হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৪) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২৯)
নাস্তার পর্ব শেষ করে সকলেই নিজ নিজ কাজে চলে যায়। ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে নিলাদ্র, রিজভী আর কামিনী। সেইসময় সন্ধ্যা ওদের পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে যেতে নিলে নিলাদ্র শান্ত স্বরে বললো…

—“সন্ধ্যা তোর রুম থেকে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে আয় তো। চাচ্চুর হাতের ক্ষ*ত স্থান পরিষ্কার করে দিতে হবে।”

নিলাদ্রের কথানুযায়ী সন্ধ্যা নিজের রুমে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্সটি নিয়ে আবারও ড্রয়িংরুমে এসে নিলাদ্রের দিকে বাড়িয়ে দেয়। রিজভী আর কামিনীর চোখের আড়ালে নিলাদ্র সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে একবার চোখ টিপ দিয়ে ওর হাত থেকে বক্সটা নিয়ে নেয়। সন্ধ্যা নিলাদ্রের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরবিরিয়ে বললো…..

—“অ*স*ভ্য কোথাকার।”

এই বলে সন্ধ্যা স্থান ত্যগ করে। নিলাদ্র রিজভীর ক্ষ*ত স্থান পরিষ্কার করে দেওয়ার বাহানায় ওর ক্ষ*ত থেকে সামান্য পরিমাণ র*ক্ত সংগ্রহ করে নেয়। এরপর রিজভীর ক্ষ*ত স্থানে ব্য*ন্ডে*জ করে দিয়ে ব্য*থা কমার জন্য কি ঔষধ খেতে হবে সেটাও সাজেস্ট করে দেয়। রিজভী আর কামিনী সোফা ছেড়ে উঠে নিজেদের রুমে চলে যায়। নিলাদ্র রিজভীর ক্ষ*ত থেকে সংগৃহীত র*ক্ত নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে আগের সংগৃহীত রক্তের সাথে পরীক্ষা করতে শুরু করে।

পরীক্ষা পর্ব শেষ হলে নিলাদ্র দেখে রিজভীর র*ক্তের গ্রুপের সাথে তালা থেকে সংগৃহীত র*ক্তের গ্রুপ মিলছে না। দুইটা র*ক্ত দু’জন আলাদা ব্যক্তির হওয়ায় নিলাদ্রের চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। নিলাদ্র মনে মনে বললো….

—“যদি সেই অজানা শ*ত্রু রিজভী চাচ্চু না হয় তাহলে কে সে? মাঝরাতে এতো এতো সিকিউরিটি গার্ডদের চোখ ফাঁ*কি দিয়ে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে বাহিরের কেও ঢোকার সাহস করবে না। তাহলে সরষের মাঝে ভূ*ত*টা আসলে কে?”

(৩০)
বিকেল বেলা ছাদে রেলিং ধরে খোলা আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে কুশলের পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাদিক। সেই সময় সন্ধ্যা এক মগ কফি হাতে নিয়ে ছাদে প্রবেশ করতেই সাদিককে সেখানে দেখে কিছুটা অবাক হয়। সাদিকের থেকে কিছুটা দূরে সন্ধ্যা দোলনার উপর এক হাঁটু ভাজ করে বসে কফির মগে একবার চুমুক দিয়ে শান্ত স্বরে সাদিককে প্রশ্ন করলো….

—“কি ব্যপার সাদিক ভাই আজ হঠাৎ ছাদে এসে উদাসীন মুখশ্রী নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন যে?”

সাদিক নিজের ধ্যনে মগ্ন থাকায় সন্ধ্যার উপস্থিতি এতো সময় বুঝতে পারে নি। তাই হঠাৎ সন্ধ্যার কন্ঠ কর্ণপাত হতেই সাদিক কিছুটা চমকে উঠে। সাথে সাথেই সাদিক নিজেকে সামলে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওর উপর শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….

—“জানেন ম্যডাম….আমি নামক এই মানুষটা কারোর জীবনে কখনও এতোটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারি নি যে আমারে হা*রি*য়ে ফেলার জন্য কারোর মনে ভ*য় কাজ করবে কিংবা আমারে হারিয়ে ফেললে কেও আফসোস করবে। আমারে ছাড়া এই দুনিয়ার সকল মানুষ খুব সুন্দর ভাবে নিজেদের জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।”

সাদিকের মুখে এমন কথা শুনে সন্ধ্যা অবাক স্বরে বললো…
—“এমন মনে হওয়ার কারণ কি জানতে পারি সাদিক ভাই?”

