#প্রণয়ে_প্রলয়ের_সুর
#লেখা: জবরুল ইসলাম
#পর্ব_১৬
.
বেশি সময় তারা আর একা বসতে পারলো না। দরজায় এসে নক দিল নুসরাত। নির্জন উঠে গিয়ে খুলে দিতেই অর্থবহ হাসি মুখে এনে বললো, ‘এসে কি বিরিয়ানিতে এলাচি হলাম?’
– ‘কিযে বলেন, আসুন ভেতরে।’
নুসরাত গিয়ে তরুর পাশে বসে বললো,
– ‘আইসক্রিমের জন্য থ্যাংকস। তরু বলেছে আপনি দিয়েছেন।’
সরাসরি কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে নির্জনের অস্বস্তি লাগে। যদিও সভ্য পৃথিবীতেই এটা ভদ্রতা বলে স্বীকৃত। সে চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, ‘আপনাকে রেখে চা খাচ্ছি।’
– ‘আমি খেয়েই এসেছি। হঠাৎ তরুকে না পেয়ে ভাবলাম কোথায় গেল।’
– ‘ও আচ্ছা।’
তরু চায়ের কাপ রেখে বললো, ‘কাল আশেপাশে কোথাও বেড়াতে যাই চল।’
– ‘কোথায়?’
– ‘পাহাড়, চা বাগান এসবে আরকি।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
নির্জন খানিকক্ষণ কিছু ভেবে বললো, ‘কাল কিন্তু আমাদের ঢাকায় ফিরতে হবে। আবার দিনে-দুপুরে রোদ থাকবে, বেড়ানো যাবে না।’
নুসরাত প্রতিবাদ করে বললো, ‘সেকি, এসেছেন থাকুন কয়েকদিন।’
– ‘না, কালই চলে যাব।’
তরু তখন বললো, ‘তবুও বেড়ানো যায় চাইলে।’
নুসরাত ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘কীভাবে?’
– ‘আমরা তিনজন আজ ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠবো। উঠে রেডি হয়ে বের হতে হতেই পাঁচটা হয়ে যাবে। তখন একেবারে ভোর। সতেজ নির্মল, পরিবেশ। যেহেতু পাহাড়, চা বাগান দেখবো তাই ভোরেই ভালো লাগবে। আর রোদ পুরোপুরি উঠতে উঠতে আমরা ফিরে আসবো।’
ওর আইডিয়া খুবই পছন্দ হলো নির্জনের।সে চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বললো, ‘ডান, লেখিকার কথাই শেষ কথা।’
ফিক করে হাসলো নুসরাত। তরু তখন বললো, ‘ভালো বুদ্ধি দিয়েছি বলে মেনেছেন। সব কথাই কি এভাবে মানবেন?’
– ‘হ্যাঁ অবশ্যই।’
– ‘মনে থাকে যেন।’
– ‘থাকবে।’
নুসরাত তখন বললো, ‘ভোরে যেতে হলে এখনই ঘুমাতে হবে, আমি তাহলে যাই’ বলে সে ট্রে-তে কাপ তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলো। তরু ওর দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে উঠে গেল বসা থেকে। নির্জন তরুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। তরু বাইরে এসেই নুসরাতের পিঠে কয়েকটি কিল দিয়ে বললো, ‘ঘুমাতে যাই বলে তুই এভাবে যে চলে এলি? আমি কি এই রুমেই ঘুমাবো?’
