্ততা শেষ করে মাত্র এসে শুয়ে আছি,,
আয়ান: মিসেস আয়ান
জ্বি বলুন ,,
আমাদের বিয়ের দুই বছর হয়ে গেলো এখনো কি আপনি টা তুমি হবে না।
আপনি বলার মাঝে একটা সম্মানীয় ভাব আছে, আপনি বললে ভেতর থেকে আপনার প্রতি একটা সম্মান কাজ করে।
আমার সম্মান চাই না। তুমি বললে নিজ নিজ মনে হয়। আর আপনি বললে মনে হয় পরের কেউ।
না আপনি টাই বেশি ভালো,,
ঠিক আছে, তোমার যা ইচ্ছা ডেকো।
আমাদের খুনশুটিময় সংসার। দেখতে দেখতে আরো বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। ইদানিং কেনো জানি খুব ভয় লাগে। আমার বাচ্চাকে ঠিকঠাক দুনিয়াতে আনতে পারবো কি না, আমার বাচ্চা সুস্থ থাকবে কি না। খুব চিন্তা হয়।
ঝুমুর কি করছো,
আমার না পেটে খুব ব্যাথা হচ্ছে,,
কিহহ, কখন থেকে আমাকে ফোন দাও নি কেনো।
বেশিক্ষণ থেকে না, আমি ভাবতেছি ফোন দেবো কিন্তু তার আগেই আপনি আসলেন।
বাচ্চা হওয়ার সময় হয়ে গেছে। বাড়িতে চেষ্টা করে কোনো রিস্ক নিতে চায় না বলে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো।
আজকে কেনো জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। সবাইকে খুব বেশি আপন মনে হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর আগে ওনার লাল চোখ দেখে বুঝেছি মানুষটার খুব কষ্ট হচ্ছে। কান্না আটকিয়ে রাখার কারনে চোখগুলো একদম লাল হয়ে গেছে। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম। মানুষটা চোখ বন্ধ করতেই চোখ থেকে দু-ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। আমি এই প্রথম ওনার চোখে পানি দেখলাম। আয়ান চৌধুরী আমার জন্য কান্না করছে এটা দেখার পর আর কোনো সন্দেহ নেই যে মানুষটা আমাকে কতোটা ভালোবাসে।
আমাকে আঙ্গান করানো হলো। তারপর আর কিছু মনে নেই।
কে জানতো ওই চোখ আর কখনো খুলতে পারবে না আমার বোনটা। বলেই রজনী চশমাটা খুলে চোখ মুছলো।
ওর পাশেই বসে আছে রাইয়ান ফাইজা আর আরিজা। আয়ান আর ঝুমুরের মেয়ে আরিজা।ওরা চোখের পানি আটকাতে পারছে না। আরিজার বয়স ষোলো বছর। অনেকটাই মায়ের মতো চঞ্চল, রজনী ওকে কোখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেয় নি, কিন্তু মায়ের অভাব যে মাসীকে দিয়ে পুরন হয় না সেটা যার মা নেই সেই জানে। মায়ের গল্প ও কমবেশি সবার মুখেই শোনে কিন্তু এভাবে কখনো শোনেনি।
হ্যা সেদিন অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর পর কি হয়েছিলো শুনুন,,
সিজারের পাশাপাশি সিস্ট এর সমস্যা ছিলো ঝুমুরের। যদি সিজারের সময় ওটার অপারেশন না করতো তাহলে কয়েকদিন পরে আবার আলাদা করে অপারেশন করা লাগতো। তাই ডাক্তাররা একবারেই সিস্টের অপারেশন ও করে। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঝুমুরের শরীর একদম ফ্যাকাসে হয়ে যায়। অনেক খুঁজেও সেই সময় ও ন্যাগেটিভ রক্ত পাওয়া যায় না। আয়ান ভাইয়া এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়ে বেড়িয়েছে কিন্তু রক্ত জোগাড় করতে পারে নাই। অবশেষে রক্ত পেয়ে যায় কিন্তু তখন আর আমার বোনটা এই দুনিয়াতে নেই।
আয়ান ভাইয়া হাঁসি মুখে রক্ত নিয়ে এসে ডাক্তারের হাতে দিয়ে বলে এবার আমার ঝুমুর ঠিক হবে। ডাক্তার রক্তের প্যাকেট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকে এগোনোর সাহস নেই। একটা মৃ*তো মানুষকে কিভাবে রক্ত দেবে।