—“কয়েকবছর ধরে আমি একজন মেয়েকে অনেক ভালোবাইসা ফেলেছি। কিন্তু তারে নিজের ভালোবাসার কথা জানানোর সাহস কখনও করে উঠতে পারি নি। কিছুদিন আগে জানতে পারলাম আমার ভালোবাসার মানুষটিরও অন্য একজন ভালোবাসার মানুষ আছে। বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলার পর তারে নিয়ে জীবনে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলাম কিন্তু স্বপ্নগুলো সত্যি হওয়ার আগেই সব ভে*ঙে চু*ড়ে একাকার হয়ে গেলো। তাই আজ নিজেকে ভিষণ একা মনে হচ্ছে। যেদিকেই তাকাচ্ছি নিজের ছায়া ব্যতিত কাওকে দেখতে পারছি না।”

—“ভালোবাসার মানুষটির কাছে সময় থাকতেই নিজের মনের অনুভূতিগুলোর বহিঃপ্রকাশ করতে হয় নয়তো একটা সময় তাকে হারিয়ে ফেলতে হয়। ভালোবাসা কোনো অ*ন্যা*য় বা পা*প না তাই নিজের অনুভূতিগুলো তাকে জানিয়ে দেওয়ার পর তার রিয়েকশন কেমন হবে তা অগ্রীম ভেবে ভ*য় পাওয়াটা বো*কা*মী ছাড়া কিছুই না।”

সাদিক তৎক্ষণাৎ উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আকাশের উপর দৃষ্টি স্থির করে দীর্ঘশ্বাস ভরা কন্ঠো বললো….

—“আমি যে বড্ড দেড়ি করে ফেললাম ম্যডাম। এখন আর সম্ভব না তার নিকট নিজের ভালোবাসার অনুভূতি
গুলোর বহিঃপ্রকাশ করা। আর আমার জীবনের সবথেকে ক*ষ্ট*কর ও য*ন্ত্র*ণা দায়ক মুহূর্ত এটাই হবে যখন আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবব্ধ হতে দেখবো। আমি আমার ভু*লে*র কারণে যেই য*ন্ত্র*ণার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি আপনি সেই ভু*ল কখনও করিয়েন না ম্যডাম। যদি কাওকে ভালোবাইসা থাকেন তাহলে সময় থাকতেই তার নিকট আপনার মনের অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ করে দিয়েন৷ কারণ ভালোবাসার মানুষটিকে মনের অনুভূতি গুলো জানিয়ে দেওয়ার পর তার মনে ঘৃ*ণার জায়গা নিয়ে থাকা এতোটা ক*ষ্ট*কর হয় না যতোটা ক*ষ্ট*কর হয় তার নিকট মনের অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ না করে আফসোসের সাথে প্রতিটা নিঃশ্বাস ফেলা।”

এই বলে সাদিক আর একমুহূর্ত ছাদে দাঁড়ায় না। সন্ধ্যাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে ছাদ ত্যগ করে নিচে চলে যায়। সন্ধ্যা নিজের দৃষ্টি ছাদের মেঝেতে স্থির করে রেখে সাদিকের বলে যাওয়া শেষ কথা গুলো ভাবে।

(৩১)
ড্রয়িংরুমে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে নিলাদ্র। সেইসময় ২জন গার্ড সায়মনকে ধরে মূল দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। নিলাদ্র সায়মনের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে সায়মনের মাথায়, হাতে, পায়ে ব্য*ন্ডে*জ করা। নিলাদ্র সোফা ছেড়ে উঠে সায়মনের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললো….

—“মেজো চাচ্চু আপনার এমন অবস্থা হলো কি করে?”

গার্ডরা সায়মনকে সাবধানে সোফায় বসিয়ে দিতেই সায়মন ইশারায় তাদের চলে যেতে বলে। নিলাদ্র সায়মনের দিকে তাকিয়ে আছে নিজের প্রশ্নের উত্তর শোনার জন্য। কিছুসময় নিরব থাকার পর সায়মন শান্ত স্বরে নিলাদ্রকে বললেন….

—“ব্যবসার কাজে আজ একটু নির্জন সাইডে একটা জমি দেখতে গিয়েছিলাম সেখানেই আমাদের বংশের চির শ*ত্রু মতিউর খানের ছোট ছেলে মুবিন খান তার গার্ডদের নিয়ে আমার উপর এ্যা*টা*ক করার চেষ্টা করেছিলো। সেইসময়ই আমি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আ*ঘা*ত পেয়েছিলাম। এরপর আমার বন্ধুর চেম্বারে গিয়ে ক্ষ*ত স্থান গুলোতে ড্রে*সিং করে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। আর হ্যা, এই বিষয়ে কাওকে কিছু বলো না। কুশলকেও বলো না। জানোই তো কুশলের কেমন উ*গ্র মেজাজ। রাগের বশে খারাপ কিছু করে ফেলতে পারে।”

