হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৩) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৩)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২৬)
ভোর ৫টার পর পরই নিলাদ্রের ঘুম ভেঙে গেলে সে জগিং করার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হয়। ড্রয়িংরুমের পাশেই রায়হানুলের রুম সেখান থেকে সোজা ভিতরের দিকে আরো ৪টা রুম পর গেস্টদের থাকার জন্য রুম আছে। নিলাদ্র সেখানেই ঘুমিয়েছিলো রাতে৷ নিলাদ্র রায়হানুলের রুম পেরিয়ে সামনের দিকে কিছুটা পথ অগ্রসর হতেই থেমে যায়। সাথে সাথেই পিছনের দিকে পিছিয়ে রায়হানুলের রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দরজার তালায় জমাট বেঁধে থাকা র*ক্ত গুলো নিলাদ্র স্পষ্ট দেখতে পায়। নিলাদ্র নিজের ভ্রু যুগল কুঁচকে নিয়ে বললো….

—“বড় বাবার রুমের তালার উপর র*ক্ত কোথায় থেকে আসলো?”

সেইসময় মেঝেতে জমাট বাঁধা ফোটা ফোটা রক্ত গুলোও নিলাদ্রের চোখে পরে। নিলাদ্র নিজের চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে তুলে বললো….

—“তবে কি কুশলের ধারণাই ঠিক! আমাদের আশেপাশেই এমন কেও আছে যে চায় না বড় বাবা সুস্থ হয়ে উঠুক! আমার ধারণানুযায়ী হয়তো মাঝরাতে কেও বড় বাবার রুমে এসে তার শরীরে এমন ধরণের কোনো কড়া ডোজের ঔষধ ইনজেক্ট করে দেয় যা বড় বাবার সুস্থ হওয়ার পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। হয়তো গতকালও একই উদ্দেশ্য নিয়েই বড় বাবার রুমের সামনে এসেছিলেন সেই অজানা শত্রু। কিন্তু রুমের দরজায় তালা লাগানো থাকায় নিজের কাজে সফল হতে পারেন নি। তাই রাগের বশেই তালার উপর নিজের শরীরের কোনো অংশ দিয়ে আ*ঘা*ত করে ফেলেছিলেন। আর নিজের ক্ষ*ত স্থানের র*ক্ত যে দরজার তালায় এবং মেঝেতে রয়ে গিয়েছে তা সে খেয়াল করে নি। অজানা শত্রুটি তো বড্ড বো*কামী করে ফেলেছেন। এবার এই বো*কা*মীকেই তার জীবনের কা*ল বানাতে হবে।”

এই বলে নিলাদ্র তালায় লেগে থাকা র*ক্ত থেকে কিছু র*ক্ত নিজের সাথে সংরক্ষণ করে রাখে। আর জায়গায় জায়গায় লেগে থাকা বাকি র*ক্ত গুলো ভিজা কাপড় দিয়ে খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ফেলে।

(২৭)
সকালবেলা……
তরুনিমার আগে ঘুম ভে*ঙে যাওয়ায় সে চোখ মেলতেই দেখে সে কুশলের ডান হাত জড়িয়ে শুয়ে আছে। আর কুশল একদম কর্ণারে বিছানার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসাবস্থাতেই ঘুমিয়ে আছে। তরুর আবছা আবছা মনে পড়ে গতরাতে জ্বর আসায় কুশলের তার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দেওয়া, ঔষধ খাইয়ে দেওয়ার ঘটনাগুলো। তরু কুশলের হাত ছেড়ে দিয়ে সাবধানে শোয়াবস্থা থেকে উঠতে নেয় কিন্তু জ্বর সেরে যাওয়ার পর শরীর দূর্বল থাকায় সে কুশলের দিকে হেলে পরে যায়। নিজের শরীরের নিচে মাথার চুল টানা পড়ায় মুখ দিয়ে মৃদুস্বরে ‘আহহহ’ বলে উঠে। সাথে সাথেই কুশলের ঘুম ভে*ঙে যায় কুশল ভালো ভাবে বসে অস্থির কন্ঠে তরুকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

—“কি হয়েছে তরুনিমা! তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে?”

তরুনিমা ধীরস্বরে বললো…..
—“আমাকে ধরে বসিয়ে দিন তো।”

কুশল তরুকে ধরে বিছানার সাথে বালিশ রেখে বালিশের সাথে তরুর পিঠ ঠেকিয়ে ওকে বসিয়ে দেয়। তরু কুশলের চোখের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে ওর দু-চোখ হালকা লালচে বর্ণ হয়ে আছে। তরু শান্ত স্বরে কুশলকে প্রশ্ন করলো….