নুসরাত খিলখিল করে হাসতে গিয়ে ট্রে পড়ে গেল হাত থেকে। দু’জনই সঙ্গে সঙ্গে জিভে কামড় দিয়ে চুপ হয়ে গেল। নির্জন দরজার কাছে এসে বললো, ‘আমি কিছু টের পাইনি। কারণ কাপ ভাঙার আর আপনাদের হাসির শব্দ একইরকম।’
দু’জন ভাঙা কাপের টুকরোগুলো ট্রে-তে তুলে খিলখিল করে হেসে দৌড়ে যেন পালিয়ে গেল। তরুর নানির গলা শোনা গেল এই ঘর থেকেই, ‘কিরে এত খিলখিল করতাছো কেন? একটারে সবে বিয়া দিছি এদিকে তোরাও দেখি রসে ফাইট্টা পড়তাছস।’
নির্জন মুচকি হেসে দরজা ভেজিয়ে গিয়ে মোবাইল হাতে নিল। একটু পরেই তরুর মামা এলেন। এসে ভালো-মন্দ গল্প করলেন তার সঙ্গে। নুসরাত আগেই তাদের খাবার ব্যবস্থা করে নিল। দশটার দিকে তাকে ডেকে নিল খেতে। কিন্তু খেয়ে এসে নির্জনের ঘুম পাচ্ছিল না৷ কেমন যেন এক অস্থিরতা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। বুক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। চোখ যেন বিদ্রোহ করছে, সারাক্ষণ তরুকে সামনে দেখতে চায় সে। নির্জন বিয়ের ওই ছবিটা বের করলো। তরু বরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। খয়েরি রঙের শাড়ি। এক হাত সামনের দিকে এনে, অন্যহাতে কবজি ধরা। কি সুন্দর হাত। মোমের মতো মসৃণ। তুলতুলে দু’টো গাল। জোড়া ভ্রু। কি সুন্দর চুল। সে চোখ সরাতে পারছে না। জীবনে কখনও নিজের ভেতরের এমন দূর্বলতা টের পায়নি সে। বুঝতে পারছে, স্পষ্ট বুঝতে পারছে। কিছুই করার নেই। এই বিশ্বচরাচরের মালিক নিশ্চয়ই এই মেয়েটিকে তার ভাগ্যে লিখে দিয়েছে৷ নিশ্চয় দিয়েছে৷ না হলে এমন হচ্ছে কেন।
খেয়ে এসে তরু আর নুসরাত এক সঙ্গে ঘুমিয়েছে। নুসরাত কারও সঙ্গে চ্যাট করছে। তরু চেষ্টা করছে গল্প লেখার। অনেকদিন হলো কিছু লিখতে পারছে না। ছোট গল্প হলেও ফেইসবুকে দেয়ার ইচ্ছা। কিন্তু তরু লিখতে গিয়ে নায়কের জায়গায় শুধু একটি ছবিই চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সেই মানুষটি হচ্ছে নির্জন। কানে সংগীতের মতো বাজছে,
”বাতাসে তোমার চুল উড়ার দৃশ্য থেকে সূর্যমুখী ক্ষেত সুন্দর নয় তরু।”
“একাকীত্বের জন্য না-কি কাউকে দেখতে না পেয়ে রিয়েক্ট করেছি জানি না…।”
তরু দীর্ঘসময় পর খেয়াল করলো মোবাইলের নোটে সে নির্জনের বলা নানান কথা লিখে ভরে ফেলেছে৷ মোবাইল লক করে বালিশের পাশে রেখে দিল। মনটা যেন কেমন করছে তরুর। পাশ ফিরে নুসরাতকে জড়িয়ে ধরে চুপটি করে শুয়ে রইল। চোখে ভাসছে গাড়িতে নির্জনের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে সে, নির্জন ঘুমিয়ে আছে তার কোলে। নির্জন বেখেয়ালে হাত ধরে ফেলেছে তার…। দৃশ্যগুলো ভাবতে ভাবতে তরুর গা কাঁটা দিয়ে উঠলো। নুসরাত মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বললো, ‘কিরে কি হয়েছে?’
তরু জবাব দিল না। নুসরাত পুনরায় বললো, ‘মন খারাপ?’
– ‘কিছু না চুপ থাক।’
– ‘একটা কথা সত্য করে বলবি তরু?’
– ‘কি?’
– ‘নির্জন ভাইয়ের সঙ্গে কিছু আছে তোর তাই না?’