—“কিন্তু মেজো চাচ্চু এভাবে খানরা আপনার উপর এ্যা*টা*ক করলো এটা তো কোনো সামান্য বিষয় না। ওদের করা অ*ন্যা*য়ে*র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলে ওরা আরো সুযোগ পেয়ে বসবে। আজ আপনার উপর এ্যা*টা*ক করার সাহস দেখিয়েছে কালকে বাড়ির অন্য সদস্যের উপর ও এ্যা*টা*ক করতে পারে।”

সায়মন সোফা ছেড়ে উঠে বললো….
—“তোমাকে নিষেধ করেছি কাওকে এই বিষয়ে জানাবে না তাই এতো বেশি চিন্তা-ভাবনা না করে আমার নিষেধ মান্য করিও।”

এই বলে সায়মন খু*ড়ি*য়ে খু*ড়ি*য়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করে৷ কিছুসময় পর সায়মন নিজের রুমে না গিয়ে পাশের ফাঁকা রুমে এসে রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে হাঁটতে বিছানায় গিয়ে বসে পায়ের, মাথার ও হাতের ব্য*ন্ডে*জ গুলো খুলে ফেলে। অদ্ভুত বিষয় হলো সায়মন এর পায়ে, হাতে বা মাথায় কোনো ক্ষ*তে*র চিহ্ন ছিলো না। সায়মন স্বশব্দে হেসে উঠে বিছানায় নিজের শরীর এলিয়ে দেয়।

(৩২)
কুশল মূল দরজা দিয়ে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে প্রবেশ করতেই নিলাদ্রকে সোফার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে বললো….

—“কি রে এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস তুই?”

কুশলের প্রশ্নে নিলাদ্রের ধ্য*ন ভা*ঙে। নিলাদ্র কুশলের কাছে সম্পূর্ণ বিষয়টা লুকিয়ে বললো….

—“এমনিই দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিছু করছি না।”

কুশল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে নিলাদ্রের দিকে তাকায়। নিলাদ্র কুশলকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে নিজেই প্রশ্ন করলো….
—“ভাবী শারীরিক অবস্থা এখন কেমন, দোস্ত?”

—“শরীর দূর্বল আছে। ক্ষ*ত*টা যথেষ্ট গভীর হওয়ায় সারতে সময় লাগবে।”

—“তুই বাহির থেকে আসলি তাহলে ভাবীর কাছে কে আছে?”

—“২জন মহিলা সার্ভেন্টকে সর্বক্ষণ ওর খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়েই বাহিরে গিয়েছিলাম। আমি না থাকাকালীন বড় বাবার রুমে তালা দিয়ে রাখার বিষয় নিয়ে তোর সামনে কেও কিছু বলেছিলেন কি?”

—“না কেও কিছু বলে নি। বড় বাবার ব্লা*ড স্যম্পল নিয়ে আজ রাতে আমি একটু আমার ক্লিনিকে যাবো। তারপর ব্লা*ড এর ২টা পরীক্ষা করতে হবে। রিপোর্ট দেখার পর বড় বাবার ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারবো।”

—“ঠিক আছে।”

এই বলে কুশল সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। নিলাদ্রও ওর রুমে চলে যায়।

(৩৩)
কুশল রুমে প্রবেশ করতেই দেখে তরুনিমা বিছানায় শুয়ে চিপস খাচ্ছে আর সামনের দেওয়ালে টাঙানো টিভিতে কার্টুন দেখছে। কুশল বিছানার পাশের সোফায় গিয়ে বসে শান্ত স্বরে বললো…

—“কিছুদিন পর আমাদের বাচ্চারা কার্টুন দেখার জন্য তোমার কাছে বায়না করবে আর তুমি কি না নিজেই এখনও কার্টুন দেখো?”

তরুনিমা টিভির উপর দৃষ্টি স্থির রেখেই আনমনে বললো….
—“বাচ্চারা যখন কার্টুন দেখার জন্য বায়না করবে তখন বাচ্চাদের সাথে বসে বাচ্চার মাও যেনো কার্টুন দেখে সময়টাকে ইন্ঞ্জয় করতে পারে তার জন্য তো অভ্যাস রাখতে হবে।”

তরুর কথায় কুশল ওর ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে। পরক্ষণেই তরু বুঝতে পারে সে আনমনেই কুশলকে কি বলে ফেলেছে। তাই সাথে সাথেই তরু রিমোট দিয়ে টিভি বন্ধ করে লজ্জায় কম্বলের নিচে নিজের মুখ লুকিয়ে ফেলে। কুশল তরুর লজ্জা পাওয়ার বিষয়টা বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here