ঝগড়া,পর্ব_৫

ঝগড়া,পর্ব_৫
বিন্দু মালীনি

বসে আছি বউ সেজে এক ধ্যানে,
আর হঠাৎ দরজার দিকে চোখ যেতেই আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম।

_আম্মুউউউউউ

আর সবাই আমার দিকে তেড়ে আসলো।ভয় পেয়ে গিয়েছে সবাই আমার চিৎকার শুনে।

আসলে আম্মু বলে চিৎকার দেয়ার কারণ টা হচ্ছে,

আমার আম্মু আর বোন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।আর আমি ওদের দেখে অবাক হয়ে চিৎকার দিয়ে ফেলি।

খুশির যেন অন্ত নেই আমার।আমার আম্মু এসেছে।

আমি আম্মু আর আমার বোনকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।

_আম্মু তুমি এসেছো?
_এলাম তো,না এসে কি পারা যায়?
আমার আদুরী মেয়েটার বিয়ে বলে কথা।

_কিভাবে এলে তুমি?বাসা চিনলে কি করে?
_ওই যে,আমার ছেলে আমাকে নিয়ে এসেছে।
ছেলে সাথে থাকলে কি আর বাসা চিনতে হয়?

_ছেলে?

আমি তাকিয়ে দেখি আম্মু রণকে দেখিয়ে দিচ্ছে ইশারায়।

_তুমি নিয়ে এসেছো?

_তোমার কি মনে হয়?আমি এতটাই খারাপ যে আমার খুশির জন্য আমি একজন মা একজন বাবা আর এক জন বোনের শখ,আনন্দ মাটি করবো?

আমি যেমন তোমাকে ভালবাসি,তেমনি তারা তোমাকে আমার থেকেও হয়তো বেশিই ভালবাসেন।তাদের কিভাবে কষ্ট দেই বলো?

_থ্যাংক ইউ রণ থ্যাংক ইউ সো মাচ।
কিন্তু আব্বুকে কিভাবে?

_ভিডিও কল দিবো বিয়ের সময়।
তুমি চিন্তা করোনা।

আজ আমার খুশি দেখে কে।
রণ আমাকে এমন সারপ্রাইজ দিবে তা আমি কল্পনাও করিনি।

কিন্তু আম্মুকে ও পটালো কি করে সেটাই ভাবছি।

কিছু ক্ষণ পর সবার উপস্থিতিতে আমার আর রণর বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয়েই গেলো।
আমি তিন কবুল পড়ে আর সাইন করে ওকে স্বামী হিসেবে মেনে নিলাম।
আব্বুকেও রণ ভিডিও কল দিয়েছিলো।
আব্বুও আমাদের দোয়া করেছেন।

আব্বুকে আম্মু আর আমার বোনটাই ম্যানেজ করেছে।

বাবা তো,শেষমেস মেনেই নিলো।
এদিকে মা আমার আম্মুকে পেয়ে খুব খুশি।সবাই মিলে খুব গল্প করছে।

এদিকে রণর ভাবী,আমার বোন,রণর আপু সবাই মিলে বাসর ঘর সাজাচ্ছে।

আমি আম্মু আর মায়ের সাথে বসে আছি।

রণ ইশারায় বার বার আমাকে ওর কাছে যেতে ডাকছে।

কিন্তু আমি যাচ্ছিনা।

রাত হয়ে গেছে।
মা আম্মুকে আর আমার বোনকে যেতে দেন নি।
সবাই মিলে আমরা রাতের খাবার খেলাম।

খাওয়া দাওয়া শেষে কিছু ক্ষণ কথা বললাম সবার সাথে।
একটু পরেই দেখি রণ ইশারায় ভাবীকে কি যেন বলছে,

ভাবী এসেই আমাকে বল্লো,চলো চলো অনেক রাত হয়েছে।
তোমাকে তোমাদের রুমে দিয়ে আসি।

_ভাবী আরেকটু পরে যাই না।

_না না,এখনই চলো।

ভাবী আমাকে ধরে নিয়ে গেলেন রণর রুমে।যেই রুম টা আজ থেকে আমারো।
রণ আর আমার দুজনের।

আমি ভীষণ লজ্জা ভয় আর সংকোচে ফুলে সাজানো খাট টাতে বসলাম।

ভাবী আমাকে রেখে চলে গেলেন।

আর যাওয়ার আগে বলে গেলেন,

_আজ তোমাদের বাসর রাত।জীবনের সব থেকে মধুর রাত।
আজ কিন্তু ঝগড়া করোনা।

আমি শুধু মুচকি একটা হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালাম।

আমি বসে আছি।

এদিকে রণ এসে সোজা খাটের কাছে এসে আমার হাত ধরে টান দিয়ে খাট থেকে নিচে নামালো।

_একি?এভাবে টানছো কেন?