—“আপনি কি সারারাত ঘুমান নি?”

কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো…
—“ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়েছিলাম এখন জেগে গেলাম।”

তরুনিমা এবার পুরোপুরি শিওর হয়ে যায় যে কুশল সারারাত জেগে ওরই সেবাযত্ন করেছে৷ কুশল ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে তরুকে বললো….

—“ফ্রেশ হতে হবে না!”

কুশলের এমন প্রশ্নে তরু নিজের করুণ অবস্থা দেখে অসহায়ের মতো মুখশ্রী করে রাখে যা কুশলের দৃষ্টি এড়াতে পারে না। পরক্ষণেই কুশল তরুর প্রতিত্তুরের অপেক্ষা না করে তরুর হাতের ডান পার্শে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওকে সাবধানে পাজাকোলে তুলে নেয়। কুশলের হঠাৎ এমন কাজে তরু কিছুটা অবাক হলেও মুখে কিছু বলে না। কারণ তরু নিজেও বুঝতে পেরেছে তার বর্তমান যে অবস্থা তাতে কারোর সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করা তার পক্ষে সম্ভব না। কুশল তরুকে ওয়াশরুমের ভিতরে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দিয়ে বললো….

—“তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। সমস্যা মনে হলে কোনো দ্বিধা না করে আমাকে ডাকবে আমি আসবো। মনে রেখো আমি তোমার স্বামী হই আর তুমি আমার স্ত্রী তাই তোমার সবরকম সমস্যায় আমি তোমার পাশে থাকার অধিকার রাখি।”

এই বলে কুশল ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ওয়াশরুমের ভিতরে বেসিনের সামনে দাঁড়াতেই আবারও তরুর মাথা ঘুরে উঠলে তরু দেওয়াল ধরে সেখানেই বসে পরে ‘কুশল’ বলে ডেকে উঠে। কুশল তরুর ডাক শোনামাত্র ওয়াশরুমের ভিতর প্রবেশ করে দেখে তরু মাথার দু’পাশে দুই হাত রেখে ওয়াশরুমের মেঝেতে বসে আছে। কুশল তরুর কাছে গিয়ে ওকে ধরে দাঁড় করায়। তরু কুশলের বুকের সাথে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে বেসিনের সামনে দাঁড়াতেই কুশল বললো…..

—“আমি তোমায় ফ্রেশ করিয়ে দিচ্ছি, তুমি একা পারবে না। তোমার শরীর ভিষণ দূর্বল।”

তরু কোনো প্রতিত্তুর করলো না। কুশল খুব যত্ন সহকারে তরুকে ফ্রেশ করিয়ে দিতে শুরু করে। তরু বেসিনের আয়নার উপর নিজের দৃষ্টি স্থির করে কুশলের কর্মকান্ড দেখছে। কিছুসময় এর মধ্যেই কুশল তরুকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে আবারও পাজাকোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে ওকে বিছানায় আগের ন্যয় বসিয়ে দেয়। অতঃপর কুশল ওয়ারড্রব থেকে টাওয়াল বের করে এনে তরুর ভেজা হাত-মুখ মুছে দিয়ে শান্ত স্বরে বললো…..

—“তুমি এখানে বসে কিছুসময় অপেক্ষা করো আমি নিচ থেকে তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি। নাস্তা করে ঔষধ খেতে হবে তোমায় আর ক্ষ*ত স্থান টাও ড্রে*সিং করে দিতে হবে।”

এই বলে কুশল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু শান্ত দৃষ্টি নিয়ে কুশলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।

রুম থেকে বেড়িয়ে কুশল সিঁড়ি বেয়ে নিচে এসে ডায়নিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা সব খাবারের বাটির উপর থেকে ঢাকনা সরিয়ে সরিয়ে দেখে বললো….

—“এই অসুস্থা অবস্থায় এসব খাবার খাওয়া ওর ঠিক হবে না। একটু স্যুপ হলে ভালো হতো। কোনো সার্ভেন্টকে বলি স্যুপ তৈরি করে দিতে।”