– ‘বাজে কথা বলবি না।’
– ‘না হলেও আমি শিওর প্রেমে পড়েছিস।’
– ‘হ্যাঁ প্রেমে পড়া তো সহজ।’
– ‘আমার সঙ্গে ঢং করবি না তরু। তোরা এক সঙ্গে ঢাকা থেকে এসেছিস। এর ভেতরেই তো প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাওয়ার কথা।’
– ‘গাড়িতে একদিন একসঙ্গে এলেই বুঝি প্রেম হয়ে যায়?’
– ‘হওয়ার হলে দেখলেই তো হয়ে যায়। তাছাড়া তোদের দেখলেই লাগে প্রেম হবে।’
– ‘বুঝি না, কেয়া ফুপুও এই কথা বলে। কেন দেখলেই মনে হবে? উনি কত লম্বা৷ আমি খাটো। উনি কত বড়লোকের ছেলে। মানে কোনদিক থেকে মনে হয়?’
– ‘কি জানি, কেন যেন মনে হয় তোদের প্রেম হবে অথবা হয়ে গেছে।’
– ‘যতসব আজাইরা চিন্তা।’
– ‘আজাইরা না, নির্জন ভাই তোর প্রেমে পড়েছে সেটাও আমি ১০০% শিওর।’
– ‘কীভাবে বুঝলি?’
– ‘সে থাক, যেভাবেই হোক বুঝেছি। তাই আমি সাহস করে সন্ধ্যায় ফাজলামোও করেছি। আর উনি খুশি হয়েছেন।’
– ‘তুই তো ছেলেদের মনোবিজ্ঞানী হয়েছিস৷ হাজারে-বিজারে প্রেম করেছিস বলে কি যে ভাবিস নিজেকে।’
নুসরাত চুপ হয়ে গেল। পুনরায় চ্যাটে মনযোগ দিল সে। দীর্ঘ সময় পর তরু ইতস্তত করে বললো, ‘একটা কথা বলি, তুই আবার অন্যদিকে নিবি না।’
– ‘বল।’
– ‘আয় দেখে আসি উনি কি করছে।’
নুসরাত মুচকি হেসে বললো, ‘বুঝি তো, সবই বুঝি। দেখতে ইচ্ছা করছে সেটা বল।’
– ‘কু*ত্তি, আগেই বলেছি অন্যদিকে নিবি না। উনার এখানে কেউ কি পরিচিত আছে না-কি? ঘুমালো কি-না, কিছু দরকার কি-না দেখতে হবে তো।’
নুসরাত ওড়না নিয়ে বললো, ‘তোর জন্য না হোক, বেচারা আইসক্রিম পাঠিয়েছিল। দুলাভাই হলেও কতকিছু দিবে। একটু না হয় এখন হেল্প করলাম।’
– ‘কিসব যা-তা বকছিস, চুপচাপ চল তো।’
দু’জন রুম থেকে বের হয়ে উঠানে এলো। চাঁদনী রাত। চাঁদের আলোয় উঠানে গ্রিলের ছায়া পড়েছে। জোনাক পোঁকাগুলো উড়াউড়ি করছে। নির্জনের রুমের দরজায় নক দিল নুসরাত। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খুলে দিল নির্জন। যেন অপেক্ষায়ই ছিল সে। তার পরনে আগের কালো ট্রাউজার, গায়ে মেগি হাতা গেঞ্জি।
– ‘আসুন, ভেতরে আসুন।’
নুসরাত কিছু একটা ভেবে বললো, ‘একটা গেইম খেলবেন নির্জন ভাই। আপনি তো অনেক লম্বা, দেখি পারেন কি-না।’
– ‘বুঝিনি।’
– ‘আচ্ছা আমি বুঝিয়ে দেই। আপনি দরজার পাল্লা দু’টো দুইহাত ধরে মেলে সোজা দাঁড়ান।’
নির্জন তাই করলো। নুসরাত এবার তরুকে ধরে বললো, ‘তুই এদিকে আয়’ বলে সে একেবারে নির্জনের সামনে তরুকে দাঁড় করিয়ে বললো, ‘এবার আপনি ওকে টাচ না করে দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করুন। সময় দুই মিনিট।’
তরু পিছু ফিরে তাকিয়ে বললো, ‘এটা আবার কেমন খেলা?’