আমার কথার কোন উত্তর না দিয়েই রণ আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

_তুমি জানোনা কলিজা,আজ আমি কত হ্যাপি।উফ ফাইনালি আমি সাক্সেস।

আমি লজ্জা পেয়ে রণকে বললাম,
হয়েছে এবার ছাড়ো।

_আচ্ছা ছাড়লাম,তবে এর পর যখন ধরবো তখন কিন্তু আর ছাড়বোনা।

_যাও সরো। ফাজিল কোথাকার।

_আচ্ছা বলোতো, বাসর ঘরটা সাজানো কেমন হয়েছে?
অনেক সুন্দর না?
_গাদা ফুল আর গোলাপ ফুল।উফফ কি জোশ না?

_ঘোড়ার ডিমের জোশ।আমি না বলেছিলাম আমাদের বাসর ঘর হবে রজনী গন্ধা দিয়ে আর গোলাপ দিয়ে?

এত তাড়াতাড়ি তুই ভুলে গেলি?

কার পছন্দের ফুল গাদা?সত্যি করে বল।
নইলে কিন্তু খবর আছে বলে দিলাম।

_ওই মিসেস,কোন রকম তেজ না,ওকে?এখন কিন্তু তুই আমার বিয়ে করা বউ।ঝগড়া করলে মেরে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে ফেলবো।

_তুমি বাসর রাতে আমার সাথে ঝগড়া করবা কলিজা?তুমি আমাকে মারতে চাইলা?

_ওই ঝগড়া কে শুরু করলো শুনি?

আমি রজনী গন্ধা দিয়ে বাসর ঘর সাজাইনি বলে আমার দোষ হয়ে গেছে।

তুই যে আমাকে বিয়েই করতে চাস নি,ওটা কি দোষ না?

বিয়েটা করলো কে?
এই আমি করেছি আমি।
নইলে তো এখন অন্যের ঘরে বোয়ার হালে থাকতি।
আমি রাণীর হালে রাখছি তো তাই বাতাস পাচ্ছোনা।

আমি কোন কিছু না বলে সোজা রণকে জড়িয়ে ধরলাম।
কারণ ওকে জড়িয়ে না ধরলে এখন আর ওর রাগ কম্বেনা এটা আমি ভালো করেই জানি।

_লাভ ইউ রণ।
লাভ ইউ।

_লাভ ইউ টু কলিজা,লাভ ইউ টু।

রণ ভুলে গেছে এক নিমিষেই ওর সকল রাগ।
আর জড়িয়ে নিয়েছে আমায় ওর বাহুডোরে।
আর পূর্ণতা দিয়েছে আমাদের ভালবাসার।

সকাল হতেই বিছানা থেকে উঠতে যাবো,আর রণ আমাকে এক টানে ওর কাছে নিয়ে নেয়।

কপালে ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়।

আমি ওর দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না।

ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেই চলে গেলাম আমি ওয়াশ রুমে।

ফ্রেশ হয়ে বেড়ুতেই দেখি রণ ফুলে আছে।

_কি হয়েছে?ওমন পেঁচার মত মুখ করে আছে কেন আমার রণ?

_ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো কেন আমায় মিসেস রণ?

_হি হি হি।
থাকো তুমি মুখ ভাড় করে,আমি গেলাম।

বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখি হল রুমে সবাই বসে আছে আমাদের জন্য।

আমরা এলেই নাস্তা করবে।

আমি সবার সাথে গিয়ে বসলাম।

কিছু ক্ষণ পর রণও এলো।

আমরা সবাই এক সাথে নাস্তা করলাম।

নাস্তা করা হয়ে গেলে আমি আম্মুকে আর আমার বোনকে নিয়ে আমাদের পুরো বাসা দেখাতে বের হলাম।

আসলে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে,
সেই দিনের রহস্য টা জানা,

কিভাবে রণ আম্মুকে বশে আনলো।
আর কি হয়েছিলো সেদিন আমি অজ্ঞান হয়ে যাবার পর,
যে রণ আমাকে খুব সহজেই ওর সাথে করে আমাকে বাসে করে নিয়ে আসতে পারলো।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here