হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২১) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৫২)
তরুনিমা নিলাদ্রের স্মার্ট ওয়াচ থেকে বের করা সিম কার্ড ও মেমোরি কার্ড নিজের ফোনে সেট করার পর কিছুসময় ঘাটাঘাটি করে বোঝার চেষ্টা করে যে নিলাদ্রের আজ এই ক*রু*ণ অবস্থা হওয়ার পিছনে আদেও কোনো ষ*ড়*য*ন্ত্র কাজ করেছে নাকি এটা নিছকই এ*ক্সি*ডেন্ট মাত্র। কিছুসময় ঘাটাঘাটি করার পর তরুনিমা একটি রেকর্ড হওয়া ভিডিও ওর গ্যলারিতে দেখতে পায়। তরুনিমা ১ম ভিডিওটি প্লে করতেই দেখে নিলাদ্র কোনো একটা রুমে বসে আছে। পরক্ষণেই তরুনিমা ডাক্তার খালেকুজ্জামানকেও দেখতে পায় সেই রুমে। তরু নিজের ফোনের ভলিউম কিছুটা বাড়িয়ে ওদের মাঝে হওয়া কথপোকথন গুলো শুনতে শুরু করে। ওদের মাঝের সম্পূর্ণ কথপোকথন গুলো শোনামাত্র তরু যেনো বড়-সড় একটা ধা*ক্কা খায়।
তরু ওর চেহারায় স্ত*ব্ধ ভাব ফুটিয়ে বললো…..

—“বড় বাবার এই দীর্ঘ সময় যাবৎ কো*মায় থাকার পিছনে চৌধুরী পরিবারেরই কারোর ষ*ড়*য*ন্ত্র কাজ করছে! কিন্তু কে বা কারা সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ? নিলাদ্র ভাইয়াকে ডাক্তার আঙ্কেল তার নিজ বাসায়ই যাওয়ার পরেই বা কেনো সব সত্য ঘটনা জানাতে চাইলেন? তবে কি ডাক্তার আঙ্কেলের বাসায় যাওয়ার পর নিলাদ্র ভাইয়া সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা জানতে পেরেছেন জন্যই তাকে মে*রে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে! যদি সত্যিই এমনটা ঘটে থাকে তাহলে তো নিলাদ্র ভাইয়া এখনও বেঁচে আছেন এই খবর চৌধুরী পরিবারের আর কোনো সদস্যের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে দেওয়া যাবে না। কে ভালো আর কে মু*খো*শ*ধারী শ*ত্রু সেটা তো আমি জানি না। তাই কাওকেই বিশ্বাস করা উচিত হবে না আমাদের। আমাকে এক্ষুণি কুশলকে এই বিষয় সম্পর্কে জানাতে হবে।”

এই বলে তরুনিমা বসাবস্থা থেকে উঠে দ্রুতপায়ে নামাজঘরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কিছুসময় পর নামাজঘরের সামনে আসতেই দেখে কুশল সেখানে হাঁটুতে মুখ গু*জে বসে আছে। তরু নামাজঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়েই চিন্তা করে…..

—“না, না এখুনি ওনাকে এসব সম্পর্কে জানানো উচিত হবে না। নিলাদ্র ভাইয়ার অবস্থা নিয়ে উনি এমনিতেই অনেক বেশি আপসেট হয়ে আছেন। এখন যদি নিজের পরিবার সম্পর্কে এসব কিছু শুনেন তাহলে রাগের বশে বিপরীত কিছু করে ফেলতে পারেন। তখন শ*ত্রু*রাও সতর্ক হয়ে যাবে আর নিলাদ্র ভাইয়া সহ বাকি ভালো মানুষগুলোর জীবন ও ঝুঁ*কি*র মাঝে পড়বে৷ আগে নিলাদ্র ভাইয়ার অপারেশন সাকসেসফুল হোক। তারপর যেকোনো একটা ব্যবস্থা করাই যাবে।”