‘আরে এরকম খেলা আছে৷ লম্বা মানুষ ছাড়া পারে না। দেখি উনি কাজের লম্বা কি-না। তুই একেবারে সোজা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাক।’ বলে নুসরাত বারান্দায় গিয়ে বললো, ‘শুরু করুন।’
নির্জন দরজার পাল্লা বারবার বন্ধ করতে গিয়ে তার বুক তরুর নাকে কপালে লেগে যাচ্ছে। তরু মূর্তির মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও, সে অনুভূতি শূন্য নয়। নক্ষত্রের বুক তার যতবার এসে নাকে লাগছে। শিরশির করে উঠছে তরুর বুক। নিজের অজান্তেই যেন ইচ্ছাকৃত তার মাথা নির্জনের দিকে আরও বেশি চলে যাচ্ছে। ওর বুক, গলা একেবারে চোখের সামনে। দুই মিনিট অনেক সময়, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তরুর পুরো শরীর যেন অদ্ভুত এক অনুভূতিতে অবশ হয়ে আসছে। চোখবন্ধ করে, শুকনো ঢোক গিলে তরু ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে বলছে, ‘নুসরাত বোন, তুই আমাকে এ কেমন পরীক্ষায় ফেলেছিস। আমি যদি হঠাৎ এই লোমশ বুকে ঝাপিয়ে পড়ি? যদি জড়িয়ে ধরে ফেলি? যদি ওই গলায় মুখ লুকাই?’
নিজের অজান্তেই তরু এক পা পেছনে গেল। দরজা বন্ধ হয়ে গেল পলকে। দরজার সঙ্গে দুইহাত একত্র হওয়ায় তরুর দুইগালে নির্জনের দুই হাতের পেশি লেগে গেল। কেঁপে উঠলো তরু। চোখবুজে খামচে ধরলো নিজের ড্রেস। নির্জন নেশাতুর চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তার ইচ্ছে করছে এখনই তরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। ইচ্ছা করছে তরুও। অথচ দুজনই নিজেকে সামলে রাখছে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরার অধিকারের অভাবে৷ দরজায় নক দিল নুসরাত। তরু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল নির্জনকে। তারপর দরজা খুলে দ্রুত বারান্দায় গিয়ে বললো, ‘নুসরাত চলে আয়, ঘুমাতে হবে।’
তারপর আর পিছু না ফিরেই উঠান পেরিয়ে দ্রুত ছুটে গেল সে। নুসরাত মোবাইল টিপতে টিপতে বললো, ‘গুড নাইট নির্জন ভাই৷ ঘুমান। সকালে দেখা হচ্ছে।’
নির্জন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে অস্ফুটে বললো, ‘ঘুম নষ্ট করিয়ে ঘুমাতে বলছিস বইন।’
তারপর দরজা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে গা হেলিয়ে দিয়ে বড়ো বড়ো করে শ্বাস ছাড়লো৷
এলার্ম থাকায় সকালে ঘুম ভাঙলো তরুরই আগে। ডাক দিল নুসরাতকে। উঠে বসে বললো, ‘কল দে উনাকে। উঠে ফ্রেশ হোক।’
তরুর অকারণই কেমন যেন হুট করে লজ্জা লাগছে কল দিতে। তবুও কল দিল। দুইবার রিং হতেই রিসিভ করলো নির্জন। ঘুম ঘুম গলায় বললো, ‘হ্যালো।’
– ‘চারটা বাজে উঠোন।’
– ‘ঘুমোতেই তো একজন দেয়নি সারা রাত। এখন আবার উঠতে হবে।’