সেদিন হাসপাতালের মানুষ দুবার অবাক হয়েছে, প্রথমবার,,
ঝুমুর মা*রা গেছে শোনার পর দশ মিনিট আয়ান ভাইয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। একটা কথাও বলে নাই। এক ফোঁটা চোখের পানিও পরে নাই।
সবাই বলাবলি করছিলো, এ কেমন মানুষ বউ ম*রে গেছে দেখেও এতোটা শক্ত হয়ে আছে।
কিন্তু দশমিনিট পর, পুরো হাসপাতাল কেঁপে উঠেছে আয়ান ভাইয়ার কান্নায়। অসুস্থ মানুষগুলোও চোখের পানি আটকাতে পারে নি। সারা হাসপাতালে গড়িয়ে গড়িয়ে আমার বোনটাকে ভিক্ষা চেয়েছে। সবার কাছে গিয়ে পাগলের মতো বলেছে আমার ঝুমুর কে এনে দাও। এনে দাও আমার বউটা কে। একটা মানুষ বউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে আয়ান ভাইয়াকে না দেখলে হয়তো কেউ বুঝবে না।
সেদিনের পর আয়ান ভাইয়া অনেকটা পাগল পাগল হয়ে যায়, সারাক্ষণ নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখে,ঠিকমতো খায় না, ঘর থেকেই বের হয় না। বের হলেও খুব প্রয়োজনে বের হয়।
তোমাদের দাদু দিদাসহ সবাই অনেক চিন্তায় পরে যায়। আয়ান ভাইয়াকে আরেকবার বিয়ে করানোর কথা বলা হয়। কিন্তু সেদিন আবারো সবাইকে অবাক করে দিয়ে আয়ান ভাইয়া পাগলের মতো কান্না করতে থাকে, ঝুমুরের শেষ স্মৃতি আরিজাকে নিয়ে ও সারাজীবন কাটাতে পারবে তবুও যেনো কেউ কখনো বিয়ের কথা না বলে।
তখন শাশুড়ি মা বলে যে, নিজের মেয়েকে এখনো একদিনো কোলে নাও নি আর বলতেছো তাকে নিয়ে সারাজীবন কাটাবে।
কে বলেছে কোলে নেই নি। আমার মেয়েকে প্রতিদিন একবার হলেও কোলে নিয়ে আদর করি আমি। কিন্তু আমার ওকে কোলে নিলে ঝুমুরের কথা মনে পরে। আমার ঝুমুর আমাকে বলেছিলো যে আপনি এত্তো লম্বা আর বড় একটা মানুষ, আমাদের পিচ্চি বাচ্চাটাকে কোলে নিবেন কিভাবে হুমম। আমি আমাদের বাচ্চাকে কোলে নিবো আর আপনি আমাকে নিবেন কেমন। তাই আমি আমার বাচ্চাকে কোলে নিলেও এক পা নড়াচরা করতে পারি না আমার ভয় হয় যদি আমার কারনে আমার মেয়েটার কিছু হয়।
তারপর থেকে আয়ান ভাইয়া কিছুটা স্বাভাবিক হয়। আরিজাকে কোলে নেয়। আসতে আসতে অনেকটাই আগের মতো হয়ে যায়।
আরিজাকে উনি সবসম ঝুমুরের মতো চঞ্চলতা শেখায়। এজন্য নিজেও কখনো গম্ভীর হয়ে থাকে না।
খালামনির মুখ থেকে মায়ের এসব কথা শোনার পর আরিজা দৌড়ে ওর বাবার ঘরে যায়।
আয়ান বসে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো মেয়েকে আসতে দেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে বসায়।
আমার মা টা কি কিছু বলবে,,
আব্বু তুমি আজকে আমাদেরকে বাহিরে ডিনার করতে নিয়ে যাবে।
তুমি চেয়েছো আর তোমার আব্বু নিয়ে যাবে না তাই কি হয়।
আর একটা কথা,
জ্বি মামনি বলো।
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আব্বু।
আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমার মা।
সমাপ্ত
জানি শেষটা সবার মনমতো হয় নাই। এভাবে শেষ করার কথা আমি নিজেও ভাবি নি। কিন্তু কেনো জানি মাথায় উল্টা পাল্টা আসলো আর লিখলাম। ভুল ত্রুটি সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবেন। ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