তরুনিমা এই বলে নিজের মনকে আশ্বস্ত করে। অতঃপর লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে পায়ের জুতো খুলে নামাজ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে কুশলের পাশে এসে হাঁটু ভাজ করে বসে ওর বাম কাঁধে নিজের ডান হাত রাখে। কুশল মাথা তুলে তরুর দিকে শীতল দৃষ্টি স্থির করে। তরু কুশলের দিকে তাকাতেই দেখে কুশলের চোখ এখনও হালকা লাল হয়ে আছে। তরু শান্ত স্বরে বললো…

—“বাহিরে চলুন। এখানে বি*ষ*ন্ন মন নিয়ে আর কতো সময় বসে থাকবেন! মনকে শক্ত ও স্থির করার চেষ্টা করুন। ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর, তিনি আপনার আকুল কন্ঠের করা প্রার্থনা ফিরাতে পারবেন না দেখিয়েন। নিলাদ্র ভাইয়া ইনশাআল্লাহ পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

কুশল একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। তরুও বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর দু’জনেই নামাজঘর থেকে বেড় হয়৷ তরু কুশলকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে এসে সেখানে রাখা চেয়ারে বসে।

কিছুসময় নিরব হয়ে বসে থাকার পর কুশল তরুকে বললো….
—“তুমি একটু বাসায় আর নিলাদ্রের বাবা-মাকে ওর অবস্থার কথা জানিয়ে দাও। এই কাজ আমি করতে পারবো না।”

তরু দ্রুততার স্বরে বললো…
—“না, না এখন নিলাদ্র ভাইয়ার অবস্থার কথা কাওকে জানানো যাবে না।”

কুশল ভ্রু যুগল কুঁচকে নিয়ে তরুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো….
—“জানানো যাবে না কেনো? কি সমস্যা?”

তরু আমতা আমতা করে বললো….
—“নিলাদ্র ভাইয়ার অবস্থা তো ভালো না শুনলেন ই। এই মুহূর্তে যদি আঙ্কেল-আন্টি বা আমাদের বাসার কাওকে ওনার এমন ক*রু*ণ অবস্থা সম্পর্কে জানাই তাহলে ওনারা অনেক বেশি চি*ন্তা করবেন। আন্টি আবার ভাইয়ার কথা চিন্তা করে কান্নাকাটি করে শরীর খারাপ করে ফেলতে পারেন। তাই ভাইয়া আগে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠুক তারপর সবাইকে ধীরস্থিরে ওনার এ*ক্সি*ডে*ন্টের বিষয় টা জানানো যাবে।”

—“তখন আর না জানিয়েই বা কি হবে? তখন জানালে তো আমাকে কথা শোনাবেন ওনারা যে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো আর আমি তাদের সেই সম্পর্কে কিছু জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলাম না।”

—“তাহলে তো আরো ভালো। কাওকে জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।”

কুশল তরুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“তুমি কি আমার কাছে কোনো বিষয় লুকাচ্ছো?”

কুশলের এমন প্রশ্নে তরু ভ*র*কে যায়। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো….
—“না, কি লুকাতে যাবো? আচ্ছা আপনি এখানে বসুন আমি একটু রিসেপশনের ওখান থেকে আসছি। কোনো প্রয়োজন পড়ে কি না দেখি।”

—“ঠিক আছে।”

তরু বসাবস্থা থেকে উঠে স্থান ত্যগ করে। তরু চলে যেতেই কুশল দেখে ওর পাশের চেয়ারে তরুর মোবাইল আর নিলাদ্রের ভাঙা ঘড়িটা দেখতে পায়। অতঃপর কুশল তরুর ফোন হাতে নিতেই দেখে একটা ভিডিও স্টপ করে রাখা সেখানে নিলাদ্রের ছবি দেখা যাচ্ছে। কুশল ভিডিওটা প্লে করে। পুরো ভিডিও দেখে নিলাদ্র আর খালেকুজ্জামানের কথপোকথন শোনার পর রাগে কুশলের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে। সেইসময় তরুনিমা আবারও সেখানে এসে নিজের ফোনটা খুঁজতে শুরু করে। কুশল তরুর দিকে ওর ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো…

—“এটা খুঁজছো নিশ্চয়ই!”