তরু লজ্জায় লাল হয়ে পিটপিট চোখে নুসরাতকে দেখে নিল। তারপর বললো, ‘ফ্রেশ হয়ে রেডি হোন।’
– ‘তোমার ঘুম ঘুম ভয়েজ অনেক মিষ্টি তো তরু৷ বিরিয়ানির মতো এক প্লেট ঘুম ঘুম ভয়েজ বিক্রি হলে ভালো হতো।’
তরুর ভেতরে ভেতরে কি যে ভালো লাগছে। লজ্জা হচ্ছে। যেন নুসরাত সবকিছু শুনে ফেলছে। ‘আচ্ছা রাখি’ বলে কেটে দিল কল। দুইজন হাত-মুখ ধুয়ে কাপড় পালটে রেডি হয়ে গেল নির্জনের রুমে। গিয়ে নক দিতেই খুলে দিল সে। কেডস, জিন্স আর লাল গেঞ্জিতে কি যে সুন্দর লাগছে ওকে। তরু চোরা চাহনিতে কেবল দেখলো। লাল গেঞ্জিতেও বুঝি ছেলেদের এত মানায়? আগে খেয়াল হয়নি কখনও তরুর। তিনজনই বের হয়ে এলো রাস্তায়। নুসরাত বললো, ‘এখন রিকশা পাব না, হেঁটে হেঁটেই যেতে হবে আমাদের।’
নির্জন ওর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘দোকানপাটও খুলতে দেরি আছে তাই না?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘তাহলে আমরা নাশতা পরে করে নিব।’
– ‘হুম।’
তরু চুপচাপ হাঁটছে। তিনজনই রাস্তা দিয়ে হেঁটে এলো একটা চা বাগানের কাছে। চারদিকে উচ্চতার চা গাছ গিয়ে যেন ধীরে ধীরে পাহাড়ে উঠেছে৷ অদ্ভুত সুন্দর, সবুজ দৃশ্য। নির্জন মোবাইল বের করে সেল্ফি ক্যামেরায় ছবি তুললো একটা। নুসরাত তাদের নিয়ে গেল একটা সরু রাস্তা দিয়ে। দুইপাশে চা গাছ। হেঁটে হেঁটে তারা একটি পাহাড়ে এসে উঠলো। এই জনপদ প্রায় জেগে উঠতে শুরু করেছে। পাখিরা ডাকছে। পাহাড়ের ওপর থেকে চারপাশে চা গাছ দেখতে দারুণ লাগছে। পাহাড়টি অনেক বড়ো। পাহাড়ের ওপরেই আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য টিলা। নুসরাত একটু দূরে চলে গেছে। তরুকে নীরব দেখে নির্জন ফিসফিস করে বললো, ‘আমাকে আর নুসরাতকে একটু একান্তে কথা বলতে দাও।’
তরু ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘আমি কি করতে পারি?’
– ‘ওই টিলার পেছনে গিয়ে বসো।’
‘ওকে’ বলে তরু হন-হন করে হেঁটে চলে গেল। নুসরাত ‘হা’ করে তাকিয়ে নির্জনকে বললো, ‘ও কই যায়।’
নির্জন ঠোঁট উলটে বললো, ‘কি জানি, আচ্ছা আপনি এখানে বসুন আমি গিয়ে দেখি কি হয়েছে।’
নুসরাত মাথা নাড়লো। নির্জন আস্তে-আস্তে হেঁটে টিলার কাছে গিয়ে দেখে তরু বসে আছে সামনে তাকিয়ে৷ সেখান থেকেও চা বাগান দেখা যাচ্ছে। নির্জন ওর পাশে গিয়ে বসলো। তরু অন্যদিকে তাকিয়ে বললো, ‘আপনি আসলেন যে।’
– ‘একান্তে তো আমি শুধু একজনকেই চাই ম্যাডাম।’
তরু কোনো জবাব না দিয়ে তাকিয়ে রইল উত্তরের দিকে। যেদিকে একটি কোকিল কুহু কুহু করে কোথাও উড়ে যাচ্ছে।
– ‘তাকাবে না এদিকে?’
তরু তাও কোনো জবাব দিল না৷ নির্জন গাঢ় আবেগমাখা গলায় বললো, ‘আমি তোমার হাতটা একটু ধরে বসতে পারি তরু? যে হাতের নখগুলো লম্বা।’
____চলবে……