এই বলে কুশল রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। রান্নাঘরে এসে দেখে সেখানে কেও নেই৷ কুশল আর কোনো উপায় না পেয়ে ওর পকেট থেকে ফোন বের করে ইউটিউব এ ঢুকে সবজি স্যুপ তৈরি করে কিভাবে সার্চ করে সেই ভিডিও বের করে। এরপর ভিডিও দেখে ফ্রিজ থেকে কিছু টাটকা সবজি বের করে সবগুলো ছোট ছোট টুকরো করে নেয়। ভিডিওতে যেভাবে দেখিয়েছে সেভাবেই কুশল স্যুপটা তৈরি করে ফেলে। অতঃপর স্যুপটা একটা বাটিতে ঢেলে নেয়, আর একগ্লাস কুসুম গরম পানি গ্লাসে নেয়। অতঃপর একটা ট্রেতে করে স্যুপের বাটি আর পানির গ্লাস নিয়ে নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। কিছুসময় পর কুশল খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে ওদের রুমে প্রবেশ করে তরুর পাশে গিয়ে বসে নিজ হাতে তরুকে খাইয়ে দেয়। পায়ের ক্ষ*তে*র ব্য*থা কমার আর জ্বর আর না আসার জন্য ঔষধ খাইয়ে দেয়। এরপর কুশল তরুর পায়ের ক্ষ*ত*তে ড্রে*সিং করিয়ে দিয়ে ওকে ধরে শুইয়ে দেয়। কুশল বিছানা থেকে নেমে শান্ত স্বরে বললো…

—“বিশ্রাম করো এখন। আমার একটু কাজ আছে আমি আবার পরে আসবো।”

—“ঠিক আছে।”

কুশল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু ওর ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে চোখ বুঝে নেয়।

(২৮)
ডায়নিং টেবিলে চৌধুরী পরিবারের সকলে বসে নাস্তা করছে। নিলাদ্র একটু পর পর ডায়নিং টেবিলে বসারত সবাইকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে দেখছে। সেইসময় নিলাদ্র দেখলো রিজভী বাম হাতে চামচ ধরে খাবার খাচ্ছে। রিজভীর এমন আচারণে নিলাদ্র ভ্রু কুঁচকে রিজভীর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো….

—“চাচ্চু তুমি হঠাৎ বাম হাতে চামচ ধরে খাবার খাচ্ছো কেনো? তোমার ডান হাতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”

নিলাদ্রের এমন প্রশ্নে রিজভী কোনো প্রতিত্তুর করার পূর্বের ওনার পাশ থেকে কামিনী বললেন….

—“আরে নিল বাবা আর বলো না, তোমাদের চাচ্চু এতোটাই হু’স-জ্ঞান*হী’ন হয়ে গিয়েছেন যে কি বলবো! গতকাল রাতে লাইট না জ্বা’লি’য়েই ওয়াশরুমে গিয়েছিলো। তাই অন্ধকারে পা পি’ছ’লে পরে যাওয়ার সময় পানির লাইনের সাথে ডান হাতের আঙুলের অংশ খুব জো*ড়ে বা*রি খেয়েছিলো। ফলে সেখান থেকে র*ক্ত ঝরে ওয়াশরুমের মেঝেতে ছড়াছড়ি হয়ে গিয়েছিলো। আমি তো ওর এমন অবস্থা দেখে বাড়ির সবাইকে ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু রিসিপশন পার্টির পর সকলেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো মাঝরাতে ঘুম ন*ষ্ট করা ঠিক হবে না জন্য কাওকে ডাকতেও দেয় নি। তাই পরে আমিই কোনো রকম ভাবে ওর হাতের ক্ষ*ত স্থান পরিষ্কার করে ব্য*ন্ডে*জ করে দিয়েছিলাম।”

নিলাদ্র মনে মনে বললো…..
—“চাচ্চু-চাচীর চেহেরা দেখে তো মনে হচ্ছে না চাচী মি*থ্যা বলছে। তবুও শিওর হয়ে নেওয়া ভালো। চাচ্চুর ক্ষ*ত পরিষ্কার করার বাহানায় তার ক্ষ*ত থেকে সামান্য র*ক্ত সংগ্রহ করতে হবে আমায়। তারপর চাচ্চুর র*ক্তে*র সাথে বড় বাবার দরজার তালার উপর থেকে সংগ্রহ করা র*ক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আশা রাখছি চাচ্চু সেই অজানা শ*ত্রু হবে না। তাহলে যে এই চৌধুরী পরিবার ভে*ঙে গু*ড়*গু*ড়ে হয়ে যাবে।”

সাগরিকা চৌধুরী নিলাদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—“নিল দাদুভাই নাস্তা করা শেষ হলে তুমি রিজভীর ক্ষ*ত স্থানটি ভালো ভাবে পরিষ্কার করে দিও। নয়তো ই*ন*ফে*ক*শন হয়ে যাবে।”

—“ঠিক আছে দাদীমা।”

চলবে ইনশাআল্লাহ………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here