তরু কুশলের হাতে নিজের ফোনটা দেখামাত্র বুঝতে পারে যেটার ভ*য় ছিলো সেটাই হবে এবার। কুশল শান্ত কন্ঠে বললো….
—“এতো বড় একটা বিষয় জেনেও আমার থেকে লুকানোর কারণ কি তরুনিমা?”

তরুনিমা কুশলের পাশে বসে বললো….
—“আমি সবার ভালোর কথা চিন্তা করেই সত্যটা লুকাইতে চেয়েছিলাম।”

—“সব বিষয়ে বেশি বুদ্ধি খাটানো উচিত না। তুমি বা আমি কেও ই জানি না আসল শ*ত্রু কে বা কারা। নিলাদ্রের অবস্থা দেখেও তোমার বোঝা উচিত ছিলো আমাকে সব সত্য জানিয়ে দেওয়া। এখন যদি আমি তোমার ফোনটা হাতে না নিতাম এই ভিডিওটা না দেখতাম তাহলে তো জানতেই পারতাম না আমার পরিবারেই এমন কোনো মু*খো*শ*ধা*রী আছে যে নিজের স্বা*র্থ হা*সিল করতে যেকোনো ধরনের নিচ পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারে।”

—“আপনি রাগের বশে যদি এমন কোনো কাজ করে ফেলেন যার ফলে নিলাদ্র ভাইয়ার কোনো ক্ষ*তি হয়ে যায় সেই ভ*য়ে আমি আপনাকে জানাতে চাই না।”

—“আমি আমার নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে জানি। কোন পরিস্থিতিতে কেমন ভাবে চলা উচিত, কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত তাও আমি খুব ভালো ভাবেই জানি। আমাকে না জানিয়ে অতিরিক্ত বুদ্ধি খাঁটিয়ে কোনো কাজ করতে যাওয়া যেনো না হয়। যদি এমনটা করার ফলে কোনো স*ম*স্যার সৃষ্টি হয় তখন সেই পরিস্থিতি সামলাতে আমি যাবো না।”

কুশলের কথাগুলো শুনে তরু চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বললো….

—“সুযোগ পেলেই নিজের ঢো*ল নিজে পি*টা*তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এই খা*রু*শটা।”

সেইসময় ও.টির দরজার উপর জলন্ত বাতিটা নি*ভে যায়। ও.টির দরজা খুলে ডাক্তার আকরাম বাহিরে বেড়িয়ে আসেন। কুশল আর তরু বসাবস্থা থেকে উঠে ডাক্তার আকরাম এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

(৫৩)
নিজেদের ঘরে কামিনী আর রিজভী বিছানায় বসে আছে। সেইসময় কামিনী নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে রিজভীকে বললেন…

—“আর কতোকাল তোমার নিজের ভাই-ভাবীর গোলাম হয়ে জীবন কাটাতে হবে আমাদের? তোমার ছেলে যে বড় হয়েছে, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কি কোনো চিন্তা-ভাবনা করেছো তুমি?”

চলবে ইনশাআল্লাহ………….

(বি-দ্রঃ আমি ভিষণ অ*সু*স্থ বোধ করছি বিগত ৫দিন যাবৎ পারিবারিক কিছু ঝা*মে*লার কারণে আমি মানসিক ও শারিরীক ভাবে ভালো নেই। তাই গল্প লেখতে পারছি না ঠিক ভাবে। মাঝেমধ্যে যদি গল্প দিতে দেড়ি হয় দয়াকরে কেও বি*র*ক্ত হবেন না। আমার সব স*ম*স্যা গুলো যেনো দ্রুত সমাধান হয়ে যায় তার জন্য দোয়া করবেন সবাই। ভু*ল ত্রু*টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ, আসসালামু আলাইকুম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here